ভালোবাসায়_বেধে_রেখো💕 শেষ পর্ব
তাহমিরা ভার্সিটি থেকে ফিরে। টিউশনি করিয়ে মাকে খাইয়ে। নিজে খেয়ে বিকেলে ছাদে আসলো।মনটা যেনো মানছে ত্রিশাদকে ছাড়া থাকতে।আচ্ছা এখন হঠাৎ যদি ত্রিশাদ এসে বলে তাহমিরা চলো আমরা বিয়ে করবো আর আমাকে ছাড়া তোমার থাকতে হবে না।তখন তাহমিরা কি করবে?ওর সাথে কি চলে যাবে?না না এই অভিশপ্ত জীবনের সাথে কিছুতেই ত্রিশাদকে জড়ানো যাবে না।তাহমিরা ওই পাগলটার চিঠি গুলো খুলে পড়ছে যে কি না শুক্রবারে ওকে একটা করে চিঠি দিতো।এখনো জানে না কে ওকে চিঠি দিতো।কিন্তু এখন এখানে আসার পর আর চিঠি গুলো পায় না তাহমিরা।তাই মাঝে মাঝে এই পুরনো চিঠিগুলোই পড়ে ও।
এদিকে অয়ন পাশের বিল্ডিং থেকে দেখছে তাহমিরা মন খারাপ করে বসে আছে।তাই সে ওই বিল্ডিং থেকে চুপিচুপি এই বিল্ডিং এর ছাদে এসেছে।তারপর পিছন থেকে তাহমিরার দিকে এগুতে এগুতে দেখলো ও যেনো কিছু একটা পড়ছে।কি পড়ছে এটা দেখার জন্য কৌতুহল বসত উকি দিলো লেখার দিকে।যেটা দেখলো সেটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।তাহমিরা ওর লেখা চিঠিগুলো পড়ছে।এটা কিভাবে সম্ভব? এই চিঠিগুলোতো ও ওর জান্নাতকে লিখতো।অয়ন কৌতুহল মেটাতে তাহমিরার সামনে গিয়ে জিগ্যেস করলো
"কি করছেন?"
তাহমিরা অয়নকে দেখে সৌজন্য মূলক হেসে বলল
"জানি না কার তবে এখানে আসার আগে কেউ একজন প্রতি শুক্রবার আমাকে একটা করে চিঠি দিতো।ওই চিঠিগুলো আমি জমিয়ে রেখেছি। মাঝে মাঝে পড়ি।"
অয়ন কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বলল
"আপনার পুরো নাম কি?"
"তাজবিহা জান্নাত তাহমিরা।"
অয়ন যখন জান্নাত নামটা শুনেছে তখনই বোধহয় ওর হৃৎপিন্ডটা বেরিয়ে আসবে খুশিতে।অনেক আগে সে তার ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়েছে।কিন্তু এভাবে যে তার কাছে ধরা দেবে সে ভাবতেও পারে নি।অয়ন চোখে মুখে খুশী নিয়ে জিগ্যেস করলো
"এখন কি আর চিঠি পান?"
"না জায়গা বদল করার ফলে এখন আর চিঠি পাই না।"
অয়ন মনে মনে বলল আজকে থেকে পাবে।তারপর কিছুক্ষণ তাহমিরার সাথে কথা বলে একটা কাজের অজুহাত দিয়ে চলে গেলো।অয়ন রুমে গিয়ে কাগজ কলম নিয়ে বসলো।আজকে ও চিঠি লিখবে কিন্তু খুশীর ঠেলায় মাথায় কিছুই আসছে না।কি মসিবত!!! তারপর মাথা স্থির রেখে কিছু লিখেছে।
সন্ধ্যা ৭.০০ টা
তাহমিরা বসে বসে ফোনে গেমস খেলছে।আর ওর বোন আর মা মিলে সিরিয়াল দেখছে।তাহমিরা সিরিয়াল দুচোখে দেখতে পারে না।হঠাৎ করে দরজায় বেল বাজলো।কে যেনো এসেছে। তাহমিরা চিল্লিয়ে বলল
"আম্মু, আপু কেউ একটু দরজাটা খোলো।"
ওর আপু চিল্লিয়ে বলল
"তুই যা দেখছিস না আমরা ইম্পর্টেন্ট সিরিয়াল দেখছি।"
তাহমিরা বিরক্তি নিয়ে উঠে গিয়ে দরজা খুললো কিন্তু কাউকে পেলো না হঠাৎ পায়ের কাছে কিছু একটা বেধে আছে নিচে তাকাতেই বড় সড় একটা শক খায়।সেই হলুদ খাম যে খামে করে ওর জন্য চিঠি আসতো।কিন্তু আবার এই চিঠি!! তাহমিরা চিঠিটা হাতে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।ওর বোন জিগ্যেস করলো
"কি রে কে আসলো?"
