নিয়তি( এ কেমন ভালবাসা)----পর্বঃ ০৯
সেদিন তৃপ্তির কাছ থেকে শামীম বিদায় নিয়ে আসার পর শামীম অনেক টা খুশি ছিলো। তার কারণ হলো এতদিন আপন বলতে তার আব্বা আর সুপ্রিয়া ছিলো এখন তার আরো একজন আপন ব্যক্তি হয়ে গেলো। এই অচেনা শহরে এমন করে কাউকে আপন হিসাবে পাবে তা কখনো কল্পনা করতে পারে নাই শামীম।
পরেরদিন শামীম কাজ করতে এমন সময় কোথা থেকে যেনো চাঁদ দৌড়ে এসে পিছন থেকে শামীম কে জরিয়ে ধরলো। শামীম প্রথমে ভেবে ছিলো বাদল বা ননী গোপাল হবে। যখন ঘুরলো তখন দেখলো চাঁদ তাকে জরিয়ে ধরেছে সাথে সাথে চাঁদ কে ছাড়িয়ে নিয়ে পিছনে পিছিয়ে গেলো। আর তাদের এমন কান্ড সেখানে থাকা রোগি আর তাদের আত্মীয় স্বজনরা দেখতে লাগলো।
শামীমঃ এই তুই এভাবে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলি কেনো?
এবার চাঁদ শামীম কে সামন থেকে জরিয়ে ধরলো। শামীম তো এবার পুরা ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। চাঁদ কে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেছে কিন্তু না চাঁদ কে সরাতে পারতেছে না তার বুক থেকে। এদিকে তখন পুরা হাসপাতালে কাজ করা সবাই জেনে গেছে চাঁদ শামীম কে সবার সামনে জরিয়ে ধরেছে। সবাই এমন কথা শুনে অবাক কারণ চাঁদ ওর জীবনেও ছেলেদের সাথে মিশে না আর শামীম তো বোকাসোকা একটা ছেলে কেউ কোন কিছু মেলাতে পারতেছে না। তাই সবাই কাজ ফেলে সত্যি কি এমন ঘটনা ঘটেছে কি না তা দেখতে আসল। এক এক করে সবাই এসে দেখে চাঁদ শামীম কে জরিয়ে ধরে আছে আর শামীম চাঁদ কে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করতেছে।
শামীমঃ এই দেখ চাঁদ সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে দয়া করে আমারে ছাইড়া দে। আমি তো তোর কোন ক্ষতি করি নাই( কেঁদে ফেলল)
চাঁদঃ আরে দেখুক সমস্যা নাই, আমার তোর বুকে থাকতে ভালো লাগতেছে।
শামীমঃ তোর দুটি পায়ে পরি আমারে ছাইড়া আমার ভালো লাগতেছে। এসব করা ঠিক না, দেখ স্যারে দেখলে আমারে কাজ থাইকা বাইর কইরা দিবো। ( এবার জোড়ে কেঁদে ফেলল)
শামীমের চোখে পানি যখন চাঁদের কাঁধে পড়ল তখন চাঁদের হুম আসল। চাঁদ তারাতারি শামীম কে ছেড়ে দিয়ে চার দিকে তাকিয়ে দেখে ডাক্তার নার্স ওদের সাথে যারা কাজ করে তারা সবাই কেমন করে দেখতেছে। এমন পরিস্থিতিতে পরতে হবে জানলে চাঁদ জীবনেও শামীম কে আবেগের বসে জরিয়ে ধরতো না। চাঁদ কে যে ডাক্তার আর নার্সরা( ছেলে) কুপ্রস্তাব দিয়ে ছিলো তারা চাঁদের দিকে অগ্নিমুর্তি হয়ে দেখতেছে। আশপাশের অনেকে বিষয়টা মনে হয় ভালো ভাবে নিতেছে না তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য চাঁদ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলতেছে।
চাঁদঃ এখানে যারা আছে তাদের সবাই কে বলতেছি আমি শামীম কে ভালোবাসি আর শামীম আমাকে ভালোবাসে। কালকে একটু দুজনের মাঝে রাগারাগি হওয়ার কারণে তাই আজ ওর রাগ ভাঙ্গাতে আবেগের বসে জরিয়ে ধরেছি। আর একটা কথা শামীম কে এখন থেকে কেউ খারাপ ব্যবহার আচরণ জোড় জবস্তি করতে পারবেন না। আর একটা কথা শামীম কে নিয়ে কেউ স্বপ্ন দেখবেন না কারণ শামীম শুধু আমার( এবার একটু লজ্জা পেয়ে)
বাদলঃ কৈ আমরা তো এর কিছুই জানি না। আর কালকে তো তোরা দুজন হাসি খুশি ছিলি।
চাঁদঃ ( চোখ টিপ মেরে) আরে যারা প্রেম করে তারা কি সবার সামনে এসব করে নাকি। আর এতদিন বলি নাি এই গাধার জন্য তার নাকি লজ্জা করে আর কেউ জানলে নাকি চাকরি থেকে বের করে দিবে।
ডাক্তারঃ শামীম চাঁদ যা বলল তা কি সত্যি?
