নিয়তি( এ কেমন ভালবাসা)-----পর্বঃ ০৩
শামীম আজকে মার খেয়ে প্রায় আধমরা হয়ে গেছে, আধমরা হবেই না কেনো যে মারটা না মেরেছে মজুমদারের বড়ছেলে। শামীম কোন রকম মেঝে থেকে উঠে সিড়ি বেয়ে তার চিলেকোঠার ঘরে গেলো। আজ আর কেউ শামীমের আব্বা কে খবর দেয় নাই। শামীমের পুরা শরীর আজ খুব ব্যথা করতেছে, মনে হচ্ছে শরীর থেকে মাংস খসে পরতেছে। শামীম না পারতেছে কাঁন্না করতে না পারতেছে নিজের শরীরের ব্যথার জন্য চিৎকার করতে। শামীম যদি কাঁন্না করে বা চিৎকার করে তাহলে তার কপালে আরো মার আছে। কারণ বাড়িতে মেহমান এসেছে, আর এই এলাকায় মজুমদারের বড় দাপট আছে। শামীম কে মারার সময় সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে ছিল মজুমদারের বড়ছেলের বউ।
____________________
মাঝ রাতে হঠাৎ করে শামীম টের পেল তার ঘরে কারা যেনো ঢুকেছে। আসলে একজন আসার শব্দ এক রকম আর দুই তিন জন আসার শব্দ আর এক রকম। এমনিতেই শামীম শরীরের ব্যথার কারণে ঘুমাতে পারে নাই, তার উপর ঘরে আলোর কোন ব্যবস্থা নাই। কোন রকম বিছানা থেকে শামীম উঠে বলল
শামীমঃ কে
সুপ্রিয়াঃ আমি এসেছি আর ভাবি এসেছে একটু ছাঁদে আসো কষ্ট করে।
সুপ্রিয়ার এমন ভারা ভরা ডাক শুনে শামীমের শরীরের সব ব্যথা যেনো উধাও হয়ে গেলো। তাই শামীম তারাতারি বিছানা থেকে উঠে ধীরে ধীরে ছাঁদে গেলো।
সুপ্রিয়াঃ শামীম তুমি তো শুনলেই আমার বিয়ে আর দুইদিন পর তাই আমাকে তুমি ভুলে যাও।
শামীমঃ যে ছেলেটা সাথে এসেছে তার সঙ্গে তোমার বিয়ে তাই তো।
সুপ্রিয়াঃ তুমি কি করে জানলে?( অবাক হয়ে)
শামীমঃ মনে আছে সুপ্রিয়া শেষবার যখন আমার ঘরে এসে আমার সাথে থেকে পরের দিন শহরে চলে গিয়েছিলে?
সুপ্রিয়াঃ হ্যাঁ
শামীমঃ তার পরেরদিন আমি চিটাগাং যাই তোমাদের লবণের টাকা আনতে একটা বড় কম্পানির কাছ থেকে। সেই দিনে তোমাকে আর ঐ ছেলেটাকে এক রিক্সায় যাওয়া দেখি আর তোমাদের পিছন পিছন আমিও যাই( সেখানের সব ঘটনা সহ বাড়িতে এসে মার খাওয়া পর্যন্ত)
সুপ্রিয়াঃ সব যেহেতু জেনেই গেছিলে তাহলে আজ কেনো আমার রুমে আমাকে দেখার জন্য উকি দিতে গেলে?
শামীমঃ দুইটা কারণে
সুপ্রিয়াঃ কি কি কারণে?
শামীমঃ আমার সাথে সেই ছোট থেকে তোমার কি ছিলো?
সুপ্রিয়াঃ তোমার সাথে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো, তবে যতদিন তোমাকে তোমার আব্বা বিক্রি করে নাই ততদিন।
শামীমঃ আমার সাথে কেনো এমন করলে বলবে?
