নিয়তি( এ কেমন ভালবাসা)----পর্বঃ ১১
শামীমের মুখ থেকে সব কথা শুনে চাঁদ অবাক। এটা কি বলল শামীম কারো হারিয়ে যাওয়া ভাইবোন কে কেউ খুঁজে পেলে তাকে মাথায় তুলে রাখে আর শামীমের সাথে এই ভাবে কথা বলে।
চাঁদঃ তোর আর ওখানে যাওয়া লাগবে না এখন থেকে তুই যেখানে থাকতি সেখানেই থাক।
শামীমঃ চাঁদ তুই দেখি পুরা পাগল, আমার সাথে কি সারাজীবন ওমন আচরন করবে নাকি। বুঝতেই পারতেছিস আমি মুর্খ ওরা শিক্ষিত মানুষ হয়ত বা একটু সময় লাগবো তার পর ঠিকই মানাই নিবো বুঝলি।
চাঁদঃ তুই এত বোকা কেনো রে? তুই বুঝতে পারতেছিস না ওরা তোর সাথে আরো অনেক খারাপ কিছু করতে পারে। দেখ তোর কোন ক্ষতি হোক তা আমি মানতে পারবো না।
শামীমঃ আমার ক্ষতি হলে তোর কি?
চাঁদঃ ভালবাসি তোকে বুঝিস না আর কিভাবে বুঝাবো তোকে! আর কত করে বলবো তোকে! কিন্তু তোর সালা ঐ এক কথা জানি পারবো না।
শামীমঃ মন খারাপ করিস না, আমার মত ছেলের কাছে কখনও সুখি হতে পারবি না। আর তুই অনেক ভালা একটা মাইয়া তোর জন্য সাহেব ছেলে দরকার।
চাঁদঃ শামীম( চিৎকার করে) তুই বাদে যদি অন্য কেউ এই কথা বলত তাহলে তাকে কি করতাম নিজেই জানি না। এই চাঁদ কে পাওয়ার জন্য এখানে উচু নিচু স্তরে যারা কাজ করে তারা সবাই চায়। আর এই চাঁদ শুধু তোকে চায়, ওরা তো আমার দেহ চায় আর তোর মাঝে সত্যিকারের সুখ বিদ্যমান বুঝলি। আমার সুখি হওয়া লাগবে না তুই হলেই চলবে, শোন তোকে যদি না পাই জীবনে বিয়ে কি জিনিস তা করবো না বুঝেছিস।
শামীমঃ আচ্ছা এসব বাদ দে একটু তৃপ্তি কে ফোন দে ওকে বিষয় টা জানাই।
চাঁদঃ পারবো না অন্য কোথাও যা।
শামীমঃ কেন পারবি না?
চাঁদঃ পারবো না মানে পারবো না( মুখ অন্য দিকে ঘুরালো)
শামীমঃ ঠিক আছে তাহলে নাম্বার টা দে আমি অন্য কারো মোবাইল দিয়ে কথা বলমু।
চাঁদঃ তাও দিবো না এবার তুই সর আমার সামন থেকে
শামীমঃ ওই এমন করিস কেন তুই, দে না একটু কথা বলি না হয় নাম্বার দে।
চাঁদঃ দিতে পারি শর্ত আছে
শামীমঃ কিসের শর্ত
চাঁদঃ যদি রাজি থাকিস তাহলে বলতে পারি( ভাব নিয়ে)
শামীমঃ রাজি বল কি শর্ত।
চাঁদঃ যদি নাম্বার চাস তাহলে আমাকে চুমু দিতে হবে আর আমি যদি তৃপ্তি কে ফোন দেই তাহলে জরিয়ে ধরতে হবে। বল কোনটা করবি?
