অদৃশ্য_পরীর ভালোবাসা ------ পর্বঃ ০১
----দেবর সাহেব, তো বিয়ে করবে কবে? বয়স তো কম হলোনা ৷
----আপনার মত সুন্দরী কাউকে পেলে বিয়েটা শীঘ্রই করে ফেলতাম ৷
-----সমস্যা নাই তো, আমাকেই বিয়ে করো!
----কেমনে? আপনার বিয়ে হবার আগে বলতে পারলেন না?
----একটা উপায় কিন্তু আছে, তোমার চাচাতো ভাই মানে আমার স্বামীকে ফাঁকি দিয়ে, ভাগিয়ে কাজী অফিসে নিয়ে বিয়ে করবে ৷৷
----না থাক ৷ আমার ভাইটাকে কষ্ট দিতে চাইনা ৷ বেচারা ভালবেসে বিয়ে করেছে আপনাকে ৷ মন ভাঙ্গা ঠিক হবেনা ৷
আমি আবার কারো মন ভাঙ্গা পছন্দ করিনা ৷
----বুঝতে পারছি কেন পিছিয়ে গেলে?
----কি বুঝতে পারলেন?
----তোমার প্রেমিকা আছে নিশ্চয় ৷ তার জন্যই এতদিনের অপেক্ষায় তুমি ৷ নিশ্চয় সেই মানুষটার অপেক্ষাতে থেকে বিয়ে করতে দেরি করছো ৷ তা কে সে?
সে কি বিয়ে করতে চাচ্ছেনা?
----না, ভাবী; এখনো আমার লাইফে তেমন কেউ আসেনি ৷ আমি আসলে এমন একজনকে চাই যে আমার ধূলোমলিন পৃথিবীটাকে রঙিন করে তুলবে ৷ অগোছালো জীবনটাকে নিজ হাতে গুছিয়ে দিবে ৷ আর আমাকে নিজের চেয়ে বেশি ভালবাসবে ৷ এমন কারো দেখা মেলেনি ৷ হয়তো তার আজও জন্মই হয়নি ৷ জন্ম নিলেও সে আমার কাছে ধরা দিচ্ছেনা ৷ আড়ালে রয়ে গেছে!
----ওহ! চিন্তা করোনা, একদিন ঠিকই পেয়ে যাবে তাকে ৷ ইশ! আমার যদি একটা বোন থাকতো ৷ তার সাথে হয়তো তোমার সেটিংটা হয়ে যেত ৷
----হা হা, হয়তো!
----তো, ৯ বছর পর গ্রামের চাচার বাসায় এলে ৷ তোমার চাচাতো বোনের সাথে দেখা হয়েছে?
----না তো! সে কই? দেখলাম না তো ৷ সেই সকালে এসেছি ৷ এখন বিকেল ৷ তার তো এখনো দেখা পেলাম না ৷ অনুর কথা স্পষ্ট মনে আছে ৷ ও খুব দুষ্টু ছিল ৷ ওর দুষ্টুমির কথা আজও মনে পড়ে ৷ আসলে ভোলার নয় ছোটবেলার স্মৃতিগুলো!
----আমার ননদকে একনজর দেখলে হয়তো ফিট খেয়ে যেতে পারো ৷ তবে একটা সমস্যা আছে, ও একটু কনজারভেটিভ মাইন্ডের ৷ আড়ালে থাকতে পছন্দ করে ৷ হয়তো লজ্জায় তোমার সাথে দেখা করছে না!
----ওহ, এই ব্যাপার ৷ সমস্যা নাই ৷ একবার দেখা হলেই ওর লজ্জা আমি ভেঙ্গে দিবো!
-----শুভকামনা স্যার!
-----হা হা হা!
.
.
