Header Ads

Header ADS

অদৃশ্য_পরীর ভালোবাসা ------ পর্বঃ ০৮/শেষ পর্ব

 এতদিন তাহলে অনু আমাকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছিল? কিন্তু কেন? কি পেলো সে এসব করে?

ভাবা বাদ দিয়ে রুমের ভেতর ঢুকলাম ৷ ঢোকামাত্র অনু আমাকে দেখেই হুড়মুড় করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো ৷ থমকে ওঠা ভাব নিয়ে ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ৷ কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে শামলে নিয়ে কিছুই হয়নি ভাব ধরে আড়ষ্ট কন্ঠে বলল,
----এত ভোরে আমার রুমে কেন আসছেন?
.
অনুর ধোঁকাবাজি আমার চোখে ধরা পড়ায় তার প্রতি প্রচন্ড পরিমাণে রাগের উদয় হচ্ছিল ৷ রাগ শামলানো দায় হয়ে যাচ্ছিল ৷ বিষাক্ত দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ অনু ভীত-সন্ত্রস্তের অভিব্যক্তিতে মাথা নিচু করে রইলো ৷ ঈষৎ ভাবে কাঁপছিল সে ৷ রাগান্বিত স্বরে তাকে বললাম,
----এগুলো কি দেখলাম? ছিঃ তুমি এতবড় ধোঁকাবাজ অথচ আমি কখনো টেরই পাইনি ৷ কেমনে পারো, হ্যাঁ?
.
অনু থতমত খেয়ে বলল,
----মানে কি? কি বলতে চাচ্ছেন?
----মেকআপ করে নিজের আসল চেহারা পাল্টিয়ে আমাকে বশে আনার মানেটা কি? তুমি ভাবছো তোমার ধোঁকাবাজি কখনো ধরা পড়বেনা?
----আপনার কথার আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা ৷
.
.
আর সহ্য হচ্ছিলনা ৷ অনু শুধু ধোঁকাবাজই না সে বড় অভিনেত্রীও বটে ৷ আমার সাথে অভিনয় করার চেষ্টা করছে ৷ রাগে আমার মাথায় রক্ত উঠে আসছিল ৷ রক্ত যেন টগবগ করছিল, ফুটন্ত পানিত মত করে ৷ লুকিং-গ্লাসের সামনে যে টেবিল সেটার উপর রাখা ছিল বাটি ৷ তার পাশেই ছিল পানির গ্লাস ৷ গ্লাসটা হাতে নিয়ে, অনুর মুখে পানি ছুঁড়ে মারলাম ৷ চমকে উঠলো সে ৷ কিন্তু আমি কোনো পরোয়া করলাম না ৷ তার মাথা চেপে ধরে, ডান হাত দিয়ে মুখে ডলা দিলাম ৷ যেন পাউডারের স্তর মুখের ত্বক থেকে উঠে আসছিল ৷ হাতে আরো একটু পানি নিয়ে আবারো মুখে ডলা দিয়ে পুরো মুখই পরিস্কার করে ফেললাম ৷ অনু নির্বাক, নিস্তব্দ ৷ তবে ভয়ে কাঁপছে ৷ চোখ একদম লাল হয়ে গেছে ৷ অপরাধবোধে তার মুখ লাজরঙ্গা হয়ে গেছে ৷ চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল এখনই সে কান্না করে দিবে ৷ অনুতপ্ত সে ৷ সেই অভিব্যক্তি চোখে, মুখে লক্ষ্য করা গেল!
অনুর চেহারাতে আর রাহনুমার মুখচ্ছবি নেই, তার চেহারাতে সেই মডার্ণ অনুর মুখচ্ছবিই ফুটে উঠেছে ৷ এতদিন অনু আমাকে এভাবে ধোঁকা দিয়ে গেলো? সে বলেছিল তাকে নিয়ে আমি ভ্রমের মধ্যে ছিলাম, মডার্ণ যে মেয়েটি আমার সাথে রোমান্স করতো সে বাস্তবের কোনো মেয়ে ছিলনা, সেটা ছিল আমার ভ্রম, কল্প জগতের নারী ৷ অথচ আজ স্পষ্ট যে ঐ সমস্ত ঘটনা ভ্রম ছিলনা, সবই ছিল বাস্তব ৷ অনুই আমার সাথে ওসব করতো ৷ কিন্তু এটা অস্বীকার করলো কেন সে? আমি তো স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিয়েছিলাম ৷ মিথ্যাচার করে কি পেলো সে?
ক্ষ্যাপাস্বরে অনুকে বললাম,
----আমাকে এতদিন সহজ সরল বোকাসোকা রুপে দেখেছো ৷ রাগী চেহারাটা দেখোনি তবে আজ দেখবে যদি আমার সমস্ত প্রশ্নের জবাব সত্যি সত্যি না বলো! বলো, কিসের জন্য তুমি রাহনুমার রুপ নিলে?
.
