তোকে_অনেক_ভালোবাসি-------পর্ব_৬ .
কেঁটে গেলো কয়েকটা দিন আদ্র ভাইয়া আমার সাথে এখন অনেকটা স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে আগের মত বকে না তবে যদি একটু এদিক ওদিক করি কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমে ডেকে আমাকে কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রাখে। আগে যদিও উনি কিছু বললে প্রতিবাদ করতাম কিন্তু এখন কেনো জানি পারি না। কেনে যে বলি না নিজেও ভেবে পাই না আমি।
আজ সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছে কলেজে যাই নি অথই ও আজ স্কুলে যায় নি। বড় চাচ্চু আব্বু কাকিমা আর মা আজ খুব ভোরে আমাদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছে তখন অবশ্য বৃষ্টি ছিলো না। এখন বাড়িতে আমি অথই আছি। আদ্র ভাইয়াও বেড়িয়েছে।মুষল ধারায় বৃষ্টি পড়ছে আমি রুমেই ছিলাম অথই দৌড়ে এসে আমার পাশে বসলো আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
কিরে এভাবে দৌরে এলি কেনো??
আপু ছাদে যাবে।
ছাদে যাবো এখন! দেখছিস না বৃষ্টি হচ্ছে!
বৃষ্টি হচ্ছে বলেই তো যাবো বৃষ্টিতে ভিজবো। আপু প্লিজ চলো না।
কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজলে যদি জ্বর হয়। তখন তো বাড়ির সবাই আমাকেই বকবে তুই তো ছোট তোকে কেউ কিছুই বলবে না।
এই আপু আমি মাঝে মাঝে ভাবি তুমি আমার বড় নাকি আমি তোমার! চলো তো কেউ কিছু বলবে না মাত্র ১০ মিনিট ভিজবো এতে জ্বর হবে না।
আমারো ইচ্ছে করছিলো কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না অথই যেনো আমার সাহসটা বাড়িয়ে দিলো। তবে আমার অনেক দিনের ইচ্ছে শাড়ি পড়ে বৃষ্টিতে ভিজবো। আচ্ছা আজ শাড়ি পড়লে কেমন হয়? কিন্তু আমার তো শাড়ি নেই,মায়ের শাড়িগুলো সব আলমারিতে রাখা চাবিও নেই আমার কাছে। কাকিমার আলমারি তো লক করা থাকে না ওখান থেকেই পড়বো হুম।যেই ভাবা সেই কাজ অথইকে বললাম কাকিমার আলমারি থেকে একটা শাড়ি এনে দিতে ও ভ্রু কুঁচকে বললো
আপু তুমি এখন শাড়ি দিয়ে কি করবে??
শাড়ি দিয়ে বউ সাজবো এত কথা না বলে শাড়ি নিয়ে আয়।
অথই গিয়ে হালকা সবুজ রঙের একটা সিল্কের শাড়ি নিয়ে এলো সাথে ম্যাচিং পেটিকোট ব্লাউস ও এনেছে।আমি শাড়িটা হাতে নিয়ে মুখটা কালো করে অথইকে বললাম
বনুরে আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না এখন কি হবে??
তুমি এখন শাড়ি পড়ে কি করবে এটাই তো বুঝতে পারছি না,এদিকে বৃষ্টি কমে যাবে তোমার এই শাড়ি পড়া দেখতে দেখতে।
এই বৃষ্টি কমার নয়। শোন আমার খুব ইচ্ছে শাড়ি পড়ে বৃষ্টিতে ভিজবো তাই শাড়িটা পড়তে চাইছি। এখন কিছু একটা আইডিয়া দে বনু।
আপু তুমি শুধু বড়ই হয়েছো মাথায় কিছুই নেই। তুমি তো ইউটিউব দেখে পড়ে নিতে পারো।
গুড আইডিয়া! এটা তো আমার মাথাতেই আসে নি। আমি ইউটিউবে দেখে অথই এর সাহায্যে শাড়িটা পড়লাম তেমন ভালো হয়নি পড়া আবার খারাপ ও হয় নি। অথই আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে হেসে বললো
আপু তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে শাড়িটা দারুন মানিয়েছে। পুরো বউ বউ লাগছে,আচ্ছা আপু তুমি আদ্র ভাইয়ার বউ হবে? আমি তোমাকে ভাবি বলে ডাকবো।
আমি চোখ বড় বড় করে তাকাতেই অথই মাথা ঝাকিয়ে বললো
আরে আপু আমি তো মজা করছিলাম। চলো চলো এখন ছাদে যাই।
.
