নিয়তি( এ কেমন ভালবাসা)----সূচনা পর্ব
সূচনা পর্ব
শামীমের চোখের সামন দিয়ে তার গালফ্রেন্ড সুপ্রিয়া অন্য একটা ছেলের কাঁধে মাথা দিয়ে রিক্সা করে চলে গেলো। সুপ্রিয়া যেনো শামীম কে দেখেনি, সুপ্রিয়াকে এমন করে অন্যের কাঁধে মাথা রাখা দেখে শামীমের বুকটা ধুক ধুক ধুক করতেছে। তাই শামীম বাধ্য হয়ে আর একটা রিক্সা নিয়ে সুপ্রিয়া কে ফলো করতে লাগলো। চিটাগাং এর অলংকারে রিক্সায় চড়েছে শামীম সেই রিক্সা অক্সিজেনে একটা বড় বিল্ডিংয়ের সামনে থামলো। সুপ্রিয়া আর সেই ছেলেটা গলা একে অপরকে জরিয়ে ধরে সেই বড় বিল্ডিং টাতে ঢুকলো। যখন শামীম ঢুকতে যাবে সেই সময় সেখানে ডিউটি পালন করা সিকিউরিটি গার্ড শামীমের বেশ পোষাক দেখে আটকে দিয়ে জিজ্ঞেস করে আপনি কোথায় যাবেন?
আমি ভিতরে যাবো ঐ যে একটা মেয়ে আর ছেলে ঢুকলো না ওদের দেখবো কি করে ওরা।
শামীমের এমন কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়ে সিকিউরিটি গার্ড, আরে বেটা ওরা এখন ভিতরে সেক্স করবে তুই কি সেইটা দেখবি নাকি?
ভাই সেক্স কি, ওর কি পড়বো নাকি না ভাইজান?
আরে বেটা এটা আবাসিক হোটেল, চিনিস না তুই।
ভাই এটা মনে হয় খুব কোম্পানি তাই না,
সিকিউরিটি গার্ড এবার বুঝতে পারলো এ বেটা একটা গাধা মূর্খ তখন সিকিউরিটি গার্ড তার মোবাইল বের করে নীল ছবি শামীম কে দেখাতে শুরু করে দিলো। এসব দেখে শামীম নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে সিকিউরিটি গার্ডকে রাগ দেখিয়ে বলল,,, আমার সাথে মজা করেন আপনি? এসব কি বাজে নোংরা জিনিস আমাকে দেখান আপনি।
আরে বেটা ওই ছেলে আর মেয়েটা প্রায় এখানে এসে এই সব নোংরা কাজ করে বুঝলি। তোকে দেখেই বোঝা যায় তুই একটা মূর্খ আর বদল। তাই তোকে আমি এই ভিডিও নেট থেকে বের করে দেখালাম।
আমি বিশ্বাস করি না সুপ্রিয়া এমন করতে পারে, ও ভাই বলেন না আপনি যা বলছেন সব মিছা কথা বলছেন। গত পরশু তো সুপ্রিয়া আমার লগে আমার রুমে আছিলো। সুপ্রিয়া আমারে তার প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসে।
শোন ভাই আমি এসব জানি না কে কাকে ভালোবাসে তবে এই মেয়ে প্রায় এই ছেলেটার সাথে এখানে আসে এমব করার জন্য। তোমার সাথে কি আমার কোন শত্রুতা আছে যার কারণে তোমাকে আমি মিথ্যা বলবো। দেখ মিয়া তোমারে দেখে মায়া হইছে বলে তোমাকে আমি এসব কথা বললাম, তাছাড়া কোন নিয়ম নাই বাইরের মানুষ কে ভিতরের সব কথা বলার। তোমারে দেখেই বুঝা যায় তুমি কতটা সহজ সরল মানুষ, এখন এসব না ভেবে বাড়িতে যাও।
এমন সময় সিকিউরিটি গার্ডের বস এসে তাকে ধমকের সুরে বলতেছে এই তোমাকে কি বেতন দেওয়া হয় বাইরের মাসুষের সাথে কথা বলার জন্য? যাও নিজের দায়িত্ব পালন করো গিয়ে।