অনু কান্না করতে লাগলো ৷ শব্দ করে কাঁদছে তবে উচ্চশব্দ হচ্ছেনা ৷ একপর্যায়ে ভাঙ্গা গলায় বলতে লাগল,
----আমি এই ছোট্ট জীবনে শুধু ভুল করে গেলাম ৷ জীবনের প্রথম ভুল ছিল আপনার চাচাতো বোন হয়ে জন্ম নেওয়া ৷ দ্বিতীয় ভুল আপনাকে ভালবেসে ফেলা ৷ এরপর থেকে শুধু ভুলই করে গেছি ৷ বিশ্বাস করুন আমি নিজের অজান্তে আপনাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম ৷ যখন বুঝতে পেরেছিলাম আপনাকে আমার ভাললাগে তখন থেকে চেষ্টা করেছিলাম আপনাকে এড়িয়ে চলবো, কিন্তু পারিনি ৷ পারিনি বলেই ক্লাস ৮ এ আপনাকে প্রোপজ করেছিলাম চিঠির মাধ্যমে ৷ আপনি চিঠি পেয়ে আমাকে অপমানিত করেছিলেন ৷ বিষয়টাকে ফান হিসেবে নিয়েছিলেন ৷ পাড়া প্রতিবেশী স্কুল, এমনকি আমাদের দু পরিবারের সবার নিকট বিষয়টি বলে দিয়েছিলেন ৷ আর আমি হয়েছিলাম সবার হাসির পাত্র ৷ এরপরও আমি আপনাকে কিছুতেই ভোলার চেষ্টা করিনি ৷ আরো কিসের জন্য যেন আপনার প্রতি ভালবাসা বেড়ে গিয়েছিল ৷ মন তো আর আমার খেয়াল খুশি মত চলেনা ৷ ইন্টারে ভর্তি হবার পর থেকে আপনাকে অসংখ্যবার চিঠি দিয়েছিলাম, একটা চিঠিরও উত্তর দেন নি ৷ আমি বুঝে উঠতে পারিনি আমার কিসে সমস্যা ৷ যেখানে স্কুল, কলেজের অসংখ্য ছেলে আমার জন্য পাগল ছিল ৷ আমার গ্রামের প্রায় সব ছেলেরা দিওয়ানা ছিল সেখানে আপনি আমাকে পাত্তা দিতেন না ৷ চারটা বছর লেখাপড়া পিছিয়ে যায় আপনার জন্য ৷ যেটার কারণ আগেই আপনাকে বলেছি ৷ আমি খুবই জিদ্দি হওয়ায় পণ করেছিলাম যেভাবে হোক জেনে নিবো আপনি কেমন টাইপের মেয়ে পছন্দ করেন ৷ দীর্ঘ ৮ বছর তো আপনি ঢাকায় ছিলেন ৷ আপনার এত খোঁজ খবর পেতাম কিন্তু আমি যেসব প্রশ্নের জবাব পাবার আশায় আপনাকে চিঠি দিয়েছিলাম সেই চিঠিগুলোর জবাব আপনার থেকে পাইনি ৷ যখন জানতে পারলাম আপনি কয়দিন পরই গ্রামে আসবেন তখন একটা বড়সর পরিকল্পনা করলাম ৷ ১ বছর আগে আমি রুপচর্চা ও পার্লারের মেকআপ, ও ফ্যাশন সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করেছিলাম ৷ আপনি যখন গ্রামে এলেন তার ৫দিন আগে পরিকল্পনা করেছিলাম নিজেকে আপনার সামনে আমি ৩টা রুপে হাজির করবো ৷ একটা পর্দানশীল, আরেকটা সাদাসিদা বাঙ্গালি নারী ও আরেকটা আধুনিক মেয়ের ৷ ৮ বছরের মধ্যে আপনি আমাকে ছবিতেও যে দেখেন নি এটা আন্টির থেকে শুনেছিলাম ৷ এটা শুনে আমার প্ল্যানটা আরো সহজ হয় ৷ এই যে তিনটা রুপে হাজির হয়েছিলাম এটার একটা বিশেষ কারণ ছিল ৷ ক্লাস ৮ পর্যন্ত আমি নিজেকে খুব অগোছালো ভাবে উপস্থাপন করতাম ৷ আসলে বয়স অল্প ছিল তো তাই সাজুগুজু ভাললাগতোনা ৷ এজন্যই হয়তো আপনি আমাকে পছন্দ করতেন না ৷ আপনি কেমন মেয়ে পছন্দ করেন এটা জানতেই তিনটা রুপে হাজির হওয়া ৷ আর আমার পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করে এটা প্রকাশিত হলো যে আপনি সাদাসিদা বাঙালী নারী পছন্দ করেন ৷ এজন্যই নিজেকে মডার্ণ হিসেবে আপনার নিকট উপস্থিত হলে আমাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতেন ৷ জানতাম আপনি কখনোই আপনার চাচাতো বোনকে ভালবাসবেন না ৷ এরপরও এই নাটকটা করতেই হলো ৷ নাটক করার ফলে আপনি ভালবেসে ফেললেন শ্যামলা বাঙালী গোছের মেয়েটাকে ৷ অন্তত নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিবো যে সাদাসিদা বাঙ্গালী নারীর রুপ ধারণের ফলে প্রিয়তম মানুষটির ভালবাসা পেয়েছিলাম ক'টা দিনের জন্য ৷
.
