Header Ads

Header ADS

অদৃশ্য_পরীর ভালোবাসা ------ পর্বঃ ০৬

 ----সে কি আমার চেয়ে পারফেক্ট ছিল? দেখুন তো!

.
কথাটি বলেই অনু তার মুখ থেকে ওড়নাটা সরিয়ে ফেলল!
আমার ছোট্ট এই জীবনে বহু কিছু দেখে অবাক হয়েছি, বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছি ৷ কিন্তু অনু তার মুখ থেকে ওড়নাটা সরানোর পর তার চেহারাটা দেখে যতটা অবাক হলাম ততোটা কখনো হইনি ৷ অবাকের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছি ৷ আমি যখন খুব খুশি হই তখন মনপ্রাণ উজার করে নির্বিগ্নে শুধু হাসি, কিংবা চোখের বৃষ্টি ঝরাই ৷ এখন আমি ভাললাগার শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি ৷ খুব করে হাসতে মন চাচ্ছে, কিন্তু পারছিনা হাসতে ৷ হাসি যেন আটকে গেছে ৷ চোখের বিন্দু বিন্দু ঝর্ণাধারা ঝরাতে মন চাচ্ছে কিন্তু ঝরছেনা কেন যেন! হ্নদয়ে ভাললাগার নদী প্রবাহিত হচ্ছে সেই নদীতে যেন আমি সাঁতার কাটছি ৷ কিন্তু ভয় হচ্ছে ডুবে যাব কিনা ৷ ভাললাগার পাশাপাশি মনের ভেতর একধরণের চাপা কষ্ট অনুভব করছিলাম ৷ তাকে হারানোর কষ্ট হয়তো ৷৷ তাকে হারিয়ে ফেললাম কিনা এই চিন্তা মাথায় যেন ঘুরপাক খাচ্ছিল ৷ যদি তাকে হারিয়ে ফেলি তখন আর বেঁচে থাকার কোনো আশা থাকবেনা ৷ আর এই ভয়টারই উদয় হচ্ছে ৷ আসলে আমি ভুল করেছি ৷ এতদিন আমি ভ্রমের মধ্যে ছিলাম, অথচ সেটা বুঝতেও পারিনি ৷ জঙ্গলে দেখা মেয়েটিই যে অনু, এটা আজকে জানতে পারলাম ৷ যদি আগেই অনু আমাকে মুখটা দেখাতো তাহলে আজ অনুর থেকে বিয়ের প্রস্তাব পাবার পর তাকে ফিরিয়ে দিতাম না ৷ ভুলটা আসলে আমারই ছিল, বড় ভুল ৷ এ ভুলের মাশুল দিতে হবে আমাকে ৷ আমি পারতাম ভাবীর সহযোগিতা নিয়ে অনুর মুখটা দেখতে ৷ কিন্তু আমার চেষ্টাই ছিলনা ৷ চেষ্টা থাকবেই বা কেমনে? আমার ভ্রমের জগতে যে মেয়েটাকে কল্পনা করতাম তাকেই তো এতদিন অনু হিসেবে চিনে আসছি, কিন্তু সে যে কল্পনা ছিল এটা সেসময় বুঝতে পারিনি ৷ এতদিন পর সত্যটা উন্মোচন হলো ৷ হতভম্বের দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছি ৷ মনপ্রাণ উজার করে তাকে দেখছি ৷ তাকে অনু ভাবতে ইচ্ছা করছেনা, সে তো রাহনুমা; আমার রাহনুমা; প্রথম প্রেম!
আমার তাকানো দেখে অনু রাগান্বিত চোখে আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ৷ তার রাগ হওয়া স্বাভাবিক ৷ একটু আগে তো তাকে অপমানিত করেছি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে ৷ এখন আবার তার দিকে প্রেমময়ী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি ৷ এহেন আচরণে সে রাগবেনা তো কি করবে? অনু উত্তেজিত হয়ে রাগের প্রতিধ্বনীতে আমাকে বলল,
----এভাবে তাকিয়ে থেকে আর লাভ হবেনা ৷ অনেক হয়েছে আমার পাগলামী, আর না ৷ একটা মানুষের ভালবাসা পাবার জন্য অনেক কিছু করেছি, কিন্তু পাইনি ভালবাসা ৷ উল্টো ছোট হয়েছি, অপমানিত হয়েছি ৷ আজকের পর থেকে আর কখনো আপনাকে বিরক্ত করবোনা ৷ আমাকেও কষ্টের আগুনে জ্বলতে হবেনা ৷ আর এই যে আমার মুখটা দেখলেন না? এই মুখটাকেই ভালবেসে যান, আমাকে ভালবাইসেন না ৷ আর ভালবেসে কোনো লাভও হবেনা, মরে গেলেও আমি আর আপনাকে গ্রহণ করছিনা ৷ আমি একবার যেটা বলি সেটাই করি!
