হৃদমাঝারে_তুমি_ছিলে❤️ ----পর্ব_৯
-''তো পারবো না কেন? এক কাজ কর। ওই আনান কুত্তাটারে নিয়া যা। কাল যেন ও সারাদিন আমার চোখের সামনে না আসে। ওর জন্য আমি আজ আয়াত ভাইয়ের শার্ট ধুতে গিয়ে আম্মুর কাছে ঝাঁড়ি খেয়েছি। পরে কথা হবে.....''
--''কিন্ত.............''
অর্পির কথা শেষ হতে না হতেই ফোন কেটে দিলো মাইশা। মাথাটা এখন প্রচন্ড ভার হয়ে আছে। ব্যাথা কমানোর জন্য একটা নাপা খাওয়ার খুব প্রয়োজন। আগামীকাল ভার্সিটির সামনে ক্যাফেতে আয়াতের সাথে দেখা করতে হবে। তাই ওষুধ খেয়ে জলদি ঘুমিয়ে পড়লো মাইশা।
রোদের তেজস্ক্রীয়তায় চারিপাশ উত্যপ্ত। বাতাসের আনাগোনা থাকলেও এ যেন উষ্ণ বাতাসের ছড়াছড়ি। ভার্সিটির সামনে সচরাচর জ্যাম কম থাকলেও আজ জ্যামের চাপে মানুষ যেন সবজায়গায় উপচে পড়েছে। অর্পি আর আনান গিয়েছে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স এ। পৃথা আর সামাদের নিব্বা-নিব্বি জুটি যে কই ঘুরে বেড়াচ্ছে তা মাইশার অজানা। ক্যাফেতে এসির হাওয়ায় মাইশা স্ট্রবেরী শেক এ স্ট্র নাড়িয়ে চলছে আনমনে। অপেক্ষা করছে গতকালকের সাদা শার্ট পরিহিতা সেই মোহনীয় ছেলেটার জন্য। অল্প ব্যবধানেই অপেক্ষার অবসান ঘটে মাইশার। আয়াত প্রবেশ করছে। আয়াত ঢুকতেই মাইশা স্বাভাবিক হয়ে বসে। মাইশার পরনে বেগুনী রঙের কুর্তি আর গ্রে জিন্স। গলায় জিন্সের সাথে ম্যাচ করে একটা স্কার্ফ পেচিয়ে নিয়েছে। বাম হাতে চিকন ব্ল্যাক বেল্টের একটা ঘড়ি। উজ্জল শ্যামবর্ণের এই মেয়েটাকে দেখতে অপ্সরী না থাকলেও সুন্দর লাগছে।
আয়াত মাইশাকে দেখে মুচকি হেসে সেদিকে এগিয়ে গেলো। নীল শার্টটি ঘামের জন্য শরীরের সাথে একটু লেপ্টে আছে। আজকের তাপমাত্রা হঠাৎ করে এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে সবারই একই অবস্থা। আয়াত মাইশার বিপরীত পাশে সিটে হেলান দিয়ে বসে পড়লো। শার্টের কলার ধরে গায়ের আটঁসাট অবস্থাকে একটু ঢিল করে নিলো। রোদের তাপে গাল-মুখ লাল হয়ে আছে। কপালের কাছে জমে আছে মৃদু ঘাম।
মাইশা কিছুক্ষণ মোহনীয় চোখে সেদিকে তাকিয়ে ছিলো। তৎক্ষণাৎ ওর ধ্যান ভাঙ্গে আয়াতের কন্ঠে,
--''কেমন আছো মিস !''
--''আলহামদুলিল্লাহ ! আপনি?''
--''দেখে কি মনে হয়? বাইরে যেই গরম ! তান্দুরী চিকেন হয়ে ক্যাফেতে ঢুকেছি।''
ঠোঁটে বিদ্রুপ হাসি ফুটে উঠলো মাইশা। রোদের উত্তাপে মুখমন্ডল লাল হয়ে যাওয়াতে দেখতে তান্দুরী চিকেনই মনে হচ্ছে।মাইশা স্ট্ররবেরী শেক একটু খেয়ে বলে ওঠলো,
--''তো কোথা থেকে এলেন?''
--''বাংলা মটর থেকে। রেডিও স্টেশনে গিয়েছিলাম।''
--''আপনার শো সন্ধ্যায় থাকে না?''