চাঁদ এবার শামীম কে বিরবির করে বলল বলো যে সত্যি তা না হলে এবার সত্যি সত্যি চাকরি থেকে বের করে দিবে বুঝলি।
শামীমঃ (তোতলি য়ে) হ্যাঁ স্যার সত্যি।
স্বপনঃ যাহোক তোমার জীবনে তাহলে এখন কেউ থাকতেছে যে তোমার সব দিক খেয়াল রাখবে। আমি মনে মনে এটাই চাইছিলাম তোমার মত সহজ সরল ছেলের জীবনে এমন কেউ আসুক যে তোমাকে ভালো রাখতে পারবে। আর সেই হিসাবে তোমার জন্য চাঁদ পারফেক্ট। আর আপনারা যে যার কাজে চলে যান, আর স্যার ওদের কে ওদের মত থাকতে দেন আপনিও চলুন স্যার ( বড় ডাক্তার কে বলল)
ডাক্তার স্বপনের কথা মত যে যার কাজে লেগে পড়ল এদিকে ছড়িয়ে গেলো শামীম আর চাঁদ একে অপর কে ভালোবাসে। সবাই বিষয় টা সাদরে গ্রহণ করেছে। তারাও চায় শামীমের মত একটা দুঃখী ছেলে সুখি হউক আর চাঁদও একটা ভালো ছেলে পেয়েছে।
বাদলঃ চাঁদ শামীম এসবের মানে কি?
শামীমঃ ভাই বিশ্বাস করেন চাঁদ যা বলছে সব মিথ্যা আমি ওরে কোন ভালো টালো বাসি না। ওয় হঠাৎ কইরা কৈ থাইকা যেনো আইসা আমারে জরিয়ে ধরছিলো।
চাঁদঃ ওই বলদ চুপ থাক তুই, দাদা আমি শামীম কে সেই অসেক আগে থেকে পছন্দ করি। কিন্ত কাল যখন ওর পুরা জীবন কাহিনি শুনলাম তখন নিজেকে সামলানো দায় হয়ে গিয়েছিলো। একটা মানুষ কতটা বোকা হয় একটা মানুষ কতজনের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয় আর কত কষ্ট সহ্য করে। তাই আমিও ভাবলাম ওকে আমি বিয়ে করবো কিন্তু তার আগে ওর সাথে প্রেম করে আগে চালাক বানাবো আর দুনিয়াটা চেনা শেখাবো।
বাদলঃ আমিও চাই তুই শামীমের পাশে সব সময় থাক, তোরও যেমন এই দুনিয়াতে তোর মা ছাড়া কেউ নাই আর শামীমের তো।
চাঁদঃ আমি জানি দাদা, তোমারে এ নিয়া চিন্তা করতে হবে না।
বাদল চলে গেলে শামীম আবারো ওর কাজে মনোযোগী হয়। শামীম চাঁদ কে কখনও ভালোবাসবে না কারণ সে তো সুপ্রিয়া কে ভালোবাসে। আর ঐ একজন কে আজো শামীম ভুলতে পারে নাই। আবার এই ভাঙ্গা মনটা নিয়ে জীবনে দ্বিতীয় কাউকে ভালোবাসাটা বোকামি ছাড়া কিছুই না।
এভাবে চলতে থাকে দিনের পর দিন, প্রতিদিন চাঁদ এসে শামীমের কাজে বাধা দিবে। কখন কিভাবে শামীমের কাছে এসে কান টানবে চুল টানবে গাল টানবে হাতে পেটে চিমটি কাটবে। আর বেচারা শামীম চাঁদের এসব অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করবে তবুও চাঁদ কে কোন বলবে না। চাঁদ প্রতিদিন শামীম কে ভালোবাসি বলে কিন্তু শামীম চাঁদ কে কোনই বলে না। শামীমের কাছে এখন ভালোবাসা কথাটা অনেকটা ঘৃণায় পরিনত হয়ে গেছে।
