পানি খেয়ে এসে শামীম যে জায়গা টায় বসেছে তার ঠিক পাশে একজন বয়স্ক লোক বসে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি বড্ড ক্লান্ত, হয়ত বা শামীমের মত তিনিও না খেয়ে আছে। ঐ বৃদ্ধ লোকটি কে দেখে শামীমের ওর আব্বার কথা মনে পড়ে গেলো। তার আব্বা কি ভালো আছে তাকে ছাড়া, একটা বারো কি শামীমের কথা মনে পরতেছে না। শামীম যে ওর আব্বা ছাড়া এক মুহুর্তের জন্যও ভালো নাই। বাবা মা ছিলো না তবুও তো তার আব্বা ছিলো, আজ সে মানুষ টাও নাই তার জীবনে। শামীমের বার বার মনে যাচ্ছে ছুটে তার আব্বার কাছে যেতে কিন্তু শামীম যে রাস্তা চিনে না যাবে কেমন করে? শামীম ভাবতে লাগলো, যদি শামীমের কোন হত তার আগে ব্যথা টা তার আব্বা পেত। ছুটে চলে যেত শামীমের কাছে, শামীমের জন্য কাঁন্না কাটি করত। সেই আব্বা কেমন করে শামীমের গায়ে হাত তুলতে পারলো? যে আব্বা কখনও তাকে মারে নাই সেই আব্বা তাকে মারলো আবার তার চোখে সামন থেকে চলে যেতে বলেছে। হতে পারে আব্বা মন থেকে বলে নাই এই কথা গুলো, হয়ত বা আমার সুখের জন্য এসব বলেছে আব্বা।
শামীমঃ ( মনে মনে) আব্বা আমি এই শহরেরও ভালো নাই, তোমার কথা খুব মনে পরতেছে আব্বা। আমার মন টা তোমাকে দেখতে অনেক ছটফটাচ্ছে আব্বা, আমি তোমার চোখের আড়াল হতে চাইছি তাই বলে এত দুরে আসতে চাই নাই আব্বা। আমার ভাগ্য যে আমাকে এখানে এনে ফেলেছে, আব্বা তুমি কি ভালো আছো আমাকে ছাড়া? আমি যে ভালো নাই তোমাকে ছাড়ক! আমাকে কেউ ভালোবাসে না কেউ আদর করে না আব্বা, আব্বা তুমি কি আমার কাছে আসতে পারবে না একটু কি বুকে জরিয়ে নিতে পারবে না? আমার যে খুব কষ্ট আব্বা এ কষ্ট কি আল্লাহ কখনও দুর করে দিবে না আব্বা?
এই কথা গুলো মনে বলতেছিলো আর শামীমের চোখ দিয়ে বৃষ্টির মত পানি ঝড়তেছিলো। আজ শামীম আরো একা তার পাশে আজ আর কেউ নাই? শামীম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে ওই স্হান ত্যাগ করলো, শামীম তো আর জানে না কতক্ষণ বিরতি?
________________
চাঁদ সহ আরো অনেকে এখানে দুপুরের খাবার খাচ্ছে কিন্তু সবাই আছে নতুন ছেলে টা নাই ব্যপার কি? চাঁদ আরো ভালো করে একটা করে খাওয়ার টেবিল দেখতে লাগলো না শামীম কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। তাহলে কি সে আজ দুপুরের খাবার নিয়ে আসে নাই। ধুর আসলে আসবে না আসলে নাই তাতে তোর কি চাঁদ, আর আমি বা কেনো ওর কথা ভাতেছি। না তবুও কাজ তো আমাদের সাথে করে খোঁজ নেওয়া একটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
চাঁদঃ বাদল দাদা শামীম নামের ছেলে টাকে যে দেখতেছি না?
