নিয়তি( এ কেমন ভালবাসা)-----পর্বঃ ১০
সাহানা বেগমের ডাকে যে যার ঘর থেকে বের হয়ে আসল। সাহানা বেগম তখন শামীমের পেঠে লক্ষ্য এবার তিনি পুরা পিরি সিউর এটাই তার হারিয়ে যাওয়া ছেলে ফারদিন। আসলে ছোট বেলায় ফারিন একদিন শামীমের পেঠে ছুরি ডুকিয়ে দিয়েছিলো সেই চিহ্ন টা এখনও আছে।
সারোয়ারঃ এত জোড়ে ডাকতেছো যে কোন কি সমস্যা হইছে?
সাহানাঃ এ..ই যে দে..খ আমা...দের হারিয়ে যাওয়া ছেলে ফারদিন। ( শামীম কে দেখিয়ে দিয়ে)
সবাই তখন অবাক হয়ে শামীমের দিকে তাকালো, সবার তাকানো দেখে শামীমের কিছুটা অসস্তি লাগলো।
ফয়সালঃ তুমি কি করে সিউর হলে মাম্মি এটাই আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভাই।
ফারজনাঃ ছোট ভাইয়া মাম্মি পাগল হয়ে গেছে বড় ভাইয়া কোথা থেকে এখানে আসবে?
তখন সাহানা বেগম সেই ফটো আর চেন টা দেখায় আর সব কিছু সবাইকে খুলে বলে। এতে সবাই সিউর হয়ে যায় শামীমই হারিয়ে যাওয়া ফারদিন। সবাই খুশি হলেও শুধু দুইজন মানুষ খুশি হতে পারলো না একজন ফারিন আর একজন তার বাবা।
সারোয়ারঃ দেখ সাহানা কোথাকার কোন রাস্তার ছেলে তোমার জীবন বাঁচালো বলে যে সে আমাদের সন্তান হবে তা কিন্তু না। এমনও তো হতে পারে ওই আসামী গুলো আমাদের পারিবারিক বিষয়ে সব জানে তাই এই ছেলে কে আমাদের পিছনে লাগিয়ে দিয়েছে।
সাহানাঃ নিজের পেঠের সন্তান কে চিনতে আমার মোটেও ভুল হয়নি? কি করলে বিশ্বাস করবে এটাই আমাদেন হারিয়ে যাওয়া ফারদিন?
সারোয়ারঃ তুমি বুঝতে চেষ্টা করো সাহানা আমাদের ছেলে এমন হতেই পারে না। আর আমাদের ফারদিন এতদিন বেঁচে থাকার কোন কথাই না। সে হয়ত মরে গেছে, আর মৃত মানুষ কখনও ফিরে আসে না।
ফারিনঃ মাম্মি, ডেড ঠিকই বলেছে। এরকম ক্ষেত ছেলে আমাদের ভাই হতেই পারে না। আমাদের কে দেখ আর এর দিকে চেয়ে দেখ কত পার্থক্য দেখেছো? আর দেখ কেমন পায়জামা পরে আছে আর তার লম্বা ফিতা কেমন বের করে রাখছে, আর পায়ের স্যান্ডেল দেখছো আমাদের বাসার কাজের ছেলেও এমন স্যান্ডেল পড়ে না।
ফারজানাঃ মাম্মি এই ছোটলোক টাকে কোথায় পেলে বের করে দাও। ওর গা দিয়ে কি গন্ধ বের হচ্ছে আমি তো বমি করে ফেলবো এক্ষুণি।
ফয়সালঃ ডেড মাম্মিকে মানষিক রোগের ডাক্তার দেখাও, এসব রাস্তার মানুষ কে নিয়ে এসে বলে সে নাকি আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভাই।
মায়ের মন বলে কথা, মা তার সন্তান কে চিনতে পেরেছে। মা কখনোই তার পেঠের সন্তান কে চিনতে ভুল করে না। এদিকে শামীম সবার কথা শুনে সেই মজুমদার বাড়ির কথা মনে পরে গেলো সেখানেও শামীম কে ঠিক এমন করেই অপমান করা হতো।
সাহানাঃ ঠিক আছে তাহলে ওর DNA টেষ্ট করবো আমি।
এ কথা বলেই সাহানা বেগম ডাক্তার কে ফোন দিলো। শামীম আগের মতই সেই জায়গায় বসে আছে, প্রায় আধা ঘন্টা পর ডাক্তার চলে আসলো।
ডাক্তারঃ ম্যাডাম আমাকে কেনো ডাকলেন কারো কি কোন সমস্যা?
