নিয়তি( এ কেমন ভালবাসা)-----পর্বঃ ০৪
মজুমদার বাড়ি থেকে আমাকে যখন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলো তখন আমার যাওয়ার কোন পথ খোলা ছিলো না। এরি মধ্যে রাতও হয়ে গেছে, কোথায় যাবো কার কাছে যাবো? এই রক্ত মাখা শরীর নিয়েই বা কোথায় যাবো আমি। কোন রকম কাপড়ের পোটলা হাত দিয়ে ধরে বগলে চেপে ধরলাম। চলতে থাকলাম অজানার পথে, সকাল থেকে না খেয়ে আছি এক গ্লাস পানি পেলে পেঠের ক্ষুদা টা মিটাতাম। সামনে ধুরুং বাজার ছেড়ে একটু সামনে যেতেই এলাকার কিছু ভাই আর বয়স্ক মানুষ আমাকে দাঁড় করালো।
তুই নাকি চুরি করেছিস এটা কি সত্যি?
শামীমঃ আপনি কেমন করে জানলেন আমি চুরি করেছি।
মজুমদার বাড়ি বলে কথা একটা মশাও মরলে মানুষ জানে। আর মজুমদারের বাবা এই এলাকার প্রথম চেয়ারম্যান ছিলো। কত দাপট তাদের তা আমাদের চেয়ে তুই ভালো জানিস। তাদের বাড়িতে কোন ঘটলে আমরা জানবো না মানে এখন পুরা এলাকা জানে সত্য কি বল।
তারমানে আমি যে চুরি করেছি তা পুরা এলাকা যেনে গেছে কিন্তু আমি যে চুরি করি নাই তা কেমন করে মানুষ কে বুঝাবো। আমার কি ভাগ্যে এসব লিখে রেখেছিলো বিধাতা।
কিরে বল সত্য কি?
শামীমঃ আপনাদের কি মনে হয় আমি চুরি করেছি(কেঁদে ফেললাম)
আমার জানা মতে শামীম এমন কাজ করতে পারে না।
শামীম তো পড়াশোনা জানে না তাহলে সে ঘড়ি নিয়ে কি করবে?
শামীম তো অন্য সব বাজে ছেলের মত না, শামীম তো নেশা করে না জুয়া খেলে দোকানে গেলেও কোন খায় না। তাহলে ওয়ালেট চুরি করে শামীম কি করবে?
আরে দেখলি না ওর বাপে কেমন করে টাকার জন্য ওরে এক প্রকার বিক্রি করে মজুমদারের কাছে রাখছিলো। সেই টাকা দিয়ে তো তার ছেলে মেয়েকে চাকরি দিয়ে দিলো। হতে পারে শামীমকে বলছে তার টাকা লাগবে, শামীম তো আবার ওর বাপের সব কথা শুনে তাই হয়ত চুরি করেছে।
শামীমের মত সহজ সরল পোলা এই এলাকায় আর একটাও পাওয়া যাবে না।
ইশ রে কেমন করে না মারছে পোলাটারে।
এতিম হলে যা হয়
ঠিক বলছেন ভাই, এতিমের কোন জায়গাতে ভালো নাই।
এত কিছু করলো মজুমদারের জন্য সেই মজুমদার তারে এভাবে মারতে পারলো।
তা শামীম এই ভাবে কোথায় যাচ্ছিস আর কাপড়ের পোটলা কেনো তোর হাতের বগলে চেপে ধরে আছিস।
শামীমঃ আমারে বাড়ি থাইকা বাইর কইরা দিছে মিয়া ভাই।
তাহলে তোর বাপের কাছে যা, কোন না কোন ব্যবস্থা করে দিবে তোকে।
শামীমঃ আব্বা নিজেই আমাকে চোর বলছে, আমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিছে। আমার যাওনের কোন জায়গা নাই, আর সকাল থেকে কোন খাইতেও পারি নাই।
সবাই মিলে শামীম কে আগে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করালো। তারপর সবাই মিলে শামীমের ওষুধ আর খাবার টাকার জন্য সবার কাছ থেকে চাঁদা তুলল। এতিম বলে কথা কোন আত্মীয় স্বজন নাই যে তারা দেখবে বা দিবে। শামীম কে একটা ভাতের দোকানে নিয়ে গিয়ে খাওয়ালো তারপর ঔষুধ কিনে শামীম কে দিলো। সবাই চলে যাবার পর এক বড় ভাই শামীমের কাছে থাকলো।
এখন কৈ যাবি তুই
