Header Ads

Header ADS

অদৃশ্য_পরীর ভালোবাসা ------ পর্বঃ ০৪

 অনুর আবদার মেনে নেওয়ার কোনো মানেই হয়না ৷ কপালে চুমুর দাবী রাখে একমাত্র মনের মানুষ ৷ অনুকে ভাললাগে এটা যেমন সত্য তেমনি এটাও সত্য যে কখনোই সে আমার মনের মানুষ হতে পারবেনা ৷ তার প্রতি সেরকম কোনো চিন্তাভাবনা তৈরি হয়না আমার মনে ৷ ভালবাসার মত কোনো অনুভূতি কেন যেন জাগ্রত হয়না তার প্রতি ৷ তার পাগলামী আচরণে হয়তো দিশেহারা হয়ে যাই আমি ৷ কিন্তু অবুঝ মনটা কখনো বলেনা তাকে নিয়ে অন্যরকম চিন্তা-ভাবনা করো ৷ ক্রমশ অনু আমার বুকের সাথে তার দেহ চেপে ধরছিল ৷ অস্বস্তি ভাব সৃষ্টি হচ্ছিল আমার দেহ ও মনে ৷ কতক্ষণ এরকম নির্লজ্জতা সহ্য করা যায়? নারীর পরশে পুরুষদের হ্নদয়ে অন্যরকম অনুভব ও শিহরণের আবেশ সৃষ্টি হবে এটা স্বাভাবিক, এটা সীমা ছাড়লে নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে ৷ আমি নিজেই অনুর নির্লজ্জতার ফলশ্রুতিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবো বলে মনে হচ্ছে ৷ অস্থির অস্থির লাগছিল ৷ এত শীত তবুও অনুর কারণে শরীরে উষ্মতা ভাব সৃষ্টি হয়ে গেল ৷ অনুর আবদার পূরণ করছিনা দেখে সে ঈষৎ রাগস্বরে বলল,

----কি হলো, কই? দেন না! কপালে চুমু দেওয়া কি দোষের কিছু?
.
তাকে কিছু বলতে পারছিনা ৷ নির্বাক দর্শক হয়ে তার দেহের সাথে মিশে আছি ৷ আমি চুমু দিবো কি? অনুই আমার ঘাড় ধরে আমার ঠোঁট তার কপালে স্থাপন করে জড়তামাখা কন্ঠে বলতে লাগলো, “নেন এবার চুমু দেন ৷ বেশি কষ্ট করতে হলোনা আপনার, এবার শুধু কপালে আলতোভাবে পরশ বুলিয়ে দেন!"
আমি তার কথাকে ভ্রুক্ষেপ করলাম না ৷ চুপচাপ রইলাম ৷ এখনো তার কপালে আমার কাঁপতে থাকা ঠোঁট চেপে রাখা আছে ৷ কেন যেন ইচ্ছা করছেনা জোরাজুরি করতে ৷ তার কপাল থেকে ঠোঁট সরাতেও ইচ্ছা করছিলনা ৷ ঠোঁটের পরশ তার কপালে লাগায় আমার ভেতর অন্যরকম ভাললাগার উদ্ভব হচ্ছিল ৷ ক্ষণে ক্ষণে আমি যেন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছিলাম ৷ তাকে ছাড়তে কে যেন বাঁধা দিচ্ছিল? কোনো অদৃশ্য শক্তি আমাকে অনুর প্রতি আকৃষ্টি করার যাবতীয় চেষ্টা করছিল ৷ অনুর গায়ের কাঁপন কমে গেছে অনেকটা ৷ সে আমাকে হঠাৎ করে ছেড়ে দিলো ৷ হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম ৷ দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরেছিল সেটা হারিয়ে গেল ৷ অনু লাজুক ভঙ্গিমায় আঙ্গুলের নখ তার দাঁতে লাগিয়ে দুষ্টমির দৃষ্টি আমার দিকে নিক্ষেপ করছিল ৷ মনে মনে বারবার বলছিলাম প্লিজ চলে যাও প্লিজ ৷ আচমকা, অনু এমন একটা কাজ করলো যেটা আমার বেপরোয়া মন কিছুতেই আশা করেনি ৷ মুহূর্তের মধ্যে সে আমার হাতটা ধরে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো ৷ ধারাম করে বিছানায় পড়লাম ৷ তখন তখন অনু আমার গায়ের উপর চড়ে ঠোঁটেে চুম্বন এঁকে দিলো ৷ আলতো একটা চুম্বন দিয়েই রুম থেকে চলে গেল ৷ সে চলে যাওয়ায় মনটা খুশির চোটে নেচে উঠলেও, কপট রাগের ভাবটা থেকেই গেল ৷ রাগমাখা ও হতভম্বের মিশ্র অভিব্যক্তি নিয়ে শুয়ে রইলাম!
