Header Ads

Header ADS

তোকে_অনেক_ভালোবাসি ------পর্ব_১৩

সামনে পরীক্ষা তাই এখন কোচিং বাদ দেওয়া যাবে না আর ফোন টা তো বিশেষ কেনো প্রয়োজন ছাড়া ধরাই যাবে না। এমন উপদেশ রোজই শুনতে হয় আদ্রর থেকে। আমার রেজাল্ট খারাপ হলে নাকি উনার সন্মান থাকবে না। আমি এটাই বুঝি না এখানে উনার সন্মান এলো কোথা থেকে! আমি উনার বউ হয়েছি নাকি এখনো? মাঝে মাঝে নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করে এটা ভেবে,কেনো বেছে বেছে ওই হনুমানটাকে ভালোবাসতে গেলাম আমি। সব সময় আরু এটা করবি না,ওখানে যাবি না,পড়া বাদ দিয়ে টিভি দেখছিস কেনো,ফোনে এতো কি করিস।উফ আমি বিরক্ত হয়ে গেছি উনার এমন অত্যাচারে!

বই হাতে নিয়ে বসে একা একাই বিড়বিড় করছিলাম অথই এসে পাশে বসে বললো......
কি ব্যাপার আপু রেগে আছো তুমি?একা একা কি বিড়বিড় করছো??
হুম রেগে তো আছি সাথে বিরক্তির চরম পর্যায় পৌছে গেছি।
বলো কি কার উপর রেগে আছো আর বিরক্তই বা কিসের??
তোর একমাত্র ভাইয়ার উপর রেগে আছি+বিরক্ত। ভালো লাগে না সব সময় পড়তে বলে। অথই তুই বল আমি কি খারাপ ছাত্রী??
না একদম নয়।
এইতো বনু তুই বুঝেছিস। কিন্তু তোর ভাই কে কিছুতেই বুঝাতে পারছি না আমি ভালো ছাত্রী এতো না পড়লেও চলবে।
হুমম বুঝলাম এবার আসল ব্যাপার। কিন্তু আপু ভাইয়া তো ভুল কিছু করছে না তোমার ভালোর জন্যই তো পড়তে বলে।
অথই তুই ও! এই যা এখনি বেড় হ আমার রুম থেকে। ভাই বোন দুটোই এক রকম।
অথই বেড় না হয়ে জোরে হেসে উঠলো তখনি কাকিমা এলো
কিরে অথই হাসছিস কেনো??
এমনি হাসছি।
এমনি কেউ হাসে নাকি। আর তুই এখানে কেনো আরিশা পড়ছে দেখিস নি? যা নিজের রুমে গিয়ে পড়তে বস।
অথই চলে গেলো কাকিমা দুধের গ্লাস আমার সামনে ধরে বললো.....আরিশা দুধ টুকু খেয়ে নে।
কাকিমা আমার দুধ খেতে ভালো লাগে না জানোনা তুমি??
হুম জানি তবে এখন ভালো না লাগলেও খেতে হবে নে ধর।
কাকিমা প্লিজ সরাও না। তুমি অন্তত তোমার ছেলের মতো আমার উপর অত্যাচার চালিয়ো না।
কাকিমা হেসে উঠে বললো.....আমার ছেলেটা খুব খারাপ তাইনা রে??
আমি কাকিমার দিকে তাকিয়ে চোখটা নামিয়ে বললাম.....উহুম খুব খারাপ নয় একটু খারাপ। দেখো না আমি একটু এলোমেলো করলেই বকে আমাকে। আর এখন তো সামনে পরীক্ষা,পেয়েছে এক পড়া দেখা হলেই বলবে আরু আজ কয়টা চ্যাপ্টার শেষ করছিস। এতো অল্প পড়লে হয়, বেশি বেশি করে পড়তে হবে এখন।
পড়ার কথা বলে তার জন্য আমার ছেলেটা একটু খারাপ তোর কাছে??