শীতের ঋতুতে গ্রামে আ়সাতে উপকারই হয়েছে ৷ প্রকৃতির আসল সৌন্দর্য দেখতে পাচ্ছি, আর শীতের বৈচিত্র খুব ভালভাবে টের পাচ্ছি ৷ ডিনারের সময় হলে চাচী ডাক দিলেন খাওয়া দাওয়ার জন্য ৷ খাবার টেবিলের দিকে গেলাম ৷ রুমে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম আপাতমস্তক ঢাকা, শুধুমাত্র চোখ দুটো খোলা একটা মেয়ে চাচার পাশের চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে বসে রয়েছে ৷ মেয়েটাকে দেখে কপালে চোখ উঠলো আমার ৷ ভ্রু-কুঁচকে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ আর ভাবতে লাগলাম সে কে? অনু নাকি? অনুই হবে ৷ ভাবী বলেছিল অনু রক্ষণশীল টাইপের মেয়ে ৷ ভাবীর দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকালাম ৷ আমার দৃষ্টি বিনিময় দেখে ভাবী মিষ্টি করে হাসলো ৷ অতঃপর মাথা নাড়িয়ে বুঝালো, “সে ই অনু!"
.
কপালে ভাঁজ ফেলে ভাবতে লাগলাম নিশ্চয় এই মেয়ে কখনো আমাকে চেহারাটা দেখতে দিবেনা ৷ আমি যে চাচাতো ভাই সেটা কি ভুলে গেছে সে? আমার সাথে এতটা পর্দানশীল মনভাব নিয়ে না চললেও পারতো! অনুকে উদ্দেশ্য করে ভাবীর দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের স্বরে বললাম,
----ভাবী, পাত্রীকে দেখতে এসে যদি তার মুখটা দেখতে না পারি তাহলে বিয়েটা কেমনে হবে?
.
আমার কথা শুনে চাচা বিষম খেলেন অতঃপর কাশতে লাগলেন ৷ একগ্লাস পানির কিছু অংশ খেয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
----অনু, নেকাপটা সরিয়ে তোর ভাইকে চেহারাটা দেখা ৷ সে তো বাইরের কেউ না ৷ আমাদের পরিবারেরই একজন!
.
একটু ভাব ধরে মিনমিন কন্ঠে বললাম,
----না চাচা থাক ৷ অনু হয়তো লজ্জায় মুখ দেখাতে চাচ্ছেনা ৷ ছোটবেলা থেকেই ওর একটু লাজ বেশি ছিল ৷ এটা আমার চেয়ে বেশি কেউ জানতো না ৷ শুধু রাত্রে দুজনে ঘুমানোর সময় অনু আমাকে জড়িয়ে না ধরে ঘুমাতেই পারতোনা!
.
চাচা, চাচী ও ভাবী আমার কথা শুনে শব্দ করে হাসলেও অনু রেগে আগুন হয়ে চেয়ার ছেড়ে থমথমে পায়ে চলে গেল!
নারীর মন রহস্যময় ৷ রাগটাও রহস্যময়ী ৷ হঠাৎ করে রেগে যায় ৷ রাগলে ভাল-মন্দ না ভেবে রাগের সদ্বব্যবহার করে ৷ যদিও সদ্বব্যবহারটা কখনো কখনো বিপদের কারণ হয়!
চাচী নরম স্বরে বলল,
----নীল, ওর ব্যবহারে কষ্ট পেওনা ৷ আসলেই আমার মেয়েটা খুবই রক্ষণশীল ৷ ও তো ওর দুলাভাইয়ের সামনেও মুখ না ঢেকে কখনোই দেখা সাক্ষাৎ করে নি ৷ ওর এমন আচরণে ওর দুলাভাই রাগ করে কথায় বলেনা ওর সাথে!
.
চাচীর কথা শুনে ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলাম ৷ বোধহয় পিচ্চিকালের ক্রাশের চেহারাটা দেখতে পারবোনা!