শামীমঃ একটাও করবো না তুই খুব খারাপ হয়ে গেছিস।
চাঁদঃ শুধু তোর, আর না করলে এ জীবনে আর তোর বোনের সাথে যোগাযোগ করতে পারবি না।
শামীমঃ (অনেকক্ষণ ভেবে) ঠিক আছে ফোন দে জরিয়ে ধরবো তবুও চুমু দিতে পারবো না। তবে এখানে জরিয়ে ধরতে পারবো না আড়ালে চল।
চাঁদঃ ( চোখ পাকিয়ে) আড়ালে কেনো? তোর দেখি মতলব খারাপ আছে( মজা করে)
একথা সহ্য করতে না পেরে সবার সামনে শামীম চাঁদ কে জরিয়ে ধরলো। শামীম যে এমন করবে চাঁদ বুঝতে পারে নাই। তখন চাঁদ তার মোবাইল বের করে তৃপ্তি কে ফোন দিলো ঐ ভাবে জরিয়ে ধরে আছে একে অপর কে। শামীম প্রায় ১০ মিনিট তৃপ্তি সাথে কথা বলল চাঁদ কে জরিয়ে ধরে থাকা অবস্থায়। শামীম ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু চাঁদ ছেড়ে দেয় নি। শামীম যে ওর বাবা মা ভাই বোন কে খুজে পেয়েছে তারা কে কেমন করেছে শামীমের সাথে সব বলল তৃপ্তি কে সে। আর তৃপ্তি বলল সামনের মাসে তার ছুটি আছে ঢাকা আসতেছে। তারপর চাঁদ কে ছাড়িয়ে নিয়ে শামীম সে স্হান ত্যাগ করলো।
চাঁদঃ তুইও আমাকে ভালোবাসিস কিন্তু মুখে বলিস না। আর কেনো বলিস না তাও বুঝতে পেরেছি, যাকে আপন করেছিস সেই তোকে ধোকা দিয়েছে। ভাবতেছিস সুপ্রিয়ার মত তোকে ছেড়ে যাবো আমি। গাধা কবে বুঝবি আমাকে, তোকে তো আমি বুঝতে পারি কিন্তু তুই আমাকে বুঝিস না।
চাঁদের কাছ থেকে নানী গোপাল আর বাদলের কাছে গিয়ে বলল কেনো সে তাদের সাথে থাকতে পারবে না। বাদল ননী গোপালও খুশি হলো যাহোক অবশেষে নিজের পরিবার কে খুজে পাইছে।
দেখতে দেখতে একমাস চলে গেলো, শামীমের ভাইবোন শামীম কে নানা ভাবে অপমানিত করে নিয়েছে। ওদের বাবা মা বাসায় না থাকলে শামীমের দ্বারা সন্ধ্যা সময় ঘর মোছা থালা বাসন মেঝে নেওয়া কাপড় কেছে নেওয়া। মাঝে মাঝে ওর বিছানাতে পানি ঢেলে দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া। সারোয়ার সাহেবের কাছে শামীম কে খারাপ হিসাবে কি ভাবে তুলে ধরা যায় তা করেছে। শামীম সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করেছে আর সব কথা চাঁদ আর তৃপ্তির কাছে বলেছে মানে তৃপ্তি কে বললে চাঁদ তো শুনবেই। আর এই শহরে এই দুজন মানুষ শামিম কে কোন স্বার্থ ছাড়া ভালোবাসে। সাহানা বেগম জজ তাকে কাজের সুবাদে একজায়গায় থেকে অন্য জায়গায় মাঝে মাঝে সিরিয়াস কেসের রায় দিতে যেতে হয়, অবশ্য নিজের আদালতে সব সময় কাজ করে কিন্তু তার ফিরতে দেরি হয়। আর সারোয়ার সাহেব তো পুলিশের DIG তিনিও রাত বিরাত পর্যন্ত কাজের মধ্যে থাকেন। তাই শামীমকে ঠিক মত ভালোবাসা দিতেও পারে না আর কোন খবরও নিতে পারে না। শামীম আসার পর যেনো সারোয়ার সাহেব আর সাহানা বেগমের কাজ বেরে গেছে। ফারিন এখন তার শ্বশুর বাড়িতে কিন্তু ফয়সাল আর ফারজানা সব ফারিনের ইশরায় করে।