.
আমি অথই ছাদে এসে মনের সুখে ভিজতে লাগলাম দুজনে এদিক ওদিকে ছুটোছুটি করছি আর বৃষ্টিজল গায়ে মাখছি। আমার শাড়িটা ভিজে একদম শরীরের সাথে মিশে গিয়েছে দুহাত দুদিকে মেলে আকাশের দিকে মুখ তুলে চোখ বন্ধ করে আছি। হঠাৎই অথই রেলিং ধরে বলে উঠলো
আপু ভাইয়া চলে এসেছে এখন কি হবে??
ওর কথা শুনে আমিও এগিয়ে গিয়ে দেখলাম ভাইয়া গাড়ি পার্ক করছে। শুরু হয়ে গেলো আবার ভয়ে কাঁপাকাঁপি,ভাইয়া যদি দেখে বৃষ্টিতে ভিজছি তাহলে আমাদের দুজনের আজ খবর করে ছাড়বে। আমি অথইকে বললাম
অথই তুই জলদি নিচে যা তাড়াতাড়ি কাপর পাল্টে দরজা খুলে দিবি। ভাইয়া যখন রুমে ঢুকবে তখন আমাকে এসে বলবি। দেরি করিস না যা।
অথই দেরি না করে নিচে চলে গেলো। বৃষ্টিটা এখন আরো বেড়েছে। আমি ছাদে থাকা দোলনায় বসে পড়লাম কিন্তু বসে থাকতে মন চাইছে না তাই আবারো উঠে দুহাত মেলে ঘুরতে লাগলাম।
আদ্র ভাইয়া কলিংবেল চেপে চলেছে অথই তাড়াতাড়ি কাপর পাল্টে দরজা খুলে দিলো।
কিরে এতক্ষণ লাগে দরজা খুলতে,কোথায় ছিলি??
ভাইয়া আমি তো ওয়াশরুমে ছিলাম তাই দেরি হয়েছে।
ওহ তুই না হয় ওয়াশরুমে ছিলি। আর একজন তো আছে সে কোথায়??
অথই একটু ভয়ে ভয়ে বললো....আপু! আপু তো নিজের ররুমেই আছে।
আদ্র আর কিছু না বলে উপরে চলে এলো, উপরে উঠতে আমার রুমটা আগে পড়ে। দরজাটা খোলাই ছিলো আদ্র ভাইয়া কি মনে করে যেনো আমার রুমে ঢুকলো আমাকে না পেয়ে অথইকে ডেকে বললো
আরু তো রুমে নেই তুই যে বললি ও রুমে আছে।
অথই কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না একটু চুপ থেকে বললো
আছে হয়তো কোথাও আমি জানি না। অথই কথাটা বলে চলে গেলো। আদ্র সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো অথই এর যাওয়ার দিকে। নিজেই মনে মনে বললো
আচ্ছা আরু বৃষ্টিতে ভিজছে নাতো??
.
.