ডিনার শেষ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম ৷ ভাবী এসে আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলো অনুর রুমের পাশের রুমে ৷ এই রুমেই ঘুমাতে হবে ৷ ভাবী মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে চলে গেল ৷ আমি সাজানো গুছানো বিছানার উপর গা এলিয়ে দিলাম ৷ অতঃপর কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম ৷ জানি এত সহজে ঘুম চোখের কোণে ধরা দিবেনা ৷ উপায় মোবাইলে কোনো বই পড়া ৷ দ্য ভিঞ্চি কোড বইটা পড়া শুরু করলাম ৷ আগেও বেশ কয়বার পড়েছি ৷ বারবার বইটি রাতের বেলায় এজন্যই পড়ি যাতে তাড়াতাড়ি ঘুমের দেশে পাড়ি জমাতে পারি ৷ পড়তে লাগলাম মনোযোগ দিয়ে ৷ হঠাৎ, দরজায় খটখটানির আওয়াজ শুনতে পেলাম ৷ পড়লাম ঝামেলায় ৷ কম্বলের ভেতর ঢুকে পড়েছি, শীতল গা গরম হয়ে উঠেছে ৷ এখন কম্বল থেকে উঠলে মজাটা নষ্ট হয়ে যাবে ৷ রাগ হচ্ছিল ৷ রাগে গজগজ করছিলাম ৷ নিশ্চয় ভাবীর কাজ ৷ সে কোনো দরকারেই হয়তো দরজায় কড়া নাড়ছে ৷ কিন্তু আমার যে কম্বল ছেড়ে উঠতে মন চাচ্ছেনা এটা তাকে কেমনে বুঝাই? যদি বলি উঠতে পারবোনা, তাহলে রাগ করবে ৷ রেগে থাকলে পরবর্তিতে তার হেল্প পাবোনা ৷ মনকে মানাতে বাধ্য করলাম যে দরজাটা খুলতেই হবে ৷ খটখটানির আওয়াজ বেড়ে চলছে ৷ অনিচ্ছা সত্বেও বিরক্তি ভাব নিয়ে কম্বল সরিয়ে বিছানা থেকে উঠলাম ৷ দরজার সামনে গেলাম ৷ দরজাটা আস্তে করে খুললাম ৷ কিন্তু আশ্চর্য কেউ নেই ৷ তাহলে এতক্ষণ দরজায় কড়া নাড়লো কে? ধুর, এতরাতে কে ফাইজলামী করে? দরজাটা বন্ধ না করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম ৷ ভাবলাম বৈদ্যুতিক বাতিটা বন্ধ করে দিই ৷ ওটা জ্বালিয়ে রেখে শুধু শুধু বিদ্যুৎ বিল বাড়বে ৷ বন্ধ করে দিলাম বাতিটা ৷ বাতি বন্ধ করার বেশকিছুক্ষণ আবলতাবল ভাবলাম ৷ এবার দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে কম্বলের ভেতরে খুশির চোটে প্রবেশ করলাম ৷ মোবাইলে আলো ছিল বিধায় দরজা বন্ধ করতে ঝামেলা হয়নি ৷ এবার মোবাইলে বইটা পড়তে শুরু করলাম ৷ আচমকা আমার গায়ে মানুষের দেহের পরশ অনুভব করলাম ৷ পুরো শরীরটা ছ্যাৎ করে উঠলো ৷ গায়ে ইরইর ভাব শুরু হলো ৷ চোখ পিটপিট করতে করতে ভাবতে লাগলাম কম্বলের ভেতর কে ঢুকলো? বিড়াল টিড়াল নাকি? কিন্তু বিড়ালের শরীর মানুষের মত হবে কেন? তাও এত কোমল ও নরম! আঁতকে উঠলো মনটা ৷ অস্বাভাবিক কিছুর সম্মুখীন হচ্ছি নাকি? ভূত টূত? না এটা কি করে হয়? ভূতের কি শরীর আছে নাকি? তবে কি পরী? আমার কম্বলের ভেতর কোনো রুপসী পরী ঢুকে পড়লো নাকি?
