Header Ads

Header ADS

ভালোবাসায়_বেধে_রেখো💞 পর্বঃ০৬

 সকাল ৭.০০ টা...

তাহমিরার ঘুম থেকে উঠেই মনে পড়লো আজকেতো শুক্রবার।তাই আবার ঘুমিয়ে গেলো।তারপর দশটায় উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করছে আর ফেসবুকিং করছে।একটু পর দরজায় বেল বাজলো।তাহমিরা উঠে গেলো দরজা খোলার জন্য। ও জানে এখন কাউকে পাওয়া যাবে না শুধু একটা চিঠি ছাড়া।ঠিক তাই হলো।তাহমিরা চিঠিটা নিয়ে একটা বক্সে রেখে আবার খাওয়াতে মন দিলো।তারপর খাওয়া শেষ করে রান্না ঘরে গেলো রান্না করতে।আজকে ওকেই রান্না করতে হবে কারণ ওর বাবা-মা দুজনই ছোট ফুপির বাড়ি গেছে। তাহমিরা ঘুম থেকে উঠে নি বলে ওকে নিয়ে যেতে পারে নি।রান্না ঘরে ঢুকেই ও চিন্তা করলো আজকে খিচুড়ি খাবে।তাই চাল-ডাল ধুয়ে খিচুড়ি বসালো চুলায় তারপর একটা চেয়ারে বসে ত্রিশাদকে ফোন দিলো।ত্রিশাদ ফোন ধরতেই তাহমিরা বলে উঠলো
"শুভ সকাল।"
"শুভ সকাল তোমাকেও।"
"আচ্ছা কি করছো?"
"এইতো তোমার সাথেই কথা বলছি।"
তাহমিরা হেসে ফেলল।তারপর বলল
"আমার সাথে কথা বলার পাশাপাশি কি করছো?"
"কিছুই না শুয়ে আছি।তুমি কি করো?"
"খিচুড়ি রান্না করি।"
ত্রিশাদ অবাক হয়ে বলল
"আজকে তুমি রান্না করছো যে?"
তাহমিরা মজা করে বলল
"তোমাকে খাওয়াবো তো তাই।"
ত্রিশাদ হেসে বলল
"ও আচ্ছা। কখন আনবে?"
তাহমিরা চট করে কিছু একটা ভেবে বলল
"বিকেলে তৈরি থেকো।আমি আসবো।"
"একি!তুমি সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেনো?আমি তো মজা করছিলাম।"
"মজা করো আর যাই করো আমি আসবো।"
"আচ্ছা এসো।"
তারপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে তাহমিরা রান্নায় মনোযোগ দেয়।রান্না শেষ হলে শাওয়ার নিয়ে ছাদে গিয়ে চুল শুকানোর জন্য দাড়ায়।তারপর কিছুটা শুকানো হলে ঘরে এসে নামাজ পড়ে খেতে বসে।খাওয়া শেষে সবকিছু গুছিয়ে রুমে চলে আসে।কিছুক্ষণ ছবি একে রেডি হওয়ার জন্য উঠে দাড়ায়।আলমারি খুলতেই কৃষ্ণচুড়া রঙের শাড়ীটায় চোখ আটকে যায় ওর।শাড়ীটা বের করে পরে নেয়।তারপর চুলগুলো একসাইডে রেখে টিফিন বক্সে খিচুড়ি বেড়ে ত্রিশাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।বাড়ির সামনে এসেই ত্রিশাদকে ফোন দেয় বাইরে আসার জন্য। ত্রিশাদ হাতড়ে হাতড়ে বাইরে আসতেই তাহমিরা বলল
"ত্রিশাদ,বাসায় কি কেউ নেই?"
"না ওরা শপিংয়ে গেছে। "
"ওহ!চলো নদীর পাড়ে যাই।"
ত্রিশাদ মাথা নেড়ে সায় দিলো।তারপর তাহমিরা আর ত্রিশাদ নদীর পাড়ে গিয়ে বসলো।টিফিন বক্স খুলে ত্রিশাদের হাতে দিয়ে বলে
"খাও,তোমার জন্য খিচুড়ি আনছি।"
ত্রিশাদ হাতে নিয়েছে ঠিকিই কিন্তু খাচ্ছে না।এটা দেখে তাহমিরা জন জিগ্যেস করলো
"কি হলো তুমি খাচ্ছো না কেনো?"
"নখ কাটতে গিয়ে আঙুলের কোণা দিয়ে মাংস কেটে গেছে তাই খাবার হাত দিলে জ্বলা করে।আর তুমি তো চামুচ ও আনো নাই।"
"ওহ!একদমই ভুলে গিয়েছিলাম।আর তুমি সাবধানে নখ কাটবে তো নাকি?না পারলে তারিফ অথবা ইশিতাকে বলতে।এখন আর কি করার।তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে খাইয়ে দেই?"
ত্রিশাদ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল
"আচ্ছা দাও।"
তারপর তাহমিরা ত্রিশাদকে খিচুড়ি খাওয়াতে আরম্ভ করলো। এই প্রথম ও কোনো ছেলেকে খাইয়ে দিচ্ছে তাই অন্যরকম একটা অনুভুতি লাগছে।তারপর ত্রিশাদের ঠোঁট বারবার তাহমিরার আঙুলে লাগছে।খাওয়ানো শেষ করে ত্রিশাদকে পানি খাইয়ে বলল
"খিচুড়ি কেমন হয়েছে? "
"অনেক ভালো। সত্যি খুব ভালো লাগছে।নদীর হিম শীতল বাতাস সেই সাথে খিচুড়ি উফফ দারুণ। "
তাহমিরা ত্রিশাদের কথা শুনে মুচকি হাসলো।কিন্তু ত্রিশাদ দেখতে পেলো না।তারপর ত্রিশাদকে উদ্দেশ্য করে তাহমিরা বলল
"চলো হাটি।"
"হুম চলো।"