.
.
সকালে বারান্দায় বসে ছিলাম ৷ হঠাৎ, আম্মু ফোন দিয়ে বলল শহরে ফিরতে হবে ৷ কিন্তু আমি যেতে পারবোনা বলে দিলাম ৷ কিন্তু আম্মু জোর দিয়ে বলার কারণে গ্রামে আর থাকতে পারলাম না ৷ বিষন্ন মন নিয়ে গ্রাম ছাড়তে হলো ৷ অবাক হলাম অনুর আচরণে ৷ আমি চলে যাচ্ছি অথচ তার কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলাম না ৷ কষ্ট লাগছিল জঙ্গলে দেখা হওয়া সেই মেয়েটির জন্য ৷ সে ই একমাত্র মেয়ে যে আমার মনে প্রথমবারের মত ভালবাসার অনুভূতি তৈরি করে দিয়েছিল ৷ যদি একটাবার কথা বলা যেতো তার সাথে, তাহলে কতই না ভাল হতো ৷ চেয়েছিলাম আজকে তার সাথে দেখা করবো কিন্তু সেটা হলোনা ৷ চাচা, চাচী, ভাবী ও অনুকে বিদায় জানিয়ে বাসস্টেশনের দিকে গেলাম ৷ যে রাস্তা ধরে বাসস্টেশনে যেতে হয় সেই রাস্তার মাঝপথে সেই জঙ্গলের মেয়েটির সাথে দেখা হয়ে গেল ৷ একটা পিচ্চি মেয়ের সাথে সে হেঁটে আসছিল ছোট্ট একটি পথ ধরে ৷ হয়তো এই রাস্তাতে এসে উঠবে তারা ৷ পিচ্চি মেয়েটি ঐ জঙ্গলে দেখা মেয়েটার সাথে কোনো কথা না বললেও আমার হ্নদয়হরণকারীনি অনবরত কথা বলে যাচ্ছিল ৷ আমি মেয়েটিকে দেখামাত্র হাঁটা বন্ধ করে দিলাম ৷ এবং মেয়েটির মায়ার চাদরে জড়ানো মুখখানার দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ মেয়েটা মূল রাস্তাতে উঠেই শাড়ির আঁচলটা বুক থেকে সরিয়ে দুষ্টমিমাখা হাসি হাসলো ৷ তার হাসিতে আমার বুকটা চিনচিন করে উঠলো ৷ অসম্ভব রকমের ভাললাগার ঝড় বুকের জমিনে সৃষ্টি হলো ৷ রক্তের প্রতিটি বিন্দু কণায় যেন ভাললাগার হিমোগ্লোবিন তরঙ্গের ঢেউ খেলে যাচ্ছিল ৷ আমার মন চাইছিল যেভাবে হোক তার সাথে কথা বলতে হবে ৷ কিন্তু সাহসের বিস্তর ঘাটতি লক্ষ্য করলাম ৷ মুখ যেন পাথর হয়ে গেল ৷ পাথর ফাঁটলেও যেমন কথা বের হয়না, তেমনি আমার মুখ ফাঁটলেও কথা বের হবেনা বলে মনে হচ্ছে ৷ দেখতে দেখতে মেয়েটা একদম আমার কাছ দিয়ে চলে গেল ৷ আর বুকে যেন হাজারো চুরিকাঘাত দিয়ে গেল ৷ কষ্টটা প্রখর হচ্ছিল তাকে কিছু বলতে পারলাম না এই দুঃখে ৷ অকর্মন্য মানুষ আমি ৷ আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা ৷ তাকে যদি মনের কথা না বলি তাহলে কেমনে প্রেম হবে? প্রেম তো দূর আগে তো বন্ধুত্বটা হওয়া দরকার ৷ সেটাও তো হবেনা, যদি তার সাথে কথা বলতে না পারি ৷ আপসোস করতে করতে বাসস্টেশনে গিয়ে পৌঁছলাম ৷ বাসে চড়ে সারাটাক্ষণ শুধু মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম ৷ তার নামটাও জেনে নিতে পারলাম না ৷ কতবড় বোকা আমি ৷ তার কি নাম হতে পারে? এটা বলতে পারছিনা তবে আমি নিজে তার একটা নাম দিতে পারি ৷ কি নাম দেবো? উমমম..রাহনুমা তার নাম ৷ এটাই পারফেক্ট!
