Header Ads

Header ADS

অদৃশ্য_পরীর ভালোবাসা ------ পর্বঃ ০২

 --কই যাবে এখন?

অনু তীক্ষ্ণকন্ঠে জবাব দিলো,
----সেটা আপনাকে কেন বলবো?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকে বললাম,
-----জানা জরুরি, এত সকালে একা একা কই যাও এটা চাচাতো ভাই হিসেবে আমার জানার অধিকার আছে ৷ বলা তো যায়না, মাত্রাতিরিক্ত সুন্দরী তুমি, বখাটে ছেলেপুলে কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে পারে ৷ আমি চাইনা কোনো বখাটে আমার ক্রাশটার কোনো ক্ষতি করুক!
.
অনু চেঁচিয়ে উঠে বলল,
----চুপ করেন তো ৷ বেশি কথা বলেন ৷ শহরে কাটিয়ে এসে বাচাল হয়ে আসছেন ৷ বাচাল টাইপের মানুষদের আমি দু-চোক্ষে দেখতে পারিনা ৷ সামনে থেকে সরেন!
অনুর চটাং চটাং কথা বলা শুনে অবাক চোখে তাকালাম ৷ চোখ উঁচিয়ে আওয়াজ নিচু করে বললাম,
----সরবোনা, তুমি কই যাও সেখানে যাবো ৷ চলে যেতে বললেও যাবোনা আমি!
----যাবেন না মানে? ফাইজলামী পায়ছেন? আমি তো যাচ্ছি বান্ধবীর বাসায় ৷ আপনিও কি সেখানে যাবেন?
----হুম, যাবো; তাতে তো সমস্যা দেখছিনা!




----না, আপনাকে সঙ্গে নিয়ে বান্ধবীর বাসায় যাওয়া যাবেনা ৷ আমার বান্ধবী খুব চালাক প্রকৃতির ৷ তাছাড়া সে কৌতূহলী , জেরা করতে ভালবাসে ৷ আপনাকে সঙ্গে নিয়ে গেলে ও ভাববে আপনি আমার প্রেমিক হন কিংবা হবু বর ৷
----আরে ভাবুক, তাতে কি? ভাবলেই তো প্রেমিক হয়ে যাবোনা ৷ আর তোমাকে কিছু কথা বলার আছে ৷ হাঁটতে হাঁটতে কথাগুলো বলা যাবে ৷
----আপনি বাসায় যাচ্ছিলেন যান ৷ সকালের নাস্তাটা করেন গিয়ে ৷
----নাস্তা করতে হবেনা ৷ জঙ্গলের ভেতরে একটা পেয়ারা গাছ ছিল ৷ কয়েকটা পেয়ারা পেড়ে খেয়েছি ৷
----তাহলে বাড়ি যাবেন না?
----না!
.
অনু রাস্তায় দাঁড়িয়ে এদিকে সেদিক উঁকিঝুকি মেরে দেখছিল কেউ আসছে কিনা! তার তাকানো দেখে আমিও কৌতূহলী চোখে এদিক সেদিক উঁকি দিলাম ৷ না কেউ নেই ৷ কাউকে আসতে দেখছিনা ৷ কুয়াশার কারণে কাউকে দেখা যাচ্ছেনা ৷ আবছা আবছা গাছপালার অস্তিত্ব টের পাচ্ছি ৷ গাছপালাকে দেখা যাচ্ছে শুভ্রবৃক্ষের ন্যায় ৷ গাছগুলোর আসল সৌন্দর্য অগোচরেই রয়েছে বলা যায় ৷ অন্যমনস্ক হয়ে কুয়াশায় জরানো গাছপালার দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ আচমকা অনু আমাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরলো ৷ টের পেলাম অনু তার মুখ থেকে নেকাপটা সরিয়েছে ৷ ক্রমশ সে তার দেহটাকে আমার শরীরের সাথে এমন ভাবে মিলিয়ে দিচ্ছিল যে মনে হচ্ছিল মিশে যাবো তার মোলায়েম ও শিমুল তুলার ন্যায় দেহের ভাঁজে ৷ অাকস্মিকভাবে তার এমন জড়িয়ে ধরার ফলশ্রুতিতে শরীরে শিহরণ জাগালেও, মনে রাগের সৃষ্টি করলো ৷ এমনটা আশা করিনি ৷ তার এরকম পাগলামী আচরণ মোটেও শোভনীয় নয় ৷ ক্ষণিককাল অনু আমাকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরার পর নরম মোলায়েম কন্ঠে বলল,
----হুম, এবার যান ৷ শান্তি পেয়েছেন তো? এবার ভাল মানুষের মত বাড়ি যান ৷ আপনার চোখ দেখে বুঝেছিলাম আপনি কি চান? সেটা উপহার দিয়েছি ৷ কি ভাললাগেনি?
