তোকে_অনেক_ভালোবাসি-------পর্ব_১২
সকালে কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে এলাম। ব্রেকফাস্ট করে বেড় হতে নিলে কাকিমা বললো....
আরিশা আদ্র নিয়ে যাবে তোকে ও আসছে।
আদ্র নামটা শুনেই আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো,মনে পড়ে গেলো কালকের সব কিছু। আদ্র নিজে বলেছে আমাকে ভালোবাসে! এ কথা ভাবলেই শরীরে এক অন্য রকম শিহরণ জাগে,মুহুর্তেই যেনো গায়ের লোম গুলো কাটা দিয়ে ওঠে। কেনো জানি না আদ্রর সামনে যেতে লজ্জাবোধ করছি। এতো দিন তো সবটা ধোয়াশা হয়ে ছিলো কিন্তু আজ সবটাই পরিষ্কার!!
আদ্র ভাইয়ার কথায় ঘোড় কাটলো আমার....
আরু এই আরু কোন জগৎ এ আছিস তুই??
হ্যা...ওহ ভাইয়া! কিছু বলছো??
আদ্র ভাইয়ার মুখের হাসিটা মুহুর্তেই মিলিয়ে গেলো গম্ভীর গলায় বললো.....তোর কলেজের লেট হচ্ছে চল।
উনি আগে বেড়িয়ে গেলো আমিও পেছনে বেড় হলাম হঠাৎ কি হলো!! আদ্র ভাইয়া গম্ভীর হয়ে গেলো কেনো? আমি কি আবার কোনো ভুল করলাম??
গাড়িতে চুপচাপ বসে আছি আদ্র ভাইয়া আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছে আমার দিকে একবার ও তাকায় নি। সবই তো ঠিক ছিলো তাহলে উনি এমন কেনো করছে বুঝতে পারছি না। আমি উনার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললাম....
ভাইয়া কি হয়েছে আমি কি আবার কোনো ভুল করেছি??
উনি সাথে সাথেই গাড়ি ব্রেক করলো রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো.....নিজেরটা তো ভালোই বুঝিস। খুব তো অভিমান করে আমার মনের কথা জেনে নিয়েছিস এক রাত পার না হতেই ভুলে গেলি সব??
কি বলছো তুমি! আমি ভুলি নি কিছু।
ওও আচ্ছা ভুলিস নি! তাহলে আমি কি বলতে না করেছিলাম একটু ভেবে দেখ।
আমি ভাবতে লাগলাম কি হতে পারে, হঠাৎ মনে পড়লো উনি আমাকে ভাইয়া বলতে না করেছে আর আমি ওটাই বলেছি। আমি আমতা আমতা করে বললাম
সরি ভা.....উফ আরু আবার ভুল করছিস কেনো! সরি আসলে অভ্যাস তো তাই একটু সমস্যা হচ্ছে আমি তোমাকে আর ভাইয়া বলবো না।
হুমম মনে করতে পেরেছিস তাহলে। আর যদি ভুল করিস চরম শাস্তি দিবো তোকে,আমার নাম ধরে ডাকবি তুই ওকে?
কিন্তু তুমি তো আমার থেকে অনেক বড় আমি পারবো না নাম ধরে ডাকতে।
তাহলে কি করা যায় বলতো? আরু একটা কাজ করলে কেমন হয় আমরা এখনি আমাদের ছেলে/মেয়ের নাম রেখে দেই তাহলে তোর ডাকতে সুবিধা হবে। কি নাম রাখবো ভেবে ঠিক করতে হবে।
আমি উনার কথায় থ হয়ে গেছি! চোখ বড় বড় করে বললাম.... মাথা খারাপ হয়েছে তোমার? এখনি এসব বলছো কেনো?
মাথা খারাপের কি আছে হুম একদিন তো নাম রাখতেই হবে তাহলে সে কাজ আগে করলে প্রবলেম কোথায়?