একদিন হঠাৎ করে ফারিনের শ্বশুড় বাড়ি থেকে দাওয়াত দিলো ফারিনের ননদের জন্মদিন উপলক্ষ্য আর ফারিনের বাবা বাড়ির সবাই কে যেতে হবে বিশেষ করে ফারদিন মানে শামীম কারণ তাকে দেখতে চায় তার দুলাভাই। তাই শামীম কে ফয়সাল নিজে সাজিয়ে দিতেছে শামীম কে ম্যাচিং শার্ট ব্লেজার প্যান্ট কালো সু পুরাই হিরো বানিয়ে দিলো। কিন্তু যে জিনিস কখনও শামীম ছুঁয়ে দেখে নাই সেই জিনিস পরেছে সাথে হাতে ঘড়ি। শামীম এসব পরে নিজেকে কমফোর্টেবল মনে হচ্ছে না, তার বার বার ইচ্ছা করতেছে এসব সে খুলে ফেলতে কিন্তু তার বাবা মা থাকায় পারতেছে না। ফারিনের শ্বশুড় বাড়ি গিয়ে শামীমের সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলো, কিন্তু শামীম কে একটা কথাও বলতে দেয়নি যা বলেছে সব ফয়সাল বলেছে। কারণ শামীম এই সমাজের মানুষের সাথে কথার মত এখনও হয়ে উঠেনি।
শামীমের দুলাভাই শামীম কে দেখে তো সেই খুশি তাই তিনি একাই শামীমের সাথে আলাদা কথা বললেন। শামীমের সাথে তিনি কথা বলে যা বুঝলেন তাহল শামীম মুর্খ, আর সহজ সরল একটা ছেলে তার কথার মাঝে কোন মার প্যাঁচ নাই। তাই তিনি শামীম কে পেয়ে খুশি, কারন ফয়সাল আর ফারজানার তুলনায় শামীম হাজার হাজার গুণ ভালো। ফারিনের স্বামীর নাম হচ্ছে নূর মোহাম্মদ। শামীম ওর দুলাভাইয়ের কাছ থেকে চলে এসে একটু ফাকা জায়গায় গিয়ে ব্লেজারের বোতাম খুলে হাতা ঢেটে একটা হাতের উপরে তুলল ইন করা শার্টের একদিক খুলে ফেলল। সবাই জন্মদিনের খাবার খাওয়ার সময় শামীমের এমন অবস্হা দেখে হাসতে লাগলো যা দেখে ওর বাবা মা লজ্জায় পরে গেলো।
হঠাৎ করে কারেন্ট চলে গেলো ২ মিনিট পর আবারও কারেন্ট চলে আসল। কারেন্ট আসার পর একটা মেয়ে হঠাৎ করে বলতেছে আমার গলা হার কোথায় কে নিলো কে চুরি করলো বলে অস্থির হয়ে গেলো। ফারিনের শ্বশুড় শ্বাশুড়ি লজ্জায় পরে গেলো এসব কি হলো তার মেয়ে জন্মদিনে। যেহেতু ফারিনের বাবা পুলিশ সেহেতু তিনি ছেলেদের কে সার্চ করতে লাগলেন আর একজন অন্য ভদ্র মহিলা মেয়েদের কে। খুজতে খুজতে কারো পেলো না শেষে শুধু ফয়সাল আর শামীম বাকি তাই ফয়সাল আর শামীম কে সার্চ করতে লাগল। একপর্যায়ে শামীমের ব্লেজারের ভিতরে পকেটে হার টা পেলো। পুরা বাসা থমথমে অবস্থা DIG ছেলে শেষে কিনা চুরি করলো তার ছেলে চোর। সাহানা বেগম তো বিশ্বাস করতেই পারতেছে না এদিকে সারোয়ার সাহেব কোমর থেকে বেল খুলে শামীম কে সেই জায়গাতে মারতে লাগলো কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না থামাতে সবাই শুধু তামাশা দেখতেছে। আরদিকে ফারিন ফারজানা ফয়সাল আর সেই মেয়েটা এক সাথে মনে মনে হাসতেছে।
ফয়সালঃ আপু তোকে হাজার বার স্যালুট তোর বুদ্ধির তারিফ করতে হয়।
ফারজানাঃ আপু তোর বান্ধবীকেও ধন্যবাদ এত সুন্দর হার হারিয়ে ফেলার অভিনয় করার জন্য।
ফয়সালঃ আমি যে কষ্ট করে ওই ছোটলোকটাকে এসব পড়ালাম।
ফারজানাঃ আমি যে ব্লেজারে আগেই হার টা লুকিয়ে রেখেছিলাম
ফারিনঃ দোস্ত তোর হার পাইছিস তো?
