তোকে_অনেক_ভালোবাসি------পর্ব_২৪
আজ ভার্সিটি অফ অনেকটা ফ্রি লাগছে। বাড়িতে আমি রাফিয়া আর অথই আছি। ব্যালকনিতে বসে ফেসবুকিং করছি এমন সময় রাফিয়া এসে আমার পাশে বসলো। আমি একবার ওকে দেখে আবার ফোনের দিকে তাকিয়ে বললাম.........
রাফিয়া আপু কিছু বলবে??
হ্যা আসলে
কি বলো?
আসলে আরিশা আমার একটা বন্ধু আসবে বাড়িতে মামিরা নেই তাই তোমাকে বলছি ও এলে কি প্রবলেম হবে??
বন্ধুকে বাড়িতে কেনো আনতে হবে! কিন্তু আমি তো না করতেও পারছি না পরে আবার এটা নিয়ে মাকে বলবে আর মা আমাকে বকবে। এ মেয়েকে দেখা যায় এমন পেটে অনেক প্যাচ।
কি হলো আরিশা ঠিকআছে আমার বন্ধুকে বরং বলে দেই আমার মামা বাড়িতে আসতে হবে না।
না আপু আসতে বলো তবে বেশিক্ষণ যেনো না থাকে। বাড়িতে কেউ নেই আদ্র এসে দেখলে রাগ করবে। আর শোনো আমাকে কিন্তু ডেকো না আবার।
আচ্ছা আমার মিষ্টি বোনটি।
এ কথা বলে বাকা হেসে রাফিয়া চলে গেলো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর যাওয়ার দিকে। ওর হাসিটা সুবিধার লাগলো না আবার বোনটি বললো আমাকে! হঠাৎ করেই আবার সেই ম্যাসেজ এর কথা মনে পড়ে গেলো।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো ফোনের স্ক্রিনে মনি নামটা ভেসে উঠলো। রিসিভ করে কানের কাছে ফোন ধরতেই মনিকা বলে উঠলো.........
আরু কেমন আছিস তুই??
আমি তো খুব ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? এই মনি তোকে খুশি খুশি লাগছে কেনো??
আমিও অনেক ভালো আছি। খুশির কারনটা এখন বলা যাবে না তুই আদ্র ভাইয়াকে নিয়ে আমাদের বাসায় আয় তারপর বলবো।
সে পরে আসবো,মনি জানু আমার বলনা কি কারন? তুই তো জানিস আমার এতো ধৈর্য নেই। বলনা প্লিজজ?
উফ এ মেয়ের যে ধৈর্য কম এটা কেনো আমার মাথায় ছিলো না।
মনি তুই বলবি নাকি ফোনের মধ্যেই তো নাকটা ফাটিয়ে দিবো।
আরে বলছি এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো? আরু তুই খালামনি হতে চলেছিস।
কিহ! মনি তুই সত্যি বলছিস!! আমার যে কি খুশি লাগছে তোকে কি বলবো। দোয়া করি গুলুগুলু কিউটি একটা প্রিন্সেস আসবে,নরম নরম হাতে ছুয়ে দেবে আর আমাকে খালামনি বলে ডাকবে। দারুন হবে ব্যাপারটা।
বা বাহ আরু তুই দেখছি আমার থেকেও বেশি আনন্দিত! নিজে তো লাফাচ্ছিস আমারো তো লাফানো দরকার তাইনা। আমার খালামনি হওয়ার সুযোগটা কবে আসবে শুনি??
মনির কথায় আরুর হাসিটা মিলিয়ে গেলো ও মনে মনে ভাবছে.......আদ্রকে ভালোবেসেছি ঠিকি আপন করেই নিতে পারি নি এখনো আর খালামনি হওয়ার সুযোগ।
আরু হালকা হসে বললো........
যখন সুযোগ আসবে জানতে পারবি। এখন এটা বল তন্ময় ভাইয়া ও কি তোর মতো খুশি??
আরু কি বলবো তোকে আমার থেকেও বেশি খুশি। বাবা হবে সে কথা শুনে সে কি অবস্থা আমাকে কোলে নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরেছে।
ওহ,আচ্ছা মনি আমি তোর সাথে পরে কথা বলবো একটু কাজ আছে।
.