হাত থেকে ফোনটা পড়ে গিয়েছে, ফোন তোলার বিন্দুমাত্র সাহস ও ইচ্ছা নাই ৷৷ ফোন তোলার ভাবনা বাদ দিয়ে কম্বলের নিচে কে এটা নিয়ে ভাবনায় ডুব দিলাম ৷
ভাবতে ভাবতে অকস্মাৎ, আমার টিশার্টের ভেতরে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে কে যেন আমার কোমড়ের উপর দিকে শুরশুরি দিতে লাগলো? বড় ধরণের শক খেলাম ৷ ধারাক করে উঠলো বুকটা ৷ ঠান্ডা আঙ্গুলের পরশে গায়ে শীতলতা ভর করলো ৷ কেঁপে উঠলো শরীর ৷ নিশ্চয় কোনো পরীর আগমন ঘটেছে আমার কম্বলের ভেতর ৷ অন্যথায় কোনো মানুষের সাহস হবেনা এরকমটা করার ৷ ভয় ভয় মন নিয়ে চোখ পিট পিট করতে করতে কম্বলটা গা থেকে সরিয়ে ফেললাম ৷ ওমনি কে যেন আমার গায়ের ওপর ভর দিয়ে বসলো ৷ ভয়ে আতঙ্কে রক্ত পানি হয়ে গেল ৷ থরথরে কাঁপনের সৃষ্টি হলো ৷ কি সর্বনাশ! এ তো সত্যি সত্যি কোনো পরীর আগমন ঘটেছে ৷ কিন্তু, আমার কাছে কি চাই সে? অামি কি দোষ করলামৱ তার সাথে? জমিজমা নিয়েও তো শত্রুতা নেই ৷ কোনো কালে তার সাথে প্রেমের সম্পর্কও ছিলনা, ব্রেকআপ ট্রেকআপ করিনি ৷ ধোঁকা দিইনি ৷ তাহলে কেন যে আমার কাছে এসে ভয় দেখাচ্ছে এটাই তো বুঝতে পারছিনা ৷ ভাবলাম ফোনের আলো দিয়ে তার মুখটা দেখবো ৷ কিন্তু ফোনই তো খুঁজে পাচ্ছিনা ় বিপদের সময় প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো হারিয়ে যায় ৷ তখন জিনিসগুলোর হাত পা গজায় ৷ তারপর দৌঁড়ে দৌঁড়ে হেঁটে হেঁটে কই যেন লুকিয়ে থাকে ৷ আমার ফোনটাও বোধহয় লুকিয়ে গেছে ৷ পরীর অত্যাচার বেড়ে চলছিল ৷ স্পর্শকাতর অঙ্গে সে তার আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করছিল ৷ আমার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল ৷ এই পরীর অত্যাচার থেকে রক্ষা পাবার পথ খুঁজছিলাম ৷ কিন্তু কোনো পথও খুঁজে পাচ্ছিনা ৷ আমি তো এখন অন্ধের ন্যায় ৷ চারপাশটা অন্ধকারে ঘেরা ৷ ঘরে আলো থাকলে তো পথের দিশা পেতাম ৷ এই নিশিতে কোথাকার কোন ভয়ানক পরীর আগমন ঘটলো এটা যদি জানতে পারতাম তাহলে হয়তো পরীটার অনিষ্ট থেকে বাঁচতে পারতাম ৷ গায়ের কাঁপন বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ পরীটা ফিসফিস করে কথা বলা শুরু করলো ৷ হতবাক হলাম ৷ ভয়ের মধ্যেও হতভম্ব ভাবের উদয় হওয়াতে ভয়টা কিঞ্চিৎ কমে গেল ৷ পরীরা কথা বলতে জানে এটা আমি অনেক শুনেছি কিন্তু পরীরা যে এভাবে ফিসফিস করে কথা বলে জানা ছিলনা ৷ তাছাড়া পরীটার কন্ঠস্বর হ্নদয় জুরানো ৷ হ্নদয় শীতল করে দেওয়া কন্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছি ৷ পরীটা হ্নদয়হরণ করা কন্ঠস্বর নিয়ে বলছিল,
----আজ থেকে আমি আপনার পিছু নিলাম ৷ আর ছাড়বোনা ৷ আপনি আমাকে না চাইলেও আমি আপনার খুব নিকটে থাকবো ৷ পাশেপাশে থাকবো ৷ আমি জানি এখানে আপনি ১ মাস থাকবেন ৷ এই ১টা মাস ধরে আপনাকে আমি বিরক্ত করবো, আপনার উপর অত্যাচার করবো আর খুব খুব ভালবাসা দিবো,আদরমাখা ভালবাসা ৷ এখন একটু ভালবাসা মাখবেন গায়ে? কি দিবো ভালবাসা?