শামীমঃ ভাই আমার যেহেতু এখানে কেউ নাই তাহলে এখানে কার কাছে থাকবো।
চল তোরে ঘাট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।
আর কোন কথা না বলে ওই বড় ভাইসহ হাটতে লাগলো শামীম। আসলে এই বড় ভাইয়ের তাবলের চড় কৈয়ার বিল আলী আকবরের ডেল এসব জায়গায় অনেক লবণ চাষের জমি আছে। শামীম এই ভাইয়ের জমিতে বিনা পরিশ্রমে অনেক কাজ করে দিছে। মজুমদারের পরে যদি এই এলাকায় কোন ধনী ব্যক্তি থেকে থাকে তা এই আসলাম ভাই। শামীম কে ঘাটের কাছে নিয়ে এসে একটা নৌকায় তুলে দিয়ে শামীমের হাতে হাজার চারেক টাকা দিলো। বিদায় বেলায় আসলাম ভাইকে একটু জরিয়ে ধরতেও পারলো না শামীম। আসলাম ভাই অনেক দিন শামীম কে বলেছে তার জমিতে কাজ করতে কিন্তু শামীম তা করেনি। শামীমের কাছে তার মালিক তার কাছে দেবতা, তার উছিলায় শামীমের রিজিক জোটে। আর শামীম ছোট থাকতে তিনি ঠাই না দিলে শামীমের কুকুর দষা হত।_______________________
শামীম কে যখন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে মজুমদারের দুই ছেলে বের করে দেয় তখন আড়াল থেকে রহিম মিয়া সব দেখছিলো। শামীম যখন রাস্তায় পরে যেয়ে উঠতে পারতেছিলো না তখন রহিম মিয়ার ইচ্ছা করতেছিলো দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরে তুলে। শামীম যখন কষ্ট করে উঠে চারদিকে তাকিয়ে দেখে তার আব্বা আছে কিনা তখন রহিম মিয়ার বুকটা ছিড়ে যাচ্ছিল। শামীম যখন হেটে হেটে চোখের আড়াল হয়ে যায় তখন রহিম মিয়া আড়াল থেকে বের হয়ে শামীম কে খুঁজতে থাকে। সেই সময় সোহেল আর করিম রহিম মিয়া কে আটকে ধরে, তখন রহিম মিয়া আহাজারি করতে থাকে।
রহিমঃ তোরা আমাকে ছেড়ে দে আমার বাপটা বড় একা রে। ওর শরীর থেকে এখনও রক্ত ঝড়তেছে আমাকে যেতে একটু ওকে জরিয়ে ধরি। আমার বাপটার যে কেউ নাই এই দুনিয়াতে, কোথায় যাবে আমার বাপ টা। কেউ যদি ওরে মেরে এই সাগরে ভাসিয়ে দেয়। কোন রাস্তা দিয়ে যাবে আমার বাপ চারদিকে তো শুধু পানি আর পানি( সাগর)। (কেঁদে আহাজারি করে)
করিমঃ চাচা তুমি এভাবে ভেঙ্গে পড় না, তুমি কি চাও তোমার পোলা এখানে থেকে আরো কষ্ট পাক। কোথায় আর যাবে, তোমার পোলা তো কাজ জানে আস পাসে কারো কাছে থাকবে নিশ্চয়ই। তুমি তখন চাইলে আড়াল থেকে দেখতে পারবে।
রহিমঃ আমি যে পোলার গায়ে কখনও হাত তুলি নাই সেই আমি আজ বিনা অপরাধে তার গায়ে হাত তুলছি। আমি কেমন করে হাত তুলতে পারলাম, পোলাটারে কখনও একটু সুখও দিতে পারি নাই আমি আল্লাহ এর বিচার আমার করবো। আমারে এই পোলার জন্য সারাজীবন কাঁদতে হইবো। মা বাবা ছাড়া এতিম ছেলে টাকে কেমন করে মারতে পারতে পারলাম। কেমন করে তারে তারিয়ে দিতে পারলাম। ওরে না দেখে যে আমি থাকতে পারবো না, আমার কষ্ট হচ্ছে এখন খুব।( তাদের কাছ থেকে ছুটতে চাচ্ছে আর কাঁদতেছে)
সোহেলঃ চাচা আর কাইন্দো না, দেখবে সকাল হলে ঠিকই তোমার পোলা তোমার কাছে আইবো। তুমি তো চাইছিলা এসব অত্যাচার যেনো তার সহ্য করা না লাগে তাই ওর থাইকা মুখ ফিরাই নিছো। নিজেকে শক্ত কর তা না হলে দেখবে আবার তোমার পোলা আইবো তখন আবার তারে সবাই অত্যাচার করবো। তুমি কি চাও না শামীম ভাইয়ে ভালা থাকুক।