--''আমি তো আর শো করতে যাই নি। কিছু কাজ ছিলো। ''
মাইশা মলিন গলায় বললো,
--''ওহ্ ! ''
মাইশা এবার একটা ব্যাগ এগিয়ে দিলো আয়াতের কাছে। তারপর বললো,
--''আপনার শাস্তি সম্পন্ন করেছি। দেখে নিন।''
আয়াত হেসে দিলো মাইশার কথা শুনে। হাসলে ছেলেটার চোখগুলো কেমন যেন ছোট ছোট হয়ে যায়। দেখতে সুন্দর লাগে। আয়াত ঠোঁটজোড়া হালকা নাড়িয়ে বললো,
--''থ্যাংকিউ। তো কোনো ঝামেলা হয়নি?''
--''হয়নি মানে? কত বড় ঝামেলায় পড়েছি জানেন? আমার আম্মু দেখে ফেলেছে।''
--''কি বলেছো তুমি?''
আয়াত অবাক কন্ঠে বললো।
--''আমার শার্ট বলেছি।''
চোখ ছোট ছোট করে বলে ফেললো মাইশা। আয়াত উদ্ভ্রান্তের মতো ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। পরবর্তীতে হাসি দমাতে না পেরে হো হো করে হেসে ফেললো সে। মাইশা ভ্রু কুচকিয়ে ফেললো আয়াতের এহেন কান্ডে।
--''সিরিয়াসলি ! আমার শার্টটিকে তুমি নিজের বলেছো?সাইজ দেখেছো শার্টের। এটা আমারই অনেক বড় হয়। গতকাল গরম ছিলো বিধায় ঢিলেঢালা শার্ট পড়ে এসেছিলাম। আর তুমি বলেছো এটা তোমার? আমি আর তুমি অনায়াসেই এই শার্টটায় ঢুকে যেতে পারবো।''
অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো মাইশা আয়াতের শেষ কথা শুনে। নিজেকে হঠাৎ আয়াতের সাথে কল্পনা করতেই মুখে অদ্ভুদ রঙ ধারন করেছে । তবে আয়াত স্বাভাবিক। বরংচ মাইশার অপ্রস্তুত দৃশ্যপট দেখে অগোচরেই মুচকি হাসলো সে। মাইশা মিহি কন্ঠে বললো,
--''তো আমি কি করতাম? আম্মু যদি সত্যটা জানতো তবে আমায় এত মারতো এতো মারতো যে ; আপনি আর আমি মিলে গুণে শেষ করতে পারবো না।''
আয়াত আবারও সশব্দে হেসে ওঠে। আয়াতের এই সুন্দর হাসিটার মায়ায় মাইশা পড়তে চাচ্ছেনা বিধায় বিরক্তির ভঙ্গি নিয়ে আয়াতের মুখপানে তাকালো।আয়াত এবার হাসি থামিয়ে টেবিলে একটু ঝুঁকে মাইশার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে নেয়। মাইশা তখন যেন মিহিয়ে গেলো। হঠাৎ আয়াতের কাছে আসাটাতে কোনো প্রতিক্রিয়া করতে পারলো না মাইশা। আয়াত এবার বললো,
--''যেহেতু আর মার খাওনি তাই আর গুণতে হবে না। তাই নেক্সট টাইম যা করবে বুঝেশুনে করবে। মনে করোনা যে তুমি আমায় কি কি উপাধি দিয়েছিলে তা ভুলে গিয়েছি। এখন থেকে তোমায় এত জ্বালাবো এত জ্বালাবো যে কল্পনায়ও এই ''আরহাম আয়াতের'' অস্তিত্ব খুঁজবে। তাছাড়া এখন থেকে আমাদের তো প্রতিদিনই দেখা হচ্ছে ! গুড বাই।''
এই বলে আয়াত চলে গেলো নিঃশব্দে। মাইশা এখনও একই জায়গায় বসে থাকলো। আয়াতের কথাগুলো বুঝে ওঠতে সময় নিতে হলো ওর। এই ছেলে কি আর জানে যে আয়াতের বিরক্ত করার আগেই মাইশা একে নিয়ে কল্পনা করা শুরু করেছে? কল্পনাতেও খুঁজে বেড়াচ্ছে এই ছেলেটার অস্তিত্ব। আয়াত আসলেই বেশ অদ্ভুদ চরিত্রের মানুষ। পুরো শরীরটাই যেন সৌন্দর্য , মোহনীয়তা আর রহস্যে ঘেরা।
No comments