তোকে_অনেক_ভালোবাসি------পর্ব_১৯
ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে রিক্সায় উঠতে নিলে কেউ আরিশা বলে ডাকলো আমি ঘুরে তাকাতেই একটি ছেলে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো.......কেমন আছো আরিশা??
ছেলেটিকে চেনা চেনা লাগছে কোথায় যেনো দেখেছি। কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে করতে পারছি না।
আমি ভালো আছি। আপনি কে আমাকে চিনলেন কি করে??
এ কদিনে ভুলে গেলে! আমি ইফতি। মনিকার বিয়েতে দেখা হয়েছিলো আমাদের।
ছেলেটি পরিচয় দেওয়াতে আমার কপাল কুঁচকে গেলো। এই ছেলে এখানে কি করছে? একটু হেসে বললাম.......ও আচ্ছা আপনি আমি চিনতে পারি নি। ভাইয়া আমার দেরি হচ্ছে আসি।
আরে দাড়াও কথা শেষ হয়নি তো।
আমার সাথে আপনার কি কথা??
কথাটা হলো তুমি সেদিন আমাকে মিথ্যে বলেছিলে যে তুমি বিবাহিত। কি ঠিক বলেছি তো??
হায় আল্লাহ এই ছেলে জানলো কি করে? আমি একটু ভেবে বললাম......হুম ঠিক বলেছেন বিয়ে হয় নি তবে হবে। যাকে দেখিয়েছিলাম উনার সাথেই আমার বিয়ে হবে।
বিয়ে হবে হয় নি তো। তাহলে তো একটা চান্স নেওয়াই যায়।
মানে! কিসের চান্স??
আসল কথাটি বলি তোমাকে মনিকার বিয়েতে দেখেই আমার ভালো লেগে গিয়েছিলো। কিন্তু তুমি যখন বলেছো তোমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে তখন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি যখন এ ভার্সিটিতে ভর্তি হলে তখন থেকে আমি তোমাকে ফলো করতে লাগলাম। আমার মনে হয়েছিলো বিয়ের ব্যাপারটা সত্যি নয় তাই খোজ নিতে লাগলাম আর সত্যিটা পেয়েও গেলাম যে তুমি বিবাহিত নও। তাই আমি ভাবছি......
ইফতি আর কিছু বলার আগেই আদ্র এসে আমার সামনে দাড়লো উনার চোখে মুখে রাগ ফুটে উঠেছে। ইফতির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আমার হাত ধরে টেনে গাড়িতে নিয়ে বসালো। উনার রাগ দেখে আমি যেনো জমে গিয়েছি কিছু বলতে পারছিলাম না শুধু ঢোক গিলছি। আদ্র সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে একটিও কথা বলছে না। আমি কিছুটা সাহস করে কথা বলার জন্য মুখ খুলতেই আদ্র বলে উঠলো........
এই মুহুর্তে আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।
উনি সামনে তাকিয়েই বললো আমি আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চুপচাপ বসে রইলাম। উনার রাগের কারনটা বুঝতে পারছি কিন্তু এতে আমার কি দোষ। আজ আমার কপালে যে কি আছে কে জানে।
.
.
বাড়িতে এসে আদ্র সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। আমি শুধু ভাবছি উনি রেগে গেলে তো আমাকে বকে তাহলে আজ কিছু বললো না কেনো! কি চলছে উনার মনে?
