Header Ads

Header ADS

তোকে_অনেক_ভালোবাসি-----পর্ব_২৩


আরু আদ্রর নাম্বারে কয়েকবার ফোন দিলো আদ্র ফোন তুলছে না। আরু ফোনের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে ম্যাসেজটা আবারে পড়লো ওখানে লেখা ছিলো.........
কেমন আছো আরিশা? নিশ্চই ভালো। হুম ভালো থাকারি কথা নিজের ভালোবাসার মানুষটাকেই যে বিয়ে করতে পেরেছো। কিন্তু আমি তো ভালো নেই কি করে ভালো থাকি বলো তুমি যে আমার ভালোবাসাকে কেড়ে নিয়েছো আমার আদ্রকে কেড়ে নিয়েছো। খুব সুখে আছো তাইনা? হ্যা এতো দিন এ সুখে থাকার সুযোগটা আমি তোমাদের দিয়েছিলাম। কিন্তু আর না তোমাদের এ সুখ আমার সহ্য হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত আমি জ্বলে পুরে মরছি তোমাদের প্রেমময় জীবন কাঁটাতে দেখে। আদ্র শুধুই আমার হবে কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও। আর শোনো খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমাদের কাছে আসছি। বাই আরিশা বোনটি।
আরিশা ফোন বেডে ছুড়ে ফেলে ভাবতে লাগলো কে হতে পারে এটা।
আরিশা নিজে নিজে বলতে লাগলো.......
আদ্রকে আমি অনেক ভালোবাসি উনাকে কেউ আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না কেউ না। সবই তো ঠিক ছিলো হঠাৎ এ কিসের ছায়া পড়তে চলেছে আমার আদ্রর জীবনে। কে করতে পারে এই ম্যাসেজ? নিশা আপু নয়তো? নিশা আপু তো আদ্রকে ভালোবাসতো। নাহ এ কি ভাবছি আমি,নিশা আপু এমনটা করবে না। যদি নিশা আপু না হয় তাহলে কে এই মেয়ে? আর আমাকে বোনটি কেনো বললো? নিশা আপু আমার নাম বলেই ডাকতো।
তবে বোনটি বলে একমাত্র রাফিয়া আপু ডাকতো মাঝে মধ্যে।তাহলে কি রাফিয়া? কিন্তু ওর আচরনে তো কখনো মনে হয়নি আদ্রকে ভালোবাসে। উফ আর ভাবতে পারছি না সব যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে।
আরু আবারো আদ্রকে ফোন দিলো এবার ওপাশ থেকে ফোন কেটে দিলো। আরুর চিন্তা যেনো শতগুনে বেড়ে গিয়েছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে আদ্রর বাবার নম্বারে ফোন দিলো। দুবার রিং হতেই রিসিভ হলো ওপাশ থেকে বলে উঠলো.........
আরিশা হঠাৎ ফোন দিলে যে কোনো প্রবলেম??
আরু নিজেকে স্বাভাবিক করে নরম ভাবেই বললো.......না বাবা কোনো প্রবলেম নেই আসলে আপনার ছেলে ফোন ধরছে না তাই....
ওহ আদ্র তো একটা ইমপর্টেন্ট মিটিং এ বিজি আছে তাই হয়তো ফোন তুলছে না। ও বের হলে কল ব্যাক করতে বলবো। তুমি ভার্সিটি থেকে ফিরেছো?
হ্যা বাবা আমি কিছুক্ষণ আগেই বাড়িতে এসেছি। আচ্ছা বাবা রাখছি এখন।
আরুর বুকটা একটু হালকা হলো কেনোনা আদ্র অফিসে মিটিং এ বিজি আছে। আদ্র এলেই সব বলবে ওকে। টেনশনের মাঝে আরু ভুলেই গিয়েছে যে নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে সে নাম্বারে ফোন দিতে।
আরু ওই নাম্বারে ফোন দিলো বন্ধ ছিলো সে নাম্বার।
.
.
রাত ৮ টার পর আদ্র বাড়িতে এলো রুমে এসে আরুকে শুয়ে থাকতে দেখে ওর পাশে গিয়ে বসলো।
আরু তুমি এ সময় শুয়ে আছো যে শরীর খারাপ লাগছে??
আরু আদ্রর দিকে ঘুরে বললো........না আমি ঠিক আছি এমনি শুয়ে আছি। তুমি যাও চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে নাও।
আরু এখন কিছু বললো না আদ্রকে মাত্র ফিরেছে এখনি টেনশন দেওয়া ঠিক হবে না। আদ্র ফ্রেস হতে চলে গেলো আরু নিচে চলে এলো ডিনারের ব্যবস্থা করতে।
আদ্র বেডে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। আরু সবার খাওয়া শেষে রুমে এলো দরজাটা আটকে আদ্রর পাশে বসলো। আদ্র ল্যাপটপে কাজ করতে করতে বললো........