.
.
শাঁইশাঁই করে বাতাস বইছে ৷ বাতাসের সাথে ধুলোবালি উড়ছে ৷ আকাশে একফালি চাঁদ ৷ চাঁদের আলো দেখে মনে হচ্ছে ঝলমলে আলোর দল হাওয়ায় উড়তে উড়তে চারপাশটাকে আলোকিত করে তুলছে ৷ চাঁদের অপরুপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় আছে? ঈর্ষণীয় সৌন্দর্য থাকলে চাঁদেরই আছে, আর আছে অনুর ৷ কিন্তুু অনুর সৌন্দর্যকে আমি মূল্যহীন মনে করি ৷ যে নারীর যত সৌন্দর্য সে নারী ততোই বিষাক্ত ৷ বিষাক্ত জিনিস ফলদায়ক হয়না ৷ বিষ যেমন অন্যকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে মারে, সুন্দরী নারীও পুরুষদের সেভাবে নিঃশেষ করে ফেলে ৷ এই রজনীতে জোস্ন্যার আলোতে মরুভূমির বালিরাশিকে দেখতে ভাললাগছে ৷ চকচক করছিল বালির কণাগুলো ৷ এসব যেন জগতের শ্রেষ্ঠ তৃপ্তি মিটাচ্ছিল, চোখেরও চরম তৃপ্তি মোহনীয় দৃশ্য অবলোকন করে পাচ্ছি ৷ কুয়াশা নেই এই নিশিতে ৷ আছে চাঁদের মায়াময় আলো ৷ মরুভূমির শীতল হওয়া বালির উপর চিৎ হয়ে শায়িত আছে রুপবতী আমার সেই চাচাতো বোন অনু ৷ তার গায়ে হলুদ শাড়ি ৷ সে যেন পণ করে নিয়েছে আমরা একাকী হলেই সে রগরগে পোশাকে আমার সামনে এসে হাজির হবে ৷ তার গায়ে শাড়ি কিন্তু সেটা স্বচ্ছ পাতলা ফিনফিনে ৷ ধোঁয়াধোঁয়া কাচের এপাশ থেকে অপাশের সবকিছু যেরকমটা দেখতে পাওয়া যায়, অনুর শাড়ি থেকেও তার শরীরের কোমল ত্বক দেখা যাচ্ছিল ৷ শীত যে খুব বেশি তা নয় ৷ তবে শীতের পোশাক ছাড়া গা কাঁপবে স্বাভাবিক ৷ অথচ অনু কাঁপছেনা ৷ শাড়ির আঁচল হাওয়ায় উড়ছে ৷ তার লম্বা লম্বা খোলা চুল বাতাসে উড়ছে ৷ এলোমেলো হয়ে চুলগুলো তার চেহারাতে ঝাঁপটে পড়ছে আবার সেগুলো উড়ে চলে যাচ্ছে ৷ অনুর দিকে তাকাচ্ছি আর চাঁদের দিকে ৷ কে বেশি সুন্দর এটা নিয়ে বড় ধরণের দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম ৷ অনুর মুখে শুরু থেকে হাসি বিরাজ করছিল ৷ কখনো মিটমিট করে হাসছিল কখনো বা মুচকি হাসি ৷ বরাবরই তার হাসি মুগ্ধকর ছিল ৷ চাঁদের উজ্জ্বলতা আর অনুর হাসির মুগ্ধতা দুটোই যেন নিশি রাতের প্রকৃতিকে পূর্ণতা দিচ্ছিল ৷ আমি দাঁড়িয়ে আছি সেই কখন থেকে ৷ এতক্ষণ কেউ কোনো কথা বলিনি ৷ চুপচাপ দুজনেই ৷ আমি চাচ্ছি অনুই যেন আগে কথা বলে কিন্তু সে কিছু বলছেনা ৷ আমি কি বলবো সেটা মুখেই আসছেনা ৷ তাই নির্বাক নিস্তব্দ হয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকন করছি ৷ তৃপ্ত হচ্ছি তবে শীতে কাঁপছি ৷ আমার গায়ে যে শুধু নীল রঙের পাঞ্জাবী !