রাতে ডিনারের সময় ও আদ্র নিচে নামেনি। উনাকে না দেখতে পেয়ে খারাপ লাগছিলো আমার। অল্প করে খেয়ে উঠে গেলাম। রুমে এসেও শান্তি পাচ্ছিলাম না সেই দুপুর থেকে আদ্রর সাথে কথা বলা তো দূরে একবার দেখাও হয়নি। ফোনটা হাতে নিয়ে আদ্রর নাম্বারে কল দিলাম বারবার রিং হচ্ছে ধরছে না। সামান্য একটা বিষয়ে এভাবে রাগ করার কোনো মানে হয়? আমি সোজা আদ্রর রুমের দরজায় এসে দাঁড়ালাম দরজায় হাত দিতেই দরজা খুলে গেলো। পা টিপে টিপে ভেতরে ঢুকলাম। সারা রুমে চোখ বুলিয়ে আদ্রকে দেখছি না,ব্যালকনিতে ও নেই। গেলো কোথায় এই রাতে??
আমি আদ্রর রুমেই বসে রইলাম। উনাকে না দেখে যেনো আমার শান্তি হচ্ছিলো না। আমি প্রায় ১৫ মিনিট বসে থেকে উঠে দাড়ালাম দরজার কাছে আসতেই আদ্র রুমে ঢুকলো। আমি স্থির হয়ে দাড়িয়ে ভয়ে ভয়ে তাকালাম উনার দিকে। আদ্র ভ্রু কুঁচকে বললো.......
এ সময় আমার রুমে কি করছিস তুই??
তোমাকে খুব মিস করছিলাম তাই এসেছি।
কেনো আমাকে মিস করার কি আছে। যা না ওই ছেলেটির সাথে রাস্তায় দাড়িয়ে কথা বল ওকেই বেশি বেশি করে মিস কর।
এ তুমি কি বলছো ওই ছেলেকে আমি মিস করতে যাবো কেনো। আমি তোমাকে ভালোবাসি মিস করলে তোমাকেই মিস করবো।
তাই না। তাহলে ওই ছেলেটি যখন বিয়ের কথা সত্যি কিনা জানতে চেয়েছিলো তখন না বলেছিলি কেনো শুনি?সত্যি বলে নিজেকে মহৎ বানাতে চাইছিলি। সবার কাছে এতো সত্যেবাদী হওয়া ভালো নয় এটা তোর মাথায় আসেনি?
আমি কি করবো ওই ছেলে তো বললো সে নাকি খোজ নিয়ে জেনেছে আমি বিবাহিত নই।
এই মাথামোটা মেয়েকে আমি কি করে বুঝাবো! ওই ছেলে জেনেছে ভালো কথা তুই আগের কথাটাই বলতো পারতিস যে বিয়ে হয়ে গেছে। তা না করে তুই সত্যি টাই বললি।
এভাবে কেনো বলছো আমি তেমন কিছু না ভেবেই বলে ফেলেছি। ভুল তো হয়েই গিয়েছে তাই বলে এভাবে রেগে থাকবে তুমি?
ভুলটা কেনো হবে ভার্সিটিতে পড়িস তোর বুদ্ধি হবে কবে বলতো।
আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। আদ্র আমার চোখের পানি মুছে শান্ত কন্ঠে বললো.......বলেছি না তোর কাঁন্নাতে আমার কষ্ট হয়। আমি কি বকেছি তোকে কাঁদছিস কেনো?
তুমি আমার সাথে দুপুর থেকে কথা বলোনি খুব কষ্ট হচ্ছিলো।
এখন তো কথা বলছি। তোর উপর রাগ হয়েছিলো অনেক ছেলেটি যাই বলুক না কেনো তুই কড়া ভাবে কথা বলে কাটিয়ে দিতে পারতি তা না করে উল্টো ওকে সুযোগ দিয়ে দিচ্ছিলি এর জন্যই রাগ হয়েছিলো। এমন হলে তো চলবে না কোথায় কি বলতে হয় সেটা মাথায় রেখে এগিয়ে যেতো হবে তোকে।
আমি সত্যি বুঝতে পারি নি। আচ্ছা আবার যদি ওই ছেলেটি কথা বলতে আসে আমি অনেক গুলো কথা শুনিয়ে দিবো।
আদ্র আমার কপালে চুমু খেয়ে বললো.......আর কিছু শুনাতে হবে না ওকে আমি যা বলার বলেছি।
কি বলেছো??
