নিয়তি( এ কেমন ভালবাসা)----শেষ পর্ব
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক পাঠিকা ভাই ও বোনেরা আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই অনেক ভালো আছেন। কালকের পর্বটা একটা গ্রুপে দেওয়ার পর একটা মেয়ে আমাকে অপমান করে কথা বলেছে তিনি নাকি ডাক্তার কিন্তু তার কথা শুনে বুঝা গেলো গ্রামে কিছু লোক ছাগল ছেড়ে দিলে যেমন ছেলে ছাগলের কাছে যায় ঠিক সেই রকম তিনি। আসলে তার কিছু বাজে কমেন্ট আমার গায়ে লেগেছে। আমি এখনও বলি আমি শিক্ষিত ছেলে না আর্থিক সংকট থাকার কারণে অনার্স ২য় বর্ষ পর্যন্ত পড়তে পেরেছি। আমার ছোট থেকে লেখালেখি করা অভ্যাস, আমার প্রিয় লেখক আমাদের জাতীয় কবি। আমি অন্য কোন লেখকের ভক্তও না+কাউকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে গল্প লিখি না এটা আমার শখ মাত্র। আর আমার গল্পে আমি বাস্তব চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করি, চোখের সামনে যা ঘটে দেখি সেগুলোই তুলে ধরি। আমার অভিজ্ঞা বলতে বাংলাদেশের ৩০+জেলা ভ্রমন আর কিছু না।
শামীম অপারেশন থিয়েটারে মারা যায়, সেদিনই ডাক্তার স্বপন তার চাকুরি ছেড়ে দেয়। শামীমের লাশ গোসল করায় এতিমখানার বড় হুজুর আর কাপনের কাপড় পড়িয়ে দেয় মসজিদের ঈমাম। শামীমের লাশের কাছে বসে সবচেয়ে বেশি কান্না করে পুতুল, সোহাগী, বাদল এবং ননী গোপাল। শামীমের জানাজায় হাসপাতালের প্রায় অনেক কর্মী উপস্থিত থাকে সাথে এতিমখানার বাচ্চা গুলো চাঁদের পাশের কবর টা শামীমের। আজ দুইজন মানুষ পাশাপাশি কবরে শুয়ে আছে। শামীম কে বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে দাফন করা হয়। শামীমের কবরের কাছে বসে কাঁন্না করতে থাকে পুতুল, সোহাগী, বাদল এবং ননী গোপাল।
আল্লাহর রহমতে সবার অপারেশন ভালো ভাবে হয়। যে মেয়েটা কে চোখ দান করেছে সেই মেয়েটা এখন চোখে দেখতে পারে, সুপ্রিয়াও সুস্হ এবং শামীমের বড় বোন ফারিনও সুস্হ হয়। প্রত্যেক টা পরিবারে তখন আনন্দ কারণ তাদের পরিবারের সদস্য একজন অসুস্থ ছিলো সে আজ সুস্হ হয়েছে।
দেখতে দেখতে আরো দুই মাস চলে যায়, এর মাঝে তৃপ্তি বাদল কে ফোন করে হাজার বার শামীম কে চাইছে বাদল বরাবর এক কথাই বলেছে শামীম তার কাছে নাই শামীম আর এক জায়গায় আছে। কিন্তু যখন তৃপ্তি বাদলের এ কথা মানতে নারাজ তখন বাদল বলে শামীম তার গ্রামের বাড়িতে তার আব্বার কাছে চলে গেছে।