.
শেষ কথাটি বলার সময় অনু যেন কেঁদেই দিলো ৷ চোখ থেকে ঝরঝর করে বিন্দু বিন্দু অশ্রুসজল গড়িয়ে পড়লো তার শ্যামবর্ণের গালে ৷ গালের যে অংশে চোখের পানি পড়ছিল সেখানটা লালচে হয়ে যাচ্ছিল ৷ সে ওড়নার একাংশ দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হয়ে গেল ৷
.
এবারও আমি তাকে কিছু বলতে পারলাম না ৷ জঙ্গলে দেখা সেই রাহনুমাই আমার চাচাতো বোন, এরপরও যেন তাকে কিছু বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছি ৷ বুঝতে পারিনা কেন এমন হয়! যদি আজ সে মুখটা না দেখাতো তাহলে তার সাথে হাজারো কথা বললেও কোনো সমস্যা হতোনা ৷ কিন্তু সে মুখ দেখানোর পর যখন প্রকাশিত হলো অনুই আসলে রাহনুমা তখন আমি নির্বাক, নিস্তব্দ এক জড়পদার্থ হয়ে গেলাম ৷ তার নিকট আমি যেন একটা খড়কুটো, বাতাসে উড়ে যাবো তবুও বলতে পারবোনা অনু আমাকে শক্ত করে ধরো; নয়তো হাওয়ার সাথে মিশে যাবো আমি; তোমার থেকে বহুদূরে চলো যাবো, হারিয়ে যাবো আমি ৷ এমনটা বলার শক্তিটাও আমি পাবোনা!
ক্রমে ক্রমে কষ্ট যেন আমাকে ঘিরে ধরছিল ৷ কষ্টের অসংখ্যা তীর বুকের জমিনে বিদ্ধ হবে এটার জন্য প্রতিক্ষা করা ছাড়া কোনো পথ খুঁজে পেলাম না ৷ কান্না করতে মন চাচ্ছিল কিন্তু কান্নাও আমার সাথে খেলা করছে, লুকোচুরি খেলা ৷ আচমকা বিকট শব্দ আমার কানে এলো ৷ অনু ধপাস করে দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছে, সেটার শব্দই কানে এলো ৷ এভাবে দরজা বন্ধ করায় দুশ্চিন্তা মাথায় এসে ধাক্কা দিলো ৷ কোনো অঘটন ঘটাবে নাকি সে? রাগে, অভিমানে হয়তো আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে ৷ ক্ষণিক পর কাম্নার শব্দ শুনতে পেলাম, উচ্চশব্দে কাঁদছে ৷ অনুই কান্না করছে ৷ তার মতিগতি ভাললাগছেনা ৷ মেয়েদের আবেগ একটু বেশি ৷ ধৈর্য্যের মাত্রা তাদের বেশি থাকলেও, আবেগপ্রবণ বিষয়ে তারা ধৈর্য্য ধরতে পারেনা ৷ তখন ভাল-মন্দ বাছবিচার না করে ভুল কাজ করে ফেলে ৷ এছাড়া বড় ধরণের কষ্টে নিজেদের শামলাতে পারেনা ৷ বিশেষ করে প্রেমঘটিত বিষয়ে কষ্ট পেলে আরো হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ৷ অনু একটু বেশিই আবেগপ্রবণ ৷ তাকে নিয়ে ভয়ের সৃষ্টি হলো ৷ রুমে আর বসে থাকতে পারলাম না ৷ রুম থেকে বেরিয়ে অনুর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম ৷ দরজায় কড়া নাড়বো কি নাড়বোনা এ নিয়ে মনের সাথে রীতমত যুদ্ধ করলাম ৷ এক মন বলছিল দরজা খুললেই অনু তোকে মারবে, মেরে কাঠের তক্তা বানাবে সেই তক্তা দিয়ে খাট বানাবে সেই খাটে অনু ঘুমাবে ৷ আরেক মন বলছিল দরজায় কড়া নাড়ো এতে অনু খুশি হবে এবং তার মনে তোমার প্রতি ভালবাসা নতুন করে তৈরি হবে ৷ যাবতীয় দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে সাহস করে দরজায় কড়া নাড়লাম ৷ কয়েক মুহূর্ত পর অনু দরজাটা খুললো ৷ এবার সে মুখে ওড়না পেঁচিয়েছে ৷ আমাকে দেখে ভ্রু কুঁচকিয়ে উচ্চশব্দে বলল
----কি, আপনি ভেবেছিলেন আমি আত্মহত্যা করবো? জি না, আমি এতটা বোকা না যে একটা হাঁদারামের জন্য সোনার জীবনটা নিজ হাতে টিপে মারবো ৷ আমাকে জ্যান্ত দেখতে পাচ্ছেন তো? যান এবার!
