তোকে_অনেক_ভালোবাসি------পর্ব_২২
বিকেলে ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমি মনিকা আর অথই। কাকিমা আমাদের জন্য কফি নিয়ে এসেছে। আমাদের সামনে কফির ট্রেটা রেখে বললো........
আরিশা আদ্র কোথায় গিয়েছে দুপুর থেকে দেখছি না?
আমাকে তো কিছু বলে যায় নি।আচ্ছা আমি ফোন দিচ্ছি।
সে কিরে আরু তোর বর কোথায় গেছে তুই জানিস না! কাকিমা এ কি বউমা ঘরে তুললেন যে আপনার ছেলের খোজ রাখে না?
মনিকা বাকা হেসে কাকিমাকে বললো। আমি জানি ও আমাকে ক্ষেপানোর জন্য বলেছে। কাকিমা হাসি মুখে বললো.......
মনিকা আমার ছেলের জন্য ঠিক বউ ঘরে এনেছি। মাত্র তো কাল বিয়ে হলো আস্তে আস্তে সব দিকেই খেয়াল হয়ে যাবে। কি বউমা তাইনা??
উফ কাকিমা আমাকে তুমি নাম ধরেই ডাকবে। নো বউমা।
আচ্ছা নাম ধরেই ডাকবো তবে একটা শর্ত আছে।
কি শর্ত??
আমাকে কাকিমা নয় শুধু মা বলে ডাকতে হবে।
আমি মুখ গোমড়া করে বললাম.......কাকিমা ডেকেই যে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।
অথই বলে উঠলো.........ভাবি তুমি কাকি টা বাদ দিয়ে মা বলবে তাহলেই তো হলো।
আমি চেষ্টা করবো।
আরিশা তোকে আমি নিজের মেয়ের মতোই ভাবি কখনো দেবরের মেয়ে বলে ভাবিনি আর এখন তো তুই আমার ছেলের বউ তাইনা। তবে আমার কাছে আমার সেই আগের আরিশা আমার মেয়ে হয়েই থাকবি। আমাকে মা বলে ডাকবি কেমন।
আমরা চেয়েছিলাম তোদের বিয়েটা আরো পরে দিতে কিন্তু সেদিন রাতে আদ্র এসে জেদ ধরেই বললো ও তোকে ১দিনের মধ্যে বিয়ে করতে চায়। তাই বাধ্য হয়ে কোনো অনুষ্ঠান না করে বিয়েটা দেওয়া হলো।
তাহলে আমাকে কেনো কিছু জানাও নি তোমরা??
আদ্র বারন করেছিলো জানাতে। তোর মা বলতে চেয়েছিলো আমি বলতে দেই নি। আরিশা তোর উপর কিন্তু এখন অনেক দায়িত্ব বিশেষ করে আমার ছেলের প্রতি।আমার ছেলেটা তোকে অনেক ভালোবাসে ওকে তুই ভালো রাখিস।
.
.
রাতে ডিনার করে মায়ের রুমে এলাম মা কারো সাথে ফোনে কথা বলছে আমাকে ইশারায় বসতে বললো। মা কথা বলে শেষ করে আমার পাশে এসে বসে হাসি মুখে বললো........
তোর মামা কল দিয়েছিলো তোর বিয়ের কথা শুনে খুব খুশি হয়েছে আদ্র আর তোকে নিয়ে যেতে বলেছে।
আমি শাড়ির আঁচলে আঙ্গুল পেচাচ্ছি কিছুই বলছি না দেখে মা মাথায় হাত বুলিয়ে বললো........
কি হয়েছে আরিশা মন খারাপ??
মা তুমি আর আব্বু খুশিতো আদ্র আমার বিয়ে হওয়াতে??
মা আমার মুখ নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বললো........আমরা খুব খুশি আমার মেয়েটা সুখি হলেই আমরা সুখি। আদ্র তোকে ভালোবেসে নিজের করে নিয়েছে তুই ও ওকে ভালোবাসিস। আমরা বাবা মা হয়ে তোদের মুখের হাসিটা কি করে কেড়ে নেবো বল। তাছাড়া আদ্রর মতো ছেলের হাতে তোকে তুলে দিয়ে আমরা নিশ্চন্ত আদ্র খুব ভালো ছেলে তোকে ভালো রাখবে। ওর চোখে তোর প্রতি যে ভালোবাসা দেখেছি তোর চোখেও তেমন টাই দেখেছি। দোয়া করি তোরা সুখি হ।
আমি মৃদু হেসে মাকে জড়িয়ে ধরলাম মা আমায় মাথায় হাত বুলিয়ে বললো........আরিশা মন খারাপ করে থাকবি না কখনো। তোর কাকিমা চাচ্চু তোকে ছেলের বউ নয় মেয়ে ভাবে উনাদেরকে সন্মান দিয়ে চলবি সব সময়। এখন রুমে যা সাড়ে ১০ টা বাজে,শোন হাসি খুশি থাকবি মন খারাপে আমার মেয়েকে একটুও মানায় না।
রুমের দরজা খুলতেই আদ্র হাসি মুখে বললো........আমার বউটার তার মায়ের আদর খাওয়া হয়েছে??