"কাউকে তো দেখি নি।"
"ও কেউ হয়তো মজা করে দিয়েছে।"
তারপর তাহমিরা চিঠিটা নিয়ে ঘরে চলে গেলো।চিঠি খুলে পড়া শুরু করলো।
"প্রেয়সী "
কি অবাক হচ্ছো না?ভাবছো এতোদিন পর চিঠি আসলো কিভাবে?সবই মনের টান বুঝছো।এখন থেকে আবার চিঠি পাবে।জানো এখন তুমি আমার কাছাকাছি আছো।চাইলেই তোমাকে দেখতে পারি।এখন তুমি ভাবতে বসবে কে হতে পারে?কিন্তু ভেবে কোনো লাভ নাই গো।থাক আজকে আর কিছু লিখবো না এমনিতেই তুমি অনেক শকে আছো।
"ইতি তোমার পাগল প্রেমিক"
তাহমিরা চিঠি পড়ে 'থ' হয়ে বসে আছে।এই লোক আবার ওর বাসার খবর পেলো কিভাবে?
এদিকে ত্রিশাদ রাত ৯.০০ টায় বাসায় ফিরেছে।ফিরতেই ইরিন বলে উঠলো
"ত্রিশাদ ফ্রেশ হয়ে আসো এক সাথে খাবো।"
"আমি খাবো না। খেয়ে এসেছি। "
"ত্রিশাদ পাগলামি করো না আমি জানি তুমি খাও নি।"
"আমার চেয়ে তুমি বেশী জানো?"
"হ্যাঁ জানি।চলো এখন।"
এটা বলেই ত্রিশাদের হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো। ত্রিশাদ রেগে থাপ্পড় দিয়ে বলল
"বেয়াদব মেয়ে তোমাকে আর যেনো আমার সামনে না দেখি।"
ত্রিশাদ আর কিছু না বলে হনহন করে রুমে চলে গেলো।
এভাবেই প্রায় পনেরোদিন চলে যায়।ইরিন ত্রিশাদকে নানান ভাবে পটানোর চেষ্টা করছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না।আর এইদিকে অয়ন বারবার তাহমিরার পিছু ঘুরঘুর করছে।যা তাহমিরার একদমই পছন্দ না।
আজ সন্ধ্যায়...
"মা আমি বিয়ে করতে পারবো না।"
"কেনো?"
"বললাম তো পারবো না।"
"শুনে রাখ তাহু তুই যদি বিয়েটা না করিস তাহলে আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।"
এটা বলেই তাহমিরার মা ওর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।তাহমিরা বসে বসে কাঁদছে। আর মনে মনে বলছে ত্রিশাদ দেখো না আমি অন্য কারো হয়ে যাচ্ছি। আমার তোমাকে ছাড়া ভালো লাগে না।তাহমিরা কান্না করছিলো একটুপর ওর বোন ওর পাশে বসে জিগ্যেস করলো
"ভালোবাসিস ছেলেটাকে?"
"কোন ছেলেটা?"
"তোর ফোনের ওয়ালে যার ছবি তাকে?"
"হ্যাঁ আপু অনেক।"
"ও তোকে ভালোবাসে?"
