Header Ads

Header ADS

নিয়তি( এ কেমন ভালবাসা)-----পর্বঃ ০৬


ডাক্তার শামীমের জীবনের এরুপ ঘটনা শুনে হতবম্ব হয়ে গেছে। ডাক্তার শামীম এমন করুন কাহিনি শুনে প্রায় কাঁন্না করে ফেলেছে। সত্যি বলতে যত বড় কঠিক কাজ বা আঘাত হোক না কেনো ডাক্তারদের ভেঙ্গে পরলে চলে না, আর কাঁন্না করা তো তাদের মানায় না। শামীম কে বেডে শুয়ে দিয়ে ডাক্তার একটা নার্স কে তার সাথে চলে যেতে বলল। ডাক্তার নার্স কে তার দুপুরের জন্য নিয়ে আসা খাবারের বাটি টা নার্সের দ্বারা শামীমের বেডে পাঠিয়ে দিল। শামীম কে খাবার বের করে দিয়ে নার্স শামীমের জন্য পানি আনতে গেলো। নার্স পানি নিয়ে এসে দেখে শামীম সব খাবার খেয়ে ফেলেছে, শামীমের এমন কান্ড দেখে নার্স অবাক। সন্ধ্যা দিকে ডাক্তার যখন তার বাসা চলে যাবে তখন একবার শামীমের কাছে আসে তার সাথে দেখা করতে। শামীমের নাড়ি চেক করে দেখে শামীম এখন প্রায় সুস্হ তাই ডাক্তার শামীম কে বলে....
ডাক্তারঃ যাহোক আলহামদুলিল্লাহ, তুমি এখন সুস্হ প্রায়। কালকের মধ্যে তোমাকে রিলিজ করে দেওয়া হবে।
শামীমঃ চুপ
ডাক্তারঃ তা কোথায় যাবে এখন কার কাছে যাবে?
শামীম এবার কেঁদে ফেলল, শামীম বা যাবে কোথায়। আর ডাক্তার কে বা কি বলবে তার তো যাওয়ার মত কোন জায়গা না আর এই শহরের কোন কিছু চিনেও না সে। শামীমের এমন কাঁন্না করা দেখে ডাক্তার আবার তাকে বলল
ডাক্তারঃ তুমি এভাবে কাঁন্না করতেছো কেনো?
শামীমঃ আমার যাওয়ার মত কোন জায়গা নাই আমি তো আপনাকে সব বললামি!!
ডাক্তারঃ ওহ আমার তো মনে ছিলো না। তবে আজ থাকো কালকে আমি একটা ব্যবস্হা করে দিবো তোমাকে। আর শোন রাতে নার্স তোমার খাবার দিয়ে যাবে খেয়ে নিও কোন চিন্তা করো না।
ডাক্তারের কথা শুনে শামীম মনে একটু শান্তি পেলো। যাহোক অবশেষে এই ইট পাথরের শহরে একজন ভালো মানুষ শামীমের পাশে দাঁড়াল। পরেরদিন সকালে ডাক্তার এসে শামীম কে রিলিজ দিয়ে দেয়। তারপর তার সাথে শামীম কে তার চেম্বারে নিয়ে যায় শামীম কে একটা চেয়ারে বসতে দেয়।
ডাক্তারঃ শোন তোমার কাজের ব্যবস্হা আর থাকার ব্যবস্থা করে ফেলেছি।
শামীমঃ সত্যি কইতাছেন ডাক্তার সাহেব( মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে)
ডাক্তারঃ হ্যাঁ, তবে তুমি এই কাজ করবে কিনা জানি তবুও তোমাকে বলি।
শামীমঃ কি কাজ ডাক্তার সাহেব?
ডাক্তারঃ তোমার তো কোন লেখা পড়াও নাই, অন্য কোন কাজও যানো না। তাই তোমাকে এই হাসপাতালের ক্লিনার হিসাবে রাখার সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি।
শামীমাঃ ক্লিনার কি ডাক্তার সাহেব( অবুঝের মত করে)
ডাক্তারঃ ওহ সরি তুমি তো ক্লিনার বুঝবে না, তোমাকে এই হাসপাতালের ওয়ার্ড আর ফ্লোর পরিষ্কার করা লাগবে এবং মাঝে মাঝে মানুষের বাড়িতে বা রাস্তায় জঙ্গলে ড্রেনে ডোবায় নদীতে ডাস্টবিনে পানির ট্যাংকিতে মাটির নিচে যে লাশ গুলো থাকে সেসব নিয়ে হাসপাতালে আসতে হবে( মানে অপমৃত্যু যাদের হয় আর কি) তবে প্রতিদিন না যেদিন পুলিশ লাশ পেয়ে ফোন দিয়ে যানাবে সেদিন করে। তবে সেটা রাত বা দিন যে কোন সময় হতে পারে?
