হৃদমাঝারে_তুমি_ছিলে❤ ----পর্ব_৭
নিজের মুখে আচমকা কেউ কেক ছুঁড়ে মারাতে প্রথমে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো আয়াত। সাদা শার্ট আর মুখের অনেকাংশে এভাবে চকলেট কেক ভরে থাকাতে যেন হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। এর থেকেও আরও বেশি অবাক হয়েছে তার মুখ বরাবর দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে। মেয়েটার মুখেও অনেকাংশে বার্থডে স্প্রে এর ফ্যানা দিয়ে মাখানো। তার থেকেও আরও আজব ব্যাপার মেয়েটা অন্য কেউ নয়, মাইশা।
ওদের কাছে একপ্রকার দৌঁড়ে আসলো সামাদ, পৃথা আর অর্পি। এই সুদর্শন চকলেট ম্যানকে দেখে সবাই যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মাইশা এবার কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। অদূরেই আনান কাচুমাচু হয়ে এগিয়ে আসছে। মাইশার ইচ্ছে করছে এই আনানকে এখন ড্রেনে চুবিয়ে মারতে। কিন্ত এখন এ পরিস্থিতি নেই। ব্যতিব্যস্ত হয়ে আয়াতের কাছে এগিয়ে বললো,
--''আই.............আই এম সরি ! আ-আমি ই-ইচ্ছে করে আপনাকে কেক ছুঁড়ে মারেনি।''
আয়াতের রাগ হচ্ছে এবার। প্রচন্ড রাগ। এই পাগলাটে মেয়েটার সাথে দেখা হয়ার পর থেকে প্রতিবারই উল্টা-পাল্টা কিছুনা কিছু হচ্ছে। কোনোমতে মুখ মুছে বললো,
--''কেক কি ছুড়েঁ মারার জিনিস স্টুপিড? আমার মুখ-শার্ট সবকিছু ক্রিমে ভরে গেলো।''
মাইশা ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই ছেলেটাকে নিয়ে এতটা জল্পনা কল্পনা করে অথচ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মাইশা যেন নিজের স্বাভাবিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। শাওন এবার পার্কিং লটের এককোণে বেঞ্চে আয়াতকে বসিয়ে দিলো। তারপর বললো,
--''ওই ব্যাটা ! তোর সাদা শার্টে চকলেটের ছোপ ছোপ দাগ পড়ে গিয়েছে । এই নিয়ে প্রফেসরের কাছে যেতে পারবি?''
--''আমি আর যাবো কিভাবে? এক কাজ কর । তুই ফাইলগুলো নিয়ে যা।আমি যাব না।''
--''কিন্তু............''
--''কিন্তু কি? স্যারের কাছে এমনে চকলেট ভূত হয়ে যাবো?''
মাইশা এখনও এককোণে বোকার মতো শাওন আর আয়াতের কথা শুনছে। নিজেকে এখন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গর্দেভ মনে হচ্ছে ওর। শাওন তীক্ষ্ণ চোখে মাইশার দিকে তাকায়। চুটকি বাজিয়ে বললো,
--''হ্যালো মিস ! কেক ভুল করে ছুঁড়ে মেরেছেন ভালো কথা । কৃপা করে আমার বন্ধুটার মুখটা আপনি নিজে ক্লিন করলে ভালো হয়।''
মাইশা কিছু বলতে যাবে আয়াত চেচিয়ে বললো,
--''পাগল হয়েছিস তুই? এমন জংলি বিড়াল শুধু থাপড়াথাপড়ি আর ছুঁড়াছুড়ি করেই শান্তি পাবে। তবুও আজ একে আমি ছাড়ছি না। ওর জন্য আমার ইম্পর্টেন্ট কাজ মিস হয়ে গেলো।''
আয়াত তারপর মাইশার উদ্দেশ্যে বললো, ''হ্যালো মিস মাইশা ! দয়া করে এই অধমটার মুখ ক্লিন করে দিবেন প্লিজ?''
মাইশা অপ্রস্তুত হয়ে বললো, ''হ্যাঁ...............হ্যাঁ ! করছি !''
মাইশা আর কোনো কিছু না বলে এগিয়ে গেলো আয়াতের কাছে। নিজের হ্যান্ডব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে খুব সন্তর্পণে মুছে দিতে থাকলো আয়াতের মুখটা। মুখ মোছার ভান করে মাইশা বেশ কয়েকবার পরখ করে নিয়েছে আয়াতের বিরক্তিমাখা মুখ। ঠোঁট দুটো চেপে এমন ভঙ্গিতে বসে আছে যেন কেক তো না ; কাদা লেগে গিয়েছে।
এমনভাবে কোনো ছেলের মুখ মুছে দেয়ার অভিজ্ঞতা মাইশার প্রথম। তাই অস্বস্তিও হচ্ছে বটে। তবে আড়াল করে রেখেছে একটা স্মিত হাসি। মিরাকেল হলেও আয়াতের সাথে দেখা হওয়াতে মাইশার ভালোলাগছে। আয়াত এবার বললো,
--''কি হলো ? কাজ হয়নি?''
