তোকে_অনেক_ভালোবাসি-------পর্ব_১৪
কেটে গেলো আরো একটি মাস। আজ থেকে পরীক্ষা শুরু আমার। বাড়িতে সবাইকে বলে আদ্রর সাথে বেড়িয়ে পড়লাম। আদ্র তিনমাস যাবৎ বিশেষ করে লাস্ট একমাস পড়া নামক টর্চার চালিয়েছে আমার উপর। অবশ্য আমিও মন দিয়ে পড়েছি জানিনা এর সুফল কতটা পাবো।
আজ বাংলা পরীক্ষা ছিলো খুবই ভালো হয়েছে প্রশ্নগুলো কমন ছিলো। মনিকা আর আমি পরীক্ষা শেষে কলেজ গেটের সামনে আসতেই আদ্র হাসি মুখে এগিয়ে এলো
আরু পরীক্ষা কেমন হয়েছে? সব প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক দিয়েছিস তো?
ভালো হয়েছে আর হ্যা সব ঠিকঠাক ভাবেই দিয়েছি।
ভাইয়া আরুর থেকে আপনার টেনশন টা দেখছি বেশি!
কি করবো বলো টেনশন তো করতেই হয়। তোমার বেস্টুটা কি রকম টাইপের মাথামোটা জানোই তো।
উনি কথাটা বলে হেসে উঠলো মনিকা হেসে বললো.....ভাইয়া আপনি ভুল কিছু বলেন নি।
আমি গাল ফুলিয়ে বললাম......আমারো সময় আসবে তখন আমিও বলবো হুহ। আমি মাথামোটা তাইনা? এই মাথামোটাকে ছাড়া তো থাকতেও পারো না। আর মনির বাচ্চা তুই উনার সাথে তাল মিলাচ্ছিস,আমিও সুযোগ পাই তোর বরের কাছেও তোকে নিয়ে বলবো দেখিস।
আমি গাড়িতে এসে বসে পড়লাম। মনিকা আদ্রকে বললো......ভাইয়া আপনার পাগলি তো ক্ষেপে গিয়েছে এখন কি হবে?
কিছুই হবে না আইসক্রিম চকলেট পেলে ওর রাগ হাওয়া হয়ে যাবে। তুমি বাড়ি যাবে তো চলো নামিয়ে দেবো।
না ভাইয়া আমি যেতে পারবো।
আরে চলো তো পরে তোমার বেস্টু এটা নিয়েও আমাকে কথা শুনাবে বলবে তোমাকে একা রেখে চলে গেলাম কেনো।
মনিকা এসে আমার পাশে বসলো আদ্র ড্রাইভার এর পাশে। ওদের সাথে একটাও কথা বলিনি।
.
.
একে একে সব পরীক্ষা শেষ হলো আজ নিজেকে ভীষণ ফ্রি লাগছে। এতদিন পরীক্ষা নামক প্যারাটা আমার মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে। আর আমার পেছনে ছড়ি ঘোড়ানোর জন্য মা কাকিমা তো আছেই আর আদ্র তো আরো আগে থেকে আছে। কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেস না হয়ে হাত পা ছড়িয়ে বেডে শুয়ে পড়লাম। মনে হচ্ছে অনেক ভারী কিছু মাথার উপরে ছিলো সেটা আজ নেমেছে। উফ কি শান্তি। কিন্তু আমার এ শান্তি হয়তো আমার মায়ের সইলো না হুরমুড়িয়ে রুমে ঢুকে বললো.....
আরিশা এসেই শুয়ে পড়েছিস কেনো? যা আগে ফ্রেস হয়ে নে।
উফ মা কতদিন পর একটু শান্তিতে শুয়ে আছি। তুমি যাও পরে ফ্রেস হবো।
তোকে এখন ফ্রেস হতে বলেছি এখনি যাবি ওঠ বলছি। খাবার খেয়ে এসে যতক্ষণ মন চায় শুয়ে থাকবি।
আমি এখন না উঠলে মায়ের বকবকানি থামবে না। কি আর করা উঠে পড়লাম। ফ্রেস হয়ে নিচে এসে খেতে বসলাম। কলিংবেল বেজে উঠলো। মা গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে হেসে বললো......