বাদলঃ আসোলেই তো, নাকি আসে নাই সে। না এখানে যে খেতে হয় তা জানে না।
বাদলঃ আচ্ছা আগে আমরা খাওয়া শেষ করে না হয় ওকে পাঠিয়ে দিবো।
চাঁদঃ ঠিক আছে।
____________________
রহিম মিয়া আজ সমুদ্রের পাড়ে বসে আছে, তার পাশেই শুটকির আড়ত। এখানে অনেকে কাজ করতেছে, এই আড়তের মজাজন অবশ্য রহিম মিয়া কে বলেছিলো শামীম কে তার আড়তে কাজে লাগিয়ে দিতে মাস শেষে ৮ হাজার টাকা দিতো। কিন্তু রহিম মিয়া তা না করে মজুমদার বাড়িতেই শামীম কে রাখছিলো। আজ যদি শামীম কে এই জায়গায় কাজ করতে দিতাম, তাহলে পোলা টা আমার চোখের সামনে থাকতে মনে মনে রহিম মিয়া ভাবতেছে। রহিম মিয়ার চোখ আজ সাগরের গভির জলে, একদিন মজুমদারের বড় নৌকাটা নিয়ে বাপ পোলায় সাগরের মাঝে গিয়ে অনেক আনন্দ করেছিলাম সেই দিনেই আমার পোলাটা কে সবচেয়ে বেশি খুশি দেখেছি।
রহিমঃ বাপ তুই কি করে আমাকে ছেড়ে আছিস? আমার কথা কি তোর মনে পড়ে না? আমি না হয় তোর একটু ভালোর জন্য চোখের আড়াল হতে বলছিলাম তাই বলে আমাকে একা করে দিয়ে একেবারে চোখের আড়াল হলি তুই! তুই কি জানিস না তোর আব্বা তোকে ছাড়া থাকতে পারে না, তোর কষ্ট সহ্য করতে পারে না! বাপ আর কষ্ট দিস না চলে আয় আমার কাছে, এবার আর তোকে চোখের আড়াল হতে দিবো না চোখে চোখে রাখবো তোকে বাপ! দরকার হলে এসে আমাকে যা শাস্তি দিবি তাই মাথা পেতে নিবো বাপ তবুও তুই ফিরে আয়( কেঁদে কেঁদে)
রহিম মিয়ার এই আর্তনাদ কেউ দেখতেছে না, রহিম মিয়া যেনো তার ছেলে কে দেখতে না পেয়ে দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছে। বাপ ছেলের কত স্মৃতি মনে পড়ে এখন রহিম মিয়ার। ছোট থাকতে শামীম কে কত যে পিঠে নিয়ে বেরিয়েছে, কত জায়গায় ঘুরতে নিয়ে গেছে। কখনও ছেলের হাত ছেড়ে দিতো না, চুপি চুপি বাবা ছেলে কত দেখা করেছে। মাঝে মাঝে বসে বাবা ছেলে কত হাসি ঠাট্টা করতো। শামীম কে যখন মজুমদার মারত সেদিন সারারাত আল্লাহর কাছে ফরিয়াত করত তার ছেলে যেন তারাতারি ভালো হয়ে যায় একটু সুবুদ্ধি হয়। প্রতি জুম্মার নামাজ শেষে যে তবারক টুকু পেত রহিম মিয়া ছেলের জন্য নিয়ে আসত। কেউ যদি দাওয়াত দিত রহিম মিয়াকে ছেলের জন্য চুপিসারে খাবার এনে দিত। শামীম কে পাশে বসিয়ে খাওয়াত। শামীমের জন্য নিজের স্ত্রী সন্তানের কাছে কত যে অপমানিত হইছে রহিম মিয়া তার শেষ নাই। এসব কি সব ভুলে গেলো শামীম, তাকেও কি ভুলে গেলো ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে এসব ভাবলো রহিম মিয়া।
হঠাৎ রহিম মিয়া খেয়াল করলো আড়তে কাজ করা সবাই যে যার মত করে খাচ্ছে কিন্তু যার ছেলে বা মেয়ে এখানে কাজ করতেছে তারা নিজ হাতে আগে তাদের ছেলে মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্য রহিম মিয়াও সহ্য করতে না পেরে অনেক দুরে গিয়ে কাঁন্না করে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতেছে, তোর কপালে এমন মায়ের ভালবাসা জোটে নাই বাপ। তোকে কখনও মায়ের ভালবসা দিতে পারি নাই আমাকে মাপ করিস বাপ! তোর কাছে অনুরোধ করি ফিরে আয় আমার কাছে এবার তোকে মায়ের ভালোবাসাও দিবো আয় বাপ ফিরে আয়।
