নিয়তি( এ কেমন ভালবাসা)----পর্বঃ ০২
চার বছরের শামীমের উপর রহিম মিয়ার বউ অনেক অত্যাচার করে। যেমন ধরেন থালা বাসন মেঝে নেওয়া, ঘর দুয়ার পরিষ্কার করে নেওয়া, মাটিতে বিছানা করে থাকতে দেওয়া, ঠিক মত খেতে না দেওয়া, কোন ভুল করলে চড় থাপ্পড় মারা, অনেক সকালে ঘুম থেকে তুলে গোয়াল পরিষ্কার করে নেওয়া। শামীম কে রহিম মিয়া পড়াশোনা করাতে চাইলেও তার বউ সালেহা বেগম তা কখনই চায় নি।
ছোট শামীমের উপর এমন আচরণ অত্যাচার রহিম মিয়া মেনে নিতে পারে না। রহিম মিয়া সবার আড়ালে প্রতিদিন বাজার থেকে শামীমের জন্য খাবার নিয়ে আসত। রহিম মিয়া নিজের ছেলে মেয়ের তুলনায় শামীম কে অনেক বেশি ভালোবাসত। রহিম মিয়ার ছেলে মেয়ে শামীম কে সহ্য করতে পারত না, কারণ রহিম মিয়া শুধু শামীম কে ভালোবাসে তাদের কে না। তারাও সুযোগ পেলে শামীম কে মারতে কোন কৃপণতা করতো না। শেষে যখন সবাই বড় হল তখন রহিম মিয়ার ছেলে মেয়ে রহিম মিয়াকে বলে আমাদের জন্য তো কোন ভালোবাসা ছিলো না সব ছিলো ওই অনাথ শামীমের জন্য। এবার আমাদেন কোন ব্যবস্হা করে দাও আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।
রহিমঃ তোদের কে পড়াশোনা করালো কে প্রতিমাসে টাকা দিত কার বাড়িতে থাকতি কার রোজগার করা টাকায় খেতি?
বড় ছেলেঃ অত কিছু জানি না, এবার আমাদের জন্য একটা ব্যবস্হা করে দাও?
মেজো মেয়েঃ আমরা চাকুরী করতে চাই, আমার ব্যাংকে চাকুরী করতে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা লাগবে।
ছোট ছেলেঃ আমার ১ লক্ষ
বড় ছেলেঃ আমারও ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা লাগবে?
রহিমঃ আমার কাছে আছে ১ লক্ষ টাকা, তোদের বাকি টাকা কেমন করে দেই কোথায় পাবো।
মেজো মেয়েঃ তোমার মালিক কে বললে তো হয়ে যায়?
শেষে রহিম মিয়া কোন উপায় অন্তর না পেয়ে মজুমদার সাহেবের কাছে যায়। তার কাছে গিয়ে টাকা চাইলে তিনি বলে শামীম কে তার কাছে এক প্রকার বিক্রি করা লাগবে আর তার কোন বেতন থাকবে না আর সময় মত তোমার ছেলে কে ছেড়ে দিবো।
ছোট শামীম কে যখন তার পরিবারের কেউ দেখতে পারে না তখন রহিম মিয়া মজুমদার বাড়িতে শামীম কে নিয়ে আসে। মজুমদার শামীম কে দেখে রহিম মিয়া কে বলে
মজুমদারঃ এই পোলাডা কার রহিম?
রহিমঃ যারে পথে পাইছিলাম মালিক।
মজুমদারঃ আমার কাছে কেনো নিয়ে আসলে।
রহিমঃ আমার বাড়িতে ওরে কেউ দেখতে পারে না, আপনি যদি একটু দয়া করেন।
মজুমদারঃ তোমার পোলা কি কোন কাম জানে রহিম?
রহিমঃ ঘরের সব কাম জানে আমার পোলায়, ওরে শুধু তিন বেলা খাইতে দিয়েন?
মজুমদারঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
তখন থেকে শামীম মজুমদার বাড়িতে থাকা শুরু করে। মজুমদার সাহেবের ছোট কন্যা সুপ্রিয়ার তখন তিন বছর বয়স। কুতুবদিয়াতে কিন্তু পানি আর বিদ্যুৎ এর বড় সমস্যা কুতুবদিয়াতে ২০-২৫ হাতের মত আয়তনের পুকুর খখন করা হয়, এই সব পুকুরে মানুষ গোসল করে আবার এই পুকুরের পানি ফুটিয়ে খায়। কিন্তু পুকুরের পানিও অতটা ভালো না এই পুকুরের পানি দিয়ে অনেকে ওযু করে। তো কুতুবদিয়াতে সবার ঘরে ঘরে টিউবওয়েল নাই, যাদের ঘরে টিউবওয়েল আছে, কারো টিউবওয়েল দিয়ে পানি বের হয় তাও আবার খাওয়ার উপযোগী নয়, পানি অনেক ভারি হয়। যেমন ধরেন সিমেন্ট অথবা কাঁদার পানি যেমন হয় তবে পরিষ্কার কিন্তু ভাড়ি। অনেক টিউবওয়েল দিয়ে পানি বের হয় না। তবে কুতুবদিয়ায় পানির ব্যবস্হ আছে পাম্প অথবা টিউবওয়েল তবে টিউবওয়েলে একটা কি জানি ম্যাসিন ব্যবহার করে পানি খাওয়ার উপযোগী করে। যাদের বাড়ির টিউবওয়েলের পানি খাওয়ার উপযোগী তাদের বাড়িতে গিয়ে অন্যের বাড়ির মানুষ কলসি ভরে পানি নিয়ে আসে।
সুপ্রিয়ার যখন তিন বছর বয়স তখন সুপ্রিয়া তাদের বাড়ির পুকুর পাড়ে একাই খেলা করতেছিলো তার মা সুপ্রিয়ার থেকে একটু দুরে ছিলো। সেই পুকুরের অন্য দিকে শামীম বাড়ির সবার কাপড় ধুয়ে দিতেছিলো। সুপ্রিয়া খেলা করার সময় তার একটা খেলনা পানিতে পরে যায়, সুপ্রিয়া সেই খেলনা তোলার জন্য গেলে পুকুরে পরে যায়। সুপ্রিয়ার মা তার মেয়ে কে পড়ে যাওয়া দেখে, কিন্তু তিনি সাঁতার জানে না। তখন সুপ্রিয়া মা জোড়ে চিল্লাতে থাকে তার মেয়ে পানিতে পরে গেছে কেউ তখন আসে পাসে ছিলো না যে এসে বাঁচাবে। তখন শামীম দৌড়ে ওই পাড় থেকে যে পাড়ে সুপ্রিয়া পানিতে পড়ে গিয়ে ডুবা ভাসা লাগাচ্ছে সেই পাড়ে এসে শামীম পানিতে দেয় লাফ। একে তো শামীম নিজে ছো তার উপর সাঁতারও তেমন জানে না, পানিতে লাফ দিয়ে শামীম নিজে পানি খেতে থাকে। অনেক কষ্টে সুপ্রিয়া কে শামীম ধরে পানিতেই থাকে কিন্তু উঠতে পারে না। সুপ্রিয়া শামীমের মাথার উপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর শামীম পানির নিচে। এদিকে রহিম মিয়া মালিক কে জানাতে আসে লবণ চাষ আগে কোন জমিতে করবে, এসে দেখে সুপ্রিয়ার মা চিল্লাচ্ছে তা দেখে রহিম মিয়া সুপ্রিয়ার কাছে গিয়ে দেখে সুপ্রিয়া কারো মাথার উপরে আর পানির নিচে কেউ আছে। তাই রহিম মিয়া পানিতে নেমে সুপ্রিয়া আর শামীম কে তুলে আনে।
এখন সুপ্রিয়ার খেলার সাথী শামীম, বাড়ির কাজ করার পর বাকি সময় শামীম সুপ্রিয়ার সাথে খেলা করে। ধীরে ধীরে সুপ্রিয়ার শামীমের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠে। সুপ্রিয়ার যখন স্কুল মাদরাসা যাওয়ার বয়স হয় তখন সুপ্রিয়া শামীম কে ছাড়া কোথাও যেতে চাই তো না। তাই বাধ্য হয়ে মজুমদার সাহেব শামীম কেও সুপ্রিয়ার সাথে পাঠাতো, তবে পড়াশোনা করার জন্য নয় তার মেয়ের দেখা শোনা করার জন্য। ধীরে ধীরে সুপ্রিয়া বড় হতে লাগে আর শামীমের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মাতে থাকে।