সুপ্রিয়াঃ তোমার সাথে আমি কোন করি নাই, আমার ভবিষ্যৎ ভেবে তোমাকে ছেড়েছি। দেখ না আছে তোমার কোন পরিচয়, না আছে তোমার কোন যোগ্যতা, না আছে নিজের বাড়ি ঘর, না যানো কোন কাজ। তাহলে তোমার সাথে বাকি জীবন কেমন করে কাটাতাম।
সুপ্রিয়ার ভাবিঃ তাই তো আমার চাচাত ভাইয়ের সাথে ওর সম্পর্ক টা আমি করে দেই। প্রথমে অবশ্য সুপ্রিয়া রাজি ছিলো না, আর আমার চাচাত ভাইটাও অনেক পিছনে ঘুরেছে সুপ্রিয়ার। পরে যখন সুপ্রিয়ার কাছ থেকে জানতে পারলাম তোমার সাথে সে সম্পর্ক করে তাই আমি সুপ্রিয়ার চোখে আঙুল দিয়ে সব দেখিয়ে দেই।
সুপ্রিয়াঃ আর আমার আব্বু কখনো আমাদের সম্পর্ক মেনে নিত না। তাই আমি সৌরভের সাথে প্রেম করার আগেই ভাবি আর ভাইয়ার সাহায্যে গোপনে কাবিন করি। তারপর সময় পেলে আমরা একান্ত সময় কাটাই তাই হয় সেদিন তুমি আমাদের কে দেখেছো।
শামীমঃ যদি আমার সাথে এমনই করার ইচ্ছা তোমার ছিলো তাহলে কেনই বা আমাকে ভালোবাসা শিখাতে গেলে? আমি তো তোমার কাছে কখনও যাই নাই, তুমি বার বার এসেছিলে আমার কাছে। এমন করে তোমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছো এখন তোমাকে ভুলতে গেলে আমাকে মরতে হবে। কৈ আগে তো এমন কথা বললে বলতে তোমার কোন কিছুই আমার লাগেবে না, তুমি নাকি আমাকে আর তোমাকে চালাতে পারবে। তোমার বাবা না মানলে আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে, আমাকে গাধা থেকে মানুষ করবে।
সুপ্রিয়াঃ দেখ শামীম ও সময় আমার আবেগ ছিলো। আবেগের বসে হয়ত বা আরো অনেক কিছুই বলেছি, সৌরভের সাথে সম্পর্ক থাকা অবস্হাতেও তোমার সাথে থেকেছি, হ্যাঁ তুমি খুব ভালো আমার কোন ক্ষতি করো নাই। তোমার সাথে সেদিনই আমার সৌরভের কথা জানাতে চাইছিলাম কিন্তু পারি নাই।
শামীমঃ তোমার পথ তো বেঁচে নিয়েছো এখন আমার কি হবে একবারো কি ভেবে দেখেছে? আমি এখন কার কাছে যাবো? কে এখন আমার খবর নিবে কে আমাকে তোমার মত করে ভালোবাসবে বলতে পারো( কেঁদে)
সুপ্রিয়াঃ শামীম কালকেই তুমি চলে যাবে এ বাড়ি থেকে। এ বাড়িতে থাকলে আমাকে ভুলতে পারবে না তা আমি জানি। আর তোমার সাথে এতদিন প্রেম করে তোমার জীবন টা আরো নষ্ট করার জন্য আমি দুঃখীত।
সুপ্রিয়ার ভাবিঃ সুপ্রিয়া যা বলেছে তাই কর শামীম কালকেই চলে যাবি এ বাড়ি থেকে। এই সুপ্রিয়া চল..