এতো কিছু জানতে হবে না এখন রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড় কেমন।
মাথা নাড়িয়ে চলে যেতে গিয়ে আবার আদ্রর সামনে এসে বললাম.......তুমি তো খাও নি ক্ষিদে পেয়েছে নিশ্চই??
আদ্র হেসে বললো.......বা বাহ আমার বউটার এতো খেয়াল! আমি একটু আগেই খেয়ে এসেছি বুঝেছিস।
হুম ঠিকআছে রাত জেগো না আমি যাচ্ছি।
আরু চলে যেতেই আদ্র মুচকি হেসে বললো......আরু তোর উপর আমি যতই রাগ করি না কেনো কখনো দূরে সড়িয়ে রাখতে পারবো না। তোর ভালোবাসার মায়াটা যে বেধে রেখেছে আমাকে। কাল তোর জন্য বড় একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আরু। তুই হয়তো অনেক বেশি অবাক হবি সারপ্রাইজটা পেয়ে।
.
.
সকালে জানালার পর্দা ভেদ করে সোনালি রোদ এসে মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো। রোদের আলো চোখে পড়ায় টিপটিপ করে চোখ মেলে তাকিয়ে উঠে বসলাম। আজ সকালটা কেমন যেনো অন্য রকম লাগছে মনে হচ্ছে নতুন কিছুর আগমন ঘটতে চলেছে আমার জীবনে। ফোনটা হাতে নিয়ে টাইম দেখে আমার চোখ কপালে!! ৯ টা বেজে গেছে অথচ কেউ ডাকলো না? আমাকে যে ভার্সিটি যেতে হবে সবাই কি ভুলে গেছে? আদ্র ও তো ডেকে দিতে পারতো।
ফ্রেস হয়ে নিচে চলে এলাম মা কাকিমা রান্না ঘরে আমি গিয়ে মাকে বললাম.........
মা এতো বেলা হয়ে গিয়েছে আমাকে ডাকো নি কেনো? প্রথম ক্লাসটা মিস করে ফেললাম।
ইচ্ছে করেই ডাকিনি আজ ভার্সিটি যেতে হবে না।
ভার্সিটিতে যাবো না,কিন্তু কেনো??
মা কিছু বলতে নিলে কাকিমা বলে উঠলো........আরিশা একদিন না গেলে কিছু হবে না। তুই এখন রুমে যা ওহ শোন অথই এখনো ঘুমাচ্ছে ওকে ডেকে তোল গিয়ে।
অথই স্কুলে যায় নি??
না ও নাকি আজ যাবে না।
কি হলো ব্যাপারটা আমি ভার্সিটি গেলাম না অথইও স্কুলে যায় নি আদ্র কিছুই বললো না! অন্য সব দিনে তো সে নিজেই বকে মাথায় তুলতো আমাদের দেরি হলে আর আজ একদম নিরব! আদ্র কি তাহলে বাড়িতে নেই? উনার রুমে গিয়েই দেখি আছে নাকি।
আদ্রর রুমের দরজা খোলা ভেতরে গিয়ে উনাকে পেলাম না। গেলো কোথায় এই সময়ে? প্রতিদিন তো নিজেই আমার ঘুম ভাঙায় আজ কি হলো? ধুর এতো ভেবে কি হবে ভালোই হয়েছে অনেক দিন পর অথই আর আমি জমিয়ে আড্ডা দিবো।
অথইকে ডেকে তুলে আমি রুমে চলে এলাম। একটু পরে অথই এসে ধপ করে বসে পড়লো আমার পাশে। আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকা করে মুচকি হাসছে।
অথই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিস কেনো,জোকার মনে হয় আমাকে হু??