সুপ্রিয়া যখন ৫ম শ্রেণিতে পড়ে তখন এক ছেলে সুপ্রিয়া শামীমের সামনে ভালোবাসার কথা বলে তখন শামীম সেই ছেলেটাকে ইচ্ছা মত মারতে থাকে( যেহেতু ছেলেটা শামীমের ছোট) তখন সুপ্রিয়া বুঝতে পারে শামীমও তাকে চায়।
একদিন রাতে সুপ্রিয়া শামীমের ঘরে গেলে তা তার বড় ভাই দেখতে পায় প্রথমে কিছু মনে না করলেও পরে যখন সুপ্রিয়া অনেকক্ষণ আসে না তখন তার ভাই শামীমের থাকার ঘরে গিয়ে দেখে শামীমকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে সুপ্রিয়া। এই দৃশ্য দেখে সেদিনই প্রথম শামীম কে মারা শুরু করে তবে সুপ্রিয়ার জন্য কেউ তাকে তেমন একটা মারতে পারে না। কারণ সুপ্রিয়া বলে এ ঘরে পড়তে এসে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে তাই সে বুঝতে পারে নাই।
এরপর শামীম যদি একবেলা ঠিক ভাবে কাজ না করত তাহলে সেই বেলা শামীমের কপালে ভাত জুটতো। তবে সুপ্রিয়া থাকা অবস্থায় শামীম কখনও খাবারের ভয় করত না। সুপ্রিয়া যত বড় হতে থাকে তার ভালোবাসা শামীমের প্রতি তত বাড়তে থাকে। সুপ্রিয়া কুতুবদিয়ায় থাকা অবস্হায় সব সময় বোরকা পড়ে থাকতো। আসলে কুতুবদিয়ার মানুষ ধর্মভীরু এখানে অনেক মাজার মাদরাসা আছে। এখানকার সকল মহিলা মেয়ে সবাই পর্দা করে চলে, আর নামাজ কালাম করে। হঠাৎ করে কেউ যদি এই এলাকায় গিয়ে কোন মেয়ে মানুষের চেহারা দেখতে চান তো পাবেন না।
[ আমি আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশের প্রায় ৩০+ জেলা গেছি, তবে তার মধ্যে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার মানুষ অন্য সব জায়গার মানুষের চেয়ে বেশী ধর্মপরায়ণ ]
শামীম কোন ভুল করলে যখন মজুমদার সাহেব বা তার ছেলে তাকে মারতে যেত তখনই সুপ্রিয়া ঢাল হয়ে সামনে যেত। শামীমের সব রকম পরিস্থিতিতে সুপ্রিয়া পাশে ছিলো। শামীমের ঈদের পোষাক এমনিতে কোন কাপড় কেনা খাওয়া চলার পথে টাকা পয়সা খাওয়া দাওয়া শামীমের ক্লান্তি লাগলে তার ঘরে গিয়ে শামীমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পারানো। মাঝে মাঝে সুপ্রিয়া শামীমের ঘরে শামীমের বুকের উপর মাথা দিয়ে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে। এসব কিছুই রহিম মিয়া আর সোহেল, করিম জানত।
রহিমঃ ছোট মালকিন শামীমের সাথে এসব যে করতেছেন এসব যদি আপনার বাবায় জানে তাহলে পোলাটারে জানে মাইরা ফালাইবো।
সুুপ্রিয়াঃ চাচা তুমি না কইলে বাবা কেমনে জানবো, আর আমি তোমার পোলারে৷ অনেক ভালো পাই। আমি তোমার পোলারে বিয়া করমু।
রহিমঃ ছোট মালকিন শামীমের তো কোন পরিচয় নাই কোন পরিচয়ে হ্যারে তুমি বিয়া করবা? তোমার বাবায় এসব কোনদিনই মেনে নিবো না।
সুপ্রিয়াঃ চাচা তুমি ভালো কইরা জানো আমার সব আবদার আমার বাপ ভাইয়ে পূরণ করে দেয়। তোমার পরিচয়ে তোমার পোলারে বিয়া করমু চাচা, তোমাকে এসব নিয়া কোন ভাবনা চিন্তা করোন লাগবো না।
রহিমঃ বাপ মা ছাড়া একলা পোলাডারে কোন কষ্ট দিয়ো না ছোট মালকিন। তবে একটু সাবধানে থাইকো। সাবধানের কোন মাইর নাই বুঝলে।