সুপ্রিয়াঃ ভাবি তুমি যাও আমি আসতেছি
সুপ্রিয়ার ভাবি চলে যাবার পর সুপ্রিয়া শামীম কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। কিন্তু শামীম আর সুপ্রিয়া জরিয়ে ধরলো না তার কারণ শামীম হয়ত বুঝতে পেরেছে মিছে মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই। এই দুনিয়ায় সবাই স্বার্থ সন্ধানী স্বার্থের জন্য কাছে টেনে নেয় স্বার্থের জন্য দুরে ঠেলে দেয়।
সুপ্রিয়াঃ আমাকে মাপ করে দিও শামীম, আমারো কিছু করার ছিলো না। যদি এখানে থাকতাম তাহলে হয়ত তোমারি থাকতাম আমি। কিন্তু চিটাগাং যাওয়ার পর সব ধরণের মানুষের সাথে মিশেছি, সবার কাছে তোমার কথা বলেছি সবাই তোমাকে ছাড়ার কথা বলেছে। আর ঐ সময় নিজেকে চিটাগাং শহরে একা মনে হত সেই সময় সৌরভ আমাকে সঙ্গ দেয়, আমাকে নতুন করে ভালোবাসতে শেখায়। যা তোমার এই গ্রামের ভালোবাসার মত এতটা ভালোও না, শহরের ভালোবাসা একেবারে আলাদা শামীম। তাই হয়ত নতুন ভালোবাসা পেয়ে তোমাকে ভুলে গেছি তোমাকে ঠকিয়েছি। তুমি নিজেই বলো তো তোমাকে বিয়ে করলে আমার কি হতো, আমি কি পূর্ণ স্বাধীনতা পেতাম। পেতাম না, ঘরে থাকা লাগত নামাজ কালাম করা লাগত রান্না করা লাগত যা আমি পারতাম না।
শামীম এবার সুপ্রিয়াকে বুক থেকে সরিয়ে একটু দুরে দারিয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকলো আর কাঁদতে লাগলো। মানুষ কি মুর্খ হলে বাড়ি ঘর না থাকলে মা বাবা না থাকলে তার কি ভালোবাসার অধিকার নাই। সে কি কারো কাছে ভালোবাসা পাবার বা ভালোবাসার মানুষকে পাবার আশা করতে পারে না। মানুষ কি বোকা হলে তার সাথে এমন অন্যায় সবাই করে, তাকে কি ব্যবহার সবাই করে।
সুপ্রিয়াঃ শামীম কালকে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে বলে দিলাম।
শামীম কে আর কোন বলতে দিলো না, শামীমেরও তো বলার ছিলো এ বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাবে কার কাছে যাবে কে তাকে থাকতে দিবে। এ বাড়ি শামীম তো কাজ করে থাকতেছে, কারো কাছে তো কোন কিছুই চাচ্ছে না। খেতে দিলে খাচ্ছে না দিলে খাচ্ছে না, সব কাজ তো একাই করে দিতেছে তাহলে তাকে যেতে হবে কেনো?____________________
ছাঁদ থেকে সুপ্রিয়া তার নিজের ঘরে এসে কাঁদতে থাকে আর বলতে থাকে, তোমার কষ্ট যে এখনও আমার সহ্য হয় না। তুমি বোকা বলে তোমাকে সবাই ব্যবহার করে, বোকা বলে আজ সবার হাতের মার খাও। ঠিক মত তো তোমাকে খেতেও দেয় না, আর আমি তো সৌরভ কে ভুলতেও পারবো না, তার সাথে হাজার জনমের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছি। তোমার ভালোর জন্য তোমাকে এ বাড়ি থেকে যেতে বলতেছি যাতে বাইরে যেয়ে বাইরের পৃথিবী টা চিনো নিজেকে একটু চালাক করো নিজের জন্য কিছু করতে পারো। আল্লাহ চাইলে আমার চেয়েও ভালো কাউকে পাবে তুমি, আমার চেয়েও তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসবে। সেই সময় সুপ্রিয়ার ঘরে তার ভাবি আর সৌরভ ঢুকে
সুপ্রিয়ার ভাবিঃ কিরে শামীম কি যেতে চাইলো?
সুপ্রিয়াঃ মনে হয় না যাবে, আচ্ছা ভাবি শামীম থাকলে কি খুব সমস্যা?
সুপ্রিয়ার ভাবিঃ সমস্যা না হলে কি বলি।
সুপ্রিয়াঃ ও তো যাবে না তাহলে কেমন করে ওকে তারিয়ে দিবো? আর আব্বু তো সব কাজ ওর দ্বারা করিয়ে নেয় মনে হয় না আব্বুও যেতে দিবে।
সৌরভঃ আমার কাছে একটা প্লান আছে।
সুপ্রিয়ার ভাবিঃ কি প্লান
সৌরভঃ আপু সুপ্রিয়া তাহলে শোন............. বুঝলে এই কাজ করলে হয়ে যাবে।
সুপ্রিয়াঃ শামীমের যদি কোন ক্ষতি হয়?
