তোকে_অনেক_ভালোবাসি--------পর্ব_২১
মনিকা প্রিথা আপু আমাকে আদ্রর রুমে নিয়ে এলো। আমাকে দরজার কাছে দিয়ে ঠাট্টা করে কিছু কথা বলে চলে গেলো।
রুমে ঢুকতেই আমি অবাক হয়ে পুরো রুমটা দেখছিলাম। আমি জাস্ট প্রতিটি ধাপে এসেই চমকে যাচ্ছি! কয়েক ঘন্টার মধ্যে এতো কিছু কি করে সম্ভব!! পুরো রুমে ফুলের সুবাসে মৌ মৌ করছে। গোলাপ আর রজনীগন্ধা দিয়ে খুবই সুন্দর করে সাজানো হয়েছে পুরো রুম।
রুমে প্রবেশ করে বেডের মাথার দিকে দেয়ালে চোখ পড়তেই আমি হা করে চেয়ে রইলাম। আমার ঘুমন্ত একটা ছবি আর চকলেট মুখে দেওয়া একটা ছবি বড় ফ্রেমে বাধিয়ে পাশাপাশি রাখা হয়েছে।
ঘুমন্ত ছবিটাতে খুবই চুপচাপ দেখাচ্ছে কপালের উপরে এক গুচ্ছ চুল পড়ে আছে। আর চকলেট খাওয়া ছবিটাতে পুরোই বাচ্চাদের মতো দেখাচ্ছে। সেখানে খুবই কিউট লাগছিলো দেখতে। উফ আমার ছবি দেখে আমি নিজেই ক্রাশ খেলাম। ভাবা যায়!!কিন্তু এ ছবি দুটো উনি কখন তুলেছে?
সকাল থেকে একটার পর একটা চমক পেয়েই চলেছি। যাকে বলে সারপ্রাইজ। তার মধ্য সবথেকে বড় সারপ্রাইজ হলো আদ্র আমার বিয়ে। এখন এই রুমে এসে আরো একটা সারপ্রাইজ পেলাম। আদ্র পারেও বটে,আচ্ছা আরো সারপ্রাইজ বাকী আছে কি??
আরু আদ্রর রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। আজ থেকে এটাই ওর রুম একথা ভেবেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো। হঠাৎ করেই হাসিটা মিলিয়ে গেলো। আতংক বাসা বাধলো আরুর মনে চরম আতংক। আজ ওদের বিয়ে হয়েছে তারমানে আরুর উপর পুরো অধিকার আদ্রর আছে। সে কি আজই স্বামীর অধিকার নিতে চাইবে? আরু চমকে উঠলো বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। আরু বিড়বিড় করে বলতে লাগলো.......
নাহ আমি এ রুমে থাকবো না আমি বরং আমার রুমেই চলে যাই সেই ভালো।
আরু সামনে এগিয়ে আবার পিছিয়ে দাড়ালো.........নাহ এ আমি কি করছি আদ্র আমাকে ভালোবাসে উনি কখনোই আমার অমতে কিছু করবে না। তাই এ রুম থেকে চলে গিয়ে উনাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানেই হয় না।
আরু শাড়ি পড়ে থাকতে পারছে না। চেঞ্জ করবে তার ও উপায় কেননা এরুমে ওর কোনো ড্রেস নেই।
দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে আরু নরে উঠলো আদ্রকে দেখে মুচকি হেসে নিচে তাকালো। আদ্র দরজা লক করে আরুর সামনে এসে হাত ভাজ করে কয়েক মিনিট দাড়িয়ে রইলো। আরু একবারো মাথা তুলে তাকালো না। আদ্র দুষ্টু হেসে বললো.........
এটা কোনো কথা আরু? তুমি জানো না বাসর রাতে বরকে সালাম করতে হয়?
আরু মাথা তুলে আদ্রর দিকে তাকালো মনে মনে বললো.........ছি. আরু তোর মাথায় কি কিছুই নেই? প্রিথা আপু তো বলে দিয়েছিলো কি করে যে ভুলে গেলাম।
আরু উঠে দাড়িয়ে আদ্রর পায়ে সালাম করতে নিলে আদ্র ওর বাহু ধরে থামিয়ে দেয়।
এই পাগলি সালাম করতে হবে না আমি মজা করে বলেছি।
না আমি সালাম করবোই এটা নাকি নিয়ম ছাড়ো।
আদ্র আরুর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো.........নিয়ম বলতে কিছু নেই আর যদি থাকে সেটা আমি মানি না। আমার আরু কখনো আমার কাছে মাথা নত করবে না,পায়ে হাত দেওয়া তো দূরে থাক। আমি চাই আমার বউ মাথা উচু করে থাকবে সব সময়। তার সুখের কথা হোক বা দুঃখের সব কিছু সে আমার সাথে শেয়ার করবে,আমার চোখে চোখ রেখে তার আবদার গুলো মিটিয়ে নিবে। এই বউ পারবে না??