.
আমার যেন রাগে শরীর জ্বলছে ৷ এমন লাগছে যে মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে ৷ অনু নিজেকে আমার শরীর থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে ৷ এখন স্বস্তি বোধ করছি ৷৷ তাকে তীক্ষ্ণকন্ঠে বললাম,
----অনু তোমার কি লজ্জা শরম নাই? এমন আচরণ তো তোমার থেকে আশা করিনা ৷ কত মার্জিত বেশভূষা গ্রহণ করেছো অথচ অযথা আচরণ করছো ৷
----হুহ হুহ, আপনার লেকচার দেওয়া শেষ হয়েছে? তাহলে যান, এবার বাড়িতে যান!
----হুম, যাচ্ছি ৷ তোমার সাথে কোথাও যাওয়ার মানেই নিজেকে ছোট করা ৷ যদি তোমার বান্ধবীর বাড়ি যাই, আর সেখানে গিয়ে যদি তুমি জড়িয়ে ধরার বদলে চুমু খেয়ে বসো তাহলে আমার প্রেস্টিজের সাড়ে বারোটা বেজে যাবো!
----তো যান খাম্বার মত এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? নাকি আবারো উষ্মতা পেতে চাচ্ছেন?
.
কথাটা বলেই অনু হাসতে লাগলো ৷ হাসিটা অবশ্যই আশ্চর্য সুন্দর ৷ মুগ্ধতা ছড়ানোর মত হাসি ৷ গালে কিঞ্চিত টোল পড়ে, এটা হাসির সৌন্দর্যকে একটু বাড়িয়ে তুলেছে ৷ অনুর হাসি ভুবন ভুলানো, তবে সবাই তার হাসিতে এই ভুবনকে ভুলবেনা ৷ তারা ভুলবে, যারা অনুকে অনুভব করতে পারবে এবং এরাই মূলত অনুর হাসির মায়ায় পড়ে জগৎয়ের সবকিছুকে নিমিষে ভুলে যাবে ৷ কিন্তু আমি অন্তত অনুর হাসিতে মুগ্ধ হয়ে ভুবনকে ভুলতে পারছিনা ৷ তার প্রতি আসলে সেরকম কোনো অনুভূতিই নেই ৷ হয়তো মোহের চক্করে পড়ে ক্ষণিকের জন্য তৈরি হয়েছে ভাললাগা, কিন্তু প্রেমে পড়ার মত একবিন্দু অনুভূতিও নেই এই মনে ৷ আমি তো নিজেই অবাক হয়ে যাই আমার কঠিন মনের অনুভূতির মারপ্যাচ দেখে!
ভাবনায় ডুব দিয়ে এতসব চিন্তা করছিলাম ৷ হঠাৎ ভাবনার সাগর ছেড়ে বাস্তবে ফিরে অনুর দিকে দৃষ্টি দিলাম ৷ মেয়েটা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ৷ মায়াভরা দৃষ্টি বিনিময় ৷ তার চোখে জাদু রশ্নি দেখতে পাচ্ছি ৷ আমি নিশ্চিত, ঐ চোখ দিয়ে যদি কোনো নরম মনের পুরুষের দিকে সে তাকায় তাহলে তার তাকানোতেই ঘায়েল হয়ে যাবে সেই পুরুষ ৷ চোখ দিয়েই নারীরা পুরুষদের ঘায়েল করে ৷ যে নারীর চোখ দেখে পুরুষ তৃপ্ত হয়না, সেই পুরুষ কঠোর মনের হয় ৷ আর এমন পুরুষের কপালে কঠিন স্বভাবের বউ জোটে!
