নিয়তি( এ কেমন ভালবাসা)----পর্বঃ ১৬
রেষ্টুরেন্ট থেকে খাওয়া করে রাস্তায় বের হওয়ার পর হঠাৎ করে একটা গাড়ি খুব স্পিডে শামীমের দিকে সেই সময় চাঁদ শামীম কে সরিয়ে দিলে সেই গাড়ি চাঁদ কে এমন জোড়ে ধাক্কা মারে চাঁদ সেখান থেকে প্রা বিশহাত দুরে ছিটকে পরে। প্রায় উড়ে গিয়ে পরে আর সাথে সাথে চাঁদের মাথা ফেটে যায় আর হাত পা প্রায় ভেঙ্গে যায়। পুরা রাস্তা রক্তে ভিজে যায় শামীম সেখানে স্তব্ধ হয়ে যায়, কি ঘটলো সে বুঝতেই পারলো না। চাঁদ ভাঙ্গা ভাসিয়ে শামীম কে ডাকতেছে ততক্ষণে চারদিকে মানুষ ভেসে ছেগে। সব মানুষ ইশ আহা রে কি হলো মানুষ এমন করে গাড়ি চালায় রেষ্টুরেন্টের মানুষ গুলো বলতেছে এই তো মাত্র খেয়ে বের হলো। শামীম আর থাকতে না পেরে দৌড়ে চাঁদের কাছে চলে যায়।
চাঁদঃ খুু...ব ই.... চ্ছা ছি... লো তো.... মার ব......উ হবো কি... ন্তুন.... উপর ওয়ালা আমা......কে তা হ.....তে দিলো না কলি.....জা। ( ভাঙ্গা গলায়)
শামীমঃ তোমার কিছু হতে দিবো না চাঁদ তুমি আমার ঘরে আমার বউ হয়ে আসবে কিচ্ছু হতে দিবো না।(কেঁদে)
চাঁদ তার রক্ত মাখা হাত শামীমের বা গালে রেখে
চাঁদঃ খু... ব ইচ্ছে ছি..... লো হা......তে পা...য়ে লাল রঙ ক..... রবো দেখ আ.....জ সত্যি লাল র....ঙ প....রে....ছি।
শামীমঃ এসব বলো না চাঁদ আমার ভিশন কষ্ট হচ্ছে এ ভাই কেউ একটা গাড়ি থামান আমার প্রাণ টাকে বাঁচাতে হবে আপনাদের পায়ে পড়ি ভাই দয়া করেন। এই তৃপ্তি দেখ না গাড়ি চাঁদ কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। ( চিৎকার করে কেঁদে)
আশেপাশে সবাই গাড়ি থামানোর চেষ্টা করতেছে কিন্তু কোন গাড়ি থামতেছে না।
চাঁদঃ বৃ..... থা চে....ষ্টা ক....রো না কলিজা আ....মি আর তো....মা...র মা... ঝে.... থাক....বো না. এ....কটা ক...থা রা...খবে আ...মার।
শামীমঃ কি কথা বলো জীবন আমার বলো।
চাঁদঃ লালা বে...না র...শি টা আমার গা...য়ে জ...রি...য়ে দি...বে।
শামীম সাথে সাথে তৃপ্তির কাছ থেকে শপিং ব্যাগ থেকে লাল বেনারশি বের করে চাঁদের গায়ে জরিয়ে দিলো।
চাঁদঃ আ....মা...কে ক....থা দা...ও আ....মার জ....ন্য কাঁ...দ...বে না। তুমি ভা....লো ভা......বে থা...ক...বে, কো...ন কষ্ট সহ্য কর...বে না?
