Header Ads

Header ADS

অদৃশ্য_পরীর ভালোবাসা ------ পর্বঃ ০৩

 অনুর লেখাপড়া স্থগিত ছিল ৪ বছর ৷ তুমি হয়তো জানোনা অনুকে এসিড মারা হয়েছিল ৷ মুখ কিছুটা ঝলছে গিয়েছিল ওর ৷ দীর্ঘ ১ টা বছর ট্রিটমেন্ট করা হয় ৷ মুখের একপাশে ঝলছে যাওয়ায় অনুর সার্জারি করা হয় ৷ এতে চেহারা পাল্টে যায় পুরোপুরি ৷

.
অনুর এতবড় সর্বনাশ করা হয়েছে অথচ আমি জানতাম না ৷ এরকম একটা কথা কিভাবে লুকিয়ে রাখলো তারা? ভাবীর থেকে এই সত্যটা জানতে পেরে মনঃকষ্টের উদয় হলো ৷ বিষাদে মনটা ভরে উঠলো ৷ নানান প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল ৷ ভাবীকে বিতৃষ্ণার কন্ঠে বললাম,
----বুঝলাম না, আমাকে কেন এটা জানানো হলোনা?
.
ভাবী চোখে মুখে চিন্তার ছাঁপ ফেলে বলল,
----এর কারণটা তো আমি জানিনা ভাই ৷
----কিন্তু অনুর এতবড় সর্বনাশ কে করলো?
----অনুর ভার্সিটির একটা বখাটে ছেলের কাজ ওটা ৷ ভার্সিটিতে অনু ১ মাস ক্লাস করেছিল ৷৷ এরমধ্যে ছেলেটার নজরে পড়ে যায় ৷ খুব বাজে প্রকৃতির ছিল ছেলেটা ৷ কোনো সুন্দরী মেয়ের দিকে তার নজর পড়লে সেই মেয়েকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করতো ৷ ফ্লর্ট করে কিংবা টাকার লোভ দেখিয়ে মেয়েদের কাবু করতো ৷ কিন্তু অনুকে সে কিছুতেই প্রেমের প্রস্তাবে রাজি করাতে পারছিলনা ৷ বদ-চরিত্রের বখাটে এই ছেলেটার বাবা ছিল শহরের সরকারি কলেজের শিক্ষক ৷ উচ্চবিত্ত হওয়ায় ছেলেটা কোনো কিছুকে পরোয়া করতোনা ৷ শেষবার যখন অনুকে ছেলেটা বাজে কাজের জন্য প্রস্তাব দেয় তখন অনু তাকে ক্যাম্পাস ভর্তি শিক্ষার্থীর সামনে কষে থাপ্পর মারে ৷ ঐদিন ছেলেটা অনুকে কিছু না করলেও পরদিন ক্যাম্পাসে অনুর মুখে এসিড নিক্ষেপ করে ৷ ভাগ্যিস ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টা অবলোকন করেছিল ৷ যাদের নিকট পানির বোতল ছিল তারা ততক্ষণাত অনুর চেহারায় পানি ঢালে ৷ ক্ষণিক পর কয়েকজন ছাত্রী ধরাধরি করে অনুকে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে অনবরত চেহারাতে পানি ঢালে ৷ এরপর তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয!
.
ঘটনাটা শুনে যতটা না কষ্ট হচ্ছিল তারচেয়ে বেশি রাগ হচ্ছিল ৷ আমি কি দোষ করেছিলাম যে অনুর সাথে এত মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল অথচ আমাকে জানানো হলোনা? বখাটে ছেলেটার প্রতি এতটা রাগ হচ্ছিল যে যদি বদমাইশটাকে হাতের নাগালে পাইতাম তো ওরে কাঁচায় কচকচ করে গিলে খেতাম, না পারলে আগুনে পুড়িয়ে মটমট করে খেতাম ৷ যদি ওর মাংস খেতে অসহ্যকর লাগতো তাহলে কুত্তা দিয়ে খাওয়াতাম ৷ জানোয়ারের বাচ্চার এতবড় সাহস কি করে হয়েছিল? ওর কলিজা কতবড়? ওর কলিজাটা টান দিয়ে চিরে ফেলে দেখতে হবে ৷ আমার রাগী সত্তা বলছে, “পশুটাকে এখনই খুঁজতে নেমে পরো, তাকে হাতের নাগালে পেলে কুচিকুচি করে কেটে সেগুলো ওর পরিবারের লোকদের নিকট ফেক্সিলোড করে পাঠিয়ে দিও!" আমার শত্রুর কথা মনে পড়তেই রাগ ক্রমেই বেড়ে চলছিল ৷ রাগকে দমন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছিল ৷ তথাপিও, রাগটা অন্তরে চেপে শক্তকন্ঠে ভাবীকে বললাম,
----ঐ জানোয়ারটার কি হয়েছিল?
