তোকে_অনেক_ভালোবাসি ------পর্ব_১
আদ্র ভাইয়া আমার গালে জোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো এই মেয়ে নিজের শরীর দেখাতে এসেছিস কলেজে??এতই যদি শরীর দেখানোর ইচ্ছে তোর তাহলে ওড়নাটা কেনো নিয়েছিস? ফেলে দে ওটা। বলেই উনি আমার ওড়নাটা টেনে ছুরে ফেলে দিয়ে দেয়ালে অনেক জোরে নিজের হাতে আঘাত করলো।
আমার চোখ থেকে গাল বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে,এ অপমান জনক কথাগুলো আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আদ্র ভাইয়া আজ আমাকে এসব বাজে কথা শোনালো! রাগে অভিমানে বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার। আমি আর একমুহুর্ত না দাড়িয়ে ওড়নাটা তুলে চোখ মুছতে মুছতে চলে এলাম।
.
.
কিছুক্ষণ আগে......
আমি কলেজের ক্যানটিনে বসে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম....স্যার ক্লাসে যাচ্ছিলো দেখে তাড়াহুড়ো করে উঠে চলে আসতে নিলে আমার গায়ে থাকা টপসটা চেয়ারের কোনে বেধে যাওয়ায় আমি নিচু হয়ে চপসটা ছাড়ানোর সময় ওড়নাটা কাধের উপর থেকে পড়ে যায়। আমি টপস ছাড়াতে ব্যস্ত ছিলাম তাই তেমন খেয়াল করিনি। হঠাৎ কানে ভেসে এলো.....দোস্ত পাখিটাকে দেখ একে তো খাঁচায় আটকাতেই হবে।
কথাটা শুনে আমি নিজের ওড়নাটা তাড়াতাড়ি ঠিক করে নিয়ে পেছনে ঘুরে আদ্র ভাইয়াকে দেখতে পাই উনার চোখ পুরোই লাল হয়ে ছিলো। প্রচুর রেগে আমার হাত ধরে টেনে ক্যানটিনের একপাশে নিয়ে এসেছে বাকীটাতো আপনারা জানেন।
.
চলুন এবার পরিচয় দেওয়া যাক....
আমি আরিশা তাসনীম আরিশা বলেই ডাকে সবাই,আর আদ্র ভাইয়া আরু বলে ডাকে।আমি এবার ইন্টার ২য় বর্ষ পড়ছি। আদ্র ভাইয়া আমার বড় চাচ্চুর ছেলে আমরা একই বাড়িতে থাকি উনি মাস্টার্সে পড়ছে পাশাপাশি চাচ্চুর ব্যবসা দেখাশুনা করে।
.
.
বাড়িতে এসে সোজা নিজের রুমে এসে দরজাটা লক করে ব্যাগটা ছুড়ে ফেলে ওয়াশরুমে চলে এলাম সাওয়ার ছেড়ে বসে পড়লাম নিচে। আমার যখন খুব রাগ হয় তখন এই কাজটাই করি আমি। তাতে রাগটা একটু হলেও কমে। আদ্র ভাইয়ার বলা কথাগুলো আবার মনে পড়তেই ভীষন রাগ হচ্ছে আমার ইচ্ছে করছে সিল্কি চুলগুলো টেনে ছিড়তে...আমার চুল নয় কিন্তু আদ্র ভাইয়ার চুল ছেড়ার কথা বলেছি।
অনেকক্ষণ সাওয়ার নিয়ে রুমে আসতেই দেখলাম,মা বড় কাকিমা বেডে বসে আছে। আমাকে দেখে যেনো ওনারা চাঁদ পেয়েছে।
কাকিমা আর মা দুজনেই আমার পাশে এসে দাড়ালো মা বললো....আরিশা মা কি হয়েছে তোর কলেজ থেকে এসেই দরজা আটকে দিলি,চোখ নাক লাল কেনো কেঁদেছিস তুই??