সাহানাঃ কারো কোন সমস্যা নাই ডাক্তার, তবে এই ছেলের DNA এবং আমার আর আমার স্বামীর DNA টেষ্ট করে দেখবেন এই ছেলের সাথে আমাদের DNA মিলে কি না? আর DNA টেষ্ট করতে যা লাগে বলুন আর তার সব ব্যবস্থা করুন।
সাহানা বেগমের কথা মত ডাক্তার শামীমের মাথার একটা চুল সাহানা বেগমের মাথার চুল এবং DIG সারোয়ারের শরীরের লোম আর মাথার চুল নিয়ে নিলো আর বলল কালকে সন্ধ্যায় রিপোর্ট তিনি নিজেই ধরে আসবে।
শামীমঃ আমি এখন আমার এই খানে একটুও ভালো লাগতাছে না।
সাহানাঃ না যেতে পারবে না তুমি।
শামীমঃ আমি আপনারে কথা দিতাছি কাল সন্ধ্যার সময় আমি ঠিক চলে আসবো।
সাহানা বেগম যেতে দিবে না আর শামীম সেখানে থাকবে। শামীম অনেক জোড়াজুড়ি করে সেখান থেকে চলে আসে। এসেই তার থাকার ঘরে ঢুকে কাঁন্না করতে থাকে আজ অনেকদিন পর শামীম এমন অপমানিত হলো। আবার শামীমের মনে সেই পুরানা কথা জাগিয়ে দিলো। শামীম শুধু বলতেছে আব্বা তুমি ছাড়া আমারে আর এই পৃথিবীর কেউ ভালোবাসে না। আর আল্লাহর কাছে বলতেছে আল্লাহ আমি যেনো তাদের সন্তান না হই।
পরেরদিন সকালে শামীম কাজে বেরিয়ে গেলো, শামীম আজকে অনেক উদাসীন কাজে ঠিক ভাবে মন দিতে পারতেছে না। কিন্তু চাঁদ সে তো সব সময় হাসি খুশি, তাই সে শামীমের কাছে গিয়ে ওর কান গাল মাথার চুল টানা শুরু করে দিলো। মাঝে মাঝে শামীম কে কাতুকুতু দিতে লাগলো। শামীম এই মন খারাপ চাঁদ আসা মাত্র ভালো হয়ে গেলো, আসলে এখানে একমাত্র চাঁদ শামীম কে বুঝতে পারে।
চাঁদঃ আচ্ছা এবার বল তোর কি কারণে মন খারাপ?
শামীমঃ কৈ আমার তো কোন মন খারাপ নাই।
চাঁদঃ দেখ আমারে মিথ্যা বলবি না, আমি কিন্তু সেই সকাল থেকে তোরে দেখতেছি তোর মন ভিশন খারাপ।
শামীমঃ আরে ও কিছু না আব্বার কথা মনে পরছে তো তাই।
চাঁদঃ আগেও তো তোর আব্বার কথা মনে করে উদাসীন ছিলি কৈ এই রকম অস্হির অস্হির তোরে লাগে নাই। তাহলে আজ কি এমন হলো যার কারণে তোকে এমন লাগতেছে। আর তোর চোখ এত লাল কেনো নিশ্চয়ই কাঁন্না করেছিস বল।
শামীমঃ আরে থাম থাম আমি কাঁন্না করি নাই তো কালকে স্বপন স্যারের বাসা থাইকা আসার পথে বৃষ্টিতে ভিজেছি তাই এমন হইছে মনে হয় বুঝলি( মিথ্যা হাসি দিয়ে)
চাঁদঃ হাছা কৈ তাছোস তো?
শামীমঃ আরে হ হাছা কৈ তাছি।
তারপরও চাঁদ যেনো বিশ্বাস করতে চায় না, তবুও শামীমের কথা বিশ্বাস করে নিলো। চাঁদের পাগলামি দেখলে শামীমের মন যত খারাপ থাকুক না কেনো সাথে সাথে ঠিক হয়ে যায়। আর চাঁদ শামীম কে এরকম বিরক্ত করতেই থাকবে। চাঁদ আর শামীমের সম্পর্ক টা আগের তুলনায় অনেক ভালো কিন্তু শামীম চাঁদের ভালোবাসার ডাকে সারা দেয় না। আবারো কাজে মনোনিবেশ করে শামীম। বিকালের দিকে বাদল ননী গোপাল আর চাঁদ একসঙ্গে ছিলো সেই সময় শামীমও তাদের কাছে যায়।
বাদলঃ চাঁদ কালকে যে লাশ তিনটা নিয়ে আসলাম তারা কেমন করে খুন হইছে জানিস?