শামীম প্রতিমাসে কষ্ট করে হলে বেশি কাজ করে হলেও টাকা রোজগার করতে থাকে। শামীম মাস শেষে সবার আগে পুতুল আর সোহাগি কে টাকা দেয়। তারপর তৃপ্তি কে টাকা দেয়। তৃপ্তির সাথে প্রতিদিন চাঁদের ফোন দিয়ে কথা বলে শামীম। শামীম আর তৃপ্তির সম্পর্ক নিজের ভাইবোনের সম্পর্কের চেয়ে অনেক কিছু হয়ে গেছে। চাঁদও তৃপ্তি কে বলে দিছে সে শামীম কে ভালোবাসে কিন্তু শামীম রাজি হয় না। এই নিয়ে তৃপ্তির সাথেও প্রতদিন ঝগড়া হয় শামীমের। তৃপ্তি চায় শামীমের পাশে কেউ থাকুক শামীম কে সাপোর্ট দিক কিন্তু শামীম বুঝতেই চায় না। আর কেনো বুঝতে চায় না তা তো বুঝতে পেরেছেন। এই এত কিছুর মাঝেও কিন্তু শামীম তার আব্বার জন্য প্রতিদিন কাঁন্না করে যা কেউ জানে না। সে এখনও সুপ্রিয়া আর তার কাটানো সময় গুলোর কথা খুব ভাবে। সুপ্রিয়া আর তার আব্বার কথা সারাদিনে একবারো মনে না পড়লে রাত হলেই মনে যায় আর তখনই কাঁন্না করে শামীম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে শামীম আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা করে তার আব্বা আর সুপ্রিয়া জেনো ভালো থাকে সুখে থাকে।
শামীম বাদল চাঁদ আর ননী গোপাল একসাথে আজ কাজ করতেছে সেই সময় ডাক্তার স্বপন এসে ওদের কে বলতেছে কুরিল বিশ্বরোডের পাশের একটা প্লাটে লাশ আনতে যেতে হবে। তারা চার জন সেখানের কাজ বাদ দিয়ে এ্যাম্বুলেন্সে গিয়ে বসল। আজ তাদের সাথে ডাক্তার স্বপন যাবে আর অন্য একটা নার্স( ছেলে) যাবে। তারা সেই প্লাটে চলে আসল এসে দেখে পুলিশ রুমের বাহিরে লাল ফিতা আর হলুদ ফিতা দিয়ে বাউন্ডারি দিয়েছে যাতে কেউ যেতে না পারে। ডাক্তার কে আসতে দেখে পুলিশ ওদের কে যেতে দিলো, ভিতরে গিয়ে দেখে একটা তিন বছরের ছোট বাচ্চা একটা মহিলা আর একটা পুরুষের লাশ। তিনজন কে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। ডাক্তার স্বপন ভালো করে লাশ তিনটাকে দেখলো, দেখে অনেক তথ্য সংগ্রহ করলো তারপর লাশ তিনটা নিয়ে ওরা হাসপাতালের মর্গে চলে এলো।
সেদিন লাশ নিয়ে আসার পর ডাক্তার স্বপন কে লাশের ময়নাতদন্তের দায়িত্ব দেয়। তাই তিনি শামীম কে তার বাসায় পাঠান তার মেয়ের জন্য সকালে নেওয়া সোনার নুপুর আর জামা নিয়ে। শামীম কে একটা ঠিকানা লিখে দেয় ডাক্তার স্বপন সেই ঠিকানা একটা সি এন জি ওয়ালা কে দেখালে তিনি শামীম কে সেই ঠিকানায় পৌছে দেন৷ নিচে আগে থেকেই দাড়িযে ছিলো ডাক্তার স্বপনের বউ মেয়ে আর ছেলে। শামীম ওদের কাছে ওসব দিয়ে একটু সামনে গেলো কিছু খেতে। আসলে অনেক রাত হয়েছে তাই একটা দোকানে গিয়ে হালকা কিছু খেলো শামীম।