সুপ্রিয়া যখন ক্লাস ১০ম পড়ে তখন তো রোজ রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর সুপ্রিয়া চুপ চুপ করে শামীমের ঘরে গিয়ে শামীম কে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকতো আর ভোর রাতে তার নিজের ঘরে চলে আসতো। মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় তারা সাগর পাড়ে যায় সাগরের ঢেউ দেখে ঢেউ গুণে। মাঝে মাঝে সুপ্রিয়ার স্কুল ছুটির পর সুপ্রিয়া শামীম কে নিয়ে সাগরে তাদের বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে বেরাতে যায়। আসলে সুপ্রিয়ার বাবা প্রায় বড় বড় ৩০ টা নৌকা আছে, এর মধ্যে ২০ ভাড়া দেয় আর বাকি ১০ টা নিজের লোক দিয়ে চালিয়ে নেন। এসব বড় বড় নৌকা দিয়ে তারা সাগরের মাঝে গিয়ে মাছ ধরে নানা জাতের মাছ ধরে জেলেরা, শীতের সময় লবণ চাষ আর গীষ্ম বর্ষায় সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে এসব মাছ বেশির ভাগ এখানে শুটকি হয়। হাজার হাজার মানুষ এসব দিয়ে জীবন চালায়।
সুপ্রিয়া আর শামীম দুজনেই মাঝে মাঝে ওদের নৌকা নিয়ে সাগরের মাঝে যাই। সুপ্রিয়া তখন সাগরের মাঝে চিৎকার করে শামীম কে ভালবাসি বলে আর জরিয়ে ধরে। সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে তবে তার জন্য শামীম কে অনেক কথা শোনা লাগে। কিন্তু সুপ্রিয়া থাকলে কেউ তেমন একটা কথা বলতে পারে না।
সুপ্রিয়ার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলে সুপ্রিয়া ইন্টার পড়ার জন্য শহরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সুপ্রিয়া প্রথমে যেতে রাজি ছিলো না পরে শামীমের কথায় রাজি হয়ে যায়। সুপ্রিয়ার তার বাবা মাকে বলে প্রতিমাসে একবার করে সুপ্রিয়া বাড়িতে আসবে, তার বাবাও রাজি হয়ে যায়। আসলে সুপ্রিয়ার বড় ভাই বিয়ে করে চিটাগাং শহরে একটা ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে সুপ্রিয়া এখন থেকে সেখানেই থাকবে। কুতুবদিয়ার মানুষের কোন টাকার অভাব নাই, এখানে সবার ঘরে ঘরে টাকা আছে। তাই তারা তাদের ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করার জন্য শহরে পাঠায়।
সুপ্রিয়ার চলে যাবার পর শামীম প্রায় একা হয়ে পরে, এখন শামীম কাজে একটু ভুল করলে মার খায়। তবে শামীমের আব্বা থাকলে মার টা খুব কম খায় শামীম। পরে যখন শামীমের আব্বা কে আর তার ছেলে মেয়ে কাজ করতে না দেয় তখন আর শামীম কে মজুমদার তার ছেলে বউয়ের হাতের মার থেকে কেউ বাঁচাতে পারে না।
সুপ্রিয়া শহর যাওয়ার আগে শামীম কে বলে গেছে তার জন্য অপেক্ষা করতে। যত আঘাত করুক না কেনো শামীম যেনো সব সহ্য করে থাকে। সুপ্রিয়া প্রথমের ১ বছর প্রতি মাসে করে আসলেও তার পর থেকে চার পাঁচ মাসে একবার করে আসত। তবে শামীমের সাথে আগের মতই মিশত। ইন্টার পাশ করার পর সুপ্রিয়া চিটাগাং ভার্সিটিতে ভর্তি হয়। তখন সুপ্রিয়া খুব কম সময়ের জন্য বাড়িতে আসে, সুপ্রিয়ার এখন কুতুবদিয়া ভালো লাগে না। তার কারণও আছে বটে, এখানে না আছে বিদ্যুৎ না আছে ভাল মানের নেটওয়ার্ক না আছে টিভি না আছে ভালো পানির ব্যবস্থা( আমি যে সময় গিয়েছিলাম সে সময় বিদ্যুৎ ছিলো না ছিলো শুধু জেনারেটর আর সৌর বিদ্যুৎ, বুঝতেই তো পারতেছেন চার দিকে সাগর আর মাঝে ইউনিয়ন) তবে এই কুতুবদিয়াতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বায়ুবিদুৎ কেন্দ্র আছে, প্রায় একহাজার কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পর্ন।