অনুর চেহারা বরাবর কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে ধীর পায়ে বাড়ির দিকে চলতে লাগলাম ৷ বেশ কিছু পা ফেলার পর কি মনে করে যেন পিছন ফিরে তাকালাম ৷ পিছনে তাকিয়ে দেখি অনু নেই ৷ সে হয়তো গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হযেছে জোরালো পায়ে ৷ কুয়াশার জন্য তাকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছেনা ৷ সোজা পথ ধরেই গেল নাকি অন্যপথ দিয়ে গেলে এটা দেখারও জো হলোনা!
.
.
চাচার বাড়ি পৌঁছে সোজা ড্রয়িং-রুমে প্রবেশ করলাম ৷ খাবার টেবিলে সবাই উপস্থিত ৷ শুধু চাচা নেই ৷ ভাল হয়েছে ৷ চমকে উঠলাম অনুকে দেখে ৷ সে এখানে কেন? তার না বান্ধবীর বাসায় যাবার কথা! তারমানে যায়নি? নিশ্চয় অন্য পথ দিয়ে আমাকে ফাঁকি দিয়ে বাড়ি চলে আসছে ৷ কিন্তু এরকম করে কি লাভ হলো তার? বিস্ময়ের আঁখির দৃষ্টি অনুর চোখে ডুবলো ৷ সে এখন অন্য বোরখা পড়ে আছে ৷ চোখ বাদে পুরো চেহারা আবৃত আছে ৷ হতভম্বরের চোখে তাকাতে ভাললাগছিল ৷ অনু মাথা নিচু করে আছে ৷ আজব ব্যাপার! একটু আগে দুষ্টুমি করলো, তখন লজ্জা ছিলনা ৷ এখন জগতের সব লজ্জা তাকে ঘিরে ধরেছে ৷ যেন সে লজ্জাবতী ৷ আমি চোখের আঁচর কেটে তাকে চুপসে দিয়েছি ৷ এজন্যই সে এমন লাজুকরাণীর ভান ধরেছে ৷ অনুর পাশে চাচী দাঁড়ানো ছিলেন ৷ তিনি আমাকে দেখেই হাস্যজ্জ্বল মুখে বললেন,
----নীল আসো, নাস্তা করো ৷
.
চাচীর কথামত চেয়ারে বসে পড়লাম ৷ রুটি, গোশতের ঝোল প্লেটে দিলো ভাবী ৷ ভাবীর দিকে আড় চোখ তাকিয়ে ফের অনুর দিকে নজর দিলাম, অতঃপর দৃষ্টিটা পুনরায় ভাবীর দিকে নিক্ষেপ করে বুঝানোর চেষ্টা করলাম, “অনু এমন কেন?"
ভাবী আমার চোখের ইশারা না বুঝে কপালে ভাঁজ ফেলে বুঝালো সে কিছু বুঝেনাই আমার ইশারা! গলা ঝেড়ে হালকাভাবে কাশি দিয়ে উচ্চস্বরেই বললাম,
----ভাবী, আমার চাচাতো বোনটার আচরণে কষ্ট পাচ্ছি ৷ সে আমাকে হতাশ করছে ৷ বারবার মুখ ঢেকে রাখছে কেন? এমন তো না যে তাকে দেখে প্রেমে পড়ে যাবো!
তাহলে এতো ঢেকেঢুকে থাকতে হবে কেন?
.