বাইরে সেই বৃষ্টি হচ্ছে আর রাতও অনেক হয়ে গিয়েছে, শামীম তাই আর সেই দোকানে দাড়িয়ে না থেকে হাটা শুরু করে দিলো। আসলে একে রাত তার উপর আবার বৃষ্টি কোন গাড়ি পাওয়া দুষ্কর। হাটতে হাটতে শামীম প্রায় অনেক দুরে চলে গেছে, একটা জায়গা থেকে চিৎকারের আওয়াজ আসতেছে। কিন্তু কে চিৎকার করতেছে বা কি বলতেছে শামীম তার কিছুই বুঝতে পারতেছে না। শামীম সামনে যত এগিয়ে যাচ্ছে চিৎকার টা ততই বেশি প্রকট হতেছে, এক পর্যায়ে শামীম রাতের অন্ধকারে বিজলী চমকানোর আলো দেখতে পেলে কিছু লোক হাতে ধারালো ছুরি নিয়ে একটা মহিলাকে মারতে চাচ্ছে আর মহিলাটা নিজের জীবন বাঁচাতে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতেছে আর দৌড়াচ্ছে। শামীম এমন দৃশ্য দেখে রাস্তার পাশে কিছু খুঁজতে লাগলো কিন্তু না সেখানে কোন কিছুই পেলো তাই পাশের একটা নতুন বিল্ডিং তৈরী হচ্ছে তার পাশে গিয়ে দেখলো মোটা রডের ঢুকরা সেটা হাতে নিয়ে সামনে গেলো মহিলা শামীম কে দেখতে পেয়ে শামীমের পিছনে লুকিয়ে বলতেছে বাবা আমাকে এদের হাত থেকে বাঁচাও।
লোকঃ এই তোর যদি জানের মায়া থেকে থাকে তাহলে সামন থেকে সরে যা আর ওকে আমাদের হাতে তুলে দে।
শামীমঃ তোদের যদি মার খেতে ইচ্ছা না হয় তো তোরা এখান থেকে চলে যা।
এক পর্যায়ে ওই সাত জন লোকের সাথে শামীমের তুমুল মারামারি লেগে গেলো। শামীম ওদের সাথে একাই পেরে উটতেছে না, ওদের হাতে শামীম মার খেতে থাকলো। তবুও শামীম ওদের কে মহিলার সামনে যেতে দিতেছে না। এভাবে হাতাহাতি প্রায় ১০-১৫ মিনিট হলো তবুও শামীম ওদের কে মহিলার দিকে এগোতে দিতেছে না, শামীম সমানে হাতে থাকা রড টা ঘুরাতে থাকলো। এক সময় একজন লোক শামীমের বাম কাঁদের ঠিক নিচে দিলো এককোপ আর শামীম তখন ডান হাতের রড ফেলে দিয়ে চেপে ধরলো কেটে যাওয়া জায়গা টা। সন্ত্রাসী গুলো যখন মহিলাকে মারতে যাবে ওই সময়ের মধ্যে চার টা পুলিশের গাড়ি আসে আর সাথে সাথে ওদের পায়ে গুলি করে। আর তখন সন্ত্রাসী গুলো মাটিতে পড়ে যায় মহিলা টাকে আর মারতে পারে না। গাড়ি থেকে একজন বয়স্ক পুলিশ মহিলাটার কাছে এসে জরিয়ে ধরে বলতে থাকে
পুলিশঃ তুমি ঠিক আছো তো সাহানা, তোমার কোন হয়নি তো?