হুম।
তুই যদি এখন এই দুধটা না খাস তাহলে আমার ছেলেটা আরো একটু বেশি খারাপ হবে তখন ভালো লাগবে তোর?
আমি মুখটা গোমড়া করে কাকিমার দিকে তাকালাম। কাকিমা মুচকি হেসে গ্লাসটা মুখের সামনে ধরলো। অর্ধেকটুকু খেয়ে আর খেলাম না। কাকিমা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো......
আমার ছেলেটা তোকে অনেক ভালোবাসে তাই তো তোর উপর এতো অধিকার দেখায়। একটু মানিয়ে নিস মা। এখন পড় আদ্র যদি এসে দেখে তুই পড়ছিস না তখন বকবে তোকে।
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম কাকিমা চলে গেলো। আমি মুচকি হেসে ভাবছি.....মানুষ এতোটা ভালো হয়! কতো সহজ ভাবে কাকিমা আমাকে মেনে নিয়েছে। ছোট থেকেই কাকিমা আমাকে মেয়ের মতো ভালোবেসেছে। আর এখন আগের তুলনায় যেনো আমার প্রতি কাকিমার খেয়ালটা আরো বেড়ে গিয়েছে।
.
.
আরিশার আব্বু বড় চাচ্চু আদ্র কাকিমা ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে,আরিশার আব্বুর ফোন বেজে উঠলো উনি ফোন রিসিভ করে বললো
হ্যা আরিফ বল
আদ্র নামটা শুনেই চমকে উঠলো!! আরিফ নামের এই লোকটাই তো ওর আরুর বিয়ের ব্যাপারে বলেছিলো!! তাহলে কি সে বিষয়ে কিছু বলতে ফোন দিয়েছে?
লোকটি ফোনের ওপাশ থেকে কি বলছে শোনা যাচ্ছে না তাই আদ্র ওর চাচ্চুর কথা শুনতে মনোযোগ দিলো।
আরিফ ওই বিষয়ে আমি বাড়িতে এখনো কারো সাথে কথা বলিনি। তাছাড়া আরিশা তো এবার এইস এস সি দেবে। পরীক্ষার মাত্র একমাসের মতো সময় আছে। আমি চাইছি না এসব কথা ওর মাথায় ঢুকিয়ে ওর পড়াশোনাটা খারাপ করতে।
.................
আচ্ছা তুই রাখ আমি বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলে তোকে জানাবো।
আরিশার আব্বুর কথাতে আদ্র কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। কেনোনা উনি আরুর পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে কোনো সিদ্ধান্ত নিবে না। কিন্তু আরুর পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কি হবে? আদ্রর এখন এটা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। আদ্র আড় চোখে ওর মায়ের দিকে তাকালো। আদ্রর মা ছেলের তাকানো দেখেই বুঝতে পেরেছে উনি ইশারা করে বললো.....কিছু হবে না।
আদ্রর বাবা আরিশার আব্বুকে বললো.......আদনান কি নিয়ে কথা বলবি আমার সাথে আর আরিশাকে নিয়ে কি বলছিলি??
ভাইজান তোমাকে তো বলা হয়নি। আমার বন্ধু আরিফকে তো চেনো ওর বোনের ছেলের সাথে আরিশার বিয়ের কথা বলছে,ছেলে নাকি খুব ভালো ডাক্তারি পড়ছে।
আদ্রর বাবা ছেলের দিকে তাকালো,আদ্র নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। ছেলের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে উনি ভাইকে বললো......
আরিশাকে তুই এখনি বিয়ে দিতে চাইছিস? এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেল ওর এতটাও বয়স হয়নি যে এখনি বিয়ে দিতে হবে।
কিন্তু ভাইজান ছেলেটা ভালো ডাক্তারি পড়ছে। আমরা না হয় কথা বলে রাখি।
কোনো কথা বলতে হবে না। কোনো ছেলে ডাক্তারি পড়লেই সে ভালো হয়ে যায় না। আরিশার পরীক্ষা শেষ হোক তারপর তোর সাথে আমি এ বিষয় নিয়ে বসবো,তার আগে যেনো কোনো কথা না হয়।
ঠিকআছে ভাইজান তুমি যা বলবে তাই হবে।
আদ্র এতক্ষণ ওর বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। ও ভাবতেও পারেনি ওর বাবা এতো সহজে ব্যাপারটা ম্যানেজ করে নিবে। খুশিতে ওর চোখ ছলছল করে উঠলো। আদ্রর বাবা ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উঠে গেলো।
.
