Header Ads

Header ADS

হৃদমাঝারে_তুমি_ছিলে❤ ----পর্ব_২

-''তুই কি জানিস যে তোরে বিয়ের আসর থেকে নিয়ে আসতে গিয়ে আমাদের জান পালাই পালাই করছিলো?''

মাইশা সরু চোখে বললো পৃথাকে। পৃথা এখনও বিয়ের শাড়ি পড়া অবস্থায় বসে আছে। অন্য কোনো সময় এমন ভারী সাজঁ বেশ অসহ্যকর লাগলেও এখন পৃথার মনে শান্তি। হয়তো জীবনের বড়সড় এক শঙ্কা থেকে পালিয়ে আসার জন্য এমন মনে হচ্ছে।পৃথা মিহি গলায় বললো,
--''এভাবে বলছিস কেন?''
আনান এবার ভ্রু কুচকে বললো,
--''তো কিভাবে বলবে ও? তোর বাপ ভাইগুলা আস্ত একটা রামছাগলের খামার তুই জানোস? নাহলে কিভাবে ওই ৪৪ বছরের বুইড়া বেডার সাথে তোর বিয়ে দেয়ার জন্য উইঠা পইড়া লাগলো? আর বেডাটাও নাইলে কি? অনার্সে পড়ুয়া এক কচি মেয়ের সাথে বিয়ে করবো?আইসে বিয়ের শখ কত! আমার এক নানী আছে। জামাই মরছে ১০ বছর আগে। সেই মহিলার সাথে বিয়ে দিলে পুরাই ফুলকলি জুটি হইবো।''
--''এমনে ওই বুইড়া জামাইয়ের কথা বলিস না আনান। দেখ আমাদের পৃথু বেবি রাগ করতাছে।''
বলেই মুখ টিপে হাসে অর্পি। একই সাথে বাকিরাও। আয়াত ওদের কান্ডকারখানা দেখে বেশ মজা নিচ্ছে। পৃথা কাদো কাদো গলায় বললো.
--''তুই আমার বাপ-ভাইদের রামছাগল বললি আনান?''
--''শুধু তাদের না। তোরেও বলবো। রামছাগলী। তোর ওই হারামজাদা ভাইগুলা এত কিছু করে ফেলছিলো আর তুই কুম্ভকর্মের মতো কিছু বলিসনাই কেন? বলতে পারতিনা যে তুমি সামাদকে ভালোবাসিস?''