শামীমঃ তাই বলে লাশ( অনেক অবাক হয়ে)
ডাক্তারঃ দেখ বাবা এটা ঢাকা শহর এখানে চাইলে কাজ পাওয়া যায় না। আবার কাজের অভাব নাই, তবে যোগ্যতা আর টাকা লাগে যার কোনটাই তোমার কাছে নাই। আর সবচেয়ে বড় কথা তুমি কোন কাজ জানো না। শুধু তুমি একা এ কাজ করবে না তো তোমার সাথে আরো তিনজন থাকবে, একজন চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় তোমাকে এখানে অনেক কষ্টে ঢুকালাম।
শামীমঃ আপনাকে দেখে আমার মনে হইছে আপনে অনেক ভালা মানুষ তাই আপনে যা করতে বলবেন আমি তাই করমু।
ডাক্তারঃ তোমাকে আমার বাসায় কাজ দিতে পারতাম তবে দিলাম না কেনো জানো। এর আগে আমার বাসায় একটা কাজের মেয়ে ছিলো তাকে আমার স্ত্রী প্রতিনিয়ত মানষিক আর শারীরিক নির্যাতন করত। একটা কাছে ছেলে আমার বাসায় কাজ করত তার দ্বারা আমার ৯ বছরের মেয়ে যৌন হেনস্হার স্বীকার হইছে। তাই এখন চাইলেও আমি বাসায় কাউকে রাখি না।
ডাক্তার সাহেব যে কথা বলল তা সত্য এমন ঘটনা আমাদের দেশে অনেক ঘটেছে। কাজের মেয়ের উপর অনেকে অন্যায় অত্যাচার করে সে হোন জনপ্রতিনিধি কিংবা বিনোদন জগতের মানুষ। এমন অনেক কাজের ছেলে আছে যাদের দ্বারা শুরু বাসার মালিকের ছোট মেয়ে কিংবা বড় মেয়ে না তার স্ত্রীও এসবের স্বীকার হয়। যাদের কে মুখ দেখে ভালো মনে করবেন তার ভিতরে দেখবেন সমস্যা আছে।
শামীম আর ডাক্তারের কথার মাছে একটা রোগা পাতলা কালোর মত ছেলে ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলো।
ছেলেটাঃ সালামাইকুম ডাক্তার সাহেব, হঠাৎ করে ডাকলেন কেনো যেনো?
ডাক্তারঃ বাদল এসেছো ভালো করেছো, এ হচ্ছে শামীম। আর শামীম এ হচ্ছে বাদল মহন্ত আজ থেকে তুমি এর সাথেই কাজ করবে।
বাদলঃ আমার সাথে কাজ করবে মানে?
ডাক্তারঃ তোমাদের চার জনের টিমে যে একজন নাই সেই একজনের ঘাটতি পূরণ করতে একে রাখলাম বুঝলে।
বাদলঃ পারবে কি স্যার, নাকি আগের টার মত পালাবে?
ডাক্তারঃ আরে পারবে আর অনেক কাজের ছেলে সে। বাদল ওকে একটু সব বুঝিয়ে দিও আর ছেলেটা অনেক সহজ সরল বুঝলে? শামীম তুমি এখন বাদলের সাথে গিয়ে কাজ বুঝে নাও।
শামীম সেই রোগা পাতলা কালোর মত দেখতে ছেলেটার পিছনে পিছনে গেলো তারপর ছেলেটা শামীম কে একটা বালতি আর ফ্লোর পরিষ্কার করা ঝারল দিলো। তখন আর একজন এসে বাদল কে বলতেছে
ছেলেঃ বাদল দাদা এটা আবার কে? একে কোথায় পেলে?
বাদলঃ আমি পাইনি ডাক্তার স্বপন স্যার এটারে আনছে।
ছেলেঃ পুরান পাগলে ভাত পায় না নতুন পাগলের আমদানি। তা ও কি আমাদের মত হিন্দু নাকি অন্য জাতি?
বাদলঃ এই শামীম এদিকে আয়।
শামীম কাজ ফেলে বাদল আর ছেলেটার কাছে গেলো।
বাদলঃ আচ্ছা তুই হিন্দু নাকি মুসলিম?