আদ্র ভাইয়া ছাদে চলে এলো আমি তখনো চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছি। আদ্র ভাইয়া সিঁড়িঘরের থেকেই দেখতে পেলো আমি উল্টো দিকে ঘুরে দুহাত মেলে বৃষ্টি বিলাস করছি। আমাকে ভিজতে দেখে উনি খুব রেগে গেলো। এদিকে আমি চোখ মেলে তাকিয়ে দুহাতে বৃষ্টির পানি জমিয়ে হেসে উঠে উপরে দিকে ছুড়ে দিলাম, ঘুরে দাড়াতেই আদ্র ভাইয়াকে দেখতে পেয়ে আমার আনন্দময় হাসিটা উড়ে গেলো,উনি যে খুব রেগে গিয়েছে। আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম এখন কি করবে উনি এটাই ভাবছি।
কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর উনার কোনো সাড়া না পেয়ে মুখ তুলে তাকিয়ে আমি থ হয়ে গেছি। আদ্র ভাইয়ার চোখে এখন রাগ নয় অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছি। উনি একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার দিকে। উনার এই তাকিয়ে থাকার মানেটা আমি বুঝতে পারলাম না। কিন্তু খুব লজ্জা লাগছিলো আমার শাড়িটা ভিজে শরীরে লেগে আছে তাড়াতাড়ি শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজেকে ঢাকতে লাগলাম। তবে বিষেশ কোনো লাভ হলো না,উনি একই ভাবে চেয়ে আছে। নাহ এভাবে আর দাড়িয়ে থাকা যাবে না। আমি আস্তে আস্তে পা বাড়ালাম নিচে যাবো বলে। সিঁড়ির কাছে এসে ভাইয়াকে পাশ কাঁটিয়ে যেতে নিলে উনি আমার হাত ধরে ফেললো আমি চমকে উঠে তাকালাম উনার দিকে।
ভাইয়া আমি আর কখনো ভিজবো না প্রমিজ করছি। আম সরি ভাইয়া।
আমি ভেবেছি উনি হয়তো রেগে আমার হাত ধরেছে কিন্তু উনি যা করলো তাতে আমার চোখ কপালে।
আদ্র ভাইয়া আমার দিকে ঘুরে এক ঝটকায় আমার হাত ধরে উনার কাছে নিয়ে নিলো। উনার প্রতিটি নিশ্বাস আমার চোখে মুখে পড়ছে। উনি হঠাৎ এমন করায় আমি এখনো অবাক হয়ে চেয়ে আছি উনার চোখের দিকে। তবে আজ যেনো এ চোখ অন্য কথা বলছে। আদ্র ভাইয়া একহাতে আমার কোমড় ধরে আছে অন্য হাতে আমার কপালে থাকা ছোট চুল গুলো আলতো করে কানের পেছনে গুজে দিলো। আমি কিছুটা কেঁপে উঠে চোখ নামিয়ে নিজেকে ছাড়াতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম। কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম
ভ ভাইয়া কি ককরছেন ছাড়ুন আমাকে। কিছু বলছে না দেখে জোরে করেই বললাম....ভাইয়া আমাকে ছাড়ুন।
আদ্র ভাইয়া চমকে উঠে আমাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে গেলো। কি হলো হঠাৎ উনার?? আমি নিচে চলে আসলাম।
আদ্র এতক্ষণ ঘোড়ের মাঝে ছিলো কি করছিলো নিজেও জানে না। আরুকে আজ এক নতুন রুপে দেখেছে আদ্র। এমনিতেই ওর প্রেমে পড়েছে অনেক আগেই তার ওপর আজ শাড়ি পড়ে বৃষ্টিতে ভিজছিলো আরু,আদ্র ওকে ওভাবে দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছে।
আদ্র সিঁড়ির রেলিং এ নিজের হাত জোরে আঘাত করে মাথা চেপে বলতে লাগলো
কি করছিলাম এটা আমি,আরু খারাপ ভাবলো না তো আমায়? কিন্তু আমি কি করবো ওকে ওভাবে দেখে তো নিজেই হারিয়ে গিয়েছিলাম। মেয়েটা এমন কেনো আমাকে যে পাগল করে ছেড়েছে। আমি যে ওর প্রতি দিনে দিনে আরো আকৃষ্ট হয়ে পড়ছি।
No comments