নিয়তি( এ কেমন ভালবাসা)----পর্বঃ ১২
তৃপ্তি গোসল করে এসে দেখে শামীম বিঘোড়ে ঘুম পারতেছে। দেখে মনে হয় এমন প্রশান্তির ঘুম সে কখনও পারে নাই। শামীমের ঘুমন্ত মুখখানি দেখে তৃপ্তির ভিতরে মোচর দিয়ে উঠল। এই তো কয়েক মাস আগেও শামীম কত ভালো ছিলো মুখটা তার কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। শামীমের দিকে আর তাকিয়ে না থেকে তৃপ্তি আবারো রান্না বসালো রাতের জন্য। তৃপ্তির রান্না করা শেষ হয়ে গেলে তৃপ্তি শামীম কে ঘুম থেকে তুলে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে হাত মুখ ভালো করে নিজে ধুয়ে দেয় তার নিজের ওরনা দিয়ে ভাইয়ের হাত মুখ মুচে দেয়। শামীম কে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে তৃপ্তি নিজ হাতে আবারো শামীম কে খাইয়ে দেয়। তৃপ্তি যে ১০ দিন ছুটিতে তার বাসাতে ছিলো শামীম সে ১০ দিন তিন বেলা তৃপ্তির হাতে খেয়েছে। এই ১০ দিনে শামীমের বাবা মা শামীমের সাথে ঠিক ভাবে কথা বলে নাই আর ওর ভাইবোন যত পেরেছে অপমান করেছে শামীম কে।________________________
সুপ্রিয়া সৌরভের সাথে চিটাগাং আসার পর থেকে সৌরভ কে লাগিয়ে দিয়েছে শামীম কে খোজার জন্য। বেচার সৌরভও শামীম কে খোজার জন্য ব্যস্ত কারণ সৌরভ যদি সেদিন ঐ কাজটা না করত তাহলে শামীম আজকে ওর আব্বার কাছে থাকত। সৌরভের নিজে কে অপরাধী মনে হয় তার শামীমের দেখা পেতে হবে তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। সৌরভ পুরা চার মাস চিটাগাং শহরের আনাচে-কানাচেতে শামীম কে খুঁজে কিন্তু কোথাও পায় না। শেষে লোক লাগিয়ে দেয় পুরা কক্সবাজার জেলা খোঁজ করার জন্য যদি এই পাহাড়ি সাগর এলাকায় শামীম কোথাও থাকে কিন্তু না আরো তিন মাস খোঁজ করার পর তারা শামীমের দেখা পেলো না। এদিকে শামীমের আব্বা শামীমের জন্য প্রায় পাগল হয়ে গেছে। সব সময় শুধু শামীম শামীম করে চাইলেও শামীম কে ভুলে যেতে পারে না রহিম মিয়া। কেউ যদি চিটাগাং শহর থেকে আসে তাকেই শামীমের কথা জিজ্ঞেস করে কিন্তু, না ছাড়া হ্যাঁ শুনতে পায় না। সবাই এক প্রকার ধারণা করে নিয়েছে হয় শামীম সাগরে ডুবে মরেছে নয়ত বা কেউ শামীম কে মেরে ফেলেছে। সবাই শামীমের মৃত্যুর কথা বিশ্বাস করলেও রহিম মিয়া বিশ্বাস করে না কারণ তিনি জানেন তার ছেলে মরতে পারে না আর কারো কোন ক্ষতি করে নাই যে তারা তাকে মেরে ফেলবে তবুও একটা ভয় থেকে যায়।_________________
ফয়সালঃ ড্যাড আজ ভার্সিটিতে একটা ক্লাস প্রোগ্রাম আছে তাই কিছু জিনিস নিতে হবে কিন্তু একাই তো নিয়ে যেতে পারবো না।
সারোয়ারঃ কাজের ছেলে টাকে বলো সে তোমার সাথে তোমার জিনিস গুলো নিয়ে যাবে।