রহিমঃ চাই তাই বলে আমার চোখের আড়ালে থাইকা না, পোলা টাকে কেউ যদি মারে যা না গিয়ে একটু দেখ। মানুষের শত্রুতা মজুমদারের সাথে তারা যদি আমার পোলারে মারে।
রহিম মিয়ার কথা শুনে তারা আর দেরি না করে শামীম যে পথে গেলো সেই পথে সোহেল আর করিম যেতে লাগলো। গিয়ে তারা দেখে এলাকার মানুষ শামীম কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে চিকিৎসা করাতে আর তার সব ব্যবস্থা তারাই করতেছে। এসব দেখে তারা দৌড়ে এসে রহিম মিয়া রে বলে শামীম ধুরুং বাজারে আছে কোথাও যায় নাই। সোহেল আর করিমের মুখে সব শুনে রহিম মিয়া কাঁন্না থামালো মনে যেনো একটু শান্তি পেলো।
______________________
শামীম যখন সবার পায়ে পড়ে কেঁদে কেঁদে বলতেছিলো তাকে যেনো তারিয়ে না দেয় আর সে চুরি করে নাই সেই সময় সুপ্রিয়ার নিজেকেই নিজের হত্যা করার ইচ্ছা হচ্ছিল। শামীমের এসব আহাজারি সহ্য করতে না পেরে সুপ্রিয়ার ঘরে এসে বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে কাঁদতে থাকে আর মনে মনে বলে। আল্লাহ আমাকে কখনও ক্ষমা করবে না এর শাস্তি আমাকে তিনি দিবেন। আজ আমার জন্য বাবা মা ছাড়া এতিম ছেলেটা এমন করে মার খেলো। কেনো এসব করতে গেলাম আমি, শামীমের হাত সব সময় আমার মাথায় থাকতো। আর আজ সেই হাত আমার পা ধরেছে আর আমি আজ নিজের ভালোবাসা পাবার জন্য নির্বাক ছিলাম। আমার সামান্য জ্বর বা মাথা ব্যথা হলে যেখানে শামীম ঠিক থাকতে পারতো না সেখানে শামীম আজ রক্তাক্ত অবস্হায়। আল্লাহ এসব জুলুম সহ্য করবে না, আল্লাহ ঐ এতিম কে তুমি দেখিয়েও তার তুমি ছাড়া আর কেউ থাকলো না।
সুপ্রিয়া তার ঘর আসার সাথে সাথে তার ভাবি আর সৌরভও সুপ্রিয়ার ঘরে প্রবেশ। তারা দেখে সুপ্রিয়া ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে কাঁন্না করতেছে আর বিরবির করে কি যেনো বলতেছে ( কাঁন্না করার সময় যতই মনে মনে কথা বলুন না কেনো তা ঠোঁট দিয়ে একটু হলেও বের হবে আর কাপবে)
সুপ্রিয়ার ভাবিঃ এভাবে আর কেঁদে কি করবি এগুলো উপরওয়ালা শামীমের জন্মের দিনেই লিখে রাখছিলো।
সৌরভঃ আমি ভাবতে পারিনি এই সামান্য বিষয় তোমার বাবা ভাই মা এত দুরে নিয়ে যাবে। যদি জানতাম তাহলে জীবনেও এমন কাজ করতাম না। সত্যি বলতে শামীমের জন্য আমার নিজের কষ্ট হচ্ছে এমন বোকা ছেলে আমি কখনও দেখি নাই। এত মার খাওয়ার পরও সে তোমার বাবার পা ধরে বলে এখানে নাকি সে না খেয়ে থাকবে।
সুপ্রিয়ার ভাবিঃ আমি যখন এ বাড়িতে প্রথম আসি তখনই শামীমের প্রতি আমার মায়া হয় কিন্তু আমার তখনও কিছু করার ছিলো না আর আজো কিছু করার নাই। তোদের এক করতে গিয়ে একটা এতিম ছেলের প্রতি অনেক অবিচার করে ফেললাম আমি।
সুপ্রিয়াঃ ভাবি সকাল থেকে কি শামীম কোন খাইছে? নিশ্চয়ই কোন খায় নাই, একটা বার ভাবো তো যেখানে আমরা একবেলা খেতে না পারলে বাড়ি মাথায় তুলে রাখি সেখানে ও সারাদিন কোন খায় নি তার উপর এত মার।