সিকিউরিটি গার্ড তখন সেখান থেকে চলে গেলো, শামীম তখনও সেখানে মুর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে। সে ভাবতে পারতেছে না সুপ্রিয়া এমন বাজে কাজ করবে। কারণ সুপ্রিয়া তো বাড়িতে থাকতে বোরকা হিজাব ঢেলা কাপড় পরে বেরায়, সুপ্রিয়া এমন কাজ করতে পারে না। তাছাড়া সুপ্রিয়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করে। সবচেয়ে বড় কথা সুপ্রিয়ার শামীম ছাড়া চলে না।
শামীম সেখানে না থেকে এবার হাটতে ধরলো, শামীমের কাছে গাড়ি ভাড়ার যা টাকা ছিলো তা এই সুপ্রিয়া পিছু পিছু আসতে রিক্সা ওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে দিয়েছে। এখন শামীম চিটাগং থেকে কুতুবদিয়া কেমন করে যাবে? শামীমের কাছে অবশ্য ৮০ হাজার টাকা আছে কিন্তু সব গুলো ১হাজার টাকার নোট। এই ৮০ হাজার টাকার থেকে যদি একটি টাকাও নষ্ট হয় তাহলে তার মালিক তার পিঠের ছাল তুলে ছাড়বে মারতে মারতে।
আসলে শামীম সকাল ১০ টায় ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে সেই কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং থেকে চিটাগাং শহরে এসেছে লবণের টাকা নিতে। ১০ টায় নৌকায় চড়ে দুপুর ২ টায় এসে চিটাগাং বন্দরে পৌছায় শামীম, সেখান থেকে অলংকার যায় একটা লবণ কোম্পানির কাছে টাকা নেওয়ার জন্য সেখানেই সুপ্রিয়া কে দেখে শামীম।
আসার সময় শামীমের মালিক শামীমের হাতে ২৫০ টাকা দেয় ২০০ টাকা যাতায়াত ভাড়া আর বাকি ৫০ টাকা দিয়ে সে দুপুরে কোন ছোট হোটেলে ডাল ভাত খাবে। আসার পথে ১০০টাকা দিয়ে আসে তারপর পথে তিনটা ভিক্ষুককে দেখতে পেয়ে তিন জনকে ৩০ টাকা দিয়ে দেয়। দুপুরে আর কোন খায় না আর এদিকে রিক্সা ওয়ালা শামীম কে বোকা ৯০টাকা রিক্সা ভাড়া নিয়ে নেয়। এখন শামীমের কাছে খুচরা ত্রিশ টাকা আছে যা দিয়ে চিটাগাং নতুন ব্রিজ পর্যন্ত যাওয়া যাবে তার আর যাওয়ার ভাড়া নেই।
শামীম সেখান থেকে ত্রিশ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত যায়। তারপর গ্রিন লাইনের একটা টিকিট কাটে মাগনামা যাওয়ার। আসলে শামীম যদি এখন সমুদ্র পথে যায় তাহলে শামীমের যেতে দেরি হবে তাই সে বাসের টিকিট কাটলো। আসলে কুতুবদিয়া উপজেলা কক্সবাজার জেলার ছোট একটা দ্বীপ।
কুতুবদিয়া যেতে হলে হয় সমুদ্র বন্দর দিয়ে যেতে হবে নতুবা গাড়ি করে চকরিয়া হয়ে মাগনামা তারপর ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা স্পির্ড বোর্ড দিয়ে যেতে হয়।
এবার আসুন আপনাদের কে সব ভেঙ্গে বলি।