"জানি না।মনে হয় বাসে না।"
"চিন্তা করে দেখ তাহু ও তো তোর ঠিকানা জানে না যে তোকে এখান থেকে নিয়ে যাবে যদি তোকে ভালোবেসে থাকে আর যদি না ভালোবাসে তাহলে তোর ওর জন্য অপেক্ষা করাটা বোকামি।"
তাহমিরা কান্না করতে করতে বলল
"আমি রাজি আপু।"
তাহমিরার বোন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো।তাহমিরার বিয়ে অয়নের সাথে ঠিক হয়েছে। অয়ন ওর বাবা মাকে এখানে পাঠিয়েছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে।ছেলে ভালো আর ডাক্তার বলে তাহমিরার মা মানা করেনি।তিনদিন পরই ওদের বিয়ে।খুব তাড়াতাড়িই বিয়েটা শেষ করতে চাচ্ছে পাত্র পক্ষরা।তাহমিরার মা ও আপত্তি করে নি।
এদিকে ত্রিশাদ রেগে বসে আছে।ওকে নাকি ইরিনের সাথে ফরিদপুর যেতে হবে।মায়ের জোরাজুরিতে যেতে হচ্ছে। কালকে সকালেই রওনা দিবে।ত্রিশাদের মন চাচ্ছে ইরিনকে খুন করতে।
খুব সকালে ইরিন আর ত্রিশাদ রওনা দিয়েছে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় একটাও কথা বলে নি ইরিনের সাথে। কিন্তু ইরিন বকবক করেই চলছে।সন্ধ্যায় ওরা ফরিদপুর ইরিনের মামার বাসায় এসে পৌছেছে।ত্রিশাদ গিয়ে সোফায় বসলো।তারপর ফোন বের করে এফ বি লগইন করে নিউজ ফিড ঘাটাঘাটি করতে লাগলো।হঠাৎ সোফার সামনে টেবিলের উপর একটা হাতের লেখা দেখে ত্রিশাদের চোখ আটকে যায়।লেখাটা হাতে নিয়ে পকেট থেকে তাহমিরার চিঠির সাথে লেখাগুলো মিলায় হুবহু একরকম লেখা।ত্রিশাদের হৃৎপিন্ড ইতিমধ্যে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে। ত্রিশাদ জোরে জোরে ইরিনকে ডাকলো।ইরিন এসে বলল
"কি হয়েছে? "
"এই লেখা গুলো কার?"
"আমি জানি না দাড়াও ইশাকে ডেকে জিগ্যেস করি।"
ইরিন ইশাকে ডেকে জিগ্যেস করলো এটা কার লেখা।ইশা বলল এটা ওর ম্যাডামের লেখা।ত্রিশাদ কৌতুহলী হয়ে জিগ্যেস করলো
"তোমার ম্যাডামের নাম কি?"
"তাজবিহা জান্নাত তাহমিরা।"
"ত্রিশাদের স্টোক হয়ে যাওয়ার অবস্থা। তবে কি সে তার তাহমিরাকে পেয়ে গেলো।ত্রিশাদ ইশাকে জিগ্যেস করলো
" তোমার ম্যাডাম এর বাসা কোনট?"
"পাশের টা।"
"ও।আচ্ছা।
রাত ১.০০ টা...
ত্রিশাদ পাইপ বেয়ে অনেক কষ্টে তাহমিরার রুমে এসে পৌছালো।তাহমিরা ঘুমিয়ে আছে।ত্রিশাদের তাহমিরাকে চিনতে কষ্ট হলো না কারণ তাহমিরার ঘরের দেয়ালে ওর একটা ছবি ঝুলানো আছে আর নিচে দিয়ে বড় করে লেখা তাহমিরা।ত্রিশাদ তাহমিরার মাথার কাছে বসে গভীর দৃষ্টিতে ওকে দেখছে।তাহমিরার মনে হচ্ছে ওকে কেউ দেখছে।চোর নয় তো?তাহমিরা চোখ পিটপিট করে খুলে যা দেখলো তাতে বড়সড় একটা শক খেলো। একি ত্রিশাদ এখানে?নাকি এটা স্বপ্ন। এদিকে তাহমিরাকে চোখ খুলতে দেখে ত্রিশাদ একটা মিষ্টি হাসি দিলো।তাহমিরা ভাবছে স্বপ্নে ত্রিশাদ হাসছে কিভাবে!!ত্রিশাদ তুড়ি মেরে ওর ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে বলল
"কেমন আছো তাহমিরা?"
"তু.. তুমি এখানে কিভাবে?"