.
ভাবী রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
----বদমাইশটাকে অনু নিজেই খুন করেছে!
.
একথা শুনে স্তব্দ হয়ে গেলাম ৷ বিশ্বাসযোগ্য মনে হলোনা ৷ অনুর মত এতটা সহজ সরল মেয়ে কাউকে খুন করবে এটা কিছুতেই বিশ্বাস করা যায়না ৷ হতবাক হয়ে অনুর দিকে নজর দিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ৷ অতঃপর ভাবীর দিকে নজর দিয়ে ভ্রু কুঁচকিয়ে বললাম,
----এটা কি বিশ্বাস করতে হবে? আমি অন্তত পারছিনা বিশ্বাস করতে ৷
.
ভাবী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
----রিভেঞ্জ বলতে একটা কথা আছে, বুঝলে? প্রতিশোধের আগুন মানুষের শিরা উপশিরায় মিশে থাকে ৷ সময় মত সেই আগুন দাউ করে জ্বলে ওঠে ৷ তখন সেই মানুষটি অগ্নিমানবে রুপ নেয় ৷ অনু অগ্নিমানবী হয়ে গিয়েছিল ৷ তবে এটা সত্য যে আমি বাদে কেউ জানেনা যে ছেলেটাকে অনুই খুন করেছে!
.
কপালে ভাঁজ ফেলে গভীর ভাবনায় ডুব দিলাম ৷ অনু এখনো কেঁদে চলছে ৷ তার কান্না থামলে ভাল লাগতো ৷ ভাবীকে মৃদ্যুস্বরে বললাম,
---ঠিকই বলেছেন ৷ প্রতিশোধের নেশা মানুষকে হিংস্র বানিয়ে ফেলে ৷ আসলে নারী বা পুরুষ উভয় মানব সত্তার দুটা রুপ রয়েছে ৷ একটা নিরিহ সত্তা আরেকটি হিংস্র ৷ উপযুক্ত সময়ে মানুষ সেই রুপ ধারণ করে ৷ কিন্তু অনু খুনটা কেমনে করলো?
.
ভাবী আড়ষ্ট কন্ঠে বলল,
-----সেটা আমি তো বলতে পারবোনা ৷ অনু এটা আমাকেও বলেনি ৷ তুমি হয়তো তার থেকে জেনে নিতে পারবে ৷
-----না, আমাকে সে কখনোই বলবেনা ৷ আচ্ছা ভাবী, অনুকে তো আজ দেখতে আসবে ৷ পাত্রপক্ষকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করলে কেমন হয়?
----ভালোই তো হয় ৷ কিন্তু এটা করা ঠিক হবেনা!
----ঠিক বেঠিক পরে ৷ আমি যে করে হোক পাত্রপক্ষকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করবো!
----বুঝছো না কেন? পাত্র অনুর বাবার বন্ধুর ছেলে ৷ উপজেলা চেয়ারম্যান পাত্রের বাবা ৷ এমন সম্মানিত ব্যক্তিদের অসম্মান করা যাবে? আমি তো ভাবছি বিয়েটা আবার ঠিকঠাক হয়ে না যায় ৷ তাহলে অনুর স্বপ্ন শেষ!
----বিয়ে হবেনা ৷ চিন্তা করবেন না ৷ আমি অন্তত অনুর স্বপ্ন শেষ হতে দিবনা ৷
.