তৃপ্তিঃ ভাইয়া এখন কথা না বলে ভাবি কে নিয়ে হাসপাতালে চল।
চাঁদঃ থা...ক তৃ...প্তি, কলিজা আ...মা.... কে এ...কটু..... জ..রিয়ে ধরো না।
শামীম সাথে সাথে চাঁদ কে জরিয়ে ধরলো আর কাঁদতে থাকলো।
চাঁদঃ অনেক ইচ্ছা ছিলো তোমার এই বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো। অনেক ইচ্ছা ছিলো আমার কলিজা টাকে সব সময় হাসি খুশি রাখবো। অনেক ইচ্ছা ছিলো তোমাকে সারাজীবন ভালোবেসে যাবো। কলিজা আমাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরো। অনেক ইচ্ছা ছিলো আমাদের সুন্দর একটা সংসার হবে তা আর হলো না। হয়ত উপর ওয়ালা চায় নাই।( প্রত্যেকটা কথা আটকে বলল)
শামীম চাঁদ কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে আর নিজের গায়ের শার্ট খুলে চাঁদের মাথা বেঁধে দেয় যাতে রক্ত বন্ধ হয়। শামীম শার্ট বেঁধে দেওয়ার সাথে সাথে শার্ট রক্তে ভিজে গেলো। কোলে করে নিয়ে দৌড়াতে থাকলো আর বলতে থাকলো তোমার কোন হতে দিবো না জীবন কোন হতে দিবো না। প্রায় ৪০ মিনিটের মত দৌড়ে অনেক দুরে চলে এসেছে শামীমের পিছন পিছন তৃপ্তিও দৌড়াতে থাকলো। এক সময় চাঁদ শামীমের গলা থেকে দুহাত ছেড়ে দিলো আর হাত দুটো নিচে ঝুলতে থাকলো শামীম দৌড়া বন্ধ করে দিয়ে চাঁদের মুখে জাত দিয়ে
শামীমঃ এই চাঁদ কথা বলো এই চাঁদ কি হলো আমরা তো প্রায় চলে এসেছি দেখ না চোখ খোল তোমার কিছুই হবে না এই তো তোমাকে জরিয়ে ধরেছি। ওই জীবন আমার আমাকে কি তুমিও কষ্ট দিতে চাও( খুব করে কেঁদে)
তৃপ্তি চাঁদের পালস চেক করতে লাগলো।
তৃপ্তিঃ ভাইয়া রে ভাবি আর বেঁচে নাই( কেঁদে)
শামীমঃ তুই মিথ্যা বলতেছিস চাঁদ আমাকে কথা দিয়েছিলো সে আমাকে ছেড়ে কখনও কোথাও যাবে।(চাঁদ কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে)
তৃপ্তিঃ সত্যি বলতেছি ভাইয়া।
শামীমঃ তুই তো ডাক্তার ভালো করে দেখ না বোন, দেখ ও আমার সাথে মজা করতেছে। ও এরকমই সব সময় আমার সাথে এমন করে। বোন তোর পায়ে পড়ি আমার জীবন কে বাঁচিয়ে দেনা, দরকার হলে তোর গোলাম হয়ে থাকবো।
তৃপ্তি সাথে সাথে ওর ভাইয়া কে জরিয়ে ধরলো আর কাঁদতে রাগলো আশেপাশে মানুষ এসব দৃশ্য শুধু দেখতে লাগলো কারো মুখে কোন কথা নাই। অনেকে শামীমের কথা শুনে কেঁদে ফেললো।
তৃপ্তিঃ ভাইয়া আমি সত্যি বলতেছি।
শামীমঃ আমি তোর কোন কথাই বিশ্বাস করি না। আমি ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো।
শামীম আবারো চাঁদ কে নিয়ে দৌড়াতে থাকলো হাসপাতালের উদ্দেশ্য। চাঁদ কে শামীমের কোলে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে সবাই শামীমের কাছে দৌড়ে চলে আসলো। সবাই বলা বলি করতেছে কেমন করে হলো এসব? কিভাবে হলো? অনেকে আবার এসব দৃশ্য দেখে কাঁদতে লাগলো।
বাদলঃ শামীম চাঁদের কি হইছে চাঁদ ওভাবে তোর কোলে রক্তাক্ত অবস্থায় আছে কেনো?