শামীমের মৃত্যুর পর পুরা হাসপাতালের ক্লিনার গুলো আরো বেশি হতাশ হয়ে গেছে। শামীম বেঁচে থাকা অবস্থায় সবার খোজ খবর নিতো, কারো কাজ করে সাহায্য করতো কেউ আর্থিক সংকটে পরলে তাকে কিছু হলেও টাতা দিয়ে সাহায্য করত। চাঁদ মারা যাওয়ার পর শামীম চাঁদের অভাব কাউকে বুঝতে দেয়নি। এই তো কিছুদিন আগেও সবাই অনেক হাসি খুশি ছিলো আর আজ কেমন যেনো শোকাত।
ফারিন সুপ্রিয়া হয়ে বাসায় ফিরার পর দুুই পরিবার তাদের সুস্হার জন্য ঘরোয়া ভাবে পার্টির আয়োজন করে। দুই পরিবার আলাদা আলাদ ভাবে আনন্দ করতে থাকে যেহেতু তারা শহরের মানুষ। কিন্তু দুই পরিবারের কেউ জানে না তাদের কিডনি আর হার্ড কে দান করেছে। দুই পরিবার এখন অনেক মজাতে আছে।
সারোয়ার আর সাহানা বেগম যেনো ভুলে গেছে তাদের একটা ছেলে আছে। এদিকে ফারিন ফয়সাল আর ফারজানা শামীম কে প্রায় ভুলেই গেছে তাদের যে একটা অভাগা ভাই আছে তা মনেই পরে না ওদের।
শামীম মারা যাওয়ার তিনমাস পর রহিম মিয়া যখন ঢাকা আসতে চায় শামীমের কাছে তখন তার বউ আসতে দিতে চায় না। শেষে রহিম মিয়া তার বউয়ের সাথে তার সন্তানদের সাথে এক প্রকার সম্পর্ক নষ্ট করে ঢাকায় চলে আসে। ঢাকা এসে সেই হাসপাতালের ঠিকানা মানুষ কে দেখিয়ে সেখানে আসে রহিম মিয়া। হাসপাতালে আসার পর সব জায়গায় তার ছেলে শামীমের খোজ করে কিন্তু কোথাও পায় না। তখন রহিম মিয়া মনে মনে ভাবে নিশ্চয়ই আমাকে দেখেছে তাই রাগ করে লুকিয়ে আছে। আমিও দেখবো কতক্ষণ লুকিয়ে থাকতে পারে আছি আমি। রহিম মিয়াকে এভাবে ঘুরাঘুরি করতে দেখে হাসপাতালে ডিউটিরত সিকিউরিটি গার্ডের সন্দেহ হলে রহিম মিয়া কে ধরে। সেই সময় বাদল রহিম মিয়ার কাছে যায়।
রহিমঃ বাবারা আমি কোন চোর ডাকাত না আমাকে ছেড়ে দেন।
গার্ডঃ চোর ডাকাত না হলে এখানে কি?
রহিমঃ এখানে আমার ছেলের খোঁজে এসেছি।
গার্ডঃ কে আপনার ছেলে, আর কয়তলায় কত নাম্বার ওয়ার্ডের রোগি?
রহিমঃ আমার ছেলে কোন রোগি না, সে এখানে চাকরি করে আর আমাকে দেখে মনে হয় লুকাইছে তাই সামনে আসতেছে না।
গার্ডঃ কিসের টাকরি করে?
রহিমঃ তা জানি না বাবারা।
গার্ডঃ নাম কি আপনার ছেলের
রহিমঃ আমার পোলার নাম শামীম।
শামীমের কথা শুনে বাদল থমকে যায়, গার্ডরা গিয়ে শামীম নামে যতজন ছেলে চাকুরি করে তাদের সবাইকে নিয়ে আসে।
গার্ডঃ বলুন কোনটা আপনার ছেলে।
রহিমঃ একজনও নয় এদের মধ্যে।
বাদলঃ কাকা আপনার বাড়ি কি কক্সবাজার কুতুবদিয়াতে?
রহিমঃ হ্যাঁ বাবা, কিন্তু তুমি কেমন করে জানলে?