সুপ্রিয়ার ভাবিঃ সৌরভ যেহেতু আছে কোন সমস্যা হবে না।
তারা শামীম কে বাড়ি থেকে তারানোর প্লান করে ফেলে। আসলে শামীম কে এ বাড়ি থেকে তারাতে পারলে আর কোন কাজের মানুষ এই মজুমদার বাড়িতে এমন করে খাটবে না আর মজুমদার এত টাকা পয়সার মালিকও হবে। তখন মজুমদারের ছেলে সব কিছু তার বাবার কাছ থেকে বুঝে নিয়ে সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিবে আর সেই টাকা নিয়ে শহরে তারা ব্যবসা করবে। শামীম মজুমদার বাড়িতে না থাকলে মজুমদার সাহেব তার চাষের জমি ছেলেকে চাষ করতে দিবে তখন তার ছেলে সব বিক্রি করে দিয়ে শহরের ব্যবসা টা আরো বড় করবে। আর সুপ্রিয়ার ভাবি সুপ্রিয়ার ভালোর জন্য তার চাচাত ভাইয়ের সাথে সুপ্রিয়ার বিয়ে দিতে চায়। ছেলে অনেক ভালো বাবার বড় ব্যবসা আছে একমাত্র ছেলে বাবা মায়ের সে। তাই তো সুপ্রিয়ার বাস্তব টা বুঝিয়ে দিয়ে শামীমের কাছ থেকে দুরে সরিয়ে রাখছে।
_________________________
পরেরদিন শামীম সকালে জমিতে কাজ করতে চলে যায়। কাজ করা হলে তার আব্বার সাথে একটু দেখা করতে যায়। বাড়িতে গিয়ে দেখে তার আব্বা বাড়িতে নাই, আর শামীম কে দেখে রহিম মিয়ার বউ শামীম কে কথা শুনাতে থাকে তাই শামীম আর সেখানে না থেকে চলে আসে।
সমুদ্রের পাড়ে চলে আসে শামীম পাশে শুটকির আড়ত অনেকে কাজ করতেছে। অনেক ছোট ছোট ছেলে মেয়েও কাজ করতেছে তাদের বাবা মাও কাজ করতেছে। আসলে এগুলো জায়গায় পার্ট টাইম জবের মত কাজ, দুপুরে দিকে তাদের বাবা মা যখন খেতে বসল তখন তারা তাদের ছেলে মেয়ে কে সাথে নিয়ে খেতে বসে। মাঝে মাঝে নিজের পাতের তরকারি তার সন্তানের পাতে দিতেছে। মাঝে মাঝে নিজ হাতে যত্ন করে খাইয়ে দিতেছে। খাওয়া শেষ হলে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছে দিতেছে। এসব দৃশ্য দেখে শামীম কাঁদতে থাকে, সে কখনও এমন যত্ন সহকারে কখনও খেতে পারে নাই। তাকে এমন আদর করে কেউ কখনও খাওয়ায় নাই, মাঝে গতিকে যদি সুপ্রিয়া এক লোকমা বা দু লোকমা খাইয়ে দিত। বাবা মায়ের ভালোবাসা কেমন তা শামীম জানে না তবে মাঝে মাঝে এখানে এসব দৃশ্য দেখে আর ভাবে ঐ জায়গার ছেলে বা মেয়েটা শামীম।
শামীম সেই বারোটার সময় এসেছে এখন প্রায় বিকাল আজ শামীমের মন টা খুব বেশি খারাপ, কারণ কালকেই সুপ্রিয়া একেবারে শামীমের জীবন থেকে চলে যাবে। শামীম কোন কিছু না ভেবেই মজুমদার বাড়ির দিকে রওনা হলো। মজুমদার বাড়ি ঢুকা মাত্র, মজুমদার এবং তার দুই ছেলে শামীমকে ইচ্ছা মত মারতে লাগলো। শামীম কে আজ কেনো মারতেছে তা জানে না, তবে এতদি একজন মারত কিন্তু আজ তিনজন তার অপরাধ টা কি সে তো জানে না। আজ তো শামীম কোন ভুল করে নাই তাহলে তাকে কেনো মারতেছে? গতকালকেই তো মারের দাগ শরীর থেকে যায় নাই আজ আবার মারতে লাগলো। শামীম আজ সবার পায়ে পরলো তাকে যেনো আর না মারে। আজ মার আর সহ্য করতে পারতেছে না আজ চিৎকার করে আব্বা আব্বা বলে ডাকতেছে আর কাঁদতেছে। আজ শামীমের আত্মনাত কারো কান পর্যন্ত পৌছালো না। শামীম কে আজ প্যান্টের বেল রড আর কাটের তক্তা দিয়ে মেরেছে পুরা শরীরের যেখানে মারের দাগ পরেছে সেখান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এমন সময় কার কাছে যেনো খবর পেয়ে শামীমের আব্বা আসে, এসে মজুমদার আর তার ছেলেদের পায়ে ধরে শামীম কে বাকি মার খাওয়ার হাত থেকে বাঁচালো।
রহিমঃ মালিক আজ কি করেছে যার জন্য এমন পশুর মত করে এতিম ছেলেটাকে মারতেছেন?
