ভালোবাসায়_বেধে_রেখো💞 পর্বঃ০২
তাহমিরা সামনে গিয়ে বলল
"একি!!আজকেও দাড়িয়ে আছেন?কালকে কি তারিন আপনার সাথে কথা বলে নি?"
"না কালকেতো তারিন আসে নি।"
"ওহ!কিন্তু আমি ওকে বলেছিলাম আপনার কথা যাইহোক আপনি ক্লাস শেষে থাকবেন তো?"
"হ্যাঁ থাকবো।"
"আচ্ছা তাহলে আমি তারিনকে নিয়ে আসবো।এখন আসি।"
তাহমিরা ছেলেটার সাথে কথা বলে ক্লাসে চলে গেলো।সম্পূর্ণ ক্লাস শেষ করে সিড়ি দিয়ে নামতেই খেয়াল হলো গেটের সামনের ছেলেটার কথা তাহমিরা তারিনকে খুজতে লাগলো।একপর্যায়ে পেয়েও গেলো। তারিন লাইব্রেরিতে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তাহমিরা তারিনের সামনে গিয়ে বলল
"তারিন লোকটা আজকেও এসেছে তুমি কি উনার সাথে কথা বলো নি?"
"ওহ!!ভুলেই গিয়েছিলাম চলো এখন গিয়ে কথা বলে আসি।"
"আচ্ছা চলো।"
তাহমিরা আর তারিন গেটের সামনে এসে দেখে ছেলেটা এখনো দাড়িয়ে আছে।তাহমিরা তারিনকে বলল
"আচ্ছা তুমি কথা বলো আমি আসছি।"
তাহমিরা হাটা শুরু করতেই একটা কথা তার কানে বাজলো আর তার রেশ ধরেই তাহমিরা পিছনে তাকিয়ে দেখলো তারিন ছেলেটাকে ইচ্ছামতো গালমন্দ করছে।দু-একটা কথা তাহমিরার কানেও আসছে।তাহমিরা ওদের দিকে এগুতেই শুনতে পেলো তারিন চওড়া গলায় বলছে
"প্রতিবন্ধী কোথাকার, ভাবলি কি করে তোর সাথে আমি রিলেশন রাখবো?আর কুকুরের মতো ভার্সিটির সামনে এসে দাড়িয়ে বোঝাতে চাইছিস যে তুই আমার জন্য মজনু হয়ে গেছিস!খবরদার আর একদিন যদি তোকে ভার্সিটির সামনে দেখেছি আমি সেদিনি তোকে জুতা পেটা করবো।আজকের জন্য মাফ করলাম।"
ছেলেটার কোনো কথাই শুনলো না বড়বড় পা ফেলে চলে গেলো। প্রায় কম বেশি অনেক লোকই তারিন আর ছেলেটার কথা শুনছিলো।তাহমিরা ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝতে পারলো না কারণ ছেলেটার চোখে সানগ্লাস ছিলো। হয়তো সানগ্লাস না থাকলে চোখের জলটা স্পষ্ট দেখতে পেতো।ও সামনে ছেলেটার সামনে গিয়ে বলল
"খুব ভালোবাসেন তাই না?"
ছেলেটা ভেজা গলায় বলল
"হুম অনেক বেশিই বাসি।"
তাহমিরা ছেলেটাকে শান্তনার সুরে বলল
"জোর করেতো ভালোবাসা হয় না।ভুলে যান,এগুলো নিয়ে ভাববেন না।"
ছেলেটা মাথা তুলে বলল
"আমাকে একটু রাস্তাটা পার করে দিবেন?"
তাহমিরা অবাক হয়ে মনে মনে বলল
"এতো বড়ো ছেলে রাস্তা পার হতে পারে না।আশ্চর্য তো।"
তাহমিরা অবাক হওয়ার রেশ কাটিয়ে বলল
"আচ্ছা আসুন।"
"প্লিজ আমার হাতটা ধরুন।"
তাহমিরা না চাইতেও হাতটা ধরলো কি আর করার এখন কিছু বলতেও পারবে না। একটু আগেই ছেলেটার ব্রেকাপ হয়েছে।রাস্তা পার করে দিয়ে তাহমিরা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলল
"আচ্ছা আজকে আসি।"
"আচ্ছা। "
তাহমিরা উল্টো পথে হাটা শুরু করলো কারণ এখানে দাড়ালে জীবনেও রিকশা পাওয়া যাবে না।ও রিকশা আনতেই উল্টো দিকে যাচ্ছে। রিকশায় বসে ব্যাগ থেকে ফোন বের করতেই শুনলো চিল্লাচিল্লির আওয়াজ সামনে তাকাতেই রাস্তার সাইডে ছোটো একটা মানুষের জট দেখতে পেলো কৌতুহলী হয়ে রিকশা থেকে নেমে জট ঠেলে সামনে এগুতেই দেখতে পেলো ওই ছেলেটাকে একটা লোক অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছে।তাহমিরা সামনে এগিয়ে জিগ্যেস করলো
"কি হয়েছে এখানে?"