গার্ডঃ শফিক ভাই, এনি আমাদের শামীমের আব্বা ( বলেই কেঁদে ফেলে)
গার্ডরা তখন রহিম মিয়া কে ছেড়ে দেয় তারাও বুঝতে পেরেছে ইনি শামীমের আব্বা।
রহিমঃ আমার পোলা টা কৈ বাবা, একটু ডাকো না অনেক দিন পোলাটারে দেখি না। আজ কে পোলাটারে জরিয়ে ধরতে খুব ইচ্ছা করতেছে। জানো বাবা শুধু রাগের মাথায় তারে কৈছিলাম আমার সামনে না আসতে দেখ পোলটা আজ দুই বছরেরও বেশি আমার সাথে কোন যোগাযোগ করে না আর কথাও বলে না। আমি জানি আমারে দেখলে সে রাগ করে থাকতে পারবো না।
রহিম মিয়ার এমন মায়া ভরা কথা শুনে বাদল সেখানে কাঁন্না করে দেয়। বাদলের কাঁন্না করা দেখে ননী গোপাল সহ আরো অনেকে এগিয়ে আসে।
রহিমঃ বাবা তুমি কাঁন্না করতেছো কেনো? আমি তোমাকে কোন কষ্ট দিলাম, আচ্ছা বলো না আমার পোলাটা কৈ?
তখন বাদল রহিম মিয়ার হাত ধরে শামীমের কবরের কাছে নিয়ে যায়। সাথে সাথে ননী গোপালও যায় ওদের সঙ্গে।
রহিমঃ এটা কোথায় নিয়ে আসলে আমাকে বাবা।
তখন বাদল হাতের ইশরা দিয়ে দেখিয়ে দেয় শামীমের কবর টা।
ননী গোপালঃ এটাই শামীমের কবর চাচা, আজ প্রায় তিন মাস হে গেলো শামীম মারা গেছে।
ননী গোপালের কথা শুনে রহিম মিয়া যেনো কিছুক্ষণের জন্য বোবা হয়ে যায়।
বাদলঃ জানেন কাকা, শামীম না আপনার কথা খুব বলতো। সে বলতো এই পৃথিবীতে একজনই আমাকে খুব ভালোবাসে সে আমার আব্বা। আপনার কথা বলে যে কতবার কাঁন্না করেছে তা বলতে পারবো না।
তখন রহিম মিয়া শামীমের কবরের উপরে শুয়ে আহাজারি করে কাঁদতে থাকে।
রহিমঃ ওই বাপ, আমি কি তোরে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। বাপ কে আমারে আর আব্বা বলে ডাকবো, বাপ দেখ না তোর জন্য আমার নিজের পরিবার ছেড়ে চলে এসেছি। তোরে আর কোন কষ্ট করতে দিবো না, এখন থাইকা আমি সব কাম কাজ করমু দিন শেষে আমারে আব্বা বইলা ডাকিস। বা তোরে কখনও সুখ দিতে পারি নাই তাই বইলা আমারে এভাবে একা কইরা যাবি। বাপ তোরে কথা দিতাছি তুই ঘুম গেলে আমার কোলে ঘুম যাইস বাপ, তোরে আমি মায়ের ভালোবাসাটা দিবো বাপ। তোরে নিজ হাতে খাইয়ে দিবো বাপ। দরকার হলে নিজে না খেয়ে থাকবো বাপ তবুও উঠ না। আমি তোর গায়ে আর কারো হাত তুলতে দিবো না, দেখনা তোর আব্বার খুব কষ্ট হইতাছে। আমারে জীবনের তরে আর একটাবার আব্বা বইলা ডাক না।
রহিম মিয়ার এ রকম কথা শুনে বাদল আর ননী গোপাল হাউমাউ করে কাঁদতে থাকলো। বাদল এগিয়ে গিয়ে রহিম মিয়ার কাঁধে হাত রাখলো।
বাদলঃ কাকা আর এমন করে বলিয়েন না, শামীম আর কোনদিনও ফিরে আসবে না আমাদের মাঝে। এই শহরে এসে শামীম ওর নিজের বাবা মা কে পেয়েছিলো তাদের কাছ থেকে আঘাত আর অপমান ছাড়া কিছুই পায় নাই।
রহিমঃ আমার পোলাটা কি এতই খারাপ আছিলো বাবা।
ননী গোপালঃ শামীমের মত মানুষ হয় না কাকা। শামীম নিজের ইচ্ছাতে জীবন দেয় নাই( বাকি সব বলল ননী গোপাল)