শামীম সুপ্রিয়াদের বাসার কাজের ছেলে, শামীমের মা বাবা কে শামীম তা জানে না। শামীমকে ১৮ বছর আগে এই চিটাগাং শহরে পায় সুপ্রিয়াদের বাড়ির পুরান কাজের লোক রহিম। আর তখন থেকেই শামীম রহিম কে আব্বা আর আর তার বউকে মা বলে ডাকে। রহিমের ছোট সংসারে আরো তিন ছেলে মেয়ে আছে যাদের পড়াশোনার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে শামীম কে কাজের মানুষ বানিয়ে ফেলে রহিম। এখন অবশ্য রহিম কোন কাজ করে না তার ছেলে মেয়ে লেখাপড়া শেষ করে এখন চাকুরি করে। আর শামীমের নিজের পেঠের ভাত জোগাড় করার জন্য সুপ্রিয়াদের বাসাতে কাজ করে। শামীম কে যদি দুনিয়ায় কেউ বেশি ভালোবাসে তাহলো সুপ্রিয়া আর রহিম মিয়া।
সত্য বলতে শামীম হাতের কোন কাজ জানে না, কুতুবদিয়া উপজেলায় শুধু লবণ চাষ করা হয় আর শামীম শুধু সেই কাজ আর বাসার কাজ জানে আর কোন কাজ জানে না। শামীম তাই তো আজ লবনের টাকা আনার জন্য চিটাগাং শহরে আসছিলো। চলুন আপনাদের মুল বিষয় মানে নবণ চাষ আর শামীমের কথা বলি।
কক্সবাজার জেলার একটি দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া ২১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট দ্বীপ। কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকত উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৬ কি. মি দীর্ঘ। এই উপজেলায় ১৬৬৬ সালে প্রথম মানব হিসাবে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর বংশধর কুতুবউদ্দিন প্রথম আসেন। তখন থেকে এ ছোট দ্বীপের নাম হয় কুতুবদিয়া। ১৮২২ সালে বঙ্গোপসাগরে ঝড় আর জলোচ্ছ্বাসের কারণে এখানের উপকুল ভাগ হয়ে যায়, তখন অনেক চড় বের হয়।
তখন এই কুতুবদিয়ায় বাঁশখালি সাতকানিয়া পটিয়া উপজেলা থেকে মানুষ এসে বসবাস শুরু করে আর প্রাকৃতি উপায়ে লবণ চাষ শুরু করে। উত্তরবঙ্গের মানুষ ধানের বীজ যেমন করে বফন করে সেই একই রকম করে লবণ চাষ করা হয়। প্রথমে ছয় ফিট দীর্ঘ এবং ১৬-১৮ফিট লম্বা আলের মত করে তৈরী করা হয়। তারপর গাছের মোটা গুড়ি দিয়ে সেখানে রোলার গাড়ির মত করে ঢলতে হয়, যখন মাটি একটা ইটের চেয়েও শক্ত হয়ে যায় তখন সেই মাটির উপর পলিথিন আলের মাফ অনুয়ায়ী বিছানো হয়। একটা বড় নালা করা থাকে সমুদ্রের পানি ইঞ্জিন চালিত মেশিন দিয়ে সেই নালায় নিয়ে আসা হয়। তারপর যার যার জমিতে পানি নিয়ে যাওয়ার জন্য ছোট নালা করা হয় আর ছোট একটা গর্ত করা হয় সেই গর্তে সমুদ্রের পানি থাকে আর সেই পানি ওই পলিথিনের উপর দিয়ে দেওয়া হয় চার দিন পর সেই পানি লবণে রুপান্তরিত হয়। আর এখানে শীতের সময় লবণ চাষ করা হয়।
