Header Ads

Header ADS

ভালোবাসায়_বেধে_রেখো💞 পর্বঃ০৩

 আর্ট পেপার কিনে রিকশার জন্য দাড়াতেই দেখতে পেলো ত্রিশাদ আর একটা ছেলে দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে।তাহমিরা গিয়ে ত্রিশাদের পাশাপাশি দাড়িয়ে বলল

"কেমন আছেন ত্রিশাদ?"
"ওহ!!তাহমিরা আপনি?আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন? "
"এইতো আমিও ভালো আছি।"
ত্রিশাদ তার পাশে থাকা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলল
"তারিফ ওই যে সেদিন যে মেয়েটার কথা বলেছিলাম না?ইনি ই সে।"
তারিফ তাহমিরার দিকে তাকিয়ে সৌজন্য মূলক হেসে বলল
"ধন্যবাদ আমার ভাইয়াকে সাহায্য করার জন্য। "
"আপনাকেও ধন্যবাদ। "
তারিফ অবাক হয়ে বলল


"আমাকে কেনো ধন্যবাদ দিলেন?"
"এইতো আপনি আমাকে ধন্যবাদ দিলেন সেই জন্যই আমিও দিলাম।"
তারিফ আর ত্রিশাদ দুজনেই হেসে দিলো সাথে তাহমিরা ও হাসলো।ত্রিশাদ হুট করেই বলল
"তাহমিরা আপনি সেদিন বাসায় আসেন নি তাই আজকে আপনাকে ছাড়ছি না।আমাদের সাথে এক প্লেট ফুচকা খান।"
তাহমিরা হালকা হেসে বলল
"খেতে হলেতো আপনি বলার আগেই আমি খেতাম কিন্তু সত্যি বলতে আমার ফুচকা পছন্দ না।"
তাহমিরার কথা শুনে দুজনেই বড় রকমের শক খায়।ওরা মনে ভাবছে পৃথিবীতে এমন মেয়েও আছে যে ফুচকা পছন্দ করে না!পৃথিবীতে সপ্তম আশ্চর্যের পর এটাই হয়তো অষ্টম আশ্চর্য। ত্রিশাদ অবাকের সুরে বলল
"আমি কি ভুল শুনেছি?"
তাহমিরা হেসে বলল
"নাহ আপনি ঠিকই শুনেছেন।"
তারিফ বিষ্ময়টা গিলে বলল
"আচ্ছা তাহলে চটপটি, সিঙ্গাড়া খান এগুলোতে তো অপছন্দ নেই।"
তাহমিরা মাথা নাড়িয়ে বলল
"না নেই। খাওয়া যায়।"
তারপর ওরা তিনজন চটপটি, সিঙ্গাড়া, জিলাপি খেতে খেতে গল্প করলো।বিল দেওয়ার সময় জোর করেই তারিফ বিল দিয়ে দেয় তাই তাহমিরাকে আর বিলটা দিতে হয় নি।এতে সে খুশিই কেউ তার বিল দিয়ে দিলে সে মানা করে না। এটা নিয়ে একদিন ওর মা বলল
"কি রে তাহু কেউ তোর বিল দিয়ে দিতে চাইলে তুই মানা করিস না কেনো?এটা কিন্তু অভদ্রতা। "
"ধূর মা,সে এতো শখ করে বিল দিতে চাইলে আমি কি মানা করতে পারি?সে তো খুশী হয়েই দিলো এখানে অভদ্রতার কি হলো?"
তাহমিরার কথা শুনে ওর মা আর কথা বাড়ায় কারণ সে জানে তাহমিরা এমনই।
তারপর বিল দেয়া শেষে তাহমিরা ওদের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় আসলো। বাসায় আসতেই মাগরিবের আজান পড়লো মসজিদে।তাহমিরা নামাজ শেষ করে আবার এসাইনমেন্ট নিয়ে বসলো।রাতে বাবা মায়ের সাথে একসাথে খাওয়া শেষ করে আরো কিছুক্ষণ পড়ে শুতে এলেই তার চিঠিটার কথা মনে পড়ে যায়।প্রতি শুক্রবার রাতেই এমন একটা চিঠি পড়ে সে।আল্লাহই ভালো জানে কে এই চিঠি গুলো তাকে লেখে।একটা চিঠিতেও কারো নাম ঠিকানার হদিস নেই। এই চারমাস প্রত্যেকটা শুক্রবারে আসা চিঠি গুলো পড়ে তাহমিরা এতোটুকু নিশ্চিত যে সে অনেক ভালো লেখে।চিঠিতে সবটুকু আবেগ দিয়েই যেনো তার প্রিয়তমার উদ্দেশ্য চিঠিটা লেখে।তাই তাহমিরা আগ্রহ নিয়ে চিঠিটা খুলে পড়তে আরম্ভ করলো
" প্রেয়সী,