.
মৃদ্যুভাবে কাশি দিয়ে আমতাআমতা করে বললাম,
----আরে না, আমি কেন ওরকমটা ভাবতে যাবো ৷ এমনিই মনে হলো তোমার সাথে কথা বলি, তাই দরজায় কড়া নাড়লাম ৷ একটা কথা বলেই চলে যাবো!
----কক্ষোনো না, আজ থেকে আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই, যান এখান থেকে ৷ এমনিতেই অনেক রাত হয়ে গেছে ৷ একটা মেয়ের রুমে কোনো পুরুষের আসা ঠিক না, আপনি উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলতে পারেন!
----কিহ? আমি কেন তোমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করবো? আমি কি ওরকম?
----জি না, আপনি ওরকম না, আপনি সেইরকম ৷ শুধু মেয়েদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকেন ৷ আরে ধুর, আমি কেন আপনার সাথে এত কথা বলছি? যান তো যান, আমার খুব ঘুম পেয়েছে ৷ বাসায় আঙ্কেল, আন্টি থাকলে এতক্ষণ জেগে থাকতে দিতোনা!
----ঘুমাবে ঘুমাও, না করছিনা ৷ আপাতত রুমের ভেতর যেতে দাও ৷
----বললাম না, ঘুমাবো ৷ যান তো!
----যাবো, আরেকটু থাকি না?
----না, যান!
----তাহলে তোমার মুখটা আরেকটু দেখতে দাও
-----এখন আর আমার সাথেৱ প্রেম দেখিয়ে কোন লাভ নেই ৷ অন্যকারো জন্য ঐ প্রেম জমিয়ে রাখেন!
----ইশ! তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো!
----তাতে আপনার কি?
----আমি তোমার ভার্জিন জামাই!
----ওরে আমার ভার্জিন রে! দূর হন!
---- একটা কথা বলো তো, হঠাৎ করে তুমি ফের মুখ ঢেকে রেখেছে কেন? আজব!
-----ইচ্ছা হয়েছে তাই! শোনেন, ৩ পর্যন্ত গুণবো, যদি এরমধ্যে না যান, তাহলে আপনার খবর করবো!
----কি খবর করবে?
----আপনার কপালের মাংস তুলে ফেলবো!
----এটা তো আমার জন্যই ভাল হবে!
.
কথাটা বলা শেষ হয়নি, ওমনি অনু আমার শার্টের কলার ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো ৷ বাঁধাকে উপেক্ষা করে খুব সহজে আমার ঠোঁটে মৃদ্যুভাবে কামড় বসিয়ে দিলো ৷ অতঃপর গভীর ভাবে চুম্বনের আঁচর কাটতে লাগলো ৷ বেশকিছুক্ষণ চলতে লাগলো ৷ আমি নিথর, নিশ্চল মানবের ন্যায় একদম বৃক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ৷ শরীর কাঁপছে সর্বোচ্চ মাত্রায় ৷ অনুর পরশে রক্তের বিন্দুকণাতেও ভালবাসার পরশের সুখানুভূতি অনুভব করলাম ৷ যেন হারিয়ে গেলাম অচিন গ্রহে, সেই গ্রহের সমস্ত সুখ অনুকে সাথে নিয়ে লুটিয়ে নিচ্ছিলাম ৷ সুখের চাদরে দুজনে জড়িয়ে আছি ৷ অকস্মাৎ, অনু আমাকে ছেড়ে দিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো ৷ অতঃপর থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে ডুকরে কেঁদে উঠে রাগান্বিত স্বরে বলল,
----যা, তোরে সারাজীবনের জন্য মুক্ত করে দিলাম ৷ এটাই ছিল আমার থেকে পাওয়া তোর শেষ ভালবাসার পরশ ৷ হ্যাঁ, নির্লজ্জের মতই আমার পরশ তোকে উপহার দিলাম ৷ ৷ আজকে পর থেকে আমাকে আর পাবিনা ৷ আমি তোর এই স্পর্শটাকে মনে করেই সারাজীবন কাটিয়ে দিবো!
.