হঠাৎ, অনুু বালির উপর থেকে উঠে আমার কম্পমান হাত আঁকড়ে ধরলো ৷ কাঁপতে থাকা হাত অনুর হাতের পরশ পেয়ে নির্জীব হয়ে গেল, কাঁপন থেমে গেল ৷ তবে বুকের কাঁপন থামলোনা ৷ মনে হচ্ছে বুকের কাঁপন আগের চেয়ে বেড়ে গিয়েছে ৷ অনু আমার হাতটা শক্ত করে ধরার পর টিপে টিপে দেখছিল ৷ হঠাৎ করে উচ্চস্বরে বলল,
----এতক্ষণ এখানে আমরা অথচ কথা বলছোনা ৷ কেন? এতো কিসের ভাব তোমার? ভালবাসি বলে কি তোমার এত ভাব? এড়িয়ে চলে তুমি কি রেহায় পাবে আমার থেকে? কখনো না ৷ আমি তোমাকে ছাড়ছিনা ৷ তুমি যেখানেই থাকবে সেখানেই আমাকে পাবে ৷ হ্যাঁ, ছায়া হয়ে তোমার পাশে পাশে থাকবো ৷ আমার পরশ অপছন্দ তোমার তাইতো ছায়া মানবী হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৷ তুমি আমাকে ছুঁতে না পারলেও আমি ঠিকই পারবো!
.
অনু কথাগুলো বলা শেষ করেই আমাকে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরলো ৷ এতে আমার দেহটা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল কেন যেন ৷ লক্ষ্য করে দেখি বুকের ভেতর চাকু ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ ব্যথায় দম বন্ধ হয়ে আসছিল ৷ ভোঁতা কষ্টে নিশ্বাস পর্যন্ত নিতে পারছিলাম না ৷ চোখ বেয়ে বেদনার অশ্রুধারা অবিরাম ঝরা শুরু হলো ৷ চিৎকার করছিলাম ৷ অথচ অনু পৈশাচিক হাসি হাসছিল ৷ যেন সে আমার কষ্ট দেখে জগতের শ্রেষ্ট সুখ নিচ্ছে ৷ আমার কষ্ট সে উপভোগ করছে ৷ বিষাদে ভরা চেহারা নিয়ে অনুর দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে কৃত্তিম হাসি হেসে ভাঙ্গা গলায় বললাম,
“এই তোমার ভালবাসার নমুনা?"
কথাটা শুনে অনু দু ফোঁটা চোখের বারিধারা বিয়োগ করে কাতরকন্ঠে বলল,
“আমি তো ঘর বাঁধতে চেয়েছিলাম ৷ কিন্তু তুমি ঘরটা কেন ভেঙ্গে দিলে? একটা সংসারকে ধ্বংস করার অধিকার তো তোমার নেই ৷ তুমি ভালবাসতে পারলেে না আমাকে? কেন?
.
এটা বলে অনু রহস্যময় হাসি হেসে তার চোখের ভেতর চকচক করতে থাকা চাকু ঢুকিয়ে দিলো ৷ চিৎকার করে উঠলাম!
.
ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার ৷ স্বপ্নের জগতে ছিলাম ৷ দুঃস্বপ্ন ৷ এরকম স্বপ্ন কখনো ভুলক্রমেও দেখিনি ৷ আজকে কেন এমন স্বপ্ন দেখলাম? গা ভিজে গেছে ৷ শ্বাস ফেলছিলাম ৷ পানি খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘুম হলোনা ৷ রাত ১২টা পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে পার্টিতে উল্লাস করে এসে ঘুমিয়েছি ৷ বেশিক্ষণ ঘুম হয়নি ৷ অথচ এরকম একটা স্বপ্ন দেখে ঘুমই শেষ হয়ে গেল ৷ ভাগ্যিস এটা স্বপ্ন, বাস্তব হলে তো জগতের রুপ রস নেওয়া হতোনা আর!