উফ এর সাথে তো আমি নিজেই পাগল হয়ে যাবো দেখছি! আমার দেরি হচ্ছে বাজে না বকে দয়া করে চলো এখন। মাঝ রাস্তায় গাড়ি দাড় করিয়ে যতসব ফালতু কথা বলছে।
আরু সোনা তুই আমাকে পাগল করেছিস আমি তোকে পাগল করবো না তা কি করে হয় বল? আর এসব ফালতু কথা মটেও নয় বুঝেছিস এক সময় এ কথাগুলোই কাজে আসবে।
হয়েছে দয়া করে গাড়িটা স্টার্ট করো।
আদ্র মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট করলো। আমি বাইরে তাকিয়ে মুচকি হাসছি একটু আগের কথা গুলো ভেবে। উনি যখন ছেলে/মেয়ের নাম রাখার কথা বলেছিলো তখন কেমন যেনো লাগছিলো ইচ্ছে করছিলো নিজেকে ওড়নার আঁচলে ঢেকে রাখি। কি সব উদ্ভব চিন্তা ভাবনা! ভাবলেই হাসি পাচ্ছে।
এই যে ম্যাম ওদিকে তাকিয়ে না হেসে আমার দিকে তাকিয়ে হাসো তোমার লজ্জাবৃত মুচকি হাসিটা আমিও দেখি। তুমি তো আবার একটুতেই লজ্জা পেয়ে যাও।
ইসস শেষমেশ উনি বুঝে ফেললো! আদ্রর মুখে তুমি শব্দটা শুনে নিজেকে বড় সুখি বলে মনে হচ্ছিলো। তুমি বলার মাঝেও যে ভালোবাসার অনুভব করা যায় সেটা উনার তুমি বলাতেই বুঝতে পারছি।
.
.
কলেজে এসে দেখি মনিকা আজ আগেই চলে এসেছে ক্লাসরুমে চুপটি করে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও খুবই অসহায়। আমি ওর কাছে এসে মাথায় টোকা দিয়ে বললাম.....
মনি কি হারিয়েছে তোর এমন দুঃখি দুঃখি মুখ করে বসে আছিস কেনো??
আমার কিছু হারায় নি রে আরু তবে এবার তুই তোর বেস্টুকে হারাবি।
ওর কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না। আমার বেস্টু বলতে একমাত্র মনি। আমি আমার বেস্টুকে হারাবো এটা কেমন কথা!!
এই মনি কি বলছিস তুই হুম? আমার বেস্টু বলতে তো শুধুই তুই তোকে কেনো হারাবো! মনি যা বলার সোজাসুজি বল একদম পেচাবি না।
মনিকা এবার আমার দিকে তাকিয়ে কাদো কাদো ফেস করে বললো.....আরু বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।
মনিকার বিয়ের কথা শুনে অবাক হলাম,সাথে খুশিও লাগছে আমার বেস্টুর বিয়ে বলে কথা!মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম.....মনি তুই সত্যি বলছিস তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে?
আজব তো, তোকে আমি মিথ্যে বলতে যাবো কেনো! আর তুই হাসছিস কেনো হুম আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে তোর আনন্দ হচ্ছে??
আনন্দ মানে! উফ মনি কি বলবো তোকে খুব খুব খুশি লাগছে আমার। জানিস তো আমার অনেক ইচ্ছে আমার বেস্টুর বিয়েতে অনেক অনেক মজা করবো। আমার ইচ্ছেটা যে এতো তাড়াতাড়ি পূরণ হতে চলেছে ভাবতেই খুশিটা ধরে রাখতে পারছি না!! এটা যদি ক্লাসরুম না হতো এতোক্ষণে আমি ডান্স শুরু করে দিতাম।
আরু তুই কিরে হ্যা আমার খারাপ লাগছে আর তুই এসব বলে মজা নিচ্ছিস!
ওহো জানু বিয়েটা তো মজারি ব্যাপার,মন খারাপ না করে তোর উড বি সম্পর্কে বল এখন?