তাহমিরা উঠে ত্রিশাদের হাত ধরলো তারপর দুজনেই হাটতে লাগলো।অনেকক্ষণ নদীর পাড়ে হেটে তাহমিরা ত্রিশাদকে বাড়ি পৌঁছে দেয় আজকে শুক্রবার হওয়ায় তাহমিরা ইশিতাকে আজ পড়ায় নি।
তাহমিরা বাসায় ফিরে শাড়ী চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলো।কিন্তু পড়ায় ঠিক করে মন বসছে না।বারবার শুধু ত্রিশাদের ঠোঁটে হাতের ছোয়া লাগার দৃশ্যটা ভেসে উঠছে।তাই পড়া ছেড়ে তাহমিরা বিছানায় এসে বসলো।একটু আগেই ওর মা ফোন করে জানিয়েছে তারা কালকে ফিরবে আর ওকে সাবধানে থাকতে বলেছে। হঠাৎ করেই তাহমিরার চিঠিটার কথা মনে পড়ে গেলো।তারপর চিঠিটা নিয়ে খুলে পড়তে আরম্ভ করলো
"প্রেয়শী"
আজকে কিছুই মাথায় আসছে না আমার কি লিখবো কিছুই বুঝতে পারছি না তাই আমার পছন্দের একটা কবিতাই লিখে দিচ্ছি
'আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরজা খুলে দেবার জন্য।
বাইরে থেকে দরজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক। আমি হাত পাখানিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না।
আমি জানি এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী-সেবার দায় থেকে।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুকঃ
আমার জল লাগবে কিনা, আমার নুন লাগবে কিনা,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরোও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কিনা।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভেতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক। কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুকঃ “তোমার চোখ এতো লাল কেন?(নির্মলেন্দু গুণ)'
কবিতাটা পড়ে চিঠিটা ভাজ করে ফেলো তাহমিরা।তারপর চোখ বন্ধ করে রইলো যেনো চোখ টেনেও খোলা যাবে না।একপর্যায়ে তাহমিরা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।
পরের দিন সকাল ৭.০০ টা
তাহমিরা ঘুম থেকে উঠে নিজের জন্য নাস্তা বানিয়ে টিভি দেখতে দেখতে খেয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো।আজকে একটা ক্লাস হয়েই আর ক্লাস হয় নি তাই তাহমিরা গেটের বাইরে আসতেই দেখলো
ত্রিশাদ দাড়িয়ে আছে গেটের সামনে।ত্রিশাদকে দেখে তাহমিরার মুখে অজান্তেই এক টুকরো হাসি ফুটে উঠলো।ওর দিকে এগুতে এগুতেই খেয়াল করলো তারিন ওর তিকে তেড়ে যাচ্ছি তাহমিরা কিছু না ভেবেই দৌড়ে গেলো ততক্ষণে তারিন ত্রিশাদের গালে হাত তুলতে নিলেই তাহমিরা ধরে ফেলে।তারিন চোখে মুখে বিষ্ময় নিয়ে তাহমিরার দিকে তাকিয়ে আছে।তাহমিরা ওর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল
"কি হলো তারিন ওকে মারতে নিলে কেনো?"
"ওকে আমি একশোবার বলছি যে ভার্সিটির সামনে আসতে না কিন্তু দেখো বেহায়ার মতো আজকেও চলে আসলো।"
তাহমিরা তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বলল
"ও তোমার জন্য নয় আমার জন্য এসেছে। "
তারিন চমকে বলল
"মানে?"
"মানে হলো ও আমার বন্ধু তাই এখানে দাড়িয়ে আছে।"
তারিন কিছু না বলে দু মিনিট চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে হুট করেই হাসতে হাসতে বলল
"এই প্রতিবন্ধী তোমার বন্ধু।আল্লাহ কি বিনোদন। "
তারিনের কথা শুনে তাহমিরার রাগটা চড়াও হয়ে গেলো।তারপর শক্ত মুখে বলল
"ওকে আর কখনো প্রতিবন্ধী বলবে না।বুঝেছে আর বললেতো জানও কি করবো।"
তারিন কিছু না বলে রাগে ফোপাতে ফোপাতে চলে গেলো।তারিন যাওয়ার পর ত্রিশাদ কৃতজ্ঞতার সুরে বলল
"বাচালে আমায়।"
"বন্ধু তো তাই।"
"হুম।"
"এখন হঠাৎ চলে এলে কেনো?"
"তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছিলো তাই ইশিতাকে বললাম দিয়ে আসতে।"
"ওহ আচ্ছা চলো।"
ওরা ভার্সিটি থেকে বের হয়ে.....

No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.