আরু কি হয়েছে এসে থেকে দেখছি তেমন কথা বলছো না। দুপুরে ফোন ধরি নি বলে রাগ করেছো??
না রাগ করি নি। তুমি কাজ করো আমি ব্যালকনিতে যাচ্ছি।
আরু চলে গেলো আদ্র ল্যাপটপ অফ করে নিজেও ব্যালকনিতে গেলো। আরু রেলিং ধরে সামনে তাকিয়ে আছে। সব কিছুই যেনো বিষন্ন লাগছে বারবার মনে হচ্ছে আদ্রকে হারিয়ে ফেলবে।
আদ্র পেছন থেকে আরুকে জড়িয়ে ধরলো আরু কিছুটা চমকে উঠে আবার স্থির হয়ে দাড়ালো। আদ্র আরুর ঘারে মুখ গুজে বললো.........
আমার বউটার মন খারাপ থাকলে যে আমার ভালো লাগে না সে কি তা জানে?? বলনা কি হয়েছে বাড়ির কেউ কিছু বলেছে তোমাকে??
আরু আদ্রর দিকে ঘুরে হঠাৎ করেই আদ্রকে জড়িয়ে ধরলো দুহাতে আদ্রর টি শার্ট খামচে ধরে বললো........আমাকে বাড়ির কেউ কিছু বলেনি। আমি সত্যি মন খারাপ করতে চাইনা আদ্র কিন্তু আমি যে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আদ্র। আমার অস্তিত্বে তুমি মিশে গিয়েছো আমি তোমাকে ছেড়ে বাঁচতে পারবো না।
আরুর মুখে এমন কথা শুনে আদ্র অবাক হলো! আরুকে বুক থেকে তুলে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো........আমিও তো তোমাকে অনেক ভালোবাসি আরু। তোমাকে ছাড়া বাঁচার আশা আমিও করি না। তুমি হঠাৎ এ কথা কেনো বলছো কি হয়েছে বলো আমাকে??
আরু নিজের ফোন থেকে আদ্রকে ম্যাসেজ টা দেখালো আদ্র ভাবতে লাগলো এমন ম্যাসেজ কে দিতে পারে? ওর মাথায়ও নিশার কথা এলো।
আদ্র আরুকে শান্তনা দিয়ে বললো......আরু এটা হয়তো কেউ মজা করে করেছে তোমাকে ভয় পাওয়ানোর জন্য। এই সামান্য ব্যাপারে এতো ভেঙে পড়তে হয় নাকি হুম। আমাকে তোমার থেকে কেউ কেড়ে নেবে আর আমি চলে যাবো এটা ভাবলে কি করে? আমি যে এই পাগলিটাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি বুঝেছো তুমি? আমি তোমার গোমড়া মুখটা দেখতে চাইনা আমার আরুর মুখে হাসি দেখতে চাই।
আদ্র আরুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরু যেনো নিজের শান্তি খুজে পেয়েছে এ বুকটা যে আরুর জন্য পরম সুখের জায়গা।
.
.
কেঁটে গেলো আরো দুই দিন এর মধ্যে আরুর ফোনে আর কোনো ম্যাসেজ আসে নি। আরু এবার ভেবেই নিয়েছে এটা মজা করেই করেছে কেউ। আদ্র এ নিয়ে আর কিছু বলেনি তবে নিশাকে একটু সন্দেহ করেছিলো। নিশার খোজ নিয়ে জানা গেছে নিশা প্রায় ৫ মাস আগে দেশের বাহিরে চলে গিয়েছে। যে নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছিলো ওটা বাংলাদেশের নাম্বার এটা যে নিশা করে নি বুঝাই যাচ্ছে।
ভার্সিটি থেকে ফিরে এসে দেখালাম রাফিয়া এসেছে। ওকে এমনি আমার সহ্য হয় না। তারপরে এবার একা এসেছে ফুপিও আসে নি ফুপি থাকলে ওর ন্যাকামো গুলো কম দেখা যায় এবার কি করবে কে জানে। কিন্তু হঠাৎ একা এলো কেনো ও তো ফুপিকে ছাড়া আসে না। ধুর আসতেই পারে ওর মামা বাড়ি এটা আমার এতো ভেবে কাজ নেই।
রাফিয়া আমার থেকে বড় তাই আপু বলেই ডাকতে হয় তবে ওকে আপু ডাকতে মটেও ইচ্ছে করে না আমার।
রাফিয়ার সাথে টুকটাক কথা বলে উপরে আসতে নিলে রাফিয়া বলে উঠলো........
আরিশা বিয়ে তো করে ফেললে কাউকে না জানিয়ে তাও আবার নিজের বড় চাচ্চুর ছেলেকে। তো আমাকে ট্রিট দিচ্ছো কবে??