[ লিখতে গিয়ে কেনো জানি আমার চোখ দিয়ে পানি ঝড়তেছে]
বাদল আর ননী গোপাল রহিম মিয়াকে তাদের সাথে নিয়ে যায়। শামীম যে ঘরে থাকত তাকে সেই ঘরে থাকতে দিলো। শামীমের ঘরে শুয়ে থেকেও রহিম মিয়া অনেক কাঁন্না করতে থাকে। রহিম মিয়া নিজেকে দোষ দিতেছে আজ তার জন্য শামীম এই দুনিয়াতে বেঁচে নাই। রহিম মিয়া প্রতিদিন শামীমের কবরে গিয়ে একাই একাই কথা বলে আর কাঁন্না করে। রহিম মিয়ার পাশাপাশি পুতুল, সোহাগী, বাদল এবং ননী গোপালও যায়।
দেখতে দেখতে এক বছর চলে যায়, তৃপ্তিও দেশে চলে এসে ডাক্তারি করা শুরু করে দেয়। হঠাৎ একদিন বাজারে সারোয়ার সাহেব ডাক্তার স্বপন কে দেখতে পায়।
সারোয়ারঃ আরে ডাক্তার সাহেব কেমন আছেন? আর আপনাকে অনেক খুজেছি কোথাও পাইনি।
স্বপনঃ জ্বী আলহামদুলিল্লাহ, আর আমাকে খোজ করার কারণ।
সারোয়ারঃ আরে আমার মেয়ের অপারেশর করলেন আর কিডনি কোথায় পেলেন তা তো আজো জানলাম না।
স্বপনঃ কাল সকাল ১১ টার দিকে হাসপাতালের গেটের কাছে আসিয়েন। আর হ্যাঁ সেদিনের অপারেশন টা আমার জীবনের শেষ অপারেশন ছিলো আমি সেদিনই চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আর কালকে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন আর আপনার পুরা পরিবার কে নিয়ে আসবেন আর আপনার বড় মেয়েকেও।
এই কথা বলে ডাক্তার স্বপন চলে যায়, তৃপ্তি বাংলাদেশ আসার পর একবারো বাদল ননী গোপাল কারো সাথে দেখা করে নাই তাই সে নিয়ত করে কালকে একবার হাসপাতাল থেকে ওদের সাথে দেখা করে আসবে। সেই হাসপাতালে সুপ্রিয়ার বাচ্চা হইছে আজ ১৩ হলো কালকে সে রিলিজ পাবে সকালে।
পরেরদিন সারোয়ার সাহেব তার পরিবার সহ হাসপাতালে আসে এসেই ডাক্তার স্বপন কে দেখতে পায় তিনি তার কাছে যায়। ডাক্তার স্বপন কে হাসপাতালে দেখে বাদল ননী গোপাল তার কাছে এগিয়ে যায়। হাসপাতালে এসে তৃপ্তি দেখে বাদল ননী গোপাল ডাক্তার স্বপন এক সাথে তাই সেও এগিয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে রিলিজ হয়ে সুপ্রিয়া যখন তার স্বামী সহ বের হবে তখন সেও রহিম মিয়াকে হাসপাতালের গেটের কাছে দেখে এগিয়ে যায়।
সুপ্রিয়াঃ চাচা আপনি এই শহরে( অবাক হয়ে)
রহিমঃ আমার পোলা শামীমের কাছে এসেছি।
সুপ্রিয়াঃ কোথায় শামীম চাচা।
রহিমঃ চুপ
সৌরভঃ বলুন না চাচা কোথায় শামীম তার কাছে আমাদের ক্ষমা চাইতে হবে।
তখন রহিম মিয়া ওদের কে শামীমের কবরের কাছে নিয়ে যায়।
সারোয়ারঃ বলুন ডাক্তার সাহেব এখন।
স্বপনঃ তৃপ্তি তুমিও আসছো ভালো হইছে, বাদল ননী গোপাল তোমরা সবাই আসো আর সারোয়ার সাহেব আপনারাও আসেন।
ফয়সাল আর ফারজানা বাদল ননী গোপাল কে দেখে অবাক হয় আর আশেপাশে তার ভাইকে খুঁজতে থাকে। তখন ডাক্তার স্বপন সবাই কে নিয়ে আসে যেখানে বেওয়ারিশ লাশ কবর দেওয়া হয়।
সারোয়ারঃ আমাদের এই কবরের কাছে নিয়ে আসলেন কেনো?