ফয়সালঃ কেউ নাই বাসায় ফারজানার কিছু জিনিস নিতে বাজারে গেছে।
ফারজানাঃ বাসাতে তো আর একজন বসে বসে খায় ছোট ভাইয়া, তাকে নিয়ে নিয়ে যা না।
সারোয়ারঃ হ্যাঁ হ্যাঁ তুই বরং ফারদিন কে নিয়ে যা। এই ফারদিন তুই ফয়সালের সাথে যা তো।
ফয়সালঃ সেদিনের মত যদি কোন গন্ডগোল করে ভার্সিটিতে তখন কি হবে ড্যাড। আর আমার ভার্সিটির সবাই কিন্তু কোটিপতির ছেলেমেয়ে ও যদি ওদের সাথে কোন করে আর আমার কথা না শোনে।
সারোয়ারঃ ফারদিন তুই ফয়সালের সব কথা শুনবি আর ওর ভার্সিটি গিয়ে কোন রকমের বেয়াদবি করবি না। একবার তো তোর বাবার সম্মান মানুষের বাসাতে নষ্ট করেছিস এবার অন্তত তোর বাবার সম্মান টা রাখিস।
শামীমঃ ঠিক আছে বাবা।
আর কোন কথা না বলে শামীম ফয়সালের পিছন পিছন গিয়ে গাড়িতে বসল। ফয়সাল নিজেই গাড়ি চালাচ্ছে, গাড়ি নিয়ে সোজা ভার্সিটিতে আসে ফয়সাল।
ফয়সালঃ এই তুই এই জিনিস গুলো নিয়ে আমার পিছন পিছন আয়।
শামীম ফয়সালের কথা মত তার সব জিনিস মানে বড় স্কেল মোটা কাগজ কাচের জিনিস ইত্যাদি যা লাগে আর সেসব কিছু। শামীম ফয়সালের পিছন পিছন ওর সাথে যেতে লাগলো। সামনে ফয়সালের বন্ধু শামীম দেখতে পেয়ে ফয়সাল কে জিজ্ঞেস করে এই ক্ষেতটা কে? তখন ফয়সাল বলে ওদের বাসার কাজের ছেলে। এমন কথা শোনার পরও শামীম কিছু মনে করে না, যেই জিজ্ঞেস করে তাকেই বলে বাসার কাজের ছেলে। ফয়সাল ওদের সব বন্ধু বান্ধবী মিলে প্রোগ্রাম শুরু করে আর শামীম কে এক দিকে বসিয়ে রাখে। প্রোগাম ওদের শেষ হলে হঠাৎ ফয়সালের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে তার বন্ধু গুলোকে কি জেনো বলে। ফয়সাল হঠাৎ করে শামীম কে ডাক দেয়, ফয়সালের ডাক শুনে শামীম এগিয়ে যেতে ধরলে তার বন্ধু গুলো শামীম কে ল্যাং মেরে একটা মেয়ের গায়ের উপরে ফেলে দেয়। শামীম আর মেয়েটা ধপাস করে পরে যায়, শামীম সরিয়ে দিয়ে মেয়েটা উঠে ঠাস ঠাস ঠাস করে অনেক গুলো থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। শামীম কে এভাবে থাপ্পড় মারা দেখে ভার্সিটির বাকি ছেলে মেয়ে গুলো এগিয়ে আসে সেখান থেকে কিছু ছেলে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।
মেয়েটাঃ এই ছোটলোকের বাচ্চা ক্ষেত ইচ্ছা করে আমার গায়ের উপর পড়ে শরীরে হাত দিয়েছে।
ছেলেগুলোঃ সালা ছোটলোক হয়ে বড়লোকের মেয়ের গায়ে বাজে ভাবে হাত দিস। এই তোরা কি দেখতেছি চেয়ে মার সালা কে।
বলতে দেরি ছেলে গুলোর শামীম কে মারতে দেরি করলো না। ফয়সাল দুরে দাঁড়িয়ে থেকে সব দেখতেছে আর হাসতেছে, মেয়েটা গিয়ে ফয়সালের পাশে দাঁড়ালো।
মেয়েটাঃ তুমি এভাবে হাসতেছো কেনো?