সুপ্রিয়ার কথা শুনে শামীম সবার সব অন্যায় অত্যাচার সহ্য করে পরে আছে। তবে সুপ্রিয়া শহর যাওযার পর শামীম কে রেখে তার আব্বা টাকা নেয় জমিদারের কাছে। যবে থেকে সুপ্রিয়া শুনেছে শামীম কে এ বাড়িতে রেখে তার আব্বা টাকা নিয়েছে তখন থেকে সুপ্রিয়া এখানে ঠিক ভাবে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
ঘরে শুয়ে শুয়ে এসব ভাবতেছে রহিম মিয়া, যে শামীমের জন্য ছোট মালকিন পাগল ছিল সেই ছোট মালকিন শামীম কে ভুলে আজ নতুন কাউকে বেঁচে নিয়েছে। শামীমের বা কি যোগ্যতা আছে, কেনই বা সে সুপ্রিয়া কে ভালোবাসতে গেলো। যদি সুপ্রিয়া কে শামীম ভালো না বাসতো তাহলে আজ ওর এমন অবস্হা হত না। আর আমি নিজের হাতি শামীমকে শেষ করে দিলাম।
ইদানীং শামীমের উপর বেশি কাজের চাপ দেন মজুমদার সাহেব, হতে পারে আর তিন মাস শামীম আছে তাই তাকে দিয়ে তান চার জন মানুষের কাজ করে নেয়। ঠিক মত খেতেও দেয় না, কোন দোষ করলে তো কপালে মার আছে। শামীম এত টা সহজ সরল যে তাকে যে, যেটা করতে বলবে শামীম সেটাই করবে। শামীম কে থাপ্পড় মেরে যদি বলা হয় ঐ কাজ টা করে দে তবুও সে না করবে না। শামীম কে মারার পর যদি বলা হয় যা এখন গিয়ে খা তবুও কারো মত রাগ করে না খেয়ে থাকবে না সে খাবে। শামীম কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত কায়েম করে। সে একটু আল্লাহ ভিরু ছেলে, শামীম পারলে মানুষের উপকার করবে কোন ক্ষতি করবে না।
রহিমঃ বাপ এভাবে আর কতদিন মানুষে অত্যাচার সহ্য করবি, যে যাই বলে তার সেই কথাই শুনিস তার সেই কাজ করে দিস?
শামীমঃ আব্বা কেনো করি জানো যাতে কেউ আমার বাপ মা তুলে কোন কথা বলতে না পারে তাই।
রহিমঃ তোর বাপ মা কে তা তো তুই নিজেও জানিস না বাপ
শামীমঃ আব্বা কে বলছে আমি জানি না, এই তুমি আমার বাপ আর তোমার স্ত্রী আমার মা।
রহিম মিয়া সাথে সাথে শামীম কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকে,
রহিমঃ আমার জন্যই তোকে আজ এত কষ্ট সহ্য করা লাগতেছে।
শামীমঃ আব্বা তোমার জন্য আমি এই সামান্য কষ্ট কি নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারি। সেদিন তুমি আমারে না বাঁচাইলে আজ আমি কি দুনিয়ায় থাকতে পারতাম। তোমার জন্য তো এসব করা আমার কোন সমস্যা না।
রহিমঃ বাপ তুই সব ছেড়ে চলে যাস না কেনো, কেনো তুই পড়ে আছিস। তুইও শহর যা কোন কাজ কর দেখবি তুই অনেক ভালো থাকবি।
শামীমঃ আব্বা তোকে ছেড়ে কার কাছে যাবো, কে আমারে এত ভালোবাসবে। তুই ছাড়া যে এই দুনিয়াতে আমারে ভালোবাসবে এমন কোন মানুষ নাই। আর তোর পোলা তো কোন কাজ জানে না কে দিবো তোর পোলারে কাজ। আর শহরে গিয়ে বা কার কাছে থাকবো কে আমারে কাজ দিবো?