লোকটা ছেলেটার কলার টেনে বলল
"আফা এই কানা পতিবন্দি পোলাডা আমারে দাক্কা দিয়া ফালায় দিছে। কানা পোলা কোনহানকার। "
তাহমিরা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল
"আপনি কি ইচ্ছা করেই এটা করেছেন?"
"আসলে আজকে তারিফ আসেনি তাই হাটতে কষ্ট হচ্ছে প্রতিদিনতো ও ই নিয়ে আসে।"
তাহমিরার এখন একটু খটকা লাগছে তাই ও সবাইকে বুঝিয়ে বিদায় করে ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলল
"কিছু মনে না করলে একটা কথা জিগ্যেস করবো?"
"জ্বি করেন।"
"আপনার কি চোখে সমস্যা আছে।"
ছেলেটা হেসে বলল
"আমি চোখে দেখতে পাই না।"
তাহমিরা চোখ বড়বড় করে বলল
"সত্যি!!! "
"হ্যাঁ, মাস দুয়েক আগে এক্সিডেন্টে চোখ নষ্ট হয়ে যায়।আর অনেক জায়গায় ব্যাথা পাই।অনেকদিন রেস্টেও ছিলাম। তারপর একটু সুস্থ হতেই তারিনের সাথে দেখা করতে আসতাম কিন্তু ও আসতো না।"
তাহমিরা এখন সবটা বুঝতে পারলো কেনো ছেলেটা তখন ওকে রাস্তা পার করে দিতে বলল।ছেলেটার জন্য তাহমিরার খারাপ লাগছে।তাহমিরা প্রথমে ছেলেটার চোখে সমস্যা ধরতে পারে নি তার সানগ্লাসটার জন্য।তাহমিরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে বলল
"চলুন আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেই।"
"আরে না লাগবে না তারিফ এসে পড়বে।"
"উনি কখন আসবেন তার ঠিক নেই তার চেয়ে বরং আমিই পৌঁছে দেই।আপনি ঠিকানাটা বললেই হলো।"
তারপর ছেলেটাকে আর কোনো কথা না বলতে দিয়ে টেনে রিকশায় উঠালো আর নিজে পাশে বসে পড়লো।রিকশা চলছে আপন গতিতে। পাঁচ মিনিট নিরবতা পালনের পর তাহমিরা জিগ্যেস করলো
"আপনার নামটা কি জানতে পারি? "
"অবশ্যই, আমি তানজীব হোসেন ত্রিশাদ।আপনি?
" তাজবিহা জান্নাত তাহমিরা।আপনি কি পড়াশোনা করেন?"
"আমার আর পড়াশোনা মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে ছয়মাস যেতে না যেতেই অন্ধ হয়ে গেলাম।এখন আর পড়াশোনা করি না।আচ্ছা যাক আপনিতো তারিনের সাথেই পড়েন তাই না?"
"হ্যাঁ, আপনার ভাই বোন কয়জন?"
