তোকে_অনেক_ভালোবাসি------পর্ব_২০
ব্যালকনিতে বসে গান শুনছি আর ফোনটা নাড়ছি। মনিকা নিচে গিয়েছে আর আসে নি। আমি একবার রুম থেকে বেড় হতে চেয়েও বেড় হই নি। বাড়ির সাবার আচরন অন্য রকম লাগছে আজ নিচে গেলেই মাথার মধ্য একের পর এক প্রশ্ন ঘুরবে। ওসব প্রশ্নের চাপ না নিয়ে রুমে বসে থাকাই ভালো। এমনিতে আদ্র সব সময় বলে আমার বুদ্ধি নেই। এখন ওসব নিয়ে ভাবতে গেলে আমার মাথাটা আরো অকেজো হয়ে যাবে। আমি বরং গান শুনি এই ভালো।
দরজা নক করার আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলতে গেলাম মনি এসেছে হয়তো। এতক্ষণে ওর আসার সময় হলো।
কিন্তু না আমার ভাবনা পুরোই ভুল মনি আসেনি এসেছে আদ্র। আমাকে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকে বললো.......দরজা আটকে কি করছিলি??
কি আর করবো আমার বিয়েতে কি গানে ডান্স করবো সেটাই সিলেক্ট করছিলাম।
কথাটা আমি আনমনেই বলে জিভ কাটলাম। এ আমি কি বলছি! আরু আরু তোর মাথাটা একে বারেই গেছে দেখছি! উনি নিশ্চই এটা নিয়েও এখন মজা করবে। ধেত!
আদ্র মুচকি হেসে আমার দিকে মুখ এগিয়ে বললো.......বাহ আমার বউটা এতো ফাস্ট আগে থেকেই গান সিলেক্ট করছে!! তো শুধু গান সিলেক্ট করছিলি নাকি সাথে ডান্স প্র্যাকটিস ও করছিলি হুম??
আমি শুকনো হাসি দিয়ে বললাম........আসলে তেমন কিছু নয় আমি ভুলে ও কথা বলে ফেলেছি। আমি তো এমনি গান শুনছিলাম।
ওও তাই বুঝি! আচ্ছা মানলাম তবে যা একবার মুখ থেকে বেড় করেছিস সেটা তো করতেই হবে আরু সোনা।
মানে কি করতে হবে?
কি আবার ডান্স করতে হবে তাও আবার আমার সাথে। কাপল ডান্স। বলেই উনি চোখ টিপ মারলো।
আমি পারি না ডান্স করতে আর তোমার সাথে তো কখনোই না, ইম্পসিবল।
হুম দেখাই যাবে। আমার বাইরে অনেক কাজ যেতে হবে। শোন তুই রুমের থেকে একপা বেড় হবি না তোকে যেনো আমি এ রুমের দরজার বাইরে না দেখি।
কেনো বেড় হলে কি হবে?
আমি না করছি তুই বেড় হবি না যদি কেউ এসে বলে আমি যেতে বলেছি তখনি যাবি। একটু পরে মা এসে তোকে যা বলবে তাই করবি মাকে কোনো প্রশ্ন করবি না। যদি শুনি মুখ থেকে কোনো কথা বেড় করেছিস তাহলে মাইর একটাও নিচে পড়বে না তোর ওই মিষ্টি গালে পড়বে। বুঝেছিস??
আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে বললাম......হুম বুঝেছি।
কি বুঝেছিস বল??
কাকিমা যা বলবে সেটা করবো তাকে কোনো প্রশ্ন করবো না।
এই তো গুড গার্ল। আমার আরুর মাথাটা দেখছি কাজ করতে শুরু করেছে।
আদ্র আমার গাল টেনে চলে গেলো আমি হা করে তাকিয়ে আছি। মাথার মধ্যে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে সকাল থেকে এতো এতো প্রশ্ন জড়ো হয়েছে মাথায় কিন্তু আফসোস এখন পর্যন্ত কোনো উত্তরের দেখা মিললো না। মনিটা কি করছে কে জানে ও এলেও তো নিজেকে একটু শান্ত করতে পারতাম। রুমের বাইরেও তো যেতে পারবো না।কি করা যায়?? পেয়েছি মনিকে ফোন দিয়ে বলি উপরে আসতে।
কপাল খারাপ হলে যা হয় ফোন দিতেই বেডের উপর ফোন বেজে উঠলো মনির ফোনটা আমার রুমেই রেখে গিয়েছে।
.