_______________
সুপ্রিয়া তার বাড়ি আসার পর শামীম কে খুজতে বের হলো। সুপ্রিয়া জানে শামীমের মন যত খারাপ থাকুক না কেনো শামীম সমুদ্রের পাড়ে থাকবে। আর শামীম এই এলাকা ছেড়ে কোথাও যাবে না। দরকার হলে আজ আমি শামীমের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নিবো। এবার আমি শামীম কে আমার সাথে নিয়ে যাবো, এখানে আর ওকে এত অবহেলার মাঝে রাখবো না। মনে মনে কথা গুলো বলে নিজেই হাসতে লাগলো। পাগল টা আমার জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করেছে, পাগল সত্যি পাগল। কেউ কাউকে এতটা ভালোবাসে, হতে পারে আমি ওর ভালোবাসার মূল্য দিতে পারি কিন্তু তাকে খুব সুন্দর আর ভালো একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে তার কষ্টের একটা সাথী করে দিবো। পারলে ওকে নিয়ে গিয়ে ভালো কোন কাজ শেখাবো এখানে আর রাখবো না ওকে।
সুপ্রিয়া সমুদ্র পাড়ে গেলো, যে জায়গায় শামীম বসে থাকত সেই জায়গা টা আজ ফাঁকা কেউ নাই সুপ্রিয়ার বুকটা ছ্যাত করে উঠলো। মনেনে ভাবতেছে হয়ত বা আসে নাই পড়ে আসবে মনে হয় যাই একটু সামনে থেকে ঘুরে আসি। সুপ্রিয়া সামনে গিয়ে দেখে সমুদ্রের দিকে মুখে একজন চিৎকার করে কাঁদতেছে আর কথা বলতেছে। সুপ্রিয়া আর একটু সামনে গিয়ে দেখে এটা তো রহিম চাচা। তাই সুপ্রিয়া দ্রুত পা চালিয়ে রহিম মিয়ার কাছে গেলো।
সুপ্রিয়াঃ চাচা আপনি এমন করে পাগলের মত চিৎকার করতেছেন কেন?
রহিমঃ ছোট মালকিন আমার বাপ টারে আজ ৮-৯ দিন থাইকা দেখি না।
সুপ্রিয়াঃ কোথায় আছে পাগল টা আমাকে বলুন আমি নিয়ে আসতেছি। সেদিন হয়ত আপনার আর আমার উপর খুব রাগ হয়েছিল তাই হয়ত আসতে চাইতেছে না।
রহিমঃ কৈ থাইকা আনবেন তারে ছোট মালকিন কৈ থাইকা? সে আর এই এলাকায় নাই, এই এলাকা ছেড়ে সেদিনেই চইলা গেছে।
সুপ্রিয়াঃ এসব আপনি কি বলেন চাচা, শামীম এমন কাজ করার সাহস কোনদিনও পাবে না। যেখানে আমার বাবা ওকে চিটাগাং শহরে লবণের টাকা আনতে পাঠাতে চাইলে যেতে চায় না সে কিনা, আমি বিশ্বাস করি না।
রহিমঃ ছোট মালকিন এটাই সত্যি, পোলাটা আমারে একা কইরা চইলা গেছে।
সুপ্রিয়াঃ কৈ গেছে জানেন আপনি?
রহিমঃ সবাই কয় হেয় নাকি চিটাগাং শহরে আছে
সব গুলো কথা রহিম মিয়া সুপ্রিয়াকে কেঁদে কেঁদে বলেছে। রহিম মিয়ার চোখের পানি দেখে সুপ্রিয়ারও চোখে পানি এসে গেছে কারণ সেও তো শামীম কে কোন এক সময় ভালোবাসত শামীমের বুকে মাথা রেখে শুয়ে ছিলো তার সাথে।
সুপ্রিয়াঃ যদি শামীম চিটাগাং শহরে থাকে তাহলে আপনাকে চিন্তা করা লাগবে না আমি ওকে খুজে বের করে এনে দিবো আপনার কাছে।
রহিমঃ সেদিন কি সত্যি আমার পোলায় আপনার স্বামীর ওই গুলো চুরি করছিলো ছোট মালকিন?