ফয়সালঃ ঐ যে গাধা টাকে মারতেছে দেখে।
মেয়েটাঃ ছেলেটাকে চিনো তুমি?
ফয়সালঃ আরে চিনবো না কেনো, আমার বাসার কাজের ছেলে( বলেই হাসি)
কিছুক্ষণ পর শামীম কে মেরে ছেলে গুলো ফয়সালের কাছে এগিয়ে আসে।
ছেলেগুলোঃ দোস্ত বুদ্ধি কাজে দিছে আর সালাকে সেই মার মেরেছি।
মেয়েটাঃ বুদ্ধি করে মানে, কিছুই বুঝলাম না।
ফয়সালঃ সব বলল
মেয়েটাঃ একটা নিরীহ ছেলে কে এভাবে
ফয়সালঃ আহ বেবি তুমি শুধু শুধু ওই ছোটলোকটার জন্য চিন্তা করতেছো। আমার সব কিছু স্যারের কাছে জমা দিয়েছি তোমার গুলো।
মেয়েটাঃ আমিও দিয়েছি, বেবি এভাবে আর কতদিন লুকিয়ে প্রেম করবো এবার অন্তত তোমার ফ্যামিলিতে জানাও তারপর পরে না হয় বিয়ে করবো।
ফয়সালঃ ঠিক আছে সোনা ময়না( ঠোঁট চেপে ধরে)
মেয়েটাঃ তুমি দেখি আশেপাশে কিছুই দেখ না।
ফয়সালঃ বেবি চলো ক্যান্টিনে যাই, তারপর তুমি আমি ঘুরতে যাবো।
মেয়েটাঃ ঠিক আছে চলো বেবি।
যাওয়ার সময় ফয়সাল শামীমের হাতে ৫০ টাকার একটা নোট দিয়ে বলল একাই বাসা চলে যাস। শামীম কোন রকমে উঠে দাঁড়িয়ে ঢুলতে ঢুলতে হাটতে লাগলো, কিছুদুরে যাওয়ার পরে একটা ছেলের গায়ে পরে গেলো ছেলেটাও উত্তমমধ্যম দিয়ে দিলো সেখানেই। এভাবে যেতে যেতে আরো চার পাঁচ টা ছেলে মেয়ের উত্তমমধ্যম খায় শামীম।
বাসা এসে শামীম দেখে তার বাবা মা কেউ নাই সে কোন রকমে স্যাভলন বের করে নিজের ক্ষত জায়গা গুলোতে নিজেই দিতে থাকে। বিশেষ করে ঠোঁট আর মুখে বেশি মেরেছে ওরা পিঠে যে কক মেরেছে তার হিসেব নেই। তারপর শামীম বিছানায় শুয়ে পরে ব্যথার কারণে ঘুমও আসতেছে না। তাই ঘরে থাকা ব্যথার ঔষুধ খেয়ে নিলো সেদিন তৃপ্তি বেশি করে ঔষুধ নিয়ে দিয়ে ছিলো। বিছানায় ছটফট করতে করতে এক সময় শামীম ঘুমিয়ে পরে সন্ধ্যার দিকে ফারজানার ডাকে শামীমের ঘুম ভাঙ্গে।
ফারজানাঃ এই ছোটলোক তারাতারি বিছানা থেকে উঠ, আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে তোকে।
শামীম কোন কথা না বলে কোন রকমে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ফারজানার কাছে আসে। আসলে কোন বললে নানান কথা শোনাবে তাই কোন না বলে ফারজানার পিছনে পিছনে যেতে থাকে শামীম। তারা বড় একটা বিল্ডিং এ ঢুকে সেখানে আরো অনেক ছেলে মেয়ে আছে আর গান বাজতেছে একটা করে ছেলের সাথে সাথে আর একটা৷ করে মেয়ে নাচানাচি করতেছে। ফারজানা যাওয়া মাত্র মিউজিক বন্ধ করে দিলো আর কোথা থেকে একটা ছেলে এসে ফারজানা কে জরিয়ে ধরল আর বলতে লাগলো।
