Header Ads

Header ADS

হৃদমাঝারে_তুমি_ছিলে❤️ -----পর্ব ৮

বাইরে বহমান ফুরফুরে হাওয়া।ছাদের কোণায় দাঁড়িয়ে থাকলে বকুলের ঘ্রাণটা তীব্র থেকেও তীব্রতর হয়। এই হাওয়ার তালেও ধুক ধুক করে কাপছে মাইশার হৃদয়। কপালের কাছে চিক চিক করছে ঘাম। এই বিকেলে সচরাচর কাপড় ধোয়া হয় না। কেননা রোদের উষ্ণতা এসময় কম থাকে। কিন্ত মাইশাকে এই অসময়ে ধুতে হলো আয়াতের সেই চকলেট কেক মাখানো শার্ট।

সাদা শার্ট ধোয়া এত সহজসাধ্য নয়। তার ওপর চকলেটের ছোপ ছোপ দাগ ছিলো। তাই মাইশা অত্যন্ত সন্তর্পণের সাথে নিজহাতে শার্ট ধুয়েছে। ওয়াশিংমেশিনে দেয়ার মতো দুঃসাহসিক কাজ করলো না। কিন্ত মাইশা এই ভেবে ভয় পাচ্ছে যে কোনোক্রমে আম্মুজান দেখে ফেললে কি হবে। নিজের মেয়েকে একটা ছেলের শার্ট ধুতে দেখলে কোনো সাধারন পরিবারই যে তা সাধারন চোখে দেখবেনা এটাই স্বাভাবিক।
তাই এই পড়ন্ত বিকেলে গুটি গুটি পায়ে ছাদে শার্ট মেলতে এলো মাইশা। শার্টটি গরম পানি দিয়ে ভালোমতো ধুলেও আয়াতের গায়ের তীব্র বডিস্প্রে এর ঘ্রাণটা মাইশার নাকে ভেসে আসছে। বিকেলের আমেজে আকাশ কমলা রঙ ধারন করেছে। পশ্চিমা দিকটা বেশ সুন্দর। মাইশা একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে যেই না নিচে নামতে যাবে তখনই সিড়ির সামনে আম্মুকে দেখে থমকে যায়। ভয়ে বুকটা দুরুদুরু করছে। কথায় আছে না , ''চোরের মন পুলিশ পুলিশ !'' এখন মাইশার ঠিক তেমনি মনে হচ্ছে। আমতা আমতা করে বললো,
--''আ-আ-আম্মু ত-তুমি?''