চাঁদঃ কৈ এখনও তো জানতেই পারলাম না।
ননী গোপালঃ আরে যে মহিলা টা মারা গেছে না তার অবৈধ সম্পর্ক ছিলো আর এক পুরুষের সাথে সেই মেরেছে।
চাঁদঃ কি বলিস তোরা?
বাদলঃ হুমম এটাই সত্যি, আর এই সত্যি টা বলেছে মৃত ব্যক্তি ৮ বছরের মেয়ে। তার চোখের সামনে সেই লোকটা হত্যা করে পালিয়ে যায় তখন বাচ্চা টা স্কুল থেকে ফিরে ঘরে ঢুকে দেখে তার বাবা মা আর ছোট ভাই কে লোক টা ধারালো চাকু দিয়ে গলা কাটতেছে। তখন সেই মেয়ে ভয়ে সেখান থেকে দৌড়ে অন্য জায়গায় পালিয়ে যায় পরে পুলিশ খোজ করে সেই মেয়েকে উদ্ধার করে আর মেয়ে টা সব বলে।
চাঁদঃ কেনো খুন করলো?
ননী গোপালঃ মহিলার সাথে খুনি লোকটার আজ প্রায় ৭-৮ মাস আগে থেকে পরিচয় হয় ঢাকার কোন এক শপিংমলে। সেখান থেকে তাদের প্রেম শুরু হয় আর ধীরে ধীরে সেটা পরকিয়ায় রুপ নেয়। মহিলার স্বামী যখন অফিসে যায় তখন ওই খুনি লোকটা বাসাতে আসে আর দুজনে শারীরিক সম্পর্ক করে প্রায় প্রতিদিন। মহিলার মেয়েটা বুঝতে পেরে তার বাবা কে বলতে চাইলে মেয়েটাকে খুন করার কথা বলে মুখ বন্ধ করে রাখে। আর কালকে তার স্বামী অফিস যাওয়ার পর তার প্রেমিক বাসাতে আসে আর সেই সময় তার স্বামীও কি প্রয়োজনে যেনো বাসাতে আসে এসে দেখে তার ছোট ছেলে মেঝে একাই খেলা করতেছে আর তার বউ আশেপাশে কোথাও নাই তখন সে বেডরুমে ঢুকে দেখে তার স্ত্রী আর আর তার প্রেমিক আত্তিকর অবস্হায়।
বাদলঃ তার স্বামী যখন এসব দেখে তাকে মারতে যাবে সেই সময় ঐ প্রেমিক টা বাধা দেয় এক সময় দুইজনের মাঝে হাতাহাতি হয় তখন স্ত্রী স্বামীর পক্ষ নেয় সেই সময় রেগে গিয়ে রান্না ঘর থেকে চাকু নিয়ে এসে আগে মহিলার স্বামীর গলা কাটে তারপর মহিলার আর শেষে যখন বাচ্চা টা এসব দেখে কাঁন্না করতেছিলো তখন বাচ্চা টাকে মারে। আর সেই খুনি এখন র্য্যারে আওয়াতায় আছে আর সব স্বীকার করেছে টিভিতে লাইভ দেখাচ্ছে।
চাঁদঃ সামান্য শরীরের চাহিদার জন্য এত কিছু হয়ে গেলো। বাদল দাদা সারাজীবন কি মানুষের গায়ের চামরা এক থাকবে?