খাবার টেবিলে চাচা ছিলনা বলে কথাটা এত সহজে বলতে পারলাম ৷ চাচী ঠিকই আমার কথায় লাজুক হাসি হাসলো ৷ অনু যেন রাগে গজগজ করছে ৷ চোখের দিকে নজর দিয়ে দেখলাম অনুর চোখদ্বয় রাগের চোটে রক্তিম হয়ে গেছে ৷ বুঝতে পারলাম সে শুধু নরম স্বভাবের দুষ্টু মেয়েই নয়, সেইসাথে কঠোর স্বভাবের রাগী মেয়ে ৷ কিন্তু বুঝিনা, রাতে ও একটু আগে যে মেয়ে চেহারা দেখালো, রোমান্স করলো সেই মেয়ে এখন এতো খোলসে আবৃত হয়ে গেল, বুঝছিনা এসবের মানে!
.
নাস্তা শেষ করে বাসার পিছন সাইটের বাগানের দিকে গেলাম ৷ অসংখ্য গাছ বাগানে দেখতে পেলাম ৷ কুয়াশা হারিয়ে গেছে সূর্যের প্রখর আলোয় ৷ একারণে গাছগুলোর পাতা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি ৷ ফল গাছের সংখ্যা অধিক ৷ ফল গাছের মধ্যে পেয়ারা গাছ সংখ্যায় বেশি দেখছি ৷ ছোটবেলা থেকে নেশা ছিল পেয়ারার প্রতি ৷ পেয়ারা পেলে খুশি মনে খেতাম সেসময় ৷ আজ গাছে পেয়ারা দেখামাত্র দুটা পেয়ারা গাছ থেকে পাড়লাম ৷ গাছগুলো তেমন উঁচু না হওয়ায় গাছে উঠতে সমস্যা হলোনা ৷ গাছের শক্ত ডালে দাঁড়িয়ে থেকে পেয়ারা খাচ্ছিলাম ৷ হঠাৎ, খিলখিল করে হাসতে থাকা নারী কন্ঠের হাসি শুনতে পেলাম ৷ হাসির শব্দ পরিচিত মনে হলো ৷ অনুর হাসির শব্দের মত লাগলো ৷ গাছ থেকে মাটির নিচে তাকিয়ে দেখি অনুই দাঁড়ানো ৷ সেই হাসছিল শব্দ করে, এখন নিঃশব্দে হাসছে ৷ কিন্তু তার বেশভূষা দেখে আঁতকে উঠলাম ৷ নিজের চোখকে এখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল ৷ ভাবলাম চোখ দুটো নষ্ট হয়ে গেছে ৷ এছাড়া তো এমনটা দেখার কথা ছিলনা ৷ চোখে ডলা দিয়ে ফের তাকালাম অনুর দিকে ৷ কিন্তু না, ঠিকই তো দেখছি ৷ চোখে সমস্যা নাই ৷ অনু সাদা টিশার্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে ৷ পড়নে শর্টস জিন্স ৷ আমার মনটা ইরইর করছে অনুকে দেখে ৷ কেমন যেন লাগছে দেহের ভেতর ৷ তাকাতে লজ্জা লাগছে কিন্তু নির্লজ্জ চোখ বারবার ওর দিকেই নজর দিচ্ছিল ৷ মনও বলছিল, “দেখতে থাকো ৷ সমস্যার তো কিছু নাই ৷ শহরে তো এটা কমনই ৷ গ্রামের কাউকে প্রথমবারের মত এভাবে দেখে নাও ৷ অভূতপূর্ব সুন্দরী মেয়েকে পশ্চিমা পোশাকে কেমন লাগে এটা দেখাতেই হয়তো সে তোমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ৷ খবরদার তার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরাবেনা ৷ দৃষ্টি তার দিক থেকে সরালেই সে ভাববে তাকে ভাললাগছেনা ৷ এতে সে কষ্ট পাবে ৷ অথচ তাকে আকর্ষণীয় লাগছে!! এটা তার মনে সায় দিতে তাকিয়ে থাকো, অপলকে"
মনের আবলতাবল কথাতে সম্মোহিত হয়ে গেলাম ৷ অনুর রুপসাগরের ঢেউয়ের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে থম মেরে তাকিয়ে রইলাম ৷ হঠাৎ, অনু চেঁচিয়ে উঠে বলল,
----এবার নজর সরান ৷ অনেক দেখেছেন ৷ চোখ কানা হয়ে যেতে পারে ৷ আমার রুপ আগ্নেয়গিরি অগ্নিপাতের স্ফুলিংগের লাভার ন্যায় মারাক্তক তেজদিপ্ত ৷ চোখে অগ্নির ঝলকানী লাগলে চোখ শেষ ৷ তখন আর পৃথিবী দেখতে পারবেন না ৷ আমার জন্য এত সাধের পৃথিবী দেখা থেকে বঞ্চিত হন, চাইনা ৷ বুঝলেন?