শামীমঃ আমি মুসলিম ভাই। ( সরল ভাবে)
বাদলঃ ওহ আচ্ছা, শোন আমি আর এ হিন্দু ওর না হচ্ছে ননী গোপাল। ননী গোপাল ও হচ্ছে শামীম, যে কাজ টা পারবে না একটু বুঝিয়ে দিস। আজ চাঁদ কে দেখতেছি না যে ও কোথায়?
ননী গোপালঃ এখনও আসে নাই দাদা।
বাদলঃ এই চাঁদ কে নিয়ে আর পারি না ওর জন্য আর যে কত বড় সাহেবের কাজ থেকে কথা শুনতে হবে তা ভগবান জানে।
ননী গোপালঃ ওরে তো তুমি কিছুই বলো না দাদা, তার জন্যই তো মাথার উপর উঠে গেছে।
বাদলঃ আরে দাদা মানে আমাকে ও, আর এখানে শুধু আমরা চারজন ক্লিনার না আরো আছে। আমাদের মুল কাজ কি তা তো জানিস এটা শুধু চাকরি বাঁচানোর জন্য আর কি।
ননী গোপালঃ হুমমম।
শামীম মনোযোগ সহকারে কাজ করতে লাগলো, আগে যেমন গ্রামে মজুমদার বাড়িতে কাজ করত ঠিক সেই রকম করেই করতেছে। শামীম তো ভয়ে ভয়ে কাজ করতেছে, কারণ যদি কোন ভুল করে আর তার কারণে যদি তাকে কেউ মারে। মাঝে মাঝে কোন সমস্যা হলে শামীম বাদল আর ননী গোপালের কাজ থেকে সেটা ঠিক করে নিতেছে। তবে শামীমের কাজ করা দেখে বাকি সব ক্লিনাররা হাসতেছে। কেনো হাসতেছে জানেন সবাই একবার করে পরিষ্কার করে বিশ্রাম নিতেছে আর শামীম সেই যে পরিষ্কার করতে ধরেছে তা আর থামবার নাম নেই। শামীম তো আর জানে না যখন একটু অপরিষ্কার হবে তখন পরিষ্কার করতে হবে তাই সে বারে বারে এ মাথা থেকে ও মাথা কাজ করেই চলতেছে। বাদল এসব দেখে সহ্য করতে না পেরে
বাদলঃ ওই বলদ গাধা জীবনে কাজ করিস নাই তুই?
শামীমঃ কেন ভাই কোন কি ভুল করছি( ভয়ে ভয়ে)
বাদলঃ আরে বলদ তোকে বার বার কে পরিষ্কার করতে বলেছে হ্যাঁ? শোন তোকে যতটুকু এরিয়া দেওয়া হইছে তুই শুধু ততটুকু এরিয়া পরিষ্কার করবি, তবে বারে বারে না যখন ময়লা হবে তখন। আর বাকি সময় ওই যে দেখতেছিস সবাই বসে আড্ডা দিতেছে সেখানে যাবি, আর যদি কোন রোগির সাথে আসা মানুষ তোর কাছে কোন সাহায্য চায় তাহলে তাকে সাহায্য করবি দেখবি খুশি হয়ে তোকে বকসিস দিবে বুঝলি। এখন আয় আমার সাথে পরে আবার করিস এখন সবার সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দিবো আর বিকালে তোর একটা আইডি কার্ড বানিয়ে দিবো বুঝলি।
শামীম বাদলের কথা শুনে বুঝতে পারলো এখানে নিজের মন মত কাজ করা যায়। তবে কাজ ভালো দেখাতে হবে এটা ঠিক আর ভুল করলে কেউ গায়ে হাত তুলবে না। শামীম মনে মনে ডাক্তার স্বপন কে অনেক ধন্যবাদ দিতে লাগলো আর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে লাগলো। বাদল শামীমের সাথে ওখানে দিনের বেলায় কাজ করা সবার সাথে পরিচয় করে দিলো। প্রথমে শামীমের এমন কাজ করা দেখে হাসলেও পরে সবাই শামীমের কথা বলার ধরণ আর সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলা দেখে বুঝতে পারলো এ ছেলে সত্যি সহজ সরল।