অনু কথাগুলো বলেই দরজাটা বন্ধ করে দিলো ৷ আমি হতবিহব্বল ও মর্মাহত মন নিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়া অবস্থায় ঝিম মেরে আছি ৷ তাকে কোনো কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি ৷ অনুর কান্নার শব্দ ভেসে আসছে ৷ তার কান্নার শব্দে আমার বুকে যেন তীরের বিষাক্ত ফলা বিদ্ধ হচ্ছিল ৷ আমি হয়তো তার ভালবাসা থেকে চিরদিনের জন্য বঞ্চিত হয়ে গেলাম ৷ তার চোখে আমার জন্য যে পরিমাণ রাগ ও অভিমানের ছাঁপ দেখতে পেলাম, সেই রাগ ও অভিমান ভাঙ্গতে হয়তো আমার জীবন পার হয়ে যাবে! কিন্তু আমাকে ধৈর্য্যহারা হলে চলবেনা ৷ তার অভিমান, রাগ ভাঙ্গার যুদ্ধে জয়ী হতেই হবে ৷ আজ থেকে সেই চেষ্টা চলবে ৷ চেষ্টাটা ততোদিন পর্যন্ত চলবে যতদিন না সে আমার হাতটা ধরে বলবে, “চলো সুখের নীড়ে বাস করি দুজনে!"
.
এখন আর বিছানাতে যেতে মন চাচ্ছেনা ৷ অনুর কান্নায় মনটা ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যাচ্ছে ৷ তার কান্নার শব্দ ও চোখের জল প্রমাণ করে সে আমাকে কতটা ভালবাসে ৷ অথচ এটা আমি বুঝিনি ৷ কতটা বোকা ছিলাম আমি ৷ আমি আবারো ভুল করেছি ৷ অনু হয়তো চেয়েছিল আমি যেন তাকে অনু ভেবেই ভালবাসতে শুরু করি ৷ জঙ্গলে দেখা সেই রাহনুমাকে নয় ৷ কিন্তু আমি তো ভুল করলাম ৷ যদি এখন ফের তার মুখটা দেখার কথা ব্যক্ত না করতাম, তাহলে হয়তো সে এতটা কষ্ট পেতোনা ৷ আজ থেকে তাকে অনু ভেবেই ভালবেসে যেতে হবে ৷ সেই অনুকে ভালবাসবো যাকে আমি ৮ বছর আগে দেখেছিলাম ৷ যাকে আমি চাচাতো বোন হিসেবে জানি ৷ সেই অনুকে ভালবাসবো যে আমাকে আজ প্রথমবার তার চেহারা দেখালো ৷ তাকে নয় যাকে জঙ্গলে দেখে পাগল হয়েছিলাম!
.
.
অনুর কান্না থামছিলনা ৷ আমি যে তাকে বলবো, “কেঁদোনা" এই কথাটাও কেন যেন মুখ দিয়ে বের হচ্ছেনা ৷ হঠাৎ করে অনুর কান্না বন্ধ হয়ে গেল ৷ চমকে উঠলাম ৷ অজ্ঞান হয়ে গেল নাকি সে?
পরে মনে হলো হয়তো ঘুমিয়ে গেছে ৷ আমার চোখেও যেন জগতের যাবতীয় ঘুম এসে জরো হয়েছে ৷ অনুকে নিয়ে অলিক কল্পনা হ্নদয়ের ক্যানভাসে আঁকতে আঁকতে ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করলাম!
.
.
টং দোকানের চা খাবে বলে অনু আবদার করেছে ৷ গাড়িটা থামিয়ে দুজনে দোকানের দিকে গেলাম ৷ দু-কাপ চায়ের অর্ডার দিলাম ৷ অনুর মুখে মুগ্ধতার হাসি ৷ তার হাসি দেখলে প্রকৃতির সমস্ত কিছুর সৌন্দর্য যেন বেড়ে যায়, যা অসুন্দর তাও যেন সুন্দর লাগে ৷ কোকিলের সুরেলা কন্ঠের মত কাকের কন্ঠকেও সুমিষ্ট মনে হয় ৷ সবই অনুর হাসির ভাললাগার রহস়্য ৷ মানুষটা আমাকে প্রতিনিয়ত সুখের পরশ উপহার দিয়ে যাচ্ছে ৷ চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পান করছিলাম ৷ অনু নির্লিপ্তে তৃপ্তির সাথে চা পান করছিল ৷ আমার চোখ বরাবরের মত তার চেহারার দিকেই রইলো ৷ সে আর মুখ ঢেকে রাখেনা, আমার আবদারে; তবে গায়ে বোরখা ঠিকই জরানো থাকে ৷ অনুর চা পান শেষ হলে গাড়িতে উঠে অগ্রসর হতে হলো ছোট্ট একটা নদীর দিকে ৷ আজ অনু নদীর সৌন্দর্যে বিলিন হতে চায় ৷ নদীতে পৌঁছলাম ৷ আঁকাবাকা নদী ৷ নদীর অন্যপাশে দীগন্তজোরা ধান ক্ষেত ও অনেকগুলো ঘর ৷ এপাশের এক পাশে লম্বা নারিকেল গাছের সারি! নদীর পানি শুকিয়ে গেছে বলা যায় ৷ তবে নৌকা চলছে ৷ একটা বড় আকারের নৌকা দিয়ে মানুষদের পারাপার করা হয় ৷ নদীতে পৌঁছে অনুর আবদার অনুযায়ী চলতে হলো ৷ তার আবদার নৌকাতে চড়বে সে ৷ তবে মাঝি হতে হবে আমাকে ৷ কঠিন চাওয়া পূরণ করতে হবে ৷ কি আর করা!