মহিলাঃ আমি ঠিক আছি আমার কোন হয়নি, ভাগ্যিস তোমাকে ফোন করার সাথে সাথে তুমি চলে এসেছো।
পুলিশঃ তোমাকে কত করে মানা করেছি একাই কোথাও যাবে না, এমনিতেই তুমি এই সন্ত্রাসীর লিডার কে ফাঁসির আদেশ দিয়েছো তারা কি তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে তুমি বলো।
মহিলাঃ তুমি একজন পুলিশন হয়ে এদের কে ভয় করতেছো। আমি একজন জজ আর আমার কাছে সত্য মুক্তি আর মিথ্যার সাজা। আমি নিজের জীবনের পরোয়া করি না সারোয়ার। ও দোষ করেছে তাই ওর দোষের সাজা ও পেয়েছে।
এতক্ষণে শামীম বুঝতে পারলো এনারা স্বামী স্ত্রী, এদিকে যে শামীম কাতরাচ্ছে সেদিকে ওদের কোন খেয়াল নাই। যখন একটা পুলিশ শামীম কে ধরতে যাবে তখন শামীম তখন শামীম বলল
শামীমঃ স্যার আমি কোন করি নাই বিশ্বাস করেন আমারে ধইরেন না স্যার।
শামীমের এমন আকুতিতে মহিলার আর ওই পুলিশের ধ্যান ভাঙ্গল তখন পুলিশ কে বলল শামীম কে ছেড়ে দিতে। তারপর ওনারা দুইজনেই এগিয়ে আসল শামীমের কাছে এসে দেখে শামীমের অনেক খানি কেটে গেছে। আশাপাশে কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিক না থাকায় তারা জোড় করে শামীম কে ওদের বাসায় নিয়ে গেলো। একে তো শামীমের হাত কেটে গেছে তার উপর বৃষ্টিতে ভিজেছে। তাই ওই মহিলা শামীমের গা থেকে শার্ট টা খুলে দিয়ে শামীম কে নিজ হাতে ড্রেসিং করে দিতে লাগলো। ড্রেসিং করা শেষে যখন মহিলা শামীমের দিকে ভালো করে দেখবে সেই সময় শামীমের গলায় থাকা সোনার চেন টার দিকে তার চোখ আটকে গেলো আর তিনি চেন টা হাত দিয়ে দেখতে লাগলো আর
সাহানাঃ ফারিন ফারিন ফারিন
এই নামে কাকে যেনো ডাকতে লাগলো তারপর একটা মেয়ে প্রায় শামীমের চেয়ে তিন চার বছরের বড় হবে সে চলে আসলো সাহানা বেগমের কাছে।
ফারিনঃ মাম্মি এভাবে ডাকতেছো কেনো? কি হইছে তোমার কোন সমস্যা?
সাহানাঃ তোর গলার চেন টা খুলে দেতো আমাকে।
ফারিন তার গলার চেন খুলে তার মায়ের কাছে দিলো। শামীম এদের এসব কাহিনী দেখে একটু ভয় পেয়ে গেলো। তখন সাহানা বেগম শামীমের গলার চেন আর ফারিনের গলার চেন একসাথে করে দেখতে থাকলো। ফারিনের গলার চেন আর শামীমের গলার চেন হুবুহু এক।
সাহানাঃ তুমি তোমার গলার এই চেনটা কোথায় পেয়েছো?
