Header Ads

Header ADS

নিয়তি( এ কেমন ভালবাসা)-----পর্বঃ ০৮



ধর্ষিতা মেয়েটার লাশ নিয়ে আসার পর লাশ টা ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হলো আর এদিকে প্রত্যেকটা টেলিভিশনে এই ধর্ষণের খবর প্রচার করা হচ্ছে। এই হাসপাতালের একটা নিয়ম আছে কোথাও থেকে লাশ নিয়ে আসলে যারা লাশ আনে তাদের কে আলাদা কিছু টাকা দেওয়া হয়। তো সেদিনও লাশ নিয়ে আসার পর বাদলদের কে মোট ৩৫০০ টাকা দেওয়া হয়। বাদল নিজে নেয় ১০০০ টাকা, চাঁদ ১০০০, ননী গোপাল ১০০০হাজার আর শামীম ৫০০ টাকা। তখন বাদল শামীম কে বলে
বাদলঃ কিরে তুই কয় টাকা পেলি?
শামীমঃ ভাই আপনি নিজেই তো আমাকে ৫০০ টাকা দিলেন।
বাদলঃ আমরা কত করে নিলাম।
শামীমঃ ১০০০ হাজার টাকা করে।
বাদলঃ তোকে যে ঠকালাম তাতে কি তোর আমাদের উপর রাগ হলো না?
শামীমঃ ভাই রাগ হইতে যামু কেনো, আপনাদের নিশ্চয়ই টাকার প্রয়োজন বেশি তাই আপনারা বেশি করে নিলেন। আর আমার এই ৫০০ টাকা খরচ করারও জায়গা নাই।
চাঁদঃ তোর পরিবার নাই মা বাবা ভাই বোন নাই তাদের দিবি না?
ননী গোপালঃ তোর কি টাকার প্রয়োজন সত্যি নাই?
শামীম ওদের কোন না বলে মুচকি হাসি দিয়ে সে জায়গা ত্যাগ করে। শামীম আজ জীবন প্রথম কাজ করে একসাথে পাঁচশত টাকা পেয়ে অনেক খুশি। সেই খুশিতে শামীম হাসপাতালের বাহিরে বের হয়ে আসে। বাইরে বের হয়ে এসে দেখে একটা ১০-১২ বছরের বাচ্চা ৫ টাকার জন্য মানুষের কাছে হাত পাততেছে। কেউ বাচ্চা টাকে টাকা দিচ্ছে তো কেউ ধাক্কা মেরে দুরে সরিয়ে দিতেছে। বাচ্চা টাকা কে দেখে শামীমের মনে মায়া হলো আর তার নিজের কথাই মনে পরে গেলো। তাই সে বাচ্চার কাছে এগিয়ে গিয়ে বাচ্চা টাকে তুলে সাইডে নিয়ে আসল।
বাচ্চাঃ আমি কোন করি নাই আমারে মাইরেন না, আমি আর কারো কাছে খাওনের জন্য টাকা চাবো না। কারো কাছে যাবো না তবুও আমারে মারবেন ( কেঁদে কেঁদে)
শামীমঃ আরে আরে তুই কাঁন্না করোস ক্যান আমি কি তোরে মারতে চাইছি নাকি কাঁন্না থামা। আচ্ছা তুই মানুষের কাছে হাত পাইতা ভিক্ষা করতেছোস কেন? তোর বাপ মায়ে কৈ?
বাচ্চাঃ আমার মা বাবা কেউ নাই, সবাই আমারে বেজন্মা বলে। আমারে নাকি এক ভিক্ষারি মহিলা ডাস্টবিনে পাইছিলো তারপর তিনি আমারে কিছুটা বড় করার পর মইরা যান। তার একটা মাইয়া আছে সে আমারে ভাই বইলা ডাকে আজ তিন দিন ধইরা ঘরে খাওন নাই তাই মাইনসের কাছে হাত পাইতা ভিক্ষা চাই।
শামীম বাচ্চা টার কথা শুনে অবাক, একটা শিশু বাচ্চা কে ডাস্টবিনে একজন মা কেমন করে ফালাইয়া যাইতে পারে। শামীম তো জানে মায়ের কাছে তার হাজার টা সন্তান সমান, কাউকে কারো চেয়ে কম ভালোবাসে না। প্রত্যেকটা মা তার পেঠের সন্তান কে নিজের বুক দিয়া আগলে রাখে।
শামীম তো জানে না এটা ঢাকা শহর রাতের আধারে এখানে অনেক অবৈধ কাজ হয়। হয়ত বা কোন প্রেমিক প্রেমিকার গোপন কাজের ফসল এই ছেলেটা। নিজেদের সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে বাচ্চা টাকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে চলে গেছে।
শামীমঃ তোর বইন এখন কৈ আছে?