কথাটা বলেই অনুর কাছে গেলাম ৷ সে এখনো চোখের ঝর্ণাধারা ঝরাচ্ছে ৷ মনে হচ্ছে চোখের পানিতে প্লাবিত হয়ে যাবে বারান্দা ৷ নারীরা সামান্য কারণেই কাঁদে ৷ সেখানে মনের বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে এজন্য কাঁদবেনা, এটা তো হতে পারেনা ৷ চোখের পানিতে নেকাপটা ভিজে গেছে তবুও সে কান্না থামাচ্ছেনা এমনকি নেকাপও খুলছেনা ৷ আমি বুঝিনা, অনু কি বহুরুপী নাকি? আমরা দুজনে যখন লোকজনের আড়ালে থাকি তখন তার নির্লজ্জতা লক্ষ্য করি ৷ আর যখন লোকজনের সামনে থাকি তখন খোলসে আবৃত হয় সে ৷ গলা ঝেড়ে অনুকে মৃদ্যুস্বরে বললাম,
----হু, হয়েছে অনেক কেঁদেছো ৷ এবার একটু শান্ত হও ৷ চোখ দুটো বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে ৷ তারা একটু বিশ্রাম চাচ্ছে ৷ এতক্ষণ কাঁদলে কি চলে? কিসের জন্য কাঁদছো এত? আমি কথা দিলাম এই বিয়ে যাতে না হয় এজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ৷ দেখো বিয়েটা ঠিকই ভেঙ্গে যাবে ৷ সো, এখন শান্ত হও!
.
অনু হাতের তালু দিয়ে চোখের পানি মুছলো ঠিকই কিন্তু পুনরায় অশ্রুধারার কয়েক ফোঁটা বারি চোখের কোণে এসে জমলো অতঃপর গড়িয়ে পড়তে লাগলো ৷ অনু আমার কথা শুনে নড়েচড়ে বসলো ৷ আমার দিকে রাগী চোখে তাকালো ৷ এখন তার চোখ দুটোকে শিকারী চোখের ন্যায় লাগছে ৷ এবার বিশ্বাস হচ্ছ সে কিসের জোরে খুনী হয়েছিল এবং কিসের ক্ষমতায় কাউকে খুন করেছিলো! তার মনে সাহসের রাজ্য লুকানো আছে, আর সেই সাহসকে পরিচালনা করে তার রাগ ৷ তার রাগের কিঞ্চিৎ রুপ মাত্র লক্ষ্য করলাম ৷ এই মেয়ে প্রয়োজন মত ভয়ানক রুপ ধারণ করতে পারে ৷ অনু অকস্মাৎ চেঁচিয়ে উঠে বলল,
----আপনাকে নাক গলাতে বলিনি ৷ আপনি যে কারণে এই বাড়িতে আসছেন সেই কাজ করেন!
.
অনুর কথা শুনে মাথায় টং করে শব্দ হলো ৷ আঘাত লেগেছে তার কথায় ৷ মুখটা এতটুকু বানিয়ে অনুর কাছ থেকে চলে এলাম!
.
পাত্রপক্ষ বাসায় আসলো ৷ পাত্রপক্ষ আসার পর অনুর কান্না যেন বেড় গেল ৷ মেয়ে মানুষের কান্না আমার সহ্য হয়না ৷ অনুর কান্না আরো সহ্য হচ্ছেনা ৷ হঠাৎ, আমার ফোনে আম্মার কল এলো ৷ ফোনটা রিসিভ করলাম ৷ আম্মু জোরালো কন্ঠে বলতে লাগল,
----নীল কি হয়েছে জানিস?
আমি নরম কন্ঠেই বললাম,
----কি হয়েছে মা?
----পাশের বাসার মেয়েটা..
----হুম, অনিতা ৷ তো তার আবার কি হলো?
----একটা ছেলের সাথে ভেগে গেছে ৷
.
কথাটি শুনে হাসি আর চেপে রাখতে পারলাম না ৷ খিলখিল করে, আবার খিকখিক করে উচ্চ শব্দে হাসতে লাগলাম ৷ আমার হাসির শব্দ শুনে অনুর কান্না বন্ধ হয়ে গেল ৷ যাক, ভালই হলো ৷ আম্মুকে জবাব দিলাম,
----এটা তো খুশির সংবাদ মা ৷ এই খুশিতে এক কাজ করো ৷ গ্রামে চলে আসো ৷ একটা ভোজনসভার আয়োজন করি মা ছেলে মিলে ৷ হা হা হা ৷ এই মেয়ের সাথে তুমি আমার বিয়ে ঠিক করতে চাচ্ছিলে!