.
বিকেলে কোচিং থেকে ফিরে ব্যাগটা সোফায় রেখে গিয়ে ফ্রিজ খুললাম। ফ্রিজ খুলে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। প্রচন্ড গরম লাগছিলো ভেবেছিলাম আইসক্রিম খাবো,কিন্তু ফ্রিজে আইসক্রিম নেই। রেগে ফ্রিজটা জোরে আটকে মাকে ডাকতে লাগলাম.......
মা কোথায় তুমি।
মা রুম থেকে বেড়িয়ে বললো......কি হয়েছে এভাবে ডাকছিস কেনো??
ফ্রিজে যে আইসক্রিম রাখা ছিলো কোথায় সেগুলো??
আইসক্রিম কি আমি খাই যে আমাকে বলছিস। তুই হয়তো খেয়ে ফেলেছিস মনে নেই।
মা আমার খুব মনে আছে কাল দুপুরেও ২ বক্স আইসক্রিম দেখেছি ফ্রিজে। আর সেগুলো আমি খাইনি।
তাহলে হয়তো অথই খেয়েছে। ওকে আবার কিছু বলিস না তোর আব্বুকে বলবো এনে দিতে। এখন রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নে কোচিং থেকে এসে চেঁচানো শুরু করেছে বাচ্চাদের মতো।
কাকিমা তোমার মেয়ে বড় হয়েছে নাকি ও তো এখনো ছোট। দেখছো না আইসক্রিম না পেয়ে কেমন মুখ ফুলিয়ে রেখেছে।
আদ্র বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে মাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছিলো। আমি রাগি চোখে তাকাতেই উনি বলে উঠলো.....
দেখো কাকিমা তোমার মেয়ে আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি কিছু বলতে নিলে মা বললো......আরিশা আদ্র তোর বড় ওকে চোখ রাঙাচ্ছিস কেনো তুই। ও ভুল কি বলেছে তুই মাঝে মাঝে যা করিস মনে হয় অথই এর থেকে ছোট তুই।
.
.
আমার খুব রাগ হচ্ছিলো আদ্রর উপর উনি আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। আমি মুখ ভেংচি কেটে ব্যাগটা নিয়ে উপরে চলে এলাম।
রুমে এসে ব্যাগটা বেডে ছুড়ে ফেলে বসে পড়লাম বেডে। মনে মনে ওই হনুমানটাকে ইচ্ছে মতো বকছি। আমি নাকি বড় হইনি তাহলে প্রেম করতে কেনো এসেছে হুম? হনুমান, বিলাই, বজ্জাতের নানা একটা আমাকে সব সময় পড়া নিয়ে খাটিয়ে মারে আবার দাঁত কেলিয়ে মজা নেয়।
এইযে আরু সোনা আমাকে গালি দেওয়া শেষ হয়েছে তোমার??
আদ্রর গলা শুনে দরজায় তাকালাম উনি হাত ভাজ করে দরজায় হেলে দাড়িয়ে আছে। ঠোঁটের কোনে লেগে আছে মুচকি হাসি। যে হাসিটা আমার রাগ কমানোর একমাত্র ওষুধ। কিন্তু না এখন রাগ কমালে চলবে না। আমি রেগে বললাম......
কি চাই আপনার এখানে কেনো??
তুমি থেকে আবারো আপনি! ভালোই তো উন্নতি হয়েছে তোর।
বকবক না করে যান এখান থেকে। আমি তো ছোট তাইনা আসবেন না আর আমার কাছে।
আদ্র সামনে এগোতে এগোতে বললো......তোমার কাছে আসবো না তো কার কাছে যাবো বলো। তুমি ছোট হলেও তোমার কাছে আসবো বড় হলেও আসবো বুঝেছো?