স্বপনঃ জানতে চাইছিলেন না কে আপনার মেয়েকে কিডনি দিয়েছিলো। আমি তার কবরে কাছে নিয়ে আসলাম, কিডনি আপনার বড় ছেলে দিয়েছে আর তার কবর ওই যে ঐটা। আর ডাক্তার তৃপ্তি শামীম নিজের চোখ বিক্রি করে আপনার পড়াশোনার টাকা দিয়েছে যাও তোমার অভাগা ভালোবাসা না পাওয়া ভাইয়ের কাছে।
সুপ্রিয়াঃ চাচা এটা কার কবর আর এখানে বা কেনো নিয়ে আসছেন?
রহিমঃ বললেন না ছোট মালকিন শামীমের কাছে ক্ষমা চাইবেন ঐ যে কবর টা দেখতেছেন ঐ টা শামীমের আর আপনাকে সেদিন যে হার্ড টা দিয়েছিলো সেটাও শামীমের।
ওখানে উপস্থিত থাকা সবাই ডাক্তার স্বপন আর রহিম মিয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। তারা সেখানে দাড়িয়ে না থেকে শামীমের কবরে কাছে গিয়ে কাঁদতে থাকে।
বাদলঃ কি চাইছিলো শামীম আপনাদের কাছে সামান্য ভালোবাসা এর চেয়ে তো বেশি কিছু চায় নাই। আর আপনি তো সেই যাকে শামীম সেই ছোট থেকে ভালবেসে ছিলো। দেখেন সে তার ভালোবাসার মানুষ কে বাঁচিয়ে দিয়ে নিজেই না ফেরার দেশে চলে গেছে।
আর আপনারা তো শামীমের বাবা মা ভাই বোন, একটা কথা বলুন তো শামীম কি কারো সাথে কোন অন্যায় করেছে? সে তো সবার ভালোবাসা চাইতো, আপনারা ভাইবোনেরা কি করলেন তাকে বাসার চাকর হিসাবে তুলে ধরলেন মানুষের সামনে এমন কি গায়ে হাত পর্যন্ত তুললেন। আর এই যে আপনি তো মনে হয় শামীমের বড় বোন তো আপু শামীম কি এমন আপনার ক্ষতি করেছিলো যার জন্য তাকে সবার সামনে দোষি বানাতেন?