.
মনিকার ফোন কেটে আরিশা ভাবতে লাগলো কয়েক দিন আগের কথা.........আদ্র ওর এক ফ্রেন্ডের সাথে ম্যাসেনজারে কথা বলছিলো আর আরু আদ্রর কাধে মাথা রেখে বসে ছিলো। হঠাৎ আদ্র বলে উঠলো.......আরু দেখো বেবিটা কত্ত কিউট।
আরু বেবিটাকে দেখে বললো.......হ্যা অনেক কিউট বেবি। কার বেবি এটা??
নাহিদের মেয়ে আমার ফ্রেন্ড ও। নাহিদ কি বলে জানো? বলে ওর মেয়ে নাকি সারাক্ষণ আধো আধো স্বরে ওকে বাবা বলে ডাকে। রাতে নাকি ওর মায়ের কাছে থাকতে চায় না নাহিদের বুকে শুয়ে ঘুমায়।
ইস কবে যে আমাদের ও একটা বেবি আসবে আমাকে বাবা বলবে,সব সময় এটা সেটা আবদার করবে। নাহিদের মতো বাবা হওয়ার স্বাদ টা আমারো খুব নিতে.......
আরু চোখ বড় বড় করে তাকাতেই আদ্র থেমে কথা ঘুরিয়ে বললো.......আরু এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমি এখনকার কথা বলি নি তো।
কথাগুলো ভেবে আরু হেসে উঠলো। আর মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিলো যা আদ্র আর আরুর বিবাহিত জীবনটা নতুন করে গড়ে তুলবে।
.
.
কলিংবেল বেজে চলেছে কেউ খুলছে না আরু জোরে জোরে অথইকে ডাকলো অথই কোনো সারা দিলো না। হয়তো বাড়ির সবাই চলে এসেছে তাই নিজেই নিচে নেমে এলো দরজা খুলতে।
আরু দরজা খুলতেই দেখলো একটা ছেলে একগুচ্ছো গোলাপ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। অপরিচিত ছেলেকে দেখে আরু কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো........
কাকে চাই??
আমি অয়ন রাফিয়ার ফ্রেন্ড। রাফিয়া আছে??
জ্বি আছে আসুন।
ছেলেটি ভেতরে আসতে আরু বললো........আপনি বসুন আমি রাফিয়া আপুকে ডেকে দিচ্ছি।
আরু চলে যেতে নিলে ছেলেটি বলে উঠলো........আপনি রাফিয়ার মামাতো বোন আরিশা তাইতো??
আরু ঘুরে বললো........হ্যা,এছাড়াও আমার আরো একটা পরিচয় আছে আমি......
জানি আপনি রাফিয়ার বড় মামার ছেলের বউ। এই নিন ফুল গুলো আপনার জন্য এনেছি।
আরু চোখ ছোট করে বললো.......আমার জন্য ফুল এনেছেন মানে! আপনি তো রাফিয়া আপুর বন্ধু ফুলগুলো ওকেই দেবেন।
না মানে রাফিয়ার মুখে আপনার কথা অনেক শুনেছি আর শুনলাম আপনাদের কিছুদিন হলো বিয়ে হয়েছে তাই আর কি। ফুলগুলো নিলে খুশি হতাম।
আরু আর কিছু বললো না মৃদু হেসে অয়ন নামে ছেলেটির হাত থেকে ফুল নিয়ে ধন্যবাদ বলে চলে গেলো।
আরু ফুল হাতে উপরে আসতেই অথই বললো........ভাবি ছেলেটি কে??
