তোকে_অনেক_ভালোবাসি-----পর্ব_২৭
আদ্র আরিশা আর অথইকে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে এসেছে। ফুচকা পেয়ে আরু যেনো সব ভুলে গিয়েছি বাচ্চাদের মতো একের পর এক ফুচকা খেয়ে চলেছে। আদ্র তার মায়াপরীকে এতো খুশি দেখে নিজেও প্রশান্তির হাসি দিলো।
সন্ধার পর আরু আর অথইকে নিয়ে আদ্র বাড়িতে ফিরলো। আরুকে হাসিখুশি দেখে আরুর মা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
রুমে এসেই আদ্র বেডে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো। আরু বিরক্তি নিয়ে বললো........
কি হলো এটা??
কি হয়েছে!!
তুমি বাইরে থেকে এসে ফ্রেস না হয়ে শুয়ে পরলে কেনো??
টায়ার্ড লাগছিলো খুব,তুমি ফ্রেস হয়ে এসো আমি পরে যাচ্ছি।
উহু কোনো কথা শুনছি না উঠো জলদি ফ্রেস হও। আমি না হয় পরে ফ্রেস হবো।
আদ্র উঠে বসে বললো........ঘরে বউ এনেছি নাকি সব সময় আমাকে তাড়া দেওয়ার মেশিন এনেছি সেটাই বুঝি না।
আরু কোমড়ে হাত দিয়ে বললো........কি বললে তুমি,আমি তাড়া দেওয়ার মেশিন?? তোমাকে তো আমি....
কি আমাকে? ওও বুঝেছি কিস করতে ইচ্ছে করছে??
না তোমার গলাটা চেপে ধরতে ইচ্ছে করছে।
আরুর রাগ দেখে আদ্র মুচকি হেসে বললো.......বউ আমার রেগে গেলে দেখছি আরো কিউট লাগে। ইস নাকটা কেমন লাল হয়ে গিয়েছে। আমার রাগিনী বউ।
আদ্র আরুর নাক টেনে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ও জানে এখন আর একটা কথা বললে আরু রুম থেকেই বেড়িয়ে যাবে।
আদ্র ওয়াশরুমে ঢুকতে আরু ফিক করে হেসে উঠে বলতে লাগলো.........এটাই কি সেই আদ্র যে কারনে অকারনে আমাকে বকা দিতো একটু বেশি কিছু বললে রেগে যেতো! আজ উনি এতো চেঞ্জ!! কি করে এতোটা পাল্টে গেলেন উনি? তবে যাই হোক সব শেষে উনি আমাকে এত্তো ভালোবাসে এতেই আমি হ্যাপি।
.
.
আদ্র অনেক রাত পর্যন্ত ল্যাপটপে অফিসের কাজ করেছে। আরু ঘুমিয়ে পড়েছে আদ্র কাজ শেষ করে লাইট অফ করে আরুর পাশে শুয়ে পড়লো আরুর দিকে ঘুরে আরুর মুখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে রইলো। জানালা দিয়ে বাইরের আবছা আলো পড়েছে আরু মুখে। আদ্র আরুর ঘুমন্ত মুখে স্লাইড করতে করতে বললো........
তুমি এতো মায়াবী কেনো জান তোমার মুখের দিকে তাকালে অনেক শান্তি অনুভব করি। তোমাকে ছাড়া আমি একমুহুর্ত ও ভাবতে পারিনা। কেনো ভাববো বলো, অনেক ভালোবাসি যে তোমাকে। তোমাকে আমি আর কাঁদতে দেবো না আরু সোনা তুমি কাঁদলে যে আমার বুকে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। জানো আরু তোমার হাসিটা খুব মিষ্টি দিন শেষে বাড়ি ফিরে তোমার মুখের একটুখানি হাসি দেখলেই আমার সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। আরু তুমি হয়তো জানো না আমার হৃদয়ে কতোটা জায়গা জুরে তুমি আছো। তুমি আমার জান আমার অক্সিজেন তুমি। আমাকে একা করে কখনো হারিয়ে যেয়ো না জান সামলাতে পারবো না নিজেকে।
আদ্র আরুকে নিজের বুকে এনে মাথায় কপালে চুমু খেয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
আদ্র প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিলো হঠাৎ বুকে ভেজা ভেজা অনুভব করে ধপ করে চোখ খুললো। কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলো আরু ঘুমের মাঝেই আস্তে আস্তে কিছু বলছে।
আদ্র আমার খুব ভয় করছে আমি একা থাকতে পারবো না। আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছো তুমি? আমার হাতটা ধরো না আদ্র। এখানে খুব অন্ধকার ভীষণ ভয় করছে আমার। আদ্র শুনতে পাচ্ছো বাচ্চাটা এখনো কাঁদছে ওকে কোলে তুলে নিয়ে একটু আদর করো ওকে। আর আমাকে নিয়ে চলো না এখান থেকে।
আরু আবারো কেঁদে উঠলো। আদ্র সবটা শুনে ওর বুকটা অজানা ভয়ে কেঁপে উঠলো। আরু কি বলছে এসব!! আদ্র ফোনের টর্চ অন করে আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে লো ভয়েজে বলতে লাগলো..........