বাদলঃ না চাঁদ
চাঁদঃ তাহলে মানুষ কেমন করে এসব কাজ করতে পারে। ঘরে স্বামী আছে দুইটা সন্তান আছে তারপরও মানুষ এসব কাজ কেমন করে করতে পারে। আরে এত রুপ যৌবনের অহংকার করে কি হবে আল্লাহর এসব আজ আছে তো কালকে নাও থাকতে পারে। আর পরকিয়া করা নারী পুরুষ কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না, এটা ইসলামের কথা। আর শরীরের চাহিদার জন্য ঐ মহিলা নিজেও জীবন দিলো তার স্বামীও জীবন দিলো আর নিঃশ্বপাপ শিশুটাও জীবন দিলো।
ননী গোপালঃ এসব কাজ করতে গিয়ে না হয় ধরা পরেছিস তাই বলে খুন করতে হবে। এখন তোর বাবা মা আত্মীয় স্বজন কি ভাববে। মানুষ কোন কাজ করার আগে ভেবে করে না এখন যে সারাজীবন জেলে নয়ত বা ফাঁসিতে ঝুলা লাগবে তোকে।।
বাদলঃ সব মানুষ যদি সব বুঝত তাহলে আমাদের দেশে এত খুন ধর্ষণ অপহরণ হতো না।
চাঁদঃ ঠিক বলেছেন দাদা।
[ গোধূলি লগ্নে আমি, এটা আমার রিয়েল আইডি আর আমার নাম মোঃ শামীম মিয়া। আমি বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। বাড়ি নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থানার মাগুড়া ইউনিয়নে। আমার জন্ম নানা বাড়িতে আমি মা আব্বা আমরা নানা বাড়িতে থাকি। আমার জীবনে চাঁদ সুপ্রিয়া বা তৃপ্তি নামে কেউ নাই আর কখনও ছিলো না এটা আমার গল্পের জন্য কল্পনা করা নাম মাত্র। আমি একটা ছোট চাকুরী করি বর্তমানে করোনার জন্য বাড়িতে আছি আর এই চাকরির সুবাধে বাংলাদেশের প্রায় ৩০+ জেলা ঘুরেছি আমি তাই গল্পে আমি যেসব জায়গার নাম বলি বা তাদের কাজ সম্পর্কে বলি এসব নিজের চোখে দেখা। আশা করি সবার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন]
মানুষ এতটা খারাপ হয় শামীম বুঝতে পারে নাই, শরীরের সুখের জন্য মানুষ হয়ে মানুষ কে খুন করে আর নিজের স্বামী সন্তান কে এই ভাবে ধোকা দেয় কোন স্ত্রী। শামীম মনে মনে ভাবে আল্লাহর দুনিয়াতে আর কত কি দেখতে হবে কে জানে। এদিকে সময় যত গড়াচ্ছে শামীমের মনে ভয় ততবেশি বাসা বাধতেছে। সন্ধ্যার পর কাউকে কোন না বলে শামীম রওনা দিলো সাহানা বেগমের বাসার উদ্দেশ্য। শামীম বাসার ভিতরে ঢুকে দেখে আগে থেকেই সবাই এক সাথে বসে আছে আর সাহানা বেগম কে খুব খুশি দেখাচ্ছে। আর সবচেয়ে বেশি মন খারাপ ফারিনের আর তার ছোট ভাই বোনের।
সাহানাঃ বাবা তুই এসেছিস, আয় আয় ভিতরে আয়।
শামীম তখন সাহানা বেগমের কাছে এগিয়ে গেলো তখন সাহানা বেগম সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো।
সাহানাঃ বলেছিলাম না এটাই আমার আমার হারিয়ে যাওয়া ফারদিন। ফারজানা ফয়সাল তোরা এখন থেকে শামীম কে সম্মান দিয়ে কথা বলবি বুঝলি।
সারোয়ারঃ যাহোক নিজের সন্তান কে তো ফিরে পেয়েছি, কালকের ব্যবহারের জন্য দুঃখীত ফারদিন।
সাহানাঃ তাহলে আজ থেকে তুই এখানেই থাকবি বুঝলি।
ফারিনঃ মাম্মি ডেড ও এই বাসায় থাকলে আমরা কেউ এখানে থাকবো না এসব গাইয়া ভুত ক্ষেতের সাথে আমাদের যায় না বুঝলে। আর আমি কালকেই আমার মেয়েকে নিয়ে শ্বশুড় বাড়ি চলে যাবো।
সাহানাঃ দেখ ফারিন তোর বিয়ে হয়েছে তুই চাইলেও এখানে একেবারের জন্য থাকতে পারিস না। আর কারো যদি শামীমের থাকা নিয়ে কোন সমস্যা হয় তাহলে সে যেতে পারো।
শামীমঃ দেখেন আমি এখানে থাকতে পারবো না, হ্যাঁ প্রতিদিন একবার করে আসবো।
ফারজানাঃ দেখেছো মাম্মি, তোমাকে কি বলে?