কুতুবদিয়া উপজেলার ঘরে ঘরে শিক্ষিত ছেলেমেয়ে আছে তার কারণ এখানকার ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করার জন্য অনেক স্কুল কলেজ মাদরাসা আছে। আর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য তারা ছেলেমেয়েকে চিটাগাং শহরে পাঠায়। তাই তো সুপ্রিয়া আজ পড়াশোনা করার জন্য চিটাগং শহরে আছে। আর এই উত্তর ধুরুং থেকে লবণের বড় বড় কম্পানির লোক এসে লবণ প্রতি কেজি ১টাকা থেকে দের টাকা দরে কেজি কিনে।
[আমি শীতের সময় নিজে এই উপজেলায় গিয়ে পুরা ১০ দিন থাকি। আমি যেখানে ছিলাম সেই জাযগা টার নাম উত্তর ধুরুং আর এর চারদিকে সমুদ্র মাঝে ওই ইউনিয়ন টা]
আমি গাড়ি থেকে মাগনামা তে নামলাম সেখান থেকে নেমে আমি ঘাটে এসে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চড়লাম এখান থেকে আমার মালিকের বাসা যেতে মোট ভাড়া ৩৫টাকা লাগবে। নৌকা ভাড়া ১৫ টাকা আর অটো ভাড়া ২০টাকা। আমি মালিকের বাড়িতে এসে মালিক কে টাকা দিয়ে আবারো কাজে লেগে পড়লাম। আমি যদি এক বেলা কাজ না করি তাহলে সে বেলার খাওয়া আমার বন্ধ। কাজ বলতে বাড়ি ঘর মুছামুছি করা বাজার করা কাপড় কাচা আর লবণ চাষ করা এই আর কি। রাতের বেলা মালিক আমাকে তার ঘরে ডাকল সেখানে মালিকের বউও ছিলো।
কিরে শামীম এখানে তো ৮০ টাকা থাকার কথা বাকি ১২০ টাকা কৈ?
মালিক ভাড়া দিতে হইছে আমার, আসলে ভাড়া ছিলো না তাই।
কি গো তুমি না ওরে ২৫০ টাকা দিলে যাতায়াত ভাড়ার জন্য?
মালকিন হ্যাঁ দিয়েছিলো কিন্তু রাস্তায় আমার সব টাকা গাড়ি ভাড়া দিতে শেষ হয়ে যায়।
ওই গাড়ি ভাড়া আবার কবে থেকে বাড়লো রে যার কারণে তোর টাকা শেষ হয়ে গেছে।
আমি এক জায়গায় গেছিলাম মালিক।
আমি আর বলতে পারলাম না তার আগেই আমাকে শক্ত কাটের তক্তা দিয়ে মারতে লাগলো। আগেই বলেছি শামীম কে তার মালিক একটাকার জন্যও গায়ে হাত তোলে। আজ তো শামীম কে ১২০ টাকার জন্য প্রায় আধ মরা করে ফেলা হয়েছে। পিছের অনেক জায়গা ফেটে গিয়ে রক্ত ঝড়তেছে, এগিয়ে আসার কেউ নাই। যদি সুপ্রিয়া বাড়িতে থাকতো তাহলে শামীম কে কখনও মারতে দিত না। শামীম কে মারতে মারতে প্রায় অজ্ঞান করে ফেলল। তখন বাড়ির বাকি দুইটা কাজের লোক শামীম কে ছাঁদের চিলেকোটার ঘরে নিয়ে যায় তাদের একজন তার আব্বা মানে রহিম মিয়াকে ডাকতে গেছে।
রহিম মিয়া বাড়িতে ঢোকা মাত্র মজুমদার সাহেব বলতে থাকে
তুমি তাহলে আসছো রহিম মিয়া, জানো তোমার ছেলেকি করেছে। আজ পুরা ১২০ টাকা চুরি করেছে মানে আমার ১২০ কেজি লবণের টাকা।
মালিক তাই বলে ছেলে টাকে এভাবে মারবেন, জানেনই তো ছেলেটার আমি ছাড়া দুনিয়ায় কেউ নাই। আমার যদি সামত্য থাকতো তাহলে শামীম কে আমার বাড়ি নিয়ে যেতাম এখানে থাকতে দিতাম না।