_______________
শামীম কে আজ দুইদিন থেকে দেখে না রহিম মিয়া, আর গতকাল তো সুপ্রিয়ার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে তার শ্বশুড় বাড়ি চিটাগাং চলে গেছে। তাই রহিম মিয়া একটু দ্রুত সোহেল আর করিমের কাছে গেলো। গিয়ে ওদের কে বলল শামীমের খোজ করতে সে নিজে দুইদিন থেকে খোজ করে কোথাও শামীম কে পেলো না। সোহেল আর করিম দুইজন দুইদিকে গেলো একজন গেলো বাজারের দিকে আর একজন গেলো সাগর আর বড় গেরস্তর ঘরে যাদের আর কি লবণ চাষের জমি আছে। রহিম মিয়া শামীম কে দেখতে না পেয়ে আজ দুদিন থেকে ঠিকমত খাওয়া করতেছে না। রহিম মিয়া বুঝতে পারতেছে তার শামীম ছাড়া চলবে না। সারাদিন সোহেল আর করিম পুরা এলাকা খোঁজ করলো কোথাও পেলো না শেষে হতাশ হয়ে দুজনে ফিরার পথে দেখলো তাদের এলাকার সেই বড় ভাই যে শামীম কে সাহায্য করেছে তাই দুইজনে তার কাছে গেলো
সোহেলঃ ভাইজান আজ দুইদিন ধইরা শামীম রে খোজতাছি কোথাও পাইতাছি না। সেদিন রাতে তো আপনার সাথে বাজারে দেখছিলাম বলতে পারেন কৈ আছে শামীম?
আমি কেমন করে বলবো, আর তোদের বলে বা কি হবে। আবার তোরা মজুমদারের কাছে নিয়ে গিয়ে মকর খাওয়াবি।
করিমঃ না ভাইজান, হের বাপে হেরে খোজতাছে। দুদিন থাইকা দেখতে না পাইরা বেঁচারা কেমন জানি হইয়া গেছে?
আমি ওরে সাগর পাড় কইরা দিছে, ওর উপর অত্যাচার করা সহ্য করতে না পেরে ওরে আমি মাগনামা ঘাটের ওই দিক দিয়া পাঠাইয়া দিছি। ওর বাপ রে গিয়া বলবি আমি শামীম রে পাঠাইয়া দিছি ওর ভালোর জন্য।
সোহেল আর করিম বড়ভাইয়ের কাছে এসব শুনে এসে রহিম মিয়াকে সব বলে। রহিম মিয়া এসব শোনার পর সোহেল আর করিম কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
রহিমঃ আমার বাপের কাছে যে একটা টাকাও নাই, ওয় কি খাইতাছে কি করতাছে কে জানে। ওয় তো কোন কাম কাজ জানে না, ও তো কারো কাছে জোর করে কোন কাম কাজ নিতে পারবো না। ( কেঁদে)
সোহেলঃ চাচা এখন আর কেঁদে কি হইবো। তুমি বা আমরা যদি কখনও কেউ চিটাগাং যাই তাইলে ওরে খোঁজ কইরা নিয়া আসমু।
রহিমঃ আমার বাপ যে কোন কষ্টে আছে কে জানে। আমি কি তারে আমার কাছে রাখতে পারতাম না। আমি কি জানতাম আমার উপরে এত অভিমান কইরা এত দুরে চলে যাইবো। আল্লাহ আমার মা বাবা হীন বাপ টারে দেইখা রাইখো। আল্লাহ আমার বাপে এখন তুমি ছাড়া আর কেউ নাই। আমার বাপ যে বোকা ওরে যদি কেউ মাইরা ফালায়। আল্লাহ আমার বাপের লগে মৃত্যুর একদিন আগে হইলেও দেখা করাইও আমি ওর পায়ে ধরে মাপ চাবো।
করিমঃ চাচা এমন করে বইলো না তোমার পোলার কিছুই হইবো না দেইখো আল্লাহ তোমার পোলারে অনেক ভালো রাখবো। তার মত ভালা পোলা তো আর হয় না, ভালা মানুষ রে আল্লাহ দেইখা রাখে।