ভালো আছো তো তুমি?আমি কিন্তু একদম ভালো নেই।তোমার শূন্যতা আমাকে তিলে তিলে গ্রাস করছে।আর পারছি না আমি!তুমি কি পড়ো চিঠিগুলো?নাকি ফেলে দাও?এই চারমাসে আমি তোমাকে ১১ টা চিঠি দিয়েছি এটা ১২ নাম্বার। দেখো আমি তোমাকে চিঠির পর চিঠি দিচ্ছি কিন্তু তুমি আমার কোনো খোঁজ খবর নিচ্ছো না।অনেক অভিমান জমে আছে তোমার উপর, যেমন নীল আকাশে কালো মেঘ জমে থাকে তেমনই।আমাকে ছেড়ে কেমন আছো বড্ড জানতে ইচ্ছে হয়।ভিষণ একা লাগে তোমাকে ছাড়া।আজকে আর লিখবো না হাত কাপছে।চিঠিটা পেলে উত্তর দিয়ো।আশায় থাকবো।"
তাহমিরা চিঠিটা পড়ে আফসোস করতে করতে বলল
"কে হে তুমি?তোমার ঠিকানা জানলে অবশ্যই উত্তর দিতাম কিন্তু তুমি ঠিকানা না দিয়েই উত্তরের অপেক্ষা করছো এটা কি ঠিক বলো?আর যেভাবে কথা গুলো লিখলে মনে হলো কতো জনম ধরে দুজন দুজনকে চিনি। এতো ভালোবাসা আমি কই রাখবো?আমার মনে তো জায়গা হচ্ছে না বেয়ে বেয়ে পড়ছে তোমার এতো সাধের ভালোবাসা আমি বস্তায় ভরে রাখবো।চিন্তা করো না কিছুতেই নষ্ট হতে দেবো না।"
এগুলো বলে নিজে নিজেই হাসতে লাগলো তাহমিরা।তারপর চিঠিটা একটা বক্সে রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।
দুদিন এভাবেই ক্লাস পড়াশোনা এসাইনমেন্ট আর আড্ডা দিয়ে তাহমিরার সময় চলে গেলো।
ভার্সিটি থেকে ফিরে রুমে যেতে নিলেই তাহমিরার মা ডেকে বলল
"তাহু তাড়াতাড়ি রেডি হ।"
"কেনো মা?"
"ভুলে গেছিস?তোর খালাতো ভাই সিরাতের জন্মদিন আজকে। তোর খালামণি যেতে বলেছে। "
"ওহ!মা আমার যেতে ভাল্লাগছে না।"
"ওমা! কেনো?"
"তোমার নাক উচু বোন কে আমার দুচোখে দেখতে ইচ্ছে করে না।"
"কেনো? ও আবার কি করলো?"
"দেখলেই বলে কি রে কয়েকটা প্রেম করিস?বিয়ে করবি কবে দিনদিন তো বুড়ি হয়ে যাচ্ছিস।পরেতো কোনো কানা ছেলেও কপালে জুটবে না।এগুলো শুনলে কার যেতে ইচ্ছে করবে তুমিই বলো।"
"আরে একটু আধটু বলবেই তাই বলে কি যাবি না?কোনো কথা শুনবো না তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।"
কি আর করার নাছোড়বান্দা মায়ের কাছে শেষমেষ পরাজিত হয়ে তাহমিরা রেডি হলো।রেডি হয়ে নিচে নামতেই ওর মা বলে উঠলো
"কি রে,একটু লিপস্টিক আর কাজল দিলি না?কেমন ফকিন্নি ফকিন্নি লাগছে।"
"তো কি সঙ সেজে যাবো নাকি?ওইখানে তোমার বোনের ছেলের জন্মদিনের খাবার খেতে যাচ্ছি তো এতো সেজে যাবার প্রোয়জন কি?"
"তোর সাথে কথায় পারা যায় না আচ্ছা চল সাজতে হবে না।"
ওরা বের হলো তাহমিরার খালার বাসার উদ্দেশ্যে।পৌঁছুতেই খালা এসে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলল
"কি রে কেমন আছোস?"
"এইতো আপা ভালো আছি।তুমি?"
"আমিও ভালা আছি।যা ভিতরে গিয়া বয়।"
তাহমিরার মা ভেতরে চলে গেলো।তাহমিরাকে দেখতেই ওর খালা বলে উঠলো
"কি গো তাহমিরা এতো সুন্দর হইতাছো কে?বিয়ার বাতাস লাগছে বুঝি?"
তাহমিরা রেগে লাল হয়ে গেলো।রাগটা কিছুটা সামলে বলল
"না গো খালা বিয়ার বাতাস লাগে নাই বিউটি কিরিমের বাতাস লাগছে
খালা চোখে মুখে উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল
"কোন কিরিম রে?কিরিমের নাম কি?"
"আরে এটাতো বাজারে পাওয়া যায় না ঘরে বানাতে হয়।"
"কেমনে বানায় আমারে এট্টু ক দেহি আমিও বানামু।"
"শোনো আগে সরিষার তেল গরম করবা পরে ১৪ দিনের পঁচা ভাত এক লগে মাখবা পরে প্রতিদিন রাইতে মাখবা।১৪ দিন মাখলেই তুমি অনেক সুন্দর হইয়া যাইবা।"
"আইচ্ছা আমি টেরাই করমু।অহন তুই আয়।"