রহিম মিয়া আর কিছু বলতে পারে না, তার নিজের ছেলে মেয়েও রহিম মিয়া কে এতটা ভালোবাসে না যতটা শামীম তাকে ভালোবাসে। শামীম সবার সব অন্যায় অত্যাচার মেনে নিয়ে তার মত করে কাজ করে। শামীম এখন দিন রাত মিলে এক বেলা খেতে পারে, সেটা কোন বেলা খেতে পারবে তা শামীম নিজেও জানে না। এই কন কনে শীতের দিন শামীম কে সেই ফজরের নামাজ পরে একাই জমিতে যেতে হয়। একদিকে সাগরের পাগ থেতে আসা বাতাশ অন্য দিকে সাগরের এই ঠান্ডা পানি জমিতে দেওয়া। তার উপর আবার যে বলন গুলো সাইডে ঢিপ সাজিয়ে রাখা হয়েছে সেগুলো বস্তা করে নিজেকেই ঘাড়ের উপরে নিয়ে রাস্তার ধারে রাখা লাগে। সোহেল আর করিম গেছে সাগরে মাছের আরতে বা যেখাসে মাছ শুকিয়ে শুটকি করা হয়।
দেখতে দেখতে তিন মাস চলে গেলো শামীমের মুক্তিও হয়ে গেলো কিন্তু শামীম মজুমদার বাড়ি ছাড়লো না। কেনো ছাড়লো না তা কেউ জানে না, রহিম মিয়া একবার জিজ্ঞেস করেছিলো এবার সে রহিম মিয়াকেও কিছু জানায়নি। শামীম কে মুক্তি দেওয়ার পরও তাকে দিয়ে তিন চার জনের কাজ করানো শেষ হলো না মজুমদারের। শামীম এখানে ছাড়া বা কোথায় যাবে, অন্য কারো বাড়িতে গিয়ে কাজ করতে পারবে তবে একজনের কাছে যে শামীমের অনেক কিছু জানার বাকি আছে। তার কাছে সব না শুনে শামীম যাবে বা কোথায়, কেনো শামীমের সাথে সুপ্রিয়া এমন করলো তা তো জানতেই হবে। দেখতে দেখতে আরো দুই মাস চলে গেলো এই দুই মাস তো মজুমদার শামীম কে গাধার মত করে খাটাইছে। শামীম ঠিক মত খেতে না পারায় প্রায় শুকিয়ে গেছে অনেকটা এখন কেউ দেখলেও চিনতে পারবে না। রহিম মিয়া তো আগের মত আর কাজ করতে পারে না যে সেখান থেকে টাকা বাচিয়ে শামীমের জন্য খাবার নিবে। তার ছেলে মেয়ে যে টাকা পয়সা পাঠায় তা তার বউয়ের হাতে রহিম মিয়া শুধু এখন বসে বসে তিন বেলা খায়, কোন লাগলে তার বউ তাকে কিনে দেয় এর বাইরে আর কিছুই না।
হঠাৎ একদিন সুপ্রিয়া সেদিনের ঐ ছেলে টা তার ভাবি ভাই আর সাথে একজন বযস্ক পুরুষ আর মহিলা সাথে আসে। শামীম কে দেখার পরও কোন কথা বলে না সুপ্রিয়া, শামীম শুধু সুপ্রিয়া কে দেখতেছে আর চোখের জল ফেলতেছে। আজ দুই দিন হলো সুপ্রিয়া এসেছে কিন্তু একবারের জন্যেও শামীমের চিলেকোটার ঘরে আসে নাই সুপ্রিয়া। তাই শামীম থাকতে না পেরে নিজেই একবার সুপ্রিয়ার ঘরের দিকে উকি দেয়। উকি দেওয়া সুপ্রিয়ার বড় ভাই দেখে ফেলে, আর সেখানেই শামীম কে মারতে থাকে আজ আর সুপ্রিয়া শামীম কে বাঁচাতে আসলো। শামীম শুধু এক ধ্যানে সুপ্রিয়া কে দেখতে থাকলো। আজ দুই মাস থেকে শামীম ঠিক মত খায় না তার উপর আবার এত মাইর খেতে হচ্ছে।
মজুমদারঃ ছেড়ে দে ওকে বাড়িতে মেহমান এসেছে আর দুদিন পর সুপ্রিয়ার বিয়ে সেটা কি ভুলে গেছিস তুই।
মজুমদারের ছেলে তখন শামীম কে মারা বন্ধ করে দেয়। মজুমদার কি বলে গেলো সুপ্রিয়ার বিয়ে আর শামীম তার কোনই জানে না। জানবে বা কি করে এখন তো শামীম কে কেউ কিছু বলেই না। সুপ্রিয়াও তো নিজে এসে বলল। সুপ্রিয়া অবশ্য বুঝতে পেরেছে শামীম কে তার বড় ভাই কেনো মেরেছে, কিন্তু সুপ্রিয়ার যে হাত পা বাধা।
No comments