মজুমদারঃ আমার বাড়ির মেহমানের হাতের ঘড়ি আর ওয়ালেট চুরি করেছে তোমার ছেলে।
রহিমঃ আমার ছেলে এমন কাজ করতে পারে না মালিক?
মজুমদারঃ আমার কথা বিশ্বাস না হলে সোহেল আর করিম কে জিজ্ঞাসা করে দেখ?
তখন রহিম মিয়া সোহেল আর করিম কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলে শামীমের চিলেকোঠার ঘর থেকে এসব পাওয়া গেছে আর আমরাও সাথে ছিলাম। শুধু আমরা না এ বাড়ির সবাই ছিলো। তখন রহিম মিয়ার সুপ্রিয়ার দিকে এগিয়ে যায়, সুপ্রিয়া চোখের ইশারাতে রহিম মিয়াকে যেনো কি বোঝায়। আর রহিম মিয়া সুপ্রিয়ার চোখের ইশারা অনুয়ায়ী শামীমের কাছে গিয়ে টেনে তুলে দুই গালে ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় মারতে থাকে।
রহিমঃ বল কেনো চুরি করেছিস তুই, তোর যদি এসব লাগতো আমাকে বলতি নিয়ে দিতাম। তোকে তো সারাজীবন সুপ্রিয়া মালকিন সব কিছু দিয়েছে তাহলে আজ কেনো তাদের বাড়িতে আসা মেহমানের জিনিস চুরি করতে গেলি?
শামীম যেনো আজ নিজেকে বিশ্বাস করতে পারতেছে না,তার আব্বা তাকে অবিশ্বাস করতেছে। কোন রকমে দাঁড়িয়ে থেকে শামীম ওর আব্বার হাত ধরে বলতে থাকে
শামীমঃ আব্বা বিশ্বাস করো আমি এ কাজ করি নাই।
রহিমঃ তোকে করবো বিশ্বাস আমি, তোর মত চোর আমার সন্তান হতে পারে না। তুই যদি আজ আমার সন্তান হতি তাহলে তোকে আজ আমি নিজ হাতে মেরে ফেলতাম( বলতে বলতে কেঁদে ফেলল)
শামীমঃ আব্বা এমন কথা বলিও না, আমি তোমার ছেলে আব্বা। ও আব্বা আমি সত্যি চুরি করি নাই, আমার যদি তুমি জীবনটা নিতে চাও তাহলে আমাকে মেরে ফেলো তবুও কোন আপসোস থাকবে না আব্বা। তবুও আমাকে চোর বলিও না আব্বা, আমি চুরি করি নাই। আর এসব কি আমার কখনও লাগে না এসব কিছু সম্পর্কে আমি জানি( কেঁদে কেঁদে)
রহিমঃ তুই চুরি না করলে তোর ঘরে কেমন করে গেলো এসব বল?