হুম হয়েছে। তুমি কি করে জানলে আমি মায়ের কাছে ছিলাম??
এটা কি বললে হুম তুমি না হয় আমার খোজ রাখো না তাই বলে কি আমিও তোমার খোজ রাখিনা ভেবেছো?
আমি এমন কিছু বলিনি। আচ্ছা কি বললে তুমি আমি তোমার খোজ রাখি না??
না রাখো না দুপুরে আমি কোথায় গিয়েছিলাম জানতে চেয়েছো একবারো??
হয়তো দরকারি কোনো কাজে গিয়েছিলে তাই জানতে চাই নি।
আদ্র আমার দুকাধে হাত দিয়ে বললো........হোক দরকারি কাজ তুমি জেনে নেবে বুঝেছো? তোমার জানার অধিকার আছে আমি কখন কোথায় যাই কি করি সবটা জানার।
আচ্ছা কাল থেকে সব জেনে নিবো। এখন আমি ঘুমাবো। মাথা ব্যাথা করছে।
সেকি আরু কখন থেকে মাথা ব্যাথা করছে? আমাকে আগে বলো নি কেনো? খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার? আচ্ছা আমি এখনি মেডিসিন নিয়ে আসছি।
আদ্র ভীত স্বরে বলছিলো সব সামান্য মাথা ব্যাথা শুনে এতোটা উতলা হয়ে উঠেছে! আদ্র এতো ভালোবাসে আমাকে! আমি উনার হাত ধরে বললাম.........
কোথাও যেতে হবে না সামান্য মাথা ব্যাথা ঘুমালে সেরে যাবে।
আদ্র আমাকে ধরে বেডে শুইয়ে দিলো। বাচ্চাদের মতো ঠোঁট কামড়ে আমার কপাল টিপে দিচ্ছে। উনার পাগলামো দেখে হাসি পাচ্ছিলো। আবার ভালো ও লাগছিলো উনি আমার এতো কেয়ার করে ভেবে।
সকালে ঘুম ভাঙতে যেনো নড়তে পারছি না বুকের উপর ভারী ভারী লাগছে। চোখ মেলে তাকাতেই আমি অবাক!! আদ্র আমাকে জড়িয়ে বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। উনার হাত দিয়ে আমাকে জাপটে ধরে আছে আর পা দিয়ে আমার পা পেঁচিয়ে রেখেছে। নিশ্বাস টাও নিতে পারছি না। আজব তো! কোলবালিশ ও তো কেউ এভাবে ধরে না।
নিজেকে ছাড়াতে চেয়ে আমি ব্যার্থ হাতটা কোনো ভাবে ছাড়ালেও পা ছাড়াতে পারছি না আর না পাড়ছি উনাকে তুলতে।
আদ্রকে ডাকলাম........আদ্র উঠো আমাকে এভাবে পেচিয়ে রেখেছো কেনো? দম বন্ধ হয়ে আসছে তো। আমাকে ছাড়ো উঠতে দাও।
আদ্র ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললো........আরু ঘুমাতে দাও তো। সারারাত তোমাকে দেখে ভোরের দিকে ঘুমিয়েছি।
উনার কথা শুনে আমি থ! বলে কি উনি সারারাত আমাকে দেখেছে! এ ছেলেকে যতটা সাদাসিধে ভেবেছিলাম ততটাও নয়। শয়তান হনুমান একটা। আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আমাকে দেখেছে ছি।
আদ্র একইভাবে জড়িয়ে রেখেছে উপায় না পেয়ে উনার চুল ধরে দিলাম টান। উনি আহ শব্দ করে আমাকে ছেড়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। আমি ছাড়া পেয়ে উনাকে ধাক্কা দিয়ে উঠে বেড থেকে নেমে দাড়ালাম।
আরু কি করলে এটা এতো জোরে চুল টানলে কেনো? আমার স্বাধের ঘুমটাও ভাঙিয়ে দিলে।
চুল টানবো না তো কি করবো। এভাবে জড়িয়ে রাখে কেউ না পারছিলাম নরতে আর না পারছিলাম ঠিক মতো দম নিতে। আর কি বললে স্বাধের ঘুম? চোরের মতো আমাকে দেখে তুমি স্বাধের ঘুম ঘুমাবে তা হবে না।
আজ থেকে আমি আমার রুমে গিয়ে ঘুমাবো তারপর দেখি কাকে সারারাত দেখো আর কাকে জড়িয়ে ঘুমাও।
আরু সোনা এমন অবিচার করো না গো। তোমাকে ছাড়া তো আমার ঘুম হবে না।
তাহলে জেগে থাকবে।
আরু ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। ওদিকে আদ্র অসহায় ভঙ্গিতে বলছে........দুদিনেই তুমি আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছো তোমাকে ছাড়া থাকাটা অসম্ভব। তুমি অন্য রুমে কি করে ঘুমাও আমি দেখবো।
.