.
কাকিমা কয়েকটা শপিং ব্যাগ নিয়ে আমার রুমে এলো সাথে মা মনিকা অথই ও এসেছে। মা এসেই আমার গালে হাত রেখে কিছু সময় ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে আমার কপালো ঠোঁট ছুইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। মায়ের হঠাৎ এমন আচরন দেখে বিষ্মিত চোখে চেয়ে আছি মনে হচ্ছে যেনো আজ আমার বিয়ে আর আমি দূরে চলে যাবো। বিয়ের কথা মাথায় আসতেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো মাকে বললাম........
মা হঠাৎ এভাবে আদর করছো কেনো আমাকে? তোমার চোখ ছলছল করছে কেনো?
মা মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো........আমার মেয়েকে আমি আদর করতে পারি না বুঝি। শোন না আমি যাই এখন।
মা তাড়াহুড়া করে বেড়িয়ে গেলো আমি মায়ের যাওয়ার দিতে তাকিয়ে আছি। কাকিমা আমার হাত ধরে টেনে বেডে বসালো। সবগুলো শপিং ব্যাগ আমাকে দেখিয়ে বললো........
আরিশা এ ব্যাগ গুলোতে শাড়ি আর কিছু জুয়েলারি আছে এসব পড়ে নে কেমন,মনিকা তোকে সাহায্য করবে। মনিকা ওকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিও।
আচ্ছা আন্টি।
আমি কিছু বলতে চেয়েও চুপ হয়ে গেলাম। আদ্র তো কাকিমাকে কোনো প্রশ্ন করতে বারন করেছে। কি আর করা বোবার মতো মুখ বন্ধ করে কাকিমাকে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম।
কাকিমা চলে যেতেই অথই এসে হেসে উঠে বললো.......দেখেছো মনিকা আপু ভাবির মুখে কোনো কথা নেই।
হুম আদ্র ভাইয়া হয়তো বোবা থাকার থেরাপি দিয়ে গেছে বুঝলি।
আমি দাঁত কটমট করে ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম.......আমি এত্তো কনফিউশনের মধ্যে আছি কিছুই ঢুকছে না মাথায় আর তোরা দাঁত কেলিয়ে হি হি করে হাসছিস!
আরু তোর মথাটা ঠিকঠাক ভাবে খাটালে তো কনফিউশন দূর হবে। আদ্র ভাইয়া ঠিকি বলে আসলেই মাথামোটা তুই।
আমি এবার নরম স্বরে মনিকাকে বললাম........মনি জানু আমার বলনা কি হচ্ছে এসব। কাকিমা এগুলো পড়তে বললো কেনো?
মনিকা আমার মাথায় একটা টোকা মেরে বললো.......আমাদের মুখ বন্ধ তোকে আমরা কিছু বলবো না এখন যেহেতু বুঝছিস না তাহলে আরো কিছুক্ষণ ওয়েট কর সব বুঝতে পারবি। এখন যা তো ফ্রেস হয়ে আয়। সাজাতে অনেক সময় লেগে যাবে। চার টা বাজে আদ্র ভাইয়া বলেছে সাড়ে পাঁচটার আগে তোকে রেডি রাখতে।
আরুকে টকটকে লাল রঙের বেনারসি পড়ানো হয়েছে। সাথে সিম্পল জুয়েলারি কারন আরুর ভারি জুয়েলারি পছন্দ নয়। আরুর টানা টানা চোখে মোটা করে কাজল, ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক আর হালকা মেক আপ এ অপ্সরীর মতো দেখতে লাগছিলো। আরু নিজেকে এমন সাজে দেখে ঠিক বুঝতে পেরেছে এটা বিয়ের সাজ। কিন্তু আরু অন্য কিছু ভাবছে আদ্রর বাবা বলেছিলো আদ্রর মাস্টার্স কমপ্লিট হওয়ার পর ওদের বিয়ে হবে। কিন্তু আদ্রর তো পরীক্ষা হয় নি এখনো তাহলে??আরুকে আয়নার সামনে বসিয়ে মনিকা দেখছে সব ঠিক আছে নাকি। অথই আরুর পেছনে দাড়িয়ে বললো........
