তোকে_অনেক_ভালোবাসি-------পর্ব_৩০
আরিশা ব্যালকনিতে গিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে আছে। আদ্র ফ্রেস হয়ে এসে আরিশার পাশে গিয়ে দাড়ালো। আরিশা সামনে দৃষ্টি স্থির রেখে বললো.......
মা ডেকে গিয়েছে ডিনারের জন্য,চলো।
আরিশা ঘুরে যেতে নিলে আদ্র ওর হাত ধরে থামিয়ে বললো.......কি হয়েছে আমার আরু সোনার? গম্ভীর হয়ে আছো কেনো? আজ খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাইনা সরি সোনা আর এমন হবে না।
আরিশা একটু হেসে বললো......তুমি অযথাই ভাবছো গম্ভীর হয়ে থাকবো কেনো। হ্যা তুমি ফোন ধরছিলে না বলে খুবই টেনশন হয়েছিলো কিন্তু তুমি তো ঠিক আছো তাই কোনো কষ্ট নেই আমার।
আমার মিষ্টি বউটা। চলো আমি তুমি আর আমাদের প্রিন্সটা এখন ডিনার করে আসি।
এই কি বললে তুমি?
খারাপ কি বলেছি!
শোনো আমি চাই আমাদের কিউট একটা প্রিন্সেস আসুক। তুমি জানো কতো কি ভেবে রেখেছি আমার প্রিন্সেসকে নিয়ে।
ও এই কথা। ঠিকআছে আমাদের প্রিন্সেস আসবে। ঠিক তোমার মতো হবে দেখতে।
নাহ ও তোমার মতো হবে। মেয়ে তার বাবার মতো হওয়া ভালো। আর ছেলে মায়ের মতো। আমি জানি আমাদের মেয়ে আসবে আর তোমার মতো হবে।
আরু তুমি না অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছো। আমার সেই অবুঝ আরুটা নেই অনেকটা চেঞ্জ হয়ে গিয়েছো। কেনো বড় হলে হুম আমার মাথামোটা আরুটাই তো ভালো ছিলো।
তুমি আমাকে মাথামোটা বললে কেনো??
আমি তো আগের কথা বলেছি সোনা। থাক আর আগের মতো হতে হবে না মানুষ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তুমিও হয়েছো। এই যেমন তোমাকে দেখতে এখন আরো বেশি ভালো লাগে। গাল কেমন ফুলে গিয়ে লাল আভা পড়েছে গালে, কিউট লাগে দেখতে। চেহারায় উজ্জ্বলতা আগের থেকে বেড়েছে আর.....
থাক হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না এখন খেতে না গেলে মা খুব বকা দেবে চলো।
হ্যা চলো আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।
খাওয়ার কথা মনে করাতে ক্ষিদে পেলো তাইনা??
তুমি সামনে থাকলে তো আমি সব ভুলে যাই খাওয়ার কথা কিভাবে মনে থাকবে বলো! আমার সব কিছু মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমার মিষ্টি বউটা আছে তো তাইনা।
.
.
আরিশাকে আদ্র এই অবস্থাতে ভার্সিটিতে যেতে মানা করেছে। ভার্সিটির কয়েকটা ফ্রেন্ড আর স্যারের থেকে নোট কালেক্ট করে যতোটা পাড়ছে বাড়িতে থেকেই পড়ছে।
আদ্র দুপুরে খারাব পর রুমে এসে সাদাফের সাথে ফোনে কথা বলছে।
আদ্র আরু কেমন আছে? কোনো প্রবলেম হচ্ছে নাতো??
আরু সুস্থ আছে। সাদাফ আমার খুব টেনশন হচ্ছে,দিন যতো এগিয়ে আসছে আমার ভয়টা ততোই বেড়ে চলেছে। আমার আরুর কিছু হবে নাতো?
আদ্র আল্লাহ ভরসা কিছুই হবেনা আরু আর তোদের বেবি দূজনেই সুস্থ থাকবে। আচ্ছা আরু সে সপ্ন আর দেখেছে নাকি??
হয়তো না আমাকে তো বলতো তাহলে। তাছাড়া যে দুবার এমন হয়েছে আরু নিজেকে শান্ত রাখতে পারেনি।
আরু তোকে অনেক ভালোবাসে তোকে নিয়ে ভাবে তাই ওসব বাজে সপ্ন দেখতো। তুই মাথা থেকে ওসব ঝেড়ে ফেল তো শুধু শুধুই ভাবছিস।
তারপরেও কেনো জানি ভয় হয় আরুকে নিয়ে।
আমাকে নিয়ে কিসের ভয় তোমার??