ছেলেটাঃ আমি জানতাম আমার জান টা আমার জন্মদিনের পার্টিতে অবশ্যই আসবে।
ফারজানাঃ কেনো আমার প্রতি কি তোমার কোন বিশ্বাস নাই।
ছেলেটাঃ আছে বলেই তো তোমার জন্য এত অপেক্ষা আর আজকের রাতটা তোমার আর আমার বুঝলে।
ফারজানাঃ হুম বুঝলাম এখন চলো কেক কাটবে।
ছেলেটা সহ ফারজানা চলে গেলো, তারপর কেক কেটে একে অপর কে খাইয়ে দিলো। ছেলেটার কিছু বন্ধু ফারজানার গা ঘেঁসে দাঁড়াল, শামীম নিজের চোখে তার বোনের সাথে করা এমন আচরণ সহ্য করতে পারতেছে না তবুও সহ্য করে আছে। তারপর শুরু হলো মিউজিক আর ছেলেটা সবাইকে ফারজানা কে দেখিয়ে দিয়ে বলল এটা তার গালফ্রেন্ড এবং হবু বউ। তারপর শুরু হলো একজন আর একজন কে জরাজরি করে ধরা নৃত্য। ছেলেটার পাশাপাশি তার বন্ধু গুলোও ফারজানার সাথে খারাপ ভাবে শরীর স্পর্শ করতেছে আর তাকে ধরে নাচতেছে। শামীম এসব দৃশ্য দেখতে না পেয়ে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো।
কিছুক্ষণ পর শামীম পিছনে ফিরে দেখে ফারজানা আর ছেলে গুলো নাই। তাই সে এদিক সেদিকে খুঁজতে লাগলো। খুঁজতে খুঁজতে চলে গেলো সেই বিল্ডিংয়ের ছাঁদে, সেখানে গিয়ে দেখে ছেলে গুলো তার বোনের জামা খুলতেছে আর কেউ শরীর হাত বুলিয়ে দিতেছে কেউ বা কিস করতেছে এসব দেখে না পেরে সেখানে পরে থাকা লাঠি হাতে নিয়ে গিয়ে ছেলেগুলোকে ধপাধপ মারতে থাকলো শামীম। শামীমের মাইরে কারণে সব ছেলে গুলো চলে গেলেও ফারজানার প্রেমিক চলে গেলো না। আর ফারজানা রেগে গিয়ে পায়ের হাই হিল খুলে শামীমের গালে মুখে পেঠে যেখানে পারতেছে সেখানেই মারতেছে। এবার অটোমেটিক শামীমের চোখ দিয়ে পানি বের হওয়া শুরু হয়ে গেলো, কারণ নিজের মায়ের পেঠের ছোট বোন তাকে জুতা পেটা করতেছে।
ফারজানাঃ এই গেয়ো ভুত ছোটলোক তুই ওদের কে এভাবে মারলি কেনো? আর আমার কলিজার গায়ে এভাবে হাত তুললি কেনো বল( ফতুয়ার কলার ধরে)
শামীমঃ ওরা তোর গায়ে বাজে ভাবে হাত দিতেছিলো আর তোর সাথে খারাপ কিছু কেতে চাইছিলো।
ফারজানাঃ( ঠাস ঠাস) ওরা তো আমাকে জোড় করে নাই আমি নিজের ইচ্ছাতে ওদের সাথে এসেছি।
ছেলেটাঃ বেবি এটা কে আর তোমাকে তুই করে বলতেছে কেনো?
