Header Ads

Header ADS

তোকে_অনেক_ভালোবাসি------পর্ব_৫


কলেজ ছুটির পর রাস্তার একপাশ দিয়ে আমি আর মনিকা গল্প করতে করতে আসছিলাম। আজকের আবহাওয়াটা একটু অন্য রকম আকাশটা মেঘলা যেকোনো সময় ঝপঝপ করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করবে। চারিদিকে মৃদু বাতাস বইছে ভালোই লাগছে। তাই কলেজ থেকে বেড়িয়ে আজ আর রিক্সা নেই নি দুজনে মেঘলা আবহাওয়া উপভোগ করতে করতে গল্প করছি আর সামনে এগোচ্ছি।
একটা বড় গাছের নিচে কয়েকজন ছেলে বসে আড্ডা দিচ্ছে দেখেই মনে হচ্ছে ছেলেগুলো বখাটে টাইপের। আমরা পাশ কেটে যেতে নিলে ২ টা ছেলে এসে সামনে দাড়ালা দাত কেলিয়ে হেসে বললো
এই যে বেবিরা আমাদেরকে পাশ কাটিয়ে কোথায় যাচ্ছো, এসো একটু গল্প করে যাও আমাদের সাথে।
ছেলে ২ টা আবারো হেসে উঠলো,আমার খুব রাগ হচ্ছে এদের কথা শুনে,তাকাচ্ছে ও কেমন ভাবে যেন। আমি কিছু বলতে নিলে মনিকা আমার হাত ধরে নিলো আমি তাকাতেই চোখের ইশারায় বললো কিছু না বলতে,মনিকা নিজেই বললো
ভাইয়ারা আমাদেরকে যেতে দিন আমরা কলেজ থেকে বাসায় যাচ্ছি দেরি হচ্ছে আমাদের।
ওদের মধ্যে একটা ছেলে জোরে হেসে বললো
হেই সুইট গার্ল,টেনশন নিয়ো না আমরা নিজ দায়িত্বে তোমাদের বাসায় পৌছে দিবো। এবার চলো আমাদের সময় দাও।
কথাটা বলে ছেলেটা পাশের জনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো। আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না রেগে বলে উঠলাম
এই যে ভাইয়ারা সমস্যা কি আপনাদের হুম? কেনো পথ আটকে দাড়িয়েছেন? আপনাদের কি বাড়ির লোকেরা এই শিক্ষা দিয়েছে রাস্তায় মেয়েদের পথ আটকে বাজে নজরে তাকাতে??
ওদের মাঝে থেকে একজন বলে উঠলো
ওই আসিফ এই মাইয়ার মুখে তো কথা ফুটেছে। কথার কি তেজ দেখছোস!! পাশের ছেলেটি বললো
হ তাই তো দেখছি,আমাদের কি সমস্যা তাইনা। ওই গাড়িটা নিয়ে আয় তো ওদের সাথে নিয়ে দেখিয়ে দেই আমাদের সমস্যা কোথায়।
ছেলে ২টা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছিলো,এতক্ষণ তেমন কিছু মনে হয়নি তবে এখন খুব ভয় লাগছে। এ ছেলেগুলো শুধু বখাটে নয় খুবই খারাপ এরা,ওদের চাহনি দেখেই বুঝতে পারছি। মনিকা ভয়ে আমার হাত চেপে ফিসফিসিয়ে বললো
সব দোষ তোর বারবার বললাম রিক্সা নিতে তুই না করলি। এখন কি করে বাঁচবো আমরা? হাত পা যে ঠান্ডা হয়ে আসছে।
মনিরে আমি কি জানতাম এমন একটা ঝামেলায় পড়বো। ভয়তো আমারো হচ্ছে তবে ভয় পেলে চলবে না। আমি সাহস করে বলে উঠলাম
দদেখুন আমাদের যেতে দিন না হলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।
ছেলেটা বাকা হেসে বললো.....খুব খারাপ নয় বেবি বলো খুব ভালো হবে।
বাকী যে ২ জন ছিলো ওরা এসে বললো....ভাই গাড়ি রেডি আছে। কথাটা শুনে ভয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে আমার,যতই সাহস দেখাই না কেনো এদের সাথে তো পেরে উঠবো না। এদিকে হালকা বৃষ্টি পড়ছে রাস্তায় ও তেমন কেউ নেই। আমি মনিকার হাত চেপে ধরে দু এক পা করে পেছনে যেতে লাগলাম।ছেলেগুলো খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে এগিযে আসছে।
হঠাৎই একটা গাড়ি এসে আমাদের পাশে দাড়ালো সেদিকে তাকাতেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আদ্র ভাইয়া এসেছে। ভাইয়া আমাদের সামনে এসে দাড়িয়ে ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বললো
ওদের পথ আটকেছিস কেনো তোরা? ওপেন রোডে ইফট্রিজিং করছিস এর পরিনাম কি হবে জানিস?? পুলিশ ডাকবো?