এক মাঝির নৌকা এক ঘন্টার জন্য ভাড়া নিলাম ৷ দুজনে নৌকাতে উঠলাম ৷ নৌকা চালাচ্ছিলাম কিন্তু ঠিকমত পারছিলাম না ৷ নৌকা এদিক সেদিক আঁকাবাকা চলছিল ৷ অনু এসব দেখে হাসিতে ভেঙ্গে পড়ছিল ৷ তার হাসি দেখে মনে হচ্ছে হাসতে হাসতে বেহুশ হয়ে যাবে সে ৷ নৌকায় চালাবো নাকি তার হাসি দেখবো বুঝে উঠতে পারছিনা!
তার হাসি দেখা বাদ দেওয়া মানে স্বর্গ সুখ হাতছাড়া করা ৷ ঈষৎ টোল পড়া ফর্সা গালের হাসি আমার বুকটা ভাললাগায় ভরিয়ে দেয় ৷ এই ভাললাগার সুখ যেন স্বর্গীয়!
.
অপ্রত্যাশিতভাবে মুহূর্তে পুরো আকাশটা ঘণকালো মেঘে ছেঁয়ে গেল ৷ যেন বৈশাখী আকাশের মেঘ ৷ ঝড় আসবে এমন লাগছে ৷ অথচ এটা শীতকাল ৷ আচমকা আকাশে মেঘ জমার কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না ৷ আমার মনে ভয় ঢুকে গেল ৷ অনুকে দেখে চিন্তিত মনে হলোনা ৷ সে তৃপ্তিতে আছে ৷ তাকে বাড়ি যেতে বললাম, কিন্তু সে যাবেনা বলছে ৷ বৃষ্টি নামবে বলে সাবধান করলাম, সে জবাব দিলো বৃষ্টিতে ভিজবে আজ!
নিরুপায় হয়ে নৌকা চালিয়ে যেতে হলো ৷ কয়েক মুহূর্ত পরই ঝুম বেগে বৃষ্টি নামা শুরু হলো ৷ মুষলধারে বৃষ্টি ৷ কয় ঘন্টা যে বৃষ্টি চলতে থাকে কে জানে? নদী থেকে কিছুটা দূরে রাস্তা, সেখানে গাড়ি রাখা আছে ৷ গাড়িতে গেলে হয়তো ভেজা কাপড় বদলিয়ে নতুন কাপড় পড়া যাবে কিন্তু অনু যেতে চাচ্ছেনা ৷ আমার গাড়িতে প্রয়োজনী কাপড় রেখে দিই, অনুকে বিষয়টা বললে নৌকা থেকে না যাবার জন্য পণ করলো ৷ ভিজতে লাগলাম দুজনে ৷ ভিজে একাকার ৷ বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যেন তীরের ফলার মত ৷ প্রতিটা শিলা বৃষ্টির মত বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে তীব্র বেগে লাগছিল ৷ কাকভেজা হয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে আছি ৷ বৃষ্টিভেজা অনুর ফর্সা গালটার দিক থেকে চোখ সরানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও জাগছেনা! অনুও আমার দিকে প্রেমময়ী গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ৷ তার ঠোঁট কাঁপছে ৷ শরীরও কাঁপছে মৃদ্যুভাবে ৷ আমার শরীর যতটা না শীতের জন্য কাঁপছে তারচেয়ে বেশি কাঁপছে অনুর প্রতি অন্যরকম অনুভূতি তৈরী হওয়ায় ৷ খুব করে মন চাচ্ছিল তাকে শক্ত করে বুকের জমিনে চেপে ধরে রাখতে ৷ কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছিনা ৷ বলার সাহস হারিয়ে গেছে ৷ আচমকা অনু নিজেই আমাকে আষ্টেপিষ্টে বুকের ভেতর জড়িয়ে নিলো ৷ আমার মনের চাওয়া হয়তো সে মন দিয়ে পড়তে পারে, তাকে চাওয়ার কথাটা না বলতেই নিজে থেকে আমার চাওয়াটা পূরণ করলো ৷ অনু জড়িয়ে ধরায় মুহূর্তেই শীত উধাও হয়ে গেল ৷ তার দেহের পরশে আমার পুরো শরীর যেন উষ্মতায় ভরে গেল!