--''হ্যাঁ............হ্যাঁ। এইতো শেষ !''
এই বলে মাইশা সরে আসলো। আয়াত নিজের বাইকের ব্যাক মিররে চেহারাটা একবার পরখ করে নিলো যে সবকিছু ঠিক আছে কি-না। মাইশা এককোণে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াত গম্ভীরস্বরে বললো,
--''ইসসস ! মুখটা কেমন আঠা আঠা হয়ে আছে। আজ আবার গোসল করতে হবে।''
অর্পি এবার মাইশার কাছে এগিয়ে বললো,
--''আরও ছুঁড়ে মার কেক! ভাগ্যিস উনি ওই হিসেবে কিছুই বলেনি।''
--''আমারে কিছু বলবিনা। সব ওই আনানের জন্য হয়েছে। কুত্তাটায় সরে গেলো কেনো? আজ যদি ওর জায়গামতো ব্যাথা না দিসি..............''
--''মাইশা !''
আয়াতের মোহনীয় কন্ঠ শুনে হুসঁ ফিরলো মাইশার। এই প্রথম আয়াত ওকে নাম ধরে সম্বোধন করেছে তাই ফটাফট করে উত্তর দিয়ে বললো,
--''জ্বি বলুন?''
আয়াত ঠোঁট কামড়ে এগিয়ে আসলো মাইশার দিকে। মাথায় যে কোনো ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা চলছে তা ভালোমতই বোঝা যাচ্ছে। মাইশার কৌতুহলটাতি আচমকা নিভে গেলো। যতই হোক , এই অসভ্যটারে নিয়ে কোনো ভরসা নেই। আয়াত তুখর কন্ঠে বললো,
--''তোমায় কি শাস্তি দেয়া যায় বলতো।''
আয়াতের ঠোঁটের কোণে বাকা হাসি। মাইশা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ সেই হাসিটার দিকে। তারপর শুকনো ঢোক গিলে বললো,
--''আমি তো সরি বলেছিই। তারপর আবার কি শাস্তি।''
আয়াত পকেটে হআত ঢুকিয়ে বলে ওঠলো,
--''ইউ নো হোয়াট ! তুমি ভারি ডেন্জেরাস মেয়ে। আমার মুখে তুমি কেক ছুঁড়ে মেরেছো আর আমি কিছুই বলবো না এটা তুমি ভাবলে কিকরে?''
--''আমি কি ইচ্ছে করে করেছি?''
আয়াত মাইশার মুখের কাছাকাছি এগিয়ে বললো,
--''আমি কেনো মানবো? তুমি তো আমাকে সহ্যই করতে পারো না। আর তাই বোধহয় তুমি.............''
মাইশা কপাল কুচকে ফেলে। ছেলেটা যে ওকে এখন রাগাতে চাইছে মাইশা ভালোতই তা অনুধাবন করতে পেরেছে।
--''তো বলুন আমায় কি করতে হবে?''
দাঁতে দাঁত চেপে বললো মাইশা। আয়াত হাসে। স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় বলে,
--''আমার শার্ট যেহেতু তুমিই নষ্ট করেছো তো তোমাকেই সাফ করতে হবে?''
মাইশার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। অবাকপ্রসন্ন হয়ে বললো,
--''হোয়াট ! আমি কেন আপনার শার্ট ধুতে যাবো। আমারে নিজের বউ পাইসেন নাকি?''
--''তোমার মতো জংলী বিড়ালরে বউ বানালে ছেলেদের জীবন খামচিময় হয়ে যাবে। আর শার্টকি নিজের বউরে দিয়ে ধোঁয়ায়? মাঝে মাঝে তো কাজের লোকদের দিয়েও..........''
বলেই আয়াত ঠোঁট টিপে হাসে। মাইশা চোখ রাঙানি দিয়ে বললো,
--''আমি এসব কিছু করবো না।''
--''এত কথা না বাড়িয়ে আমার সাথে সামনে চলো। শো রুম থেকে একটা টিশার্ট কিনে নিয়ে পড়বো। আর এই শার্ট ধোয়ার দায়িত্ব তোমার। জলদি চলো। রাস্তায় এভাবে দাঁড়াতে নিজেকে জোকার মনে হচ্ছে।''
মাইশা আর কিছু না বলে মুখ কালো করে ফেললো। আনানের দিকে তাকিয়ে দেখে বদমাইশ ছেলেটা খিলখিল করে হাসছে।মাইশা চোখ রাঙিয়ে বললো,
--''তোরে আমি দেখে নিবো
।''

No comments