কিসের ট্রিট??
কিসের আবার তোমাদের বিয়ের।
এ বাড়িতে এসেছো থাকে ঘুরো খাও মনে করে নিয়ো এসবই আমাদের বিয়ের ট্রিট।
আমি আর না দাড়িয়ে উপরে চলে এলাম। তবে রাফিয়ার ব্যবহার কেমন যেনো লাগলো। কথা বলছিলো কেমন তাচ্ছিল্যের স্বরে। ওর মধ্যে সেই আগের ন্যাকামো ভাবটা একটুও নেই। হঠাৎ এতো চেঞ্জ হলো কি করে? তাছাড়া রাফিয়া তো আমাকে তুই করে বলতো আগে আজ তুমি করে বললো! যাক চেঞ্জ হলেই ভালো না হলে তো ওকে আমার সহ্যই হতো না।
রাতে পড়ছিলাম আদ্র এসে আমার সামনে দাড়িয়ে তাকিয়ে আছে আর মিটমিট করে হাসছে।
কি দেখে হাসছো??
তোমাকে দেখছি।
এতো দেখার কিছু নেই যাও আমাকে পড়তে দাও।
তুমি পড়ো বাধা দিয়েছি নাকি আমি তো চুপ করে দাড়িয়ে আছি।
তুমি এখানে থাকলে আমার একটুও পড়া হবে না যাও বলছি।
আদ্র অভিমানি স্বরে বললো........কি বউরে বাবা! ঠিকআছে যাচ্ছি থাকলাম না তোমার সামনে।
আদ্র ফোন হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। উনার কান্ড দেখে ফিক করে হেসে উঠলাম....পাগল একটা।
পড়া শেষ করে বই গুছিয়ে রাখছিলাম। রাফিয়া দরজায় দাড়িয়ে বললো.......আসতে পারি।
হুম এসো।
রাফিয়া বেডে পা ঝুলিয়ে বসে বললো.......পড়ছিলে বুঝি। আচ্ছা আদ্র কোথায়??
আমি ভ্রু কুঁচকে রাফিয়ার দিকে তাকালাম। ফাজিল মাইয়া একটা,এখনো আমার বরের নাম ধরে বলে সাহস কতো। ইচ্ছে তো করছে তোর চুল গুলো ছিড়ে দিতে।
রাফিয়া আপু আদ্র না তোমাকে ভাইয়া ডাকতে বলেছে?
রাফিয়া বিড়বিড় করে বললো.......ওকে ভাইয়া ডাকতে আমার বয়েই গেছে।
আপু কিছু বললে??
কই না তো কিছু বলি নি। তো আরিশা কেমন চলছে তোমাদের বিবাহিত জীবন সুখে আছো তো??
হুম খুব ভালো চলছে সুখেই আছি।
রাফিয়ার সাথে কথা বলতে বিরক্ত লাগছিলো আমার। আদ্র রুমে এসে আমাকে কিছু বলতে চেয়ে রাফিয়াকে দেখে থেমে গেলো। মুখে হাসি ফুটিয়ে আমার পাশে এসে দাড়ালো তারপর রাফিয়াকে বললো........
রাফিয়া আমার বউকে পছন্দ হয়েছে??
আমি উনার দিকে তাকালাম যেভাবে বলছে মনে হচ্ছে রাফিয়া আমাকে চেনে না আজ নতুন দেখছে। রাফিয়া একটু চুপ থেকে বললো.......হুম খুব পছন্দ হয়েছে।
আদ্র আমাকে একহাতে জড়িয়ে বললো......পছন্দ তো হতেই হবে দেখতে হবে না কার বউ।
রাফিয়া কিছুই বললো না শুধু আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। আদ্র অবাক হয়ে বললো........
কি হলো,রাফিয়া এভাবে চলে গেলো কেনো??
যাবে না তো কি করবে ওর সামনে এভাবে জড়িয়ে ধরেছো কেনো? আমাকে বুদ্ধিহীন বলো এখন দেখছি তুমি নিজেই বুদ্ধিহীন। ছাড়ো আমাকে।
ছাড়ার জন্য তো ধরি নি সোনা। বলেই আরো কাছে টেনে নিলো।
ওদিকে কেউ একজন রাগে ফুসছে দুহাতে নিজের চুল টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো........আমি পারছি না ওদের এতো ভালোবাসা সহ্য করতে। আদ্র আমার হবে আরিশাকে তো আমি আদ্রর থেকে আলাদা করবোই। শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছি।
আরিশা আমি বুঝতে পারি তুমি আমাকে পছন্দ করো না তাতে আমার প্রবলেম নেই। বাট তুমি আমার ভালোবাসাকে নিজের মনের কথা বলার আগেই কেড়ে নিয়েছো তার জন্য যে তোমাকে কষ্ট পেতে হবে মাই সুইট বোনটি।

No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.