আরে নিশা তুমি! এতদিন পর মনে পড়লো আমাদের কথা।
আন্টি তোমাদের কথা আমার সব সময় মনে পড়ে। পড়াশোনা নিয়ে বিজি থাকি তাই আসতে পারি না। কেমন আছো তুমি?
আমি ভালো আছি ভেতরে এসো।
আমি খেতে খেতে হেসে বললাম......নিশা আপু আমি তো জানি খাওয়ার সময় শত্রু আসে। তুমি কি আমার শত্রু হতে চাও?
কি যে বলো তুমি তোমার শত্রু হবো কেনো। অবশ্য তোমার মতো মিষ্টি একটা মেয়ের শত্রু হলেও ক্ষতি নেই।
আমি হেসে উঠলাম নিশা আপুও হাসলো
আপু আমি কিন্তু মজা করে বলেছি কিছু মনে করো নি তো?
না না আমি কিছু মনে করি নি। আরিশা তোমার পরীক্ষা তো আজই শেষ হয়েছে তাইনা।
হ্যা আপু আজই শেষ হলো।
যাক ঠিক সময়ে এসেছি তাহলে। যে কদিন আছি এখানে তোমার সাথে মজা করে সময় কাটানো যাবে।
নিশা ওর সাথে পরে কথা বলো বাইরে থেকে এসেছো রুমে গিয়ে রেস্ট করো।
আন্টি আমি কিন্তু আরিশার রুমে থাকবো। আরিশা তোমার প্রবলেম হবে না তো?
না আপু কোনো প্রবলেম হবে না তুমি রুমে যাও। আমি খাবারটা শেষ করে আসছি।
আচ্ছা। আন্টি খালামনি অথই কোথায়?
তোমার খালামনি অথই এর স্কুলে গেছে চলে আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে।
ওহ ঠিকআছে খালামনি এলে ডেকো আমাকে।
নিশা আদ্রর খালাতো বোন। আদ্র আর নিশা সেম বয়সী। নিশা খুব মিশুকে একটা মেয়ে সব সময় হাসি খুশি থাকে। অথই আর আরিশাকে কখনো আলাদা করে দেখেনি।
.
.
রাতে আমি নিশা আপু অথই ব্যালকনিতে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আদ্র এসে আমার গা ঘেষে বসে পড়লো। অথই দেখেও কিছু মনে করলো না কিন্তু নিশা আপু কি ভাবে যেনো তাকালো। আমি সরে আসতে নিলে আদ্র আমার কোমড় চেপে ধরলো। ব্যালকনিতে লাইট জ্বালানো ছিলো না তাই হয়তো নিশা আপুর চোখে পড়ে নি। এদিকে আমি কিছু বলতেও পারছিলাম না। দাঁত চেপে চুপচাপ পাথর হয়ে বসে আছি। আদ্র ঠিকি হেসে হেসে নিশা আপু অথই এর সাথে কথা বলছে। আমি কিছু বলছি না দেখে নিশা আপু বললো......
আরিশা তুমি কিছু বলছো না কেনো? আর এভাবে স্ট্রেট হয়ে বসে আছো যে? কোনে নড়াচড়া নেই।
আদ্র বাকা হেসে বললো......নিশা আমার মনে হয় আরুকে পিঁপড়া কামড়েছে। হয়তো ব্যাথা পেয়েছে এ কারনেই চুপ থেকে ব্যাথাটা হজম করছে।
অথই বলে উঠলো......ভাইয়া পিঁপড়াটা কি বড় নাকি ছোট? এ পিঁপড়ার কি হাত পা আছে?