মেয়েটাঃ হুমম
এদিকে শামীম কে তার বাবা মারতেছে যখন মুখ দিয়ে শামীম কোন বলতে যাবে সেই সময় দেখলো ওরা চারজন হাসতেছে আর কি কি যেনো বলতেছে। তখন আর শামীম কোন না বলে মুখ বুঝে সব মার হজম করতে লাগলো। গায়ে ব্লেজার থাকায় বুজা যাচ্ছে না শামীমের পিঠ ছিলে গেছে আর মারের তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এক সময় মাটিতে লুটিয়ে পরে শামীম সেখানেও শামীম কে মারতে থাকে সারোয়ার সাহবে। তখন শামীমের দুলাভাই নূর মোহাম্মদ এগিয়ে গিয়ে মানা করে আর না মারতে। আর মারলে হয়ত বেঁচারা মরে যাবে, আর নূর মোহাম্মদ বিশ্বাস করতে পারতেছে না শামীম এমন কাজ করেছে। তারপর শামীমের বাবা সেই মেয়েটা কাঁছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে সেখান থেকে চলে যায় সাথে অবশ্য শামীম কেও নিয়েছে। বাসা আসার পর যে যার রুমে চলে গেলো কেউ একটা বার শামীমের খোজ করতে আসল না। শামীম অনেক কষ্টে গা থেকে ব্লেজার টা খুলে দেখে শার্টে রক্তের গাদ স্পষ্ট। গায়ে রক্তের সাথে শার্ট লেপ্টে গেছে খুলতেও কষ্ট হচ্ছে তাই শামীম ওই অবস্থায় বাতরুমে গিয়ে গোসল করলো আর শার্ট প্যান্ট খুলে সে যে কাপড় পরে সেই কাপড় পরল।
রাতে শামীমের গায়ে প্রচুর জ্বর আসল কিন্তু তাকে দেখার মত কেউ নাই। কোন রকম রাত টা পার করে শামীম সকালে তার কাজে চলে গেলো। শামীমের যেনো পা ফেলার মত শক্তি নাই আর মাথা টা ভিশন ব্যথা করতেছে মাথা তুলতে পারছে না। কোন রকম কাজে গিয়ে কাজ করতে করতে হঠাৎ সেখানেই শামীম অজ্ঞান হয়ে পরে গেলো। শামীম কে এভাব পরে যাওয়া দেখাতে সবার আগে চাঁদ শামীমের কাছে চলে আসে। বাদল আর ননী গোপাল কে ডেকে ডাক্তার স্বপনের চেম্বারে নিয়ে যায়। ডাক্তার স্বপন তখন শামীমের পালস্ চেক করে তারপর জ্বর মাফে পরে গায়ের কাপড় খুলে দেখে মারের দাগ আর গায়ে রক্ত শুকিয়ে আছে। এসব দেখে কেউ কোন বুঝতে না পারলেও চাঁদ বুঝে গেছে কেমন করে এসব হয়েছে। প্রায় ঘন্টা খানেক বাদে শামীমের জ্ঞান ফিরে।
স্বপনঃ শামীম এসব কেমন করে হলো?
