ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার ৷ স্বপ্নের জগতে ছিলাম ৷ দুঃস্বপ্ন ৷ এরকম স্বপ্ন কখনো ভুলক্রমেও দেখিনি ৷ আজকে কেন এমন স্বপ্ন দেখলাম? গা ভিজে গেছে ৷ শ্বাস ফেলছিলাম ৷ পানি খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘুম হলোনা ৷ রাত ১২টা পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে পার্টিতে উল্লাস করে এসে ঘুমিয়েছি ৷ বেশিক্ষণ ঘুম হয়নি ৷ অথচ এরকম একটা স্বপ্ন দেখে ঘুমই শেষ হয়ে গেল ৷ ভাগ্যিস এটা স্বপ্ন, বাস্তব হলে তো জগতের রুপ রস নেওয়া হতোনা আর!
আজ ১৫ দিন হলো গ্রাম থেকে এসেছি ৷ এই পনের দিনে কখনো রাহনুমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখিনি অথচ প্রতি রাতে অনু স্বপ্নযোগে আমার সাথে দেখা করে ৷ যাকে স্বপ্নে দেখতে চাই তার দেখা মেলেনা অথচ যাকে ভুল করেও কামনা করিনা সে আসে ভয়ানক কিংবা সুখকর স্বপ্নে!
.
.
দুপুরে বন্ধুদের নিয়ে মধ্যাহৃ ভোজ করছিলাম ৷ বাবা, মা বাসায় নেই ৷ দরকারী কাজে বাইরে গেছে তারা ৷ তাই প্রিয় বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি ৷ হঠাৎ করে দরজায় কলিং বেল বাজলো ৷ কাজের লোক রমিজ মিয়া দরজা খুলতেই ড্রয়িংরুমে ঢুকে পড়লো একটি বোরখা পড়া মেয়ে ৷ সে যে অনু এটা বুঝতে কষ্ট হলোনা ৷ এবারও তাকে মুখ ঢাকা অবস্থায় দেখতে পেলাম ৷ একটা বড় ব্যাগও আছে তার সাথো ৷৷ বুঝতে পারছি সে এখানে কি কারণে এসেছে! ভাবী তো বলেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিবে সে ৷ একারণে হয়তো আমাদের বাসায় এসছে ৷ কিন্তু তার তো সেশন অনুযায়ী এডমিশন পাবেনা ৷ অনু আমাকে দেখে চোখ দুটো বড়বড়় বানালো ৷ অতঃপর আমার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে লাগল ৷ আমার একটা ছেলে বন্ধু ও দুটা মেয়ে বন্ধুকে দেখে অনু তাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো ৷ অতঃপর আমাকে নিচুস্বরে বলল,
----ভাল আছেন ভাইয়া?
.
রাতের স্বপ্নের কথা মনে পড়তেই অনুর প্রতি ভয়ের উদয় হলো ৷ চাপাকন্ঠে তাকে উত্তর দিলাম,
----ভাল ৷ তো, তুমি কি কারণে এলে? নিশ্চয় ভর্তি পরীক্ষা দিতে ৷ কিন্তু ঢাবিতে তো তুমি এডমিশন পাবেনা!
অনু কপাল কুঞ্চিয়ে বলল,
----কে বললো ঢাবিতে ভর্তি হবো?
----তাহলে?
----এখানে কোনো ভাল প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যাবো ৷ আর কখনোই আমি ঢাবির প্রতি ইন্টারেস্টেড ছিলাম না ৷ ভাল ছাত্রীও না যে চান্স পাবো!
----খুব ভাল ৷ যেটা ভাল মনে করো সেটাই করো!
----আঙ্কেল, আন্টি কই? তাদের তো দেখছিনা!
----তারা বাসায় নেই ৷
----ওহ!
----তুমি উপরতলায় যাও ৷ সিড়ি দিয়ে উঠেই একটা রুম পাবে তার পাশের রুমে তুমি থাকবে ৷ ঐ রুমের সাথে এটাচড করা ওয়াশরুম আছে, ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো ৷ তুমি অনেকদূর থেকে আসছো ৷ নিশ্চয় কিছু খাওনি ৷ তাড়াতাড়ি যাও! এসে খাবে ৷ আমি আপাতত খাওয়া বাদ দিলাম ৷ দুজনে একসাথে খাবো!
.