ননী গোপালঃ কিরে শামীম বল কি হলো এসব।
তৃপ্তিঃ রাস্তায় এ্যাকসিডেন্ট করেছে আর চাঁদ ভাবি বেঁচে নেই কিন্তু ভাইয়া বিশ্বাস করতেছে না।
বাদলঃ না আমার বোন মরতে পারে না আমার বোন বেঁচে আছে শামীম চল বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো চাঁদ কে।
তারা বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়, তিনিও বলে অনেকক্ষণ আগেই চাঁদের রুহু ওর প্রাণ থেকে বের হয়ে গেছে। শামীম সেখানেই বসে পরে আর আহাজারি করে কাঁদতে থাকে। তৃপ্তি বাদল ননী গোপাল আরো অনেকে শামীম কে থামানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। তারপর চাঁদ কে আনজুমান মফিদুল ইসলাম বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে দাফন করা হয়। তার কারণ হলো চাঁদের তো কেউ নাই আর এখানে যারা আছে তারা সবাই বাইরের। শামীম চাঁদের কবরের পাশে বসে কাঁদতেছে আর বলতেছে।
শামীমঃ এ খোদা, আমি কি এমন অপরাধ করেছি যার কারণে আমার কাছ থেকে আমার প্রিয় জন কে তুমি নিয়ে নাও এটাই কি আমার #নিয়তি? এ কেমন ভালোবাসা খোদা যাকে চাই সেই আমাকে ছেগে চলে যায়? আমি তো ধন সম্পদ গাড়ি বাড়ি কিছুই চাইনি চেয়েছি শুধু ভালোবাসা এটা কি আমার কপালে লেখা নাই। আর নসীবে কি এসব লিখে দিয়েছো জন্মের সময়। এই চাঁদ তুমি না বলেছিলে আমাকে কষ্ট পেতে দিবে না সব সময় আমার পাশে থাকবে। চাঁদ দেখ না আমার আজ খুব কষ্ট হচ্ছে এতদিন মানুষ যত আঘাত দিয়ে আমাকে কষ্ট দিতে পারে নাই তার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে। এই চাঁদ এখন আমার মন খারাপ হলে কে মনটাকে ভালো করে দিবে। আমি যে আর ভালো থাকতে পারবো না আবারও যে আগের মত হয়ে যাবো। এই চাঁদ কে বলবে চল বিয়ে করি, আমি খুব খারাপ তাই তো তোমার ইচ্ছা টা পূরণ করে দেই নাই।
বাদলঃ আর কাঁদিস না, তোর মত যে আমারো অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমাকে বা আর কে দাদা বলে ডাকবে। কার জন্য স্যারের কাছে গিয়ে বলল একজন আসে নাই একটু পরে এসে কাজ করবে। আমার নিজের বোনের চেয়েও যে বেশি আপন ছিলো সে।
ননী গোপালঃ কে আমাদের কে আর হাসাবে বাদল, কে আমাদের সাথে ফাঝলামো করবে।
সবাই কাঁদতে লাগলো, তৃপ্তির নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী লাগতেছে সে যদি আজ বিয়ের শপিং করার করার কথা না বলতো।
তারপর ডাক্তার স্বপন ওদের তিনজন কে বুঝিয়ে সুজিয়ে ওদের বাসাতে নিয়ে যায়। শামীম প্রতিদিন চাঁদের কবরে পাশে এসে কাঁদে আর চাঁদ চাঁদ বলে ডাকতে থাকে। একদিন রাতে চাঁদ শামীমের স্বপ্নে এসে বলতে থাকে।
চাঁদঃ কলিজা তোমার কাঁন্না আমার সহ্য হয় না, আর আমি সেখানে অনেক ভালো আছি। তুমি কান্না করলে ভিশন কষ্ট হয় আমার, পারলে আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করিও আমার তো আপন বলতে তুমি ছাড়া কেউ নাই। আর হ্যাঁ হাসরের ময়দানে উপর ওয়ালার কাছে না হয় তোমাকে চেয়ে নিবো।
শামীমঃ আমি আর কাঁদবো না জীবন তোমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবো তিনি যেনো তোমাকে জান্নাত বাসী করে।
চাঁদঃ তাহলে আমি আসি তুমি কিন্তু নিজের খেয়াল রাখবে। এখন তো আমি থাকবো না তাই তুমি সবার মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করবে। বাদল দাদা আর ননী গোপাল কে আমার জন্য কাঁদতে মানা করবে। আর শোন তৃপ্তি মনে করে আমি তার জন্য মারা গেছি তাকে বলবে আমার হায়াত শেষ হইছে বলে আল্লাহ আমাকে তার কাছে নিয়ে গেছে। আর কখনও আসতে পারবো না আমি গেলাম ভালো থেকো।
শামীমঃ চাঁদ যেও না আর একটু থাকো না। চাঁদ ( জোড়ে চিৎকার করে বিছানা থেকে উঠে)