ননী গোপালঃ কে তোকে মারছে বল তার গায়ের চামড়া তুলে ফেলবো।
বাদলঃ তোর মত এটা সাদা মানুষ কে কি জন্য মারছে কে মারছে বল তুই শামীম
শামীম তখন গতরাতের সব ঘটনা খুলে বলে, শামীমেে কথা শুনে ডাক্তার স্বপন আবারো কেঁদে ফেলো। হঠাৎ কোথা থেকে যেনো তৃপ্তি ছুটে আসে।
তৃপ্তিঃ ভাইয়া তোর কি হইছে, আর তোর গায়ে মারের দাগ কেনো( শামীমের কাছে গিয়ে ওর গায়ে হাত দিয়ে)
শামীমঃ তুই হঠাৎ কইরা এইখানে আর কবে আসলি তুই( স্বাভাবিক হয়ে)
তৃপ্তিঃ তোকে না সেদিন বললাম আজ আসবো, আর এসেই সোজা তোর সাথে দেখা করতে এসেছি। এসে শুনি তুই নাকি অজ্ঞান হয়ে পরে গেছিস আর তোকে নাকি ডাক্তার আংকেলের কাছে নিয়ে আসা হইছে।
চাঁদঃ তোমার ভাই তো মহান মানব বুঝলে, আমাদের ভালো বাসায় তার হয় না তার বাবা মায়ের ভালোবাসা লাগবে।
চাঁদ এই কথা বলে সেখানে আর না থেকে সোজা বাইরে চলে যায়। শামীমও কোন রকম শার্ট টা গায়ে দিয়ে চাঁদের পিছনে পিছনে আসে। তাদের পিছন পিছন আবার তৃপ্তিও আসে।
শামীমঃ ওই চাঁদ তুইও আমার কাছ থেকে মুখ ফিরাই নিবি?
চাঁদঃ আমি তোর কি হই যে মুখ ফিরিয়ে নিলে দোষের কিছু হবে।
শামীমঃ জানি না কি হস তুই আমার। তবে তোর সাথে থাকলে নিজেকে অনেক সাহসি মনে হয়, তোর করা ফাজলামো আমার সব ব্যথা ভুলিয়ে দেয়। তোর করা পাগলামো গুলো আমার মনে শান্তি দেয়। তোর হাসি মাখা মুখটা দেখলে শুধু চেয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। তোর কথায় কথায় আমার উপর রাগ করা অধিকার খাটানো আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পাগলের মত জরিয়ে ধরিস সবার সামনে তা আমার ভালো লাগে। সবার সামনে যখন বলিস আমাকে ভালোবাসিস তখন মনে হয় এই দুনিয়াতে এখনও শামীম কে ভালোবাসার মানুষ আছে( কেঁদে)
চাঁদ আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে দৌড়ে এসে শামীম কে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো শরীরে ব্যথা পেলেও শামীম কোন টু শব্দও করে না।
চাঁদঃ তারমানে তুইও আমাকে ভালোবাসিস তাই না।
শামীমঃ জানি না, আর পারবোও না।
তৃপ্তিঃ ভাইয়া ভাবি এভাবে আর কতক্ষণ ধরে থাকবে তোমরা? বিনা টিকিটে সবাই ফ্রিতে ফিল্ম দেখতেছে।
তৃপ্তির কথা শুনে দুজনের ধ্যান ভাঙ্গল, সাথে সাথে দুজন দুজন কে ছেড়ে দিলো।
তারপর চাঁদ লজ্জায় সেখানে না থেকে তার কাজের জায়গায় চলে গেলো। তৃপ্তি এগিয়ে গিয়ে শামীমের হাত ধরে টেনে নিয়ে রিক্সায় তুলে তৃপ্তিদের বাসা নিয়ে যায়।
শামীম কে বিছার উপর বসিয়ে রেখে পুরা ঘর পরিষ্কার করে নিজে দোকানে গিয়ে বাজার করে নিয়ে এসে রান্না করে শামীম কে নিজ হাতে খাইয়ে দেয় তৃপ্তি। তৃপ্তি যখন শামীম কে খাইয়ে দিতেছিলো তখন শামীমের চোখ দিয়ে পানি পড়তেছিলো।
তৃপ্তিঃ ভাইয়া তুই খাবার সময় কাঁন্না করতেছিস কেনো?