ফারজানাঃ এটা আমার বাসার নতুন কাজের ছেলে মা এনেছে মুগ্ধ, আরএই ছোটলোক কোন সাহসে আমাকে তুই বলিস আপনি বলবি আপনি।
মুগ্ধঃ বেবি আমার জন্মদিনে এভাবে মার খাবো কখনও ভাবি নাই। আর তুমি তো নিজেই বলেছিলে আমার জন্মদিনে যা চাইবো তাই দিবে তোমাকে তো আর আমি বা আমার বন্ধু কেউ জোর করি নাই( আউচ ব্যথায় এমন করলো)
ফারজানাঃ তোর কারণে আমার কলিজা আজ মজা করতে পারলো না শুধু তোর কারণে পা ধরে মাফ চেয়ে নে আমার জানের কাছে।
তারপর শামীম মুগ্ধর পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নিলো। শামীমের চোখ দিয়ে শুধু অনবরত বৃষ্টির মত পানি ঝড়তে থাকলো।
শামীমঃ ম্যাডাম একটা কথা বলি নিজের একটা ইজ্জত কতজন কে দেখাবেন? এই সাহেবের সাথে যে আপনার বিয়ে হবে তার কি গ্যারান্টি আছে? যখন অন্য কারো সাথে বিয়ে হবে তখন আপনার স্বামী কে কি দিবেন ম্যাডাম।
আর সাহেব আপনি ম্যাডাম কে ভালোবাসেন ঠিক আছে আপনি নিজেই ম্যাডামের সাথে যা করার করেন। কিন্তু আপনার বন্ধু গুলো কেনো এতে যোগ দিবে। একজন দায়িত্ববান স্বামী স্ত্রীর সম্মান আর ইজ্জত বাঁচাতে পোষাক হিসাবে কাজ করে স্ত্রীর সে। আপনি তো ম্যাডাম কে ভালোবাসেন বুঝলাম আপনি ম্যাডাম কে বিয়ে করবেন তাই বলে আপনি ম্যাডামের সাথে যা করবেন তা কি আপনার বন্ধুরাও করবে। তাহলে ম্যাডাম কি তাদের কেও বিয়ে করবে? ভবিষ্যৎ এ তো তারা ম্যাডাম রাস্তার মেয়ে মনে করবে, আপনাকেও থু থু দিবে।
ফারজানা শামীমের এমন জ্ঞানী কথা সহ্য করতে না পেরে আবারো হিল দিয়ে শামীমের গালে মারলো এবার শামীমের গাল আর ঠোঁট দুইটাই ফেটে গেলো। তারপর ফারজানা শামীমের কলার ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে এসে গাড়িতে তুলে ড্রাইভার কে গাড়ি চালাতে বলে। বাসা এসে ফারজানা চিৎকার করে তার মাম্মি ডেডি কে ডাকতে থাকে। ফাজানার চিৎকারে বাসার সবাই ড্রইং রুমে চলে আসে।
সারোয়ারঃ এভাবে চিৎকার করতেছিস কেনো? আর ফারদিনের কলার ধরেছিস আবার ওর গালে মুখে রক্ত?
ফারজানাঃ ড্যাডি তোমার এই গুনধর ছেলে আমার বন্ধুর জন্মদিনে তাকে মেরেছে আমাকে কেক খাইয়ে দিছে বলে। শুধু তাকে একা না তার সাথে আসা বন্ধু গুলো কেও।
সারোয়ারঃ ফারজানা যা বলল তা কি সত্যি ফারদিন? আর তোমাকে তো ফয়সালের সাথে ওর ভার্সিটি পাঠিয়ে ছিলাম তাহলে ফারজানার সাথে কেমন করে?
শামীমঃ চুপ
ফয়সালঃ ও আমার ভার্সিটি থেকে আমাকে না বলে পালিয়ে এসেছে পরে শুনি আমার একটা বন্ধু কে সে লাঠি দিয়ে মেরেছে তাকে একটা কাজ করতে বলায়।
সারোয়ারঃ এরা যা বলল তা কি সত্যি নাকি মিথ্যা?