.
আমার কান শুধু অনুর কথা শুনলো ৷ কিন্তু স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারলোনা ৷ কিছু কিছু সময় নারীর রুপে মোহগ্রস্ত হয়ে গেলে পুরুষেরা বোবা হয়ে যায় ৷ নির্বাক সিনেমার মত কথা বের হয়না মুখ দিয়ে ৷ এমনকি নিশ্চল হয়ে যায় ৷ কথা তো বলতে পারেই না, নড়াচড়াও করতে পারেনা ৷ আমার অবস্থা এমন হয়েছে ৷ অনুর দিকে এখনো তাকিয়ে আছি নৈস্বর্গিক সুখ লুটিয়ে নিতে ৷ কিন্তু আমি বোবাবেশ ধরে দাঁড়িয়ে আছি দেখে অনু গলার স্বর উঁচু করে ধমক মেরে বলল,
----কি ব্যাপার! কথা বলছেন না কেন? ভূতে ধরেছে? কি ঢিল মারবো? একদম মাথায় লাগাবো ৷ মারবো?
.
এবারো কথার উত্তর দিলাম না ৷ অনু আমার প্রতিক্রিয়া না দেখে হাতে একটা ঢিল নিয়ে ছুঁড়ে মারলো আমার দিকে ৷ বুক বরাবর ঢিলটা লাগলে মোহের জগৎকে দূরে ঠেলে বাস্তবে ফিরে তোরজোর কন্ঠে অনুকে বললাম,
----অনু, কি করছোটা কি? পাগল হলে নাকি? ব্যথা পেলাম তো ৷ ইশ!
অনু তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,
-----উহ! ব্যথা পায়ছে ৷ ভাল হয়েছে ব্যথা পেয়েছেন ৷
----তুমি তো এত নিষ্ঠুর ছিলে না!
----নিষ্ঠুর হতে হয়েছে ৷ যাহোক, এখন বলেন আমাকে এমন ড্রেসে কেমন লাগছে? আবেদনময়ী কিংবা গর্জিয়াস লাগছে না?
----কেমম লাগছে সেটা বলবোনা ৷ তবে শুনে নাাও তোমাকে পর্দানশীল হিসেবেই ভাল মানায় ৷ কিছু কিছু নারীর নিজস্বতা রয়েছে, তাকে ঐ নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে বৈচিত্রেই মানায় ৷ তুমি সেই বৈচিত্র থেকে বেড়িয়ে এসেনা ৷
----হয়েছে এতো জ্ঞান দিতে হবেনা ৷ আমি কারো জ্ঞান নিইনা! থাকেন গাছে, পেয়ারা খান ৷ আমি গেলাম!
----এক কাজ করো ৷ গাছে উঠে পড়ো ৷ দুজনে মিলে পেয়ারা খাই ৷ ভাললাগবে!
----না, আপনি থাকাকালিন গাছে উঠলে বাড়ির কেউ দেখে ফেললে ভাববে আপনার সাথে ভাব হয়ে গেছে ৷ তখন দেখা যাবে জোর করে আপনার সাথে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে ৷৷ আমি আবার আপনার মত ভেজা বিড়ালকে বিয়ে করতে কিছুতেই চাইনা!