.
সারা দিন ভালোই কেঁটেছে,রাতে ডিনার শেষ করে অথই এর সাথে আড্ডা দিয়ে উপরে এসে আমার রুমের সামনে এলাম। দরজা খুলতে চেষ্টা করছি পারছি না বাইরে থেকেই কেউ লক করে রেখেছে। এখন তো মা কে ও বলা যাবে না বললেই জানতে চাইবে এতো রাতে ওই রুমে কি করবি।
নিচে এসে গেস্ট রুমের ও দরজা লক পেলাম। এ তো মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে করেছে। কেউ বলতে এ কাজ আদ্রই করেছে। আমি অন্য রুমে থাকতে চেয়েছি তাই উনি আগে থেকেই লক করে রেখেছে সব রুম।
মনে মনে আদ্রকে হাজার টা বকা দিয়ে উপরে আদ্রর রুমে চলে এলাম।
আদ্র পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে ফোন টিপছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। উনার হাসি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছিলো। আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বললো........
কি হলো বউ কোনো রুম খোলা পাও নি বুঝি? শেষ পর্যন্ত এ রুমেই আসতে হলো।
আমি ঠিক ধরেছিলাম এটা তোমারি কাজ ফাজিল শয়তান হনুমান একটা।
বাহ আমার বউ আমাকে আদর করে এসব বলে ডাকছে আমার খুব ভালো লাগছে গো। আর কি কি নামে ডাকবে বলে ঠিক করেছো??
আমি উনার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে দরজাটা ঠাস করে বন্ধ করে বেডের একপাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। একটু পরে মুখ ঘুরিয়ে দেখি আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে এখনো হাসছে। কড়া গলায় বললাম........
আমার কাছে একদম আসবে না টার্চ ও করবে না যদি এলোমেলো কিছু করো তাহলে কাল থেকে সত্যি এ রুমে আর থাকবো না।
আদ্র বাকা হেসে বললো.........পাখি সারাদিন যেখানেই থাকুক না কেনো দিন শেষে তার নিড়েই ফিরতে হয়। আর তুমি তো আমার নিড়ের পাখি ফিরতে তো তোমাকে হবেই।
আরু কিছুই বললো না কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে গেলো। আদ্র যেনো ওর ঘুমানোর অপেক্ষাতে ছিলো আরু ঘুমিয়ে পড়তেই আদ্র আরুকে নিজের সাথে মিশিয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।
আরু সকালে ঘুম থেকে উঠার আগেই আদ্র ওকে ছেড়ে দূরে শুয়ে পড়লো।
এভাবেই ওদের দুষ্টু মিষ্টি খুনশুটি পূর্ণ ভালোবাসা চলতে লাগলো। আদ্র রোজ রাতেই আরুকে বুকে নিয়ে ঘুমায় আরু জেগে ওঠার আগেই বালিশে শুইয়ে দেয়। আরু প্রথম কিছুদিন বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারে। আরুর ও এখন আদ্রর বুকে ঘুমানোটা যেনো অভ্যাসে পরিনত হয়েছে।
ওদের দিন গুলো বেশ ভালোই কাটছিলো তবে আরু এখনো আদ্রকে তার পুরো অধিকার দেয়নি। এতে আদ্রর বিন্দু মাত্র অভিযোগ নেই তার আরুকে তো বউ হিসেবে পেয়েছে এটাও ওর বড় পাওয়া।
আদ্র মাস্টার্স শেষ করে এখন ওর বাবার কোম্পানিতে জয়েন করেছে। আরুও নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে।
আরু ভার্সিটি থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। হঠাৎ ওর ফোনের ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো।
আদ্র মাঝে মাঝেই আরুকে ম্যাসেজ করে তাই আদ্র ভেবেই আরু হাসি মুখে ফোন হাতে নিয়ে থমকে যায়।
আরুর হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায় শরীর ঘামতে শুরু করেছে। আরু উঠে বসে হাতের উল্টো পাশ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ফোন হাতে নিয়ে আদ্রর নাম্বারে কল দিলো।
No comments