রাগ যেন বেড়ে গেল ৷ দাঁত কটমট করে অনুকে ফের বললাম,
----এসব করার কোনো মানেই হয়না ৷৷ তুমি আমার সামনে থেকে চলে যাও! ভেবোনা আর কখনো আমার ভালবাসা পাবে ৷ তাই চলে যাও এ বাড়ি থেকে ৷ যাবার আগে কয়টা প্রশ্নের জবাব দাও, তিনটা রুপে হাজির হয়েছিলে বেশ ভাল কথা ৷ কিন্তু, আমার সাথে নির্লজ্জতা কেন করেছিলে? রাতে রুমের ভেতর, গাড়িতে ওরকম নির্লজ্জতার মানে কি ছিল?
.
অনু শীতল অশ্রুর নোনাজল মুছে ক্রন্দণরত অবস্থায় চাপাকন্ঠে বলল,
-----আজ আর সত্যটা বলতে কোনো বাঁধা নেই ৷ আপনাকে যেহেতু চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেললামই, তাহলে সব স্পষ্ট করে বলি ৷ আমি অন্যসব মেয়েদের মত না যে ভালবাসি যাকে তাকে মনের কথা বলে দিলাম,আর সে প্রস্তাব পেয়ে রিজেক্ট করল আর ওমনি তাকে খুব সহজে ভুলে গেলাম ৷ কিন্তু না আমি এমন না ৷ যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাবো মনের মানুষকে আপন করে পাবার জন্য ৷ একারণে প্রাণপণ চেষ্টা করে গেছি ৷ আমার এ মন প্রাণ দেহ হয়তো আপনার হবে নাহয় একাকী সারাজীবন কাটিয়ে দিব ৷ জানেন, আমি কখনো সন্তানের মা হতে পারবোনা? সে ক্ষমতাটা আল্লাহ আমাকে দেন নি ৷ এটা জানার পর আমি এতটা কষ্ট পেয়েছিলাম যে ওতটা কষ্ট আমার ছোট্ট জীবনে কখনো পাইনি ৷ ভালবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলার পর এরকম একটি অসহ্যকর দুঃসংবাদ পেয়েছিলাম আমি ৷ এমনিতেই আপনি আমাকে এড়িয়ে চলতেন ৷ যদি জানতেন আমি কখনো মা হতে পারবোনা, তখন তো আমাকে আরো এড়িয়ে চলতেন ৷ কিন্তু কি জানেন? আমার না আজও বিশ্বাস হয়না যে আমি মা হতে পারবোনা ৷ লজ্জার কথা হলেও সত্য যে আমি চেয়েছিলাম আপনার সাথে শারিরিক সম্পর্ক করে পরীক্ষা করব যে সত্যিই আমি সন্তান জন্ম দিতে পারবো কি না! কিন্তু শারিরিক সম্পর্ক করতেও মন শায় দিচ্ছিল না ৷ বারবার ঐ পথ থেকে সরে আসছিলাম! কিন্তু সেদিন রাতে আমি আমার আশা পূর্ণ করে ফেললাম, অথচ আপনি টের পাননি! কারণ আপনি ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন ৷ এই অপরাধের জন্য আমাকে খুন করলেও করতে পারেন, এতে আমার আপত্তি নেই!
.
অনু কখনো মা হতে পারবেনা এ কথা শুনে খুব কষ্ট পেলাম ৷ কষ্টে যেন বুকটা ফেঁটে যাচ্ছিল ৷ কিন্তু সে আমার সাথে শারিরিক সম্পর্ক করেছে একথা শুনে তার প্রতি ঘৃণা হচ্ছিল ৷ সে এমনটা করলো কেমনে? কিন্তু কেন যেন বিষয়টাকে সত্য বলে মনে হচ্ছেনা ৷ অনুর এত এত পাগলামীর কথা শুনে মনে হচ্ছে সে সত্যিই আমাকে ভালবাসে ৷ কিন্তু তার এরকম ভালবাসার কোনো মুল্যই হয়না ৷ কারো ভালবাসা পাবার জন্য কেউ এতসব পাগলামী করতে পারে এই প্রথমবার জানলাম ৷ আমার মন থেকে অনুর প্রতি বিন্দুমাত্র ভালবাসা আর জমা নেই ৷ হয়তো কখনো তার প্রতি আর ভালবাসার জন্মও নিবেনা ৷ মিথ্যার সাথে অসত্যকে মিলালে সত্যের অবমাননা হয় ৷ ভালবাসার মত পবিত্র সত্যকে নিয়ে অনু জঘন্য মিথ্যাচার করেছে ৷ তার এহেন মিথ্যাচারে আমার ভালবাসাকে অপমানিত করা হয়েছে ৷ আমি মিথ্যা ভালবাসা চাইনি কখনো ৷ আর চাইবো ও না ৷ আমি তো রাহনুমাকে ভালবেসেছিলাম ৷ প্রকৃতপক্ষে রাহনুমার অস্তিত্বই নেই ৷ আমার ভালবাসা অস্তিত্বহীন থাক ৷ এই হ্নদয়ে যেনো আর কারো জন্য ভালবাসা না জাগে!