আরু হাসি মুখে কথাটি বলে আদ্রর পাশে এসে বসলো। আদ্র কিছুটা চমকে উঠলো,সাদাফকে বললো.......দোস্ত এখন রাখছি পরে কথা হবে।
আদ্র ফোন রেখে আরুর দিকে তাকালো।
আরু আবারো বললো.....আমাকে নিয়ে কিসের ভয় তোমার বললে না তো??
তোমাকে নিয়ে কিসের ভয় থাকবে আমার। কিছু না।
আরিশা আদ্রর হাত মুঠোয় নিয়ে বলল.......অন্য দিকে তাকিয়ে আছো কেনো আমার দিকে তাকাও। আদ্র আমারো মনে হয় তুমি এমন কিছু নিয়ে চিন্তা করো যার কারন আমি। আমাকে বলোনা আদ্র কি সেই কারন??
আদ্র আরিশাকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো.......আরু তুমি হয়তো ভুলে গেছো তাই বলতে চাই নি,কিন্তু না বলেও তো পারছি না। আরু আমার একটাই চিন্তা তা হলো তোমার দেখা সেই সপ্ন।
আরিশা আদ্রর টি শার্ট খামচে ধরে বললো.......সপ্ন! ওটা নিয়ে কেনো ভাবছো। আমার তো মনে হয় তোমাকে নিয়ে ভাবি তাই ওইরকম খারাপ সপ্ন দেখেছিলাম। তুমি ওটা নিয়ে আর ভেবো না তো।
কিন্তু আরু আমার যে খুব ভয় হয়,যদি সে সপ্নটা আমাদের বাস্তব জীবনে ঘটে। আরু আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমার সপ্নে একটা বাচ্চার কান্না শুনতে পেতে। এখন আমদের ও বেবি আসতে চলেছে আমি ভাবছি তোমার ডেলিভারির সময় যদি তোমার বা বেবির কিছু.......
আমি বুঝতে পারছি তুমি কি বলতে চাইছো। ভয় পেয়ো না আমাদের কিছু হবে না তোমার ভালোবাসা আমার আর আমাদের বেবির একমাত্র ভরসা। এতো ভালোবাসা রেখে আমরা হারিয়ে যাবো এতো সোজা নাকি হুম। একটা কথা বলোতো তুমি এই কারনে আমাকে বেবি নিতে মানা করেছিলে??
হ্যা এ কারনে আমি মানা করেছিলাম। আমার বেচে থাকার অক্সিজেন তুমি,আমার জীবনের প্রতিটি ধাপে মিশে গিয়েছো তুমি। আমি কখনো কল্পনাও করিনা তোমার ছাড়া বাঁচার কথা।
এতো ভালোবাসো কেনো আমাকে তুমি??
আমার আরু সোনাকে আমি ছাড়া আর কে ভালোবাসবে শুনি,আমার মিষ্টি বউ যে তুমি।
এই এটা কিন্তু ঠিক নয়। শুধু নিজের বউয়ের কথা ভাবলে চলবে হুম? আমাদের প্রিন্সেস তো রাগ করবে।
আদ্র আরুর গালে ঠোঁট ছুইয়ে বললো.......আমার বউয়ের মধ্যেই তো আমার প্রিন্সেস বড় হয়ে উঠছে বউকে নিয়ে যতোটা ভাবছি ততোটাই আমার প্রিন্সেসকে নিয়ে ভাবা হচ্ছে। বুঝেছো সোনা।
আদ্র এবং বাড়ির সকলের ভালোবাসা নিয়ে বেশ কেটে যাচ্ছে আরুর দিনগুলো। আরুর ৮ মাস চলছে এখন মাঝে মাঝেই অসুস্থ বোধ করে। সবার যত্নে বিশেষ করে আদ্রর কেয়ারিং এ আরু নিজের অসুস্থতাও ভুলে যায়। কতোটা ভাগ্যবতী হলে এমন পরিবার আর বর পাওয়া যায় আরু এটা ভেবেই শুকরিয়া জানায় আল্লাহর দরবারে।
.
.