আর আপনারা তো বাবা মা, আমি যতদূর পর্যন্ত জানি একটা বাবা মা যতই গরীব হোক না কেনো তার কাছে সব সন্তান সমান তো আপনাদের কাছে কেনো এমর মনে হলো সে খারাপ তাকে একটু ভালোবাসা দেওয়া যায় না।
ডাক্তার স্বপন তিনটা চিঠি বের করে একটা সুপ্রিয়ার হাতে একটা শামীমের বাবা মার হাতে আর একটা তৃপ্তির হাতে দিলো।
সুপ্রিমর চিঠি
কেমন আছেন ছোট মালকিন নিশ্চয়ই অনেক ভালো আছে। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আপনি সব সময় ভালো থাকেন। আপনাকে কেনো আপনি আর ছোট মালকিন বলছি জানেন আপনি তো এখন অন্যের আর আমি আপনার বাবার বাড়ির চাকর। আপনি বলেছিলেন আমি আপনার জন্য নাকি জীবনেও কোন করতে পারবো না তাই আপনাকে আর হৃদয় টা দিয়ে দিলাম। দয়া করে এই ছোটলোকের হার্ড টার অযত্ন করিয়েন না।
বাবা মা ভাইবোন
কেমন আছো সবাই নিশ্চয়ই ভালো আছো। আমিও আকাশের তারা হয়ে অনেক ভালো আছি। এখন আর কেউ আমাকে আঘাত করতে পারে না আর কষ্ট দিতেও পারে না। আপু আমি তো গেয়ো ভুত ক্ষেত তবুও দয়া করে আমার দেওয়া কিডনিটার কোন অবহেলা করিস না। আমি তো তোদের পরিবারের একটা কলঙ্ক ছিলাম তাই নিজের কলঙ্ক মুছার জন্য আমার শরীরের একটা অংশ তোকে দিলাম। ফারজানা ফয়সাল একটু ভালো হয়ে চলাফেরা করিস কারণ বাবা মার একটা সম্মান আছে এমন কোন কাজ করিস না যাতে তাদের সম্মান নষ্ট হয়। আর বাবা মা তোমাদের হক আদায় করতে পারি নাই তাই আমাকে মন থেকে মাফ করে দিও। মায়ের ভালোবাসা কি এ জীবনে তা আমি পাইনি।
তৃপ্তি
বোন নিশ্চয়ই অনেক বগ ডাক্তার হয়েছিস। আমাকে মাফ করে দিস এসব না করলে তোকে বড় ডাক্তার বানাতে পারতাম না আর তোর মায়ের স্বপ্ন পূরণও হতো না। শোন কাঁদবি না, তুই আমার লক্ষি বোন, আমার দোয়া সব সময় তোর সাথে আছে। নিজের বোনের কাছে থেকে মায়ের কাছে থেকে যে ভালোবাসা পাইনি সেটা তোর কাছে থেকে পেয়েছি। আর শোন পুতুল সোহাগী কে মানুষ করার দায়িত্ব তোর। আর পারলে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া গিয়ে আমার মৃত্যুর খবর টা আমার আব্বা কে দিস। আর আমার হয়ে তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিস। আর পারলে আব্বকে তোর সাথে নিয়ে আসিস আর তোর কাছেও রাখিস। আমি জানি আব্বা মোটেও আমাকে ছাড়া ভালো নেই। আমার জন্য আব্বা তার নিজের স্ত্রী সন্তানের কাছ থেকে অনেক অপমানিত হয়েছে। আর পারলে আমার আর চাঁদের কবরে মাঝে মাঝে আসিস আমার চাঁদের জন্য দোয়া করিস?
সবাই চিঠি গুলো পড়তেছে আর চিৎকার করে কাঁন্না করতেছে। সবাই নিজেকে অপরাধী মনে করতেছে কিন্তু সত্যিকারের অপরাধী কে?
তয়নাঃ মামানি তার পর কি হলো
তিথিঃ বাকি টা তোমার নানী মা জানে?
তয়নাঃ নানী মা তার পর কি হলো।
তৃপ্তিঃ সবাই তখন নিজেকে দোষি ভাবতে লাগলো আর শামীমের জন্য আপসোস আর চোখের জল ফেলতে লাগলো। পরে সবাই প্রায় প্রতিদিন শামীমের কবরে গিয়ে কাঁন্না করতো আর তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতো।
তয়নাঃ নানু মামনি আমিও যাবো সেখানে।
তিথিঃ এবার তোমার বাবা সামারের ছুটি পেলে আমরা বাংলাদেশে যাবো মা।
তয়নাঃ আচ্ছা।
No comments