শামীমঃ চুপ
শামীমের মাথা নিচু করে চুপ থাকা দেখে এবার ফারিন বলল
ফারিনঃ মাম্মি আগেই বলেছি রাস্তার ছেলে কখনও মানুষ হয় না। এ তোমাদের কত জায়গায় সম্মান নষ্ট করেছে তা জানো। ভাইবোনদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা কিছুই জানে না সে।
সারোয়ার সাহেবও এবার বেল খুলে মারতে থাকলো। শামীম ঠায় দাঁড়িয়ে আছে একটুও নড়তেছে না কিংবা কাঁন্না করতেছে না। সারোয়ার সাহেবের মারা শেষ হলে উপরে নিজের রুমে চলে যায়। এবার সাহানা বেগম এগিয়ে এসে শামীমের কেঁটে যাওয়া গালে ঠাস ঠাস তরে দুইটা চড় মারে। শামীম এবার মাথা উচু করে দেখে তার মা তাকে চড় মারলো আর সাথে সাথে ওরা তিন ভাইবোন হাসতে লাগলো, পাশে দেখে তার বোনজামাই নূর মোহাম্মদ শামীমের দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।
সাহানাঃ ভাবতে পারি নাই আমার রক্তে এত দোষ ছিলো। জানতাম না রাস্তায় মানুষ হওয়া কুকুর কখনও মানুষ হয় না।
ফারিনঃ মাম্মি তোমার কি ছেলে মেয়ের অভাব আছে নাকি বের করে দাও এই জানোয়ার টাকে।
সাহানা বেগম আর কোন না বলে তিনিও চলে যায়, তার সাথে সাথে সবাই চলে যায় শুধু রয়ে যায় নূর মোহাম্মদ। সে এগিয়ে এসে শামীমের হাত ধরে শামীমের রুমে নিয়ে যায়। শামীম কে বিছানায় বসিয়ে স্যাভলন আর তুলা এনে শামীমের কেঁটে যাওয়া জায়গা গুলো মুছে দেয়।
নূর মোহাম্মদঃ আমার কেনো জেনো বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি এসব করেছো। বলো তো ফারদিন সত্যি ঘটনা কি, আর আমার বিশ্বাস তুমি এমন কোন কাজ করবে না যার জন্য তোমার বাবা মায়ের সম্মান নষ্ট হয়।
শামীম তখন এক এক করে সব বলে দেয়, এসব শুনে শামীমের দুলাভাই নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে তার শ্বশুড় শ্বাশুড়ির রুমের দিকে যেতে ধরলে।
শামীমঃ আমার কসম দুলাভাই আপনি এসব কথা কাউকে বলবেন না।
এবার নূর মোহাম্মদ পিছনে ঘুরে আবার শামীমের কাছে এসে।
নূর মোহাম্মদঃ কেনো বলবো না।
শামীমঃ বাবা মায়ের চোখে আমি খারাপ হয়েছি আমি খারাপ থাকি। ওদের কে খারাপ বানানোর জন্য তো আর মুখ বুঝে সহ্য করে এত মাইর খেলাম না। ওরা আমার ছোট ভাই বোন আমি চাই ওরা সব সময় মা বাবার চোখে৷ মনি হয়ে থাক।
নূর মোহাম্মদঃ ওরা চোখের মনি হবে আর তুমি?