শামীমঃ আমার আব্বা যখন আমারে পাইছিলো তখন নাকি এই চেন আমার গলায় ছিলো আর সাথে এই ফটো টা( তার ছোট বেলার ফটো বের করে) (একবারে সরল ভাবে বলল কথা শামীম)
তখন সাহানা বেগম শামীমের হাত থেকে ফটো টা নিয়ে দেখতেই চিনে ফেলল এটা কার হারিয়ে যাওয়া ছেলে ফারদিন। এই রকম আরো একটা ফটো সাহানা বেগমের কাছে আছে তাই তিনি সেই ফটো টা ঘর থেকে বের করে এনে শামীম আর ফরিনের সামনে ধরলো। শামীম আর ফারিন ফটো দেখে চমকে গেলো।
ফারিনঃ মাম্মি এই ফটো এই ছেলের কাছে কেমন করে গেলো।
সাহানাঃ মনে আছে তোর কক্সবাজার গিয়েছিলাম যখন তোর বয়স ৮ আর ফারদিনের বয়স চার বছর তুই তখন ফটো তুলবি বলে বায়না ধরেছিলি।
ফারিনঃ এসব কথা আর কত বলবে মা আমি জানি।
সাহানাঃ ওই সময় তুই একটা ফটো নিয়েছিলি বলে ফারদিন কাঁন্না করেছিলো আর তোর মত সেও ফটো চাইছিলো। তখন তোর মত ওকেও ফটো দেই।
ফারিনঃ হুমম সব মনে আছে এখন বলো কি হয়েছে?
সাহানাঃ এই যে তোর সামনে বসে থাকা যাকে দেখতেছিস সে তোর হারিয়ে যাওয়া ছোট ভাই।
ফারিনঃ কিইই, তুমি পাগল হয়ে গেছো এসব ক্ষেত হবে আমার ভাই হাউ ফানি মাম্মি।
সাহানাঃ তা না হলে ওর কাছে এসব আসলো কোথা থেকে( চেন আর ফটো)
ফারিনঃ তোমার ছেলে কে তুমি চিটাগাং শহরে হারিয়েছো তাহলে সে কেমন করে এই ঢাকা শহরে আসবে। আর সে বেঁচে আছে না মরে গেছে তা কি বলতে পারবে মাম্মি?
ফারিনের কথার যুক্তি আছে তাই এবার সাহানা বেগম ফারিন কে কোন না বলে শামীম কে জিজ্ঞেস করলো।
সাহানাঃ এই ছেলে তোমার নাম কি? বাসা কৈ, বাবা মা কি করে? আর এসব তুমি কৈ পাইছো?
শামীমঃ আমার নাম শামীম আমি বেশ কয়েকমাস হইছে কক্সবাজার থেকে ঢাকা আইছি আমার বাবা মা কেউ নাই তয় আমার আব্বা আছে। আর এগুলো ছোট থাইকা আমার কাছে আছে( সরল ভাবে)
সাহানাঃ বাবা মা নাই আব্বা আছে মানে ফাঝলামো করো( রাগ দেখিয়ে)
শামীমঃ আসলে আমার আব্বা আমারে অনেক ছোট থাকতে চিটাগাং শহরে পাইছিলো। আমি নাকি গাড়ির চাকার নিচে পড়তেছিলাম সেই সময় নাকি উনি আমাকে বাঁচিয়ে নেয়। তারপর আমাকে নিয়ে পুরা দুই দিন দুই রাত আমার বাবা মা কে খুজে। কিন্তু খুজে না পাওয়াতে তিনি আমাকে তার সাথে নিয়ে জান।
এবার সাহানা বেগম নিশ্চিত হলে এটাই তার হারিয়ে যাওয়া ছেলে ফারদিন। তখন তিনি চিৎকার করে তার স্বামী সারোয়ার ছোট ছেলে ফয়সাল আর ছোট মেয়ে ফারজানা কে ডাক দেন।
No comments