বাচ্চাঃ বস্তিতে ঘরে আছে।
শামীমঃ তোর বইনের নাম কি আর বয়স কত?
বাচ্চাঃ ওর পুতুল আর আমার মতই ওর বয়স?
শামীমঃ তোর নাম কি, আর তোরা দুই বোন কি পড়াশোনা করোস?
বাচ্চাঃ আমার নাম সোহাগি আমরা দুইজনে আগে পড়তাম এখন টাকার অভাবে পরতে পারি না। এখন নিজেই খাইতে পারি না আর পড়মু কেমনে, তাই দুইজন দুইটা সাহেবের বাসায় কাজ করি।
শামীমঃ শোন আজ থেকে এসব কিছুই করবি না, এই যে ধর এখানে পাঁচশত টাকা আছে( পকেট থেকে টাকা বের করে দিয়ে) এটা দিয়ে আপাত দুবোন কয়দিন চল। আর এখন থাইকা প্রতিদিন স্কুল যাবি, মাস শেষে তোদের পড়াশোনা আর খাওনের টাকা আমি দিমু?
সোহাগি শামূমের কাছ থেকে টাকা টা নিয়া শামীম কে জরিয়ে ধরে কাঁন্না করতে লাগলো। শামীম সোহাগির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কাঁন্না করতে মানা করলো। আর সেখান থেকে যাওয়ার আগে সোহাগি কে বলল।
শামীমঃ আমি ঐ যে হাসপাতাল টা দেখতেছিস ওই খানে কাজ করি, কখনো কোন দরকার হলে আমার কাছে আসবি বুঝলি। আর মাস শেষে তোদের দুবোনের যতটাকা লাগবে আমারে কবি আমি দিবো।
সোহাগি কে বিদায় দিয়ে শামীম আবারো হাসপাতাল চলে আসে এসেই বাদল চাঁদ ননী গোপালের সামনে পরে তখন তারা তিনজনই শামীম কে প্রশ্ন করে?
বাদলঃ তোর টাকা ৫০০কৈ?
শামীমঃ কেন?
চাঁদঃ বাইর কর টাকা কৈ তোর?
ননী গোপালঃ টাকা টা কি খরচ করছিস নাকি তোর কাছে আছে।
শামীমঃ তোমাদের বলতে যামু কেনো?
বাদলঃ এত ভালো মানুষ সাজিস না শামীম, তুই যে টাকা ওই রাস্তার মেয়ে টাকে দিলি তা আমরা তিন জনই দেখেছি।
চাঁদঃ ওই সালা বাচ্চা টা তোর কি লাগে যার জন্য তারে সব টাকা দিয়ে দিলি?
ননী গোপালঃ নিজে চলবি কি দিয়ে এখন, তোর পরিবার কে বুঝি টাকা পয়সা লাগে? এই ভাবে অন্য কে টাকা দিলে মাস শেষে তোর কাছে একটি টাকাও থাকবে না বুঝলি।
শামীমঃ আল্লাহ আছে তিনি আমাকে চালাবেন? টাকা টা তো আর কোন বাজে কাজে নষ্ট করি নাই। আমাকে দিয়ে ওই মাসুম বাচ্চার উপকার হইছে, আমি তো খেতে পারবো ওই বাচ্চা কি খেতে পারত আমি টাকা টা না দিলে?