অনু আমার কথা শুনে চলে গেলো ৷ আমার বন্ধুরা আমার দিকে ভূত দেখার মত করে তাকিয়ে আছে ৷ যেন তারা আমাকে এর আগে দেখেনি ৷ আমিও অবাক হলাম তাদের তাকানো দেখে ৷ বিস্ময়ের কন্ঠে বললাম,
----এরকম ভাবে তাকাচ্ছিস কেন তোরা?
.
তারা কেউ কোনো কথা না বলে চুপ করে খেতে লাগলো ৷ তাদের খাওয়া শেষের দিকে বিধায় খাওয়া শেষ করে চেয়ার থেকে উঠে পড়লো ৷ এবং আমাকে বিদায় জানিয়ে বাসা থেকে চলে গেল!
.
বন্ধুরা চলে যাবার পরপরই অনু অন্য একটি বোরখা গায়ে জড়িয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো ৷ এবারো তার চেহারা ঢাকা ৷ তাকে শক্তকন্ঠেে বললাম,
----এখন তো কেউ নেই ৷ এবার অন্তত নেকাপটা খোলো!
.
অনু অপরাধীর স্বরে বলল,
----দুঃখিত ভাইয়া, আমি মুখ দেখাতে পারবোনা ৷
----কেন? এমন তো না যে তুমি আমাকে মুখ দেখাওনি ৷ দুটা দিন তোমাদের বাড়ি ছিলাম ৷ যে কয়বার আমরা দুজনে সবার আড়ালে ছিলাম সে কয়বার তুমি মুখ খুলে তো রেখেছই সেইসাথে আবেদনময়ী রুপে আমার সামনে এসে হাজির হয়েছিলে ৷ তখন এরকমটা করতে পারলে এখন কেনো নয়, বলো?
.
অনু বোধহয় অবাক হলো ৷ তব্দা খাবার মত ভান ধরে একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ৷ আচমকা চেঁচানো স্বরে বলল,
----কি আজব কথা বলছেন? আমি আপনাকে মুখটাই দেখালাম না, সেখানে আবেদনময়ী রুপে হাজির হবো? কিসব বলছেন! মাথা কি ঠিক আছে আপনার?
.
অনুর কথায় বড়সর ধাক্কা খেলাম ৷ সে অস্বীকার করছে? কিন্তু কেন? কিসের জন্য? হকচকিয়ে উঠে ভ্রু কুঁচকিয়ে গম্ভীর গলায় বললাম,
----তারমানে তুমি আমার সামনে শাড়ি পড়ে, টিশার্ট পড়ে হাজির হও নি?
----আশ্চর্য! আমি কিসের জন্য এসব পড়তে যাবো? ফাইজালামী করছেন? আমাকে কি মডার্ণ গার্ল মনে হয়? সারাক্ষণ বোরখা পড়ে থাকি সেই আমি টিশার্ট পড়বো, আবেদনময়ী শাড়ি পড়বো এবং সেগুলো পড়ে আপনার সামনে এসে উপস্থিত হবো? ছিঃ ভাইয়া, আপনার থেকে এমন কথা আশা করিনি ৷ আপনি আমার কাজিন হন, অন্যথায় অন্য কেউ হলে আপনাকে কয়টা কটুু কথা বলতাম!
.
অনুর কথায় স্তব্দ হয়ে গেলাম ৷ সে যেভাবে কথাগুলো বলছে এবং সে ওরকমভাবে আমার সামনে আসেনি বলে জোর দিচ্ছেে, এসবের জন্য নিজেকে পাগল বলে মনে হচ্ছে ৷ মনে হচ্ছে ঐ কয়দিন আমি অনুকে নিয়ে ভ্রমের মধ্যে ছিলাম ৷ যা হয়েছিল সবই ছিল ভ্রম ৷ কিন্তু যেটা আমার চোখের সামনে ঘটলো যেগুলো বাস্তবের চেয়েও বাস্তব ছিল সেসব কি করে ভ্রম হয়? তবে কি অনু মিথ্যা বলছে? আমার সাথে ফাইজলামী করার চেষ্টা করছে? এটাই হবে ৷ সে আমার সাথে মজা করে পৈশাচিক সুখ নিচ্ছে ৷ যার ঠোঁটের পরশ এখনো আমার ঠোঁটে লেগে আছে, আর এই ঘটনা কেমনে মিথ্যা হতে পারে? কখনো না ৷ যে মেয়ে মধ্যরাতে এসে হাজির হয়, আমার দেহের পরশ নেবার চেষ্টা করে সেই মেয়ে যে আমার সাথে মিথ্যাচার করে মজা নিবেনা, তার কি ভরসা আছে?