.
অনুর সাথে আর কথা বলারই ইচ্ছা হলোনা ৷ তাকে কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম!
.
.
সকালে ব্রেকফার্স্ট না করে অনু ব্যাগ গুছিয়ে আমাদের বাসা থেকে চলে যেতে লাগলে আম্মু তাকে থামিয়ে দিয়ে শক্তকন্ঠে বলল,
----হঠাৎ কি এমন হলো যে চলে যাচ্ছো? তোমার বিষয়টা আমি নীলের থেকে শুনেছি ৷ ভুল করেছো এটা মেনে নাও ৷ এভাবে রাগ করে বাসা থেকে চলে যাওয়া কি রকমের ভদ্রতা!
.
আম্মুকে থামিয়ে দিয়ে চেঁচানো গলায় বললাম,
----তারমত নির্লজ্জ ও মিথ্যাবাদী মেয়ের এ বাড়িতে থাকার কোনো অধিকার নেই ৷ তাকে চলে যেতে দাও মা!
.
আম্মু কোনো কথা বললোনা ৷ অনু ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল!
.
.
দীর্ঘ ২ বছর পরঃ
তানিয়া নামের একটা মেয়েকে মায়ের পছন্দমত বিয়ে করেছি ৷ কিন্তু আপসোস! সুখ নামের জিনিসটা যেন কোথায় হারিয়ে গেছে ৷ মাত্র ৩ মাস হলো বিয়ে করেছি অথচ দুজনের মধ্যে কোনো রকমের ভালবাসা শ্রদ্ধাবোধ নেই ৷ সে একজনকে ভালবাসতো ৷ তাকে বিয়ে করতে না পেরে আমাকে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি ৷ এমনিতে স্বামীর অধিকারটা পাচ্ছি তার থেকে তবে শ্রদ্ধাবোধ, ভালবাসাটা সে আমাকে দিতে অপারগ ৷ এরপরও আশায় আছি সে একদিন আমাকে বুঝবে ৷ বিবাহিতা স্ত্রী বলে তাকে কষ্ট দিতে পারিনা ৷ তার সমস্ত আবদার মিটানোর চেষ্টা করি ৷ কিন্তু এতেও তার মন পাচ্ছিলাম না!
.
২ বছরের মধ্যে অনুর সাথে কোনো কথা হয়নি, তার সম্পর্কে কিছু জানিও না ৷ অনু আমাদের বাড়ি থেকে চলে যাবার পর তাদের পরিবাবের সাথে আমাদের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যায় ৷ তাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ৷ তবে আজ ২ বছর পর জানতে পারলাম অনুর কোলে ১ বছরের একটি বাচ্চা রয়েছে ৷ মেয়ে সন্তান ৷ তার নাম রাখা হয়েছে পরী ৷ অনু মা হয়েছে শুনে খুশিই হলাম ৷ সে সংসার জীবনকে বেছে নিয়েছে শুনে প্রশান্তি পেলাম ৷ কিন্তু, হঠাৎ করে মনে পড়লো অনুর সেই কথা সে বলেছিল কখনো সে মা হতে পারবেনা ৷ অথচ সে এখন মেয়ে সন্তানের মা ৷ এটা কিভাবে সম্ভব? হয়তো সেসময় অনু আমাকে মিথ্যা বলেছিল! কিন্তু কেন? তার প্রতি নতুন করে ঘৃণা জন্ম নিলো!
.
এর দুদিন পর খবর পেলাম অনু ১ বছর ধরে মানসিক হসপিটালে ভর্তি ছিল ৷ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ৷ তবে ৭দিন হলো সে ছাড়া পেয়েছে ৷ এও জানলাম অনু ১ বছর আগে আমাকে একটা চিঠি দিয়েছিল, যেটার উত্তর নাকি সে পায়নি ৷ সেই ১ বছর আগের চিঠিতে যা লিখা ছিল ঠিক সেসব লিখে অনু আবারো আমার নিকট নতুন একটা চিঠি লিখেছে ৷ অনুর মামাতো বোন আমাকে খবরগুলো দেবার পাশাপাশি চিঠিটা ধরিয়ে দিলো!