_______________
বিয়ে করে সুপ্রিয়া চিটাগাং চলে যাওয়ার পরেরদিন হানিমুনে তারা রাঙামাটি যায়। তারা যেনো ভুলে গেছে শামীম নামে কারো সাথে তারা অন্যায় করেছে। শামীম কেমন আছে কি করতেছে তার কোন খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে নাই। সত্যি বলতে বিয়ে করলে নতুন বর/বউ এসব মনে রাখে না। তারা তাদের দাম্পত্য জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চায় অন্য কিছু ভাবতে চায় না। সেটা যেনো কোন নব দম্পতি হোক না কেনো। তারা সেখানে চার দিন থেকে চিটাগাং ফিরে আসে। মেয়ে চিটাগাং এসেছে শুনে মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে নিয়ে আসার জন্য মজুমদার চিটাগাং শহরে গিয়ে তার মেয়ে আর জামাইকে নিয়ে আসল। বাড়িতে এসে সুপ্রিয়ার শামীমের কথা মনে পড়ে গেলো। তাই সে শামীম কে খুঁজতে একাই সাগর পাড়ে গেলো।
__________________
শামীম এবার যেখানে খুব সিরিয়াস রুগি আছে সেই ওয়ার্ডের দিকে গিয়ে পরিষ্কার করতে লাগলো। শামীম তার যে কোন কাজ করলে সে সেই কাজ মনোযোগ সহকারে করে। তাই তাকে কেউ ডাকলেও অত সহজে শুনতে পারে না। এমন সময় একটা মেয়ে এসে শামীম কে ডাকতে লাগলো এই ছেলে এই ছেলে বলে। এখানে যেহেতু অনেক ছেলে আছে তাই শামীম আর এই ডাক শুনেও মাথা তুলে সামনে তাকালো না। শামীম কে তো বাদল ছাড়া কেউ ডাকতে আসবে না, এখানে হয়ত বা অন্য কাউকে ডাকতেছে। মেয়েটা আর বেশি ডাকলো না কারণ এটা হসপিটাল এখানে অনেক রোগি আছে। তাই সে এবার শামীমের কাছে এগিয়ে গিয়ে দিলো এক ধাক্কা অমনি শামীম নিজেকে সামলাতে না পেরে ভেজা ফ্লোরে ছিলিপ কেটে পড়ে গেলো।
শামীমঃ ওরে আল্লাহ রে কে আমারে এমন করে থাক্কা মারলো রে। আজ মনে হয় আমার কমর টা গেলো রে" ( উঠতে উঠতে)
মেয়েটাঃ এই সালা সেই কখন থেকে তোকে ডাকতেছি কানে শুনতে পাস না? ( রেগে)
শামীম এবার মাথা তুলে দেখে একটা মেয়ে, দেখতে ততটা সুন্দন না তেল কালোর মত দেখতে তবে চেহারার মাঝে একটা আর্ট আছে যা যেকোন ছেলে কে পাগল করে দিবে। মেয়ে পাতলা আর লম্বা মাথায় ওড়না দিয়েছে আর লম্বা জামা পরেছে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত মেয়েটাকে শামীম দেখতেছে আর ভাবতেছে এনারে তো কোথাও দেখি নাই কে এনি।
মেয়েঃ ওই সালা জীবনে মেয়ে মানুষ দেখিস নাই, ওমন করে কি দেখিস? আর তোরে যে এতক্ষণ থাইকা ডাকতাছি তা কি তোর কানে যায় না? ( আরো রেগে)
শামীম এবার মেয়েটার রাগ দেখে ভয় পেয়ে গেলো। মনে মনে আল্লাহ কে ডাকতে লাগলো, আর শামীমের হাত পা কাপা শুরু হয়ে গেছে।
মেয়টাঃ ওই তুই কি বোবা নাকি? কথা বলতে পারিস না? ( ঝাড়ি মেরে)
শামীমঃ (ভয়ে ভয়ে) আমি কোন দোষ করি নাই তো, আপনে তো এই ছেলে এই ছেলে করে কারে জানি ডাকতাছেন। আমি কি জানতাম নাকি আমারে ডাকতাছেন। আমি কি কোন দোষ করেছি ম্যাডাম?