শামীমঃ জানিস বইন আমার যখন মন খুব খারাপ থাকত আমি তখন সাগর পাড়ে গিয়ে বসে থাকতাম। সেখানে শুকটির আড়তে যারা কাজ করত সেখানে অনেক মাকে দেখেছি ঠিক তোর মত করে তাদের সন্তান কে যত্ন করে খাইয়ে দেয়। জানিস আজ না আমি অনেক খুশি মায়ের মত করে আমার বোন আমাকে আজ খাইয়ে দিলো।
তৃপ্তিঃ কেন তোমার মা তোমাকে খাইয়ে দেয়নি এতদিনেও?
শামীমঃ তারা আমার কোন খবর নেয় না, শুনেছি বাবা মা নাকি তার সন্তান কে হাত খরচের টাকা আর আমি খাবার খেলাম নাকি খেলাম না তার কোন খবর নেয় না। তারা তাদের কাজ নিয়ে পড়ে থাকে সব সময়।
তৃপ্তি এবার সব বুঝতে পারলো, আর কোন কথা না বলে শামীম কে খাইয়ে দিয়ে নিজে খেয়ে নিলো।
তৃপ্তিঃ ভাইয়া তুই একটু ঘুমা আমি তোর জন্য দোকান থেকে ঔষুধ নিয়ে আসি।
শামীমঃ আমার ঘুম ধরবে নারে বোন।
তৃপ্তিঃ আয় আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমা।
শামীম যেনো এই কথাটার অপেক্ষায় ছিলো। কোন না বলে তৃপ্তির কোলে মাথা রেখে মুখ নিচে করে মাথা উড়রে করল। আর তৃপ্তি শামীমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
শামীমঃ জানিস বোন কাল থেকে আব্বার কথা খুব মনে পরতেছে।
তৃপ্তিঃ কেনো?
শামীমঃ আমাকে যেদিন করে মজুমদার মারত সেদিন সোহেল ভাই আর করিম আব্বা কে খবর নিয়ে নিয়ে আসত। ঠিক এই ভাবে উপুড় হয়ে বালিশে মুখ করে শুয়ে থাকতাম আর আব্বা এসে আমার গায়ে গেঞ্জি কাঁধের উপরে তুলে ঔষুধ লাগিয়ে দিত আর তেল গরম করে শেষে আগুনের তাপ দিতো। যখন এসব করত আব্বা তখন আব্বা নীরবে কাঁন্না করতো আর তার চোখের পানি যখন আমার পিঠে পড়ত তখন মনে হয় কোন পাহাড় যেনো আমার পিঠে পড়লো।
তৃপ্তিঃ ভাই প্লিস আর বলিস না আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি শুধু পড়াশোনা টা শেষ করি তারপর তোকে আর কারো কাছে থাকতে দিবো না আমার কাছে রাখবো কোন কাজও করতে দিবো না তোকে( কেঁদে)
শামীমঃ আচ্ছা তোর সব কথাই৷ শুনবো এখন আর কাঁন্না করিস না। আমি শুনেছি ডাক্তাররা নাকি কখনও কাঁন্না করে না তাই তুইও আর কাঁদিস না।
দুই অভাগা ভাইবোন আর কোন কথা না বলে নীরবে থাকে। তৃপ্তি শামীমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে এক সময় শামীম ঘুমিয়ে যায়। আস্তে করে শামীমের মাথা বালিশে রেখে তৃপ্তি শামীমের জন্য ঔষুধ রিতে দোকানে যায়। ভাবতেছেন তৃপ্তি টাকা কোথায় পেলো আর শামীমের এমন মারের কথা কেমন করে জানল টাকা দিয়েছে ডাক্তার স্বপন আর বাদল সব বলেছে। তৃপ্তি ঔষুধ নিয়ে এসে তার হাতের কাজ সব সারে তারপর নিজে গোসল করার জন্য যায়। আর এদিকে শামীম আজ অনেকদিন পর এত সুন্দর ভাবে ঘুমাচ্ছে।
No comments