আরু ছলছল চোখে আদ্রর দিকে তাকালো মুচকি হেসে মাথা উপর নিচে করলো মানে হ্যা ও পারবে। আরু চাইছে ওর মনের অনুভূতি গুলো আদ্রকে বলতে। কিন্তু পারছে না মুখটা মনে হচ্ছে চেপে ধরে আছে।আদ্র আরুর কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বললো........
আরু এখন যাও শাড়িটা চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে এসো।
আরু করুন চোখে তাকিয়ে বললো.......আমার সব জামা তো আমার রুমে।
ওটা এখন আর তোমার রুম নয় বুঝেছো সোনা। তুমি এখন শুধুই ওই রুমটার অতিথী। আজ থেকে এই মুহুর্ত থেকে এটাই তোমার রুম,তোমার যেভাবে ইচ্ছে সাজিয়ে নিও। আমি তোমার সব ড্রেস আগে থেকেই আনিয়ে রেখেছি আলমারিতে রাখা আছে।
আরু আশ্চর্য হয়ে আদ্রর দিকে চেয়ে আছে। ওর ভেতরে আনন্দের ঝড় বয়ে চলেছে। আদ্রর এতো খেয়াল সব দিকে!!
.
.
আরু ফ্রেস হয়ে রুমে এসে দেখে আদ্র সোফায় বসে ফোন চাপছে। আরু আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছে আর অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাবছে। আচমকা কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরায় আরু কেঁপে উঠলো,চোখ বড় বড় করে আয়নার আদ্রকে দেখে বললো........
কি করছো ছাড়ো।
উহু ছাড়বো না বিয়ে করেছি কি বউকে ছেড়ে থাকার জন্য।
আদ্র আরুর চুল এক পাশে এনে ঘাড়ে ঠোঁট ছোয়ালো আরু কেঁপে উঠে নিজের ওড়না চেপে ধরলো। হুট করেই আরুকে কোলে তুলে নিলো আদ্র বেডে বসিয়ে দিলো আরুকে। আরু কিছু বলতে পারছে না শুধু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আদ্র আরুর হাত ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। আরু ছটফট করছে ছাড়া পাবার জন্য। আদ্র ঘোর লাগা চোখে আরুর দিকে তাকিয়ে আছে,ধীরে ধীরে নিজের মুখটা আরুর মুখের কাছে নিতে লাগলো। আরুর তো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে চোখ খিচে বন্ধ করে নিয়েছে। দুহাত দিয়ে আদ্রকে সরানোর চেষ্টা করছে।
আরুর কানের কাছে মুখ এনে আদ্র বলে উঠলো........আমার সুইট বউটা এতো নার্ভাস হচ্ছে কেনো শুনি? কিছুই করলাম না তার আগেই কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছো? তুমি জানো এই ভীত অবস্থাতে তোমাকে কত্তো কিউট লাগছে,মন চাইছে টুপ করে খেয়ে ফেলি।
আরু চোখ খুলে তাকালো আদ্রর দিকে আদ্র ওকে ছেড়ে ওর হাত ধরে বললো.........তোমার বরটা এতো খারাপ নয় গো ভয় পেয়ো না। তোমার অমতে আমি কিছু করবো না। শুধু!!
শুধু কি??
কিছুনা পরে বুঝবে।অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো।
আরু চুপচাপ বেডের একপাশে শুয়ে পড়লো। আরুর মনে যে ভয়টা বাসা বেধেছিলো তা আর নেই তারপরেও ও নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারছে না। হয়তো নতুন অনুভূতি নতুন সম্পর্ক তাই।
আরু অন্য দিকে ঘুরে শুয়ে আছে আদ্র মন খারাপের ভঙ্গিতে বললো.........হায় কি কপাল আমার? বিয়ে করলাম আজ বাসর রাত আর বউ আমার দূরে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। বউ এর কি একটুও মায়া দয়া নেই আমার উপর আর কিছু না হোক একটু জড়িয়ে ধরার চান্স তো দিতে পারে?
আরু মুচকি হেসে আদ্রর দিয়ে তাকিয়ে বললো........কিছু কিছু চান্স তো নিজেও নেওয়া যায়।
আদ্র যেনো আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে একটানে আরুকে নিজের বুকে এনে পরম আবেশে জড়িয়ে নিলো।
আরু লজ্জা পেয়ে আদ্রর বুকে মুখ লুকালো। গভীর ভাবে আদ্রর বুকের হার্টবিট উঠা নামার আওয়াজ শুনছে। আরুর মনে মনে এ জায়গাটা ওর জন্য খুবই শান্তির।
আরু সোনা এখন বলো আজকের সারপ্রাইজ গুলো কেমন লেগেছে?
অনেক অনেক ভালো লেগেছে যা আমি কল্পনাও করি নি তাই হয়েছে। ধন্যবাদ তোমাকে আমাকে এত্তো গুলো সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।
বরকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করো না গো বউ।
আচ্ছা আমার এই ছবি দুটো কখন কিভাবে তুলেছো?
সিক্রেট,বলা যাবে না। এখন ঘুমাও তো।
.
.