সুপ্রিয়ার ভাবিঃ যাহোক কত মার খেয়েছে তা জানি তবে আজকের পর থেকে আর তাকে কোন আঘাত সহ্য করতে হবে না। দেখবি ও যে রকম ছেলে এখান থেকে কোথাও যেতে পারবে না। ঠিকই কাল কে তোর বিয়ের সময় চলে আসবে।
[ আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে সহজ সরল বোকা ছেলে তাহলে কেমন করে চিটাগাং শহর থেকে টাকা নিয়ে আসে, তাহলে শুনুন শামীম এমন ভাবে যায় কেউ বুঝতে পারবে না তার কাছে টাকা আছে। আর এসব কাজ করা মানুষের গায়ে প্রচুর শক্তি থাকে একবার রেগে গেলে সব কিছু দাবিয়ে দেয়]
______________________
শামীম এই ঘাটে নৌকায় চড়ে মাগনামা ঘাটে আসে। আসলে উত্তর ধুরুং থেকে ডাইরেক্ট চিটাগাং বন্দর যাওয়ার কোন রাতের নৌকা নাই। তাই সে মাগনামা ঘাটে আসল এখান থেকে সিএজি করে চকরিয়া যাবে তারপর সোজা চিটাগাং। আর এই কুতুবদিয়াতে সবচেয়ে বড় বাতি সুউচ্চ বাতিঘর স্হাপন করা হয়। বঙ্গোপসাগরে চলাচলের জন্য জাহাজের নাবিকদের সংকেত দেখানোর জন্য। কালের বির্তমানে সেটি এখন আর নাই তবে এখন মাঝে মাঝে এটি বেসে উঠে সমুদ্রে যা অনেকে দেখেছে।
শামীম মাগনামা এসে আর সামনে যেতে চায় না। তার মনে এখন হাজারো প্রশ্ন তার আব্বা কি তাকে ছাড়া থাকতে পারবে? যদি তার আব্বা তাকে দেখতে চায় তখন কেমন করে দেখবে? তখন শামীম আবার ফিরে যেতে চায় কিন্তু তার মনে পরে তার আব্বার বলা কথা তোকে আমার আর সহ্য হয় না তোকে দেখতে আর ইচ্ছা করে না। এসব কথা মনে পরতেই শামীম আর এক মুহুর্ত বাড়ির কথা মনে পরে না। রাত কয়টা বাজে তা জানে না শামীম, তাই সে কোন কিছু না ভেবে একটা সিএনজির কাছে যায়। এটাই মনে হয় সিরিয়ালের শেষ নিএনজি ছিলো কারণ আর একটা লোক হলে তারা চকরিয়া যাবে। শামীম সিএনজিতে উঠে শামীমের শরীর দেখে অনেকে শামীমের দিকে সন্দেহর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মানুষ এমন করে তাকিয়ে আছে কেনো শামীম তা বুঝতে পারে না। চকরিয়া বাসস্ট্যান্ডে সবাই নামে যে যার যার মত করে চলে গেলো তাদের গন্তব্যে। শামীম রাস্তার পাশে গাড়ির জন্য দাঁরিয়ে থাকলো। কোন গাড়ি পেলে সে চিটাগাং যাবে। ( মানুষ কে যখন তার অতি প্রিয়জন দুঃখ দেয় তখন তার হিতাহিত জ্ঞান শূণ্য হয়ে যায় সে কি করবে কার কাছে যাবে মাথায় কোন আসে না। আর এসব কারণে হয়ত অনেকের আপনজন তাদের থেকে অনেক দুরে চলে যায় বিশেষ করে সহজ সরল মানুষ কে আঘাত করলে এমন বেশি হয়)
[আপনাদের কোন সারা পাচ্ছি না, যদি ভালো না লাগে তাহলে গল্প এখানেই লেখা বন্ধ করে দেই]
রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ একট ট্রাক দেখতে পায়। কোন রকমে হাত তুলে ট্রাক দাঁড় করিয়ে শামীম ট্রাকে চড়ে। আসলে কক্সবাজার থেকে এই ট্রাকে করে ফার্নিচার ঢাকায় যাচ্ছে। আর ট্রাক ওয়ালা মনে করেছে হয়ত কোন কাজের মানুষ হবে ঢাকায় যাবে তাই তাকে তুলে নেয় আর বাড়তি কামাইও হবে। তারা শামীমের কাছ থেকে পুরা ৮৫০ টাকা নেয়। শামীম মনে করেছে রাতে কোন গাড়ি নাই দেখে হয় বা বেশি ভাড়া নিতেছে চিটাগাং এর। শামীম মনে মনে ভাবে চিটাগাং এ তার তো অনেক পরিচিত মানুষ আছে তাদের কাজে কোন সাহায্য চাইলে নিশ্চয়ই করবে। যেহেতু চিটাগাং যেতে ঘন্টার উপরে লাগবে সেহেতু একটু ঘুমানো যাক। এমনিতেই শামীমের শরীরের মারের ব্যথা তার উপর খাইছে ঔষুধ আবার শুয়ে থাকার ভাল ব্যবস্থা আছে তাই সোয়া মাত্র শামীম ঘুমিয়ে পরে।
পরেরদিন ট্রাকের হেলপারের ডাকে শামীমের ঘুম ভাঙ্গে ঘুম ভেঙ্গে দেখে চারদিক সব পরিষ্কার তার মানে সকাল হইছে। সে আর ট্রাকের হেলপার কে কোন না বলে গাড়ি থেকে নেমে সোজা হাটতে থাকে কিন্তু সামনে যত যায় ততই তার কাছে সব কিছু অপরিচিত মনে হয়। এবার যেনো শামীম ভয় পেয়ে গেলো, তাকে কোথাও এই ট্রাক চালক আর হেলপার বিক্রি করে দেয় নাই তো। চিটাগাং শহরে ধুলার জন্য থাকা যায় না আর সেখানে এত বড় বড় বিল্ডিং একেবারে কম তবে বিল্ডিং অনেক আছে। এখানে সব বিল্ডিং দেখতে এক রকম, মাথা আকাশের দিকে তুলে দেখা লাগতেছে। আর এই রাস্তা গুলোতে অনেক গাড়ি আর জ্যাম যা চিটাগাং শহরে এত গুলো গাড়ি নাই আর এত জ্যামও। রাস্তায় যে যার মত কর চলতেছে, তবে মহিলা মানুষ গুলো এমন করে চলতেছে কেনো মেয়ে গুলো এমন বাজে টাইট টাইট কি সব পোষাক পরেছে সব কিছু বোঝা যায়। চিটাগাং শহরের মেয়েরা এত বাজে পোষাক পরে না পরলেও খুব কম মেয়ে পরে আর চিটাগাং শহরে হিজাব বোরকা বেশী পরি। আর মজার বিষয় হলো এখানে মা কে মেয়ে কে চেনা মুশকিল কারণ সবাই লিপস্টিক আর মাথায় টিপ পরে যা এই শহরের সবাই এ রকম না।
অনেক দুর হেটে আসার পর একটা চা রুটির দোকান দেখতে পেলো শামীম। সেখানে গিয়ে একটু পানি নিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিলো। শামীম জানে চিটাগাং শহরে সে টাকা দিয়ে পানি কিনে খেয়েছে। তাই এখানে খাওয়ার পর যে পানি খাবে তার জন্য দুই টাকা শামীম কে আলাদা ভাবে দিতে হবে। এমন সময় কিছু মানুষ সেখানে বলাবলি করতেছে এই ঢাকা শহরে অনেক গরম আর মশার জ্বালায় থাকা যায় না। এসব কথা শুনে শামীম ভয় পেয়ে যায় আসলে শামীম ঢাকা শহরের কথা মানুষের মুখে শুনেছে, দেখতে কেমন তা জানে না। আর এটাও শুনেছে ঢাকা শহরে নাকি টাকা উড়ে বেরায়। শামীম ভয় পাচ্ছে সে তো এ শহরের কিছুই চেনে না, সে কার কাছে যাবে কে তাকে কাজ দিবে। তখন সে একজন কে জিজ্ঞেস করলো
শামীমঃ ভাই এই জায়গায় নাম কি?
লোকঃ নতুন নাকি এখানে?
শামীমঃ জ্বী ভাই
লোকঃ ভাই এটা মহাখালী
শামীমঃ ( মুর্খের মত) কোন মহাখালী ভাই
লোকঃ আরে বেটা এটা ঢাকা শহর বুঝলি আর ঢাকা মহাখালি বুঝতে পেরেছিস
লোকটার এমন কথা শুনে শামীম প্রায় কেঁদে ফেলার অবস্হা। এই শহরের কোন রাস্তা চিনে না শামীম আর চাইলেও তার আব্বা কে গিয়ে দেখতে পারবে না। এখন কি হবে তার কার কাছে যাবে সে, কোর রকমে সেখানে রুটি কলা আর পানির বিল দিয়ে আবার হাটা শুরু করলো শামীম। কিন্তু হেটে সে কোথায় যাবে তা জানে না সে, কিন্তু তাকে যে যেতেই হবে।
No comments