রাফিয়া আপুর বন্ধু যা তো ওই ন্যাকা রাণীকে ডেকে দে। আর এই নে ফুলগুলো তোর।
আমাকে দিচ্ছো কেনো ছেলেটি তো তোমার আর ভাইয়ার নতুন বিয়ে হয়েছে তাই ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালো। ওগুলো রুমে নিয়ে রাখো ভাইয়া এসে ভাইয়াকেও ভাগ দিয়ো।
আরু অথই এর নাক টেনে বললো........সব বুঝিস তাইনা। যা রাফিয়া আপুকে ডেকে দিয়ে আমার রুমে আয়।
আরু আলমারি থেকে সবগুলো শাড়ি বেড় করে বেডের উপর রেখে গালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবছে। তারপর সবগুলো শাড়ির মধ্যে থেকে তিনটা শাড়ি আলাদা করলো। রেড কালারের কাতান শাড়ি একটা, ব্লু আর অরেঞ্জ এর মিশ্রণে একটা সিল্কের জর্জেট শাড়ি,আর একটা ব্ল্যাক জর্জেট শাড়ি পাশাপাশি রেখে ভাবছে কোনটা পড়বে।
একি ভাবি! সব শাড়ি বেড় করেছো কেনো??
পড়বো তাই বেড় করেছি।
সবগুলো একসাথে পড়বে নাকি??
ধুর সবগুলো একসাথে পড়া যায় নাকি। আসলে কোনটা পড়বো বুঝতে পারছিলাম না তাই সব গুলো নামিয়ে এই তিনটা সিলেক্ট করেছি। এখন এই তিনটার মধ্যে কোনটা পড়বো বলতো??
অথই শাড়ি তিনটা পরখ করে দেখে বললো........ভাবি ব্লু শাড়িটা পড়ো তোমার তো এ কালার পছন্দ,তোমাকে মানাবেও ভালো। তাছাড়া ভাইয়া ও ব্লু লাইক করে। কিন্তু হঠাৎ শাড়ি কেনো পড়বে ভাইয়ার সাথে কি ঘুরতে যাবে??
আরে না এমনি পড়বো এতো গুলো শাড়ি ফেলে রেখে কি করবো বল তাই ভাবলাম মাঝে মধ্যে পড়বো।
.
.
আরিশা শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর করে সেজেছে। আয়নার সামনে দাড়িয়ে মাথায় কাপড় তুলে ঘুরে ফিরে নিজেকে দেখছে। দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখলো আদ্র এসেছে। আদ্র আরুর দিকে একপলক তাকিয়ে ফোন ঘড়ি রেখে টাই খুলতে খুলতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আরু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো........আদ্র তো অফিস থেকে এসে আগে আমাকে খোজে আর আজ আমাকে দেখেও কিছু বললো না! আমি যে শাড়ি পড়েছি সেটাও কি দেখেনি? আদ্রকে দেখতে কেমন যেনো বিষন্ন লাগছিলো কি হয়েছে উনার? শরীর খারাপ নয় তো?
আরু সেখানেই দাড়িয়ে আছে আদ্র ফ্রেস হয়ে বেড় হয়ে সোফায় গিয়ে বসলো। আরুও গিয়ে আদ্রর পাশে বসলো।
কি হয়েছে তোমার শরীর খারাপ? এসে আমার সাথে কথা বললে না তাকালেও না ঠিক করে।
আদ্র কিছু বলতে নিলে ওর চোখ পড়লো টেবিলে। সেখানে গোলাপ গুলো রাখা আদ্র উঠে গিয়ে ফুলগুলো হাতে নিয়ে বললো........তাহলে আমি ভুল কিছু দেখিনি।
আদ্রর গলার স্বরটা গম্ভীর আরু হাসি মুখে বললো........ভুল দেখবে কেনো। ফুলগুলো তোমার আর আমার বিয়ের জন্য......
থাক বলতে হবে না। ছেলেটির নাম অয়ন তোমার ভার্সিটির বন্ধু তাইতো??
হ্যা ছেলেটির নাম অয়ন কিন্তু ও তো আমার বন্ধু নয় রাফিয়া আপুর বন্ধু।
আরু মিথ্যা বলবে না রাফিয়ার বন্ধু হলে ওকে ফুল না দিয়ে তোমাকে কেনো দেবে। খুব তো হাসি হাসি মুখ করে ওই ছেলের থেকে ফুলগুলো নিয়েছো।
আদ্র কি বলছো তুমি এসব!