----কিহ? আমি ভেজা বিড়াল?
----তো কি? উপরে উপরে সাধুগিরি দেখান, ভেতরে তো লুচ্চাদের মত স্বভাব ৷ আপনি নিশ্চয় এখন ভাবছেন, ইশ! অনু যদি আরো একটু রগরগে ড্রেস পড়তো!
----নাউজূবিল্লাহ! আমি কখন এমনটা ভাবলাম?
----চুপ করেন ৷ ঐ যে ঐদিকে তাকান গাছে একটা পাঁকা লাল টকটকে আম পেঁকে আছে!
.
আমি অন্যদিকে ফিরে বারবার পেয়ারা খুঁজছিলাম ৷ কিন্তু পরে মনে হলো আরেহ অনু তো পেয়ারার কথা বলেনি, আমের কথা বলেছে ৷ পেয়ারা গাছে আম পাঁকবে কেমনে?
রাগান্ন্যিত চোখ নিয়ে অনুর দিকে তাকাতে চেহারাটা ঘুরালাম ৷ কিন্তু অনুর অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম না ৷ পালিয়েছে সে!
.
গাছ থেকে নেমে চললাম আমার রুমের দিকে ৷ রুমে প্রবেশ করতেই আম্মুর ফোন এলো ৷ রিসিভ করে কথা বলতে লাগলাম ৷ আম্মু উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
----তোর জন্য সুখবর আছে ৷
আমি কৌতূহলী কন্ঠে বললাম,
----কিসের সুখবর মা?
----পাশের বাসার সেই মেয়েটা, মানে অনিতার বিয়ে ভেঙ্গে গেছে ৷
----এটা খুশির খবর কেমনে হয়?
----কি বলিস? খুশির সংবাদ না? আচ্ছা, আগে পুরোটা শোন ৷ এখন অনিতার বাবা, মা চাচ্ছে তোর সাথে বিয়েটা দিতে ৷ তুই তো বলতিস মেয়েটা খুব ভালো ৷ আমি জানি তুই মেয়েটাকে পছন্দ করিস ৷ যদি তুই বিয়েতে মত দিস তাহলে বিয়ের দিন তারিখ পাকা করতে পারি!
.
একটু রাগস্বরে বললাম,
----কিহ? তোমার মাথা ঠিক আছে মা? আমি করবো অনিতাকে বিয়ে? তুমি না মা! .
আম্মু হতাশার কন্ঠে বলল,
----তুই তো বলতিস মেয়েটা খুব ভাল ৷ তাছাড়া অনিতা আমাকে অনেক দিন বলেছে সে তোকে পছন্দ করে ৷ এজন্য ভাবলাম..
----মা, থাম ৷ অনেক বলেছো, এবার ফোনটা কাটো!
.
ফোনটা কেটে গেল ৷ আম্মুর মুখ থেকে আজগুবি কথাগুলো শুনে বিরক্ত আমি ৷ মুড অফ হয়ে গেল ৷ এখন মুড ভাল করার উপায় বাইরে থেকে ঘুরে আসা! যদি জঙ্গলে সেই মেয়েটার সাথে দেখা হয়ে যায় তাহলে খুব ভাল হতো ৷ মনও চাচ্ছে তার সাথে দেখা হোক ৷ খুব কাছাকাছি হয়ে দু'টা কথা বলা যাবে ৷ কিন্তু তার সাথে কি দেখা হবে?
ঢাকা থেকে আনা ক্যামেরা নিয়ে রুম থেকে বের হলাম ৷ ভাবী আমাকে দেখে মিষ্টি হেসে মৃদ্যুস্বরে বলল,
----নীল, কই যাও?
আমি উত্তর দিলাম,
----এইতো, একটু নদীর দিকে যাবো ৷ অনেক বছর পর গ্রামে আসা ৷ একটু গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করতে যাই ৷
----সঙ্গে অনুকে নিয়ে যাও, ভাল হবে ৷
----না না, ওকে নেওয়া যাবেনা ৷ ও কেমন যেন!