কয়েকদিন ধরে আরিশার পেটে ব্যাথা করছে। তবে তা সহ্য করার মতো তাই কাউকে কিছু বলেনি। আজ বিকেল থেকে আরো বেড়েছে সন্ধা যতো ঘনিয়ে আসছে আরিশার ব্যাথাটা ক্রমশ বাড়ছে। আরিশা বেডশীট খামচে ধরে ঠোঁট চেপে ব্যাথাটা সয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
আরিশার মা রুমে এসে মেয়েকে এভাবে দেখে আৎকে উঠলেন দ্রুত আরিশার কাছে গিয়ে বললো.......
আরিশা এমন করছিস কেনো মা? শরীর খারাপ লাগছে ব্যাথা করছে পেটে??
আরিশা চোখ বন্ধ অবস্থায় ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে বললো........মা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আমি এ ব্যাথাটা সহ্য করতে পারছি না।
একটু ধৈর্য ধর মা আমি আপাকে ডাকছি।
আরিশার মা আদ্রর মাকে ডেকে আনলো আর অথইকে বললো আদ্রকে ফোন দিতে।
অথই আদ্রর ফোনে কল দিয়ে জানতে পারলো আদ্র ফোন তার পিএর কাছে রেখে জরুরী মিটিং এ আছে একঘণ্টার আগে বেড় হতে পারবে না।
আরিশা আরো ছটফট করছে আদ্রর মা আদ্রর বাবাকে আর আরিশার বাবাকে ফোন দিয়ে জানালো। আরিশার বাবা ১০ মিনিটের মধ্যে বাড়িতে এসে মেয়ের এমন অবস্থা দেখে তাড়াহুড়ো করে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
আরিশা এতো কষ্ট সহ্য করেও বারবার আদ্রকে খুজছে। ও চাইছে আদ্রকে একটু জড়িয়ে ধরতে। আদ্রর হাতটা শক্ত করে ধরতে মন চাইছে। আরিশা কাপা কাপা গলায় আদ্রর মাকে জিজ্ঞেস করলো.......
মা আদ্র কোথায়, উনি আসছে না কেনো??
আদ্র অফিসে একটা মিটিং এ আছে ফোন ওর কাছে নেই,তোর বাবা আদ্রকে নিয়ে হসপিটালে পৌছে যাবে। একটু সহ্য কর আমরা তোকে এখনি হসপিটালে নিয়ে যাবো।
আরিশা কথা বলার শক্তি টুকু পাচ্ছে না। তাই আর কথা বাড়ালো না। ব্লিডিং হচ্ছে, আরিশাকে হসপিটালে নিয়ে আসা হলে ওর অবস্থা দেখে ডাক্তার জানালো ওকে যতো দ্রুত সম্ভব ওটিতে নিতে হবে আর সিজার করতে হবে।
আদ্র এখনো এসে পৌছোয় নি,আরিশা আদ্রকে না দেখা অবদি কোথাও যাবে না বলে জেদ ধরে আছে। তাই আদ্র না আসা পর্যন্ত আরিশাকে কেবিনে রেখে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে যেনো ব্যাথা একটু কমে।
অবশেষে আদ্র এসেছে। পাগলের মতো দৌড়ে এসে কেবিনে ঢুকলো। আদ্রকে দেখে আরিশার মা আদ্রর মা কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো। আরিশার পাশে আদ্র গিয়ে বসলো ওর হাত শক্ত করে ধরে বললো......
আরু খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার তাইনা। সব ঠিক হয়ে যাবে সোনা। আমার আরুর এতো কষ্ট হবে জানলে আমি বাচ্চাটা রাখতে দিতাম না।
ছি আদ্র কি বাজে কথা বলছো! তুমি বাবা হয়ে এমন কথা বলো না প্লিজ। আমার কষ্ট হচ্ছে তাতে কি আমার বাচ্চার মুখ দেখার পর এসব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। আদ্র আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে??
আদ্রর চোখটা লাল হয়ে আছে পানি জমে আছে চোখের কোনে আরিশাকে সোয়া থেকে তুলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরিশার মুখে ঠোঁটে চোখে কপালে অজস্র চুমুতে ভড়িয়ে দিলে।
ডাক্তার এসে তাড়া দিতে লাগলো আদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললো....... মি: আদ্র আপনার ওয়াইফকে ইমিডিয়েটলি অপারেশন থিয়েটারে নিতে হবে এভাবে দেরি করতে থাকলে মা এবং বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। এমনিতেই পেসেন্ট অনেক দুর্বল ব্লিডিং ও হচ্ছে জানি না বাচ্চাটার কি অবস্থা। আপনাদের উচিত ছিলো আপনার ওয়াইফকে আরো আগে সিজার করানো। এনি ওয়ে সব রেডি ওনাকে নিয়ে যেতে হবে। আমি নার্স পাঠিয়ে দিচ্ছি।
.
