ভালোবাসায়_বেধে_রেখো💞 পর্বঃ০৫
তারপর ইশিতাকে পড়িয়ে তাহমিরা ত্রিশাদের রুমে গিয়ে দেখলো ত্রিশাদ জানালার পাশে রকিং চেয়ারে বসে আছে।তাহমিরা গলার সুর তুলে বলল
"ভেতরে আসতে পারি?"
"ওহ!তাহমিরা আসুন।"
তাহমিরা রুমে এসে ত্রিশাদের মুখামুখি একটা চেয়ার টেনে বসে বলল
"আচ্ছা আপনি সবসময় আমাকে চিনেন কিভাবে?"
"পায়ের শব্দ আর কথা শুনে বুঝে ফেলি। "
"ও আচ্ছা। "
তাহমিরা ত্রিশাদের সাথে কথা বলতে বলতে খেয়াল করলো ওর বাম হাতে তিনটা কাটা দাগ।এখনো শুকায় নি রক্ত জমাট বেধে লাল হয়ে আছে।তাহমিরা কৌতুহলী হয়ে জিগ্যেস করলো
"আপনার বাম হাত কাটলো কিভাবে?"
ত্রিশাদ তৎক্ষণাৎ ওর হাত লুকাতে লুকাতে বলল
"কই কিছু না তো।"
"লুকিয়ে লাভ নেই আমি দেখেছি আর আপনি ইচ্ছা করে আপনার হাত কেটেছেন রাইট?"
ত্রিশাদ কিছুই বলল না মাথা নিচু করে রাখলো।
তাহমিরা আবার বলতে শুরু করলো
"এমন কেনো করলেন ত্রিশাদ?"
"আমি ওকে ভুলতে পারছি না খুব কষ্ট হচ্ছে। "
তাহমিরা ত্রিশাদের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কথা এড়িয়ে বলল
"আপনার নাম্বারটা দেওয়া যাবে?"
"কেনো?"
তাহমিরা হেসে বলল
"আপনার সাথে লাইন মারবো।"
ত্রিশাদ তাহমিরার ইয়ার্কি বুঝতে পেরে বলল
"ও আগে বলবেন না।দাড়ান দিচ্ছি। "
ত্রিশাদ তাহমিরাকে নিজের নাম্বার দিলো। তারপর আরো কিছুক্ষণ ত্রিশাদের সাথে কথা বলে তাহমিরা বাসায় চলে এলো।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলো। পড়ার ফাকে একটু এফ বি তে ঢুকে পুরোনো কিছু বান্ধবীদের খোঁজ নিলো।তারপর আরো ঘন্টাখানেক পড়ে বাবা মায়ের সাথে খেতে বসলো।খাওয়ার মাঝেই হঠাৎ তাহমিরার বাবা নরম স্বরে বলে উঠলেন
"কি রে মা!তোর সকালে এসেছিলো যে ওই ছেলেটাকে পছন্দ হয়েছে? "
তাহমিরা কপাল কুচকে বলল
"না হয় নি।"
"কেনো?"
"খারাপ ব্যাবহার করেছে।"
"আমাকে আগে বললি না কেনো ওর খবর করে নিতাম।আচ্ছা আমি কালকে সকালেই বলে দিবো যে ছেলে আমাদের পছন্দ হয় নি।"
তাহমিরা বেশ খুশি হলো বাবার কথাটা শুনে কিন্তু খুশীটা চেহারায় ফোটালো না।তারপর সবাই একসাথে খেয়ে যে যার ঘরে চলে গেলো।তাহমিরা রুমে এসেই ফোনটা হাতে নিয়ে ত্রিশাদকে ফোন দিলো।তিনবার রিং হওয়ার পর ত্রিশাদ ফোনটা রিসিভ করে বলল
"হ্যালো,কে বলছেন?"
তাহমিরা হেয়ালি করে বলল
"বলুনতো আমি কে?"
এবার ত্রিশাদ হেসে ফেলল। তারপর বলল
"আপনি ম্যাডাম তাহমিরা। রাইট?"
তাহমিরা অবাক হয়ে বলল
"ফোনেও ভয়েস চিনে ফেললেন।"
তাহমিরার কথা শুনে ত্রিশাদ হালকা হেসে জিগ্যেস করলো
"রাতে খাবার খেয়েছেন?"
"হ্যাঁ মাত্রই।আপনি?"
"আমি এখনো খাই নি।"
"কেনো?"