কি যে বলো না আপ ধেত আবার ভুল করছি তুমি তো আমার ভাবি হও তোমাকে জোকার মনে হবে কেনো।
তোর হাসির ধরন দেখে তো সেটাই মনে হচ্ছে। আর শোন আমাকে আপু বলবি ভাবি নয় তাছাড়া এখনো ভাবি বলার সময় হয় নি।
সময় হয় নি হতে কতক্ষণ। আমি তোমাকে ভাবি বলবো আমার আরো ভাই আছে নাকি যে তাদের বউকে ভাবি ডাকবো। আমার একমাত্র ভাইয়ার বউ হবে তুমি উফ কি যে খুশি লাগছে আমার।
হয়েছে বোনু এখন চল নিচে যাই ক্ষিদে পেয়েছে।
অথইকে নিয়ে নিচে আসতেই কাকিমা বললো........আরিশা আদ্রকে ফোন দিয়ে শোন তো কখন আসবে।
কোথায় গিয়েছে উনি?
একটা কাজে গিয়েছে তুই ফোন দিয়ে শোন আগে।
আদ্রকে ফোন দিচ্ছি ধরছে না। এদিকে মা কাকিমা অথই এদের ব্যবহার ও কেমন যেনো লাগছে। চাচ্চু ও আজ বাড়িতে আছে আব্বু বেড়িয়েছে সেও নাকি চলে আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে।
সোফায় বসে টিভি দেখছি কলিংবেল বেজে উঠতে মা গিয়ে দরজা খুললো। আদ্র এসেছে সাথে ফুপিও এসেছে। আমি দৌড়ে গিয়ে ফুপিকে জড়িয়ে ধরলাম। আদ্রর দিকে তাকালাম না আমার ফোন ধরেনি এজন্য অভিমাম করেছি,কথা বলবো না হু।
ফুপি আমার কপালে চুমু একে দিয়ে বললো.......
আরিশা আমি সত্যি ভাবতে পারছি না আজ তোর.....
ফুপিকে থামিয়ে আদ্র বললো........ফুপি তোমাকে না বলেছি মুখ বন্ধ রাখতে।
মুখ বন্ধ রাখতে হবে কেনো এই ফুপি তুমি বলো কি বলতে চাচ্ছিলে।
উহু আমি কিছু বলবো না।
ফুপি মায়ের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে কি যেনো বলতে লাগলো। আমি আদ্রর দিকে তাকাতেই উনি বাকা হেসে চোখ টিপ মারলো। মুখ ভেংচি কেটে চলে এলাম সেখান থেকে।
রুমে এসে এদিক ওদিকে পাইচারি করছি আর ভাবছি কি হতে চলেছে আমার মন বলছে কিছু একটা হবে। কিন্তু কি সেটা?
রুমে বসে এসব ভাবছি দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকাতেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো মনিকাকে দেখে। মনিকা দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওকে ছাড়িয়ে বললাম........
মনি তুই! হঠাৎ না জানিয়ে এলি যে??
কেনো আসতে পারি না বুঝি?
আমি তা বলেছি নাকি কোনো ফোন না দিয়ে এলি তাই বলছি। একাই এসেছিস?
না তন্ময় ও এসেছে নিচে আদ্র ভাইয়ার সাথে কথা বলছে। জানিস তো আরু আমার আনন্দে লাফাতে ইচ্ছে করছে। অবশেষে আমার অপেক্ষার পালা শেষ হলো।
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই অথই এসে বললো......মনিকা আপু আদ্র ভাইয়া তোমাকে ডাকছে।
আমি কিছু বলতে নিলে মনিকা বললো........আরু আমি শুনে আসি ভাইয়া ডাকছে কেনো।
মনিকা চলে গেলো। আমি হাবলার মতো তাকিয়ে রইলাম ওর যাওয়ার দিকে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না সকালে ফুপি এলো,এখন মনি আর তন্ময় ভাইয়া এলো তাও আমাকে না জানিয়ে। সব যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আমার!
No comments