শামীম ওদের কে আর কোন না বলে মুচকি হেসে কাজে লেগে পড়ে। দেখতে দেখতে আরো দুইদিন কেটে যায়, দুপুরে খাওয়ার সময় সবাই যখন একসাথে খাবার খাচ্ছে তখন বাদল ওই ধর্ষিতা মেয়েটার সব খবর নিয়ে আসে। বাদল সবাই এক এক করে সব কথা বলতে লাগলো
বাদলঃ চাঁদ ননী গোপাল শামীম সেদিন যে লাশ টা নিয়ে আসলাম তার পরিচয় পাওয়া গেছে। মেয়েটাকে তার কলেজের চারজন বন্ধু ধর্ষন করে। তার মধ্যে তার প্রেমিকও ছিলো, ওই ছেলেগুলোর মধ্যে একজনের জন্মদিন ছিলো সেই উপলক্ষে ছেলেটা একটা মদের বারে পার্টি দেয় তাতে সবাই উপস্থিত থাকে। এতে করে সবাই মদ পান করে মাতাল হয়ে যায়, সেই সুযোগে মেয়েটাকে তার বয়ফ্রেন্ড গাড়িতে সেক্স করে। বাকি বন্ধু গুলো দেখতে পেয়ে ভিডিও করে আর ভিডিও করার পর মেয়েটাকে ব্ল্যাকমেইল করে। মেয়ে শত মানা করার পরও তারা মেয়েটার কথা শোনে না আর তার বয়ফ্রেন্ড কে ওই চারজন গাড়ির সীটের সাথে বেঁধে রেখে সারা রাত গাড়ি চলন্ত অবস্থায় ধর্ষণ করে। তবে ধর্ষন করা এক পর্যায়ে ওই চার জনের মধ্যে একজন গলা চেপে ধরে ধর্ষণ করা অবস্থায় মেয়েটার মৃত্যু হয় আর ওরা মেয়েটাকে ওই ডোবায় ফেলে দিয়ে চলে যায় আর মেয়েটা বয়ফ্রেন্ড কে অন্য জায়গায় ফেলে দিয়ে চরে যায়।
চাঁদঃ দাদা তুমি এত কিছু জানলে কি করে?
বাদলঃ ডাক্তার স্যারে বলল আর টিভিতে দেখাচ্ছে, এই খবর তো পুরা নেটে ছরিয়ে গেছে। আর পুলিশ মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড সহ তার বাকি চার বন্ধুকে ধরেছে এবং ভিডিও পুলিশের কাছে আছে।
ননী গোপালঃ বাবা মায়ের টাকা পয়সা থাকলে যে ছেলে মেয়ে নষ্ট হয় এটাই তার বাস্তব উদাহরণ। আমাদের বাবা মায়ের টাকা পয়সা নাই তাই আমরা এমন বাজে কাজ করার সাহস পাই না। ছেলে মেয়ে কে টাকা পয়সা দিয়েই নষ্ট করেছে ওই সকল বাবা মা। আজ রাস্তায় ঘাটে আনাছে কানাছে কত মানুষ না খেয়ে আছে, সেদিকে দেখবে না ছেলে মেয়ে কে টাকা পয়সা দিবে রুপ চর্চা করো নেশা করো মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি করো এসব। আর আমাদের মত গরীব ঘরের ছেলে মেয়ে বাবা মায়ে মুখে হাসি ফোটানোর জন্য দুর দুরান্ত থেকে শহরে এসে সামান্য কয়টা টাকার জন্য কাজ করে।
চাঁদঃ এসব নীতি বাক্য বলে কোন লাভ হবে না। যেভালো হওয়ার সে এমনিতেই ভালো হবে যে খারাপ তাকে শত চেষ্টা করেও ভালো করা যাবে না। আর এসব কথা আমরা যত এখানে বলি না কেনো কেউ শুনবেও না কেউ ভালো হবেও না।
শামীম এদের কথা শুনে অবাক, সত্যি কি টাকা পয়সা থাকলে মানুষ খারাপ হয়। না এরা কিসের দুঃখে মিথ্যা কথা বলতে যাবে। আসলে তো ঢাকা শহরে যার ২০ তলা বিল্ডিং আছে সে মাস শেষে কত টাকা পায় একবার ভেবেছেন। মাস শেষে কি তার সব টাকা ব্যয় হয়? কখনোই না? তাই তাদের ছেলে মেয়ে ঘুম থেকে ১২ টায় উঠবে না তো কার ছেলে মেয়ে উঠবে? ওদের ছেলে মেয়ে নেশা করবে মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করবে। ঘরে বউ রেখে বাইরের মেয়ের সাথে রাত কাটাবে আরো কত খারাপ কাজ করবে। তারা তো রাজনৈতিক নেতা হবে সন্ত্রাসী তৈরী তারা করবে এই টাকা বিনিময়ে। তারা খুন করলেও টাকার বিনিময়ে ছাড়া পেয়ে যাবে। তাই বলে সবাই না ১০০ এর মধ্যে ৭০ টা পরিবারের ছেলে মেয়ে এমন উৎসৃংকল হয়। বাবা মা যদি সঠিক শিক্ষা দিতো তাহলে সন্তান ভালো হতো, এই সব বাবা মা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
দেখতে দেখতে আজ তিন মাস ধরে এই হাসপাতালের কাজ করতেছে শামীম। এই তিন মাসে কমপক্ষে শামীম ৩০টার বেশি লাশ আনতে গিয়েছে। শামীমের টাকা দিয়ে পুতুল আর সোহাগি পড়াশোনা আর খায়। শামীম এই তিন মাসে হাসপাতালের অনেকের কাজ করে দিয়েছে, যে আসে নাই তারও কাজ শামীম করে দিয়েছে, অনেক বয়স্ক পুরুষ মহিলারও কাজ করে দিয়েছে মোট কথায় কম বেশি সবাইকে শামীম সাহায্য করেছে এতে করে সবাই শামীম কে ভালোবাসে। একদিন বিকাল বেলা সবাই হাসপাতালের বাইরে এসে ঝাড়ু দেওয়া মোছা এসব করতেছে। কাজ করতে করতে এক সময় সবাই ক্লান্ত হলে যে যার মত করে যেখানে পায় সেখানে বসে। হঠাৎ শামীম দেখতে পায় হাসপাতালে ঢোকার ছোট সিড়ির উপর ১৯-২০ বছরের একটা মেয়ে কাঁন্না করতেছে তা দেখতে পেয়ে তার কাছে গেলো শামীম।।
শামীমঃ বোন আপনে কাঁন্না করতেছেন কেন?
মেয়ে টা মাথা তুলে শামীম কে দেখে আবারও আগের মত করে কাঁন্না করা শুরু করে দিয়েছে। শামীম আবারো মেয়েটাকে কাঁন্না করার কথা জিজ্ঞেস করলে বলে।
মেয়েটাঃ আমি কেনো কাঁন্না করতেছি আপনার তা না জানলেও চলবে। আর আপনাকে বললে কি আমাকে সাহায্য করবেন নাকি?
শামীমঃ আমি তো অনেক ছোট মানুষ ( ছোটলোক) বোন তারপরও যদি আপানারে সাহায্য করার মত হয় তো আমি সাহায্য করার চেষ্টা করবো আমারে বলতে পারেন?
মেয়েটা এবার শামীমের কথা শুনে রেগে গিয়ে বলল
মেয়েটাঃ আপনি আমার কে হন যে আপনাকে আমার বলতে হবে? আপনি যান তো এখান থেকে, আমার কাছে কি অন্য কোথাও গিয়ে মরুন( অনেক রেগে বলল)
শামীম মেয়েটার এমন কথা শুনে মোটেও মন খারাপ করলো না। তার কারণ তো জানেন এসব কথা শুনতে শুনতে বড় হইছে কেউ আঘাত দিয়েও কথা বললে শামীম কিছু মনে করে না।
শামীমঃ আমারে আপনের ভাই হিসাবে বলতে পারেন? আর দয়া কইরা কাঁন্না থামাইয়া আমারে একটু কন কি সমস্যা হইছে।
মেয়ে শামীমের কথা শুনে অবাক কারণ তাকে অপমান করে কথা বলার পরও তাকে সাহায্য করতে চাচ্ছে এমন তাকে বোনও বলতেছে এবার মেয়েটা আরো জোড়ে কাঁন্না করে বলতে লাগলো। ইতিমধ্যে মেয়েটা আর শামীমের কান্ড দেখে সবাই এসে জড়ো হয়েছে।
মেয়েটাঃ আমার মা গতকাল সন্ধ্যা মারা গেছে। আমার কাছে যা টাকা ছিলো তা সব দিয়ে চিকিৎসা আর ওষুধ কিনতে শেষ হইছে। আমার আর মায়ের স্বর্ণের যত জিনিস ছিলো সব বিক্রি করে দিয়েও মাকে বাঁচাতে পারি নাই।
শামীমঃ বোন আপানের বাবা কৈ, আর আপনের মায়ের কি হইছিলো?