আরু চোখ খোলো দেখো তুমি তোমার আদ্রর বুকে শুয়ে আছো। আমার আরু সোনাকে একা রেখে আমি কোথাও যাবো না। এই আরু শুনছো আমার কথা চোখ মেলে তাকাও সোনা।
আরু কেঁপে উঠে আদ্রকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ওর চোখ থেকে এখনো পানি পড়ছে।
আদ্র আরুকে ঝাকিয়ে বললো........ভয় পেয়ো না আমি আছি তো। তুমি হয়তো সপ্ন দেখেছো। সপ্ন দেখে কেউ এভাবে কাঁদে হুম? আমি তো তোমার কাছেই আছি।
আরু মুখ তুলে টিপটিপ করে চোখ খুলে আদ্রর চিন্তিত মুখটি দেখতে পেলো। আরু হুট করেই আদ্রর কপালে গালে ঠোঁটে চোখে চুমু দিতে লাগলো। আদ্র অবাক হলো না আরু যে ভয় পেয়ে এমন পাগলামো করছে বেশ বুঝতে পারছে।
আদ্র আরুকে শান্ত করতে আরুর ঠোঁটে চুমু খেলো আরুর চোখের পানি মুছে মুচকি হেসে বললো........
আমার বউটা আমাকে এত্তো ভালোবাসে! এই পাগলি এইতো আমি আছি তোমার পাশে। কেঁদো না সোনা।
তুমি ঘুমের ঘোরে কি কি বলেছো আমি শুনেছি। নিশ্চই সারাদিন আমাকে নিয়ে চিন্তা করো তাই এসব ভুলভাল সপ্ন দেখো।
আরু কাপা কাপা গলায় বললো........এই সপ্ন আমি কেনো দেখি আদ্র? আগেও দেখেছি। আমি কি সত্যি হারিয়ে ফেলবো তোমাকে??
ধুর পাগলি কি বলছো এসব আমি তোমার সাথেই থাকবো কোথাও যাবো না। সপ্ন কখনো সত্যি হয় না এ নিয়ে মনে ভয় পুষে রেখো না। আমাকে নিয়ে এতো ভাববে না বুঝেছো তাহলে আর এমনটা হবে না। এখন লক্ষী মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পড়ো তো।
আরু আর কিছু বললো না চুপটি করে আদ্রর বুকে মাথা রেখে দুহাতে আকড়ে ধরলো। আদ্র আরুকে একহাতে ধরে অন্য হাত দিয়ে ওর আরুর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
আদ্র আরুকে শান্তনা দিলো কিন্তু নিজে শান্ত হতে পারছে না। আরু আগেও এমন সপ্ন দেখেছে আবারো দেখলো। এ সপ্নকি আসলেই কোনো ইঙ্গিত দিতে চাইছে বড় কোনো ঝড় আসতে চলেছে কি আদ্র আরুর জীবনে!নাকি শুধুই সপ্ন এটা!
.
.
কফিহাউসে বসে আছে আদ্র আর সাদাফ। অনেকদিন ওদের দেখা হয়না তাই সাদাফ আদ্রকে বলেছে দেখা করতে। সাদাফ কফি খাচ্ছে আর এটা ওটা বলছে,আদ্র চুপচাপ বসে আছে সাদাফের কথায় শুধু হু হ্যা বলছে।
আদ্রকে সাদাফ আগে কখনো এমন চুপচাপ দেখি।
আদ্র কি হয়েছে বল তো কিছু বলছিস না কেনো? আরুর সাথে ঝগড়া হয়েছে??
আরে না আরুর সাথে ঝগড়া হবে কেনো,আমার কিছু হয়নি এইতো কথা বলছি।
আমার তো মনে হচ্ছে তুই কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত। আমার সাথে শেয়ার করতে পারিস অবশ্য যদি তোর কোনো প্রবলেম না থাকে।
না প্রবলেম নেই আসলে চিন্তাটা আরুকে নিয়ে।
আমাকে বল কি হয়েছে?
আদ্র সাদাফকে আরু সপ্নের বিষয়ে সবটা বললো। সাদাফ সব শুনে একটু ভেবে বললো.........আরু একই রকম সপ্ন দুবার দেখলো হয়তো তোকে নিয়ে বেশি ভাবে তারজন্য। তবে তারপরেও ভাবনার বিষয় আছে আমি যতদূর জানি সপ্ন কখনো সত্যি হয় না। কিন্তু সপ্নের মাঝে দিয়ে আমাদেরকে কিছু একটা ইঙ্গিত করা হয় যা আমাদের বাস্তব জীবনে ঘটে। তোরা সাবধানে থাকিস আর আরুকে একা রাখবি না কখনো। আর একটা কথা যেহেতু আরুর সপ্নে একটা বাচ্চা আসে এটাও একটা ভাবনার বিষয়। তোদের এখনি কোনো বেবি প্ল্যানিং না করাই ভালো। আল্লাহর উপর ভরসা রাখ ইনশাআল্লাহ সব ঠিক থাকবে।
আদ্র সাদাফের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো.......আরুকে আমি আগলে রাখবো ওর কিছু হতে দেবো না আর বেবি নিয়েও ভাবছি না এখন। শোন এখন আমি উঠি রাত হয়ে গেছে দেরি করে ফিরলে বউ এর বকা শুনতে হবে।
হুম যা এখন তো বউ আছে বন্ধু লাগে নাকি। বউয়ের আঁচলের নিচে লুকিয়ে থাক গিয়ে।
হা হাহা প্রিথাকে বিয়ে করে ঘরে তোল তখন তুইও আমার মতোই করবি দেখে নিস।
আদ্রর সাদাফের সাথে সবটা শেয়ার করে নিজেকে হালকা লাগছে। দুজনে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাড়িতে চলে গেলো।
.