আমি অথই এর দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই ও বলে উঠলো......আপু তুমি এভাবে তাকাচ্ছো কেনো। ভাইয়া বললো পিঁপড়া কামড়েছে তোমার তাই তো জানতে চাইলাম সেটা বড় নাকি ছোট।
অথই এগুলো বলে মিটমিট করে হাসছে। নিশা আপু আপাততো চুপ আছে হয়তো কি বলবে বুঝতে পারছে না। আদ্র শব্দ করে হেসে বললো......অথই পিঁপড়াটা বড়, এ পিঁপড়ার হাত পা সবই আছে।
নিশা আপু ভীত ভাব নিয়ে বললো......আরিশা সত্যি তোমাকে পিঁপড়া কামরেছে! আমাকে আবার কামড়াবে না তো??
আমি হা করে নিশা আপুর দিকে তাকালাম! এ তো দেখছি আমার দলেরই! আদ্র পিঁপড়ার কথা বললো আর এ সেটাই বিশ্বাস করে নিলো!!
নিশা আপু এ পিঁপড়া সবাইকে কামড় দেয় না বুঝেছো। ওটা শুধু আরিশা আপুর কাছেই আসবে।
অথইটা যে বড় হয়ে গেছে তা আর বুঝতে বাকী নেই। এ মেয়ে তো আমার থেকেও উপরে থাকে। আর থাকবে নাই বা কেনো,আদ্রর বোন তো ভাইয়ের মত না হলে কি হয়। এদিকে আদ্র এখনো হেসে চলেছে। উনাকে তো কিছু বলতে পারছি না নিশা আপুর সামনে তাই অথইকে ধমক দিয়ে বললাম.......
অথই তুই কিন্তু বড্ড বেশি কথা বলছিস। আর একটা কথা মুখ থেকে বেড় করলে তোর মুখে আমি গ্লু লাগিয়ে দিবো।
নিশা আপু গালে হাত দিয়ে বললো......আমার না তোদের কথা মাথায় ঢুকছে না! এই আদ্র পিঁপড়ার ব্যাপারটা কি একটু বুঝিয়ে বলতো?
এখন আর বুঝতে হবে না সময় হলেই বুঝতে পারবি। অনেক রাত হয়েছে যা ঘুমিয়ে পড়। অথই তুই নিজের রুমে যা।
অথই চলে গেলো নিশা আপুও উঠে রুমে গেলো। আমি এখনো এভাবেই বসে আছি। আদ্র আমার কানের কাছে মুখ এনে বললো......
কি হলো আরু সোনা উঠছো না কেনো সত্যি সত্যি পিঁপড়ার কামড় খেতে ইচ্ছে করছে বুঝি??
তুমি না খুবই অসভ্য একটা লোক।
অসভ্যের কি দেখলে হুম এখনো তো কিছুই করিনি।
ধুর তোমার সাথে কথা বলাটাও ঠিক না। নিশা আপু রুমে আছে যাও এখন। এমনিতেই নিশা আপুর সামনে পাথর হয়ে বসে থাকতে হয়েছে। তার উপর তোমার বোন তো আছেই আস্তো একটা পাজি।
কিরে আদ্র আরিশার সাথে কি এতো ফিসফিসিয়ে কথা বলছিস?
নিশা আপু ভেতর থেকে কথাটা বলতে আমি আদ্রর পাশে থেকে উঠে গেলাম। আর উনি নিশা আপুকে বললো
ওইতো পিঁপড়ার ব্যাপারেই বলছিলাম। তাইনা আরু?
তুমি যাবে?
হুম যাচ্ছি তোর রুমে থাকতে আসিনি। নিশা না থাকলে একটা সুযোগ নেওয়া যেতো।
আদ্র বাকা হেসে বেড়িয়ে গেলো। আমার এতক্ষণ রাগ হলেই এখন হাসি পাচ্ছে উনার দুষ্টু সুলভ কথা গুলো ভেবে। ভালোবাসার অনুভূতি হয়তো এমনি হয়।রাগ অভিমাম ও অতি তুচ্ছ এই ভালোবাসার কাছে।
No comments