উনি আমার দিকে এগোচ্ছে আমি বসা থেকে উঠে পিছাতে লাগলাম.......ঢোক গিলে বললাম
তুমি আমার দিকে এগিয়ে আসছো কেনো??
বাহ আমার এগোনোটা তো বেশ কাজে দিয়েছে আপনি থেকে তুমিতে চলে এসেছে আবার।
আমি দেওয়ালে পিঠ ঠেকে দাড়িয়ে পড়লাম উনি আমার খুব কাছে চলে এসেছে। আমি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। উনি আমার কপালে নিজের ঠোঁট ছোয়ালো। কেপে উঠে চোখ মেলে তাকাতেই উনি দুষ্টু হেসে বলতে লাগলো.......
কি যেনো বলছিলি তখন,আমি হনুমান,বিলাই,বজ্জাতের নানা?
ককই নাতো এ ক কথা বলিনি আমি।
কিন্তু আমি তো শুনেছি তুই এসবই বলেছিস। থাক ব্যাপার না বাচ্চা তো বলতেই পারিস তাইনা?
আমি উনাকে ঠেলে সরিয়ে বললা.....আবারো বাচ্চা বললে আমায়! যাও কথা বলবো না তোমার সাথে। আমি এখনি গিয়ে কাকিমার কাছে বিচার দিবো।
আদ্র শব্দ করে হেসে বললো......এইতো তুই যে এখনো বড় হসনি তার আরো একটা প্রমাণ দিলি। মায়ের কাছে বলবি কেনো হুম।
কেনো বলবো না তুমি তখন থেকে মজা করে যাচ্ছো আবার দাঁত কেলিয়ে হাসছো। আমার রাগ হয়েছে বুঝতে পারছো না?
খুব বুঝতে পেরেছি তার জন্যই তো আমার আরু সোনার জন্য চকলেট আইসক্রিম নিয়ে এসেছি।
চকলেট আইসক্রিম এর কথা শুনে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো আদ্রর কাছে গিয়ে বললাম.....কই ওগুলো দাও আমায়।
দিবো তার বিনিময়ে আমি কি পাবো শুনি??
উমমম তোমাকে একটা চকলেট খেতে দিবো।
আদ্র কপালে হাত দিয়ে অসহায় ভঙ্গিতে আস্তে আস্তে বললো.....লোকে ঠিকি বলে বয়স কম মেয়েদের প্রেমে পড়তে নেই আর সে যদি ছোট বাচ্চাদের মতো চকলেট আইসক্রিম খেতে পছন্দ করে তাহলে তো তার ধারে কাছে যাওয়াটাও উচিৎ নয়। হাহ,কি ভাগ্যে আমার জেনে শুনে এই পাগলিটার প্রেমে পড়লাম!এখনো তাকে বুকে জড়িয়ে নিতেই পারলাম না!
কি বলছো জোরে বলো?
কিছুই বলছি না। একটু ওয়েট কর আমি আসছি।
আদ্র হাতে একটা পলিব্যাগ এনে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো....আইসক্রিম চকলেট আছে খেয়ে নিস। আমি একটু পরে আসবো এসে যেনো দেখি পড়তে বসেছিস।
আমি তো আইসক্রিম চকলেট পেয়ে মহা খুশি। উনি কি বলছে সেদিকে খেয়াল নেই।
ব্যাগটা হাতে নিয়ে আমি চট করে আদ্রর গালে কিস করলাম। হঠাৎ এটা করায় আদ্র গালে হাত দিয়ে চোখ বড়বড় করে তাকালো। উনি এভাবে তাকানোতে আমি বুঝতে পারলাম কি করেছি আমি। লজ্জা পেয়ে আমি মাথা নিচু করে নিলাম। ইসস উনি কি ভাবছে কে জানে! চোখ তুলে তাকাতেও পারছি না।

No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.