অনু চিঠিতে লিখেছে,
“প্রিয়তম,
আমি জানি তুমি অনেক সুখেই আছো ৷ আমার সে কপাল না যে সুখে থাকবো ৷ তবে এক মুঠো সুখ তুমি ধার দিতেই পারো, যদি আমার এই চিঠির জবাব দাও ৷ এই চিঠির জবাব পেলে আমি নির্লজ্জের মত আবারো তোমার দুয়ারে পা মাড়িয়ে হাতে পায়ে ধরে শেষবারের মত তোমার ভালবাসা ভিক্ষা চাইবো ৷ আমি মানছি তোমার সাথে মিথ্যাচার করেছিলাম, ধোঁকাবাজি করেছিলাম কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার প্রতি আমার ভালবাসা একটুও মিথ্যা ছিলনা ৷ খুব কষ্ট হচ্ছে জানো? ভালবাসা পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা যে কতটা বেদনার সেটা আমি বুঝতে পারছি ৷ সেদিন তোমার বাসা ছেড়ে চলে আসার সময় বুক ফেঁটে চৌচির হয়ে গিয়েছিল ৷ ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ডাকবে ৷ আমার হাত ধরে বলবে ঠিকআছে তোমার ভুলগুলো মাফ করে দিলাম ৷ কিন্তু তুমি আমাকে ডাকোনি, উল্টো আমাকে অপমানিত করে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল ৷ এরপরও আমার মন বলছিল তোমার কাছে ফিরে যাই ৷ কিন্তু ধৈর্য্য ধরে তোমার বাসা ছেড়েছিলাম ৷ আজ শেষবারের মত বলছি তুমি আমার ভুলগুলোকে শুধরে আমাকে মেনে নাও ৷ আমি যে পারছিনা আর তোমাকে ছেড়ে থাকতে, খুব কষ্ট হচ্ছে ৷ চিঠির জবাবটা দিও দয়া করে ৷ জবাব পেলে ভাববো আমাকে মেনে নিয়েছো!
ইতি,
তোমার অনু!
.
.
চিঠি পড়ে আপনাআপনি চোখের বৃষ্টিধারা তড়িৎ গতিতে ঝরতে ঝরতে গাল ভিজিয়ে ফেলছিল ৷ ঝাঁপসা চোখে এতক্ষণ চিঠি পড়ছিলাম ৷ আজকে মনটা চাচ্ছিল অনুর কাছে ছুটে যেতে ৷ কিন্তু আমার হাত পা যে বাঁধা ৷ আমি যে অন্যাকারো ৷ আমি বিয়ে করেছি এই খবর হয়তো অনু জানতে পারেনি ৷ আকাশ পরিমাণ কষ্ট বুকে এসে ধাক্কা মারছিল ৷ আর বুক ফেঁটে যেন তছনছ হয়ে যাচ্ছিল ৷ আমারই ভুল ছিল ৷ অনুর ঐরকম ভুলের জন্য তাকে এতবড় শাস্তি দেওয়া মোটেও ঠিক হয়নি ৷ তারসাথে অন্যায় করেছি আমি ৷ ভালবাসা পাবার জন্য মানুষ কত কি করে ৷ অনু সেরকমই করেছিল ৷ আর সেটাতো আমার জন্যই ৷ কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি ৷ আপসোস হচ্ছে এতদিন পর এটা উপলদ্ধি করে ৷ এখন এসব ভেবে তো লাভ নেই!
.
আমার বিয়ের ২ মাস পর আম্মু স্ট্রোক করেছিল ৷ স্ট্রোক করার পর প্যারালাইসডও হয়ে যায় ৷ তবে পুরো শরীর না, দুটা পা অচল হয়ে গেছে ৷ আজকে আম্মু আমাকে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে ডেকেছে ৷ সে কথা বলতে পারে, তবে স্বাভাবিকভাবে নয় ৷ ভেঙ্গে ভেঙ্গে ৷
আম্মু প্রথমে আমার নিকট ক্ষমা চেয়ে নিলো ৷ অতঃপর অনুতপ্তের স্বরে বলল,
---নীল, অনুকে এতবড় শাস্তি দেবার ফল আমি পাচ্ছি ৷ তার কোন দোষ ছিলনা ৷ আমার কথামত সে সব কাজ করেছে ৷ অনু ক্লাস ৮ এ থাকতে তোকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল এটা জানার পর অনুর উপর নজরদারী শুরু করি ৷ সে ইন্টারের ছাত্রী হলে তোর জন্য তার ভালবাসা বেড়ে গেল ৷ হাজারো চিঠি তোর জন্য লিখেছিল, সমস্ত চিঠি আমিই সরিয়েছিলাম যাতে তোর হাতে না পড়ে ৷ তুই ৮ বছর পর যখন গ্রামে গেলি তার ৬ মাস আগে অনুর বাসায় গিয়েছিলাম ৷ তার মুখ থেকে স্পষ্টভাবে শুনেছিলাম যে সে তোকে ভালবাসে ৷ এরপর আমি অনুর সাথে একটা বিশ্বাসঘাতকতা করার পরিকল্পনা আঁটি ৷ আমি কখনো চাইনি অনুকে তুই ভালবাস, সে তোর হোক ৷ এজন্য অনুকে উল্টাপাল্টা বুদ্ধি দিই ৷ অনুকে বলেছিলাম , “অনু তুই আগে জেনে নি আমার ছেলে কেমন টাইপের মেয়ে পছন্দ করে ৷ এরপর সেরকম ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে তার নিকট গিয়ে হাজির হ ৷ যদি তার চাওয়ামত হতে পারিস তাহলে তোকে সে গ্রহণ করবে!"