.
পরীর কথা বলার ধরণ দেখে ক্রমেই ভয়টা কই যেন হারিয়ে যাচ্ছিল ৷ এটাই তো আমি চাই ৷ ভয়কে আমি ভয় পাই, প্রচন্ডভাবে ৷ তাই ভয় মন থেকে দূর হওয়া মানেই ভাললাগা কাজ করা ৷ নিশ্চয় এই পরী ভয়ানক কোনো পরী নয় ৷ প্রেমময়ী পরী হবে ৷ তাকে দেখতে কেমন এটার জন্য মুখ দেখা জরুরি ৷ কিন্তু কেমনে দেখবো? পরীর গায়ে হাত দিয়ে দেখবো নাকি? তার দেহের গঠণ মানব নারীর মতন নাকি অস্বাভাবিক? কিন্তু সাহস ও ইচ্ছা হচ্ছেনা তার গায়ে হাত দেবার ৷ মনকে জিজ্ঞেসা করলাম, “কিরে পরীর গায়ে হাত দিবো নাকি? হাত দিলে সে কি রাগ করবে? যদি চড় থাপ্পর মারে তখন?" আমার মন উত্তর দিলো, “আরে ভয় পাইস না, আমি তো আছি ৷ তোরে থাপ্পর মারলে আমি তোর ত্বক ও মস্তিষ্ককে বলবো ব্যথা না পেতে!" মনের কথায় সাহস হলো ৷ এবার নিশ্চিন্তে পরীর গায়ে হাত দেওয়া যায় ৷ তার গায়ে হাত দেবার আগেই পরী আমার বুকের সাথে তার অন্যরকম কোমল দেহ পিষ্ঠ করে রাখলো ৷ নিশ্চয় তারও বুক রয়েছে ৷ আমার শরীরের সাথে আষ্টেপিষ্ঠ জড়িয়ে থাকায় সেটা টের পেলাম ৷ তার গায়ে হাত দিলাম ৷ আরে, এটা তো দেখি মেয়ে মানুষের মত পিঠ ৷ তারমানে পরীদের দেহ মানব নারীর মতই!
আমি কিছু বলতে যাবো ৷ তখনই ফোনের আলো জ্বালিয়ে আমার মুখ বরাবর আলো ধরলো ৷ অতঃপর চিল্লাতে চিল্লাতে পরীটা বলল,
----আমার মুখ দেখার এত শখ তাইনা? জীবনে কখনো মেয়েদের মুখ দেখেন নাই? আমি ভাবছিলাম শহরে বসবাস করে আপনি ভদ্র স্বভাবের হয়ে আসছেন ৷ কিন্তু না, আমার ধারণা ভুল ছিল ৷ আপনি আসলে একটা ইতর!
.