রহিম তুমি ভাল করেই জানো বর্ষার শেষে এই লবণ চাষ করা জমির জন্য মানুষে মানুষে এখন খুনাখুনি হয়। তুমি এটাও জানো এই লবণ চাষ করতে গিয়ে কত খরচা করতে হয় আমাকে।
জানি মালিক আমি জানি, তবুও আপনার প্রতি আমার অনুরোধ আমার ছেলেটাকে আপনি এভাবে আর মারবেন না।
রহিম মিয়া সিড়ি দিযে দৌড়ে ছাঁদের চিলেকোটা ঘরে যায়। গিয়ে দেখে শামীম কে উল্টো করে শুয়ে রাখা হয়েছে আর শামীমের শরীর থেকে পাতলা ছ্যান্টো গ্যান্জি টা খুলে রাখছে অন্য কাজের ছেলেটা। রহিম কে আসতে দেখে
রহিম চাচা কৈ আমাদের তো মালিক এমন করে কখনও আঘাত করে না তাহলে শামীম কে কেনো এমন কর আঘাত করে।
তোদের যাওয়ার জায়গা আছে তোরা বেতন নিয়ে কাজ করিস। তোদের বাবা মা আছে তাই তোদের গায়ে হাত তুলতে পারে না আর তোরা তো এই গাধার মত না কাঁদতে কাঁদতে বলল।
তাই বলে এত অত্যাচার সহ্য করে পড়ে থাকা লাগবে অন্য কারো বাড়িতেও তো কাজ করতে পারে।
সেটাও সম্ভব না, আমি মালিকের কাছে শামীম কে বিক্রি করে ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে আমার ছেলে মেয়েকে চাকরি নিয়ে দিয়েছি। আরো তিন টা মাস শামীম কে এসব অত্যাচার সহ্য করে থাকা লাগবে।
তাহলে তুমি ওরে বাড়িতে নিয়ে যাও না কেনো
আমার বউতো এই মালিকের চেয়েও খারাপ
রহিম মিয়া আর কোন না বলে রান্না ঘর থেকে গরম পানি নিয়ে এসে সুতি কাপড় দিয়ে শামীমের পুরা শরীর ভালো করে মুছে দিয়ে কাঁটা জায়গা গুলোতে ডিটল দিয়ে দিলো। আর যে জায়গাতে কালো দাগ পরেছে হারিকেনের আগুনে গামছা হালকা গরম করে পিঠে শেখ দিতেছে। এভাবে প্রায় ঘন্টা খানেক শামীমের সেবা করার পর শামীমের জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফেরার পর দেখে তার আব্বা তাকে সেবা করতেছে। শামীম আস্তে আস্তে উঠে বিছায় বসে
আব্বা তুমি কখন আসলে আর এভাবে কাঁন্না করতেছো কেনো? দেখো আমার কোন হয় নাই আমি ঠিক আছি, বুক টান করে।
বাপ বলতো তুই টাকা দিয়ে কি করেছিস, তুই তো কোন বাজে নেশা বাজে কাজ করার মতও ছেলে না।
আব্বা সুপ্রিয়া আমারে ঠকাইছে, যার কারণে এখানে এতদিন অত্যাচার সহ্য করে পড়ে আছি সেই ঠকাইছে কাঁদতে কাঁদতে।
কি বলিস বাপ এসব তুই, সুপ্রিয়া মায়ে তোকে কেন ঠকাইতে যাইবো।
শামীম তখন এক এক করে সব কথা তার আব্বাকে বলতে থাকে।শামীমের আব্বা শামীমের এমন কথা শুনে পুরা হতভম্ব হয়ে গেছে।
বাপ তোর কোথাও ভুল তো হতে পারে
আব্বা তুমি ভালো কইরাই জানো তোমার ছেলে কোন ভুল করার না।
তাহলে মজুমদার সাহেব রে সত্য কথা কইলি না কেনো