--''সেম এজ রিলেশন মেনে নিতো না ওরা।''
--''এখন বিয়ে করলে মানবে?তোদের পিরিত দেইখা আমার গার্লফ্রেন্ড পটানোর শখ মিটে গেসে। তোর জন্য এই সামাদ কুত্তাটা পাগলের মতো ছটফট করছিলো। পরে মাইশা এসে তোরে ভাগানোর প্ল্যান করলো আর সব ব্যবস্থা করলাম আমি।''
--''বলো কি আনান? এই দস্যু মেয়ে এতো প্ল্যান করেছে? আমি তো ভেবেছিলাম ও শুধু কোমড় বেধেঁ ঝগড়াই করতে পারে?''
আয়াত বিদ্রুপ সরে মোবাইল স্ক্রল করতে করতে করতে কথাটি বললো। মাইশা একটা মেকি হাসি দিয়ে বললো,
--''শুধু ঝগড়া না, ভালো থাপড়াথাপড়িও করতে পারি। এই কথাটা বললেন না মিস্টার?''
--''আমিও মানুষ তুলে সেইভাবে আছাড় মারতে পারি। আল্লাহ চাইলে অবশ্যই তোমায় দেখাবো।''
সবাই মুখ টিপে হাসছে ওদের এরকম কথা শুনে। শাওন ওদের দিকে কিছুক্ষণ সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
--''তোমাদের স্টোরিটা ইন্টেরেটিং। কারন আমি কখনোই বউ পালানোর এই বিষয়টা সামানাসামনি দেখিনি। আর সেম এজ রিলেশনে এই জিনিসটা আরও বেশি মজার।তোমাদের সাহসীকতার তারিফ করতে হবে।''
--''ইন্টার ফার্স ইয়ার থেকে আজ ৫ বছর ধরে আমাদের বন্ডিং ভাইয়া। এত সহজে একে অপরকে ছেড়ে যাবো না।'' [সামাদ]
আয়াত নির্বিঘ্ণে মোবাইল স্ক্রল করে যাচ্ছে। এতক্ষণ ওদের কথাবার্তার দিকে মনোযোগ থাকলেও এখন তা নিক্ষেপ করেছে মোবাইলের দিকে। অর্পি তখন আয়াত,শাওন আর সামাদের উদ্দেশ্যে বললো,
--''আপনারা পঞ্চগড়ে কোনো বিশেষ কাজে এসেছেন ?''
--''আসতে চায়নি। আমাদের ঘাড় টেনে নিয়ে আসা হয়েছে।'' [তিথি]
--''মানে?''
অবাকের রেশ ধরে প্রশ্ন করলো মাইশা।তিথি কিছু বলতে যাবে শাওন হাতের ইশারায় তিথিকে থামিয়ে দেয়। শাওন তারপর মাইশার দিকে নির্বিকার চোখে তাকিয়ে বললো,
--''এইযে একটু আগে যেই ছেলেটাকে তুমি অসভ্য বললেনা; সেই ছেলেটার জন্য। আসলেই একটা অসভ্য ছেলে। ভোর রাতে আমার বাসায় চোরের মতো এসে মুখে পানি ছুঁড়ে মেরে একপ্রকার টেনেহিচড়ে আমায় কমলাপুর রেলস্টেশনে নিয়ে আসলো। তেমনিভাবে তিথিকেও।আমরা তখনও থম মেরে ছিলাম যে হচ্ছেটা কি । পরে শুনি এই ভবঘুরে আয়াত মশাইয়ের মাঝরাতে ''কাঞ্চনঝঙ্গা'' দেখার শখ হয়েছে।''
আয়াত সামাদের কথা শুনলেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। কেননা সামাদই একমাত্র মানুষ যার সাথে আয়াত কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলে না বা চেষ্টাও করে না।
--''কাঞ্চনঝঙ্গা? এটা আবার কি?''
মাইশা প্রশ্ন করলো শাওনকে।
--''ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে এই মেয়ে নাকি বউ পালানোর জন্য এসেছে। আর এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান সম্পর্কেই নাকি জানেনা। টু মাচ স্ট্রেন্জ?''
আয়াতের বাকা কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে যায় মাইশা। আবারও গর্জে বলে,
--''এই মেয়ে এই মেয়ে করছেন কেন? আমার নাম আছে। আবারও এই মেয়ে ডাকলে আবার মোবাইল ছুঁড়ে ফেলে দিবো।''
পরিস্থিতি আবারও গরম হয়ে ওঠার আগেই সব সামলে নিলো শাওন। মাঝে মাঝে আয়াতের এসব এরোগেন্ট কাজকর্মের জন্য চিন্তা হলেও এখন আর ভ্রুক্ষেপ করে না। শাওন প্রখর গলায় আয়াতকে বললো,
--''এরকম করছিস কেনো তুই? চুপচাপ মোবাইল চালা নয়তো ঘুমিয়ে পড়। কথা বাড়াবি না।''
--''তোর কথা কোন জন্মে শুনছি আমি?তুই তোর কাজ কর। আমি আমার কাজ করছি।''
আয়াতের কথায় পাত্তা না দিয়ে শাওন আবার মাইশার দিকে তাকালো। তারপর বললো যে,