পরীর এত রাগ কোথা থেকে এলো বুঝলাম না ৷ আর সে কার মুখ দেখার কথা বলছে? আমি কখন তাকে বললাম মুখ দেখবো? বলেছি তো মনে মনে ৷ এটা সে কেমনে জানলো? তারমানে পরীরা মনের কথা জানতে পারে? এক মিনিট... সে কি অনুর চেহারা দেখার কথা বলছে? কিন্তু এরজন্য তো অনুর রাগ করার কথা ৷ পরীটা কেন রাগ করছে? তারমানে.... ও এই ব্যাপার! এতক্ষণ তাহলে অনুই আমার সাথে ফাইজলামী করেছে? সে না পর্দানশীল! হঠাৎ, আমার সাথে এরকম রগরগে আচরণ কেন করলো? না, এসব তো ভাল নয় ৷ হঠাৎ, সে আমার শরীর থেকে সরে গেল ৷ বিছানা থেকে নেমে সুইচবোর্ডের নিকট গিয়ে বাতি জ্বালালো ৷ ঘরটা আলোকিত হয়ে গেল ৷ রুমের এককোণে একটি মেয়ে দাঁড়ানো ৷ তার দিকে নজর পড়া মাত্র আমি এক মিনিটের জন্য যেন স্তব্দ হয়ে গেলাম ৷ এত বেশি সুন্দরী মেয়ে আমার চোখ কখনো দেখেনি, অন্তরও কখনো কল্পনা করেনি ৷ একটা মেয়ে এরকম ভয়ংকর মাপের সুন্দর হয়! এটা আগে জানা ছিলনা আজ বাস্তব চোখে দেখছি ৷ এখন বুঝতে পারছি কেন অনু নিজেকে আড়ালে রাখে ৷ ক্লাস ৮ এ তাকে শেষবার দেখেছিলাম ৷ সেসময় অনু সুন্দরী ছিল কিন্তু এরকম ছিলনা ৷ হয়তো তখন সে যুবতী ছিলনা, যৌবনে পা দেওয়ায় সৌন্দর্য তাকে ঘিরে ধরেছে ৷ কিন্তু আমি আবার বেশি সুন্দরী মেয়েদের সহ্য করতে পারিনা ৷ অনুর চেহারা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম ৷ সে আমার নিকট খুবই ধীরেধীরে এগিয়ে আসতে লাগলো ৷ আমার চোখের দিকে মায়াভরা তার ঐ কাজল কালো আঁখির দৃষ্টির যোগসূত্র ঘটিয়ে, মুখে চেপে রাখা মিষ্টি হাসি হেসে আমার ফোনটা হাতে দিয়ে মৃদ্যুস্বরে বলল
----এইযে নেন আপনার ফোন ৷ আর হ্যাঁ, আমাকে দেখেছেন তো? এবার খুশিতে লম্বা একটা ঘুম দেন ৷ আরেকটা কথা বলি, সবাই ভাবে আমি রক্ষণশীল ৷ আসলে এমন কিছুই না ৷ আমাকে ছেলেরা যাতে বিরক্ত করতে না পারে এজন্যই এরকম বেশভূষা ৷ আমার তো মন চাই সালোয়ার কামিজ কিংবা পশ্চিমাদের মত পোশাক পড়ে ঘুরতে, যেরকমভাবে আপনার সামনে দাঁড়ানো আমি ৷ কিন্তু এভাবে রাস্তায় বেড়োলে কুকুর, বিড়ালেরা কুদৃষ্টি দিবে এটা আমি চাইনা ৷ আর হ্যাঁ, মনের ভেতর পরীদের প্রতি চিন্তাভাবনা পুষে রাখা বাদ দেন ৷ আপনি এতো পরীদের নিয়ে ভাবেন কেন? দেখবেন পরীকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে আবার পাগল যেন হয়ে যান না!
.
কথাটা বলেই অনু রুম থেকে বের হয়ে গেল ৷ আমার বুক থেকে বিশাল একটা শীতল বরফের ন্যায় পাথর সরে গেল ৷ এখন হালকা লাগছে ৷ তবে অনুর প্রতি কেমন একধরণের দুর্বলতা জেগে বসতে চাচ্ছে অবচেতন মনে ৷ নানা রকম আজেবাজে চিন্তাভাবনা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম!