আজ ১৫ দিন হলো গ্রাম থেকে এসেছি ৷ এই পনের দিনে কখনো রাহনুমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখিনি অথচ প্রতি রাতে অনু স্বপ্নযোগে আমার সাথে দেখা করে ৷ যাকে স্বপ্নে দেখতে চাই তার দেখা মেলেনা অথচ যাকে ভুল করেও কামনা করিনা সে আসে ভয়ানক কিংবা সুখকর স্বপ্নে!
.
.
দুপুরে বন্ধুদের নিয়ে মধ্যাহৃ ভোজ করছিলাম ৷ বাবা, মা বাসায় নেই ৷ দরকারী কাজে বাইরে গেছে তারা ৷ তাই প্রিয় বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি ৷ হঠাৎ করে দরজায় কলিং বেল বাজলো ৷ কাজের লোক রমিজ মিয়া দরজা খুলতেই ড্রয়িংরুমে ঢুকে পড়লো একটি বোরখা পড়া মেয়ে ৷ সে যে অনু এটা বুঝতে কষ্ট হলোনা ৷ এবারও তাকে মুখ ঢাকা অবস্থায় দেখতে পেলাম ৷ একটা বড় ব্যাগও আছে তার সাথো ৷৷ বুঝতে পারছি সে এখানে কি কারণে এসেছে! ভাবী তো বলেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিবে সে ৷ একারণে হয়তো আমাদের বাসায় এসছে ৷ কিন্তু তার তো সেশন অনুযায়ী এডমিশন পাবেনা ৷ অনু আমাকে দেখে চোখ দুটো বড়বড়় বানালো ৷ অতঃপর আমার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে লাগল ৷ আমার একটা ছেলে বন্ধু ও দুটা মেয়ে বন্ধুকে দেখে অনু তাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো ৷ অতঃপর আমাকে নিচুস্বরে বলল,
----ভাল আছেন ভাইয়া?
.
রাতের স্বপ্নের কথা মনে পড়তেই অনুর প্রতি ভয়ের উদয় হলো ৷ চাপাকন্ঠে তাকে উত্তর দিলাম,
----ভাল ৷ তো, তুমি কি কারণে এলে? নিশ্চয় ভর্তি পরীক্ষা দিতে ৷ কিন্তু ঢাবিতে তো তুমি এডমিশন পাবেনা!
অনু কপাল কুঞ্চিয়ে বলল,
----কে বললো ঢাবিতে ভর্তি হবো?
----তাহলে?
----এখানে কোনো ভাল প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যাবো ৷ আর কখনোই আমি ঢাবির প্রতি ইন্টারেস্টেড ছিলাম না ৷ ভাল ছাত্রীও না যে চান্স পাবো!
----খুব ভাল ৷ যেটা ভাল মনে করো সেটাই করো!
----আঙ্কেল, আন্টি কই? তাদের তো দেখছিনা!
----তারা বাসায় নেই ৷
----ওহ!
----তুমি উপরতলায় যাও ৷ সিড়ি দিয়ে উঠেই একটা রুম পাবে তার পাশের রুমে তুমি থাকবে ৷ ঐ রুমের সাথে এটাচড করা ওয়াশরুম আছে, ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো ৷ তুমি অনেকদূর থেকে আসছো ৷ নিশ্চয় কিছু খাওনি ৷ তাড়াতাড়ি যাও! এসে খাবে ৷ আমি আপাতত খাওয়া বাদ দিলাম ৷ দুজনে একসাথে খাবো!
.
অনু আমার কথা শুনে চলে গেলো ৷ আমার বন্ধুরা আমার দিকে ভূত দেখার মত করে তাকিয়ে আছে ৷ যেন তারা আমাকে এর আগে দেখেনি ৷ আমিও অবাক হলাম তাদের তাকানো দেখে ৷ বিস্ময়ের কন্ঠে বললাম,
----এরকম ভাবে তাকাচ্ছিস কেন তোরা?
.
তারা কেউ কোনো কথা না বলে চুপ করে খেতে লাগলো ৷ তাদের খাওয়া শেষের দিকে বিধায় খাওয়া শেষ করে চেয়ার থেকে উঠে পড়লো ৷ এবং আমাকে বিদায় জানিয়ে বাসা থেকে চলে গেল!
.
বন্ধুরা চলে যাবার পরপরই অনু অন্য একটি বোরখা গায়ে জড়িয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো ৷ এবারো তার চেহারা ঢাকা ৷ তাকে শক্তকন্ঠেে বললাম,
----এখন তো কেউ নেই ৷ এবার অন্তত নেকাপটা খোলো!