--''কাঞ্চনঝঙ্গা একটা পাহাড়ের নাম যা ইন্ডিয়ার বর্ডারের সামনে আছে। সকালে এর মোহনীয় রূপ যে কাউকে আকৃষ্ট করতে বাধ্য। আর এর একঝলক সৌন্দর্য বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলা থেকে চমৎকারভাবে দেখা যায়। আর আমাদের আয়াত মশাই এইটা দেখার জন্যই আমাদের ছোবল মেরে এখানে নিয়ে আসে।''
--''আপনার ভ্রমণ করতে খুব ভালোলাগে ভাইয়া?''
পৃথা আয়াতকে প্রশ্ন করে।
--''ট্রাভেলিং আমার একপ্রকার নেশা। অনার্সে পড়াকালীন সময়েই আস্তে আস্তে এসব শুরু করি আর আমার ট্যুরমেট বানাই শাওনকে। ইউ নো হোয়াট ; শাওন আমার ভাইয়ের চেয়েও বেশি। লাইফের এক একটা সুন্দর মোমেন্ট আমি দুইটা জিনিসের সাথে উপভোগ করার চেষ্টা করেছি। ওয়ান ইজ মাই ফ্যামিলি এন্ড আদার শাওন।''
আয়াতের এই কথায় ফুটে উঠেছে একরাশ মুগ্ধতা। মাইশা সবার চোখের আড়ালে একটা মিহি হাসি ফুটিয়ে তোলে এমন আড়ষ্ট কন্ঠ শুনে। ছেলেটার কথাবার্তা এতটাও করলা টাইপ না যতটা মনে হয়। আবার মনে হয় যে এই ছেলের থেকে হয়তো করলাও মিষ্টি।
--''আপনার কি ট্রাভেলিং টাকেই ক্যারিয়ার বানানোর ইচ্ছে ভাইয়া?'' [আনান]
--''এখনও ওমনভাবে ভাবি নি। মাস্টার্স ফাইনাল দেবো। আপাততো এক্সামের আগে এটাই আমার লাস্ট ট্যুর। আর রেডিও তে আমি জাস্ট পার্টটাইম RJ হিসেবে কাজ করি তবুও তারা আমায় হাতছাড়া করতে চাচ্ছেনা তাই এটাই আপাদত টার্গেটে রাখি বাকিসব আল্লাহ ভরসা।''
--''আপনার কন্ঠ ভাইয়া নেশাধরানোর মতো। এরকম সুন্দর কন্ঠের মানুষ যে নাকি রাতারাতি পপুলার টপ টেন ট্রাভেল ভ্লগারদের মধ্যে আছে তাকে কেউ হাতছাড়া করতে চায়?''
অর্পি খুশিতে কদাচিত হয়ে কথাটি বললো। আয়াত মুচকি হেসে মোবাইল স্ক্রল করে যাচ্ছে যেন অর্পির এই কথাগুলো ওর জন্য নিয়মিত বাণী। মাইশা এবার জানালার দিয়ে বাইরে তাকালো। অন্ধকারের হাতছানিতে আকাশে ক্ষণে ক্ষণে মেঘ গর্জে উঠছে।হয়তো সামনের সময়টাকে বৃষ্টির ঢল নামবে। পরিবেশটা খারাপ না। নিত্যনতুন সাধারণ দিনের মতো এটা হলেও সদ্যপরিচিত এই মানুষগুলোর প্রতি ওর অনুভব হচ্ছে প্রবল কৌতুহল। এটা কি তবে নতুনভাবে কোনো কিছু সূচনার ইঙ্গিত হবে?
------------------------------------
নিরবিচ্ছিন্ন রাত। কেবিনেটের সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন। সারারাত বৃষ্টির ঢল নামার পর শেষ প্রহরে অনুভব হচ্ছে শীতলতা।মাইশা জানালা দিয়ে নিদ্রাহীন চোখে স্টেশনের দিকে তাকালো। বৃষ্টির কারনে রেলপথে একটি বৈদ্যুতিক খাম্বা পড়ে যাওয়ায় ট্রেন এখন সিরাজগন্জ স্টেশনে থেমে আছে। সেখানে এখন কাজ চলছে। মাইশা জানালা দিকে হালকা উকি মারলো প্ল্যাটফর্মের দিকে। তেমন জনমানব নেই। ট্রেন থেকে কিছু মানুষ নেমে এদিক ওদিক ঘুরছে। বৃষ্টির কারনে রাস্তা কেমন যেন পিচ্ছিল। একপলক সবার তিকে তাকিয়ে নিলো মাইশা। প্রচন্ড বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্ত সবাই ঘুমের তলদেশে। তাই আনানের বাহুতে হালকা ধাক্কা দিয়ে মাইশা ফিসফিসিয়ে ডাকলো ,
--''আনান?''
আনান যেন হুঁশে নেই। সামাদের কাঁধে মাথা দিয়ে যেন মরার মতো ঘুমিয়ে আছে। মাইশা আবারও ডাকলো,
--''আরে ওই আনান?''
মিহি কন্ঠ শুনে হালকা একটু নড়ে উঠলো আনান। ঘুমে ঢুলু ঢুলু হয়ে হঠাৎ বলে ফেললো,
--''আম্মু আমি বিয়া করবো না।''
চোখে সুক্ষ্ণ ভাজ পড়লো মাইশা। মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। ইচ্ছে করছে আনানকে ঠাসিয়ে চড় মেরে দিয়ে এসব দেওভূত উড়িয়ে দিতে। মাইশা বিড়বিড়িয়ে বললো,
--''তুই ঘুমা ব্যাটা। আমি একাই গেলাম।''



No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.