----হ রে, মস্তবড় ভুল করতে চাচ্ছিলাম ৷ আর সবচেয়ে বড় কথা মেয়েটা পালিয়েছে ওদের বাসার ড্রাইভারের সাথে ৷ ড্রাইভারটা নাকি ওর চাচাতো ভাই ছিল!
গ্রামে থাকতো ওর চাচারা ৷ ছেলেটা অর্ধশিক্ষিত ছিল ৷ মেয়েটার রুচি আসলেই খারাপ!
.
এবার কেন যেন হাসি এলোনা ৷ উল্টা বিষম খেলাম ৷ আম্মুকে ফোন কাটার কথা বলে ফোনটা কেটে দিলাম!
.
পাত্রপক্ষ ৪৫ মিনিট ধরে অনুকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছে ৷ ওদিকে ভাবী ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অনুকে সাজানোর জন্য ৷ ভাগ্যিস অনু এখন কান্না করছেনা ৷ আমি জানি কেন সে কাঁদছেনা! কোনে নারী পাত্রের সামনে যাবার আগে কাঁদেনা ৷ এসময় কাঁদলে তাদের সৌন্দর্যে এক ধরণের কুৎসিত ভাব চলে আসবে ৷ আর কুৎসিত ভাব এলে পাত্রপক্ষ নিন্দাতে পারে ৷ কোনো নারী চায়না পাত্রপক্ষ তাকে দেখে অপছন্দ করুক ৷ যতই সে বিয়েতে অমত থাকুক, এরপরও তারা চাইবে পাত্রপক্ষ তাকে দেখে অন্তত বলুক পাত্রীকে আমাদের পছন্দ হয়েছে!
মিনিট বিশেক পর অনু গোলাপী রঙের শাড়ি পড়ে বেড়িয়ে এলো ৷ কিন্তু মাথায় লম্বা একটা ঘোমটা দেওয়া ৷ মনে মনে বললাম এখন তো বোরখা পড়বানা ৷ কেন পড়বানা ভাল করে জানি!
অনু বসলো ৷ ভাবী আমাকে চোখের ইশারায় কি যেন বুঝানোর চেষ্টা করলো? কিন্তু আমি বুঝতে অপারগ ৷ আমি বুঝিনি তার ইশারার মানেটা কি? তার ইশারার ভাষাটা যে বুঝিনি এটা আমার অভিব্যক্তিতে টের পেলো ভাবী ৷ সে আমাকে তার কাছে যেতে বললো ৷ গেলাম ৷ ফিসফিস করে সে আমাকে বলল,
----তোমার যে কাজটা করার কথা ছিল সেটা করো এবার ৷ এবার যদি পিছিয়ে যাও তাহলে কিন্তু শেষ ৷ তখন অনু কিন্তু তোমাকে ছাড়বেনা, একদম গিলবে!
.
পাত্রপক্ষের সামনে বসা ছিল চাচা, চাচী, অনুর মামা ৷ এতজন মানুষের সামনে আমি কেমনে বিয়ে ভাঙ্গার চেষ্টা করবো? মহা বিপদে পড়ে গেলাম ৷ যদি বিয়ে ভাঙ্গতে না পারি, তাহলে অনুর মাইরের শিকার হতে হবে ৷ যেভাবে হোক বিয়েটা ভাঙতেই হবে ৷ মনের সাথে গবেষণা শুরু করে দিলাম ৷ কি করা যায় এটা নিয়ে মহা চিন্তা গবেষণা চলতে লাগলো ৷ ধাঁ করে পাত্র মিনমিন গলায় তার মামাকে বলল,
----মামা, পাত্রী কি মুখ দেখাবেনা?
.