তোকে আমি কিছুই বলবো না।তুই মজা নিচ্ছিস তো যখন আমি চলে যাবো দেখা হবে না তোর সাথে তখন বুঝবি।
এইরে মনিকা তো রেগে গেলো ধুর মজাটা একটু বেশি করে ফেলেছি ওর পাশে বসে ওকে একহাতে জড়িয়ে বললাম......মনি জানু রাগ করিস না প্লিজ। তোর মন খারাপ থাকলে আমার ও ভালো লাগে না। বিয়ে ঠিক হয়েছে তাতে কি আমি রোজ তোর সাথে কথা বলবো। হাসনা এখন প্লিজজ।যদি মন খারাপ করে থাকিস তাহলে তোকে একটা গুড নিউজ দিতে চেয়েছিলাম সেটা দিবো না।
মনিকা একটু হেসে বললো......আদ্র ভাইয়ার ব্যাপারে কিছু??
বা বাহ আমার বেস্টুটা দেখছি বলার আগেই আইডিয়া করে নিয়েছে!!
তারমানে আদ্র ভাইয়াকে নিয়ে! বলনা কি গুড নিউজ??
ক্লাস শেষে বলবো এখন স্যার আসবে।
আসলে আসবে তুই বল তো আমি ওয়েট করতে পারছি না।
মনিকা এখন হাসছে আর খুব উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি সবটা বললাম ওকে। আমার থেকে যেনো মনিকা বেশি খুশি হয়েছে।
আসলেই ফ্রেন্ডশিপ জিনিসটা সত্যি খুব মজার। মন খারাপ থাকলেও কিছু সময়ের মধ্যে মুখে একটুখানি হাসি ফুটাতে একজন বেস্ট ফ্রেন্ডই যথেষ্ট।
.
.
রাতে মনিকার সাথে ভিডিও কলে কথা বলছি,ওর বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছি। মনিকার বিয়ের কথা শুনে খুশি হয়েছি আবার খারাপ ও লাগছে আমি একা হয়ে যাবো ভেবে। কিন্তু না আমি মন খারাপ করলে মনিকাও মন খারাপ করবে। মনিকার সাথে কথা বলছি এর মাঝেই আদ্র রুমে আসলো। আমি মনিকার সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত তাই খেয়াল করি নি। উনি এসে আমার পাশে বসে পড়লো আমি একটু চমকে পাশে তাকাতেই আদ্রর হাসি মাখা মুখটা দেখতে পেলাম। শুয়ে ছিলাম দ্রুত উঠে বসলাম। উনার থেকে কিছুটা দুরে সরে বললাম.....
তুমি এতো রাতে আমার রুমে কেনো??
এতো রাত কোথায় টাইম দেখ মাত্র তো ১০:২৪ বাজে। তাছাড়া আমার তো মনে হচ্ছে আমার জন্য তুই দরজাটা লক করিস নি। ভেবেছিলি দরজা খোলা রাখলে আমি নিশ্চই আসবো তাইনা??
আদ্র বাকা হেসে কথাগুলো বলে নিশব্দে হাসতে লাগলো। আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম....
আমি মটেও ইচ্ছে করে দরজা খোলা রাখি নি। মনির সাথে কথা বলছিলাম তাই লক করতে ভুলে গেছি।
কথাটা বলতেই জোরে হাসির শব্দ পেলাম আমি আদ্র দুজনেই ফোনের দিকে তাকালাম,আমি মনির ফোন না কেটেই আদ্রর সাথে কথা বলছিলাম!আদ্রকে এ সময় মনি আমার রুমে দেখে কি ভাবছে কে জানে! ও এখনো হেসে চলেছে আমি ধমকের স্বরে বললাম.......
ওই এভাবে দাঁত কেলিয়ে হাসছিস কেনো তুই??
আমার মন চেয়েছে তাই হাসছি। আরু আমি রাখছি কেমন, আমি এখন তোদের মাঝে বাধা হতে চাই না।
মনিকা ফোন কেটে দিলো। আমি ভ্রু কুঁচকে আদ্রর দিকে তাকিয়ে বললাম......তোমাকে এ সময়ে কে আসতে বলেছে হুম,মনির কাছে কতোটা লজ্জায় পড়তে হলো। কাল কলেজে গেলে না জানি কি কি বলে হাসবে ও।
হাসলে হাসবে প্রবলেম কিসের! এমন তো নয় মনিকা জানে না কিছু। ও তো আমাদের ব্যাপারে সবই জানে।
হুম জানে। তুমি এতো রাতে কি বলতে এসেছো বলো?