আচমকা অনু আমাকে ছেড়ে দিলো ৷ অপ্রত্যাশিতভাবে সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে নৌকা থেকে নদীর ঠান্ডা পানিতে ফেলে দিলো ৷ বড়সর ধাক্কা খেলাম তার এমন আচরণ দেখে ৷ সে এমন দুষ্টুমি কেন করলো বুঝলাম না? অতঃপর কোনো কথা না বলে সে নৌকার বৈঠা দিয়ে আমার মাথায় সজোরে আঘাত করলো ৷ চিৎকার মেরে উঠলাম!
.
.
ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার ৷ তারমানে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম ৷ এমন ভয়াবহ স্বপ্নের প্রভাবে আমার পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে ৷ তিন রাত্রী এমন ভয়ংকর স্বপ্ন দেখলাম ৷ এই স্বপ্নগুলোর কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছিনা ৷ বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখতে তো স্বপ্নের অর্থ বুঝা যায় অনু আমার অনিষ্ট করবে ৷ কিন্তু কিসের জন্য সে আমার ক্ষতি করতে যাবে?
.
মেঝেতে বালিশ ছাড়ায় শুয়ে ছিলাম, কিন্তু এখন আমার মাথার নিচে বালিশ ও গায়ে একটা কম্বল দেখতে পাচ্ছি ৷ নিশ্চয় অনুই আমার মাথার নিচে বালিশ ও গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে গেছে ৷ বুঝতে পারলাম সে আমার প্রতি খুবই যত্নশীল ৷ যতই অভিমান করে বলুক, সে আমাকে ভুলে যাবে, সত্যিকার অর্থে সে কখনোই ভুলতে পারবে না ৷ বারবার সে আমার জীবনে ফিরে আসবে, আসতেই হবে ৷ আমি তাকে যতটা না ভালবাসি, তারচেয়ে বেশি সে আমাকে ভালবাসে!
তবে আমি চাই আজ থেকে আমিই যেন তাকে বেশি ভালবাসি, আমার ভালবাসা যেন তার ভালবাসার কাছে জয়ী হয় ৷ আর এই চেষ্টা শুরু হবে আজ থেকে!
.
.
খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গায় ছাদে গেলাম এক্সারসাইজ করতে ৷ হঠাৎ অনু ছাদে চলে এলো ৷ তার গায়ে ইয়োগা ড্রেস শোভা পাচ্ছে ৷ খুবই উত্তেজক লাগছিল তাকে ৷ তবে এই অনু আসলে আসল অনু নয়, এটা সেই আবেদনময়ী অনু ৷ যেটা আমার ভ্রম ৷ এখন আমি আচমকা অনুকে নিয়ে ভ্রমের জগতে পা দিয়েছি ৷ জানিনা এই সমস্যাটা কবে কেটে যাবে ৷ কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে বড়ধরণের দ্বিধায় আছি যে ভ্রমে বা কল্পনায় যাদের দেখা যায় তাদের কি স্পর্শ করা যায়? স্পর্শ করলে তারা কি সেই জায়গাতে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে? যদি তা না হয় তাহলে আমি কেমনে অনুকে স্পর্শ করতে পারছি? নাকি এটা আসলে কোন ভ্রমই নয়, বাস্তব? যদি বাস্তব হয় তাহলে এটা নিশ্চয় অনু নয় ৷ অনু তো রাহনুমা ৷ সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে ৷ তাহলে এই আবেদনময়ী মডার্ণ মেয়েটা কে?
আজ থেকে তাকে ভিন্ন নামে ডাকবো ৷ না না এটা ঠিক হবেনা ৷ তারচেয়ে ভাল তাকে অনু-২ বলে ডাকা ৷ অনু-২ যখন আমার কাছাকাছি এলো তখন ক্ষ্যাপাস্বরে তাকে বললাম,
----এই মেয়ে সত্যি করে বলো তো তুমি কে?
অনু-২ আমাকে ভ্যাঙ্গাতে ভ্যাঙ্গাতে বলল,
----এই মেয়ে সত্যি করে বলো তো তুমি কে?
----আরে আমাকে ভ্যাঙ্গাচ্ছো কেন?
----তো কি করবো? বোকা একটা, এতদিন আমার ভালবাসার পরশ নিয়ে এখন বলছে আমি কে? মন চাই মারি একটা ৷ কিন্তু আমার লক্ষ্মী বাবুটাকে মারবো না, শুধু আদর করবো ৷ আসো তোমাকে একটু আদর করি ৷
.