মায়ের কথা এড়িয়ে বললাম...তোমরা আমার রুমে আসলে কি করে?? দরজা তো ভেতর থেকে লক করা ছিলো।
কাকিমা বলে উঠলেন তোকে এভাবে দরজা আটকাটে দেখে তো আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তারপর তোর রুমের ডুপ্লিকেট চাবিটা খুজে দরজা খুলেছি। আর এসে দেখলাম তুই ওয়াশরুমে তাতেই বুঝতে পেরেছি তোর আজ কোনো কারনে রাগ হয়েছে।
মা বললো কি হয়েছে মা বল রাস্তায় কেউ কিছু বলেছে তোকে?
আমি বিড়বিড় করে বলছি কে কি বলবে,তোমাদের আদরের আদ্র সেই তো একাই একশো আমার রাগ উঠাতে। হনুমান একটা।
আরিশা কি বিড়বিড় করছিস তোর মা আর আমার তো চিন্তা হচ্ছে বল কিছু? তুই মনমরা হয়ে থাকলে আমাদের ভালো লাগে বল। তুই ছাড়া আর কে.....
কাকিমাকে থামিয়ে অথই বলে উঠলো...হ্যা আরিশা আপুই তোমাদের সব আমি তো কেউ না। অথই গাল ফুলিলে কথাটা বলে বেডে বসে পড়লো।(অথই আদ্র ভাইয়ার ছোট বোন ক্লাস নাইনে পড়ে)
আমি অথইকে বললাম...বনু আমার তুই সবাইকে তোর করে নিয়ে যা আমার কাউকে লাগবে না। আর এটাও বলে দিস আমাকে নিয়ে কাউকে ভাবতে হবে না।
মা মুখটা কালো করে বললো এভাবে কথা বলছিস কেনো তুই?
কিভাবে বলেছি!!
অনু থাক বাদ দে এসব তোর মেয়েটা যে জেদি তা তো আমাদের অজানা নয়। আরিশা তোর কি হয়েছে বলতে হবে না। এত রাগ ভালো নয় মা এখন খেতে চল।
খাবো না আমি তোমরা যাও। মা কাকিমা অথইকে রুম থেকে বের করে দিয়ে বেডে শুয়ে পড়লাম,কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেও পারিনি। জোরে জোরে দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। বিরক্ত নিয়ে উঠে চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলে দিয়ে আবারো এসে বেডে বসে পড়লাম। কে এসেছে সেদিকেও খেয়াল নেই আমার। আমি ঘুমে ঝিমতে ঝিমতে বলে উঠলাম.....ধুর কেউ আমাকে বুঝে না এত মজার ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলো। আর একটুখানি ঘুমাতে দিলে কি হতো শুনি!