.
অথই সোফায় বসে টিভি দেখছে পাশেই আমি বসে ফোনে ছোট ছোট বেবিদের ছবি দেখছি। উফফ কত্তো কিউট বেবিগুলো। ইচ্ছে করছে ওদেরকে কোলে নিয়ে অনেক গুলো আদর করে দেই।
কলিংবেল বেজে উঠতে অথইকে বললাম দরজা খুলে দিতে আমি তো এই সুইট সুইট বেবিদের দেখতে ব্যস্ত।
একটা ছোট্ট কিউট গার্ল এর উপর চোখ আটকে গেলো। চোখ দুটো টানা টানা চোখের পাঁপড়ি গুলো খুব ঘন, গাল টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে। পিংক ঠোঁট নিচের ঠোঁটটা মুখে পুরে রেখেছে। কোকড়া চুলগুলো দুপাশে ঝুটি করা উফ পুরাই কিউটের ডিব্বা!! আমারো এমন একটা প্রিন্সেস আসবে ওকেও আমি এভাবে চুল বেধে দিবো ভেবেই আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছে।
কি ব্যাপার আমার বউটা এতো খুশি কেনো হুম??
আদ্র এসে আমার পাশে ধপ করে গা ঘেষে বসে পড়লো। আমি ফোনটা পাশে রেখে বললাম......দিলে তো আমার ভালো মুডটা নষ্ট করে। এভাবে ভূতের মতো শব্দ করে পাশে বসলে কেনো হ্যা??
প্রথমত তোমার মুড খারাপ করার জন্য সরি। দ্বিতীয়ত আমি ভূত নই তোমার একমাত্র স্বামী। আর আমার বউয়ের পাশে আমি বসেছি তাতে তোমার কি?
আমার কি তাইনা দেখাচ্ছি।
আরু আদ্রকে মারতে লাগলো আদ্র ওকে থামাতে না পেরে দুহাত চেপে ধরে গালে টুপ করে একটা কিস করলো।
আরুর চোখদুটো বড় বড় হয়ে গেলো। অথই মিটমিট করে হাসছে। আরু অথই এর দিকে তাকাতেই অথই বলে উঠলো........
ভাবি আমি কিন্তু কিছু দেখিনি।
তাহলে হাসছিস কেনো??
আদ্র বলে উঠলো........ওর ইচ্ছে করছে তাই হাসছে। তুমিও হাসো কেউ তোমাকে মানা করবে না।
আরু আর কিছু না বলে উঠে ওর মায়ের রুমের দিকে চলে গেলো। আদ্র অথই দুজনেই হাসছে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে।
রাতে আরুর কোলের উপর মাথা রেখে আদ্র শুয়ে আছে। আরু আদ্রর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো.......আদ্র একটা কথা বলবো? প্লিজ তুমি না করবে না।
আগে বলো কি কথা?
আদ্র আমার একটা বেবি চাই।
আদ্র চমকে উঠে বসলো বেবির কথা শুনে ওর বুকটা কেঁপে উঠলো। আরুর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো........আরু মাত্র তো কিছুদিন হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে তাছাড়া তুমি পড়াশুনা করছো এখনি বেবি নিতে হবে না। তুমি পারবে না সব সামলাতে আরো বড় হও তখন নাহয় ভেবে দেখবো।
আদ্র আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি আমি মটেও ছোট নই। আমি বেবি চাই তুমিও তো চাও তাহলে কেনো না করছো??
হ্যা চাই কিন্তু এখনি চাই এটা তো বলিনি। আচ্ছা এসব কে ঢুকিয়েছে তোমার মাথায় নিশ্চই মা বলেছে তাইনা।
মা কেনো বলবে,আমি নিজে থেকেই বলছি।
ভুলে যাও এসব পরে ভাবা যাবে অনেক রাত হয়েছে চলো ঘুমাবে।
আমিও আর কোনো কথা বাড়ালাম না কারন এখন উনাকে বুঝিয়ে কিছু হবে না। আমি মনে মনে আমার ডিসিশন নিয়ে নিয়েছি। নিজে জেদ দেখাতে পারে আমি কেনো পারবো না হুহ।
No comments