ছেলেগুলো কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। আদ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে একজন নরম স্বরে বললো
সরি ভাই আর কখনো এরকম কাজ করবো না।আমাদের মাফ করে দেন।
আদ্র ভাইয়া এবার ঘুরে আমাদের দিকে তাকালো,ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। ভাইয়ার চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললো
মনিকা তোমরা গাড়িতে গিয়ে বসো।
আদ্র ভাইয়া আমাকে না বলে মনিকা কে বললো!! মনে মনে বললাম আরু তোর গালে যে আজ আরো একটা চড় পড়বে। আমি আর মনিকা চুপচাপ এসে গাড়িতে বসে পড়লাম। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম আদ্র ভাইয়া খুব রেগে ওদের সাথে কথা বলছে। বৃষ্টিতে কিছুটা ভিজে গিয়েছি ওড়না দিয়ে হাত মুখ মুছতে লাগলাম। মনিকা বলে উঠলো
এই আরু আজ আদ্র ভাইয়া না এলে কি হতো বলতো! ভাগ্গিস ভাইয়া ঠিক সময়ে এসেছে।
কি আর হতো ওই মানুষ রুপি পশুদের হাতে বলি হতে হতো আমাদের।
আরু তখন তো ভয়ে তুইও কাঁপছিলি আর এখন এত স্বাভাবিক কি করে!! তবে যাই বলিস আদ্র ভাইয়ার চোখে যে রাগ দেখলাম আজ,তোর কি হবে সেটাই ভাবছি আমি।
আমার মনে আবার ভয় ঢুকে গেলো,এমনিতেই আদ্র ভাইয়া আমার উপর রেগে আছে আজ আরো রেগে গেলো কি যে হবে আল্লাহ জানে।
আদ্র ভাইয়া এসে গাড়িতে সামনে ড্রাইভার এর পাশে বসে পড়লো। আমাদের দিকে একবার ও তাকালো না। আমাদের বাড়ির আগেই মনিকাদের বাড়ি পড়ে ওকে ওর বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে আমরা বাড়ি চলে এলাম। আদ্র ভাইয়া এর মাঝে একটি কথাও বলে নি আমার সাথে এমনকি তাকায় ও নি।
আচ্ছা এর হলোটা কি আমাকে তো বকলো না!! নাকি কাল আমি ওনাকে নিয়ে কাকিমাকে বলেছি আজ উনি আমাকে নিয়ে মাকে বলবে?? হায় আল্লাহ মা তো আস্ত রাখবে না আমাকে। কলেজ ছুটির পর একটুও দেরি না করে যেনো বাড়িতে ফিরি এই বাণীটা প্রতিদিন আমার মা আমার কানে ঢুকিয়ে দেয়। আজ তো দেরি হয়েছে তার উপর ভাইয়া যদি কিছু বলে আমার ১২ টা বাজবে।
.
.
বাড়িতে এসে আদ্র ভাইয়া সোজা নিজের রুমে চলে গেলো আমিও নিজের রুমে এসে ফ্রেস হয়ে নিলাম।
রাতে সাবাই একসাথে খেতে বসেছি ভয়ে ছিলাম কেউ কিছু বলবে ভেবে কিন্তু না কেউ কিছুই বললো না। তারমানে ভাইয়া কাউকে কিছু বলেনি,আর ভাইয়ার সাথে বাড়িতে এসেছি তাই হয়তো দেরি হয়েছে বলে মা ও কিছু বলে নি। সাবাই খাচ্ছি কিন্তু আদ্র ভাইয়াকে দেখছি না। যাক বাবা ভালো হয়েছে নিশ্চিন্তে খেতে তো পারবো। খাওয়া শেষ করে উঠে চলে আসতে নিলে মা ডাকলো
আরিশা শোন
হ্যা মা বলো
মা খাবারের একটা প্লেট আমার হাতে দিয়ে বললো....এই খাবারটা আদ্রর ঘরে দিয়ে আয় ওর নাকি মাথা ব্যাথা করছে তাই খাবারটা ঘরেই পাঠিয়ে দিতে বলেছে।
আমার তো আবারো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো,ওই বদরাগী লোকটার সামনে আমাকেই কেনো পাঠাতে চায় এরা!!