যথারীতি শামীম সবাই কে বলে চাঁদের জন্য দোয়া করতে আর কাঁদতে মানা করে। তারপর তৃপ্তি কে অনেক বুঝিয়ে স্বাভাবিক করে শামীম। শামীম এখন প্রতিদিন চাঁদের কবর জিয়ারত করে আল্লাহর কাছে চাঁদের জন্য ক্ষমা চায়। প্রতি ওয়াক্ত নামাজে চাঁদের জন্য চোখের জল ফেলে আর ক্ষমা চায় শামীম। শামীম যে ভালো আছে তা কিন্তু না কাউকে কোন বুঝতে দেয় না। দেখতে দেখতে তিনমাস চলে যায়, তৃপ্তির রেজাল্ট বের হয় সে ভালো রেজাল্ট করেছে এবং তাকে আবারো রংপুরে যেতে হবে তাকে নাকি কি জন্য ডেকেছে। শামীম সবাই কে হাসি খুশিতে রাখার চেষ্টা করে চাঁদের অভাব টা কাউকে বুঝতে না দিলেও নিজে ঠিকই বুঝে।
________________
সুপ্রিয়ার স্বামীর ব্যবসা বেরে যাওয়ায় তারা অনেক আগেই ঢাকাতে চলে আসে। তারা ঢাকা শহরে এসেও শামীমের খোজ করে কিন্তু কোথাও পায় না তবুও চেষ্টা চালিয়ে যায়।
রহিম মিয়া তার ছেলের জন্য প্রায় পাগল হয়ে গেছে আজ কয়েক বছর ধরে শামীম কে দেখে না আর শামীমের কথা মনে করে কাঁদে। তো একদিন এক লোক রহিম মিয়াকে বলে শামীম কে ঢাকার এক হাসপাতালে দেখেছে। রহিম মিয়া ঢাকা আসার জন্য উতলা হলে লোকটা বলে কিছুদিন পর যাও আর হাতে টাকা পয়সা করো তাই রহিম মিয়া সেখানে কামলা কাজ করা শুরু করে দেয়৷ আর লোকটার মুখে শামীমের কথা শুনে অনেক খুশি হয় রহিম।
__________________
তৃপ্তি রংপুর যাওয়ার দুইতিন দিন পর বাদলের ফোনে কল দেয় শামীমের সাথে কথা বলার জন্য।
তৃপ্তিঃ ভাইয়া একটা খুশির সংবাদ আছে?
শামীমঃ কি বল।
তৃপ্তিঃ ভাইয়া আমি স্কলারশিপ পেয়ে গেছি, ইন্টার্নি করার জন্য আমাকে চীন যেতে হবে।
শামীমঃ আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে কবে যাচ্ছিস?
তৃপ্তিঃ ভাইয়া একটা সমস্যা আছে?
শামীমঃ কি সমস্যা বল আমাকে?
তৃপ্তিঃ ওখানে তো ফ্রিতে যেতে পারবো কিন্তু এক বছরে আমার সেখানে খরচ পরবে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা।
শামীমঃ টাকার চিন্তা কোকে করতে হবে না কবে টাকা লাগবে আমাকে বল?
তৃপ্তিঃ এত টাকা কোথায় পাবে তুমি আর পাঁচ দিনের মধ্যে লাগবে আমার টাকা।
শামীমঃ ঠিক আছে পেযে যাবি তুই সব ব্যবস্থা করে ফেল চীন যাওয়ার জন্য।
তৃপ্তিঃ ঠিক আছে।
ফোন কেটে দেওয়ার পর শামীম চিন্তায় পরে যায় এত টাকা কোথায় পাবে কে দিবে। অনেকের কাছে টাকা ধার চাইতে যায় কিন্তু কারো কাছে পায় না। দেখতে দেখতে তিনদিন চলে যায় হঠাৎ হাসপাতালে দেখে একটা লোক তার মেয়ের চোখের দৃষ্টি ফিরে পাবার জন্য ডাক্তার কে অনুরোধ করতেছে। আর ডাক্তার বলতেছে নতুন চোখ ছাড়া দৃষ্টি ফিরে পাওয়া অসম্ভব লোকটা বলে যতটাকা লাগে তিনি দিবেন আর তার চোখ চাই। তখন শামীম লোকটার কাছে যায়
শামীমঃ চোখ আমি দিবো কিন্তু তার বিনিময়ে আমাকে ১৩ লক্ষ টাকা দিতে হবে।
শামীমের কথা শুনে লোকটা অবাক হয়ে শামীমের দিকে থাকায়।
শামীমঃ আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না তো সত্যি বলতেছি আমি দিবো আমার চোখ দুটো। কিন্তু আমাকে আর দুইটা দিন সময় দিতে হবে।
লোকটাঃ সত্যি বলতেছো নাকি আমার সাথে উপহাস করতেছো বাবা।
শামীমঃ সত্যি বলতেছি, আপনি শুধু টাকা দিন বাকি সব ব্যবস্থা করুন আমি শুধু টাকা টা একজনকে পাঠিয়ে দিবো।
তারপর লোকটা শামীম কে ১৩ লক্ষ টাকা নগদ দেয়। সেখান থেকে ৮ লক্ষ টাকা তৃপ্তিকে দিয়ে দেয় আর বাকি ৫ লক্ষ টাকা বাদলের কাছে দিয়ে বলে তার কোন হলে এই টাকা যেনো পুতুল সোহাগী পিছনে খরচ করে এবং এতিমখানা আর মসজিদে যেনো কিছু টাকা দেয়। বাদল বুঝতে পারে না শামীম এত টাকা কোথায় পেলো আর সে কোথায় যাবে।
বাদলঃ এত টাকা কোথায় পেলি তুই আর তুই বা কোথায় যাবি আর তোর কি হবে?