অনু আমার বুদ্ধির কথা বুঝে উঠতে পারছিল না ৷ পরে তাকে বুদ্ধিটা বুঝিয়ে দিলাম সহজভাবে,
“তুই তো মেকআপ করা জানিস ৷ এক কাজ কর, নীল তো ৬ মাস পর গ্রামে ছুটি কাটাতে যাবে ৷ ঐসময় তার নিকট এমনভাবে হাজির হবি যাতে সে তোকে দেখে পাগল হয় ৷ এক কাজ করতে পারিস, প্রথমে আধুনিক মেয়ের রুপে হাজির হবি, এতে কাবু না হলে পর্দানশীল মেয়ে, এতেও নাহলে বাঙ্গালী সাধারণ মেয়ের রুপে হাজির হবি ৷ যদি এটা করতে পারিস তো আরো ভালো হয়, সেটা হচ্ছে তুই একসাথে তিনটা রুপেই নীলের নিকট হাজির হবি ৷ এতে সে যেকোনো একটা রুপের বেশে দেখে পাগল হয়ে তোকে মেনে নিবেই নিবে!"
এই মোতাবেক কাজ করতে থাকে সে ৷ এমনকি সে অনেকটা সফলও হয় ৷ কিন্তু অনুর প্রতি তুই যখন সত্যি সত্যি ফিদা হয়ে গেলি তখন আমি এটাকে মেনে নিতে পারলাম না ৷ তোদের দুজনের প্রেমের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করি ৷ প্রথমে নীলার সাহায্য নিয়ে তাকে বাসায় এনে ঐসব নাটক করতে বলি ৷ এতে তেমন কিছুই হয়নি ৷ কিন্তু কাজ হয় আমার বড়সর প্ল্যানে ৷ অনুকে বলেছিলাম , “আজ সকালে তুই নীলের কাছে আসল চেহারা নিয়ে হাজির হবি, দেখবি সে নিশ্চিত তোকে মেনে নিবে ৷ তাছাড়া এভাবে নিজেকে ফেক চেহারাতে নীলের নিকট উপস্থিত করিয়ে কোনো লাভ হবেনা ৷ একদিন তো প্রকাশ পাবেই এটা ৷ তখন সে তোর উপর রেগে গিয়ে সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে পারে ৷ কিন্তু এখন করবেনা ৷ কারণ সে তোর প্রতি পুরোদমে প্রেমে মজে গেছে!"
এই কথামত অনু সেদিন খুব ভোরে ফেক চেহারার মেকআপটা ধুয়ে ফেলে পুনরায় সেই ফেক চেহারার মেকআপ করে যাতে তুই তাকে দেখে নিস ৷ এটাই হলো ৷ আর এতে তুই অনুকে ভুল বুঝলি ৷ তাকে ধোঁকাবাজ ভেবে নিলি ৷ তাকে দূরে ঠেলে দিলি ৷ জানিস নীল, অনুর সাথে আমি মস্তবড় অন্যায় করেছিলাম ৷ তাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে টেস্ট করিয়েছিলাম রোগ ধরার জন্য ৷ কারণ অনুর প্রায়দিনই
ঠান্ডা লাগতো ৷ তার টেস্ট রিপোর্টে ধরা পড়ে তার পলিপাসের সমস্যা আছে সামান্য ৷ এই সমস্যার কথা অনুকে না জানিয়ে আমি বলি অনু তুই আর কখনো মা হতে পারবিনা ৷ অনু এটা বিশ্বাস করতে পারেনি ৷ এজন্য অন্য ডাক্তারের নিকট গিয়ে টেস্ট করা হয় ৷ সেই ডাক্তারের হেল্প নিই এবং তাকে মিথ্যা বলতে বলি, সেই ডাক্তারও অনুকে বলে সে আর মা হতে পারবেনা ৷ এই ঘটনাটা তুই গ্রামে যাবার ৬ মাস আগের ঘটনা ৷ তাকে আরো জঘন্য কাজ করতে বলি ৷ অনুকে বলেছিলাম, “তুই নীলের সাথে রগরগে ড্রেসে ও আবেদনময়ী ভাবভঙ্গিমায় চলবি ৷ এতে সে আকৃষ্ট হতে পারে ৷ সর্বশেষ বার তাকে বুদ্ধি দিয়েছিলাম তোর