সাহানাঃ ফারদিন কি বলিস আমি তোর মা হই তাই তুইও ওদের মত মাম্মি বলে আমাকে ডাকবি।
শামীমঃ মামি, ছি ছি এসব কি মামি বলতে পারবো না। মামী তো মামার বউ কে বলে মাকে কেউ মামি বলে।
ফয়সালঃ দেখেছো ডেডি তোমার ক্ষেত ছেলে বলে কি?
শামীমঃ নিজের বাপ কে কেউ ডেট বলে, আমি ওসব বলে ডাকতে পারবো না। আমি মা আর বাবা বলেই ডাকবো।
সাহানাঃ তোর যেটা ইচ্ছা সেটাই বলে ডাকবি।
মর্জিনা টেবিলে খাবার সাজাও আজ আমার পরিবার পরি পূর্ণ আজ সবাই এক সাথে খাবো। সারোয়ার আর সাহানা বেগমের মনটা খুশি হলেও বাকি সবার মন একটুও খুশি হলো না। ইচ্ছা না থাকা সত্যেও তারা শামীম কে নিয়ে খেতে লাগলো। খাওয়ার এক পর্যায়ে ফারজানা বমি করার মত ভাব করে খাবার টেবিল থেকে চলে গেলো একে একে বাকি দুজন নানান অজুহাত দেখিয়ে চলে গেলো। তা দেখে সাহানা বেগম মন খারাপ করে ফেলল।
সারোয়ারঃ আরে তুমি কেনো মন খারাপ করতেছো দেখবে তোমার ছেলে মেয়ে পরে ঠিকই ফারদিন কে মেনে নিবে।
সাহানাঃ তাই যেনো হয়।
সবার মত শামীমও ক্ষেতে পারে নাই, কারণ শামীম বুঝে গেছে তারা কেউ শামীম কে সহ্য করতে পারে না। এরকম গাইয়া ভুতের সাথে তো কখনই না। খাওয়ার টেবিল থেকে শামীম উঠে যখন বাইরে যাবে তখন
সাহানাঃ বাবা তুই এই রাতে কোথায় যাবি?
শামীমঃ মা আমার কাপড় পোষাক যা আছে তা নিয়ে আসতে হবে আর যাদের সাথে থাকি তাদের কে তো বলতে হবে।
সারোয়ারঃ কালকে যেও,
শামীমঃ না রাতে না গেলে ওরা চিন্তা করবে সবাই
তারপর শামীম সেখান থেকে চলে আসে যেখানে থাকত সেখানে। তার ভাইবোন শামীম দেখতে না পারুক মা বাবা তো তাকে দেখতে পারতেছে এটাই অনেক। যাহোক অবশেষে মায়ের আর বাবার ভালোবাসা টা পাবো তো। তারপর নানী গোপাল আর বাদল কে বলে সেখান থেকে চলে আসে। আসার সময় শুধু বলে কালকে এসে সব বলবো এখন যাই।
____________________
ফারিন ফারজানা ফয়সাল তিনজন ছাঁদের এক কর্ণারে দাঁড়িয়ে আছে আর তিনজনেই খুব চিন্তিত।
ফারজানাঃ আপু কিছু একটা কর আমার ওই গাইয়া ছোটলোক টাকে সহ্য হচ্ছে না তাকে দেখলে কেমন বমি বমি আসে আমার। কি সব পোষাক পরে ছি একেবারে অসহ্য আপু।
ফয়সালঃ আপু দেখেছিস কিভাবে কথা বলে মাম্মিকে৷ মামি আর ডেডি ডেট বলে। আর খাওয়ার সময় দেখেছেস কিভাব খায় আর পানি ঢকঢক করে খেলো কি বিছ্রিরী।
ফারিনঃ একে তো আমি ছোট বেলা থাকতে সহ্য করতে পারতাম না। তাই তো ওর পেঠে চাকু ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। আমার সব জিনিসে সব সময় ভাগ বসাতো এমন মাম্মি ডেডির ভালোবাসার মাঝেও। তাই ওটাকে চিটাগাং শহরে একা ছেড়ে দিয়ে গাড়িতে বসে বাসা এসে মিথ্যা কথা বলি ও আমার সাথে ছিলো না। তখন মাম্মি ডেডি ঘুমিয়ে ছিলো সেই সুযোগে ওটাকে। কিন্তু আবার কোথা থেকে যে উড়ে এসে জুরে বসল।