এই কথাটার উত্তর দিতে আমার মনটা ব্যাকুল হয়ে গেল ৷ মুখ ফসকে বেড়িয়ে এলো,
----মুখ দেখিয়ে কি হবে? পাত্রী আগে পরে সবসময় আপনার নিকট একটা জ্যান্ত পাথর সদৃশ বৈ-কিছুর রুপে থাকবেনা ৷ সে আপনার নিকট পাথর আর মনটা পড়ে থাকবে আমার কাছে!
.
কথাটা বলেই জিহ্বায় কামড় দিলাম ৷ এতবড় সাহস কেমনে হলো আমার?
আমার সাহসিক কথাগুলো শুনতে পেয়ে সবাই আঁতকে উঠলো বলে মনে হলো ৷ চাচা তো হকচকিয়ে উঠে আমার দিকে চোখ উঁচিয়ে তাকিয়ে রইলো ৷ ভাবীর দিকে নজর দিয়ে দেখি সে ভ্যাঁবাচেকা খেয়ে আমার চোখ বরাবর দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে ৷ অনু চুপচাপ বসে আছে ৷ তার যেন কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই!
আচমকা চাচা জোরালো কন্ঠে বলে উঠলো,
----নীল কি বলছো এসব?
.
আমি এবার ভয়ে কাঁপছি ৷ নির্বাক হয়ে গেলাম ৷ মুখ আটকে গেছে ৷ কে যেন হাতুড়ির আঘাতে মুখটা ভর্তা বানিয়ে দিয়েছে যাতে কথা বলতে না পারি ৷ আমি কিছু বলছিনা দেখে ভাবী রাগস্বরে বলল,
----নীল কি হলো বাবাকে জবাব দিচ্ছোনা কেন? বলো!
.
জগতের সমস্ত ভয়কে মনেতে আমন্ত্রণ জানিয়ে জোরজবরদোস্তি করে কাঁপা গলায় বললাম,
----জি চাচা, ঠিকই বলছি ৷ অনু আর আমি দুজনে একে অপরকে ভালবাসি ৷ আপনারা যদি অনুকে জোর করে বিয়ে দেন তাহলে অনু বিয়ের রাতেই হারপিক খেয়ে মারা যাবে!
.
হারপিকের কথাটা বলা ঠিক হয়নি ৷ ধুর, অন্যকিছুর কথা কেন বললাম না? বিষের কথা বললেই তো হতো ৷ ভাবী কথাটা শুনে মুখ লুকিয়ে হাসলো ৷ আর অনু নড়েচড়ে বসে গম্ভীর গলায় বলল,
----নীল, একটু স্পষ্ট করে বলো!
.
গলা ভাল করে ঝেড়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম,
----হুম, চাচা; আমরা দুজনে একে অপরকে মনেপ্রাণে ভালবাসি ৷ অনুকে আমি বিয়ে করবো ৷ এরপরও যদি চান ওর অন্যকারো সাথে বিয়ে দিবেন তো দেন ৷ জোর করবোনা ৷ কিন্তু মনে রাখবেন, অনুর মনের বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ে দিয়ে ওর জীবনটা নষ্ট করবেন না!
.
চাচা কিছু বললেন না ৷ তিনি লজ্জায় মুখটা এতটুকু বানিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছেন ৷ ওদিকে পাত্রপক্ষ কোনো কথা না বলে সোফা থেকে উঠে চলে গেলেন ৷ অনু ঘোমটাটা না সরিয়ে আমাকে থ্যাংকস জানিয়ে রুমে চলে গেল!
চাচা এবার আমার দিকে চোখ দুটো গোলগোল বানিয়ে ক্ষিপ্তস্বরে বললেন,
----এটা কি করলে নীল? তুমি অনুকে পছন্দ করো আগে কেন বললেনা? এমন আচরণ আশা করিনি ৷ তোমার বাবার কাছে বিচার দিবো, অপেক্ষা করো!
.
কথাটা বলেই চাচা ফোঁসফোঁস করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল ৷ চাচীর চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি ৷ নিশ্চয় তিনি খুশি হয়েছেন ৷ না হয়ে উপায় কি? আমার মত ছেলেকে মেয়ের জামাই হিসেবে পেতে কোন মেয়ের মা না চাই?
.
অনুর মামা আমার দিকে বাকা চোখে তাকিয়ে রইলো ৷ বিড়বিড় করে কি যেন বললো? কি বলতে পারে? নিশ্চয় গালি দিয়েছে!