.
খুব ভোরে ঘুম ভাঙলো দরজার খটখটানি শব্দে ৷ কিন্তু আশ্চর্য দরজা খোলায় আছে ৷ শুধু শুধু শব্দ কেন করছে? কে করছে শব্দ? অনু নাকি ভাবী? উঁচু গলায় বললাম, “ভেতরে আসতে চাইলে আসুন এত নাটক করতে হবেনা ৷"
অনু ভেতরে আসলো হাতে চায়ের কাপ নিয়ে ৷ আমার হাতে চা- দিয়ে ভেংচি কেটে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল ৷ অনুর দিকে এখন খুব ভাল করে লক্ষ্য করলাম ৷ তার চুল ভেজা ছিল ৷ ভেজা চুলে অপ্সরীর মত লাগছিল ৷ তাছাড়া গায়ে হলুদ ও হালকা সবুজ রঙয়ের মিশেলে তৈরি করা ট্রান্সপ্যারেট শাড়িতে তাকে লাস্যময়ী লাগছিল ৷ তার মুখে হাসি লেগেই থাকে, এজন্য হয়তো সৌন্দর্যের মাধুর্যতা আরো ভালভাবে ফুটে ওঠে! চা খেতে খেতে অনুকে নিয়েই ভাবনার সাগরে প্রবেশ করলাম!
.
কুয়াশা ঢাকা ভোরের সৌন্দর্য উপভোগ করার মধ্যে অন্যরকম ভাললাগার আবেশ লুকানো রয়েছে আর আজকে আমি এই ভাললাগাটা হ্নদয়ের ক্যানভাসে রঙ তুলিতে মাখতে চাই ৷ রঙ হবে ভোরের কুয়াশা আর তুলি হবে ভোরের শীতল ঈষৎ উড়তে থাকা বাতাস ৷ আর ক্যানভাস হবে আমার পুরো দেহ ও মন ৷ না, স্যান্ডেল পায়ে দিলাম না ৷ খালি পায়ে হাঁটতে লাগলাম ৷ গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে নিলাম ৷ গ্রামে তো নদী আছে, পরিচিত গ্রাম ৷ নদীর পাশে একটা জঙ্গল রয়েছে ৷ আয়তনে খুব একটা বিশাল না, তবে পুরো জঙ্গলটা শেষ করতে মিনিট ২০ লাগে ৷ খারাপ না ৷ জঙ্গলটার জমিনে পা মাড়াই না অনেক বছর হলো ৷ শীতের প্রখরটা বাড়ায় খোলা পা শিরিরে ভেজা ঘাষে লাগতেই শরীরটা মোচড় মেরে উঠছিল প্রতিবার ৷ তবে অন্যরকম ভাললাগার অনুভূতি ঠিকই টের পাচ্ছি ৷ এখন যদি পাশে মনের মানুষ থাকতো তাহলে ভাললাগাটা আরো বেড়ে যেতো ৷ এটার আক্ষেপ থাকলেও ভাললাগাটা ঠিকই বিদ্যমান আছে, মনের মানুষ নেই তো কি? প্রকৃতির সৌন্দর্য তো ঠিকই রয়েছে ৷ অবশেষে নদীর ধারে পৌঁছলাম ৷ নদীর বুক থেকে হিমশীতল বাতাস হো হো করে উড়ে আসছিল ৷ মনে হচ্ছিল সমস্ত বাতাসের দল আমাকে লক্ষ্য করে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে ৷ বাতাসও চালাক হয়ে গেছে,চালাক দেশের মানুষদের চালাকির অভিজ্ঞতা এরাও অর্জন করেছে ৷ নদীর অন্তরকাঁপানো ঠান্ডা পানি ও পানির গা ঘেঁষে আচড়ে আসা বাতাসের পরশ ও কুয়াশার মধুর শুভ্রতা গায়ে মাখলাম ৷ নদীর ধারের প্রচন্ড শীতল বালির উপর খোলা পা রাখতে মৃদ্যু কষ্ট লাগলেও মৃদ্যু সুখ অন্তরে টের পাচ্ছিলাম ৷ অতঃপর চললাম জঙ্গলের দিকে!