বাহ আমার ভাবিকে কত্তো মিষ্টি দেখাচ্ছে। সো বিউটিফুল।
আরু উঠে দাড়িয়ে মনিকার দিকে তাকিয়ে বললো........মনি আমার এ সাজ দেখে বুঝতে পারছি এটা বিয়ের সাজ তারমানে আজ আমার বিয়ে তাইতো? তাহলে আমাকে কেনো কেউ কিছু বলছে না? আর এখনি তো চাচ্চু আমার আদ্রর বিয়ে দিতে চায়নি তাহলে কিভাবে সম্ভব??
হ্যা তোর বিয়ে আজ ঠিকি ধরেছিস। কিন্তু তুই এতো সিওর কি করে যে তোর বিয়েটা আদ্র ভাইয়ার সাথেই হবে?
মানে! এই মনি কি বলছিস তুই আদ্র আমাকে ভালোবাসে তাহলে আমার বিয়ে অন্য কারো সাথে হতে যাবে কেনো?
মনিকা দুষ্টু হেসে বললো.........আর কিছু সময় ধৈর্য রাখ সব বুঝতে পারবি।
মনিকা অথই বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। আমি বেডে বসে ভাবতে লাগলাম......আজ আমার বিয়ে আর আমিই জানতাম না! কত্তো প্লান ছিলো এই বিয়ে নিয়ে আর কি হলো এটা! এ কেমম বিয়ে! আচ্ছা মনি এটা কেনো বললো, আমার বিয়ে আদ্রর সাথে না হয়ে কার সাথে হবে? এসব ভাবতে ভাবতে আমি যেনো অন্য জগৎ এ হারিয়ে গিয়েছি। মনির ধাক্কায় হুস এলো।
.
.
মনিকা আমার চুলটা ঠিক করে বললো........আরু এখন তোকে নিচে যেতে হবে আদ্র ভাইয়া তোকে নিয়ে যেতে বলেছে।
মনিকার হাত ধরে বললাম.........মনি আমার কেমন ভয় ভয় লাগছে।
এখন বুঝতে পারছিস তো কেমন লাগে এই বিয়ের কথাটা মাথায় ঢুকলে। আমারো ঠিক এমনটাই হয়েছিলো তখন তুই মজা নিয়েছিলি। কিন্তু আমার না একটুও মজা করতে ইচ্ছে করছে না রে আদ্র ভাইয়া কতো ভালো ছিলো বল।
আমি চমকে উঠে বললাম........মনি আদ্র কোথায় উনি ঠিক আছে তো?বিয়ে কি অন্য কারো সাথে হবে বলনা মনি??
আরে আরে উত্তেজিত হচ্ছিস কেনো। এটুকুতে চোখেও পানি জমে গিয়েছে!এতো ভালোবাসিস তুই আদ্র ভাইয়াকে! আচ্ছা নিচে চল তো আগে।
মনিকা আমাকে নিয়ে সিঁড়ির কাছে আসতেই আমি অবাক হয়ে চারিপাশে দেখতে লাগলাম। সারা বাড়িতে লাইটিং করা আর ফুল দিয়ে সাজানো। আমি তো সকালেও নিচে এলাম তখন তো এর ছিটেফোটাও ছিলো না!! এসব দেখে আমি অবাক হলেও মুখে হাসি ফোটাতে পারছি না। যতক্ষণ আদ্রকে না দেখবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমার শান্তি হবে না।
নিচে আসতেই প্রিথা আপু আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমার গালে হাত রেখে বললো.........