----কেমন? যাহোক, যেমনই হোক, তাকে নিয়ে যাও ৷ সে বাইরে খুব কমই বের হয় ৷ কিন্তু তোমার সাথে ঠিকই যাবে ৷ আমি বলছি সে যেন তোমার সাথে যায় ৷
.
পড়ে গেলাম বিপাকে ৷ ভাবী তো জোর করেই অনুকে আমার সাথে পাঠিয়ে দিচ্ছে ৷ ভাবী তাকে ডেকে আনলো ৷ অনু আপাতমস্তক ঢেকে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ৷ ভাবী তাকে আমার সঙ্গে যেতে বলল ৷ অনু হ্যাঁ কিংবা না কিছুই বললোনা ৷ কিছুক্ষণ চুপ থেকে একদম নিচু স্বরে সে আমাকে বলল,
-----চলুন!
.
অনুর কথার মধ্যে ভদ্রতা আর সম্মানের নিদর্শন দেখলাম ৷ এটা আমাকে মুগ্ধ করলো ৷ নারী আসলেই রহস্যময় ৷ কখন যে কোন রুপ ধারণ করে বুঝা মুশকিল ৷ একটু আগে সে ছিল পশ্চিমা নারী, লজ্জার লেশমাত্র ছিলনা ৷ এখন সে এতটাই পর্দানশীল হয়েছে যে লাজরঙ্গা লজ্জাবতীর মত লাগছে ৷ তাছাড়া তারমধ্যে সৌজন্যবোধের অন্যরকম নিদর্শন খুঁজে পেলাম!
অনুকে সঙ্গে নিয়ে নদীতে গিয়ে পৌঁছলাম ৷ রোদের কারণে নদীটার সৌন্দর্য দারুণ ভাবে ফুটে উঠেছে ৷ তাকিয়ে দেখছি নদীর পানির সৌন্দর্য ৷ নদীর ভেতরের নৌকাগুলো নদীর সৌন্দর্যকে পূর্ণতা দিয়েছে ৷ দেখতে দারুণ লাগছে ৷ চোখের তৃপ্তি দিচ্ছে ৷ অনুর দিকে তাকালাম ৷ সে এখনো লাজুক ভাব নিয়ে লক্ষ্মী মেয়ের মত দাঁড়িয়ে আছে ৷ মৃদ্যু স্বরে তাকে বললাম,
----শোনো, তুমি এখানে থাকো, আমি জঙ্গলে যাবো!
.
অনু মাথা ঝাকালো ৷ তারমানে সে এখানে থাকবে ৷ আমি চলে যাওয়াতে তার সমস্যা হবেনা!
.
মনে মনে সেই মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে জঙ্গলে গিয়ে পৌঁছলাম ৷ জঙ্গলের ভেতর ঢুকে পড়লাম ৷ হঠাৎ, সেই মেয়েটার সাথে দেখা হয়ে গেল ৷ আমার থেকে ২০-২৫ হাত দূরে দাঁড়ানো সে ৷ আমাকে দেখে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রইলো ৷ আর আমি মনমুগ্ধের মত বিমোহিত নয়নে তাকে দেখছি ৷ ভাললাগছে ৷ তাকে দেখামাত্র মুহূর্তেই এ হ্নদয়ের গহীনে কেমন অদ্ভুত রকমের ভাললাগা তৈরি হয়ে গেল ৷ শরীরে কি অসাধারণ ভাললাগার অনুভূতিই না টের পাচ্ছি! মেয়েটার কাছে যেতে পা বাড়ালাম ৷ কিন্তু মেয়েটা ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে ৷৷ আচমকা গাছের আড়াল হয়ে গেল সে ৷ পিছু নিলাম তার ৷ কিন্তু তাকে আর খুঁজে পেলাম না ৷ বুঝতে পারছিনা সে এই জঙ্গলে কি করে? তার বাড়ি কোথায় জানা খুব জরুরি ৷ কিন্তু জানতে পারবো