শামীমঃ মা তো নিজেই বলল রাস্তার কুকুর। শোনেন দুলাভাই আপনি আর আমার রুমে আসিয়েন না শেষে আপনাকেও না ওরা দোষি বানিয়ে দেয়। আপনি দয়া করে এখান থেকে জান আর কাউকে এই বিষয় নিয়ে কোন কথা বলবেন না আমার কসম দিলাম আপনাকে।
নূর মোহাম্মদঃ যাবো তবে একটা কথা কেনো এভাবো সবার অন্যায় মেনে নিতেছো।
শামীমঃ ছোট থেকে সয়ে আসতেছি এসব কোন ব্যপার না। আর যারা আমাকে বিশ্বাস করে না তাদের কে কোন না বলাই ভালো।
নূর মোহাম্মদ আর কোন না বলে নিজের রুমে চলে গেলো। শামীম ওই ভাবেই না খেয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো আর নীরবে আব্বা আব্বা বলে কাঁদতে লাগলো। আজও শামীমের সুপ্রিয়া আর তার আব্বার কথা খুব মনে পরতেছে এই দুইটা মানুষ শামীম কে সব সময় সাপোর্ট দিছে পাশে ছিলো। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে টেরই পায় নি শামীম। পরের দিন কাউকে কোন না বলে কাজে চলে গেলো শামীম। শামীমের চেহারা অনেক জায়গায় ফুলে গেছে কালো দাগ বসে গেছে এসব দেখে সব ক্লিনার শামীমের এগিয়ে আসল।
চাঁদঃ ওই কোর এসব কেমন করে হইছে বল আমাকে?
বাদলঃ শামীম তোর মুখের এমন অবস্হা কেনো?
ননী গোপালঃ তোকে তো চেনাই যাচ্ছে না। কে তোর সাথে এমন করেছে বল আামাদের
চাঁদঃ দেখ শামীম চুপ করে থাকিস না, তোর সাথে এমন নির্দয় আচরণ কে করেছে?
বাদলঃ শামীম বল না?
এক প্রকার সবাই জোড় করতেছে, কি আর করার সব কথা গতকালের বলে দিলো। শামীমের কথা শুনে কাঁদতে লাগলো সবাই। একটা মানুষ দিনটাতে তিন তিনবার মার খেলো তবুও কেউ এগিয়ে আসল না। নিজের বাবা মা নিজের ছেলে কে বিশ্বাস করে না, একটা বার জানতেও চাইলো না কেনো তার গাল ঠোঁট কেঁটে গেছে, রক্ত ঝড়তেছে রক্ত বন্ধ করার ব্যবস্থা করে দেই তা না করে উল্টো তারাও মারলো।
বাদলঃ তোর আর ওই বাসায় যেতে হবে না শামীম, এতদিন যেমন এতিম ছিলি এখনও তুই এখানে এতিমের মত থাক।
শামীমঃ না ভাই তা হয় না, যেখানে বাবা মা দুইজনেই আছে সেখানে আমি এতিম কেমন করে হই। হতে পারে বাবা মায়ের চোখে আমি খারাপ কিন্তু তবুও তো তারা আমার বাবা মা।
চাঁদঃ আর কত সহ্য করবি এসব তুই। তুই কোন মাটির তৈরী রে আমাকে বলবি?
শামীমঃ চাঁদ তুইও যে মাটির তৈরী আমিও সে মাটির, তোর নিয়তি খুব ভালো আর আমার নিয়তি এমন।
চাঁদঃ মানি না তোর এমন নিয়তি আমি।
শামীমঃ তুই না মানার কে ঐ যে উপরে জিনি বসে আছেন তিনিই উপর থেকে সব সেট করে দিয়েছে। আমি বা তুই চাইলেও সেটা বদলাতে পারবো না, আর আমার এমন নিয়তি ধরে কোন আপত্তি নাই।
ননী গোপালঃ আমি ভগবানের দেখা পেলে জিজ্ঞেস করতাম কেনো তোর সাথে এমন করলো তিনি। আর দশটা মানুষের মত তোর কপালে কেন সুখ করলো না।
বাদলঃ ভগবান কেনো তোর নিয়তি নিয়ে এমন করতেছে, যখনই একটু সুখের আশা দেখিস তখনই কেনো তোর সাথে এমন হয়।
আমিঃ আল্লাহর ভালে ভাল।
No comments