আরিশা তোমাকে অনেক কিউট লাগছে আমি মেয়ে হয়েই তোমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি যদি ছেলে হতাম কি হতো ভাবতে পারছো।
আমি জোরপূর্বক হেসে এদিক ওদিকে তাকিয়ে আদ্রকে খুজতে লাগলাম। কোথাও নেই উনি। আব্বু এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে গেলো। বাড়িতে বাইরের কেউ নেই আব্বু মা কাকিমা চাচ্চু ফুপি অথই মনিকা প্রিথা আপু। প্রিথা আপুকে বললাম.........
আপু আদ্র কোথায় এখানে নেই কেনো উনি??
প্রিথা আপু কিছু না বলে চোখের ইশারায় বললো সিঁড়ির দিকে তাকাতে??
আমি সিঁড়ির দিকে তাকিয়েই থ আমার হার্টবিট যেনো কয়েক সেকেন্ড থেমে গিয়েছে!মনের অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। আদ্র শেরোয়ানি পড়ে নেমে আসছে। আমি অপলক তাকিয়ে আছি উনার দিকে প্রিথা আপু আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো.........
কি হলো আরিশা হারিয়ে গেলে নাকি?
আমি একটু কেঁপে উঠে চোখ নামিয়ে নিলাম। আদ্র আমার সামনে এসে দাড়ালো তখনি কয়েক রকম ফুলের পাঁপড়ি পড়তে লাগলো আমাদের উপর।
সাদাফ ভাইয়া আর তন্ময় ভাইয়া কিছু পেপারস আর দুজন লোক নিয়ে ভেতরে এলো। সাদাফ ভাইয়া আদ্রকে বললো..........
শালা আজ সকাল থেকে অনেক খাটিয়েছিস এর শোধ তুলবো দেখে নিস। সব রেডি এখন কবুল বলার জন্য প্রস্তুত হ। আর এই যে ভাবি এ ব্যাটা তো বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে কাল দুপুরে হঠাৎ করে বললো বিয়ে করবে। কি এমন করলে বলতো??
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না আর কি বা বলবো আমাকে তো আগে থেকে কিছুই জানানো হয় নি। তবে এটা সিওর বিয়ে আদ্রর সাথে হচ্ছে তাহলে মনি আমাকে ভয় দেখালো কেনো? এরকম মজা করার কোনো মানে হয়? ইচ্ছে করছে ওর চুলগুলো টেনে ছিড়তে। আমি মনির দিকে তাকাতেই ও ইনোসেন্ট ফেস করে আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো.........
জানু তুই এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো আমি তো একটু মজা নেওয়ার জন্য তোকে ওসব বলেছি। তুই কি ভেবেছিস আদ্র ভাইয়া তোকে অন্য কারো হতে দেবে।
আদ্র সাদাফকে বললো.........বন্ধুর জন্য যদি এটুকু না করিস তাহলে আর কেমন বন্ধু হইলি বল।
আদ্র আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো........ম্যাম সারপ্রাইজটা কেমন হয়েছে বলো?
একটুও ভালো নয় এটা কোনো সারপ্রাইজ হলো? উল্টে সারাদিন আমার টেনশন হয়েছে। আর এই মনি সে টেনশন আরো বাড়িয়ে দিয়েছিলো। ইচ্ছে করছে আগে ওই পেত্নীটার মাথা ফাটাই তারপর তোমার।
আদ্র হেসে বললো.........ঠিকআছে মাথা ফাটাবে না কি করবে পরে ভেবো এখন তো হাত রাখো আমার হাতে।
সাদাফ বলে উঠলো.........
আদ্র বিয়ে এখনো হলো না আর তুই আরুকে এখন থেকেই তুমি করে বলছিস! এত্তো প্রেম!!
বলতে তো হবেই তাই দেরি করে লাভ কি আগে থেকেই বলি।
অবশেষে আমার আদ্রর বিয়ে সম্পুর্ণ হলো। সত্যি আমি সারপ্রাইজড হয়ে গেছি! কখনো ভাবি নি এতো তাড়াতাড়ি বিয়েটা হয়ে যাবে। কিন্তু আদ্র সবাইকে কি করে মানালো সেটাই মাথায় আসছে না!
No comments