ফারজানাঃ এত কিছু করেছিলি তুই আপু সেই সময়।
ফয়সালঃ তাহলে তো তোর কাছে ওকে তারানোর নিশ্চয়ই অনেক বুদ্ধি আছে বল না।
ফারিনঃ ওকে প্রথমে ডেডির চোখে খারাপ বানাতে হবে তার পর মাম্মির তাহলে পরের বাকি কাজ টা আমি করে ফেলবো বুঝলি। ( শয়তানি হাসি দিয়ে)
_____________________
শামীম ওর সব কাপড় প্রয়োজনিয় সব জিনিস এক ব্যাগে ভরে নিয়ে এসেছে। তারপর তার মা তাকে সেই আগে যেরুমে শামীম থাকত তাকে সেই রুমে থাকতে দিলো। শামীম ব্যাগ থেকে ওর সব কিছু বের করে রাখলো, তারপর রুম টা ভালো করে দেখে নিলো রুম টা অনেক সুন্দর। কোন কিছু না ভেবে দিলো এক ঘুম। পরেরদিন সকালে সবাই একসাথে নাস্তা করলেও শামীম গেলো না কারণ শামীম গেলে ওদের কারো খাওয়া হবে না। আর এই সুযোগে ফারিন ওর ডেডি কে বলতেছে।
ফারিনঃ দেখেছো ডেড ফারদিন কত বড় বেয়াদব, সবাই নাস্তা করতেছি একসাথে আর ওর আসার কোন নাম গন্ধই নাই। আসলে তোমাদের কে মনে হয় মন থেকে মানতে পারতেছে না।
ফারিনের কথার যুক্তি আছে সেটা বুঝতে পারলো সারোয়ার হোসেন। তাই আর কোন না বলে খেয়ে দেয়ে ওনার অফিসে চলে গেলো উনি, আর সাহানা বেগম যাওয়ার আগে শামীমের সাথে দেখা করে চলে গেলো তার আদালতে। ওনারা চলে যাওয়ার পর শামীমও ওর কাজের জন্য বেরিয়ে গেলো। শামীম কে কাজে আসা দেখতে পেয়ে চাঁদ বাদল ননী গোপাল এগিয়ে আসল।
চাঁদঃ শামীম তুই নাকি কাল এখান থেকে কোথায় চলে গিয়েছিস?
শামীমঃ হুমম
চাঁদঃ কেনো
তখন শামীম চাঁদ ননী গোপাল বাদল কে সব খুলে বলল। শামীমের কথা শুনে ওরা অনেক খুশি হলো যাহোক এতদিনে শামীম সুখের দেখা পেলো। সবাই যে যার মত কাজে গেলো কিছুক্ষণ পর চাঁদ শামীমের কাছে চলে আসলো।
চাঁদঃ আমাদের সবাই কে ছেড়ে এখন থেকে তোর বাবা মায়ের কাছে থাকবি তাই না( মন মরা হয়ে)
শামীমঃ ওখানে তো এখন আমি না চাইলেও থাকা লাগবে। কারণ তারা আমার বাবা মা, আর বাবা মার ভালোবাসা কেমন তা আমি পেতে চাই চাঁদ।
চাঁদঃ ওখানে তাহলে তুই থাকবি, আর আমাদের কেও ভুলে যাবি তাই না। আর কাজ করাও তাহলে বাদ দিবি?
শামীমঃ কি সব পাগলের মত বলিস চাঁদ কাজ করা বাদ দিলে তৃপ্তি পুতুল সোহাগি এদের কেমন করে টাকা দিবো।
চাঁদঃ তোর বাপে পুলিশের DIG তোর মা জজ তাহলে তোদের কোন টাকা পয়সার সমস্যা আছে নাকি?
শামীমঃ চাঁদ ওই বাসায় আরো তিনজন আছে যারা আমাকে দেখতেই পারেনা। কোন না কোন একদিন সেই বাসা থেকে আমাকে তারা বের করে দিবে বুঝলি। তাই আমি এই চাকরি ছাড়তেছি না আর তোদের ছেড়ে কোথাও যাইতেছিও না।
চাঁদঃ দেখতে পারে না মানে বুঝলাম না আমি।
তখন শামীম এক এক করে সব কিছু বলল চাঁদ কে।
No comments