সকালে আরুর ঘুম ভাঙতেই নিজেকে আদ্রর বুকে আবিষ্কার করলো। মুখ তুলে আদ্রর মুখের দিকে তাকালো আদ্র ঘুমিয়ে আছে। কিছুটা লজ্জা লাগছিলো ওর সারা রাত এই বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে বলে।আরু মুচকি হেসে আদ্র গালে আলতো করে ঠোঁট ছোয়ালো। তারপর উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলো।
আরু চলে যেতেই আদ্র চোখ মেলে তাকালো নিজের গালে হাত রেখে মুচকি হাসলো।
আরুর যখন ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো ওর নড়াচড়াতে আদ্রর ও ঘুম ভেঙে যায় কিন্তু আরুকে বুঝতে দেয় না। তবে আরু যে নিজের ইচ্ছে এমনটা করবে আদ্র ভাবে নি।
আরু আকাশি রঙের একটা চুড়িদার পড়ে টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেড় হলো। বেডের দিতে চোখ পড়তেই দেখলো আদ্র হা করে তাকিয়ে আছে।
কি হলো কি দেখছো এভাবে??
আদ্র পলক না ফেলে বললো.........তোমাকে দেখছি! শাওয়ার নেওয়ার পর ভেজা চুলে কাউকে এতো সুন্দর আর পবিত্র লাগতে পারে আমার জানা ছিলো না। আমার সামনে যেনো একটা পরী দাড়িয়ে আছে।
হয়েছে এতো বলতে হবে না উঠো ফ্রেস হয়ে নাও।
কেনো বলবো না হুম? আমার বউকে আমি যা ইচ্ছে বলবো তাতে তোমার কি??
আমার কি তাইনা? দেখাচ্ছি।
আরু বেডসাইড টেবিল থেকে পানির জগটা হাতে নিতেই আদ্র বলে উঠলো.........
আরু জগ দিয়ে কি করবে আমার মাথা ফাটাবে নাকি আবার? ভুলেও এ কাজ করো না পরে তোমার উপর পুরুষ নির্যাতন মামালা হবে। তখন কি হবে বলোতো??
আরু মৃদু হেসে বললো.........বেশি বুঝে। আমি এই জগের পানি তোমার মাথায় ঢালবো যদি এখনি ওয়াশরুমে না যাও।
ওও এই কথা ঠিকআছে ঢালো,নো প্রবলেম।
আরু সত্যি এগিয়ে গেলো আদ্র বেড থেকে লাফিয়ে নেমে বললো........বিয়ে করেও দেখছি জালায় পড়লাম শুয়েও থাকতে দেবে ন।
আদ্র ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। আরু জগটা রেখে হাসতে হাসতে বিছানা গুছাতে লাগলো। আদ্র দরজা খুলে বললো........
আরু শুনো?
হুম বলো?
তুমি এ বাড়ির মেয়ে হলেও আজ নতুন একটা পরিচয় আছে এ বাড়ির বউ তুমি। তাই ড্রেসটা চেঞ্জ করে শাড়ি পড়ো আলমারিতে দেখো শাড়ি রাখা আছে পছন্দ মতো একটা পড়ে নাও।
আরু আদ্রর দিকে একটু তাকিয়ে থেকে হেসে বললো........
আচ্ছা।
আরু নীল রঙের একটা শাড়ি পড়ে চুলগুলো আঁচড়ে নিলো মুখে কোনো সাজ নেই।
আরু আদ্রর রুম থেকে বেড় হতেই অথই এর সামনে পড়লো। অথই আরুকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে বললো........
ভাবি তোমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে। তো শাড়িটা কে পড়িয়ে দিলো? তুমি তো শাড়ি পড়তে পারতে না।
পারতাম না তবে মনির থেকে শিখে নিয়েছি আর আমি নিজেই পড়েছি বুঝেছিস?
হু আমি আরো ভাবলাম হয়তো ভাইয়া পড়িয়ে দিয়েছে।
আরু চোখ পাকিয়ে বললো........তোর ভাইয়া পড়াতে যাবে কেনো হুহ,সে তো ওয়াশরুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
ঘুমায় নি গো জানু ওয়াশরুমে গিয়ে তোকে ভেবে কল্পনার জগৎ এ পাড়ি জমিয়েছে।
মনিকা আরু পেছন থেকে কথাগুলো বলে পাশে এসে দাড়ালো।
তোর মাথায় তো এসবই ঘোরে। মনি আমি কিন্তু এখনো ভুলি নি তুই কাল কিভাবে আমাকে টেনশনে ফেলেছিলি।
ওহো জানু তুমি মনে রেখেছো! আমি তো ভেবেছি নিজের ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে সব ভুলে গিয়েছো। তো কাল রাতটা কিভাবে কাঁটলো শুনি?
ঘুমিয়ে কেঁটেছে।
আরু নিচে নেমে গেলো মনিকা অথই এর দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট মুখ করে বললো.........
বুঝলি অথই আরুকে নিয়ে বিশ্বাস নেই ঘুমাতেই পারে। এ মেয়ে দেখতে যেমন আচরন ঠিক তার উল্টো, হয়তো আদ্র ভাইয়াকে কাছেই ঘেষতে দেয় নি।
No comments