"ভালো লাগছে না।"
তাহমিরা কড়া গলায় বলল
"এক্ষুণি খেয়ে আসবেন।কুইক আমি দশ মিনিট পর ফোন দিচ্ছি। তখনও যদি শুনি না খান তবে আপনাকে লাল পিপড়ার কামড় খাওয়াবো।"
ত্রিশাদ হেসে বলল
"আচ্ছা খেয়ে আসছি।আমার আবার লাল পিপড়ার কামড় খাওয়ার ইচ্ছা নাই।"
তারপর ত্রিশাদ ফোন রেখে খেতে চলে যায়।খাওয়া শেষ করে আরো কিছুক্ষণ তাহমিরার সাথে কথা বলে ঘুমিয়ে পড়ে।
এদিকে তাহমিরা ভাবছে ত্রিশাদকে নরমাল করার কথা অনেক বেশী হতাশায় আছে।এখন বড়ো ধরনের ভুলও করে বসতে পারে।তাই তাকে সঙ্গ দিতে হবে।এগুলো ভাবতে ভাবতেই তাহমিরা ঘুমিয়ে পড়লো।
সকাল ৮.৩০...
তাহমিরা বসে বসে টিভি দেখছে। একটু পর রেডি হয়ে ভার্সিটিতে যাবে।হঠাৎ তাহমিরার মা রান্না ঘর থেকে এসে ওকে বলল
"তাহু ওই যে কালকের ছেলেটা না মানা করে দিয়েছে তোর বাবা মানা করার আগেই। "
মায়ের কথা শুনে তাহমিরা একটা বাঁকা হাসি দিলো।তারপর কোনো জবাব না দিয়েই আপনমনে টিভি দেখে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।
একটা ক্লসা করার পর আর ক্লাস করতে ভালো লাগছে না তাহমিরার তাই ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে এসে কি করা যায় ভাবতে লাগলো চট করে মাথায় বুদ্ধি এলো ত্রিশাদকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা। ফোন করল ত্রিশাদকে।ত্রিশাদ ফোন তুলতেই তাহমিরা জিগ্যেস করলো
"ত্রিশাদ,আপনি কোথায়?"
"কেনো?বাসায় ই তো আছি।"
"আপনার কোনো জরুরী কাজ আছে এই মুহুর্তে?"
"না তো,কেনো?"
"আচ্ছা তাহলে আপনি বাসায় থাকেন আমি আসছি আপনাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবো।"
ত্রিশাদ অবাক হয়ে বলল
"হঠাৎ? "
তাহমিরা হেসে বলল
"আরে লাইন মারছি তো তাই।"
ত্রিশাদ হেসে বলল
"আচ্ছা আসুন।অপেক্ষায় আছি।"
ফোন রেখে তাহমিরা ত্রিশাদের বাসার সামনে চলে গেলো।কিন্তু ঘরে ঢুকলো না।ফোন বের করে ত্রিশাদকে বাইরে আসতে বলল
ত্রিশাদ কোনোমতে বাইরে এসে বলল
"আরে ভেতরে আসলেন না যে?"
"ঘুরতে বের হবো তো তাই।আপনি রেডি তো?"
"হ্যা,একদম রেডি।"
তাহমিরা ত্রিশাদকে নিয়ে একটা রিকশায় উঠে পড়লো।তারপর হাতিরঝিলে এসে নেমে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ফুচকার দোকানের সামনে এসে ত্রিশাদকে বলল
"আপনি বেঞ্চে বসেন আমি আপনার জন্য ফুচকা আর আমার জন্য চটপটি নিয়ে আসি।"
ত্রিশাদ তাহমিরার কথায় সায় দিলো।তাহমিরা ত্রিশাদকে বসিয়ে ফুচকা,চটপটি আনতে গেলো।ফিরে এসে দেখলো একটা মহিলা ত্রিশাদের কলার ধরে গালাগালি করছে তাহমিরা তাড়াতাড়ি সেখানে গেলো।তারপর মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলল
"কি হয়েছে ওনাকে বকছেন কেনো?"