শামীমঃ সব পরে বলবো এখন ডা বললাম কা করিয়েন।
সেখান থেকে শামীম হাসপাতালে চলে যায় চোখ দেওয়ার জন্য কিন্তু গিয়ে দেখে তার বড় বোন ফারিনকে নিয়ে তার পরিবারের সবাই হাসপাতালে এসেছে এবং অপর দিকে দেখতে পায় সৌরভ ডাক্তারের সাথে কি যেনো বলতেছে। তাই সৌরভে কথা আড়ি পেতে শোনার চেষ্টা করে।
সৌরভঃ ডাক্তার কোন কি উপায় নাই আমার স্ত্রীকে বাঁচানোর?
ডাক্তারঃ কেউ যদি তার হার্ড দেয় তাহলে আপনার স্ত্রী বাঁচতে পারে।
শামীম এবার বুঝতে পারে হাসপাতালে সুপ্রিয়াকে ভর্তি করানো হয়েছে আর তার হার্ড লাগবে বাচানোর জন্য। শামীম ঠিক করে সে হার্ড দিবে তাই সে ডাক্তারের হাতেপায়ে ধরে ডাক্তার কে রাজি করায়। প্রথমে ডাক্তার রাজি ছিলো না পরে রাজি হয়ে যায়। সেখান থেকে যায় ডাক্তার স্বপনের চেম্বারে।
স্বপনঃ শামীম কি জন্য এসেছো।
শামীমঃ ঐ বেডে যে মেয়েটা আছে সে আমার আপন বড় বোন। তার কি হইছে স্যার?
স্বপনঃ তার দুইটা কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে ও- রক্তের গ্রুপের কিডনি ছাড়া সে ভালো হবে না। আর সে বর্তমানে লাষ্টস্টেজে আছে।
শামীমঃ স্যার আপনি দয়া করে আমার বোন কে বাঁচান আর কিডনি আমি দিবো আমার রক্তের গ্রুপ ও-।
স্বপনঃ সেটা আমি করতে পারবো না, আর তাছাড়া ওরা তোমার সাথে যা করেছে তাতে আমি কিছুতেই এ কাজ করবো না।
শামীম সাথে সাথে ডাক্তার স্বপনের পায়ে পরে যায় আর অনেক কান্নাকাটি করে। তখন ডাক্তার স্বপন শামীম কে তুলে বলে
স্বপনঃ ঠিক আছে। তবে একটা কিডনি দিবো আর একটা কিডনি দিয়ে তুমিও বাঁচতে পারবে।
শামীম তখন ডাক্তার স্বপন কে সব খুলে বলে সে একজন কে চোখ দিতেছে তার বিনিময়ে টাকা নিয়েছে আর তার প্রথম ভালোবাসা সুপ্রিয়া কে হার্ড দিবে তাহলে সে তো এমনিতেই মারা যাবে আর একটা কিডনি দিয়ে দি হবে তাই সে দুইটা দিতে চায়। এ কথা শুনে ডাক্তার স্বপন এবার একেবারে রাজি হয় না।
শামীমঃ স্যার কার জন্য বেঁচে থাকবো কে আছে আমার? আর আমার শরীরের অঙ্গ দিয়ে যদি কেউ বাঁচে তাহলে দোষের কি? তাদের সবার পরিবার আছে আমার কে আছে? আর আমার এমনিতেও কোন মূল্য নাই স্যার।
স্বপনঃ তারপরও আমি ডাক্তার হয়ে মানুষ খুন করতে পারবো না আমার ধর্ম মানুষ কে বাঁচানো মেরে ফেলা না।
শামীমঃ স্যার আপনি যদি আমাকে আপনার ছেলে মনে করে থাকেন তাহলে আমার কসম আপনি ওদের কে বাঁচিয়ে দিন।
শামীমের এমন কথা শুনে ডাক্তার স্বপন না করতে পারলো না। কারণ ডাক্তার স্বপন শামীম কে নিজের ছেলে মনে করে।
শামীমঃ স্যার ডাক্তার ওবায়দুল আমার চোখের অপারেশন করবে। আর আপনি কিডনির তাই আগে আমি চোখ দান করার পর যখন ডাক্তার শুনিল কে হার্ড দিতে যাো সেই সময় না হয় আপনি কিডনি অপারেশন করে নিবেন?