মহারাণীর ঘুমটা ভাঙিয়ে দিয়ে তাকে খুব বিরক্ত করলাম তাইনা? তো ম্যাম কয়টা বাজে সে খেয়াল কি আপনার আছে? খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছেন।
কন্ঠটা শুনে আমার ঘুমটা একছুটে পালিয়ে গেলো ভ্রু জোড়া কুঁচকে সামনে তাকিয়ে বললাম আপনি! আপনি আমার রুমে কেনো? ওও আবারো কি থাপ্পড় মারতে এসেছেন?? এসবই তো পারেন আপনি শুধু শুধু আমাকে বকেন আর আর আজ তো মারলেনও।
আদ্র ভাইয়া হাত ভাজ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো আরু তুই আমাকে আপনি করে কথা বলা শুরু করলি কবে থেকে!! তুমি করে বলতি ওটাই তো ঠিক ছিলো।
এখন থেকে আপনি করেই বলবো। আপনি তো আমাকে মারতে এসেছেন নিন মারুন দাড়িয়ে আছেন কেনো।
আদ্র ভাইয়া রেগে বললো একটা থাপ্পড় মেরেছি বলে কেঁদে কেঁদে কয়েকঘন্টায় চেহারার ১২ টা বাজিয়েছিস আর একটা মারলে তো তোকে খুজেই পাওয়া যাবে না। থাক ওসব কথা বাদ দে যা ফ্রেস হয়ে আয় তোর জন্য খাবার নিয়ে এসেছি খেতে হবে।
আমার জন্য খাবার আনতে বলেছি নাকি আপনাকে। নিয়ে যান খাবার খাবো না আমি। আর শুনুন আপনার সাথে আমি আর কথা বলবো হুম,বলবো না মানে বলবো না ব্যাস।
আরু আর একটা কথা বললে এবার সত্যি আরো একটা মারবো তোকে। কথাটা বলেই আদ্র ভাইয়া আমাকে হাত ধরে টেনে পাশে থেকে পানির বোতলটা নিয়ে ব্যালকনিতে এনে বললো..জলদি মুখটা ধুয়ে নে।
আমি কিছু বলতে নিলে উনি বলে উঠলো...চুপ একটা কথা নয় যা বলেছি কর। আমার রাগ হচ্ছে খুব কিন্তু কিছু বলতে পারছি না। মুখটা ধুয়ে বেডে উপর বসে পড়লাম। আদ্র ভাইয়া প্লেটটা হাতে নিয়ে এক লোকমা ভাত আমার মুখের সামনে ধরলেন....আরু খেয়ে নে।
খাবো না আমি।
উনি একটু চুপ থেকে বললো আচ্ছা বাবা সরি আমার ভুল হয়েছে আর মারবো না তোকে। তখন নিজের রাগটা কনট্রোল করতে পারিনি তাইতো তোকে...
হুম তাই তো আমাকে এত এত বাজে কথা শুনিয়ে দিলেন আর মারলেন ও। খুব কষ্ট হয়েছিলো আমার। কি দোষ ছিলো আমার হ্যা? আমি কি জানতাম নাকি ওই ছেলেগুলো...
ওসব কথা এখন আর না বলি চুপচাপ খেয়ে নে প্লিজজ।
আদ্র ভাইয়া আমাকে না খাইয়ে এখান থেকে এক পা ও নরবে না তাই বাধ্য হয়ে অল্প কিছু খেলাম। উনি প্লেট রেখে হাত ধুয়ে উঠে দাড়াতেই বললাম....আচ্ছা ভাইয়া এখন কয়টা বাজে আমি কি দুপুরের খাবার খেলাম??
এখন রাত প্রায় ১০ টা বাজে তুই রাতের খাবার খেলি।
কিহ!! দুপুর থেকে এতক্ষণ আমি ঘুমিয়েছি!!
জি ম্যাম। নিজে তো আরামে ঘুমিয়েছিস এদিকে বাড়ির সকলের আরামকে হারাম করেছিস সাথে আমারো।
আপনার আবার কি করেছি??
আরু আপনি আপনি করবি না তো,খুব তো তুমি তুমি ডেকে মাথা খারাপ করিস আজ উল্টোটা করার মানে কি।
আমি এটা বলেই ডাকবো এখন থেকে।
চুপ বেয়াদব মেয়ে, এক চড়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দিবো খুব কথা বলতে শিখেছিস না।
আমি মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকালাম উনার প্রবলেমটা ক? এই ভালো তো এই খারাপ। আমার সাথে কেনো এমন করে বুঝি না।
শোন কাল থেকে আমি তোকে কলেজে নিয়ে যাবো আবার নিয়ে আসবো কোনো বাড়াবাড়ি করবি না,আর কলেজে গিয়ে এদিক ওদিকে না ঘুরে ক্লাসে থাকবি। মনে থাকে যেনো।
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। হুহ আপনার কথা শুনতে আমার বয়েই গেছে শুনবো না আপনার কথা দেখি কি করেন আপনি।
No comments