কেমনে? ক্যামেরাতে তার একটা ছবি তুলতে পারলে ভাল হতো ৷ অনুকে দেখালে সে ঠিকই বলতে পারতো মেয়েটার কথা ৷ আরো কিছুক্ষণ জঙ্গলের ভেতর হাঁটলাম ৷ আর মেয়েটাকে খুঁজতে লাগলাম ৷ হাঁটতে হাঁটতে অপরিচিত একটা ফল গাছের সামনে পড়লাম ৷ গাছের ডালগুলো ফলের ভারে ঝুলে পড়েছে ৷ অন্যরকম ফল ৷ এরআগে কখনো দেখিনি ৷ লাল টকটকে ৷ আপেলের মত লাগছে ৷ লাফিয়ে একটা ফল পাড়লাম ৷ দারুণ দেখতে ৷ আপেলের সাদৃশ একদম ৷ নিশ্চয় স্বাদও আপেলের মত হবে ৷ লোভ শামলাতে পারলাম না ৷ কামড় দিলাম ফলে ৷ দুটা কামড় দিয়ে সেটা তৃপ্তি সহকারে খেতে লাগলাম ৷ কিন্তু না এই ফলের স্বাদ আপেলের মত নয়, এটা তো টক লাগছে ৷ হঠাৎ করে আমার মাথা ঘুরতে লাগলো ৷ এরপর কিছু মনে নেই!
অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম ৷ জ্ঞান ফিরে দেখি আমি জঙ্গলের ভেতরেই শুয়ে আছি ৷ পাশে অনু বসে আছে ৷ নীল শাড়ি পড়া ৷ তার গায়ে বোরখা না দেখে অবাক হলাম ৷ অনু ধীরকন্ঠে বলল,
----হুম, চলেন এবার বাড়িতে যাওয়া যাক ৷ দুপুর হয়ে গেছে ৷ আপনি কমপক্ষে ৩ ঘন্টা অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলেন ৷
চমকে ওঠা অভিব্যক্তিতে তাকে বললাম,
----এতক্ষণ, অজ্ঞান ছিলাম? একটা ফল খেয়ে এই অবস্থা!
-----ওটা বিষাক্ত ফল ৷ খাওয়া মাত্র বেহুশ হয়ে যায় মানুষ ৷ আপনি কেন খেতে গেলেন?
-----ভুল করেছি ৷ তো চলো বাড়ি যাওয়া যাক ৷
----আপনি যান, আমি আসছি!
----কি বলো, এই জঙ্গলে তোমাকে একা রেখে যাবো?
-----আরে আমি আসছি তো ৷ যান আপনি!
.
অনুকে রেখেই বাড়ির দিকে গেলাম ৷ বাড়িতে পৌঁছেই দেখি অনু বারান্দায় বসে কাঁদছে ৷ মুখ ঢাকা রেখেই কাঁদছে ৷ তার কান্নার কি কারণ হতে পারে?
ভাবী আমাকে দেখে নিচু আওয়াজে বলল,
----ও কাঁদছে বিয়ের কথা চলছে ওর কয়দিন ধরে ৷ আজ বিকেলে পাত্র আসবে! কিন্তু অনু বিয়ে করতে চাচ্ছেনা ৷ মাত্র এইচএসসি পাশ করে বেড়িয়েছে ৷ ঢাকায় যাবে ভর্তি পরীক্ষা দিতে ৷ প্রস্তুতি নিয়েছে ৷
ভাবীর কথা শুনে অবাক হলাম ৷ আমি আট বছর আগে গ্রামে যখন ছিলাম তখন অনু ক্লাস ৮ এর ছাত্রী ছিল ৷ এখন তার অনার্স শেষ করার কথা ৷ অথচ সে কেবল এইচএসসি দিলো? তারমানে পড়া বাদ দিয়েছিল নাকি? ভাবীকে এটা জিজ্ঞেসা করলে সে বলল,
----অনুর লেখাপড়া স্থগিত ছিল ৪ বছর ৷ তুমি হয়তো জানোনা অনু....

No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.