"আমিই বড়, তারিফ মেজো আর বোনটা ছোট।"
"ওহ!!আমরা দুইবোন। বড় আপুর বিয়ে হয়ে গেছে।"
"ওহ!আচ্ছা। "
"হুম, আপনার তারিনের সাথে রিলেশনটা কতো দিনের? "
"দুইবছর আগে ওর সাথে পরিচয় তারপর প্রেম আর আজকে ব্রেকাপ।"
"ওহ!!আচ্ছা আপনার বাসা এসে গেছে। "
"অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভেতরে আসুন।"
"না না আরেকদিন। আজকে তাড়া আছে।"
"আচ্ছা আরেকদিন অবশ্যই আসবেন কিন্তু।"
"অবশ্যই আসবো।"
তাহমিরা ত্রিশাদকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে নিজের বাসায় চলে গেলো।বাসায় এসেই রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।সারাদিনে কিছুই খায় নি।তাহমিরার একটা বদ অভ্যাস আছে রাগ উঠলে কিছুই খাবে না।
রাত ৯.০০ টা
তাহমিরার বাবা খাবার প্লেট হাতে তাহমিরাকে ডাকছে।
"আচ্ছা সরি আর বলবো না এবার একটু খেয়ে নে মা।"
ভেতর থেকে জোরে বলে উঠলো
"আমি খাবো না তোমরা খেয়ে নাও।"
"আমি কিন্তু প্রেশারের ঔষধ এখনো খাই নি।আমার প্রেশারটা কিন্তু বাড়ছে।"
বাবার প্রেশারের কথা শুনে চট করে দরজা খুলে ভেতরে নিয়ে এসে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল
"বাবা তুমি সবসময় এমন করো কেনো?"
"তুই করিস তাই আমিও করি।"
"আচ্ছা কথা পরে আগে খাই আসো।"
"আচ্ছা আমি তোকে খাইয়ে দেই।"
তাহমিরা খুশী হয়ে বলল
খেতে খেতেই তাহমিরার বাবা বলে উঠলেন
"মা রে তোর কাছে আমার অনেক আশা বড়ো মেয়েটাতো পালিয়ে গেলো তুই অন্তত এমন করিস না। নাহলে আমার মরা ছাড়া উপায় নেই।"
তাহমিরা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল
"বাবা বিশ্বাস রাখো আমি কখনোই এমন করবো না যাতে তুমি কষ্ট পাও।"
তারপর দুজনেই হাসিমুখে খাবার শেষ করলো তাহমিরা বাবাকে ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে আসলো।আর মায়ের সাথে একটু কথা বলেই রুমে চলে গেলো।আরো কিছুক্ষণ পড়ে ঘুমিয়ে পড়লো তাহমিরা।
সকাল ৯.০০ টা....
এমনিতে প্রতিদিন সকাল সাতটায় উঠে তাহমিরা কিন্তু শুক্রবার হলে দশটার আগে ওকে কোনো বান্দাও তুলতে পারবে না।তাহমিরার মা সেই কতক্ষণ ধরে ওকে ডাকছে কিন্তু তাহমিরার কোনো খবর নেই।দশটা বাজার পর মহা রানী ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বসার ঘরে সোফায় বসে টিভি দেখতে দেখতে নাস্তা করছিলো হঠাৎ কলিংবেল এর আওয়াজে খাওয়া ছেড়ে মহা বিরক্তি নিয়ে উঠে দরজা খুলল কিন্তু খুলে কাউকে দেখলো না। হুট করে পায়ের সামনে একটা চিঠি খেয়াল করলো।তাহমিরা একটুও অবাক হলো না। এ আর নতুন কি গত চার মাস ধরে এটাই হচ্ছে প্রত্যেক শুক্রবার কে যেনো তাকে একটা করে চিঠি দিয়ে যায় শুধু চিঠি বললে ভুল হবে প্রেমপত্র দিয়ে যায়।তাহমিরা চিঠিটা নিয়ে বসার ঘরে গিয়ে আবার টিভি দেখতে বসলো।ওর মা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে বলল
"কি রে তাহু কে এসেছে? "
"কেউ না। "
"তাহলে বেল বাজালো কে?"
"ওইতো কোনো দুষ্ট বাচ্চাদের কাজ হবে।"
"ও আচ্ছা। "
তাহমিরা এসব বিষয় বাবা মা কে কখনো বলে নি।কারণ এমনিতেই তারা নাচনি বুড়ি তার উপর যদি আবার ঢোলের বাড়ি দেয় তাহলে আর পায় কে।"
খাওয়া শেষ করে ঘরে গিয়ে এসাইনমেন্ট করতে বসলো।এসাইনমেন্ট করতে করতে বিকেল সাড়ে তিনটা বেজে গেছে। তাহমিরার একটু বের হতে হবে কারণ এসাইনমেন্টের জন্য আর্ট পেপার লাগবে কিন্তু সেটা এই মুহুর্তে শেষ হয়ে গেছে। তাই আর কি করার রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো।আর্ট পেপার কিনে রিকশার জন্য দাড়াতেই দেখতে পেলো....
No comments