শামীমঃ আব্বা আমি জানি না সেই ভোর বেলা জমিতে গেছি সেখান থেকে তোমার কাছে তোমার বাড়িতে। তুমি বাড়িতে ছিলে না বলে আমি সমুদ্রের পাড়ে বসে ছিলাম এতক্ষণ।
রহিমঃ তোর মুখ আমি দেখতে চাই না, চলে যা এ মজুমদার বাড়ি থেকে চলে যা আমার চোখের সামনে থেকে। তোকে আমার আর এখানে দেখতে সহ্য হচ্ছে না। খবরদার কারো কাছে বলবি না আমি তোর আব্বা।
শামীমঃ আব্বা আমি কোথায় যাবো এখান থেকে? ও আব্বা আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে দিও না, তুমি ছাড়া আমার যে আর যাবার কোন রাস্তা নাই। আব্বা আমাকে এমন করে বলিও না তুমি আমার আব্বা তুমি ছাড়া সত্যিকারের আপন এই দুনিয়াাতে আমার আর কেউ নাই।
মজুমদারঃ রহিম ঠিক বলেছে এ বাড়ি থেকে তুই আজকেই চলে যাবি। করিম শামীমের উপরে যা কিছু আছে সব নিয়ে আয়।
মজুমদারের কথা শুনে করিম উপরে গিয়ে শামীমের সব কাপড় চোপড় পোটলা করে নিয়ে এসে শামীমের সামনে রাখলো। তখন শামীম মজুমদারের পায়ে পরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকলো
শামীমঃ মালিক আমাকে খেতে দিতে হবে না, আমি এমনিতেই সব কাজ করে দিবো তবুও আমাকে তারিয়ে দিবেন না। আমার যাওয়ার মত কোন রাস্তা নাই মালিক, আপনি আমার থেকে ওমন করে মুখ ফিরিয়ে নিবেন না।
মজুমদার দিলো শামীমের বুকে এক লাথি গিয়ে পরলে সুপ্রিয়ার সামনে। এবার সুপ্রিয়ার পা জরিয়ে ধরে
শামীমঃ ছোট মালকিন আমাকে বাঁচান এরা সবাই আমাকে তারিয়ে দিতে চাইছে আমি কোথায় যাবো বলেন আমার যে যাবার কোন জায়গা নাই। আপনি বললে এরা সবাই আপনার কথা শুনবে বলেন না দয়া করে। আমি না খেয়েও থাকতে পারবো তবুও তারিয়ে দিয়েন না।
সুপ্রিয়া ওর পা ছাড়িয়ে নিয়ে ওর ঘরে চলে গেলো ওর পিছনে পিছনে সৌরভ আর ওর ভাবিও গেলো। শামীম একে একে এ বাড়ির সবার পায়ে পরে অনেক কাঁদল কারো মনে শামীমের নিয়ে দয়া হলো না। শামীম আবারো ওর আব্বার হাতে পায়ে পড়ে কাঁদতে থাকলো তবুও তার আব্বাও কোন দয়া হলো না, এদিকে শামীমের ছ্যান্টো গ্যাঞ্জি রক্তে প্রায় ভিজে গেছে।
শামীমঃ ও আব্বা কার কাছে যাবো কে থাকতে দিবে আমায়, আব্বা তার চেয়ে তোমার বাড়িতে আমাকে কাজের মানুষ করে রাখ সব কাজ করে দিবো আব্বা তবুও আমাকে তারিয়ে দিও না আব্বা। আব্বা কেউ আমাকে কখনও আপন করে নিবে না আমার তুমি ছাড়া কেউ। আব্বা তোমার কাছে কখনও কোন দুঃখের কথা কষ্টের কথা বলবো না তবুও তোমার থেকে দুরে তারিয়ে দিও না। আমার তো মা বাবাও নাই যে আমি তাদের তাদের কাছে যাবো। আমার কষ্ট তুমি কেমন করে সহ্য করতেছো আব্বা, আজ তোমার চোখে পানিও নাই আব্বা।
শামীমের আব্বা এসব কথা সহ্য করতে না পেরে মজুমদার বাড়ি থেকে চলে গেলো। এদিকে মজুমদারের দুই ছেলে শামীম ধরে ঘার ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলো। শামীম কোন রকম কাপড়ের পোটলা টা হাতে নিয়ে অজানার পথে যেথে থাকলো। রাত হয়ে গেছে এত রাতে শামীম বা জাবে কোথায়? কে বা দিবে শামীম কে ঠাঁই। পোটলার মধ্যে তার ছোট বেলার ফটো আর তার গলার চেনটাই আছে।
No comments