সাথে শারিরিক সম্পর্ক করার জন্য ৷ সেটা তোর ঘুমের মধ্যে ৷ এজন্য অনুর হাতে ঘুমের ট্যাবলেট দিয়েছিলাম যাতে তোকে খায়য়ে দিতে পারে ৷ অনু বাসা ছেড়ে যাবার আগের রাত্রে সে তোর সাথে শারিরিক সম্পর্ক করে ৷ এটা করতে সে রাজি হয় আমার এই কথাতে, তাকে বলেছিলাম, “দেখো অনু, ডাক্তাররা অনেক সময় ভুল রিপোর্ট বলে ৷ তুমি এক কাজ করো নীলের সাথে শারিরিক সম্পর্ক করো ৷ সমস্যা কি তাকে তো একদিন ঠিকই পাবে ৷ বিয়ের আগে এটা করলে একসময় পেটে সন্তান হবে ৷৷ আর যদি এটা হয়ই তবে
বুঝবে ডাক্তার ভুল বলেছে ৷ এখনই যদি নীলকে বলো তুমি মা হতে পারবেনা এটা শুনলে সে কষ্ট পেতে পারে ৷ কিন্তু আল্লাহ যদি তোমাকে মাতৃত্বের ক্ষমতা দেন তবে একসময় জানতেই পারবে ৷ কারণ তুমি তো নীলের সাথে শারিরিক সম্পর্ক করছো ৷ যদি পেটে বাচ্চা আসে তখন নীলকে সত্যটা বললে সে খুশি হবে!"
অনু আমার একথা শুনে সেই মোতাব্ক কাজ করেছিল ৷ কিন্তু তাকে পরবর্তিতে সহজভাবে বলে দিয়েছিলাম সে যেন নীলের জীবন থেকে সরে দাঁড়ায় ৷ অনুকে স্পষ্টভাবে বলেছিলাম আমি তাকে ছেলের বউ হিসেবে চাইনা ৷ অনু একথা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিল কিন্তু তার কষ্ট দেখে সেদিন কোনো প্রভাব পড়েনি!
নীল, অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি অনুর সাথে ৷ জানি এমন অপরাধের কোনো ক্ষমা হবেনা ৷ কিন্তু যদি তুই তাকে গ্রহণ করিস তাহলে হয়তো অপরাধের ভারটা কমতো ৷
তোর স্ত্রী তানিয়া আজ সকালে আমাকে বলেই বাসা থেকে চলে গেছে ৷ সে তার পুরোনো বয়ফ্রেন্ডের কাছে চলে গেছে ৷ কয়দিন পর সে তোকে ডিভোর্স লেটার পাঠাবে! তোর রাস্তা এখন পরিস্কার ৷ অনু তোর জন্য পথ চেয়ে বসে আছে ৷ আর শোন, সে বিয়ে করেনি ৷ পরী নামের মেয়েটা তোর ৷ ঐ রাতে তোদের ভালবাসার প্রাপ্তি সে! ভাবিস না সে অপবিত্র সন্তান বরং সে পবিত্র ৷ তোর বয়স যখন ১১ আর অনুর ৭ ৷ তখন তোর দাদা কাজী অফিসে তোদের নিয়ে গিয়ে তোদের বিয়ে পড়িয়েছিল ৷ আমরা এটা জানতাম না ৷ তোর বাবা শুধু জানতো ৷ তোর দাদা বিষয়টা গোপন রেখেছিল এবং তোর বাবাকেও বিষয়টা গোপন রাখতে বলেছিল ৷ তোর বাবাকে বলেছিল যেদিন অনু ও নীল একে অপরকে ভালবেসে আপন করে নিবে সেদিনই বিয়ের কথাটা প্রকাশ করে দিতে, এর আগে নয়!
তোর বাবা আমাকে কথাটা বলেছিল যখন তুই তানিয়াকে বিয়ে করলি তার আগের দিন! তোর বাবা কষ্ট পেয়েছিল অনুকে রেখে তানিয়াকে বিয়ে করার জন্য!
.
নীল আর দেরি করিস না বাবা, অনুকে তোর ঘরের লক্ষ্মী রমণী করে ঘরে তোল!
.
.
অনু, ও তার ভাই অমিত দুজনের সামনে অপরাধী হিসেবে দন্ডায়মান ৷ আজকে অমিত যে আমাকে কি করবে সেই ভাল জানে!