তাহমিরা হাসিটা চেপে খালার সাথে গেলো।তাহমিরা এই মানুষটাকে প্রচন্ড অসহ্য লাগে। দেখলেই খালি বলে ও নাকি আগের থেকে সুন্দর হয়ে গেছে। তাই আজকে এমন থেরাপি দিয়েছে ভুলেও আর কোনোদিন এগুলো জিগ্যেস করবে না।সবার সাথে দেখা করে তাহমিরা ছাদে চলে গেলো। এখন কেক কাটা হবে না কারণ তন্ময় এখনো আসে নি।তন্ময় খালার বড় ছেলে ওর ছোট হলো সিরাত।তাই আসলেই কেক কাটা হবে।তাহমিরা ছাদে দাড়িয়ে তারা দেখছিলো কেনো যেনো ওর চাদ দেখতে ভালো লাগে না তারা গুলো দেখতেই ভালো লাগে।হঠাৎ পিছন থেকে কে যেনো মিরা বলে ডেকে উঠলো।পিছনে ঘুরতেই দেখলো তন্ময় দাড়িয়ে আছে।তাহমিরা এগিয়ে গিয়ে বলল
"কি হয়েছে? "
"এখানে কি করছিস?"
"ওইতো তারা দেখছিলাম।"
"ওহ!তোর সাথে আমার কথা আছে।"
"বলো কি বলবে।"
"মিরা তোকে আমি ভালোবাসি।প্লিজ আমাকে না করিস না।"
"ওহ!!ভাইয়া প্লিজ তোমার ড্রামা বন্ধ করো।একথা নাহলেও তুমি একশো বার বলেছো।বাদ দাও না।"
তন্ময় রেগে ওর কোমরে হাত দিয়ে কাছে টেনে নিয়ে বলে
"কয়দিনই আর পালাবি?খুব তাড়াতাড়ি তোকে বিয়ে করে নেবো দেখিস।"
তাহমিরা সর্বশক্তি দিয়ে জোরে একটা ধাক্কা দিলো। তন্ময়
তাহমিরাকে ছেড়ে দু কদম পিছিয়ে গেলো।তাহমিরা রাগে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল
"দেখা যাবে আমি জীবনেও তোমাকে বিয়ে করবো না। "
এটা বলেই তাহমিরা হনহন করে নিচে চলে যায়।একটু পর তন্ময়ও আসে তারপর কেক কাটা হয় এবং রাতে খাওয়ার পর যে যার যার বাসায় চলে যায় তাহমিরার মা থাকতে চাইলে ও গুতিয়ে বাসায় নিয়ে আসে।তাহমিরা নিজের বেড ছাড়া ঘুমাতে পারে না অসহ্য লাগে।
পরের দিন সকাল ৯.০০ টা....
তাহমিরা ভার্সিটিতে যাচ্ছিলো আজকে অনেক আগেই যাচ্ছে কারণ লাইব্রেরিতে তাকে একটা বই খুজতে হবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বই।
ভার্সিটিতে পৌঁছে লাইব্রেরিতে গিয়ে অনেক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর বইটা পেলো তাহমিরা।তারপর সারাদিন ক্লাস করে এসে সন্ধ্যায় ঘরে পা রাখতেই শুনতে পেলো তার মা কার সাথে যেনো তার বিষয়ে কথা বলছে।বিষয়টা খতিয়ে দেখার জন্য তাহমিরা আড়ি পাতলো।একটু শুনেই বুঝে নিলো তাহমিরার কাছে পড়তে এসেছে এরা।তাহমিরা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ঘরে ঢুকলো ওর মা ওকে দেখে বলল
"তাহু তোর কাছে ওনার মেয়েকে পড়াতে চায় উনি।"
"আচ্ছা আমাকে কি বাসায় গিয়ে পড়াতে হবে?"
"হ্যাঁ রে।"
"বাসা কোথায়? "



"তোর ভার্সিটি থেকে আমাদের বাসায় আসতেই মাঝে বাসাটা পড়ে।"
"ওহ!!আচ্ছা আমি পড়াবো কালকে থেকে।"
তাহমিরা ছোট মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলল
"কালকে বিকেলে এসে আমাকে নিয়ে যেও আমিতো তোমাদের বাসা চিনি না তাই।"
মেয়েটা কৌতূহলী চোখে বলল
"আচ্ছা ম্যাডাম।"
তারপর ওরা চলে গেলো।
তাহমিরা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলো। আজকে অনেক রাত জেগে পড়তে হবে কালকে ক্লাস টেস্ট। মোটামুটি পড়াটা কোনোরকম শেষ করে তাহমিরা ঘুমিয়ে পড়লো।
পরের দিন....
তাহমিরা সারাদিন ক্লাস আর পরীক্ষা দিয়ে বাসায় এসে খেয়ে দেয়ে রেডি হয়ে বসে আছে মেয়েটার অপেক্ষায়।একটু পরেই মেয়েটা আসে তারপর ওরা বের হয়।বাড়িটার সামনে আসতেই..........

No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.