"তোমার খোঁজে।"
"ত্রিশাদ তুমি আসতে দেরি করে ফেলেছো।আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।"
"আমি জানি।এইজন্যই তোমাকে নিতে আসলাম।আমরা আজকেই এখান থেকে চলে যাবো।"
"না... আমি আমার মা আর বোনকে ছেড়ে যাবো না।"
"প্লিজ তাহু বোঝার চেষ্টা করো আমি তোমাকে ভালোবাসি।অনেকদিন পর তোমাকে ফিরে পেয়েছি। তোমাকে হারাতে পারবো না।"
"তুমি চলে যাও ত্রিশাদ। এটা সম্ভব না।"
ত্রিশাদ রেগে তাহমিরাকে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরে গলায় মুখ গুজে রাখলো।তাহমিরা ছাড়ার চেষ্টা করছে খুব কিন্তু পারছে না।পাচ মিনিট পর ত্রিশাদ নিজেই ওর গলার থেকে মুখ তুলে বলল
"এই বিয়ে আমি কিছুতেই হতে দেবো না।"
এটা বলে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো ত্রিশাদ।আর তাহমিরা কাঁদতে বসে গেলো।নাহ!!নিজের জীবনের সাথে কিছুতেই ত্রিশাদকে জড়াবে না।
পরেরদিন সন্ধ্যায় ওদের গায়ে হলুদ হচ্ছে আর ত্রিশাদ রাগে হাত মুট করে রেখেছে। গায়ে হলুদ মোটামুটি রাত ১.০০ টা পর্যন্ত হয়েছে।তারপর সবাই ঘুমাতে চলে গেছে।
বিয়ের দিন...
তাহমিরা জোরে জোরে দৌড়াচ্ছে। ও বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছে।কারণ ত্রিশাদ যেকোনো সময় কিছু একটা করতে পারে তাই তাহমিরা চলে এসেছে আর যাই হোক নিজের এই অভিশপ্ত জীবনের সাথে কিছুতেই ত্রিশাদকে জড়াবে না।হঠাৎ একটা হাত ওকে টেনে ধরলো তাহমিরা পিছনে তাকিয়ে দেখলো ত্রিশাদ।তাহমিরা হাত ছাড়াতে চেষ্টা করতে করতে বলল
"ছেড়ে দাও প্লিজ। "
"না ছাড়বো না চলো আমার সাথে।"
"কোথায়? "
"কাজি অফিসে। আজকেই বিয়ে করবো আমরা।"
"না আমি মরে গেলেও বিয়ে করবো না।"
"আমি মরে গেলে করবে?"
এটা বলে পকেট থেকে একটা ধারালো চাকু ধরে বলল
"বলো এখন করবে?"
"প্লিজ ওটা ফেলে দাও।"
"আগে বলো করবে কি না?"
"আচ্ছা। "
তারপর কাজি অফিসে ওদের বিয়ে হয়ে গেলো।আর এদিকে কনে পালিয়ে যাওয়ার ফলে অয়নের মা মান সম্মান হারনোর ভয়ে তারিনের সাথে অয়নকে বিয়ে দিয়ে দিছে।তারিন এখানে ওর ফুপুর বাসায় এসেছিলো।কিন্তু এখন নিজেই বিয়ের কনে হয়ে গেলো।ওর মা বাবা কেউ বিয়েতে আপত্তি করে নি অয়ন ভালো ছেলে বলে।ওদের বিয়েটা ও হয়ে গেলো।
তাহমিরা আর ত্রিশাদ ঘরে ফেরার পর তাহমিরার মা ওকে ইচ্ছামতো বকা দিচ্ছে। পরে ত্রিশাদ সব কিছু বলে ঠান্ডা করে সবাইকে।তাহমিরাকে বাসর ঘরে বসানো হয়েছে। একটু পর ত্রিশাদ ও এলো।ত্রিশাদ আসতেই তাহমিরা ওকে সালাম করতে নিলেই ত্রিশাদ ওকে জড়িয়ে ধরলো।আর ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
"আর যদি ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করো তাহলে শিকল দিয়ে বেধে রাখবো। "
তাহমিরা হেসে ওর গালে চুমু দিয়ে বলল
"জনাব শিকল দিয়ে নয়
ভালোবাসায়_বেধে_রেখো।"
সমাপ্ত
No comments