মহিলাটা নাক মুখ কুচকে বলল
"ছেলেটা অসভ্য আমি যাওয়ার সময় পা বাড়িয়ে রেখেছিলো যাতে আমি পড়ে যাই।"
তাহমিরা মহিলাটিকে বলল
"উনার হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি।"
মহিলা কিছু না বলে রাগে গজরাতে গজরাতে চলে গেলো।তারপর তাহমিরা ত্রিশাদের পাশে বসে ওর হাতে ফুচকার প্লেট টি দিলো।ত্রিশাদ অনুতপ্ত গলায় বলল
"আমার জন্যই আপনাকে ছোট হতে হলো।ক্ষমা করবেন আমাকে।"
তাহমিরা তৎক্ষণাৎ ত্রিশাদের হাত থেকে ফুচকার প্লেট টা নিয়ে পাশে রাখলো।ঘটনার আকস্মিকতায় ত্রিশাদ নড়াচড়া বন্ধ করে দিলো।তাহমিরা নিজের হাত ত্রিশাদের হাতের মাঝখানে দিয়ে হ্যান্ডসেক এর মতো করে বলল
"আজকে থেকে আমি আর আপনি বন্ধু। আর বন্ধু মানে নো সরি নো থ্যাংকস। আর ওই মহিলাটার কাছে সরিতো বলেছি আমার বন্ধুর জন্য।আর উনিতো জানতো না আপনার সমস্যার কথা।তাই এমন ভাবে কথা বলেছেন।এতে কষ্ট পাওয়ার কোনো কারণ নেই। "
ত্রিশাদ তাহমিরার কথা গুলো শুনে এক প্রকার মুগ্ধ হয়ে গেছে। ওর এখন ইচ্ছে করছে এক পলকের জন্য হলেও তাহমিরার চেহারাটা দেখার। কিন্তু একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে হেসে বলল
"ধন্যবাদ দিতে না করেছেন তাই দিচ্ছি না।কিন্তু আমাকে আপনার বন্ধু বানানোর জন্য কৃতজ্ঞ। "
তাহমিরা হেসে বলল
"আচ্ছা এবার তাড়াতাড়ি শেষ করুন আরো কয়েকটা জায়গায় ঘুরবো।"
খেতে খেতেই ত্রিশাদ তাহমিরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
"বন্ধুকে কিন্তু আপনি করে বলে না।তুমি করে বলে।"
তাহমিরা হেসে বলল
"বেশ তো তাই হবে।তোমার খাওয়া শেষ হয়েছে ত্রিশাদ?"
ত্রিশাদ বেশ খুশি হয়ে বলল
"হুম হয়েছে চলো এবার উঠি।"
তাহমিরা আর ত্রিশাদ মোটামুটি অনেক জায়গায় ঘুরলো।বিকেল চারটায় তাহমিরা আর ত্রিশাদ ত্রিশাদ দের বাসায় গেলো।কারণ ইশিতাকে পড়িয়ে ওকে বাসায় ফিরতে হবে।
ইশিতাকে পড়িয়ে তাহমিরা বাসায় চলে গেলো।বাসায় গিয়ে নিজের রুমে ঢুকেই খাটে ঝপাৎ করে পড়ে গেলো তার ঘুম।
রাত ৯.০০ টা....
তাহমিরা ঘুম থেকে উঠে বাবা মায়ের সাথে খেয়ে রুমে চলে আসলো।তারপর ত্রিশাদকে ফোন দিলো।ত্রিশাদ ফোন রিসিভ করে বলল
"হ্যা, তাহমিরা বলো।"
তাহমিরা অবাক হয়ে বলল
"আজকে তো আমি কথা বলি নি তাহলে তুমি চিনলে কিভাবে?"
ত্রিশাদ হেসে বলল
"তোমার ফোনের রিং টোন আলাদা সেভ করছি ইশিতাকে দিয়ে।"
"ও, এই ব্যাপার।আচ্ছা খাওয়া হইছে? "
"হুম হইছে। তোমার?"
"আমারো হইছে। "
ত্রিশাদ আর তাহমিরা আরো কিছুক্ষণ গল্প করলো তারপর ফোন রেখে ত্রিশাদ ভাবছে তাহমিরা মেয়েটা অনেক ভালো অতি সহজে মানুষকে আপন করতে পারে।আজকে সারাদিন একটুও খারাপ লাগে নি ওর সাথে থাকতে।যাক ভালোই হলো এই সময় একজনকে পাশে পাওয়া গেলো।নাহলেতো সারাদিন ঘরে বসে থাকতে হয়।তারিফ অফিসে থাকে আর ইশিতা স্কুলে। মায়ের সাথেই বা আর কতক্ষণ কথা বলা যায়।এগুলো ভাবতে ভাবতেই ত্রিশাদ ঘুমিয়ে পড়লো
এদিকে তাহমিরা ভাবছে ছেলেটা অনেক সহজ সরল।ভালো মনের মানুষ। ওকে স্বাভাবিকে করতে পারলেই তাহমিরার শান্তি লাগবে।এগুলো ভাবতে ভাবতে এক পর্যায়ে তাহমিরাও ঘুমিয়ে পড়লো।
No comments