সুপ্রিয়াঃ না চাচা সে চুরি করে নাই, আমার স্বামী আমার ভাবি আমি শামীম কে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য এমন কাজ করি। তবে চাচা বিশ্বাস করে শামীমের ভালোর জন্য ওকে বের করে দিতে চাইছি যাতে সে অন্য কোথাও গিয়ে ভালো থাকে। কিন্তু আব্বু আর ভাইয়ারা যে তাকে এমন করে পশুর মত মারবে তা জানতাম না। আমার স্বামী শামীমের জন্য এখনও আপসোস করে চাচা।
এসব কথা বলতে গিয়ে এবার সুপ্রিয়া নিজেই কেঁদে ফেললো। সুপ্রিয়া নিজেও জানে শামীমের সাথে সে কত বড় অন্যায় করেছে। মানুষ কাছে থাকলে তার ভালোবাসা বুঝা যায় না আর যখন একটু দুরে চলে যায় তখনই তার ভালোবাসা টা উপলব্ধি করা যায়। সুপ্রিয়া রহিম মিয়া কে সেখান থেকে জোর করে নিয়ে আসে। রহিম মিয়াকে ওর বাড়িতে দিয়ে সুপ্রিয়া ওর নিজের বাড়ি চলে যায়। এসে তার স্বামী কে সব কথা বলে, সৌরভও তাকে আসস্ত করে চিটাগাং শহরে শামীম থাকলে তাকে খুঁজে বের করবে। সুপ্রিয়া সেখানে আরো দুইদিন থাকার পর চিটাগাং চলে আসে।
__________________
শামীম আবারো হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে তার কাজ করতে লাগলো। পেঠে ক্ষুদা লাগলেও যে তাকে কাজ করতে হবে। এই রকম কতদিন যে দুপুর বেলা না খেয়ে কাজ করেছে শামীম তাও আবার রোদ বৃষ্টির মধ্যে এখানে তো পাকা ঘর ফ্যান আছে। তাই শামীম ক্ষুদা কে প্রাধান্য না দিয়ে তার নিজের কাজ করতে থাকলো। এদিকে বাদল ননী গোপাল চাঁদ খাওয়া করে এসে তাদের কাজের স্হান এসে দেখে একেবারে পরিষ্কার তকতকা। তারা ভেবে পাচ্ছে না কে এই কাজ করলো। তখন তিনজনের মনে পড়ে গেলো শামীমের কথা, তাই তারা তিন জন শামীমের কাছে গেলো।
বাদলঃ কিরে তুই কি আমাদের কাজের জায়গা গুলো পরিষ্কার করে দিয়েছিস( একটু রাগি ভাবে)
ননী গোপালঃ তোকে কে করতে বলেছে এসব। প্রথম দিনে এসেই পাখনা গজিয়ে গেছে তোর। নিজেকে কি সবার কাছে ভালো হিসাবে তুলে ধরতে চাস।
বাদলঃ তোর যদি আজ প্রথম দিন না হত তাহলে তোকে ঠাটিয়ে চড় বসে দিতাম কয়টা।
চাঁদঃ এই সালা তোকে এসব করতে কি কেউ বলেছে? তুই দেখতাছি মানব দরদ করতে পছন্দ কতেছিস।
শামীমঃ ( ভয়ে ভয়ে) না মানে আপনারা তো সবাই খেতে গেছেন, আর এখানে কাউকে চিনিও না তাই একা একা নিচে ভালো লাহতেছিলো না। তাই উপরে চলে আসি এসে দেখি একটা রোগি বমি করছে আর একজন রুগি নিয়ে আসছে তার রক্তে মেঝে নোংরা হইছিল সেই সময় একজন ডাক্তার এসে সবাই কে খুজতেছিলো আর গালি দিতেছিলো আপনাদের তাই আমি এসব করেছি। আসলে কাজ করলে সময়ও তারাতরি চরে যায় তাই আর কি।