.
আপাতত অনুর কথাা মেনে নিলাম! নিজেকে শান্ত করে ক্ষীণস্বরে তাকে বললাম,
----তারমানে তুমি ঐ দুদিনের মধ্যে তোমার মুখখানা আমাকে দেখাও নি?
অনু বাকা চোখে তাকিয়ে তীক্ষ্ণকন্ঠে বলল,
----জি না ৷ আপনাকে আমি মুখ দেখাই নি!
----তাহলে এখন দেখাও, তোমাকে দেখবো ৷ দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তোমাকে দেখিনা!
----দেখে লাভ নেই ৷ আমাকে দেখে আপনি চিনতে পারবেন না!
----কেন?
----আমার মুখে এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছিল, ভাবী তো সেসব বলেছে আপনাকে!
----হুম জানি! কিন্তু আমি তোমাকে চিনবোনা কেন? দেখলে ঠিকই চিনবো!
----যেটাই হোক, আমি মুখ দেখাচ্ছিনা ৷ কষ্ট পেলে দুঃখিত!
----না দেখালে ৷ আমি তো তোমাকে দেখেছি!
----কখন? কোথায়?
----সেটা বলবো কেন?
----বলেন না প্লিজ! আমি তো কখনো মুখই খুলে রাখিনি ৷ খাওয়ার সময়ও না ৷ তাহলে আপনি কখন দেখলেন?
----সত্যিটা বলবো?
----অবশ্যই!
----তুমি যখন ঘুমিয়ে ছিলে, তখন তোমার মুখ থেকে নেকাপটা সরিয়ে প্রাণ জুড়িয়ে দেখেছি!
.
অনু উচ্চশব্দে হাসলো ৷ হাসতে হাসতেই বলল,
---ভালই জোকস জানেন ৷ আমি তো রাতে ঘুমাতে গেলে বোরখায় পড়িনা! আপনি নেকাপ পেলেন কেমনে?
.
মিষ্টি হেসে বললাম,
----এটা জানতেই মিথ্যা বলেছি ৷ যদি আমি নেকাপের কথা না বলতাম তাহলে বলতে শুতে গেলেও বোরখা পড়ে ঘুমাও ৷ এজন্য চালাকি করলাম ৷ হ্যাঁ, আমি তোমাকে ঘুমানোর সময় দেখেছি ৷ সত্যি বলছি ঘুমন্ত মুহূর্তে তোমাকে অপূর্ব লাগে!
----চুপ করেন! আমি কি দরজা খুলে রেখে ঘুমাই নাকি? রুমে ঢুকলেন কেমনে?
----তুমি রুমে ঢোকার ১০ মিনিট আগে আমি খাটের নিচে ছিলাম!
----কিহ?
----সত্যি বলছি! মিথ্যা যদি বলে থাকি তাহলে আমার কপালে যেন তোমার মত বউ জোটে!
.
অনু আবারো হাসলো ৷ খিলখিলিয়ে হাসি ৷ হাসিতে মুক্তা ঝরছিল কথাটা বলতাম যদি সে মনের মানুষ হতো ৷ তবে এটা সত্য অনুর হাসির শব্দে কলিজায় সুখের বারোতা বাজছে!
.
অনুু হাসি থামালো ৷ চাপা কন্ঠে বলল,
---আমি যে আপনার কপালে নেই এটা ভাল করে জানি ৷ আন্টিকে আব্বু ফোন দিয়েছিল, আমার ঐ বিয়েটা ভেঙ্গেছেন আপনি ৷ এবং আপনি আমি একে অপরকে ভালবাসি একথা আন্টি জেনে যাওয়ায় খুব রেগে গিয়েছিল ৷ একারণেই তো আন্টি আপনাকে গ্রাম ছাড়তে বলেছিল!
.
অনুর কথায় অবাক হলাম ৷ উত্তেজিত কন্ঠে বললাম,
----কি বলছো? আম্মু তো এটা আমাকে বললোনা?
----বলবে কেন? আমি আন্টিকে ফোন দিয়ে সত্যটা জানিয়ে দিয়েছিলাম যে আমাদের মধ্যে কিছুই নেই ৷
----যাক, ভাল করছো ৷ নাহলে আম্মু বড় ধরণের সন্দেহর মধ্যে থাকতো!
.
কথা বলতে বলতে খাবারের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম ৷ দুজনে কথা বলা বন্ধ দিয়ে খাওয়ায় মন দিলাম!
.
No comments