কি বলছি বুঝতে পারছো না ওয়েট.......এই দেখো।
আদ্র নিজের ফোন আরুর সামনে ধরলো সেখানে ছেলেটির মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না তবে আরুর মুখটা ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছে। আরু হাসি মুখে ফুলগুলো হাতে নিচ্ছে এমন একটা ছবি আদ্র আরুকে দেখালো।
আরু ভেজা কন্ঠে বললো.........আদ্র তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। ছেলেটিকে সত্যি আমি আগে দেখি নি।
ভুল বুঝছি না কিন্তু আমার কষ্ট হয় আরু অন্য কোনো ছেলেকে তোমার পাশে আমি সহ্য করতে পারি না। আর সেখানে এই ছেলে তোমাকে ফুল দিয়েছে।
এই ছবি তোমাকে কে দিয়েছে আর এটা আমার বন্ধু এ কথাটা কে বলেছে?
আননোন একটা নাম্বার থেকে ছবি দিয়েছে আর বলেছে ছেলেটি তোমার ভার্সিটির ফ্রেন্ড বাড়িতে কেউ নেই তাই তুমি ওকে বাড়িতে এনেছো। কেনো করলে আরু তুমি এটা? তুমি কি বোঝো না আমার খারাপ লাগে?
আদ্র ওই ছেলেটাতো........
আদ্র আরুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। অথই কোনো একটা দরকারে এসেছিলো ওদের কথা শুনে দরজার বাইরেই দাড়িয়ে ছিলো। আদ্র যে আরুকে একটু হলেও ভুল বুঝছে অথই এটা বুঝেছে।
আদ্র ছাদে দাড়িয়ে আছে অথই এসে পেছন থেকে ডাকলো........ভাইয়া?
আদ্র ঘুরে তাকিয়ে বললো........অথই তুই এখানে কেনো??
ভাইয়া তুমি ভাবিকে ভুল বুঝছো কেনো? ভাবির তো কোনো দোষ নেই।
আরু তোকে এসব বলে দিয়েছে! ওর বাচ্চামি স্বভাবটা গেলো না।
ভাবি আমাকে কিছুই বলেনি তোমরা কথা বলছিলে তখন আমি শুনেছি। আচ্ছা ভাইয়া তোমার কি করে মনে হলো ভাবি কোনো ছেলেকে বাড়িতে আনবে তাও ফাকা বাড়িতে ভাবি যে এমন নয় তুমি তো জানো। শুধু একটা ছবি দেখেই কিসব ভেবে নিচ্ছো।
অথই তুই ছোট বুঝবি না এসব নিচে যা।
ছোট হলেও অনেক কিছু বুঝতে পারি ভাইয়া। ওই ছেলেটি রাফিয়া আপুর বন্ধু,রাফিয়া আপুর সাথে দেখা করতে এসেছিলো। রাফিয়া আপুর থেকে নাকি শুনেছে তোমার আর আরিশা ভাবির বিয়ের কথা তাই ফুলগুলো দিয়ে ভাবিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। ভাবি নিতে চায় নি ছেলেটি তোমাদের বিয়ের শুভেচ্ছা জানিয়েছে বলে নিয়েছে। আমি তখন ছিলাম ওখানে দেখেছি এবং শুনেছি সবটা।
ভাইয়া তুমি কি করে পারলে একটা ছবি দেখে ভাবিকে ভুল বুঝতে? ভাবি যে আজ তোমার জন্য শাড়ি পড়েছে সেজেছে দেখেছো তুমি? সেই সন্ধা থেকে সেজে অপেক্ষা করছে তোমার জন্য। আর তুমি কি করলে সামান্য একটা বিষয়ে ভাবির হাসি মুখটাতে মেঘের ছায়া নামিয়ে দিলে কথা শুনালে ভাবিকে।
আদ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অথই এর দিকে। সত্যি তো সামান্য একটা বিষয় তার জন্য আরুর সাথে এমন বিহেব করলো ভেবেই আদ্রর খারাপ লাগছে। এমনকি নিজের ছোট বোনের কাছেও ছোট হতো হলো আজ। আদ্র তো চাইলেই পারতো ঠান্ডা মাথায় আরুর থেকে সব শুনতে।
অথই বললো.......ভাইয়া সত্যি বলছি ভাবির কোনো দোষ নেই। তুমি যাও ভাবির কাছে হয়তো মন খারাপ করে বসে আছে।
আদ্র মৃদু হেসে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে নিচে চলে গেলো।
No comments