মেয়েটাঃ বাবা অনেক আগেই মারা গেছে, আর আমার মায়ের ক্যান্সার হয়েছিলো। এখন হাসপাতাল কতৃপক্ষ টাকা ছাড়া লাশ দিতে চাইতেছে না বিশ্বাস করেন আমার কাছে একটি টাকাও নাই।
এই কথা বলতে বলতে মেয়েটা কেঁদে ফেলল
শামীমঃ কত টাকা
মেয়েটাঃ ৩০০০ হাজার টাকা
শামীমঃ আমি দিবো একটু অপেক্ষা করেন আসতেছি।
শামীম মেয়েটাকে বসিয়ে রেখে দৌড়ে তার থাকার রুমে গিয়ে সেখান থেকে ৫০০০ হাজার টাকা নিয়ে আসল এসেই মেয়েটার হাতে টাকা ৫০০০ হাজার দিলো। মেয়েটা প্রথমে টাকা নিতে না চাইলেও পরে শামীমের জোড়াজুড়িতে টাকা নিলো। তারপর মেয়েটা গিয়ে হাসপাতালের সব ফর্মালিটি পূরন করে তার মায়ের লাশ এ্যাম্বুলেন্সে তুলে। তারপর আবারো শামীমের কাছে আসে এবার শামীম তার কাজ করা নিয়ে ব্যস্ত। মেয়েটাকে আসা দেখে সবাই কাজ করা বন্ধ করে দিলো।
মেয়েটাঃ ভাই আপনাকে যে কি করে ধন্যবাদ দিবো তার ভাষা আমার জানা নাই। নিজের মায়ের পেঠের ভাইও মনে হয় এমন বিপদে পাশে দাড়াবে না।
শামীমঃ ভাই বলছেন আমার ধন্যবাদ দিতেছে এটা কোন কথা হলো নাকি। একটা ভাই তার একটা বোনের বিপদে এগিয়ে এসেছে।
মেয়েটঃ আপনি যে আমাকে এত গুলো টাকা দিলেন আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে আপনি নিজেই বেশি বেতনের টাকার চাকরি করেন না। এখন আপনার পরিবার আর আপনি চলবেন কেমন করে ভাইয়া।
শামীমঃ আমার কোন পরিবার নাই, এই দুনিয়াতে আমি এতিম। এখান থেকে কাজ করে যা বেতন পাই সব টাকা আমার জমে আমি যে কাউকে টাকা দিবো এমন কোন আপনজন নাই আমার। তাই প্রতমাসের বেতনের কিছু টাকা মাদরাসা এতিখানা আর দুইটা মেয়ের পড়াশোনা আর খাওয়ার জন্য দেই বাকি টাকা নিজের কাছে থাকে। যদি কোন মানুষ বিপদে পরে তাকে সাহায্য করি।
শামীমের এমন কথা শুনে সবাই শামীমের দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে। আসলে এতদিন থেকে কাজ করে কেউ জানেউ না শামীম এতিম সবার শামীমের কথা শোনার জন্য আগ্রহ বেড়ে গেলো।
মেয়েটাঃ কি বলেন ভাইয়া আপনি এসব?