.
অনু অপরাধীর স্বরে বলল,
----দুঃখিত ভাইয়া, আমি মুখ দেখাতে পারবোনা ৷
----কেন? এমন তো না যে তুমি আমাকে মুখ দেখাওনি ৷ দুটা দিন তোমাদের বাড়ি ছিলাম ৷ যে কয়বার আমরা দুজনে সবার আড়ালে ছিলাম সে কয়বার তুমি মুখ খুলে তো রেখেছই সেইসাথে আবেদনময়ী রুপে আমার সামনে এসে হাজির হয়েছিলে ৷ তখন এরকমটা করতে পারলে এখন কেনো নয়, বলো?
.
অনু বোধহয় অবাক হলো ৷ তব্দা খাবার মত ভান ধরে একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ৷ আচমকা চেঁচানো স্বরে বলল,
----কি আজব কথা বলছেন? আমি আপনাকে মুখটাই দেখালাম না, সেখানে আবেদনময়ী রুপে হাজির হবো? কিসব বলছেন! মাথা কি ঠিক আছে আপনার?
.
অনুর কথায় বড়সর ধাক্কা খেলাম ৷ সে অস্বীকার করছে? কিন্তু কেন? কিসের জন্য? হকচকিয়ে উঠে ভ্রু কুঁচকিয়ে গম্ভীর গলায় বললাম,
----তারমানে তুমি আমার সামনে শাড়ি পড়ে, টিশার্ট পড়ে হাজির হও নি?
----আশ্চর্য! আমি কিসের জন্য এসব পড়তে যাবো? ফাইজালামী করছেন? আমাকে কি মডার্ণ গার্ল মনে হয়? সারাক্ষণ বোরখা পড়ে থাকি সেই আমি টিশার্ট পড়বো, আবেদনময়ী শাড়ি পড়বো এবং সেগুলো পড়ে আপনার সামনে এসে উপস্থিত হবো? ছিঃ ভাইয়া, আপনার থেকে এমন কথা আশা করিনি ৷ আপনি আমার কাজিন হন, অন্যথায় অন্য কেউ হলে আপনাকে কয়টা কটুু কথা বলতাম!
.
অনুর কথায় স্তব্দ হয়ে গেলাম ৷ সে যেভাবে কথাগুলো বলছে এবং সে ওরকমভাবে আমার সামনে আসেনি বলে জোর দিচ্ছেে, এসবের জন্য নিজেকে পাগল বলে মনে হচ্ছে ৷ মনে হচ্ছে ঐ কয়দিন আমি অনুকে নিয়ে ভ্রমের মধ্যে ছিলাম ৷ যা হয়েছিল সবই ছিল ভ্রম ৷ কিন্তু যেটা আমার চোখের সামনে ঘটলো যেগুলো বাস্তবের চেয়েও বাস্তব ছিল সেসব কি করে ভ্রম হয়? তবে কি অনু মিথ্যা বলছে? আমার সাথে ফাইজলামী করার চেষ্টা করছে? এটাই হবে ৷ সে আমার সাথে মজা করে পৈশাচিক সুখ নিচ্ছে ৷ যার ঠোঁটের পরশ এখনো আমার ঠোঁটে লেগে আছে, আর এই ঘটনা কেমনে মিথ্যা হতে পারে? কখনো না ৷ যে মেয়ে মধ্যরাতে এসে হাজির হয়, আমার দেহের পরশ নেবার চেষ্টা করে সেই মেয়ে যে আমার সাথে মিথ্যাচার করে মজা নিবেনা, তার কি ভরসা আছে?
.
আপাতত অনুর কথাা মেনে নিলাম! নিজেকে শান্ত করে ক্ষীণস্বরে তাকে বললাম,
----তারমানে তুমি ঐ দুদিনের মধ্যে তোমার মুখখানা আমাকে দেখাও নি?
অনু বাকা চোখে তাকিয়ে তীক্ষ্ণকন্ঠে বলল,
----জি না ৷ আপনাকে আমি মুখ দেখাই নি!
----তাহলে এখন দেখাও, তোমাকে দেখবো ৷ দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তোমাকে দেখিনা!
----দেখে লাভ নেই ৷ আমাকে দেখে আপনি চিনতে পারবেন না!