মেয়েটাঃ দোষ মানে অনেক বড় দোষ করেছিস তুই।
শামীমঃ কি দোষ ম্যাডাম
মেয়েটাঃ তুই এই জায়গা পরিষ্কার করতেছিস কেনো? আর তোকে দেখে তো ক্লিনার মনে হয় না তাহলে আমার বালতি আর পরিষ্কার ঝাড়ল টা ধরে এই জায়গা পরিষ্কার করতেছিস কেনো? ( ঝাড়ি মেরে)
চাঁদ কে আসতে দেখে বাদল তার কাজ ফেলে চাঁদের পিছনে পিছনে আসল। এসে দেখে চাঁদ শামীমের সাথে কড়া ভাবে কথা বলতেছে আর বেচারা শামীম চাঁদের এমন কথা শুনে ভয়ে কেমন যেনো জরো সরো হয়ে গেছে। তাই বাদল এক প্রকার দোড়ে চাঁদ আর শামীমের কাছে গেলো।
বাদলঃ চাঁদ আর ছেলেটার সাথে ওমন করে কথা বলিস না। দেখতেছিস না তোর কথা শুনে কেমন ভয়ে কাপতেছে।
চাঁদ এবার লক্ষ্য করে দেখলো বাদল মহন্তের কথা তো সত্য। এই ছেলে সত্যি সত্যি অনেক ভয় পাইছে, ছেলে মানুষ এত ভয় পায় মেয়েদের তা তো আগে জানত না চাঁদ। শামীমের এমন কান্ড দেখে চাঁদ এবার হেসে দিলো।
চাঁদঃ বাদল দাদা এই বদল টা কে?
বাদলঃ ওর নাম শামীম, স্বপন স্যার ওরে আজকে প্রথম এখানে নিয়ে আসছে। আর তুই তো নাই তাই তোর এরিয়া কেউ পরিষ্কার করে দিতেছিলো না তাই বাধ্য হয়ে শামীম কে বলেছিলাম তুই না পর্যন্ত যেনো তোর জায়গা টা পরিষ্কার করে দেয়।
চাঁদঃ তাহলে এই বলদ টাকে স্বপন স্যারে আনছে।
বাদলঃ হুমম, এ আমাদের সাথে লাশ নিয়ে আসার কাজও করবে।
চাঁদ এবার বাদলের এমন কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠল
চাঁদঃ দাদা তুমি কি পাগল, দেখতেছো না বলদ টা কেমন করে এখনও কাপতাছে। সে কিনা আমাদের সাথে লাশ আনতে যাবে ওর যা অবস্থা ওইখানে না মরে যায়( হাসতে হাসতে)
বাদলঃ সেটা পরে দেখা যাবে, নে এবার তোর কাজ তুই কর। আর শামীম এ হচ্ছে চাঁদ, চাঁদ এটা শামীম। এখন যা যে যার মত করে কাজ কর দুপুরের খাবার সময় হলো বলে।
শামীম এবার দ্রুত সেখান থেকে তার কাজের জায়গায় চলে আসল। আর একটু হলে শামীম মরেই যেতো বোধয়। শামীমের এমন কান্ড দেখে চাঁদ মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো আর তার কাজ করতে লাগলো। আসলে চাঁদ প্রায় দেরি করে আসে, চাঁদ কে কোন ডাক্তার বা নার্স কেউ কিছু বলতে পারে না। চাঁদকে অনেক ডাক্তার নার্স খারাপ প্রস্তাব দিয়েছিলো, তাদের কথায় যদি চাঁদ রাজি থাকে তাহলে চাঁদ কে বড় নার্স করে দিবে। কিন্তু চাঁদ তাদের কারো কথায় কান না দিয়ে তার যেটা কাজ সেটাই করে গেছে। বরং চাঁদ কে যে ডাক্তার আর নার্স( ছেলে) খারাপ প্রস্তাব দিছে চাঁদ সাথে সাথে তাদের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিছে। চাঁদ এই সব ডাক্তার আর নার্সের ( ছেলের) জন্য নাইট ডিউটি করে না। চাঁদ কে দেখলে মনে হবে সে অনেক রাগি বা বদমেজাজি কিন্তু চাঁদ মোটেও তেমন না। চাঁদ অনেক ভদ্র আর নম্র ভালো একটা মেয়ে।
দুপুরে যে যার খাবারের জন্য চলে গেলো, কিন্তু একজন গেলো না সে হচ্ছে শামীম। আজকেই তো হাসপাতাল থেকে রিলিজ পেয়ে আজকেই কাজে ধরল প্রথম সে দুপুরের খাবার কোথায় পাবে। শামীমের তো আপন কেউ এই শহরে থাকে না যে তারা এসে দিয়ে যাবে। শামীম তো এটাও জানে না ক্যান্টিন কি, আর ক্যান্টিনেও বাকিতে খাবার পাওয়া যায় সে যদি হাসপাতালের স্টাফ হয়। সেদিন দুপুরে আর শামীমের খাওয়া হলো না, তাই শামীম হাসপাতালের ভিতর থেকে বাইরে বের হয়ে এসে একটা ট্যাপ থেকে পানি খেলো। পানি খেয়ে শামীম এক জায়গায় বসল।

No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.