Header Ads

Header ADS

তোকে_অনেক_ভালোবাসি-----পর্ব_৯

সকালে ঘুম ভাঙতেই নিচে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে নিচে চলে এলাম। এসে দেখি ফুপি ব্যাগ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে আর রাফিয়াকে বলছে তাড়াতাড়ি বেড় হতে।। আমি মায়ের পাশে গিয়ে বললাম

মা কি হয়েছে? ফুপি চলে যাচ্ছে নাকি??
তোর ফুপির শাশুড়ি খুব অসুস্থ হসপিটালে নেওয়া হয়েছে তাই চলে যাচ্ছে।
ফুপির শাশুড়ি অসুস্থ শুনে মনটা খারাপ হচ্ছে আবার একটা কথা ভেবে খুশি লাগছে তা হলো....ওই ন্যাকারাণী রাফিয়া ও চলে যাবে।এ দুদিনে কিভাবে যে ওকে সহ্য করেছি আমি! বেশি রাগ হতো তখন,যখন দেখতাম ও আদ্র ভাইয়ার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে চাইতো আর সুযোগ পেলেই উনার আশে পাশে ঘুরঘুর করতো।
ফুপিরা একটু আগেই চলে গিয়েছে,ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হইনি তাই রুমের দিকে যাচ্ছিলাম ফ্রেস হতে। রুমে ঢুকতে যাবো তখন আদ্র ভাইয়া ডাকলো,আমার রুমের পরে অথই এর রুম তারপরে আদ্র ভাইয়ার। আদ্র ভাইয়া উনার রুমের দরজায় দাড়িয়েই ডেকেছে। আমি এখানে দাড়িয়ে বললাম
ডাকলে কেনো কিছু বলবে??
উনি আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে একটু চোখ বুঝে আবার খুললো। তারপর হালকা হেসে বললো
আমার জন্য কফি নিয়ে আয়।
আমি যে কফি করতে পারি না সেটা তো তুমি জানোই,তাহলে আমাকে কেনো বলছো?
তোকে কি বলেছি নিজে করে আনবি? নিচে গিয়ে মাকে বল মা কফি করে দেবে। আর শোন কফিটা কিন্তু তুই নিয়ে আসবি।
আদ্র রুমে ঢুকে গেলো আর আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি। সকালে উঠে ফ্রেস হতে পারলাম না এখনো আর উনি আমাকে হুকুম করছে!বলি আমি কি তোমার ঘরের বউ যে হুকুম করছো আমাকে! কথাটা জোরেই বলে আবারো নিচে চলে এলাম। কিচেনে এসে দেখি কাকিমা কফির কাপ হাতে নিয়ে বেড় হতে যাচ্ছে...
কাকিমা কার কফি এটা??
আদ্রর জন্য নিয়ে যাচ্ছিলাম।
ওহ,আমাকে দাও আমি নিয়ে যাচ্ছি।
তুই নিয়ে যাবি! কেনো রে আগেও তো কতো দিয়ে আসতে বলেছি তখন যাস নি কেনো?
আজও কি ইচ্ছে করে নিতে চাইছি। তোমার ছেলে আস্তো একটা হনুমান বুঝেছো। আমাকে কফি নিতে পাঠিয়েছে আর বলেছে আমিই যেনো নিয়ে যাই। এখন যদি না নেই পরে আবার শুধু শুধু মুখ ফুলিয়ে রাখবে আর সুযোগ পেলেই বকা দেবে।
কাকিমা হেসে বললো....ঠিকআছে নিয়ে যা।
.
.
দরজায় দাড়িয়ে বললাম...ভাইয়া আসবো?
হুম আয়।
আদ্র ভাইয়া ল্যাপটপে কি যেনো করছে আমি কফির কাপটা বেড সাইড টেবিলে রেখে বললাম
কফি রেখে গেলাম খেয়ে নাও। বলেই চলে আসতে নিলে উনি কাপটা হাতে নিয়ে বলে উঠলো
এই দাড়া তোকে যেতে বলেছি আমি?
তোমাকে বলতে হবে কেনো আমি নিজেই যাচ্ছি।
কোথাও যাবি না তুই,এখানে আমার সামনে দাড়িয়ে থাকবি।
মানেটা কি! আমি তোমার সামনে থেকে কি করবো??
এই মেয়েটা বুঝবে কবে আমি কি চাই। কথাটা বিড়বিড় করে বললো।
ভাইয়া কিছু বললে??
কই না তো কিছুনা। আরু একটা কথা বলবি?
কি কথা।
আমি যে তোকে মাঝে মাঝে বকা দেই আবার এটা সেটা করতে বলি তাতে কি তুই বিরক্ত হস??
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। আসলে আমি বিরক্ত হলেও কেনো জানি এই বিরক্তি মাখা ব্যাপার গুলোতে ভালো লাগে আমার।
কি হলো আরু বল কিছু?
জানি না আমি।
আদ্র ভাইয়া কফির কাপটা রেখে আমার সামনে এসে দাড়ালো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো
ঠিকআছে জানতে হবে না। তখন তুই কি যেনো বলছিলি! ও হ্যা মনে পড়েছে, তুই কি আমার ঘরের বউ যে হুকুম করছি। এটাই তো বলেছিলি তাইনা??
আমি চমকে উঠলাম উনার কথায়,আমি কি কথাটা এতোটাই জোরে বলেছি যে উনি শুনে ফেলেছে!! কথাটা মনে মনে ভেবে একটু হেসে বললাম
কই আমি তো এমন কিছু বলিনি।
কিন্তু আমি তো শুনলাম তুই এটাই বলেছিস।
শুনেছো তাহলে আবার জানতে চাইছো কেনো হুম??
ইচ্ছে হয়েছে তাই। তবে যাই হোক তুই যদি বলিস ঘরের বউ.......
উনাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বললাম....আমি যাচ্ছি এখন। উনি জোরে হেসে উঠে বললো
আচ্ছা যা আর আটকাবো না তোকে।
আমি উনার দিকে না তাকিয়ে বেড়িয়ে আসতে নিলে উনি পেছন থেকে বললো
আরু তোর ঘুম জড়ানো মুখে এলোমেলো চুলগুলোতে খুব সুন্দর দেখায়।
আমি কথাটি শুনে মুচকি হেসে বেড়িয়ে আসলাম। কেনো জানি না আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছিলো উনার সামনে। কিছুটা লজ্জা ও লাগছিলো তাই আর কিছু বলতে না দিয়ে চলে এলাম।
থাকনা কিছু অজানা কথা, যে অজানা কথা মনের অনুভূতি গুলো আরো গভীরে নিয়ে যাবে। যা থেকে তৈরি হবে একটা অদৃশ্য মায়ার বাধন।
.
.
কলেজে এসে একা একা বসে আছি মনিকা এখনো আসে নি। ওকে ছাড়া আর কারো সাথে মিশতেও আমার ভালো লাগে না। ক্লাস শুরু হতে এখনো ১৫ মিনিট বাকী। ক্যান্টিনে বসে মনিকাকে তখন থেকে কল দিচ্ছি কিন্তু ও ফোন ধরছে না।
খুব রাগ হচ্ছিলো ফোন যদি না ধরবে তাহলে ফোনটা ব্যবহার করে কি জন্য! আজ আসুক আগে ওর ফোনটা ভাঙবো আমি। নিজে নিজেই বিড়বিড় করে বলছিলাম কথা গুলো। পাশে থেকে কেউ বলে উঠলো
এক্সকিউজমি, আমি কি এখানে বসতে পারি??
আমি পাশে তাকিয়ে দেখলাম একটা ছেলে হাসি মুখে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আপনি এখানে বসবেন কেনো??
আপনি একা একা বসে আছেন,আবার দেখছি নিজে নিজেই কিছু বলে চলেছেন। নিশ্চই বোর হচ্ছেন একা একা রাইট?তাই ভাবলাম আপনার বোরিংনেসটা যদি কিছুটা দূর করতে পারি।
আমি ভ্রু কুঁচকে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম....আপনাকে কি বলেছি আমি একা একা বোর হচ্ছি??
না সেটা বলেন নি আমার মনে হলো।
ও আচ্ছা আপনার মনে হয়েছে! ঠিকআছে এক কাজ করুন আপনার সেই মনে হওয়াটাকে বলুন আপনার সামনে থাকা মেয়েটি এখানে একা বসেই ভালো আছে।
ছেলেটা হেসে উঠে বললো....হুম বলেছি মনকে। বাট সে মনটা বলছে এখানে একটু বসতে।
ঠিকআছে আপনি আপনার মনকে নিয়ে বসুন আমি যাচ্ছি।
আমি উঠে যেতে নিলে ছেলেটা বলে উঠলো....আরে মিস রেগে গেলেন নাকি আপনি? ঠিকআছে আপনাকে যেতে হবে না আমিই যাচ্ছি।
হুমম প্লিজজ যান এখান থেকে।
যাচ্ছি তার আগে আপনার নামটা বলবেন কি??
আমি রেগে বললাম...যাবেন আপনি।
ওকে ওকে রাগ করবেন না যাচ্ছি। শুনুন আমি সাইফ। এ কলেজেই অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ি,ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট। কোনো প্রবলেম হলে বলবেন।
এবার আরো রাগ উঠে গেলো আমার। আমি কি কিছু জানতে চেয়েছি যে এই অসভ্য ছেলেটা এসব বলছে!! আমি কিছু বলতে যাবো তখনি মনিকা দৌড়ে এসে হাপাতে হাপাতে বললো
আরু সরি জানু অনেক লেট করে ফেলেছি তাইনা।
এমনিতে ওর উপর রাগ ছিলো তারপর ওই ছেলেটা এসে আরো রাগিয়ে দিয়েছে
ওই কে তোর জানু,একদম জানু বলবি না আমায়। ফোন কোথায় তোর শুনি? ওটা কি সাজিয়ে রাখার জন্য কিনেছিস?
আরে ফোন ভুল করে রেখে এসেছি। প্লিজ রাগ করিস না চল ক্লাসে যাই এখন।
আমি কিছু না বলে ঘুরে দাড়াতেই দেখলাম ছেলেটা এখনো দাড়িয়ে আছে
কি ব্যাপার আপনি এখনো কি করছেন এখানে??
আপনার নামটা শুনে দাড়িয়ে পড়েছি। আরু নাইস নেম।
ছেলেটা দাঁত কেলিয়ে হেসে চলে গেলো। ইচ্ছে করছিলো ওর দাঁত গুলো ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেই।
মনিকাকে বকতে বকতে ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলাম হঠাৎ খেয়াল করলাম আদ্র ভাইয়া আমাদের থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে আছে,উনার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট।
কিন্তু উনি এতো রেগে আছে কেনো? আমার দিকেই তো তাকিয়ে আছে। ওই ছেলেটা আমার সাথে কথা বলেছে উনি দেখে ফেলে নি তো? হঠাৎ সেই চড়ের কথা মনে পড়ে গেলো। আজও আবার চড় খেতে হবে নাকি! তবে আমার তো কোনো দোষ নেই আমি তো কথা বলতে চাইনি, ছেলেটাই কথা বলতে এসেছে।
.

No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.