কথাটা বলেই অনু-২ আমার হাতটা ধরে টেনে তার বুকে জড়িয়ে নিলো ৷ অতঃপর কপালে মৃদ্যুভাবে চুমুর রেখা এঁকে দিলো ৷ এরপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
----দেখো কেমনে শরির চর্চা করতে হয় ৷ আমার দেখাদেখি তুমিও করো!
.
অনু-২ এর কথায় কান না দিয়ে ছাদ থেকে চলে যাচ্ছিলাম ৷ সে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে ক্ষিপ্তস্বরে বলল,
----কই যাও, আমি যেটা বলছি সেটা করো ৷ আজ বেশি কিছু করতে হবে না ৷ দশবার বুকডাউন দিবে, আমিও দিবো ৷ আমার দেখাদেখি করবে, বুঝলে?
.
এটা সহজ হওয়ায় দশবার বুক ডাউন দিলাম ৷ অতঃপর ছাদ থেকে চলে এলাম!
.
.
সকালের
নাস্তা রেডি করতে কিচেনে অনু রান্না করায় বাস্ত হয়ে পড়েছে ৷ কিচেনে প্রবেশ করে তার রান্না করা দেখছিলাম ৷ এবার তার মুখ ঢাকা আছে ওড়না দিয়ে ৷ এটা নিয়ে ভাবলাম না ৷ তার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে চলুক, মন খুশিমত চলুক ৷ অনুর পিছে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বললাম,
----কি রান্না করছো?
.
উত্তর পেলাম না ৷ আবারো প্রশ্ন করা হলে কোনো উত্তর পেলাম না ৷ এবার তার গায়ের সাথে আমার গা লাগিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় বললাম,
----ওহ, পরোটা ভাজতেছো ৷ আচ্ছা, আর কি রাঁধবে?
.
অনু তাচ্ছিল্যকর কন্ঠে বলল,
---এত ডং দেখান কারে? আমি কি আপনার বউ লাগি? আর কোন সাহসে আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছেন? সরে দাঁড়ান বলছি ৷ না না, শুধু সরেই দাঁড়াবেন না, রুম থেকে বের হন!
.
নরম কন্ঠে জবাব দিলাম,
----হুম, তুমি তো আমার বউই হও ৷ বউ বলেই তো গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছি ৷ শুধু গা ঘেঁষা কেন? তোমাকে ঝাঁপটেও ধরতে পারি ৷ কি দেখবে কেমনে জড়িয়ে ধরি তোমাকে?
.
অনু তেড়ে উঠে হাতে কুন্তি দেখিয়ে চেঁচানো গলায় বলল,
----আপনি এখান থেকে যাবেন নাকি খুন্তির ছ্যকা দিবো? খুন্তি উত্তপ্ত আছে ৷ গায়ে লাগলেই পুড়ে একদম ছাই হয়ে যাবে আপনার কালো কুচকুচে ত্বক!
.
অনুর ওড়নায় পেঁচানো মুখে গালটা টেনে আদুরে গলায় বললাম,
----ঠিক আছে লক্ষ্মী বউ, আমি যাচ্ছি!
.
.
অনুর সাথেই ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে নাস্তা করছিলাম ৷ তখনই বাবা, মা বাসায় চলে আসলো ৷ তাদের দেখে আমার চেয়ে অনুই বেশি খুশি হলো ৷ কিন্তু বাবা, মা অনুকে দেখে চিনতে পারলোনা কেন যেন? যখন তাদের বললাম এটা তো অনু তখন চিনতে পারলো ৷ এমনকি তারা যেন খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল ৷ তবে তাদের চোখে মুখে কেমন যেন দ্বিধাদ্বন্দ্বের ছাঁপ লক্ষ্য করলাম ৷ আম্মু তো বলে উঠলো, “৬ মাসের মধ্যে অনুর চেহারা এরকম পাল্টে গেল? অনু তো এরকম দেখতে ছিলনা ৷" এটা বলেই, আম্মু, আব্বু ওয়াশরুমের দিকে গেল ৷ বেশকিছুক্ষণ পর তারা সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলের নিকট এলো ৷ আমরা দুজন খাওয়া দাওয়া স্থগিত রেখেছিলাম বাবা, মায়ের সাথে খাবো বলে ৷ অনু আম্মুর কথা শুনে কেমন যেন হয়ে গেল? হয়তো আম্মুর কথায় কষ্ট পেয়েছে ৷ ইতস্ততবোধ করছিল সে ৷ তবুও মুখে কৃত্তিম হাসির সৃষ্টি করে কপালে ভাঁজ ফেলে আমার দিকে দৃষ্টিপাত করছিল ৷
আম্মু, আব্বু চেয়ারে বসে পড়লো ৷ তারা নাস্তা করতে লাগলো ৷ আম্মু অনুর সাথে নানা রকমের কথা বলছিল আর খাচ্ছিল ৷ তাদের দুজনের কথার মধ্যে আমাকে ঢুকিয়ে দিচ্ছিল ৷ আম্মু আমাকে নিয়ে প্রশংসামূলক কথা বললেও অনু আম্মুর নিকট আমার নামে শুধু বদনাম ছড়াচ্ছিল!