.
রাত ১০:৩২!
আজকে রাতে শীত একটু বেশিই বলে মনে হচ্ছে ৷ শীতের প্রাদুর্ভাব বেশি হওয়ায় দুটা কম্বল গায়ে জড়িয়েছি ৷ আজকেও ঘুম আসছেনা ৷ হঠাৎ, মনে উদয় হলো গতরাতের কথা ৷ অনুর পাগলামীর কথা স্মরণ হতেই গা'টা শিউরে উঠলো ৷ আজকে তার পাগলামী শুরু হবে কি না কে জানে? হতেও পারে ৷ আজকে তার এতবড় উপকার করলাম, খুশির ঠ্যালায় আবলতাবল কাজ করাটা তার নিকট অস্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছেনা ৷ আজও মোবাইলে বই পড়ায় মন দিলাম ৷ হুমায়ূন আহমেদের 'সমুদ্র বিলাস' পড়তে লাগলাম ৷ দৈবাৎ, দরজায় খটখট শব্দের সৃষ্টি হলো ৷ নিশ্চয় অনুই কড়া নাড়ছে ৷ ঘরে বাতি জ্বালানোই ছিল ৷ আজকে ভুল করা যাবেনা ৷ বাতিটা জ্বালিয়েই রাখবো ৷ কম্বল ছেড়ে উঠলাম ৷ যদিও মন চাচ্ছিল না ৷ দরজাটা খুললাম এতে ধারাম করে শব্দ হলো ৷ দরজা খুলে দেখি ভাবী দাঁড়িয়ে আছে ৷ তাকে দেখে ইতস্তত বোধ হলো ৷ চুপসে যাওয়া চেহারা নিয়ে তাকে বললাম,
----ভাবী, কিছু বলবেন?
.
ভাবী কথার জবাব না দিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকলো ৷ এরপর খুব সহজভঙ্গিতে বিছানায় বসে পড়লো ৷ আমি এখনো চিন্তিত ৷ চুপচাপ দুজনে ৷ মনটা খসখস করছিল আমার ৷ এতরাতে ভাবী কি কারণে রুমে এলো বুঝতে পারছিনা! মনে নানা রকম উদ্ভট প্রশ্ন জাগছে ৷ এক মন তো বলেই দিলো, “শোন, তোর চাচাতো ভাই তো শহরে থাকে ৷ ভাবী একাকীত্বে ভোগে ৷ বোধহয় কিছু সময় তোর সাথে সে সুখ দুঃখের কথা শেয়ার করবে ৷"
ভাবী আমার ফাজিল মনের ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করে নরম কন্ঠেই অনুকে ডাকতে লাগলো ৷ ভাবীর ডাকে অনু রুমে প্রবেশ করলো ৷ এখনো সে বোরখা পড়া ৷ মুখ ঢাকা ৷ কেমনটা লাগে? এখন সে মুখ দেখাতে চাচ্ছেনা কেন?
ভাবী নিচু আওয়াজে আমাকে বলল,
----সে তোমাকে কিছু কথা বলবে ৷ বলেই চলে যাবে!
.
অনু ধীরকন্ঠে কাঁপা গলায় বলতে লাগল,
----আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিয়েটা ভাঙার জন্য ৷ কিন্তু যেভাবে বিয়ে ভাঙলেন এরজন্য পরবর্তিতে ঝামেলায় পড়তে হবে আমাদের ৷ বাবা, মাকে আসল সত্যটা আপনিই খুলে বলবেন ৷ আমরা তো একে অপরকে ভালবাসি না ৷ বিয়ের বিষয়টা তো দূর ৷ কিন্তু বাবা, মা তো তখন অসত্যকে সত্য হিসেবে মেনে নিয়েছে ৷ এখন যেভাবে হোক তাদেরকে সঠিক বিষয়টা খুলে বলতে হবে ৷ একটা উপকার যেহেতু করেছেন, সেহেতু এই উপকারটা করেন!
.
অনুর কথায় মাথা নাড়িয়ে বুঝালাম আমি সব বলবো ৷ অনু আর কোনো কিছু না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল ৷ ভাবীও চলে গেল!