--''তুই আবার কবে থেকে তোতলাতে শুরু করলি?''
আম্মুর কড়া কন্ঠ শুনে কয়েক বার শুকনো ঢোক গিলে ফেললো মাইশা। হাতের মধ্যে এখনও বালতিটা আছে। শারমিন বেগম মাইশার হাতে বালতি আর পেছনে সাদা শার্ট মেলা অবস্থায় দেখে কপাল কুচকে ফেলেন। উনার জানামতে না এই শার্ট মাইশার বাবার আছে আর না ছেলে নুহাশের আছে। তাই প্রখর কন্ঠে তিনি বললেন,
--''জীবনে তো আমারে একটা গামছাও ধুয়ে দিলি না। এই অসময়ে এটা কার শার্ট ধুয়ে মেলেছিস তুই? এমন শার্ট জীবনেও তোর বাবা পড়েনা আর নুহাশেরও এমন কোনো শার্ট নেই। তাহলে?''
মাইশার বুকের ধুকধুকানিটা ক্রমশ যেন বেড়েই চললো। বাকরুদ্ধ হয়ে নিজের মাথা থেকে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে।শারমিন বেগম এখনও উত্তরের জন্য মেয়ের মুখপানে তাকিয়ে আছেন।
--''কি হলো? বলছিস না কেন? কার শার্ট এটা?''
মাইশা বুঝে ফেললো এখন বেশিক্ষণ চুপ থাকলে আম্মুজান সন্দেহ করবে। এই ঠান্ডা আমেজেও তরতর করে ঘামার অবস্থা হয়েছে মাইশা। নিজের ঠোঁটজোড়া হালকা জিভ দিয়ে ভিজিয়ে আচমকা বলে ফেললো,
--''আমার শার্ট এটা।''
শারমিন বেগমের চোখ যেন এবার কোটর থেকে বেরিয়ে পড়বে। যেন এরকম কোনো উত্তর শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। অন্যসময় নিজের বোকামি উত্তর শুনে মাইশা হয়তো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেত কিন্ত এখন সে পরিস্থিতি নেই। মনের গহীনে ভয়টা যেন শিরায়-উপশিরায় অবাধে বিচরণ করছে। শারমিন বেগম কটাক্ষ কন্ঠে বললেন,
--''আমারে কি তোর তারছিড়া মনে হয়? আমার পেট থেকে তুই বের হয়েছিস , আমি তোর পেট থেকে বের হইনি যে তুই যেটা বলবি আমি ওটা বুঝবো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা ছেলেদের শার্ট।''
মাইশার গলা যেন শুকিয়ে এবার কাঠ হয়ে যাচ্ছে। যেভাবেই হোক এই পরিস্থিতিটা সামলাতে হবে নাহলে এই মহিলা ওরে বাথরুমের ব্রাশ দিয়ে মারতেও দুবার ভাববে না। তাই ছোট ছোট চোখ করে শারমিন বেগমকে বললো,
--''এখন কি আর ছেলে-মেয়েদের শার্ট বলতে কিছু আছে? সবাই সেম রকমের শার্ট পড়ে। আর এটা আমি আজই কিনেছি তাই ধুয়ে মেলে দিলাম।''
মাইশার উত্তর শুনে শারমিন বেগম প্রসন্ন হলেন। হয়তো একটু হলেও মাইশার কথাটা বিশ্বাস করার চেষ্টা আছেন। একটা দেখে অগোচোরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো মাইশা । শারমিন বেগম পুনরায় পেছনে ভেজা শার্টটির দিকে চোখ বুলিয়ে নিলেন। হঠাৎ কিছু একটা আন্দাজ করে চোখ কুচকে ফেললেন তিনি। অবাকের ভঙ্গিমায় বললেন,
--''ওমা ! এত বড় শার্ট কিনেছিস কেন? এর মধ্যে তোর মতো দুজন অনায়াসে ঢুকে যেতে পারবো।এটা কি তোর লাগবো শরীরে?''
মুখটা আবারও মলিন করে ফেললো মাইশা। এবার শারমিন বেগমের প্রতি প্রচুর পরিমাণে বিরক্ত হচ্ছে। হয়তো মা জাতটাই এমন। প্রতেকটি বিষয় খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার চেষ্টা করেন তারা। মাইশা কাচুমাচু হয়ে বললো,
--'' ল-ল-লাগবে। তাছাড়া এই শার্টটা পড়ে তো আর বাইরে যাচ্ছি না। জাস্ট রাতে পড়ে ঘুমাবো।''
--''দেখেই বোঝা যাচ্ছে কত দামী শার্ট। আর তুই এটা রাতে পড়ে ঘুমানোর জন্য কিনেছিস? তোর বাবার টাকা গাছে হয়না যে ছিড়বি আর ব্যয় করবি। আবার এমন ফাউল খরচ করতে দেখলে গালের নিচে দিবো একটা..............''
শারমিন বেগম হাত উঠাতে গেলেই সাথে সাথে মাইশা গালে হাত দিয়ে দেয়। চোখ ছোট ভঙ্গিমায় আম্মুজানের দিকে তাকিয়ে আছে। শারমিন বেগম তুখর গলায় বললেন,
--''মনে থাকে যেন !''
এই বলে সিড়ি ভেঙ্গে নিচে নেমে গেলেন তিনি। মাইশা এবার একটা প্রসন্নের শ্বাস ত্যাগ করলো। এতক্ষণ শারমিন বেগমের উপস্থিতিতে বুকে যেন কেউ পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিলো। মনে মনে ওই আরহাম আয়াতকে কয়েকটা গালি দিয়ে দিলো ও। এই শার্টটা এতক্ষণ নিজের বলে দাবি করাতে নিজেরই বেশ লজ্জা লাগছে । ইসসস ! এই শার্টটির মতো যদি মানুষটিকেও নিজের বলে দাবি করতে পারতো?
------------------------------------------------
বাবা আর নুহাশ ভাইয়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো মাইশা। দক্ষিণ পাশের জানালাটি খোলা থাকায় বাতাসের ধাক্কায় পর্দাটি বারবার উড়ে চলছে। পর্দাটি বারবার সরে গেলেই দেখা যায় পাশের বাড়ির নিরা নামের মেয়েটিকে বই পড়ার ভঙ্গিতে। সামনে মেডিকেল পরীক্ষা দিবে বলে এখন থেকেই তোরজোর শুরু করেছে। মাইশা সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে জানালার থাই লাগিয়ে দিলো। মেয়েটার উচ্চস্বরে বায়োলজির প্রতিটা পড়া শুনতে শুনতে কান যেন ঝালাপালা হয়ে গিয়েছে। এদিকে মোবাইলেও একটু পরপর অর্পি কল করে যাচ্ছে। মাইশা জানে যে অর্পি কল করছে আগামীকাল ওর সাথে বসুন্ধরায় যাওয়ার জন্য। কিন্ত এই প্রিয় বান্ধবীটিকে না বলার ক্ষমতা মাইশার হয়তো নেই বলে ফোন তুলছে না। তবুও শেষমেষ অনেকটা বিরক্ত হয়েই কলটা ধরে বললো,
--''হ্যালো !''
--''মাইশু ! কখন থেকে তোকে কল করছি ফোন ধরছিস না কেন?''
--''কারন আমি জানি তুই কিজন্য কল দিয়েছিস।''
--''আমি জানতাম মাইশু তুই আমার মনের সব কথা বুঝোস। লাভ ইউ।''
--''তোর লাভ ইউ তোর জিলাপির সাথে রাখ। আমি কাল বসুন্ধরায় যাবো না।''
--''কিন্ত কেনো?''
--''সারাটাদিন কেনা-কাটা করতে থাকিস তুই আর তোর জন্য পায়ে ফোসকা পড়ে আমার। আন্টিরে বল তোর বিয়ে ঠিক করতে । তারপর হানিমুন না করে জামাইয়ের সাথে মার্কেটে পিরিত করিস।''
থমথমে গলায় বলে ফেললো মাইশা। ওপাসে অর্পি মুখ ভার করে রেখেছে। তারপর ভারী কন্ঠে বললো,
--''তুই আমার সাথে এটা করতে পারলি?''
-

No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.