.
আম্মু হঠাৎ বলল,
----অনু, আমি সেদিন ভাইজানের থেকে যখন শুনলাম তুই আর নীল একে অপরকে ভালবাসিস তখন এটা শুনে খুব রাগ হয়েছিল ৷ তোদের ভালবাসা মেনে নিতে পারছিলাম না কেন যেন? কিন্তু পরে তো তুই ফোন করে বললি নীলের সাথে তোর কিছুই নেই ৷ কয়দিন ধরে তোদের দুজনকে নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করেছি ৷ আসলে তোদের মধ্যে প্রেম থাকলে ভালোই হতো ৷ আমার ছেলেটাকে যার তার সাথে বিয়ে দেবার চিন্তা মাথায় আনি ৷ কিন্তু এটা কখনো ভাবিনি যে আমার ছেলের একটা চাচাতো বোন রয়েছে ৷ যে কিনা পরীদের মত সুন্দরী ৷ নীলের সাথে তোকে সত্যিই খুব মানাবে ৷ আমি চাই তুই আমার ছেলের বউ হয়ে ঘরে আস ৷ ঘরটাকে আলোকিত কর ৷ তোর মত এত লক্ষ্মী, সুন্দরী মেয়ে আর আছে নাকি? যদিও বর্তমানে তুই একটু কালো হয়ে গেছিস ৷ সমস্যা নেই ক্রিম মাখলেই আগের মত হয়ে যাবি!
.
আম্মুর কথা শুনে অনু মিটমিট করে হাসলো আর আমার দিকে চোখ টিপেটিপে তাকিয়ে দেখছিল ৷ আম্মুর কথার জবাবে সে ক্ষীণস্বরে বলল,
----কিন্তু আন্টি, আমি তো আপনার ছেলেকে বিয়ে করতে পারবোনা ৷ ওনার মত বোকাকে বিয়ে করা মানে জীবনটা নষ্ট করে দেওয়া!
আম্মু মিষ্টি হেসে বলল,
----আমার ছেলেটা বোকা বলেই তো তোর হাতে তুলে দিতে চাচ্ছি ৷ তুই তাকে চালাক বানাবি ৷ কি পারবিনা?
.
পাশ থেকে আব্বু গম্ভীর গলায় বলল,
----মমতা, তোমার ছেলে মোটেও বোকা না ৷ তুমি বলছো অনুর সাথে তার প্রেম নেই ৷ কিন্তু আমি তো তোমার ছেলের চোখ দেখে বুঝতে পারছি সে অনুকে মনপ্রাণ উজার করে ভালবাসে! আর অনু মামনীও আমার ছেলেটার জন্য পাগল ৷ আমি চাচ্ছি এখনই ওরা বিয়েটা না করুক, আগে চুটিয়ে প্রেম করুক ৷ এখন না করলে কবে করবে, বলো?
.
আব্বুর কথা শুনে অনু যেন লজ্জায় লাজরঙ্গা হয়ে গেল ৷ লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে রইলো!
.
.
খাওয়া দাওয়া শেষ করে অফিসে যেতে বাসা থেকে বের হচ্ছিলাম ৷ তখন আম্মু আমাকে থামিয়ে দিলো ৷ আবার অনু ভার্সিটিতে যেতে লাগলে তাকেও থামিয়ে দিলো ৷ আম্মু নাকি আমাদের দুজনকে নিয়ে আনন্দঘণ সময় কাটাবে!
.
নাস্তা করার সময় অনুর মুখ খোলায় ছিল ৷ ভার্সিটিতে যাবার সময় সে বোরখা পড়েছিল ৷ কিন্তু আম্মু তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো বোরখা খুলে আসো ৷ কিন্তু অনু বোরখা খুলতে চাচ্ছিল না ৷ আম্মু বারবার বলা সত্বেও না ৷ বুঝলাম না, সে এখন কেন বোরখা খুলতে চাচ্ছেনা? আমার আম্মুর নিকট বোরখা খুলতে কি সমস্যা তার? 

No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.