বলতে আসি নি দেখতে এসেছি।
কি দেখতে এসেছো?
আমার আরুকে দেখতে এসেছি।
হয়েছে দেখা এখন যাও।
দুরে থেকে দেখে মন ভরে নাকি কাছের থেকে দেখতে হয়,এই ভাবে।
উনি আমার হাত ধরে উনার কাছে নিয়ে নিলো আমার কোমড় জড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো.....এইতো এখন মন ভরে দেখতে পারবো।
উনার ছোয়া পেয়ে আমি কেপে উঠছিলাম কোমড় থেকে উনার হাত সরাতে চাইলে উনি আরো জোরে চেপে ধরলো আস্তে আস্তে বললো......
কেনো দূরে সরতে চাইছিস হুম। আমাকে কাছে টেনে দুরে সরানো কি এতোই সোজা?
আ আমি তোমাকে কখন কাছে টানলাম?
তুই তো আমাকে সব সময়ই কাছে টানিস। তোর মনটা টানে আমার মনকে নিজেকে দুরে রাখতে পারি না। খুব কষ্টে নিজেকে তোর থেকে দুরে রেখেছিলাম কিন্তু এখন আর তা সম্ভব নয়। তোকে না দেখে, তোর নরম হাতের ছোয়া না পেলে আমি থাকতেই পারবো না। আরু তুই এখন আমার একমাত্র নেশা। সব ছাড়তে পারবো কিন্তু আরু নামের এই নেশাকে আমি কখনোই ছাড়তে পারবো না।
আদ্র আমার হাতের উল্টো পাশে চুমু খেলো,আমি ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। উনি আমাকে এতো ভালোবাসে!! আমি কি পারবো উনার ভালোবাসার মর্যাদা দিতে? হ্যা আমাকে পারতেই হবে যে মানুষটা আমাকে ভালোবাসা কাকে বলে তা শিখিয়েছে,ভালোবাসার অনুভূতি গুলো বুঝতে শিখিয়েছে তাকে আমার সবটা দিয়ে ভালোবাসবো আমি।
আমি আদ্রর দিকে তাকিয়ে বললাম......ভাইয়া আমার না...
এই কি বললি তুই??
আমি যে আবারো গোলমাল পাকিয়ে ফেলেছি বুঝতে পেরে বললাম......ধুর আমি কি করবো মুখে চলে আসে তো।
ঠিকআছে হুট করেই তো কোনো অভ্যাস দুর করা যায় না তুই ও পারবি না। তবে চেষ্টা করবি আমাকে ভাইয়া না বলার। হঠাৎ কখনো আমার কোনো ফ্রেন্ডের সামনে যদি ভাইয়া বলিস তখন কেমন পরিস্থতিতে পড়তে হবে বুঝতে পারছিস।
হুম বুঝেছি।
কি বলতে চেয়েছিলি বল?
আমি বলতে চাইছি আমাদের এ রিলেশনের ব্যাপারটা যদি কেউ না মানে?
কেউ বলতে চাচ্চু আর ছোট কাকিমাকে মানাতে হবে।
শুধু আব্বু আর মা কেনো?তোমার বাবা মা ও তো আছে।
আরু সোনা আমার বাবা মা অনেক আগে থেকেই ভেবে রেখেছে তোকে তাদের ছেলের বউ করবে আর ওনারা সব জানে। সো তাদের নিয়ে কোনো টেনশন নেই।
কিহ!! বড় চাচ্চু কাকিমা সব জানে?
জ্বি ম্যাম জানে।
আমি এবার খুবই অবাক হলাম,কাকিমা তাহলে সব জানে! এই কারনেই কি কাকিমা আমাকে আদ্রকে একসাথে দেখে হাসতো!
No comments