.
সবার মুখে টেনশনের ছাপ। আদ্রর মুখের দিকে তো তাকানো যাচ্ছে না ওর মনে আরুকে হারানোর ভয়টা আরো জেকে বসেছে। বারবার আরুর শেষের কথা গুলো মনে করে ওর চোখ ভরে আসছে। কিছুতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না।
আরিশাকে ওটিতে নিয়ে যাবার আগে আরিশা আদ্রর হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছিলো মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো আদ্রর দিকে। আশেপাশের সবার দিকে তাকিয়ে বলেছিলো তোমরা আমার বেবির জন্য দোয়া করো। যদি আমার কিছু হয়ে যায় আমার আদ্র আর আমার ছোট্ট প্রিন্সেস টাকে সামলে রেখো তোমরা।
উপস্থিত সবার চোখে পানি জমে গিয়েছিলো আরিশার কথা শুনে আদ্র চোখের পানি ফেলে আরিশার গালে হাত রেখে ভয়ার্থ কন্ঠে বলে উঠলো........আরু এসব কি বলছো তুমি হ্যা। তোমার কিছু হবে না। আমার আরু সোনা তো খুব স্ট্রং তাইনা? বাজে চিন্তা একদম করবে না আমি তোমাকে আর আমাদের ছোট্ট পরীটাকে চাই খুব করে চাই। নিজেকে শক্ত রাখো আল্লাহ আমাদের সহায় হবেন ইনশাআল্লাহ। আমার ভালোবাসার জোর অনেক বেশি আমি জানি আল্লাহ আমাকে মিরাস করবেন না।
আরিশা ঠোঁট চেপে ব্যাথা সহ্য করে মুচকি হাসলো আদ্রর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো.......আমার চোখের পানি দেখে যেমন তোমার কষ্ট হয় তেমনটা আমারো হয়। কেদো না প্লিজ। কার ভাগ্যে কি লেখা আছে আমরা কেউ জানি না। অনেক শুনেছি বেবি জন্মের সময় মা মারা যায়,আল্লাহ না করুক আমার যেনো এমন কিছু না হয়। আমি তোমার ভালোবাসা নিয়ে আরো বাচতে চাই আদ্র আমাদের প্রিন্সেসকে নিজের হাতে বড় করতে চাই।
এভাবে বলে না জান তোমার কিছুই হবে না দেখো।
কেনো জানিনা সেই সপ্নের কথা মনে পড়ছে তুমি আমাকে অন্ধকারে রেখে চলে যাচ্ছিলে আর সেই অন্ধকার ঘরে একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিলো। দেখো প্রায় মিলে যাচ্ছে ওটিতে তো তোমাকে ছাড়া একাই থাকবো সেখানে আলো থাকলেও আমার জন্য অন্ধকার মনে হবে কারন তুমি যে থাকবে না পাশে। আর আমাদের বেবিটাও তো আমার সাথেই থাকবে। সবটা কেমন মিলে যাচ্ছে তাইনা! আদ্র আমার যদি সত্যি কিছু হয়ে যায় তাহলে কিন্তু তুমি একদম ভেঙে পড়বে না আমাদের মেয়েকে দেখে রাখবে অনেক আদর করবে ওকে কেমন।
আরু প্লিজজ স্টপ,আমি আর নিতে পারছি না। এ ধরনের কথা কেনো বলছো তুমি? আমি থাকবো তোমার পাশে ডাক্তারের সাথে কথা বলবো যেনো ওটিতে আমাকে ঢুকতে দেয়। সব ঠিক হয়ে যাবে।
আদ্র আমাকে একটু আদর করবে??
আদ্র আরুর চোখের পানি মুছে দিয়ে ওর সাড়া মুখে আদর মেখে দিয়েছিলো। আরুকে ভেতরে নেওয়ার সময় দুজনেই হাত শক্ত করে ধরে একে ওপরের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আরুর চাহনিটা ছিলো স্থির ও মনে মনে ভেবে নিয়েছে ওর যদি কিছু হয়েও যায় আদ্র খুব ভেঙে পড়বে ঠিকি কিন্তু ওদের মেয়েটা যদি সুস্থ থাকে তাহলে আদ্র ওকে আকড়ে বাঁচতে পারবে।
.