মা আমি কেনো যাবো তুমি যাও না দিয়ে এসো।
একটা চড় দিবো,গেলে কি হবে শুনি যা গিয়ে দিয়ে আর আর শোন বলবি মাথা ব্যাথার ওষুধ খেতে।
কি আর করা খাবারটা নিয়ে দরজায় এসে দাড়িয়ে দোয়া পড়ে বুকে ফু দিয়ে নক করলাম ভেতর থেকে বলে উঠলো
দরজা খোলা আছে
আমি আস্তে আস্তে রুমে ঢুকে দেখলাম আদ্র ভাইয়া কপালে হাত দিয়ে চোখ বুজে শুয়ে আছে। আমি খাবারটা বেড সাইড টেবিলে রেখে বললাম
ভাইয়া তোমার খাবার রেখে গেলাম খেয়ে নিয়ো। কথাটা বলে চলে আসতে নিলে আদ্র ভাইয়া ডাকলে
আরু দাড়া
আমি দাড়িয়ে পড়লাম কিন্তু আমার ভেতর থেকে বলছে আরু দাড়াস না বেড় হ জলদি এ রুম থেকে। আমার গলাটা শুকিয়ে আসছে ভয়ে ভয়ে ফিরে তাকিয়ে বললাম
ভাইয়া কিছু বলবে??
ভাইয়া উঠে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো....তোকে সেদিন কলেজ থেকে কি বলেছিলাম??
কি বলেছিলে??
মনে নেই কি বলেছিলাম??
উহু।
ঠিকআছে আমিই মনে করিয়ে দেই,সেদিন তোকে বলেছিলাম কখনো লিমিট ক্রস করবি না তাহলে আজ কলেজ ছুটির পর বাড়িতে না এসে রাস্তায় হাটছিলি কেনো?
আমি আমতা আমতা করে বললাম....
আসলে ভাইয়া আজ আবহাওয়াটা ভালো লাগছিলো তাই আর কি।
ওও আচ্ছা আবহাওয়া উপভোগ করছিলেন আপনি,আমি আর একটু পরে গেলে তো ওই হারামি গুলো তোদেরকে নিয়ে স্পেশাল টাইম উপভোগ করতো। তখন খুব ভালো লাগতো তাইনা??
উনি রেগে কথাগুলো বলছিলো আমি মাথা নিচু করে বললাম....আর এমন ভুল হবে না কাল থেকে বাড়ির গাড়িটা নিয়ে কলেজে যাবো আসবো।
আদ্র ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে নরম স্বরে বললো....ঠিকআছে মনে যেনো থাকে যা এখন।
আমি যেনো একটু সাহস পেলাম মাথা তুলে বললাম....কালকের ওই ব্যাপারটা নিয়ে আমার উপর এখনো রেগে আছো?
আমি কারো উপর রেগে নেই।
ওহ ঠিকআছে তুমি খেয়ে নাও আর মা বললো তোমার নাকি মাথা ব্যাথা করছে ওষুধ খেয়ে নিতে বলেছে।
আমার মাথাটা সত্যিই খুব ব্যাথা করছে মাথাটা টিপে দিবি।
আদ্র ভাইয়ার হঠাৎ এমন কথাতে অবাক হয়ে তাকালাম উনার দিকে
কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো,অসম্ভব কিছু বলেছি নাকি??
না ঠিক তা নয়,বলছিলাম কি ভাইয়া খাবার খেয়ে ওষুধ খেলে ব্যাথাটা কমে যেতো।
আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না। ঠিকআছে তুই যা কিছু করতে হবে না। আদ্র ভাইয়া কথাটা বলে আবারো শুয়ে চোখ বন্ধ করলো।
আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। চুপচাপ একটু দাড়িয়ে থেকে এগিয়ে গিয়ে উনার মাথার পাশে বসে হাতটা উনার কপালে রাখলাম। হাতের ছোয়া পেয়ে আদ্র ভাইয়া চোখ মেলে তাকালো কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে আবারো চোখ বন্ধ করে নিলো। হয়তো সত্যি খুব বেশি খারাপ লাগছে।
.

No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.