আমি পারবো না বলতে বাপ আমার নিজের ভিতটা যে ফেঁটে যাইতেছে। যে সুপ্রিয়া ছোট থেকে আমার সাথে বড় হইলো যে সুপ্রিয়া আমারে ছাড়া স্কুল মাদরাসা যাইতো না সেই সুপ্রিয়া আমারে ভুলে আর একজনের সাথে।
শামীম এবার তার আব্বাকে জরিযে ধরে কাঁদতে লাগলো। রহিম মিয়া বুঝতে পেরেছে মানুষ কতটা আঘাত পেলে এমন করে কাঁদে আর শামীম তো কোন ভাবেই কাঁদার ছেলে না। আর শামীম মরে যাবে তবুও তার আব্বাকে মিথ্যা কথা বলবে না।
বাপ তুই থাক এবার সুপ্রিয়া মায়ে আইলে আমি তারে জিগামু।
না আব্বা তুই কোন কবি না, যা কওনের তা আমি কমু। কেন আমার লগে সে এমন করলো। কি অপরাধ ছিলো আমার, কেনো এত আমারে সে ভালোবাসলো কেনবা আমারে সে ছাইড়া গেলো।
বাপ রাতে কোন খাইছোস
আমি খাইছি আব্বা তোরে এসব নিয়ে ভাবা লাগবো না। মিথ্যা বলল
তাহলে আমি এহন যাই, দেরি হইলে তোর মা আবার
যাও আব্বা আমি ঠিক আছি করিম ভাই আর সোহেল ভাই তো আছে।
সোহেল দেখ শামীম আমাগো রে ভাই ডাকে আর আমরা কি এই ভাই টারে না দেখতে পারি।
তুই ঠিক কইছোস করিম, শামীম তোর আমার চেয়ে কত বড় হবে তবুও ভাই ছাড়া আমাগোরে ডাকে না।
চাচা তোমার চিন্তা করা লাগবো না আমি আর সোহেল সব সামলে নিবো।
চাচা আমি বা করিম কেউ ছিলাম না যখন শামীম রে এমন করে মজুমদার সাহেব মারে।
রহিম মিয়া আবারো শামীম কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকলো আজ তার সন্তানের সুখের জন্য শামীম কে কত না অত্যাচার সহ্য করা লাগতেছে। নিজের কাছে রহিম মিয়ার নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে। আজ তার কারণে শামীম এত অত্যাচার সহ্য করতেছে। কিন্তু অত্যাচার সহ্য করুক তার কারণেই তো আজ শামীম বেঁচে আছে দুনিয়াতে।
রাতে সোহেল আর করিম দুইজনেই শামীমের অনেক সেবা যন্ত্র করে অনেকটা সুস্হ করে ফেলেছে।
আজ থেকে ১৮ বছর আগে এই লবনের টাকা আনতে গিয়ে রাস্তার মাঝ থেকে এ্যাকসিডেন্টের হাত থেকে বাঁচায়। তারপর চারদিকে খুজতে থাকে বাচ্চার বাবা মা কৈ পুরা দুই দিন রহিম মিয়া নিনঘুম হারাম করে বাচ্চার মা বাবা কে খুজে যখন পায় না তখন রহিম এই বাচ্চা কে নিয়ে কুতুবদিয়া আসে। তখন বাচ্চার হাতে একটা ফটো আর গলায় চেন ছিলো, ফটো টাতে দেখা যায় একটা মহিলার কোলে এই বাচ্চা আর তার পাশে একটা পুরুষ লোক তার সাথে একটা আট নয় বছরের মেয়ে। শামীম বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রহিম পরে আর এক বিপদে দিন রাত শামীম কে অত্যাচার করে তার স্ত্রী সন্তান শেষে বাধ্য হয়ে শামীমের যখন ছয় বছর বয়স তখন থেকে শামীম কে মজুমদার বাড়িতে রাখে আর বাপ ছেলে এখানে কাজ করে। শামীম কে যখন রহিম মিয়া পায় তখন শামীমের বয়স চার বছর।
চলবে কি?
No comments