ডাক্তার স্বপন শামীম কে কোন না বলে বাইরে বের হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর বাদল আর ননী গোপাল কে সাথে করে নিযে আসে।
বাদলঃ এসব কি শুনলাম শামীম?
শামীমঃ যা শুনেছিস সব সত্যি আর একটা কথা আমি যে চোখ বিক্রি করে তৃপ্তি কে টাকা দিয়েছি এটা যেনো সে জানতে না পারে। আর তোকে ফোন দিলে বলবি শামীম ওর আগের ঠিকানায় মানে কুতুবদিয়া চলে গেছে। আর স্যার এসব যে আমি দিতেছি এটা যেনো ওরা আগেই জানতে না পারে।
ননী গোপালঃ তুইও আমাদের ছেড়ে চলে যাবি?(কেঁদে)
শামীমঃ আমি তোদের ছেড়ে আর একজনের কাছে যাচ্ছি রে তাকে ছাড়া যে আমি ভালো নেই। আর এই পৃথিবীতে আমার কে বা আছে আর কার জন্য বা থাকবো বেঁচে। যে ছিলো সে তো চলেই গেছে। আর স্যার তিনটা চিঠি লিখে দেন আমাকে।
ননী গোপালঃ থেকে যা না ভাই।
শামীমঃ এই শহরের সব মানুষ চেনা শেষ, এখানে মুলত নারী লোভি টাকা লোভি জুয়া আর নেশা ছাড়া কিছুই নাই। এ শহরে গরীবের কোন মূল্য নাই, যে যত মর্ডান হতে পারবে সে ততবেশি এ সমাজে চলতে পারবে যা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি আল্লাহ কে ভয় করি তাই এই পৃথিবীতে বেঁচে থেকে নিজের পাপের পাল্লা ভারি করতে চাই না।
বাদল আর ননী গোপাল তখন শামীম কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকলো
বাদলঃ আর তোর লাশ?
শামীমঃ বেওয়ারিশ হিসাবে দাফন করিস করিস চাঁদের কবরের পাশে যাতে দুজন পাশাপাশি থাকতে পারি। এই দুনিয়াতে আপন বলতে তো আর আমার কেউ নাই তাই আনজুমান মফিদুল ইসলামের হাতে দিয়ে দিস বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে। আর শোন যে মসজিদে দান করি সেই মসজিদের ঈমাম কে আমার জানাজা আর যে এতিমখানায় দান করি সেখান কার হাফেজদের কেও বলিস আর পুতুল সোহাগী কে জানাস।
শামীম সেদিন দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে।আর আল্লাহর কাছে মোনাজাত করে বলে এ কেমন ভালোবাসা রেখেছিলে আমার জন্য। এটাই কি আমার ছিলো, তোমার কাছে একটাই চাওয়া মৃত্যুর পর যেনো আমি আমার জীবন চাঁদের সাথে থাকতে পারি। আর মৃত্যুর পর আমাকে কোন সাজা দিও না অনেক সহ্য করেছি কষ্ট আর পারবো না। যথারীতি শামীম চোখ দান করার দুইদিন পর কিডনি আর হার্ড দিয়ে দেয় ফারিন আর সুপ্রিয়া কে।
No comments