----কেন?
----আমার মুখে এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছিল, ভাবী তো সেসব বলেছে আপনাকে!
----হুম জানি! কিন্তু আমি তোমাকে চিনবোনা কেন? দেখলে ঠিকই চিনবো!
----যেটাই হোক, আমি মুখ দেখাচ্ছিনা ৷ কষ্ট পেলে দুঃখিত!
----না দেখালে ৷ আমি তো তোমাকে দেখেছি!
----কখন? কোথায়?
----সেটা বলবো কেন?
----বলেন না প্লিজ! আমি তো কখনো মুখই খুলে রাখিনি ৷ খাওয়ার সময়ও না ৷ তাহলে আপনি কখন দেখলেন?
----সত্যিটা বলবো?
----অবশ্যই!
----তুমি যখন ঘুমিয়ে ছিলে, তখন তোমার মুখ থেকে নেকাপটা সরিয়ে প্রাণ জুড়িয়ে দেখেছি!
.
অনু উচ্চশব্দে হাসলো ৷ হাসতে হাসতেই বলল,
---ভালই জোকস জানেন ৷ আমি তো রাতে ঘুমাতে গেলে বোরখায় পড়িনা! আপনি নেকাপ পেলেন কেমনে?
.
মিষ্টি হেসে বললাম,
----এটা জানতেই মিথ্যা বলেছি ৷ যদি আমি নেকাপের কথা না বলতাম তাহলে বলতে শুতে গেলেও বোরখা পড়ে ঘুমাও ৷ এজন্য চালাকি করলাম ৷ হ্যাঁ, আমি তোমাকে ঘুমানোর সময় দেখেছি ৷ সত্যি বলছি ঘুমন্ত মুহূর্তে তোমাকে অপূর্ব লাগে!
----চুপ করেন! আমি কি দরজা খুলে রেখে ঘুমাই নাকি? রুমে ঢুকলেন কেমনে?
----তুমি রুমে ঢোকার ১০ মিনিট আগে আমি খাটের নিচে ছিলাম!
----কিহ?
----সত্যি বলছি! মিথ্যা যদি বলে থাকি তাহলে আমার কপালে যেন তোমার মত বউ জোটে!
.
অনু আবারো হাসলো ৷ খিলখিলিয়ে হাসি ৷ হাসিতে মুক্তা ঝরছিল কথাটা বলতাম যদি সে মনের মানুষ হতো ৷ তবে এটা সত্য অনুর হাসির শব্দে কলিজায় সুখের বারোতা বাজছে!
.
অনুু হাসি থামালো ৷ চাপা কন্ঠে বলল,
---আমি যে আপনার কপালে নেই এটা ভাল করে জানি ৷ আন্টিকে আব্বু ফোন দিয়েছিল, আমার ঐ বিয়েটা ভেঙ্গেছেন আপনি ৷ এবং আপনি আমি একে অপরকে ভালবাসি একথা আন্টি জেনে যাওয়ায় খুব রেগে গিয়েছিল ৷ একারণেই তো আন্টি আপনাকে গ্রাম ছাড়তে বলেছিল!
.
অনুর কথায় অবাক হলাম ৷ উত্তেজিত কন্ঠে বললাম,
----কি বলছো? আম্মু তো এটা আমাকে বললোনা?
----বলবে কেন? আমি আন্টিকে ফোন দিয়ে সত্যটা জানিয়ে দিয়েছিলাম যে আমাদের মধ্যে কিছুই নেই ৷
----যাক, ভাল করছো ৷ নাহলে আম্মু বড় ধরণের সন্দেহর মধ্যে থাকতো!
.
কথা বলতে বলতে খাবারের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম ৷ দুজনে কথা বলা বন্ধ দিয়ে খাওয়ায় মন দিলাম!
.
রাতে ঘুমানোর সময় অনুর বিষয়টা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম ৷ সন্দেহ হচ্ছিল সেই ঘটনাগুলো নিয়ে, যেই ঘটনাগুলো গ্রামে ঘটেছিল ৷ অনু আমার সাথে রোমান্সকর কতকিছু করলো অথচ এখন সে অস্বীকার করছে ৷ ওসব কিছুতেই অবাস্তব হতে পারেনা ৷ যদি ওগুলো বাস্তব হয় ববং অনুর কথা যদি ঠিক হয় তাহলে ব্যাপারটা দাড়াচ্ছে ঐ মেয়েটা অনুু ছিলনা ৷ হয়তো অন্য কেউ ছিল ৷ কিন্তুু কে সে? তবে কি অনুর কোনো আত্মীয় সে? আত্মীয় হয়ে কেন আমার মত অপরিচিত জনের সাথে ওরকম আচরণ করবে? এতটা সাহস কি হতে পারে কারো
?