শামীমের কথা শুনে তিনজন তিনজনের দিকে চোখাচুখি করতে লাগল। পৃথিবীতে এমনও অদ্ভুত মানুষ আছে তারা হয়ত জানে না। তারা তো প্রথমে ভেবেছিলো, শামীম মনে হয় টাউট তাই তাদের মন জয় করে তাদের জায়গা নিতে চায়। কিন্তু শামীমে৷র এমন অদ্ভুত কথা শুনে তারা অবাক, ওদের কে গালি দিলে দিছে ডাক্তার তাই বলে তাকে এসে সবার কাজ করে দেওয়া লাগবে। আর দুপুরে নাকি সে পানি খেয়ে আছে, এই কথা শুনে তিনজনের চোখে জল এসে গেছে।
চাঁদঃ ওই তুই খাবার নিয়ে আসিস নাই
চাঁদঃ তাহলে তখন কেনো বললি না, তাহলে তোকে ক্যান্টিনে নিয়ে গিয়ে খাওয়াতাম।
বাদলঃ এতটা ভালো মানুষি এই শহরে দেখাস না একদিন দেখবি তোর প্রাণ টাও চলে যেতে পারে।
ননী গোপালঃ শোন নিজের কাজ টা করবি অন্যের কাজ করার দরকার নেই।
সেই দিন বিকালে বাদল শামীমের আইডি কার্ড আর তার হাসপাতালের কাজ করার পোষাক নিয়ে আসে ইনচার্জের কাছ থেকে। সন্ধ্যার সময় ডাক্তার স্বপন যখন চলে যাবে তখন সে শামীম আর বাদল কে ডাকে।
স্বপনঃ বাদল শামীম কিন্তু তোমাদের সাথে থাকবে বুঝলে।
স্বপনঃ আরে পারবে। শামীম এখন থেকে তুমি এদের সাথে থাকবে আর শোন ওরা যার কাছে ম্যাসে খায় আজ থেকে তুমিও ওদের সাথে খাবে। তোমার মত অনেকে সেই ম্যাসে খায় বুঝলে। আর সব সময় বাদলের কথা মত চলবে, মন দিয়ে কাজ করবে দেখবে একদিন তোমার কপালেও সুখ এসে ধরা দিবে।
শামীম কাজ শেষ করে বাদলের পিছন পিছন গেলো যেহেতু শামীম কে বাদলের সাথে থাকা লাগবে। যেতে যেতে বাদল আর ননী গোপাল শামীম কে বলতেছে।
বাদলঃ শামীম তুই কি ভুতে ভয় পাস?
শামীমঃ না পাই না ভয় এসবে।
ননী গোপালঃ আমরা যেখানে থাকবো তার ১০০ হাত দুরেই কিন্তু লাশ কাটার ঘর।
শামীমঃ আমরা যেখানে থাকবো সেখানে তো আর লাশ কাটে না।
শামীম আর ওদের সাথে কোন কঁতা বলল না। শামীম কে থাকার জন্য আলাদা একটা ঘর দিলো ওরা। শামীম সেই ঘরে গিয়ে দেখে সব ঠিক আছে কারেন্ট আছে গোসল করার জায়গা আছে কাপড় শুকানোর জন্য ব্যালকনি আছে তবে যে বিল্ডিং টা থাকতে দেওয়া হয়েছে সেটা অনেক পুরোনো। শামীম গোসল করে এসে বাদল আর ননী গোপালের সাথে খেতে গেলো।
আজ প্রায় ১০ দিন থেকে শামীম এই হাসপাতালে কাজ করতেছে। প্রায় সবার মন জয় করে নিয়েছে, এখানে অনেক বৃদ্ধ মহিলা পুরুষ কাজ করে তাদের যদি কাজ করতে কষ্ট হয় তো শামীম তাদের কাজও করে দেয়। কেউ যদি না আসে তার কাজও করে দেয় শামীম, এই ১০ দিনে সবার সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে।