হঠাৎ অমিত রাগস্বরে বলল,
----শালা, তোরে আমি এজন্যই দেখতে পারতাম না কারণ তুই আমার বোনকে সবসময় এড়িয়ে চলতি ৷ যখন অনু ক্লাস ৭ এ পড়তো ৷ তখন সে দুষ্টুমি করে তোকে চুমু দিয়েছিল ৷৷আর এজন্য তুই ওকে থাপ্পর মেরেছিলিস ৷ এটা দেখার পর তোকে আর চাচাতো ভাইয়ের চোখে দেখিনি ৷ তোর প্রতি রাগটা আরো বেড়ে গিয়েছিল যখন অনু তোকে ক্লাস ৮ এ থাকতে চিঠির মাধ্যমে প্রোপজ করে আর তুই তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলি, শুধু ফিরিয়েই দিস নি সেইসাথে তার ভালবাসা নিয়ে ঠাট্টা করেছিলি ৷ কিন্তু এতকিছুর পরও আমি অনুকে তোর হাতে তুলে না দিয়ে পারছিনা ৷ অনু তোর বিবাবিতা স্ত্রী ৷ আমার অধিকার নেই তাকে তোর থেকে ছিনিয়ে নেবার ৷ ভাবছিস এটা কেমনে জানি? তবে শোন, দাদা অনুর জন্য একটা লকেট বানিয়েছিল ৷ দুটা লকেটে দুজনের ছবি, একটা অনুর আরেকটা তোর ৷ ঐ লকেটটা রাখা ছিল দাদার সবচেয়ে প্রিয় একটি ডায়েরীতে ৷ ডায়েরীটার ভেতর একটা চিঠি ছিল ৷ ঐ চিঠিতে সমস্ত কিছু লেখা ছিল ৷ দাদু আমার হাতে ডায়েরীটা সেই ছোট থাকতেই দিয়েছিল ৷ আমার নিকট থেকে ওয়াদা নিয়েছিল যে যতদিন না অনু ও নীলের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হবে অতঃপর সম্পর্কের মধ্যে ফাঁটল না হবে ততোদিন এই ডায়েরীর মধ্যেকার চিঠিটা না খুলতে!"
আজ থেকে ২ বছর পূর্বে যখন অনুর সাথে তোর সম্পর্ক তৈরি হয় অতঃপর সম্পর্কে ফাঁটল ধরে তখনই চিঠিটা পড়ে জানতে পারি অনু ও তোর মধ্যে বিয়ে হয়ে গেছে ৷৷ ৷বিয়ের সাক্ষ্মী ছিল শুধু দাদু ৷ আর দাদু সৃষ্টিকর্তার কসম দিয়ে বলেছেন যারা অনু ও নীলের বিয়েকে অস্বীকার করবে তারা যেন দাদুর তাজা মাংস খাবার মত পাপ কাজ করে!'
.
দাদুর জন্যই আমি পারছিনা অনুকে তোর থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে ৷ আজ থেকে সে তোর ৷ তবে একটা কথা মনে রাখিস আমার বোনকে পাগল বানিয়ে যে অন্যায়টা তার সাথে করেছিস এটার কষ্ট তোকে সারাজীবন পেতে হবে!
.
কথাটি শুনে অনু কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো,
----ভাইয়া, প্লিজ থাম ৷ সে আমাকে ভালবেসেই কষ্ট দিয়েছে, স্বামীর কষ্টে আমি ব্যথিত হতে চাই্না ৷ তার দেওয়া কষ্ট আমি সারাটাজীবন সইতে পারবো ৷ শুধু তাকে বলো, আমার হাতটা যেন আর কখনো না ছাড়ে!
.
অশ্রু ঝরঝর করে ঝর্ণার পানির মত ঝরছিল আমার দু-চোখ বেয়ে ৷ আমি নিজেকে যেন শামলাতেই পারলাম না ৷ হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে অনুকে বুকে জড়িয়ে নিলাম ৷ অতঃপর তার হাত দুখানা ধরে ক্রন্দনরত অবস্থায় বললাম,
----আমাকে মাফ করে দাও ৷ আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি ৷ এমন অন্যায়ের ক্ষমা হয়না ৷ অথচ আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি শুধু তোমার মুখের দিকে চেয়ে, তুমি ক্ষমা করবে এই আশা আমার অন্তরে আছে!
.
.
ছোট্ট একটা উদলা ছাউনীতে বসে আছি আমি অনু ও আমাদের পরী!
দেখতে দেখতে আমাদের মেয়েটা কত বড় হয়ে গেছে ৷ সে ক্লাস ১ পড়ে ৷ আমাদের দুজনের নাম বানান করে লিখতে ও পড়তে পারে সে ৷ কিন্তু কখনোই সে আমাদের দুজনের নাম আলাদা করে লিখে নি ৷ তার কলমে আমাদের নাম লিখে “অনুনীল" ৷ আমার ছোট্ট মেয়েটাকে বলি, যে, “মা তুমি এভাবে আমাদের নাম লিখো কেন?" আমাদের ছোট্ট মেয়েটা মিষ্ট করে জবাব দেয়, “তোমরা দুজনে তো সবসময় একসাথে মিলেমিশে থাকো, তাই নাম দুটাও মিলেমিশে থাকুক!"
.
মেয়ের কথা শুনে তার মা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মোলায়েম কন্ঠে বলে,
“তোমাকে ধন্যবাদ গো স্বামী আমার, এভাবে পাশে থাকার জন্য!"
.
                                                                  End

No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.