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি জানিনা!
.
.
সকালে ঘুম ভাঙ্গলো অনুর ডাকে ৷ দরজা খোলা ছিল বিধায় যে রুমে ঢুকে অনবরত ডাকছিল ৷ ঘুম থেকে জেগে দেখি অনু শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে ৷ তবে মুখটা শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢাকা ৷ শুধু চোখ ও কপাল খোলা আছে ৷ শাড়িতে এতটা আকর্ষণীয় লাগছিল তাকে যেটা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয় ৷ অনু আসলেই আবেদনময়ী নারী ৷ যদিও সেরকম ভাবে সে শাড়ি পড়েনি তবুও আবেদনময়ী লাগছে তাকে ৷ বিমোহিত নয়নে তাকিয়ে অনুর চোখ দেখছি ৷ তার চোখের জাদুর মন্ত্রে সম্মোহিত হয়েছি বলে মনে হলো ৷ অন্যথায় চোখ তো এভাবে তার দিকে নজর দিয়ে তাকিয়ে থাকতো না!
অনু আমাকে আবার ডাক দিলে মোহের জগত থেকে উদ্ধার হয়ে চেতনার জগতে পা দিলাম ৷ অনু তীক্ষ্ণকন্ঠে বলল,
----তাড়াতাড়ি রেডি হন ৷ সকালের নাস্তা শেষ করতে করতে তো অফিসের সময় হয়ে যাবে!
.
মৃদ্যুু হাসি হেসে বললাম,
---জি মহারাণী, যাচ্ছি!
.
.
সকালের নাস্তা শেষ করে অফিসে যাবার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হবার সময় অনু বললো তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে ৷ সে নাকি আব্বুুুর অফিসটা পরিদর্শন করবে! তার কথামত অফিসে নিয়ে গেলাম ৷ আমার সঙ্গে অনুকে দেখে অফিসের কর্মচারীরা হা করে তাকিয়ে রইল ৷ হয়তো তারা ভাবছে যেই অফিসে মডার্ণ মেয়ে ছাড়়া জব করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনা সেই অফিসের সিইওর সাথে বোরখাওয়ালীকে দেখা যাচ্ছে, এটা কি করে সম্ভব?
.
অফিস পরিদর্শন করার পর অনু বললো তাকে ভার্সিটিতে নিয়ে যেতে ৷ ঢাকার জনপ্রিয় প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হবে সে ৷ নিয়ে গেলাম সেখানে অফিস ফেলেই ৷ ভর্তিও হয়ে গেল সে!
ভার্সিটি থেকে ফিরলাম ৷ অনু আবার আবদার করলো তাকে সিনেমাহলে নিয়ে যেতে হবে ৷ এবারের আবদারটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ের হয়ে যাচ্ছিল ৷ কিন্তু অনুর জোরাজুরিতে স্টার সিনেপ্লেক্সে নিয়ে যেতেই হলো ৷ টিকিট কেটে সিনেপ্লেক্সের ভেতর ঢুকে পড়লাম ৷ অনু আমার ডান পাশে বসলো ৷ চলছিল মুভি ৷ হঠাৎ, অনু বললো সে ওয়াশরুমে যাবে ৷ তাকে বললাম ঐ পাশে যাও ৷ সে চলে গেল! অনু চলে যাওয়ায় দুঃচিন্তা হচ্ছিল ৷ মন দিয়ে মুভি দেখতে পারলাম না! অনুর আসার অপেক্ষায় রইলাম!
কিছুক্ষণ পর দেখি বোরখা পড়ে কে যেন আসতে লাগলো আমার দিকে? তাকে দেখে তো মনে হলোনা ওটা অনু! অথচ মেয়েটি আমার ডান পাশের সিটে বসে পড়লো ৷ তাকে বসতে নিষেধ করার সুযোগ হলোনা ৷ সে বসার পরপরই মুখ থেকে নেকাপটা সরালো....
.

No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.