Header Ads

Header ADS

#হৃদমাঝারে_তুমি_ছিলে❤ ----পর্ব ৫

-''আমাদের না বলে পঞ্চগড়ে কোন মেয়ে পালিয়ে নিয়ে আসতে গিয়েছিলে তুমি?''

রহমান সাহেবের থমথমে গলায় কেপে উঠল মাইশা। সকল সাহস যেন নিমিষেই হাওয়ায় উড়ে গিয়েছে। পাশে শারমিন বেগন ক্রোধ চোখে তাকিয়ে আছেন মেয়ের দিকে। জোয়ান মেয়ে হলেও বন্ধুবান্ধবদের সাথে এভাবে হুট করে যাওয়া মোটেও পছন্দ করেননি তিনি।দক্ষিণ দিকের বড় জানালা দিয়ে হুড়হুড় করে বাতাস বইছে।জানালার সাথে লাগোয়া পাতাবাহারের ঝোঁপে একপলক তাকালো মাইশা।অন্য সময় মুগ্ধতার চোখে সেখানে তাকালেও এখন চিন্তা নিয়ে সেখানে তাকিয়ে আছে।
--''তোর আব্বু কিছু বলছে মাইশা?কথা বলছিস না কেন?''
শারমিন বেগমের ক্রোধিত কন্ঠে মাইশার হুঁশ ফিরে। ও জানতো যে বাসায় এলে এরকম কোনো পরিস্থিতিই হবে। আব্বুকে বলে ও পঞ্চগড় গিয়েছিলো ঠিকই তবে মেয়ে পালিয়ে নিয়ে আনবে এটা কাউকে বলেনি। গতকাল ভুলবশত আম্মুর ফোন রিসিভ হয়ে যাওয়াতে আম্মু সব ঘটনা বুঝে ফেলে। মাইশা আমতা আমতা করে বললো,
--''পৃথাকে নিয়ে আসতে গিয়েছিলাম?''
--''কোন পৃথা?''[শারমিন বেগম]
--'' মিরপুরে যে ওর খালামণিদের বাসায় থাকে।আমাদের সাথেই পড়াশোনা করে।''
--''লাজ শরম কি খেয়ে ফেলেছিস তুই? কি হিসেবে বিয়ের আসর থেকে একটি মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে আনলি? এটাই তোর শিক্ষা?''
--''আম্মু তুমি ভুল বুঝছো? ওর বাবা-মা ওকে জোর জবরদোস্তি ৪৪ বছরের এক বুইড়ার সাথে বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে ছিলো। আর তাই..........''
--''আর তাই বিয়ের আসর থেকে এক মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে আসার মতো মহৎ কাজ করেছো তুমি তাই না?''
বলে ওঠলেন রহমান সাহেব। মাইশা নিশ্চুপ। শারমিন বেগমও বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছেন ওর দিকে। এ বয়সের ছেলে-মেয়েরা খুব ভিন্ন প্রকৃতির হয়।নিজের সকল সিদ্ধান্তকেই ওরা সঠিক আর বিবেকসম্পন্ন মনে করে। শারমিন বেগম দুর্বল গলায় বললেন,
--''মেয়েটা এখন কোথায় আছে?''
--''ওর খালামণির বাসায়।''
--''ওদের বাড়িতে ঝামেলা হবে নাতো?যদি মেয়েটার খালামণি ওর পরিবারকে জানিয়ে দেয়?''
--''এ নিয়ে টেনশন করোনা।''
মাইশার মলিন গলায় শারমিন বেগম নিরাশ হলেন। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলেন,
--''তোর এভাবে চলাফেরা করাটা উচিত না রে। বন্ধু-বান্ধব যেন সুদের মতো তোর জীবনে চকবৃদ্ধিহারে বাড়ছে। আর পারলে ছেলে সঙ্গ থেকে দূরে থাকিস। এমনকি আনান আর সামাদ থেকেও।মানছি ওরা তোর কলেজ লাইফের বন্ধু তবুও সমাজ একটা কথা বলে, ''ছেলে আর মেয়ে কখনও বন্ধু হয়ে থাকতে পারে না।''
একথা বলেই শারমিন বেগম নিঃশব্দে চলে গেলেন। মাইশা এখনও ব্যাগ কোলের মধ্যে রেখে মাথা নিচু করে বসে আছে।দক্ষিণা হাওয়াটা হুট করেই যেন শব্দহীন হয়ে গেলো। পুরো ঘরটিতে রইলো মৌনতা। রহমান সাহেব হালকা কাশলেন। বড় ছেলে নুহাশ আর মাইশার একই রকম বৈশিষ্ট্যগুলোতে তিনি বারবার নিরাশ হলেও মেয়েটাকে বড্ড ভালোবাসেন তিনি। রহমান সাহেব এগিয়ে মাইশার মাথায় হাত রাখলো.
--''মাইশা মামণি?''
আব্বুর এই স্নেহের ডাকটা মাইশার অজস্র অভিমানের বাঁধ ভেঙে দিতে পারে। কোমল কন্ঠে সেদিকে না তাকিয়েই বললো,
--হুম?
--''তোমার আম্মুর মতো তোমায় কখনোই কোনো কাজে আমি বাধা দেই নি। নুহাশের মতো তোমাকেও পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি আমি । কখনও কোনো কৈফিয়ত দিতে বলিনি। আজও বলবো না। বলবো না যে আনান বা সামাদের সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করো। তবে একটা কথা দিতে হবে।''
--''কি কথা?''
রহমান সাহেব মাইশার কাছে বসলেন। মেয়েটা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে বাবার তীক্ষ্ণ চাহিনীর দিকে। রহমান সাহেব বললেন,
--''জীবনে এমন কোনো কাজ করবে না যাতে একবারের জন্যও আমার মনে হয় যে তোমায় স্বাধীনতা দেয়াটা আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো। কখনোই যেন তোমার জন্য আমাকে, তোমার মা আর বড় ভাইকে অপমানিত হতে হয়। আশা করি এমন কোনো কাজ করবে না।''
মাইশা হতভম্ব হয়ে রইলো রহমান সাহেবের এমন কথায়। বাবাকে এতটা গুরুগম্ভীর কখনোই মনে হয়নি যতটা আজ মনে হয়েছে । মাইশা মুচকি হাসলো। বাবার হাতে হাত চেপে বললো.
--''তোমার কথা কখনোই আমি অমাণ্য করবো না। এমন কোনো কাজ করবো না যাতে তোমায় কষ্ট পেতে হয়।কথা দিলাম।''
রহমান সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। আদুরে গলায় মাইশাকে বললেন,
--''যাও। রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও।''
--------------------------------------