.
আদ্র ডাক্তারকে অনেক অনুরোধ করেও ভেতরে যেতে পারে নি। আদ্র ওটির সামনে থেকে এক পা ও নরছে না মনে মনে শুধু আল্লাহকে ডাকছে যেনো মা এবং বাচ্চা দুজনেই সুস্থ থাকে।
আরিশার মা ও খুব কাদছে মেয়ের বলা কথা গুলো বারবার বাজছে তার কানে। ওদের পরিবারের সবার মুখেই চিন্তার ছাপ কেননা আরুর বলা কথাগুলো সবার মনকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সাদাফ আদ্রকে বুঝাচ্ছে।
প্রায় ১ ঘন্টা পরে ওটির ভেতর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেলো। সকলেই তাকিয়ে আছে ওটির দরজার দিকে আদ্র সাদাফকে হাত চেপে ধরে বললো......
সাদাফ এ আওয়াজ ভেতর থেকে আসছে? আমাদের ছোট্ট পরী কাদছে তাইনা? আরু! আমার আরু ঠিক আছে তো??
সাদাফ আদ্রকে শান্তনা দিয়ে বললো......হ্যা তোর আর আরুর ছোট্ট পরীটা কাদছে আর আরু ঠিক আছে। শান্ত হ।
কয়েকমিনিট পর ওটির দরজা খুলতেই সবাই এগিয়ে গেলো একজন নার্স ছোট্ট ফুটফুটে একটা বাচ্চাকে এনে আদ্রর সামনে দাড়িয়ে বললো......মি:আদ্র এই নিন আপনার ওয়াইফ কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছেন।
আদ্র বাচ্চাটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, ওদের ছোট্ট পরীটার চোখ নাক ঠোঁট অনেকটাই আদ্রর মতো হয়েছে। বাকী সবার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। আদ্র বাচ্চার দিকে তাকিয়ে নার্সকে জিজ্ঞেস করলো.......আমার ওয়াইফ ও কেমন আছে? ও ঠিক আছে তো??
নার্স কিছু বললো না পেছন থেকে ডাক্তার বেড়িয়ে এসে বললো.......আপনাদের পেসেন্টকে আরো তিন চার দিন আগে সিজার করানোর প্রয়োজন ছিলো। মেবি উনার কয়েকদিন যাবৎ পেইন হচ্ছিলো কাউকে বলেনি। আমরা তো ভেবেছিলাম বাচ্চাটার প্রবলেম হবে, কিন্তু তা হয়নি আল্লাহর রহমতে বাচ্চাটা পুরোপুরি সুস্থ আছে। কিন্তু....
আরিশার বাবা এগিয়ে এসে বললো.....কিন্তু কি ডাক্তার,আমার মেয়ে ঠিক আছে তো??
দেখুন উনার অনেক ব্লিডিং হয়েছিলো আমরা পর্যাপ্ত পরিমান ব্লাড দিয়েছি,তাছাড়া পেসেন্টের শরীর খুব দুর্বল ছিলো। সিজারের আগে প্রচুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো। ইনজেকশন দিয়ে শ্বাস নেওয়াটা স্বাভাবিক করে তারপর কাজ শুরু করেছি। পেসেন্ট ঠিকি ছিলো তবে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পরে উনার আবারো শ্বাসকষ্ট শুরু হয় আমরা দ্রুত অক্সিজেন দেই তার কিছুক্ষণ পর উনি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে। সেন্স না ফেরা পর্যন্ত কিছু বলতে পারছি না। তবে আশা করছি সুস্থ হয়ে উঠবে কারন পেসেন্টের ব্লাড প্রেসারটা স্বাভাবিক আছে।
সবটা শুনে আদ্র খানিকটা পিছিয়ে গেলো,ওর বুকের ভেতরটা ডুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে বারবার মনে হচ্ছে ওর আরু আর ফিরবে না।
আদ্রর মা বাচ্চাকে নিয়ে আদ্রর কাছে গিয়ে বললো......আদ্র কিছু হবে না বাবা দেখিস আমাদের আরিশা সুস্থ হয়ে উঠবে,সেন্স ফিরে আসবে ওর খুব তাড়াতাড়ি। তোর মেয়েকে কোলে নিবি না??
আদ্র বাচ্চার মুখে হাত বুলিয়ে শান্ত গলায় বললো...... মা আমার আরুর সেন্স না আসা পর্যন্ত আমি ওকে কোলে নেবো না।
No comments