.
.
অনু ও ভাবী চলে যাবার মিনিট বিশেক সময় পর চোখে প্রচন্ডভাবে ঘুম এসে জরো হলো ৷ ঘুমিয়ে গেলাম!
আচমকা, হঠাৎ দরজার খটখটানি শব্দ ৷ ভেঙ্গে গেল ঘুম ৷ খুব ভাল স্বপ্ন দেখছিলাম ৷ রাজরাণী আমার পাশে শুয়ে ছিল ৷ তার রুপের জৌলসে বিমোহিত হয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে ছিলাম ৷ রাণী আমার দিকে তার রসালো ঠোটদ্বয় এগিয়ে দিয়ে মধুর চুম্বন উপহার দিতে অগ্রসর হচ্ছিল, ঠিক তখনই দরজার খটখট শব্দ আর আমার স্বপ্নভঙ্গ! রাগে আমার মাথার চুল ছিঁড়তে মন চাচ্ছে ৷ এত ভাল স্বপ্ন কি আর ফিরে পাবো? রাগান্বিত মন নিয়ে চললাম দরজা খুলতে ৷ খুললাম দরজা ৷ যেটা ভাবছিলাম সেটাই ৷ অনু দাঁড়িয়ে আছে ৷ অবাক হলাম না তবে বিরক্ত হলাম ৷ সে একদম স্বচ্ছ পাতলা শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে ৷ শরীরের তক্ব যেন পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি! আজকে একটু বেশিই সেজেছে সে ৷ ঠোঁটে হালকা গোলাপী রঙের লিপিস্টিক ৷ ছোট্ট লাল টিপ কপালে ৷ চোখে কাজল ৷ গালে হালকা মেকআপ ৷৷ গা-ভর্তি গহনা ৷ তাকে যে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে এটা নতুন করে বলতে হবেনা ৷ তবে ঝামেলায় পড়লাম আমার পাগল মনদের আবলতাবল চিন্তা-ভাবনা নিয়ে ৷ তারা অনুর সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে যা ইচ্ছা বলছে ৷ আচমকা অনু আমাকে চমকে দিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে ঝাঁপটে ধরলো এবং দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো ৷ তার দেহের মাঝে ঢুকে পড়েছি ৷ মনে হলো মাখনের সাগরে ডুবে ভিজে গেলাম ৷ পিচ্ছিল লাগছে, বারবার সাগর থেকে ওঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছি উঠে আসতে ৷ উচ্চতায় অনু আমার নাক পর্যন্ত ৷ পায়ের উপর ভর দিয়ে আমাকে ঝাঁপটে ধরে আছে সে ৷ তার নাক আমার নাকের সাথে দেবে আছে ৷ দুজনের নিশ্বাস চলাচল অব্যাহত রয়েছে ৷ অনুর নিশ্বাস গভীর হচ্ছিল ৷ ঘণঘণ নিশ্বাস ফেলছিল সে ৷ তার নিশ্বাসের শব্দে আমার দেহে অস্বাভাবিক কাঁপন তৈরি করে দিলো ৷ নিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে অনুর দেহের কাঁপন টের পাচ্ছি ৷ হয়তো তার হ্নদস্পন্দন অত্যাধিক হারে বেড়েছে! কিছু বলছেনা সে ৷ যা বুঝানোর নিশ্বাসের ভাষায় বুঝাচ্ছে ৷ হয়তো নৈঃশব্দের মাধ্যমে সে তার ভাব প্রকাশ করতে চাচ্ছে ৷ কিন্তু আমি তো নৈঃশব্দের ভাষা বুঝিনা নিশ্বাসের ভাষাও না ৷ অনু হয়তো বুঝতে পারে!
আমি কিছু বলছিনা দেখে অনু হঠাৎই ক্ষীণস্বরে বলে উঠলো,
----কিছু বলছেন না কেন? থাক, কিছু বলতে হবেনা ৷ যা করতে বলি সেটা করেন ৷ আমাকে মৃদ্যু ভাবে কপালে একটা চুমুর রেখা এঁকে দিবেন ৷ ব্যাস, আর কিছু চাইনা! 

No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.