শামীমঃ সত্যি বলতেছি, তোমার যদি সময় থাকে তাহলে সব কথা বলবো।
মেয়েটাঃ বলেন সব শুনবো আমি।
সবাই সবার কাজ ফেলে দিয়ে এগিয়ে আসল শামীমের কাহিনি শোনার জন্য। শামীম এক এক করে তার জীবনের সব কথা বলে ফেলল। সেখানে থাকা সাধারণ মানুষ এবং যারা হাসপাতালের ক্লিনারের কাজ করে সবাই কেঁদে ফেলল সাথে মেয়েটা তো সেই শুরু থেকে কাঁন্না করতেছে। শামীমের এমন করুন নিষ্টুর কাহিনি শুনে বাদল আর ননী গোপাল এসে শামীম কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। তারা বুঝতে পারল কেনো শামীম কে কম টাকা দিলেও মন খারাপ করে না। কেনো শামীম সবার কাজে সাহায্য করে,কেন শামীম একটুতেই ভয় পেয়ে যায়। কেনোই বা শামীম সবার সব কথা মুখ বুঝে সহ্য করে, কেনোই বা শামীম অন্য সবার মত রাগ করে কথা বলে না। চাঁদ তো শামীমকে সেই মেয়ে দুটোকে সাহায্য করা থেকে পছন্দ করত আর আজ শামীমের এমন ঘটনা শুনে সে তো শামীম কে পারে না তার বুকের ভিতরে লুকিয়ে রাখে।
মেয়েটাঃ আপনি কি আমার ভাই হবেন? আমারো তো আজ থেকে এই দুনিয়াতে কেউ রইলো না।
শামীমঃ এই তো ভাই বলতেছেন আবার বলতেছেন কেউ নাই দুনিয়াতে। আমি আপনার ভাই হওয়ার জন্য প্রস্তুত।
মেয়েটা এবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে শামীম কে জরিয়ে ধরলো। আর শামীমের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁন্না করতে লাগলো।
তারপর শামীম কাজ করা বাদ দিয়ে মেয়েটা সহ তার বাসা গেলো তারপর মেয়েটার মায়ে কাফনের কাপড় কেনা অন্য মহিলা ডেকে নিয়ে এসে গোসল করানো তারপর মুন্সি এনে জানাজা করানো সব শামীম নিজের ছেলের মত করে করলো।
শামীমঃ বোন এত কিছুর মাঝে তোমার নাম আর তুমি কি করো তা তো জানাই হলো না?
মেয়েটাঃ আমার নাম তৃপ্তি আমি মেডিকেল স্টুডেন্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২য় বর্ষে পড়ি। কিন্তু আজ থেকে মনে হয় না আর পড়তে পারবো।
শামীমঃ কেনো পারবেন না?
তৃপ্তিঃ কারণ মেডিকেল পড়তে অনেক টাকা লাগে এত টাকা কোথায় পাবো। আর টিউশন করেও পড়তে পারবো না।
শামীমঃ ওই টাকা পয়সা নিয়ে আপনাকে চিন্তা করা লাগবে না। আপনি মেডিকেল পড়তে থাকুন আমি আপনার পড়াশোনার টাকা দিবো।
তৃপ্তিঃ কি বলেন এসব ভাইয়া, এত টাকা আপনি দিতে পারবেন না। তাছাড়া প্রতিমাসে অনেক টাকা লাগে আমার পড়াশোনা টিউশন বই খাতা কলম।
শামীমঃ বোনের জন্য যদি এই সামান্য টুকু করতে না পারি তাহলে কিসের ভাই আমি। আপনি আপনার ফোন নাম্বার দেন প্রতিমাসে আপনাকে আমি টাকা পাঠিয়ে দিবো।
তৃপ্তিঃ নিবো না আপনার টাকা যতক্ষণ আপনি আমাকে তুই করে বলতেছেন। কারণ আমি আপনার ছোট আর আমি আপনাকেও তুই আর তুমি করে বলবো।
শামীমঃ ঠিক আছে তুই করে বলবো।
তৃপ্তি কে কাঁন্না করতে মানা করে শামীম, কারণ পৃথিবীতে কোন প্রাণ চির স্হায়ী নয়। আসার সিষ্টেম আছে কিন্তু যাওয়ার সিস্টেম নাই। তৃপ্তি কে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে শামীম তার থাকার রুমে চলে আসে। আসার আগে তৃপ্তি ফোন নাম্বার নিয়ে আসে শামীম।

No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.