সেদিন কাজ করতেছিলো শামীম হঠাৎ করে বাদল এসে বলল একটা লাশ আনতে যেতে হবে। বাড্ডা ডোবায় পাওয়া গেছে শামীমকে গিয়ে তারাতারি এ্যাম্বুলেন্সে বসতে বলল। শামীম বাদল মহন্তের কথা মত এ্যাম্বুল্যান্সে গিয়ে বসার পর পরই নানী গোপাল চাঁদ বাদল একজন নার্স আর একজন ডাক্তার আসল সবাই এসে বসল। ড্রাইভার গাড়ি চালিয়ে বাড্ডার যেখানে লাশ আছে সেখানে নিয়ে গেলো। এ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমে দেখে অনেক মানুষ ভিড় জমিয়েছে আর পুলিশ সবাইকে দুরে সরিয়ে দিতেছে আর বলতেছে কেউ কি দেখেছে কিভাবে মারা গেছে বা কে মেরেছে কোন মানুষ কোন কথাই বলতে পারলো না। শামীম কে আর চাঁদ কে গ্লোস মুখের মাক্স শরীরে দেওয়া কাপড় দেওয়া হলো। সেগুলো পড়ে তারা ডোবায় নামল, নেমে দেখে এটা একটা মেয়ের লাশ। মেয়েটার শরীরে অনেক আচড়ের দাগ, তার শরীরের পোষাক অনেক জায়গায় ছেঁড়া আর মেয়েটা দেখতেও সুন্দর। শামীম আর মেয়েটার দিকে না তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। যখন ডোবা থেকে লাশ তোলা হচ্ছে তখন সবাই যে যার নাক মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরল। অনেকে মোবাইল ক্যামেরা বের করে ভিডিও করতেছে কেউ কেউ ফেসবুক লাইভে গিয়ে সরাসরি দেখাচ্ছে। লাশ দ্রুত গাড়িতে তোলা হল, পুলিশ বলল লাশ পোষ্ট মর্টাম হলে রিপোর্ট দিয়েন আর লাশের কোন আত্মীয় আসলে তাকে লাশ আগেই দিবেন না আমাদের কে জানাবেন। লাশটা স্টার্কচারে মাঝে শামীম ডাক্তার আর নার্স এক দিকে বাকি তিন জন অন্য দিকে।
ডাক্তারঃ এদেশে মানুষ রুপি জানোয়ারের কোন অভাব নাই। দেখেছো কিভাবে মেয়েটাকে রেপ করেছে। বুঝলাম তোরা তোদের দেহের জ্বালা মিটিয়েছিস তাই বলে মেয়েটাকে মেরে ফেলতে হবে।
চাঁদঃ স্যার কি মনে হচ্ছে লাশ টা দেখে? মানে কবে মারা গেছে আর কতজন এমন জঘন্য কাজ করেছে?
ডাক্তারঃ মেয়েটা মনে হয় আজ ভোরেই মারা গেছে, আর মেয়েটাকে মনে হয় শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে এই দেখ গলায় হাতের দাগ। আর মেয়েটা কে মনে হয় চার পাঁচজন মিলে ধর্ষন করেছে।
বাদলঃ এখানে মেয়েটাও দোষ আছে, দেখেন স্যার কেমন পোষাক পরে বের হইছিলো। এসব ওয়েস্টার্ন কাপড় পরে কোন ছেলের সামন দিয়ে গেলে এমন করবে।
ননী গোপালঃ স্যার মেয়েটাকে কি ওই জায়গায় ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে?
ডাক্তারঃ দেখ এত কিছু তো বলতে পারবো না, তবে মেয়েটাকে মনে হয় না ওখানে কেউ ধর্ষণ করতে পারবে কারণ ওখানে আসে পাশে দোকান পাঠ আর বাসা বাড়ি আছে। সম্ভবত মেয়েটাকে গাড়িতে তুলে ধর্ষন করা হয়েছে এই দেখ পাে হাতে গাড়ির সিটের রং। আর মেয়েটকে তাদের মন মত ধর্ষণ করার পর গাড়ি চলন্ত অবস্থায় মেরে ফেলেছে।
এদিকে শামীম মনে মনে ভাবতেছে সেদিন যে রাতে মেয়েটা ওসব কাজ করতেছিলো তাহলে সেটা কি? আর কেউ জোর করে কারো সাথে এমন করলে ধর্ষন?
No comments