রাত নেমেছে অনেক। আবাসিক এলাকা বিধায় আশপাশে কেমন যেন নিস্তব্ধতা।রাতের আকাশটি কুয়াশার আবরণে আবদ্ধ। ছাদের ছোট ঘরে ল্যাপটপের মধ্যে নেটফ্লিক্সে চারলি চ্যাপলিনের একটা মুভি চলছে। আশপাশে কোকের বোতল, ফুডপ্যান্ডার পার্সেলের খোলা প্যাকেট আর আধোয়া প্েলট পড়ে আছে। সেদিকে মাইশার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। টেবিল ল্যাম্পটা একবার অন করছে তো একবার অফ করছে।
আজ ৪ দিন হয়ে গেলো মাইশা ঢাকা এসেছে কিন্ত নিজের মধ্যে বিরাট একটা পরিবর্তন দেখে মাইশা অবাক হয়ে যায়। এই কয়েকদিনে একটিবার শুধু পৃথার সাথে দেখা করার জন্য বেরিয়েছিলো তারপর একবারও না। এর কারন ওর অজানা। শুধু এতটুকু জানে আয়াতের ছেলেটার স্মৃতি মাছির মতো ওর মাথায় ভনভন করছে। সেদিন বিকেলে আয়াতের সাথে রাগারাগির কথা মনে করে লজ্জাও লাগছে বটে। কানের মধ্যে তরঙ্গের মতো বাজছে আয়াতের শেষ কথাটা,
--''আই লাইক ইউর ম্যাডনেস !''

No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.