জঙ্গলের ভেতরে আজ প্রবেশ করতেই ভয় করছে ৷ অনেক বছর পর পা মাড়ালাম ৷ ভয় হওয়া স্বাভাবিক ৷ সাপ টাপ থাকলে কামড় দিলে শেষ ৷ মনে ভয় আর বুকের কাঁপন নিয়ে ধীর পায়ে চলতে লাগলাম ৷ জঙ্গলের গাছগুলো ও এর পাতাগুলো এত সুন্দর যে চোখ সরানো দায় ৷ বনের একপাশে পৌঁছে দেখতে পেলাম ভাঙ্গা একটা নৌকাকে ৷ গাছের পাশে নৌকাটাকে পড়ে থাকতে দেখে জোশ লাগছে ৷ ৷ আবছা লাগছে দেখতে, কারণ কুয়াশা ৷ কুয়াশায় স্পষ্টভাবে দেখা সম্ভব না ৷ আচমকা কার যেন মধুর কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম ৷ নারী কন্ঠস্বর ৷ গান গায়ছে ৷ অসম্ভব সুন্দর কথামালায় গাওয়া মধুর কন্ঠের মনছোঁয়া গান ৷ আমার হ্নদয় জয় করে নিলো গানটা ৷ গানের গায়িকাও ৷ কিন্তু কে গায়ছে গানটা? অকস্মাৎ, নৌকার পাশে একটা মেয়েকে দেখতে পেলাম ৷ সাদা একটা শাড়ি গায়ে ৷ মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিনা ৷ তবে মেয়েটা শ্যামবর্ণের এটা টের পাচ্ছি ৷ মেয়েটার প্রতি মায়ার জন্ম হলো ৷ এখনো সে গান গায়ছে ৷ এই গানই হয়তো তার প্রতি মায়া তৈরি হবার মূল কারণ! আজকে আমি চিন্তিত নই কারো মায়ায় জরানোর দোষে ৷ হ্যাঁ, মায়ার জালে জরানো দোষের, তবে এখন কেন যেন দোষের মন হচ্ছে না ৷ এই মেয়ের মায়ায় পড়া কিংবা তার প্রেমে পড়া দোষের হবেনা বলে দুটা মনই সায় দিচ্ছে ৷ মেয়েটার সাথে কথা বলা জরুরি ৷ নৌকার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ভাবনায় ডুব দিয়েছিলাম ৷ দৃষ্টি যখন আবারো নৌকার উপর পড়লো তখন আর মেয়েটার অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম না ৷ মুহূর্তের মধ্যে সে কই হাওয়া হয়ে গেল?
দিকভ্রান্তের মত মেয়েটাকে খুঁজতে লাগলাম ৷ কিন্তু পেলাম না ৷ একরাশ হতাশা নিয়ে চলছিলাম বাসার দিকে ৷ তবে রাস্তায় দেখা হয়ে গেল অনুর সাথে ৷ মুখ ঢাকা তবে বোরখার রঙ দেখে বুঝতে পারছি সে ই অনু ৷ তাছাড়া তার দেহের গড়ণ ও চোখটাও পরিচিত হয়ে গেছে ৷ অনু কই যেন যাচ্ছিল? আমি মিষ্টি হেসে বললাম,
----কই যাবে এখন?
অনু তীক্ষ্ণকন্ঠে জবাব দিলো,
----সেটা আপনাকে কেন বলবো?
No comments